আজ আমার বিয়ে পার্ট ২৬-২৭ একসাথে

0
2351

আজ আমার বিয়ে পার্ট ২৬-২৭ একসাথে
লেখা আশিকা জামান

রাত্রি বেলা ইভান তার সেই লেপটপ নিয়া বসছে। কি যে করছে কে জানে । আমি ওর পাশে বসেই ওর মনোযোগ আকর্ষন করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে একমনে তার কাজ করেই চলছে।

— আচ্ছা আমার দিকে তাকাও।
একটু তাকিয়ে
— হুম তাকিয়েছি। বলো
— এইটা কি হলো?

তুমিতো আমাকে কিছুই বললে না শাড়ীটা আমাকে কেমন মানিয়েছে।
— ভালোই মানিয়েছে। কারন প্রছন্দতো আমিই করেছি।
ধুর রাগ উঠিছে। আমি ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। ধুর ওর সাথে কথা বলাই বৃথা।
রাতে ইদানীং কেন যানি খারাপ স্বপ্ন দেখতে লাগলাম।তাই ভালো ঘুম হলো ননা। সকালেও তাড়াতাড়ি জেগে উঠি, রান্না করে ইভানকে ডাকতে গেলাম।
সেতো দেখি মরার মত ঘুমুচ্ছে।
এই উঠ উঠ অনেক করলাম।না উঠার নাম নেই।
মনে হচ্ছে পানি ঢেলে দেই।
দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেল মাথায় তাই গ্লাসে করে পানি নিয়ে ওর উপর ছিটাতে লাগলাম।
ও একলাফে বিছানায় বসলো।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/



— এইটা কি হলো??
আমার হাতের দিকে তাকিয়ে গ্লাসটা দেখে বুঝে যায় এতক্ষন কি হচ্ছিলো।
— এই কাজটা করাটা কি খুব জরুরী ছিলো।
— হুম ছিলো। কারন মরার মত শুধু আমিই ঘুমাই না আপনিও ঘুমান। আর আপনি যে অফিসে যাবেন আপনারতো, কোন চিন্তাই নাই। তাই বাধ্য হয়ে এই কাজটা করতে হলো। না হলেতো অযথা আমাকেই কথা শুনতে হবে।
— তুমি না মাঝেমমাঝে কি যে সব করোনা। সত্যি আমার কিছুই বলার নাই।
— হুম বলা লাগবে না। যাও ফ্রেস হয়ে আসো।
— হুম যাচ্ছি।
আমি বিছানা গুছিয়ে ওর কাপড় গুলো বের করে বিছানায় রাখি।
ওর প্লেট সাজাচ্ছিলাম তখন ইভান আমাকে জোড়ে জোড়ে ডাকতে লাগলো।
আমি তড়িঘড়ি করে ওর কাছে গেলাম।
— আমার এ্যাশ কালার শার্টটা কোথায়? এইগুলা বের করছো কেন??
— ওইটা ময়লা হয়ে গেছে। তাই ধুয়ে শুকাতে দিয়েছি।
আর যা বের করছি তাই পরো।
— তুমি আমাকে জিজ্ঞাস না করেই কেন শার্টটা ধুয়েছো।
বিরক্তিকর আমি ওইটা আজকে পড়তে চেয়েছি। আর তুমি..??
উফ..
— কেন তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না ওইটা ময়লা হয়ে গেছে?? আর তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে তুমি অফিসে না ডেটে যাচ্ছ। আর যার সাথে ডেটে যাচ্ছ সে যেন তোমাকে বলে দিছে ওইটাই পড়তে হবে..
আমি কথাগুলো বলে উল্টোদিকে ঘুরে চলে আসতে লাগলে ইভান আমার হাতটা ধরে ফেলে।
— আমাকে সন্দেহ করা ছাড়া আর তো কিছু পারোনা?? এই শোন সকাল সকাল মেজাজটা অতিরিক্ত খারাপ করবা না। সব কিছুতেই তার সন্দেহ। এত সন্দেহ কারো উপড় পোষন করে রাখা যায়??
— হাত ছাড়ো। টেবিলে আসো।
আমি টেবিলে গিয়ে বসতেই সে রেডি হয়ে টেবিলে আসে।।
চুপচাপ খেতে লাগলো।
— আমি আজকে ইউনিভার্সিটি যাবো।
— বেশ ভালো যাবে কিন্তু আমাকে এত করে বলার কিছু নাই। তোমার যেখানে খুশি যেতে পারো আমার কোন না নেই। ইনফ্যাক্ট তোমার মত সন্দেহবাতিক আমি নই।
ইচ্ছে হচ্ছে গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করি। কিন্তু না আমি কেমন শান্ত ভাবে কথাটা হজম করে নিলাম।
ইভান হয়তবা ভেবেছিলো আমি ওর সাথস ঝগড়া করবো কিন্তু না আমি কেমন শান্ত হয়ে গেলাম। ও যে ব্যাপারটা সহজভাবে নিলো না সেটা ওর মুখ দেখেই বুঝে গেলাম।
— আচ্ছা অরিন খাচ্ছো না কেন?? আর তুমি বসে বসে এত কি ভাবো??
— কিছু না। তুমি খাও।
ইভান বাসা থেকে বের যাওয়ার সময় শুধু বলে গেল সাবধানে যাও, আর পৌছে ফোন করো।
আমি একটু গুছানো স্বভাবের, টিপটাপ থাকতে প্রছন্দ করি। আজকে অনেকদিন পর ইউনিভার্সিটিতে গেলাম তাই একটু সেজেগুজেই বের হলাম। ক্যাম্পাসে যেতেই বন্ধুরা আমাকে পেয়ে বসে। তাদের ভাষ্যমতে আমি বিয়ের পর মোটা হয়েছি, সুন্দরি হয়েছি, আমি এত সেল্ফিস কারো খবর নেইনি, কিভাবে এতদিন থাকলাম এইসব বলে বলে মাথাটা খারাপ করে দিচ্ছিলো। আমার আর ইভানের টুনাটুনির সংসার কেমন চলছে এটা নিয়ে তাদের ভাবনারতো কোন অবকাশই আমি দেখতে পেলাম না। আমার অবশ্য খুব ভালো লাগছিলো এতোদিন পর সবার সাথে দেখা করে।
ক্লাস এর ফাকে আজকে সবাই মিলে অনেক আড্ডা দিয়েছি মনটা খুব ভালো লাগছিলো। কিন্তু একটা ভুল হয়েই গেছে ইভানকে আর ফোন করা হয় নাই।
আমি মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি ৪ টা বেজে গেছে ওর আসার টাইম হয়ে গেছে। আমি সবাইকে বাই বলে চলে আসি।
বাসায় এসে হাফ ছেড়ে বাচি নাহ ও এখনো আসে নি। আমি আর উল্টোদিকে ঘুরতে পারি না কলিংবেল বাজছে। ইভান নিঃশব্দে রুমে ঢুকে।
আমার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয় আছে কিছুই বুঝতেছি না।
আমি ওর দিকে এগিয়ে গেলাম, ওর দুই পায়ের উপর আমার দুই পা তুলে দিয়ে, শার্ট এর কলারে হাত দিয়ে টাই খুলতে লাগলাম।
— তুমি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?? তোমার চোখের ভাষাটা কেমন রহস্যময়..
— এমনি কিছু না। আর রহস্যময় আমি না তোমার সব কিছু গভীর রহস্যে ঘেরা যার আদি অন্ত আমি আজো খুজে পাইনি।
আমি হি হি করে হেসে উঠলাম।
— কবি কবি ভাব কবিতার অভাব।
ইভান সরে গেল।
— তাহলে তাই।
আমি ইভানের পিছে পিছে আমার ব্যাগটা নিয়ে রুমে ঢুকলাম। সে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লো।
আমি ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে কানের দুল, চুড়ি খুলতে লাগলাম।
— তুমি ওগুলো খুলছো কেন??
— কি করবো না খুলে , এখন আর ভালো লাগছে না এইভাবে সেজেগুজে থাকতে।
— ওহ, আচ্ছা এতক্ষন ভালো লেগেছে।
— জানি না যাও।
— আচ্ছা তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি মাত্রই আসছো। তোমার ক্লাস কখন শেষ হয়েছে।
— ওই ২ টার সময়। তারপর ওই সবাই ধরলো তাই আড্ডা দিতে দিতে লেট হয়ে গেছে। আচ্ছা তুমি কি আমার উপর রেগে আছো??
— হুয়াই?? তোমার উপর রাগ করারতো কোন কারণই নাই। শুধু শুধু কেন রাগ করবো।
আমি আমার ওড়নার পিনটা খুলতে লাগলাম কিন্তু খুলতে পারছিলাম না। উফ ওকে বলতেও পারছিলাম না কেমন সংকোচ লাগছিলো।
আমি একবার ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম আরেকবার পিঠে হাত দিয়ে চেষ্টা করছিলাম। ও আমার এই অবস্থা দেখে নিজেই উঠে এল, তারপর আমার পিঠে হাত দিয়ে জামার নিচ থেকে পিনটা বের করে দিলো।একদম ওড়নাটা ছিদ্র হয়ে ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলো।
তারপর আমার দুই বাহু জোরে ধরে আমাকে বসা থেকে টান দিয়া ধরে তুলে ফেলে। ওর চোখ আর নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।
— এই লাগানোর সময় ঠিক করে লাগাতে পারো না। ঝুকের মাতালে রেডি হও। এখন যদি এইটা শরীরে লাগতো তখন কি হতো?? ভেবে দেখেছো??
আমি চুপ হয়ে গেছি ওর ওভার রিএক্ট দেখে। তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসে পড়ে। কিছুক্ষন নিজেকে সামলে নিলাম তারপর ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় আসলাম। ও এতক্ষনে ড্রেস চেঞ্জ করে শুয়ে আছে।
আমি ওর পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম। কেন জানি খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে আজ। মনে হচ্ছে কান্নাতেই সমস্ত কষ্ট ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাবে। আমি ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে মন খুলে কাঁদতে লাগলাম। ওতো বিস্ময়ের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকায়। ওর মত মাথা মোটার অবশ্য বোঝার কথা না আমি কেন কান্না করছি।
ও আমার দিকে ঘুরতেই আমি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। আরো কাদতে থাকি।
ও আমার মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
— অরিন কি হয়েছে?? প্লিজ কান্না বন্ধ করো। আচ্ছা আমি কি তোমাকে বকেছি?? আরে বাবা তোমার ভালোর জন্যই বলেছি ধুর বোকা এই জন্যে কেউ কান্না করে।
উহু আমিতো শোনার পাত্রীইই নই কান্না শেষে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি। এইটা আমার ছোটবেলার অভ্যেস আমি কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে যাই। আজকেও তাই তার ব্যাতিক্রম হবার কথা না। ও যখন বুঝতে পারে যে আমি ঘুমিয়ে গেছি তখন আমাকে সুন্দরভাবে শুইয়ে দেয়। সেই রাতে আর আমি উঠিনি। পরে ইভানই রান্না করেছে। আমাকে ডেকেছে আর উহু পরে পরে করে আমি ঘুমিয়েই থেকেছি। হঠাৎই রাতে আমার খুব খুধা লাগে আর ঘুম ভেংগে যায়। তখনি মনে হয় ওর কথা পাশ ফিরতেই দেখি ইভান ঘুমুচ্ছে। উফ কি হবে এখন ওতো মনে হয় না খেয়েই ঘুমিয়ে গেছে । ধুর কি ঘুমটাই দিলাম। তাড়াতাড়ি উঠে টেবিলে গিয়ে দেখি ও আমার জন্য খাবার ঢেকে রেখেছে। তারমানে ও খেয়েই শুয়েছে। খাওয়া শেষ করে আবার ওকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লাম। তখন ও বিভোর ঘুমে অচেতন। ওর ঘুমন্ত মুখটা দেখতে আমার বড় ভালো লাগে।

পার্ট ২৭

নালার ফাক দিয়ে সকালের মিষ্টি রোদ চোখে লাগছে। ঘুমটা ভেংগে গেছে, আস্তে আস্তে চোখ দুটো মেলে তাকিয়ে দেখি ইভান আমার চুল নিয়ে খেলা করছে আর আমি ওর বুকে শুয়ে আছি । আমাকে চোখ মেলতে দেখে ও একটা দুষ্টু হাসি দিলো…
আমি চোখাচোখি হওয়াতে চোখ নামিয়ে নিলাম।
— আচ্ছা কালকে কি আমার বউটার খুব ঘুম পেয়েছিলো??
– হুম খুব ঘুম পেয়েছিলো। আচ্ছা তুমি যে এত ভালো রান্না করতে পারো সেটা না ঘুমুলে জানতেই পারতাম না। নাহ একদিক থেকে ভালোই হয়েছে।
— ও এই কথা। না ম্যাম যা ভাবছেন তা না। এত খুশি হওয়ার কিছুই হয় নাই।একদিন করেছি বলে যে প্রতিদিন করবো এমনটা ভাবার কোন কারণ নেই।
আমি ওর হাত সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।
— আরে উঠছো কেন?? কই যাও??
— আমার কাজ করতে যাই। আমাকেতো কেউ আর বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে না..
ও বিছানা থেকে উঠে বসে পড়লো,
— মানে কি?? তুমি কি আমার কথায় রাগ করলে??
— আরেহ না। রাগ কেন করবো??
— আচ্ছা তাহলে এখানে আসো প্লিজ। পরে না হয় কাজ করো।
— উহু পরেতো আপ্নার অফিসে যেতে লেট হয়ে যাবে। আমার ক্লাসে যেতে হবে সামনে এক্সাম। এক্সামের চিন্তায় মাথাটা আমার ভারী হয়ে আছে।
— সত্যিই তোমার মাথাটা গেছে। আজকে শুক্রবার!!
আমি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম।
— হুম আসলেই আমি মাঝে মাঝে এইসব দিন তারিখ ভুলে যাই।
— হুম ভয় হয় কবে যে আমাকেই ভুলে যাও।
আমাকে হাতে একটা টান দিয়ে বিছানায় এসে বসায়।
— উহু এইভাবে কেউ টান দেয় আমিতো পড়ে যাচ্ছিলাম।
— পড়ো তো নাই। তাহলে
— তুমি না সত্যি টানাটানিতে এক্সপার্ট।
— হুম সেটাতো বরাবরই বাট চান্স কই পাই। তুমিতো সেই চান্স দাওই না।
আমি ওর কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে বসে থাকলাম।
— কি হলো?? কথা প্রছন্দ হয় নাই??
— নাহ, হয় নাই। তুমি না সবসময় বাজে কথা বলো।
— হুম শুধু বলিই না মাঝে মাঝে কাজেও করে দেখাই।
এক ঝটকায় ইভান আমাকে ওর বুকের কাছে নিয়াসে। আমার দুই গালে দুই হাত দিয়ে মুখটা উপরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে তাকিয়ে আমি নিজের সব ভুলে যাচ্ছি। পলক যেন পড়ছেই না। কিছুক্ষন দুজনেই নিশ্চুপ। কিছু ভালবাসার প্রকাশ ভঙ্গিতে নিরবতা বিরাজ করে।
— কি দেখছো ওভাবে??
— তোমাকে। কত দিন নিজের মত করে তোমায় দেখিনি। আচ্ছা তুমি এত সুন্দর কেন??
আমি ওকে ধাক্কা দিতেই ও বিছানায় পড়ে যায়, সাথে আমাকেও টান দিয়ে ওর উপড়ে ফেলে।
আমি উঠার চেষ্টা করলে কোমড় জড়িয়ে ধরে। আমি ওর বুকে কয়েকটা কিল দিয়ে বলি,
— এই তুমি কি আমাকে ছাড়বা?? ছাড়ো প্লিজ।
— ছাড়ার জন্য কি এত কষ্ট পেয়েও আকড়ে ধরে আছি। তুমি কি বোঝ না কতটা ভালবাসি তোমায়।
আমি ওর বুকে মাথা রাখি সাথে সাথে,
— ভালবাসি বলেইতো এত কষ্ট দেই তুমি কি সেটা বুঝো না। আর যতটা কষ্ট তোমাকে দেই তার থেকে বেশি কষ্ট যে আমি পাই তুমি হয়তবা তা জানো না।
— সত্যি বলছো।
— হুম।
আচ্ছা শোন তোমার সাথে ঢং করলে আমার পেট ভরবে না। সরো তো বলেই উঠে পড়লো।
— এই তুমি না সত্যি সিচুয়েশন বোঝো না ধুরু..
সকাল সকাল দিলাতো
— হুম আমি এরকমিই। আগে জানতে না…
ও একটা মুচকি হাসি দিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল।
আমি ব্রেকফাস্ট করার জন্য ওকে ডাকতে ডাকতে হয়রান। রুমে গিয়ে দেখি সে বসে বসে কার্টুন দেখছে।
ওর হাত থেকে রিমোটটা কেড়ে নিয়ে দিলাম টিভিটা অফ করে।
— এই তুমি এটা কি করলা??
— কি করলাম চোখে দেখতে পাও নি। কখন থেকে ডাকছি শুনতে পাও নি।
— ও তুমি ডাকছিলে?? কিন্তু কেন??
— কেন মানে?? খাওয়ার জন্য ডাকছিলাম বুঝেছো??
এই আসোতো..
আমি ওর হাত ধরে টেনে টেবিলে নিয়াসলাম।
— ওয়াও ফ্রাইড রাইস, এই সকালবেলা!!
— হুম, ইচ্ছে হলো তুমিতো খুব প্রছন্দ করো। তাই এখনি বানাইলাম।
— কিন্তু আমাকে খাওয়াই দিতে হবে। আমি নিজে খেতে পারবো না।
— কেন তোমার হাত নাই??
— তুমি না দিনদিন পুরা আনরোমান্টিক হয়ে যাচ্ছো। আগে কি বলতা, বিয়ের পর না তোমাকে অনেক আদর করবো, প্রতিদিন তোমাইকে খাইয়ে দিবো, গোসল করাই দিবো, ঘুম পাড়াই দিবো ভালবাসা দিয়া। কই কোন নমুনাইতো দেখি না।
— ছিঃ আমি তোমাকে কবে বলেছি গোসল করাই দিবো। এই টাইপের কথা আমার মুখ দিয়ে বেরই হয়না।
— হুম, এখন্তো সব অস্বিকার। আসলে ওই যে একটা কথা আছে না বলা সহজ করা কঠিন।
— এই শোন মোটেই না। আমি কিন্তু রেগে যাচ্ছি। নাও হা করো।
ইভান একদম বাচ্চা ছেলের মত হা করে আছে।
আমার খুব হাসি পাচ্ছে। আমি ওকে খাইয়ে দিতে লাগলাম।
— এই তুমি হাসছো কেন।
— নাহ, এমনি তুমি খাও।
তুমিও নাও সেও আমার মুখে তুলে দিলো। মনে হচ্ছে ভালবাসা মুখে তুলে দিচ্ছে। কেমন একটা স্বর্গীয় প্রশান্তি অনুভব করছি।
আজকের দিনটা একটু অন্যরকম ভালো লাগছে। প্রতিটা মুহুর্তেই ওর প্রতি আলাদা ভালোলাগা কাজ করছে। মনে হচ্ছে ওর মধ্যে ডুবে থাকি। কিন্তু এক সপ্তাহ পর এক্সাম। তাই বই নিয়েই বসতে হলো। অবশ্য ও আমাকে হেল্প করছে। আমি যেটা বুঝিনা সেটা আমাকে খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে। আমি অবশ্য হা করে ওকেই দেখেছি।ফলে আমার মাথায় কিছুই ঢুকেনি। আমি এতক্ষনে বুঝে গেছি ও আমার পাশে থাকলে আমার মনোযোগ পুরা ওর দিকে থাকবে। ফলশ্রুতিতে এক্সামে লাড্ডু পাওয়ার চান্স আছে। তাই রাত্রিবেলা আমি আমার বই নিয়ে পাশের রুমে গেলাম পড়ার জন্য। আমাকে বই নিয়ে যেতেই ও আমাকে জিজ্ঞাস করলো
— এইগুলা নিয়া কোথায় যাচ্ছ??
-পাশের রুমে, আসলে আমারতো রাত জেগে পড়ার স্বভাব। আমার মনে হলো লাইট জ্বালিয়ে এখানে পড়লে তোমার ঘুমের ডিস্টার্ব হবে। আমি পড়া শেষ হলেই চলে আসবো। আর তুমি শুয়ে পড়ো কেমন।
— আচ্ছা যাও।
আমি পাশের রুমে একমনে পড়তে পড়তে সেদিন টেবিলেই ঘুমিয়ে পড়ি। তারপর অনেক রাতে যখন বুঝতে পারি যে আমি টেবিলে তখন এখানেই ঘুমিয়ে পড়ি। আসলে তখন অনেক আলসেমি লাগছিলো উঠে আসতে তাই ওখানেই ঘুম।
সকালে ঘুম ভেংগে দেখি ইভান আমার আগেই উঠে পড়েছে।
আমার এমনিতেই লেট হয়ে গেছে তাই তাড়াতাড়ি কিচেনে গেলাম।
রান্না কমপ্লিট করে আমি ওকে ডাকতে গেলাম। তখন ও রেডি হচ্ছিলো…
আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম, চোখ দুটো পুরু লাল হয়ে আছে মনে হচ্ছে রাতে ঘুমায় নাই।
আচ্ছা ও কি আমার উপর রেগে আছি। কোন কিছুই বুঝতে পারছি না।
— এতক্ষন লাগে রেডি হতে?? টেবিলে আসো..
নাহ, কোন কথা বলছে না। ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়া দরকার।
আমার কথার উত্তর না দিয়েই ইভান টেবিলে চলে আসলো। আমি ওর পিছে পিছে আসলাম।
পিছন থেকে ওর হাতটা টান দিয়া ধরলাম।
আমার দিকে ঘুরে তাকালো।
— কি হয়েছো?? হাত টান দিয়া ধরলা কেন??
আমি ওর গালে হাত দিয়ে ওর চোখের দিকে তাকালাম
— কিছুতো তোমার হইছে?? মুখটা ওমন ভুতের মত বানিয়ে রাখছো কেন?? কি সমস্যা বলো না।
গাল থেকে আমার হাতটা সজোরে নামিয়ে নিলো
— এই শোন সকাল সকাল ঢং ভালো লাগছে না। তুমি কি আমাকে খেতে দিবে নাহয় চলে যাই।
আমি ওর হাত ছেড়ে দিলাম।
ইভান চুপচাপ চেয়ারে বসে গেল। আর নিজে নিজেই নিয়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। অন্য সময় হলে নিজে নেয়াতো দুরের কথা নিজ হাতেই খেতে চাইত না।
— এই তোমার কি হইছে?? প্লিজ বলোনা।না বললে আমি বুঝবো কি করে??
— কিছু হয় নাই বলেছি না। এক কথা বার বার কেন বলায়।
একদম শান্ত গলায় কথাটা বললো।
আমি একদম চপ্সে গেলাম।
কখন যেন গালে হাত দিয়ে ভাবনায় পড়ে যাই।
— অরিন তোমার ফোন বাজছে। ফোন্টা তুলো..
–ও হ্যা যাচ্ছি।
রুমে গিয়ে ফোন্টা হাতে নিয়ে দেখি অনন্ত ভাইয়ার নাম্বার।
চলবে।।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে