অপূর্নতার সংসার পর্ব-১১

0
2293

#পর্ব১১
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু।

দেখো রোজা আমি যা বলবো সেটা তোমার ভালোর জন্যই বলছি। তুমি তো বললে আদিলকে ডির্ভোস দিয়ে’ই দিয়েছো তাহলে আমি মনে করি এখন আদিল এর সাথে তোমার কোনোরকম যোগাযোগ না রাখাটাই উওম। আদিল বুঝুক যে ও হীরে রেখে কাচ কে বেছে নিয়েছে। কাচ যখন বেছে নিয়ে এবার কাচে লেগে হাত পা একটু কাটুক তাহলে তো বুঝবে হীরের মুল্য! আর আমি বা রওশন কেউই বলবে না তোমরা যে এখানে রয়েছো। আর এখানে থাকতেও তোমার কোনো অসুবিধা হবে না। আশা করি তুমি এখন আমার কথাটা বুঝেছো?

রোজাঃ হ্যাঁ আংকেল আমি সবটা বুঝেছি। আমিতো রওশন কেও বলেছিলাম একই কথা যাতে আপনারা কেউ আদিলকে আমাদের এখানে থাকার কথা না বলেন।

ব্যস তাহলে তো হয়েই গেলো। এবার তুমি নিশ্চিন্তে এখানে মেয়েদের নিয়ে থাকো।

ও বাড়িতে________

রিনিঃ দেখি খাবার কেমন হয়েছে? এই বলে রিনি পায়েস মুখে নিতেই পায়েসের বাটিটা ফেলে দিলো! এসব কি করেছো আদিল? পায়েসে এতো লবন দিয়েছো যে খাওয়াই যাচ্ছে না! চিনির বদলে বোধহয়ই লবনই দিয়েছো সব। আর দেখি সব্জি আর মাংস টা ওগুলো কেমন হয়েছে? একে একে সবগুলো টেস্ট করে সবকিছু মেঝেতে ফেলে দিলো রিনি!

আদিলঃ তুমি এগুলো কি করছো কি রিনি? আমি এই প্রথম তোমার জন্য রান্না করলাম আর তুমি এগুলো না খেয়ে ফেলে দিচ্ছো!

রিনিঃ খাওয়ার যোগ্য হলেতো খেতাম সেটা বুঝতে পারছো না তুমি? এসব কি রেধেছো তুমি? সব্জি পুড়ে গেছে আর চিকেনে তো এতো ঝাল দিয়েছো যে মনে হচ্ছে মরিচের গুঁড়া সব শেষ করে ফেলছো মনে হয়! তোমার কি মনে হয় এগুলো খেলে আমি সুস্থ থাকবো। না একটু পড়েই খাটে অজ্ঞান হয়ে যাবো তোমার এসব খাবার খেলে।

আদিলঃ তাহলে তুমি এক কাজ করো ফ্রিজে কিছু ফল রাখা আছে আপাততো সেগুলো খাও এখন। আমি বাইরে থেকে আবার আনছি। আর দেখছি কোনো কাজের মহিলা যদি পাওয়া যায়। ।

রিনিঃ হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। তুমি তাড়াতাড়ি যাও বরং। আমার আর এসব বাজে খাবার সহ্য হচ্ছে না
_________________

আংকেল তুমি যদি এখন লুকোচুরি না খেলো তবে দেখো কি হয়?

রওশনঃ মামুনিরা দেখো পরে খেলবো বলেছি তো নাকি?

এখনি খেলো না আংকেল? একটু পড়ে মা পড়তে বসাবে।

বাচ্চাদের এই বার বার বলাটাকে অগ্রাহ্য করতে পারলো না রওশন তাই খেলতে লাগলো ওদের সাথে।

আংকেল তুমি একটু দাড়াও আমরা আম্মু কেও নিয়ে আসছি। তিনজনে মিলে খেললে ভালো হবে না, দাড়াও আম্মুসহ আমরা সবাই মিলে লুকোচুরি খেলবো।

বলতে দেরি হলো সেই সাথে সাথে মেয়েগুলোর যেতেও দেরি হলো না। সঙ্গে সঙ্গে রোজাকে নিয়ে হাজির! তাদের আবদার একটাই তারা এখন লুকোচুরি খেলবে সবাই মিলে। রোজাও মেয়েদের আবদার ফেলতে না পেরে খেলতে লাগলো ওদের সাথে।

প্রথমেই চোখ বেঁধে দেওয়া হলো আলোর। আলো রোজাকে ছুঁয়ে রোজার চোখ বেঁধে দেওয়া হলো। রোজা খেলতে খেলতে একসময় একটা গাছে বাড়ি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। সাথে সাথে রওশন রোজাকে কোলে নিয়ে ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেয়। অনেক্ষন ডাকাডাকির ফলে যখন রোজার জ্ঞান ফিরলো না তখন রওশন ডাক্তারকে ফোন দিলো। ওদিকে মেয়েরাও ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। তারা ভাবছে হয়তো তাদের জন্যই মা আজকে ব্যাথা পেলো।
________________________

ওদিকে রিনি তার শাশুড়ি মায়ের সাথে ঝামেলা করছে! কারন ইদারা বেগম রিনির ফোনটা হাত থেকে ফেলে দিচ্ছে?

রিনিঃ মা আপনার বয়স হয়েছে তো আপনার কি দরকার ছিলো আমার ফোনে হাত দেওয়ার? দিলেন তো ফোনটা ফেলে! না জানি কোনো কিছু নষ্ট হয়ে গেছে কিনা! মা আপনি ভালো করে শুনে রাখুন আপনি আর যখন তখন আমাদের রুমে আসবেন না। আপনার যা দরকার হবে সেটা আপনি আপনার মেয়েকে বলবেন ও করে দিবে।

ইদারা বেগমঃ এসব কি ধরনের কথা বার্তা বউমা? বলি ফোনটা তো আর আমি ইচ্ছে করে ফেলেনি। হাত থেকে পড়ে গেছে। এই কারনে তুমি আমাকে এতোগুলা কথা শোনাতে পারলে! কই রোজার তো কতো কিছু আমার কারনে নষ্ট হয়ে গেছিলো? ও’তো আমাকে তেমন কিছু বলে নি আর তুমি আমাকে এতোগুলা কথা শোনাচ্ছো!

রিনিঃ প্রথমতো আমি আপনার রোজা নই যে সব কিছু মেনে নিবো। আর দিত্বীয়তো আমি আপনাকে যেটা বলেছি সেটা যেনো মনে থাকে আপনার। আর বেশি কথা না বলে যেটা বলেছি সেটা মনে রাখবেন। আর হ্যাঁ শুনুন আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে একটু নুডুলস রান্না করে দিয়েন আমাকে। আপনার ছেলে সেই কখন গেছে বাজারে অথচ এখনো তার ফেরার নাম নেই!

–“রোজা থাকতে কখনো ইঁদারা বেগমকে রান্না ঘরেও যেতে হয়নি। এমনি কখনো ডাইনিং টেবিলে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি কারন রোজা সবকিছুই তাদের করে দিতো। ইঁদারা বেগম নিশ্চুপ ভাবে চলে গেলো রান্না ঘরে রান্না করতে। সে ইতিমধ্যেই বুঝে গিয়েছে যে রিনি মোটেই রোজার মতন নয়। তাই কালবিলম্ব না করে সে নুডুলস বানাতে লাগলো”।

“নুডুলস বানানো শেষ করে রিনিকে কিছুটা দিয়ে আর বাকিটা নিজের জন্য তুলে রাখলো ইদারা বেগম”।

রিনিঃ বাহঃ শাশুড়ি অাম্মা আপনি তো রান্না টা বেশ ভালোই করতে পারেন দেখছি। নুডুলস টা তো অনেক মজা হয়েছে। তা এতো ভালো রান্না করতে পারেন অথচ রান্না করেন না কেনো আপনি?

ইদারা বেগমঃ আমার কি এখনো রান্না করার বয়স আছে বউমা? হাঁটুর ব্যাথায় দাড়াতে পারিনা ঠিকমতন। রোজাই তো সব কাজ করে দিতো। এখন রোজা নেই কি করবো বলো?

রিনিঃ দেখুন মা রোজা এটা করতো, রোজা ওটা করতো এব বলে আর কানের বারোটা বাজাবেন না তো। এতোই যখন ভালো ছিলো তখন গেলো কেনো এখান থেকে। আপনি আর বেশি কথা না বলে এখান থেকে যান তো।

–“ইদারা বেগম চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে তুলে রাখা নুডুলস টুকু খেতে লাগলো, আর ভাবছে রিনি এরকম ব্যাবহার করছে কেনো? রোজাতো এরকম ছিলো না! রোজা থাকতে তো তার সারাদিনে কতো কাজই করে দিতো, বাচ্চাদের সামলানো, ঘরের যাবতীয় সব কাজ একা করতো, আমারও সেবা যত্ন করে দিতো। আর রিনি কি রকম করে যেনো কথা বলে যেনো সেই সবকিছু”!

আদিলঃ রিনি দেখো এখন হোটেল থেকে খাবার এনেছি আজকের দিনটা চলে যাবে। কালকে একজন কে বলে রেখেছি সে এসে বাড়ির সব কাজ করেিয়ে যাবে। তুমি কিছু খেয়েছিলে?

রিনিঃ তাহলে ভালোই হলো কাজের লোক আসবে বাড়িতে। হ্যাঁ আমি নুডুলস খেয়েছি। এখন আমার একটু ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমুলাম।

–“আদিল এর খুব খারাপ লাগল রিনির এরকম ব্যাবহারে। আদিল সারাদিনে রিনির জন্য কতো পরিশ্রম করে রান্না করলো। রিনি সেটার দাম দিলো না। ও একবারো খেয়েছে কিনা সেটা পযর্ন্ত ও জিগেস করলো না। না চাইতেও তখন আদিল এর রোজার কর্ম গুলোর কথা মনে পড়ে গেলো। আদিল যখন যেটা আবদার করেছে রোজা সবকিছু হাসিমুখে করে দিয়েছে। কোনো কিছুতে মানা করতো না” ।
__________________________________

ডাক্তারঃ দেখুন আপনারা ওনাকে এই অবস্থায় এভাবে রেখেছেন কেনো? ওনার তো প্রপার ট্রিটমেন্ট নেওয়া দরকার। ওনার শরীর খুবই দুর্বল। এখন ওনাকে রেস্টে রাখতে হবে। আর খাওয়া দাওয়া ঠিকমতন করতে হবে। আর এখানে কিছু টেস্ট লেখা আছে। টেস্টগুলো করিয়ে নিবেন কালকের মধ্যে। আমি যা সন্দেহ করছি তা টেস্ট গুলো করালেই পরিষ্কার সবটা পরিষ্কার হবে।

রওশনঃ কিসের পরীক্ষা ডাক্তার? খুলে বলুন?

ডাক্তারঃ অনুমান করেছি মাএ। আপনি পরীক্ষাগুলো করে নিবেন কাল হাসপাতালে এসে তখন সবটা বলে দিবো আমি।

আচ্ছা ডক্টর আপনি তাহলে চলুন এবার। ধন্যবাদ আপনাকে।

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে