আজ আমার বিয়ে পার্ট ২২+২৩+২৪+২৫ একসাথে

0
2525

আজ আমার বিয়ে পার্ট ২২+২৩+২৪+২৫ একসাথে
লেখা আশিকা জামান

আমি রুম থেকেই বের হয়ে দরজার কাছে যেতে যেতেই দেখি ইভান চলে গেছে। আমি উল্টো দিকে ফিরতেই মা আমার হাতটা ধরে ফেলে…
— অরিন ইভান এইভাবে চলে গেলো কেন??

— মা কিছুই না ওর একটু বাসায় কাজ আছে।
— তাহলে তুমি গেলেনা কেন ওর সাথে??
আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
— না মানে…
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/


মানে..
— মানে মানে কি করতেছো এইসব। ঠিক করে বলো।
— আসলে আমি থাকতে চাইলাম আর সেও আমাকে রেখো গেলো। এতে আমার কি দোষ।
— তোদের আমি কিছু শিখাতে পারলাম না। এই তুই জানিস না কালকে ইভান ঢাকা চলে যাবে। ওর কতকিছু গোছগাছ করা লাগবে আর তুমি এখানে ড্যাংড্যাং করে পড়ে রইলা। আজব মেয়ে তোমরা।
আসলেইতো আমার একদম মনে ছিলোনা।
— এই মেয়ে চুপ কেন??
আর নিজেতো পড়াশুনা চাংগে তুলছো। ফ্রেন্ডদের থেকে খুজ খবর কিছু নাও..
এক্সাম দেয়ার টাইম তো এসে গেলো। এখনো আমাকে এইগুলা মনে করাই দিতে হবে। আর তোমার শ্বশুর শাশুড়ি কি ভাববে তুমি গেলে না কেন?? বুদ্ধি সুদ্ধি কবে হবে??
আমি তখনো নিচে তাকাই ছিলাম। সত্যিইতো তারা কি ভাববে, তারাতো আমাকে অনেক ভালোবাসে তাছাড়া এইটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই আমি ইভানের স্রি। কিন্তু এখন কি করবো?? ওতো চলে গেলো।
আমি নিজের মনেই ভেবে ভেবে রুমের দিকে গেলাম।
— এই মেয়ে মুখে কথা নাই কেন?? আচ্ছা যা খুশি তাই করো…
যত্তসব।
আমি ফোনটা নিয়ে ইভানকে কল দিলাম।
ইভান কল দেয়ার সাথে সাথে কেটে দিলো। তবে এতে আমি খুব বেশি চিন্তিত হলাম না। ও যে কলব্যাক করবে আমি জানি।
হুম ফোনে রিংটোন বাজছে
ইভানের কল.
— হ্যা কিছু বলবে??
— হু, তুমি কি চলে গেছো।
— টাইম দেখো, এতক্ষন আমার বাসায় থাকারই কথা। কিছুক্ষন আগেই আসছি।
তুমি কি এটা জানার জন্যে ফোন করেছো।
— সেটা না। আসলে তোমার আমাকে সাথে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো।
— কেউ না আসলে আমি কি করে নিয়াসতে পারি??
আর যাই হোক আমি জোর খাটাতে চাই না। আর হ্যা, কাম টু দ্যা পয়েন্ট, তোমার এখন কেন মনে হলো যে আমার সাথে যাওয়া উচিৎ ছিলো??
— না মানে, তখন আমি কি একটা না বললাম আর সেটা শুনেই যে তুমি চলে যাবে। সেটা আমি ভাবতে পারিনি।
— তুমি আসতে চাইবে না, আবার আমি রেখে আসলেও দোষ..?? আচ্ছা আমি কি করবে বলোতো?? কোন দিকে যাবো??
— আসলে তোমার দোষ আমি বলিনি। বলতে চাইছি যে…
— কি বলতে চাইছো?? ক্লিয়ার করো??
— তুমি এখন এসে আমাকে নিয়া যেতে পারবে??
— এখন, না পারবোনা। কারন আমার একটু কাজ আছে কালকে চলে যাবোতো বুঝতেই পারছো..
আর একটু শপিং এও যেতে হবে। আর তুমি থাকো সমস্যা নেই। পরে আসতে চাইলে আমার মাকে বলো তোমাকে নিয়াসবে।
— কিন্তু আমি যে এখন আসলাম না ওনারা কি ভাববেন?? না এইটা ভেবেই আমার মাথাটা ভারী হয়ে আছে।
— ও এই জন্যেই তুমি আসতে চাচ্ছো। এতক্ষনে ক্লিয়ার হইছে। হ্যা তোমাকে নিয়ে অনেক কিছুই ভাবা যেত। কিন্তু তোমার অসম্মান আমি হতে দিবো না এইটুকু ভরসা করতে পারো। আফটার অল তুমি আমার বউ তোমাকে কেউ কিছু বললে সেটা আমার ভালো লাগবেনা। এ নিয়ে চিন্তা করোনা। সবাই যখন তোমার কথা জিজ্ঞাস করেছে তখন আমি বলেছি যে, তুমি আসতে চাইছিলে কিন্তু আমি জোর করে তোমাকে রেখে আসছি। কয়েকদিন থাকবে তারপর তোমাকে মা নিয়াসবে। আর আমিতো চলেই যাচ্ছি তাহলে ওখানে থাকতেই পারো।
আচ্ছা ভালো থাকো রাখি।
ইভান আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কেটে দিলো। না আমার কিছু ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে কেউ ছুড়ি দিয়ে ভিতরটা কুচকুচ করে কাটতেছে। ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারলাম আর কাদতে লাগলাম। সকালবেলা ইভান আমাকে যে কথাগুলা চোখে আংগুল দিয়া দেখাই দিলো তা সব সত্যি তার একবিন্দুও মিথ্যা না। তবে কেন এত অবিশ্বাস, সন্দেহ, এত সংশয়। জানি না কেন ওকে মানতে পারি না।
— আপু কি হইছে? তুই কাঁদছিস কেন??
পিছনে তাকাই দেখি নওরিন।
চোখ মুছে উঠে দাড়ালাম।
— নওরিন সত্যি করে বলতো?? তুই কালকে আমাকে কি খাইয়েছিলি?? আর এটা কার বুদ্ধিতে??
আমার প্রশ্ন শুনে সে উত্তর না দিয়েই চলে যেতে লাগলো।
আমি ওর হাত টেনে ধরলাম।
আমার দিকে ঘুরে নিচে তাকাই ও।
— আপু জানিস দুলাভাই আমাকে অনেক বকেছে। একটু মজা করতে গিয়েছিলাম তাতেকি কেউ রাগ হতে পারে।
ও যে কথা ঘুরাতে চাইছে তা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছি।
— ফাজলামো যখন মাত্রাতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায় তখনতো একটু বকা শুনা লাগবেই । আর আমিতো তোকে কিছু জিজ্ঞাস করেছি উত্তর দে??
— আপু আসলে আমি চাইছিলাম তোর আর দুলাভাই এর সব দুরত্ব মিটে যাক। তাই….
তাই…আরকি
— তাই কি?? বল??
— ভেবেছিলাম তোরা কাছাকাছি আসলে সব ঝামেলা মিটে যাবে। তাই আমি নিজেই তোকে আর দুলাভাইকে নেশা করানোর জন্য…
এটুকু বলতেই আমি নওরিনকে ঠাস ঠাস করে দুইটা চড় বসিয়ে দেই।
— দূর হ তুই আমার সামনে আসবি না। দুষ্টুমির একটা লিমিট থাকা উচিৎ। আর আমাদের ব্যাপারে তোর এত নাক গলানোর কি দরকার??
তোর জন্য আমি ওকে আজ অনেক কথা শুনিয়েছি?? এর জন্য তুই রেস্পন্সিবল??
— আপু তুই আমাকে মারলি??
যা আমি কিছু মনে করিনি। কিন্তু শোন তুই দুলাভাই এর সাথে যা করছিস না সব বাড়াবাড়ি। এর জন্য তোর একদিন পস্তাতে হবে।
— তুই এখান থেকে যাবি নাকি আমি চলে যাবো??
— যাচ্ছি।
নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে। ছিঃ আমার বোন এমনটা করতে পারে?? খুব কান্না পাচ্ছে। সারা সন্ধ্যা নিজের সাথে খুব যুদ্ধ করলাম। কিন্তু নিজের মনের সাথে পেড়ে উঠছিলাম না।
কলিংবেল বাজার সাথে সাথে সমস্ত চিন্তার অবসান হলো। আচ্ছা ইভান কি আসছে??
আমি নিজের মনেই ভেবে ভেবে দরজা কাছে যেতেই দেখি নওরিন দরজা খুলছে..
আর হ্যা ইভান না সোহান এসেছে।
নওরিন একটা ভাব নিয়ে সোহানকে দেখেও কথা না বলেই চলে যাচ্ছিলো।
সোহান পিছন থেকেই নওরিনের হাত টান দিয়া ধরে।
আমি দূরে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা দেখছিলাম।
— আরে, রে কি হলো। মুখটা অমন হাড়ীর মত বানিয়ে রেখেছো কেন??
— এই তোমাকে কখন আসতে বলেছি, এতক্ষনে আসছে উনি??
— আচ্ছা তুমি যখন বলেছো তখনিতো এসেছি। আর আমার আসতেতো টাইম লাগবে নাকি??
— আচ্ছা দাঁড়াও আমি ব্যাগ নিয়াসছি চলে যাবো।
— মানে কি?? তুমি না কালকে বললা কয়েকদিন থাকবে তাহলে আজকেই আবার….
— আজকেই আবার কি?? আর কালকে যা বলেছি আজকেও আমি তাই বলবো এমনটা ভাবার কোন কারন নেই। আর তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমি থাকলেই বেশি খুশি হও।
— আরে না না না। ছিঃ কি যে বলো। চল চল…
হঠাৎ ই সোহান এদিকে তাকায় আর আমার চোখ পড়ে যায়।
আমাকে উদ্দেশ্য করে সোহান বলে।
— অরিন কিছু বলবা??।
— নাতো। তুমি বসো আমি মাকে ডেকে নিয়াসি।
আমি আমার রুমে চলে আসি। নওরিন আর সোহানের খুনসুটি দেখে পুরোনো স্মৃতি মনে পড়ে যায়। নিজের মনেই নিজেই হেসে উঠি। ফোন্টা নিয়ে অজান্তেই ইভানকে ফোন দেই।
— হ্যালো,
কিছু বলবা??
— তুমি কি খুব বিজি।
— নাহ, বলো সমস্যা নাই।
— সরি।
— কেন??
–তোমাকে এতগুলো কথা শুনানোর জন্য।
ইভান মৃদু হাসলো।
— তুমি আমাকে সরি বললেই কি সকালে যা যা বললা তা ধুয়ে মুছে যাবে।
আমি চুপ কি বলবো সত্যিই স্পিচলেস।
সেও চুপ। তারপর নিরবতা ভেংগে সেই বলে,
— অরিন তোমাকে একটা রিকুয়েস্ট করি রাখবা।
— হুম বলো।
— আমিতো চলে যাবো। যে কয়েকটা দিন তুমি আমাদের বাসায় থাকবে প্লিজ সবার কথামত থেকো। এমন কিছু করোনা যাতে সবার কাছে ছোট হতে হয় কেমন।
— হুম।
— আচ্ছা ঘুমাও তুমি। রাখি।

পার্ট ২৩

নওরিন শ্বশুরবাড়ি চলে গেছে অনেক আগেই। ও যে আমার সাথে রাগ করেই চলে গেছে এটা ভালোভাবেই বুঝেছি। আমার একা একা ভালো লাগছিলো না। সারারাত আমার আর ঘুম হয় নাই। হয়তবা ইভান ও ঘুমাতে পারে নি। সকালে ঘুম থেকে উঠেই ইভানকে ফোন করি।
— হ্যালো তুমি এত সকালেই উঠে পড়েছো??
— না মানে…
— ঘুমাও নাই রাতে??
আচ্ছা ও কিভাবে জানলো।
— না ঘুমাবো না কেন?
ঘুমিয়েছিতো।
— আমার কালকে রাতে ঘুম হয়নি কারন তোমার সাথে ঘুমাতে অভ্যস্ত হয়ে গেছিতো তাই আরকি।
আচ্ছা শোন আমি একটু পরেই বের হবো। কারন ঢাকায় এসে অনেক কিছু গোছগাছ করা লাগবে।
— ও এখনি যাবে। আসলে ইভান কি হয়েছে জানোতো, বিয়ের ঝামেলায়তো আমার অনেকদিন ইউনিভার্সিটি যাওয়া হয় নাই। তাছাড়া সামনে এক্সাম। আমি কি করবো??
— হুম মাথায় আছে সেটা।এই মাসেতো আর কয়েকটা দিন আছে। মা-বাবার সাথে আমি কথা বলে নিয়েছি উনারা বলেছেন সামনের মাসে তোমাকে নিয়ে যেতে ।
তা তোমার কি ইচ্ছা??
— আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই।
— অরিন তুমি কি তোমার হোস্টেলেই উঠবা??
ইভান আর কিছু বলতে চাইছিলো আমি রাগে ফোন সাথে সাথে কেটে দেই।
কেমন ফাজিল আমি নাকি হোস্টেলে উঠবো। বিয়ে করে এখন আবার ন্যাকামি করা হচ্ছে।
আর কেমন আমি কেটে দেয়ার পরো কলব্যাক করলো না।
আমি রাগে আর ওকে ফোন করিনি।
সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ার পরো ইভান আমাকে ফোন করেনি। আমার তখন ওর জন্য একটু চিন্তা হচ্ছিলো তাই আমি তখন ওকে ফোন করি। কিন্তু ও ফোনটা তুললো না।
এরপর আমি ইরার কাছে ফোন করে জানতে পারি ও অনেক আগেই ঢাকায় পৌছে ফোন করেছিল।
তখন রাত দশটা বাজে, আমি ঘুমানোর প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম।
ফোনটা বাজছে আর এতক্ষনে ইভান ফোন করেছে। রাগ হচ্ছিলো ধরবোনা কিন্তু কেন যে ফোনটা ধরলাম জানি না।
— হ্যালো অরিন, আমার ফোনটা তখন সাইলেন্ট করা ছিল তাই খেয়াল করিনি।
এইবার বলো কেন ফোন করেছো??
— আমার ইচ্ছা হয়েছিলো তাই ফোন করেছি। এখন ইচ্ছে হয় নাই তাই কেটে দিচ্ছি।।
আমার প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে আর হ্যা আমি সত্যি ফোনটা কেটে দিছি।
ফোন কাটার ১ মিনিটের ভিতর আবার ফোন।
— এই কি হলো ব্যাপারটা??
তুমি ফোনটা কাটলে কেন??
— আমার কথা বলতে ইচ্ছে হয় নাই তাই।
— ইচ্ছে হয় নাই কথা বলবা না সমস্যা নাই
কিন্তু কলটাতো আমি দিয়েছি, তাহলে তুমি কাটছো কেন?? টাকা গেলে আমার যাবে তোমারতো প্রবলেম হওয়ার কথা না।
আমি কিছুই বলছি না।
— কি হলো কথা বলো?
— না বলবো না। তুমি ঢাকা পৌছে কেন ফোন করোনি??
— তখন কেন করবো??
তখন কি?? না করাতে কি কোন ক্ষতি হয়েছে??
— হুম হয়েছে। তোমার এটলিস্ট বুঝা উচিৎ ছিলও আমার কারো জন্য চিন্তা হয়??
ইভান হি হি করে হাসছে। আমার রাগে শরীর জ্বলছে। আমি কি কোন হাসির কথা বলেছি??
— অরিন সিরিয়াসলি তোমার আমার জন্য চিন্তা হয়?? না ব্যাপারটা ঠিক লাগছে না।
ওযে আমাকে ইচ্ছে করে অপমান করছে সেটা আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি।
— আচ্ছা আবার কি হলো??
এইবার বলোতো তুমি সকালে কেন ফোন কেটে দিয়েছো??
— কেন তুমি বুঝতে পারোনি। আমি কেন ফোন কেটেছি?? অবশ্য না বুঝারি কথা তোমার বোধ বুদ্ধি যে হারে লুপ পাচ্ছে…
— এই লাস্ট কথাটা এক্সপ্লেইন করো বলছি??
ভালো হবেনা বলে দিচ্ছি.
— কি এক্সপ্লেইন করবো তোমাকে।এই তুমি কেন আমাকে ওই কথা জিজ্ঞাস করলা?? কেন হোস্টেলে থাকতে বললা??
এই বিয়ে করার সময় মনে ছিলোনা।
— হুম মনে ছিলো। আর এখনো মনে আছে। আমি তোমাকে জিজ্ঞাস করতেই পারি?? আর এতে রিএক্ট করার মত কিছুই হয় নাই। আর তুমিতো আমার সাথে নাও থাকতে চাইতে পারো। কারন তুমি তো আমাকে স্বামী হিসেবে মানোই না। তাহলে এইটা নিয়ে এত কথা হচ্ছে কেন??
ওর ওই স্বামী হিসেবে মানোই না কথাটা শুনশুনে কলিজায় মোচড় দিয়া উঠছে। সত্যিইতো আমিতো ওকে মানিই না।
— ইভান আমার ভালো লাগছে না। ফোনটা রাখি।
— কেন শরীর খারাপ নাকি মনটা খারাপ। আচ্ছা তুমি কি আমার কথায় আহত হয়েছো??
— নাহ, আমি রাখছি।
— আচ্ছা রাখো।
এরপর কয়েকটা দিন আমাদের বাসায় থাকার পর আমার আর ভালো লাগছিলো না। তাই মাকে বলেছি আমাকে এসে নিয়ে যেতে। ইভান অবশ্য এতে খুব খুশিই হয়েছে।
পরদিন সকাল সকাল মা আসলে আমি তার সাথে বাসায় ফিরে যাই।
ওইদিন আবার বৃহস্পতিবার ছিলো। ওর সাথে আমার আর সেদিন কথা হয় নাই। বাসায় এসেও আমার খারাপ লাগতেছিলো খালি মনে হচ্ছিলো, কি যেন নেই নেই…
হুম ইভানকেই মিস করছিলো
আমার অবচেতন মন। সারা সন্ধ্যা আমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটালাম আর ইভানকেই স্বপ্নে দেখলাম। পরে ভাবলাম বেশি বেশি ভেবেছি তাই হয়তবা ওকেই স্বপ্নে দেখেছি।
রাতের বেলায় খাবার সময়ও আমি শুধু প্লেট এ খাবার নাড়ছিলাম…
ইরা আমাকে বলে
— ভাবী এত কি ভাবছো?
আমি চমকে উঠে বলেছিলাম
— কই কিছুনাতো।
— উহু তুমিতো ভাইয়াকেই ভাবছিলা তাই না।
— না, কিছু না।খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না।
এই মেয়ে তার ভাইয়ের মত ঠিক সব কিছু বুঝে ফেলে।
রাতে আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম হেডফোনে গান শুনতে শুনতে…
আর আমি সেদিন দরজা লাগাতে ভুলেই গিয়ছিলাম।
যাই হোক খুব ভোরে জেগে উঠি।
হঠাৎ করে মনে পড়লো, আমি কালকে হেডফোনে গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। তাহলেতো ওইটা আমার কানে থাকার কথা। কিন্তু সেটা নেই, আমি খুজার জন্য ওপাশ ফিরতেই দেখি ইভান কপালের উপর একহাত রেখে তার সেই বিখ্যাত ভংগিতে শুয়ে আছে। আমার মনে হচ্ছে এইটা স্বপ্ন।ওর এইখানে আসার কথাই না। তাই আমি ওর হাতে জোরে একটা চিমটি দেই।
ইভান উহু বলেই বিছানা থেকে উঠে বসে।
আমারতো চোখ ছানাবড়া ও কি করে এখানে??
চোখ কচলাতে কচলাতে ইভান আমার দিকে তাকায়..
— এইটা কি হলো??
চিমটি দিলে কেন??
— আসলে আমি ভেবেছি এইটা স্বপ্ন…
ইভান হো হো করে হেসে উঠে।
–এইটা বোঝার জন্য নিজের হাতে চিমটি না কেটে আমাকে কেন??
— সরি।
আমি বিছানা থেকে উঠে পড়েতে লাগলেই ইভান আমার হাত টান দিয়ে বসায়।
— এই তুমি কি?? তোমার কোন কমনসেন্স আছে??
— কেন??
— এই তুমি কালকে দরজা লাগাও নাই ক্যান??ঘুমালেতো নিজের কাপড় ঠিক রাখতে পারোই না আবার আমি বললেও দোষ।
— এই বাজে কথা বলবানা।
— হুম আপনার মনে হবেই আমি বাজে কথা বলি। যদি তখন দেখাতে পারতাম তাহলে বিশ্বাস করতেন।
— ডাক দিয়ে দেখাতে।
— ও আপনার কি মনে হয় আপনাকে ডাকিনি। আপনাকে ডাকতে ডাকতে মা আর ইরা টায়ার্ড হয়ে গিয়েছিলো।পরে আমি বারণ করেছি। আর ঘুমালে কেউ এইরকম মরার মত ঘুমায় নাকি তোমাকে না দেখলেও বিশ্বাসই হতো না। আর হ্যা কোলে করে কেউ নিয়ে গেলেও তো বোঝতে পারবা না।
— লিসেন, কারো ঠ্যাকা পড়েনি আমাকে কোলে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
— কেন কারো ঠ্যাকা যদি সত্যিই পড়ে তুমি তার কোলে উঠবে।
ওর এইসব অপ্রাসঙ্গিক কথা শুনে আমি উঠে যাচ্ছিলাম।
ইভান কিছুক্ষন নিচে তাকায় থাকে তারপর আমার দিকে তাকায়,
— চলে যাচ্ছ। আচ্ছা কিছু মনে করোনা। আমার না মনে থাকে না আমরা যে আর আগের মত নেই। অনেকদিনের অভ্যাসতো তাই এই সমস্ত কথা বলে ফেলি। সরি।
আমি ভ্রুকুচকে ওর দিকে তাকাই।

পার্ট ২৪

আমি ইভানের পাশে বসতেই ইভান উঠে চলে যায়। আমার কলিজাটা মোচড় দিয়া উঠে। ওর জন্য যে ভালবাসাটা জমা ছিলো সেটা আজো আছে, শুধু একটু মরিচা ধরেছে। আসলে ভালবাসাটা হচ্ছে চারা গাছের মত একটু পরিচর্যা করতে হয়, নইলে শুকিয়ে শুকিয়েএকসময় মরে যায়। এত কান্না পাচ্ছে কেন?? আমি রুম থেকে চলে আসলাম। সারাদিন সে আমার সাথে বেশি কথা বললোনা। আমিও আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনি। প্রয়োজন ছাড়া কথা যেন বলাই বারণ বিষয়টা এমন হয়ে দাড়িয়েছে। আমার শাশুড়ি মা আমাদের ব্যাপারটা কিছুটা আচ করতে পেরেছিলেন। আমাদের মধ্যে যে আসলে কছুই ঠিক নেই সেটা বোধ হয় একমাত্র উনিই বুঝিয়েছিলেন। উনি সকালে আমাকে ডেকে বললেন, কি হয়েছে আমাদের??
আমি কিছুই বলছিলাম না। উনি আমাকে বার বার ফোর্স করছিলো , তখন আমি কান্না করে দেই আর কিছুই বলতে পারিনি। মা আমার কান্না দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
— অরিন, আচ্ছা মা তোকে কিছুই জিজ্ঞাস করবো না। এবারতো কান্না থামা।
আমি তখনো কাঁদছিলাম, মা আমার মাথায় হাত বুলাতে থাকলো।
তারপর মা আমাকে বসিয়ে ইভানকে ডাকতে লাগলো। আমিতো ভয়ে শেষ মা ইভানকে কেন ডাকছে??
ইভান রুমে এসে দেখে আমি কাঁদছি। ওতো আমার দিকে ভেবলার মত তাকিয়ে আছে কিছুই বুঝতে পারছে না।
— এখানে বোস।
ও আমার পাশে বসে পড়লো।
— অরিনের কি হয়েছে?? ও কাদছে কেন??
— ওকেই জিজ্ঞাস করো পাশেইতো বসে আছে।
— কি হলো বলো কাদছো কেন??
আমি ওর মুখের দিকে তাকালাম কেমন রাগী রাগী ভাব করে তাকিয়ে আছে।
— ও তো কিছুই বলছে না। তুই নিশ্চয় ওকে কিছু বলেছিস?? তোকে তো আমি ভালো করেই চিনি।
— ভালো চিনলেই ভালো। তোমার যদি মনে হয় আমি ওকে কিছু বলেছি তাহলে তাই।
— দেখ, ইভান এইসব রাগারাগি আমার প্রছন্দ না। যাও কি হয়ছে আমি জানতে চাই না কিন্তু এরপর থেকে দুইজনের এইরকম হাড়ির মত মুখ আমি দেখতে চাই না। ঠিক আছে সমস্যাটা দুই জন মিটিয়ে নাও।
ইভান রুম থেকে চলে গেল।
আমিও রুমে ঢুকলাম। আমাকে দেখেই ইভান ব্যাগ গুছাতে লাগলো। একটা কাপড় বের করে আরেকটা ছুড়ে মারে এই অবস্থা শুরু করেছে।
— এইগুলা কি হচ্ছে??
— চোখ নেই দেখতে পাচ্ছোনা।
— হুম দেখতে পাচ্ছি। আর ব্যাগ গুছানোর প্রয়োজন কেন পড়লো??
— কারন আমাকে বাসায় আসলেতো তুমি শান্তি দিবানা তাই চলে যাবো এখন। আমি আসাতে যে তোমার খুব অসুবিধা হয়েছে সেটা আমি বুঝে গেছি।
— আমি একবারও তোমাকে এই কথা বলেছি??
— বলারতো দরকার নাই। কার্যকলাপ দ্বারাতো বোঝাই দিচ্ছো।
— এই কি বোঝাইছি তোমারে??
আমি একদম ওর সামনে গিয়ে শার্ট এর কলার ধরে ফেললাম।
ও আমাকে কোন কিছু বোঝার আগেই ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে দেয়।
— তুমি না আজকে খুব ভালো কাজ করছো। আমার মান সম্মান অবশিষ্ট যা ছিলো তাও খুইয়েছো। আমাকে স্পষ্ট করে বললেই হতো যে আমি তোমার প্রবলেম। তাহলে এতো রাতে কষ্ট করে তোমাকে দেখার জন্য চলে আসতাম না।
আমি অসহায়ের মত নিচে তাকিয়ে আছি। ওর দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না। ইভান আমার গালদুটো ধরে মুখটা উপরে তুলে। আমার কপালে ওর মাথা ঠেকায়..
— তুমি কি আমার সাথে স্বাভাবিক বিহেভ করতে পারোনা। এতটা ঘৃনা পোষে রাখছো?? কোন মানুষকে এতটা অবহেলা করা যায় এক ছাদের নিচে একি বিছানায় রাত কাটিয়েও..
আমি তখন নিঃশব্দে চোখের জল ফেলছিলাম।
— তোমারতো কোন উত্তর নেই জানি, এই কান্নাটা ছাড়া আরতো কিছু পারোইনা।
আমার মন যেদিক চায় সেইদিকে চলে যাবো সব ছেড়ে।
ইভান ওর হাত দিয়ে ওয়ালে জোড়ে ঘুষি মারে।
আমি ওর হাতটা ধরতে আসলে ইভান হাতটা ছাড়িয়ে চলে যায়।
একটু পর ইরা এসে আমাদের খাওয়ার জন্য ডাকে।
রাতে খাওয়ার সময় সবাই চুপচাপ খাচ্ছিলো।
একটু পর বাবা বলে উঠে
— অরিন একটু পর তুমি তোমার ব্যাগ গুছাবা। অবশ্য তোমার মা তোমাকে হেল্প করবে।
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাস করি
— ব্যাগ কেন গুছাবো??
— কালকে তুমি ইভানের সাথে ঢাকা যাচ্ছ।
আমি খাওয়া বাদ দিয়ে ইভানের দিকে তাকাই।
ইভান বাবার দিকে তাকায় বলে,
— কিন্তু বাবা…
— কিসের কিন্তু, কোন কিছু শোনতে চাই না তুমি কালকে অরিনকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছ। এটাই ফাইনাল। তোমার মায়ের ও ইচ্ছা এইটা।
ইভান খাওয়া ছেড়ে উঠে চলে গেল। কিছুক্ষনপর আমিও রুমে আসলাম। রুমে আসতেই ইভান আমার হাতটা ধরে ফেলে,
— খুবতো ভালোমানুষির নাটক করলা?? কেন বাবা -মাকে বলতে পারলে না আমার সাথে তুমি যেতে চাও না। তখন কথা কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো।
— নাহ, আমার প্রবলেম থাকলে অবশ্যই বলতাম। তোমার যে ঠিক কোন যায়গায় প্রবলেম হচ্ছে সেটা কেউ না বুঝলেও আমি ভালো করে বুঝতে পারছি। আর যার প্রবলেম সে বললেই হতো…
— মানে কি?? এই আমার কিসের প্রবলেম??
আর তোমার যেহেতু সমস্যা নাই তাহলে মুখে হাসি নাই কেন??
— ও এই কথা। আমার এত হাসি পায় না কোন কিছুতে। ক্লিয়ার…
এতক্ষণ অনেক ঝগড়া হয়েছে আমার মাথা ব্যাথা করছে। প্লিজ এইবার বন্ধ করো।
ইভান কিছু না বলেই চুপ করে গেল।
একটুপর মা দরজায় নক করলো।
— হ্যা মা ভেতরে এসো।
— কি ভাব-ভালবাসা হয়ে গেছে??
এইরকম মন খারাপ করে থাকলে আমাদেরো খারাপ লাগে। বুঝছো এখন তোমরাই পারো আমাদের ভালো রাখতে।
আচ্ছা শোন অরিন তুমি আমার সাথে আসো তোমাকে তোমার জীনিসগুলো বুঝিয়ে দেই।
এরপর মা আমাকে তার রুমে নিয়ে গিয়ে আমার জন্য যে গয়নাগুলো বানিয়েছিলো ওইগুলা দিলেন।আর কিছু গয়না পড়িয়ে দিলেন আর বললেন সবসময় এইগুলো পড়ে থাকতে। তারপর আমরা অনেক রাত পর্যন্ত ব্যাগ গুছালাম। ইভান ততক্ষনে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আমিও পরে ঘুময়ে পড়ি কারন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমি গোসল করে রেডি হতে লাগলাম। ইভান আমার আগেই রেডি হয়ে বসে আছে। ও বিছানায় বসে বসে আড়চোখে আমাকে দেখছিলো।
— এতক্ষন লাগে রেডি হতে। তাড়াতাড়ি করো আমি খেতে গেলাম।
সকালে খাওয়ার পর আমি আর ইভান বাসা থেকে বের হলাম। তবে যাওয়ার আগে মা, বাবা আর ইরাকে ধরে অনেক কান্নাকাটি করি। মনে হচ্ছিলো সব ভালোবাসাকে উপেক্ষা করে আমি মরিচিকার পথে হারিয়ে যাচ্ছি।
গাড়িতে বসেও আমার কান্না পাচ্ছিলো। এতক্ষন ইভান আমার সাথে একটা কথাও বলেনি।
গাড়িতে বসে আমার দিকে টিস্যু এগিয়ে দিলো।
— নাও চোখ মুছো। তোমার ভাব খানা দেখে মনে হচ্ছে আমি তোমাকে জোড় করে তুলে নিয়ে যাচ্ছি।
আমি টিস্যুটা সরিয়ে দিচ্ছিলাম।
ও এইবার আমার গাল দুটো ধরে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে লাগলো।
— এইবার চুপচাপ বসে থাকো।মেজাজ খারাপ হলে কিন্তু তোমার কপালে খুব দুঃখ আছে।
আমি চুপ্টি করে বসে রইলাম। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি। ইভানের ধাক্কায় ঘুম ভাংগে। তাকিয়ে দেখি আমি ইভানের কাধে মাথা রেখে শুয়ে আছি। সামনে তাকিয়ে দেখি কেউ আর বাসে নেই আমরা দুজন ছাড়া।
— অরিন এইভাবে কেউ বাসে ঘুমাতে পারে। আমি কতক্ষন ধরে ডাকছি কোন আইডিয়া আছে তোমার।
আমি চোখ কচলাতে কচলাতে ওর দিকে তাকাই।
— কি হলো হা করে তাকাই আছো কেন নামো।
তারপর ইভান আমাকে নতুন বাসায় নিয়ে গেল। যেহেতু প্রথম আসলাম তাই সবকিছু গোছগাছ করতে অনেক টাইম লেগে যায়। আর খুব টায়ার্ডও লাগছিলো তাই সেদিন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি।

পার্ট ২৫

খুব সকালে ঘুম ভেংগে ইভানের দিকে চোখ পড়ে যায়। কেমন সুন্দর ভাবে ঘুমিয়ে আছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে খুব নিশ্পাপ লাগছে। কত বিনিদ্র রজনী যেন পার করা যাবে এই ঘুমন্ত মানুষটার চোখের দিকে তাকিয়ে। এই টাইপের অদ্ভুত রকম ফিলংস হচ্ছে জানি না কেন। কিন্তু ফিলিংস আর বাস্তব তো এক না। তাই উঠে পড়তে হলো ইনফ্যান্ট একটু পর আমার নিজেরি খুধা লাগবে। ফ্রেস হয়ে রান্নাঘরে গেলাম, কি রান্না করবো মাথায় কিছুই আসতেছিলো না। শেষে পরোটা আর ডিম ভাজি বানালাম। একটু পর পিছনে তাকাই দেখি ইভান দাঁড়িয়ে আছে।
— এই তুমি কখন আসছো??
— ওই যে তুমি যখন পরোটা ভাজতেছিলা আর গান করছিলা ঠিক তখন।
— মোটেই না আমি কখনোইই গান গাইনি।
— তাহলে
” তুমি যে আমার কবিতা, আমারো বাশের রাগিণী
—————
—————
এইগানটা কে গাইলো??
ও হ্যা হতেও পারে, কারণ তুমিতো আবার ছাগলের মত ভ্যা ভ্যা করে গান গাও…
তোমার দ্বারা এত সুন্দর রোমান্টিক গান গাওয়া অসম্ভব…
আমি হয়ত ভুল শুনেছি…
যাকগে ব্যাপার নাহ…
আমি খুন্তি নিয়ে ওর দিকে তেড়ে আসলাম
— এই কি বললা? আমি ছাগল…
আমি ভ্যা ভ্যা করি। কি বলছো ঠিক করে বলো?
— ও সরি ভুল হয়ে গেছে তুমিতো ছাগলী।
— আবার?? আমাকে তুমি ছাগলী বলছো?? তুমি নিজে কি??
— আমিতো ছাগল তুমি ছাগলী। এবার হইছে প্লিজ খুধা লাগছেতো। নইলে তুমিই বল আমি কি কিচেনে শুধু শুধু আসি।
— আচ্ছা যাও আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি।
আমি ইভানের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে নিজের প্লেটেও তুলে নিলাম।
ও কি সুন্দর করে খাচ্ছে আমি ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। ও এতক্ষনে আমার দিকে তাকায়..
— এই তুমি হা করে তাকিয়ে আছো কেন??কিছুইতো খাও নাই। আরে তাড়াতাড়ি খাও..
আচ্ছা খাচ্ছি বলে আমিও খেতে লাগলাম।
ইভান খেয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। আমি একা একা বাসায় থাকবো এটা ভাবতেই আমার খারাপ লাগছিলো।
আমি একদম ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
ও টাই বাধতে বাধতে আমাকে বলতে লাগলো
— কি ব্যাপার কিছু বলবা??
আবার টাই বাধায় মনোযোগ দিলো।
— আজকে না গেলে হয় না।
ও আমার দিকে বিস্ময়ের দৃষটিতে তাকায়।
আমার দুই গালে চেপে দিয়ে বলে
— উহু। না গেলে খাবো কি??
পরেতো বেকার জামাই বলে কথা শুনাতে থাকবা।
আচ্ছা তুমি একটু কষ্ট করে থাকো আমি বিকেলেই এসে পড়বো কেমন।
আমি কোন কথা না বলেই চলে গেলাম।
— অরিন??? অরিন?? এদিকে আসো?? কোথায় গেলা??
আমি আসছিলাম নাহ। ইভান আমাকে খুঁজতে খুজতে পাশের রুমে আসে।
আমি বিছানায় চুপটি মেরে বসে ছিলাম।
একদম আমার হাতটা ধরে ফেলে,
— অরিন আমি না মাঝে মাঝে তোমাকে বুঝতে পারি না।
— কি রকম??
এই যে মেঘের মত ঘন ঘন রং পাল্টাও….
এই মেঘ এই বৃষ্টি….
প্লিজ এতটা চেঞ্জ হইও না। নাহলে যে তোমাকে বুঝতে বুঝতে আমার বাকী জীবন চলে যাবে। কাজের কাজ কিচ্ছু হবে না।
— তাহলে আমি ছাড়া তুমি আর কাকে বুঝতে চাও??
— এই যে তোমরা মেয়েরা সব এক।খালি অন্য মেয়ে টানো সব প্রসংগেই..
আমার এক ভার্সিটির বড় ভাই কি বলতো জানো, মেয়ে মানুষ আর হেড ফোন এক জীনিস যতই গুছায়ে রাখো না কেন প্যাচ লাগবেই।
আমি কিছু একটা বলতে চাইতেছিলাম, ও আমার মুখে হাত দিয়ে বলে,
— চুপ, আর কিছু বলোনা। এবার আমাকে টাটা বলে দাও।
আমি ওর হাতটা সরিয়ে দিয়ে বললাম।
— টাটা যাও তোমার লেট হয়ে যাচ্ছে।
— এইভাবে বললে যাবো না।
— কিভাবে বলবো তাহলে??
প্লিজ ঢং করবা না।
— কি কথা ছিলো??
তুমি এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলা..
আমার মনে পড়ে গেলো, ইভান আমাকে বলেছিলো বিয়ের পর সে অফিসে যাওয়ার সময় যেন তার কপালে চুমু দিতে না ভুলি।
কিন্তু আমি সত্যি ভুলে গিয়েছিলাম। বড় অদ্ভুত লাগছে সেই সব দিনগুলো মনে হওয়াতে। কত যে রাত জেগে জেগে এই বিয়ের স্বপ্ন দেখতাম। কত রকম করেই যে ইভান আর আমার সংসার কল্পনা করতাম তার ইয়াত্তা নাই। কিন্তু সেই স্বপ্ন যখন সত্যি হয়েই এল তখন ওর কাছে যেতে যে এত সংশয় তা কি করে উপেক্ষা করবো। আমি আর পারছি না এভাবে থাকতে।
— কি ভাবছো তুমি??
— তুমি অফিসে যাও লেট হচ্ছে।
আমি রুম থেকে বের হয়ে আসলাম।
ও আর কিছু না বলেই বাসা থেকে বের হয়ে গেল। যাওয়ার আগে দরজাটা লক করে দিতে বললো।
ও যাওয়ার পর কতক্ষন থুম ধরে বসে ছিলাম। নিজের মনের সাথে নিজেই অনেক যুদ্ধ করলাম। কিন্তু আমি নিজেই হেরে গেলাম। আর সিদ্ধান্ত নিলাম পিছিনের সব কিছু ভুলে ইভানের সাথে সুখে শান্তিতে বসবাস করার। অন্তত ফ্যামিলির কথা ভেবে হলেও ওর সাথে আমার সদ্ভাব বঝায় রাখা উচিৎ। তাছাড়া আমি মুখে যতই কিছু আমি বলি না কেন?? ইভানকে ছাড়া একমুহুর্ত কল্পনা করা আমার জন্য অসম্ভব । তারপর দুপুরে রান্না শেষ করে। আমি শাওয়ার নিলাম অনেক্ষন পানিতে ভিজলাম। ইচ্ছে হচ্ছিলো অনেক্ষন ভিজি কিন্তু ইভানের ওই চড়ের কথা মনে হতেই তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসলাম। আজকে অনেকদিনপর কেন জানি শাড়ী পড়তে ইচ্ছে হলো। দুপুরের পর আজকে কেন জানি আজকে অনেকদিন পর আমার প্রশান্তির ঘুম আসলো। ঘুমটা ভাংলো কলিংবেলের শব্দে। তাড়াতাড়ি চোখ কচলাতে কচলাতে দরজা খুলি। ইভান আমার দিকে একটু তাকিয়েই সোফায় বসে পড়লো।
আমিও ওর পাশে বসে পড়লাম।
ওকে খুব টায়ার্ড লাগছে।
— ঘুমিয়েছিলে??
আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই।
ও ওর টাই খুলতে লাগলো
— হুম, তোমাকে খুব টায়ার্ড লাগছে।
আমি ওর শার্টএর বোতামে হাত দিলাম।
ও আমার হাতটা ধরে ফেলে।
— আমিতো আর অফিসে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে থাকি না তাই আরকি…
আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো যোগ্য উত্তরটা দিয়ে দেই। কিন্তু পরে সেই আগের কাহিনী হবে। তাই নিজেই নিজেকে শান্ত রাখলাম।
আমিওর শার্ট এর বোতাম ধরে টানাটানি করতে লাগলাম।
ও সোফা থেকে উঠে টেবিলে যেতে লাগলো।
— যে কাজ পারবা না সেটা যে কেন করতে আসো??
টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে লাগলো। আমি বসা থেকে উঠে পড়লাম।
— সরি।
ও পানি খেতে খেতে উত্তর দিলো কেন??
— আসলে তোমাকে পানি অফার করাটা আমার উচিৎ ছিলো।
ইভান হি হি করে হেসে উঠলো। আচ্ছা ও এমন করে হাসছে কেন?? আমি কি খুব হাসির কথা বলেছি। অসহ্য একটা।
ইভান রুমে ঢুকেই ড্রেস চেঞ্জ করে শার্ট, প্যান্ট খুলে বিছানায় ছুড়ে মারলো। তারপর ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। বিছানার এই অবস্থা দেখে আমার ইচ্ছে হচ্ছিলো ওকে বলি কিছু। কিন্তু না আমি সুন্দর ভাবে সেইগুলো গুছালাম। ওয়াশরুম থেকেবের হয় তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে।
আমি ওকে দেখে টেবিলে খাবার সাজালাম। তারপর ওর প্লেটে খাবার তুলে দিলাম। কিন্তু ওর আসার নাম নেই। আমি রুমে আসলাম সে ফোনে যেন কি করতেছিলো??
— এই কি ব্যাপার?? তুমি এখনো এখানে কেন টেবিলে আসো।
— আচ্ছা যাও একটু পর আসছি।
আমি ইভানের হাত ধরে টানতে লাগলাম।
— আসো বলছি , আমি আর অপেক্ষা করতে পারবো না। প্লিজ আমার খুধা লেগেছে।
— তুমি এখনো খাও নাই কেন?? তোমাকে কি আমি আমার জন্য বসে থাকতে বলেছি। বেশি বোঝ নাহ।এরপরতো কিছু হলেই আবার আমার দোষ হবে।
— এত কথা শোনাচ্ছ কেন?? আরে আমার একা একা খেতে ভালো লাগে না। তাছাড়া ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
— হুম ওই ঘুম ছাড়াতো তুমি দুনিয়ার কিছুই বোঝ না।
সে রাগী রাগী মুখ করে টেবিলে আসলো।
দেখলাম বেশ মনোযোগ দিয়েই খাচ্ছে।
তাই আমি আর তেমন কিছুই বললাম না। খাবার সময় বেশি কিছু বলাটা আবার আমার বিরক্ত লাগে।
চলবে।

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

▶ লেখকদের জন্য পুরষ্কার-৪০০৳ থেকে ৫০০৳ মূল্যের একটি বই
▶ পাঠকদের জন্য পুরস্কার -২০০৳ থেকে ৩০০৳ মূল্যের একটি বই
আমাদের গল্পপোকা ফেসবুক গ্রুপের লিংক:
https://www.facebook.com/groups/golpopoka/

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে