অপূর্নতার সংসার পর্ব-১৫

0
2631

#পর্ব১৫
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু

কেটে যায় সময় তার নির্দিষ্ট গতিতে! কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সময়ের স্রোত বহমান কারো জন্য অপেক্ষা করে না! ঠিক তেমনি ভাবে তখন কার ঘটনা রোজা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে মেয়েদের বাড়িতে নিয়ে এসেছে!

মেয়েরা রওশনের ঘরে এসে দেখতে পেলো সবকিছু সুন্দর করে সাজানো রয়েছে! সাজানোর ফলে ঘরটিকে অনেক সুন্দর লাগছে। ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো সবকিছু! এক পর্যায়ে রওশনের সেই ফুচকার ঝুড়িটি দেখতে পেলো! দুজনেই বায়না করলো ফুচকা খাবে।

রোজাও মেয়েদের কে প্লেটে ফুচকা দিয়ে দিলো খাওয়ার জন্য। রোজা ভাবতে লাগলো রওশনকে ফিরিয়ে দিয়ে সে কোনো ভুল করলো নাতো? আদৌ কি ঠিক করলো রওশনকে ফিরিয়ে দিয়ে? আদিল তো সুখে আছে রিনিকে নিয়ে। তাহলে রোজার আর পিছুটান কিসের? সে কেনো পারবে না তাহলে রওশনকে মেনে নিতে! রওশন তো কতো ভাবে ওদের নিয়ে। আমার মেয়েদের কে নিজের মেয়ে মনে করে। রওশন আলো আর মিষ্টির সাথে যেভাবে মিশে গেছে মনে হয় না যে রওশন অন্য কেউ।

এসব ভাবতে ভাবতে মেয়েরা রোজাকে হঠাৎই বলে ওঠলো,
“আম্মু আংকেল তো ফুচকা টা খুব ভালো বানিয়েছে। আব্বু তো কখনো আমাদের কিছু বানিয়ে খাওয়ায়নি কখনো! আর আব্বু তো আমাদের রওশন আংকেল এর মতন এতো আদর ও করেনি কখনো”!
শেষমেষ মিষ্টি বলে ওঠলো,
“রওশন আংকেলই আমাদের আব্বু হলে ভালো হতো! আলোও মিষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে একই কথা বলতে লাগলো”!

রোজা কি বলবে বুঝতে না পেরে ওদেরকে পড়তে বসতে পাঠিয়ে দিলো।
________________________

রাএেবেলা সকলে খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। রোজা ওয়েট করছে করিম সাহেব, আর রওশন এর জন্য। করিম সাহেব ফোন করে রোজাকে বলে দিলেন যে তার অপারেশন আছে রাএে তাই তিনি আসতে পারবেন না। কিন্তু রওশন সে তো কিছুই বললো না!

রোজার আস্তে আস্তে ভয় পেতে লাগলো, সে কোনোভাবে রওশনের বাড়ি না ফেরার কারন হিসাবে নিজেকে দায়ী করছে। কিন্তু রোজার ওতো আজকে রওশন কে কিছু বলার ছিলো! ভাবতে ভাবতে সোফাতেই ঘুমিয়ে পড়ে রোজা!
সকালবেলা………………….

রওশন বাড়িতে এসে দেখতে পেলো রোজা ওভাবে সোফাতে শুয়ে রয়েছে! সে কালবিলম্ব না করে রোজাকে ডেকে ওঠালো। রোজা যেনো রওশন কে আনন্দের ঝিলিক ফুুটে ওঠলো চেহারায়! যেনো তাহারই অপেক্ষায় ছিলো এতোক্ষন সে! !সঙ্গে সঙ্গে বলতে লাগলো,

রোজাঃ আপনি কোথায় ছিলেন সারারাত? কি হয়েছিলো? বাড়িতে ফিরেন নি কেনো? ফোন ও দেননি! কিছু বলবেন কি?

রওশনঃ আস্তে আস্তে রোজা এতো প্রশ্ন করলে উওর দিবো কি করে? কালকে শরীর ভালো ছিলো না একটা বন্ধুর বাড়ি গেছিলাম ওখানেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আর ফোনেও চার্জ নেই।

রোজা রওশনকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজে বলতে লাগলো,

“আপনি নিচের বাথরুমে ফ্রেশ হয়ে আপনার রুমে আসুন আমার আপনার সাথে কিছু কথা আছে”।

রওশন ও ফ্রেশ হয়ে উপরে চললো রোজার কথা শুনতে, রুমে গিয়ে দেখতে পেলো যেরম করে সাজিয়েছিলো ঠিক তেমন করেই সাজানো আছে রুমটি।
রওশন কে দেখে রোজা বলতে লাগলো

“আজ আর মনে পড়ে না আদিলের ওই কথা”!
” আজ জীবনে খুশি আছি, ভুলে পুরোনো সব ব্যাথা আর কোনো দিন ফিরে যাবো না পুরোনো সেই জীবনে” “নতুন করে চিনতে পেরেছি আজ আমি নিজেকে”।

“দুঃখ-কষ্ট নিয়েই মানুষের জীবন, কিন্তু দুঃখের পর সুখ আসবে, এটাই ধ্রুব সত্য”

“তেমনি আপনিও আমার জিবনে এমন সুখের ছোয়া নিয়ে এসেছেন। হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি কিনা এ কথাটি এখনি বলতে পারবো না। তবে আপনাকে যতোটুকু চিনেছি তাতে নির্ভয়ে আপনার সাথে বাকি পথ কাটাতে পারবো। এবার আপনি আপনি কি হবেন আমার বাকি জীবনের সাথী? সাথে আমার মেয়েদের বাবা হতে”?
রওশনের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক ফুটে ওঠলো! সে যা চেয়েছিলো এখন তাইই পাচ্ছে।

রওশনঃ যদি তুমি সত্যি বলে থাকো তাহলে রোজা, হ্যাঁ আমিও পারবো তোমার সাথে থাকতে আর তোমার মেয়েদের বাবা হয়ে উঠতে।

রোজাঃ তাহলে অতী শ্রীঘই বিয়ের ব্যবস্থা করুন রওশন। আমিও চাই দিনশেষে এখন একটু সুখে থাকতে।

__________________________________

আজকে রিনিকে নিয়ে আদিল হাসপাতালে এসেছে চেক-আপ করাতে। কারন রিনির ডেলিভারির ডেট চলে এসেছে প্রায়!

ডক্টরঃ চেক-আপ করে যা বুঝলাম সব ঠিকঠাক আছে। আপনি আর বিশ দিন পরে এসে কিছু পরীক্ষা করাবেন। তারপরেই হয়ে যাবে। আর একটা দিন রোগীকে একটু সাবধানে রাখবেন।

আদিলঃ ঠিক আছে ডক্টর আমি এখন যাই।

রিনিঃ শুনলে তো আদিল ডক্টর কি বললো? একদম আমার কথার অন্যথা করবে না। আমি যা বলবো তাইই শুনতে হবে তোমায়।

আদিল নিশ্চুপ হয়ে রয়েছে। তার এখন মনে হচ্ছে রিনির থেকে ঢের গুনে ভালো ছিলো রোজা!

__________________________

দিন যায়, সময় যায়, সময়ের সাথে সাথে সবকিছুই তাল মিলিয়ে আগাতে থাকে। রোজা আর রওশনের বিয়েতে করিম সাহেব কোনো বাঁধা দেন নি! রোজাকে বিয়ে করলে রওশন যেমন সুখী ও হবে তেমনি রওশন দু’টো বাচ্চাকেও পাবে। যাদের মুখ থেকে বাবা ডাক শুনে রওশনের অক্ষমতা টা একটু হলেও ঘুচবে।
রোজা চায়নি ধুমধাম করে তাদের বিয়ে হউক। ঘরোয়া ভাবেই তাদের বিয়ে সম্পন্ন হলো আজকে।

মেয়েদেরকে আজকে করিম সাহেব তার নিজের রুমে নিয়ে রেখেছে করিম সাহেব শুধু একবার বলেছে ওদের যে রওশন কে আর ওদের আংকেল বলে ডাকতে হবে না। কারন তাদের আম্মুর আর আংকেল এর বিয়ে হয়ে গেছে! এখন রওশনই ওদের আব্বু। মেয়েদুটো করিম সাহেবের কথা শুনে খুশি হলো! তারা তো এমনিতেও এটাই চাচ্ছিলো! এক সময় গল্প করতে করতে দু’জনে ঘুমিয়ে পড়েছে।

রোজা অপেক্ষা করছে রওশন এর জন্য। রওশন এখনো রুমে আসেননি! হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে রোজা ঘুরে তাকালো,
রওশন এসেছে ঘরে! রোজা তক্ষুনি গিয়ে রওশন কে সালাম করলো!

রওশনঃ বরাবরের মতনই তোমার জায়গা কখনোই আমার পায়ে হবে না রোজা। আমার হৃদয়ে থাকবে তুমি সবসময়। শুধু মাথা থেকে বাদ দিয়ে ফেলো যে আদিল বলে কেউ ছিলো তোমার জীবনে। ওসব তিক্ত অতীত বাদ দিয়ে এখন বর্তমান নিয়ে বাচো।

রোজাঃ কষ্টের পর সুখ আসবে এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তেমনি করে আপনিও এসেছেন আমার জিবনে। আমি এখন চাই আপনার সাথে সুখে শান্তিতে মেয়েদের নিয়ে জিবন কাটাতে। চলুন ছাদে যাই? ছাদে গিয়ে আমাদের নতুন জীবনের সূচনা পথে ওই আকাশের চাঁদ টাকে সাক্ষী রেখে শুরু করা যাক?

রওশনঃ হ্যাঁ চলো যাওয়া যাক। এখন থেকে শুধু তুমি আমি আর আমাদের মেয়েদের নিয়েই বাকিটা জীবন কেটে যাবে। তোমার অপুর্ন সংসারে পূর্নতা আসবে।

চন্দ্রবিলাশ করতে লাগলো দু’জন মিলে ছাদে গিয়ে। এখান থেকেই শুরু হবে তাদের জীবনের নতুন অধ্যায়।

এক মাস পর…………………….

আদিল রিনিকে নিয়ে হাসপাতালর উদ্দেশ্য রওনা দিচ্ছে, কিন্তু রিনির অসহ্য পেটে ব্যাথা শুরু হয়েছে। আদিল দ্রুত স্পিডে গাড়ি চালাচ্ছে যাতে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে পৌঁছতে পারে, ঠিক তখনি অপর দিক দিয়ে একটি ট্রাক এসে……….

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে