অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১১

0
2468

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১১
#Devjani

শ্রেয়ার রুমে বসে মুখ চেপে কাঁদছে আরাদ্ধা। মায়ের জন্য খারাপ লাগছে।শ্রেয়া পাশে বসেই আরাদ্ধার ফোন টিপছে। বিরক্ত হচ্ছে আরাদ্ধার কান্নায়। কিন্তু থামাচ্ছে না ওকে।থামাতে গেলেই সান্ত্বনায় কান্নার শব্দ দ্বিগুণ বেরে যায়।

হঠাৎ আরাদ্ধার ফোনে একটা মেসেজ আসে। শ্রেয়া মেসেজটা পড়েই চমকে উঠে।আরাদ্ধাকে তাড়াতাড়ি দেখায়।

মেসেজ পড়েই আরাদ্ধার কান্না বন্ধ হয়ে যায়। অদ্রি মেসেজ করেছে।ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে। আগামীকাল বিয়ে। কিন্তু বিয়ে করবে না।ওর মা ওর কাছ থেকে ফোন নিয়ে গেছে। লুকিয়ে বাবার ফোন মেসেজ করেছে। সাহায্য চাইছে তার কাছে।

আরাদ্ধা টেনশনের ভেতর ঢুকে যায়। কান্না করছিল বলে হালকা লাগছিল। কিন্তু এখন আবার মাথা জ্যাম হয়ে আসছে। দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানো শুরু করে।

শ্রেয়ার কাছে ফোন দিয়ে শ্রেয়ানের রুমে চলে যায়।
শ্রেয়ান রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।আরাদ্ধা গিয়ে পাশে বসে পড়ে। আস্তে করে বলে,ভাইয়া তুমি জানো অদ্রির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।কাল বিয়ে।

শ্রেয়ান ভাবলেশহীন ভাবে বলে,তো?

আরাদ্ধা অবাক হয়ে বলে, তুমি অদ্রিকে বাঁচাবে না? তুমি তো অদ্রিকে,,,,,,,

শ্রেয়িন আরাদ্ধাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,তোর ছোট মাথায় এতো কিছু ঢুকানোর দরকার নেই।যা গিয়ে পড়তে বোস!

— তাও ঠিক। কিন্তু,,,,

শ্রেয়ান রাগী গলায় বলে,যাবি?

আরাদ্ধা মুখ ভেংচি কেটে উঠে পড়ে।শ্রেয়ানের কথায় রহস্য আছে।এই শ্রেয়ান আর রোদ্দুর একই গোয়ালের গরু।সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারে না।কথা বলবে ঠিকই কিন্তু রহস্য রেখে দেয় কথা ভাজে।

আরাদ্ধা শ্রেয়ার রুমে ঢুকতেই শ্রেয়া দৌড়ে তার কাছে চলে আসে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে,মোহন রোদ্দুর তোর কি হয়?

আরাদ্ধা অবাক হয় শ্রেয়ার কথায়। বলে, স্যার হয়!ভাইয়াও ডাকি। কেন?

— কিহহ?

আরাদ্ধা ভয় পেয়ে যায়। ফোনটা শ্রেয়ার কাছে দিয়ে গিয়েছিল।শ্রেয়ার কথা শুনে মনে হচ্ছে উল্টাপাল্টা কিছু করেছে। আস্তে করে জিজ্ঞেস করে, কোনো সমস্যা?

শ্রেয়া টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে হালকা পানি খেয়ে নেয়।ছোট নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,সরি মোহন!আমি একটা বাজে কাজ করে ফেলেছি।

আরাদ্ধা বড়বড় চোখ করে আরাদ্ধার দিকে তাকায়।এই ভয়টাই সে পাচ্ছিল।আবার জিজ্ঞেস করে,কি করেছ?

শ্রেয়া আরাদ্ধার হাতে ফোন দিয়ে বলে,তুই ওই রোদ্দুরের মেসেজগুলো দেখে নে।আমি না তোর হয়ে উত্তর দিয়ে ফেলেছি।কথাটা বলে শ্রেয়া দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

আরাদ্ধা ভয়ে ভয়ে মেসেঞ্জারে ঢুকে রোদ্দুর আর শ্রেয়ার করা মেসেজ গুলো দেখা শুরু করে,,,

— আন্টির কাছ থেকে সব শুনলাম।এবার কি তুই আমাদের ভুলে যাবি?
— উহুম,,, তোমাদের কিভাবে ভুলে যাই।
— কি করছিস?
— তোমার সাথে কথা বলছি,,,
— যা গিয়ে পড়তে বোস।সামনে পরীক্ষা।
— তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
— আরু তোর শরীর ঠিক আছে?
— এত খেয়াল রাখো আমার!
— আমি রাখবো নাতো কে রাখবে? আচ্ছা আমার জন্য তোর খারাপ লাগছে না?
— লাগছে তো।আপনি জানেন দু ঘন্টা ধরে আমি আপনার জন্য কেঁদেছি।
— অ্যাহ? কেন?
— সব কথা কি মুখে বলতে হয়? মনের কথাগুলো বুঝে নিতে হয়।
— বেয়াদব মেয়ে! লজ্জা করে না আমার সাথে প্রেমালাপ করতে। ওখানে যেতে না যেতেই এসব শুরু করে দিয়েছিস ভালো কথা। কিন্তু তাই বলে আমার সাথে?এখনি আন্টির কাছে বিচার দিচ্ছি।তার মেয়ের উন্নতি হয়েছে।

আরাদ্ধার গাল লাল হয়ে গেছে।এসব কি লিখেছে শ্রেয়া! রোদ্দুরকে তুমি করে বলেছে!এবার রোদ্দুর তার সম্পর্কে না জানি কি ভাবে।আর মায়ের কানে গেলে বকা নিশ্চিত।

আরাদ্ধা অসহায় দৃষ্টিতে শ্রেয়ার দিকে তাকায়। দরজার আড়ালে লুকিয়ে আরাদ্ধাকে দেখছিল।
আরাদ্ধা বলে,আপু তুমি এটা কি করেছো?আমি ওনার সামনে দাঁড়াবো কিভাবে?

শ্রেয়া আরাদ্ধার সামনে এসে কানে হাত দিয়ে বলে, এত্তোগুলা সরি। তুই ব্যাপারটা সামলে নে।কথাটা বলে মুখ টিপে হেসে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

আরাদ্ধার শ্রেয়ার উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে।বকা দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু শ্রেয়া তার থেকে বয়সে অনেক বড়।তাই কিছু বলতে পারছেনা। রোদ্দুরকেও মেসেজ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। রোদ্দুর তাকে ব্লক করে দিয়েছে।

☆☆☆

রোদ্দুর ক্লাসে টানা আধ ঘন্টা ধরে পড়াচ্ছে।সবাই মনোযোগ দিয়ে রোদ্দুরের কথা শুনছে। কিন্তু আরাদ্ধার পড়ায় মনোযোগ নেই।বই দিয়ে রোদ্দুরের থেকে নিজেকে আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।রোদ্দুরের দিকে তাকাতে লজ্জা লাগছে।এভাবে পড়া যায় নাকি!

হঠাৎ রোদ্দুর আরাদ্ধার সামনে এসে দাঁড়ায়।আরাদ্ধা ভয়ে বইয়ের তাকিয়ে আছে।আড় চোখে একবার রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়।
রোদ্দুর গম্ভীর গলায় বলে, স্ট্যান্ড আপ!

আরাদ্ধা আড় চোখে আবার দেখে উঠে দাঁড়ায়। রোদ্দুর রাগী গলায় বলে,আমি পড়াচ্ছি কিন্তু মনোযোগ কোথায় আপনার?

আরাদ্ধা মৃদু গলায় বলে, মনোযোগ দিয়েই তো শুনছি!

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,তার মানে আপনি বলতে চাইছেন আমি ভুল বলছি? আপনি খুব মনোযোগী?

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, আমি কিভাবে বলবো?আমি তো মনোযোগ দিয়ে শুনছি।

রোদ্দুর আরাদ্ধার খোলো বইটা ওর সামনে ধরে বলে, এই আপনার মনোযোগ?আমি কি এই পৃষ্ঠা পড়াচ্ছি?

— হ্যাঁ?

পেছন থেকে মার্জিয়া উঠে বলে, জিজু ও একটু সরি বেশিই ট্যালেন্টেড তাই আমাদের থেকেও ফাস্ট পড়ে।

রোদ্দুর বিরক্ত হয়ে বলে,আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়েছে?আপনি চুপ করে বসেন।আর আমাকে জিজু নয় স্যার বলে ডাকুন।এখানে আমি আপনার স্যার আর আপনি আমার স্টুডেন্ট। মাইন্ড ইট।

আরাদ্ধা মার্জিয়া দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দেয়।মার্জিয়া আরাদ্ধাকে চোখ রাঙিয়ে বসে পড়ে।

রোদ্দুর আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর ভাবে বলে,পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন।পরের বার অমনোযোগী দেখলে শাস্তি পেতে হবে।কথাটা বলে রোদ্দুর সামনে থেকে সরে যায়।

আরাদ্ধা জোরে শ্বাস ছেড়ে বসে পড়ে। রোদ্দুরের নরমাল বিহেভে ভয় কিছুটা কমেছে। রোদ্দুর হয়ত ঘটনাটা ভুলে গেছে।পরে সরি বলে দিবে।


রোদ্দুর ক্লাস শেষে বের হতেই আরাদ্ধা পেছন থেকে ডাক দেয়। রোদ্দুর পেছন ঘুরে দাঁড়ায়।

আরাদ্ধা রোদ্দুরের সামনে গিয়ে বলে, কিছু কথা আছে আপনার সাথে!

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,কীহ্? তোমার সাথে!তুই আমাকে তুমি করে বলা কবে থেকে শিখলি?বাই দা ওয়ে, তুমি ডাকটা অনেক মিষ্টি লাগে শুনতে!

আরাদ্ধা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলতে এসেছে রোদ্দুরের কথায় সব ভুলে গেছে। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চোখমুখ কুঁচকে বলে, বিশ্বাস করেন,,,,,

— কি বিশ্বাস করবো?

আরাদ্ধা আবার আটকে যায়। অসহায় ভাবে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। রোদ্দুর মিটিমিটি হাসছে।আরাদ্ধা গলা ঝেড়ে বলে,ইয়ে মানে,,,,

— কি?

— মানে আমি,,,,

— তুই কি?

আরাদ্ধা অন্যদিকে তাকিয়ে বলে, কিছু না।পরে বলব।কথাটা বলে উল্টা দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই রোদ্দুর বলে উঠে,আজকে বিয়ের শপিং করতে যাবো সুমাইয়ার সাথে। তুইও যাবি আমাদের সাথে।

আরাদ্ধা গম্ভীর গলায় বলে,আমি গিয়ে কি করবো? তাছাড়া আমার সামনে পরীক্ষা।পড়বো তো!

— বেশি সময় নিবো না।আসবি কিন্তু!

☆☆☆

শ্রেয়ানকে দশবারের মতো ফোন করেও পাচ্ছে না।রাগ লাগছে। অদ্রির বিয়ে হয়ে যাবে তো!

হঠাৎ আরাদ্ধার ফোনে আননোন নাম্বার থেকে ফোন আসে।আরাদ্ধা ফোন কেটে দেয়। আবার ফোন বেজে উঠে।আরাদ্ধার এবার রিসিভ করে।ওপাশ থেকে একজন ভদ্রমহিলা চিন্তিত গলায় বলে, তুমি আরাদ্ধা?

আরাদ্ধা জবাব দেয়, হ্যাঁ।

— অদ্রি তোমার বাসায় আছে?

আরাদ্ধা অবাক হয়।বলে,না। কেন?কে আপনি?

— আমি অদ্রির মা। অদ্রিকে কোথাও পাচ্ছি না।ও ওর রুমেই ছিল। কিন্তু এখন কোথাও পাচ্ছি না।তোমার সাথে অদ্রির কথা হয়েছে?

আরাদ্ধা বিস্ময় নিয়ে বলে,না তো আমি জানি না। কোথায় যেতে পারে ও। খোঁজ পেলে জানাবো।এখন রাখি।
কথাটা বলে আরাদ্ধা ফোন কেটে দেয়। খুশিতে লাফিয়ে উঠে বলে, ইয়েস! অদ্রি চুরি হয়েছে। আমি সিউর কাজটা শ্রেয়ান ভাইয়া করেছে।
সাথে সাথে আরাদ্ধার ফোনে একটা মেসেজ আসে।শ্রেয়ান মেসেজ করেছে।একটা কাজি অফিসের ঠিকানা।
আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যায়।


এ্যাপার্টমেন্টের নিচে দাঁড়িয়ে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ ওর সামনে একটা গাড়ি এসে থামে।আরাদ্ধা ড্রাইভিং সিটে তাকিয়ে দেখে রোদ্দুর বসে আছে।

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,আসেছেন যখন আমাকে একটু নিয়ে যান গাড়ি পাচ্ছি না।

রোদ্দুর গম্ভীর গলায় বলে, উঠে বোস।

আরাদ্ধা খুশি হয়ে যায়। তাড়াতাড়ি গিয়ে রোদ্দুরের পাশের সিটে বসে যায়।
রোদ্দুরকে ঠিকানা দিয়ে বলে,এই কাজি অফিসে চলুন তাড়াতাড়ি, প্লিজ!

রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে, কেন?

আরাদ্ধা মুখে হাসি নিয়ে বলে, শ্রেয়ান ভাইয়া অদ্রিকে বিয়ে করবে।ইসস,,কি সুন্দর ব্যাপার!আপনি তো জানেন অদ্রির বিয়ে ঠিক হয়েছে।তাই শ্রেয়ান ভাইয়া,,,

— কিন্তু পরে অদ্রি তার মা বাবাকে কি উত্তর দিবে?

আরাদ্ধা আফসোসের সুরে বলে, সেটা পরের ব্যাপার। অদ্রির ভাগ্য ভালো।বিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে সবাইকে মজার কাহিনী শোনাতে পারবে।ইসস,,,আমার বিয়ে নিয়ে যদি এমন কোনো ঘটনা হয় অনেক মজা হবে!
রোদ্দুর ছোট ছোট চোখ করে আরাদ্ধার দিকে তাকায়।

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে