অনুভূতির অন্তরালে পর্ব-১২

0
2417

#অনুভূতির_অন্তরালে
#পর্ব:১২
#Devjani

আরাদ্ধার সামনে গম্ভীর মুখে বসে আছে শ্রেয়ান। পাশে অদ্রি। লজ্জায় গালগুলো লাল হয়ে গেছে।
আরাদ্ধা খুশিতে বলে,ভাইয়া চল এবার নতুন বউ নিয়ে বাড়ি ফিরি।

শ্রেয়ান গম্ভীর গলায় বলে,তুই রোদ্দুর স্যারের সাথে চলে যা। অদ্রিকে নিয়ে ওর বাড়ি যাব।ওর মা বাবাকে সরি বলতে।

রোদ্দুর পাশেই আরাদ্ধার দাঁড়িয়ে আছে।হালকা সামনে এগিয়ে গিয়ে বলে, শ্রেয়ান আমাকে স্যার বলার প্রয়োজন নেই।শুনো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। আমি কথাগুলো বলার জন্যই তোমাদের বাসায় গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি তো,,,,,,আমি জানি তুমি এই কথাগুলো শোনার পরিস্থিতিতে নেই। তবুও আমি চাই না বেশি দেরি হয়ে যাক।বেশি সময় নিবো না তোমার কাছ থেকে।

শ্রেয়ান ভদ্রতামূলক হাসি দিয়ে বলে, বলুন ভাইয়া।

— এখানে নয়।একটু দূরে চলো।

আরাদ্ধা তেজি গলায় বলে,কি বলবে তোমরা? আমিও শুনব!

রোদ্দুর বিরক্তিকর কন্ঠে বলে, একটু বেশিই কথা বলিস তুই!তোকে শোনানোর প্রয়োজন বোধ করলে তোকে অবশ্যই ডাকতাম।

রোদ্দুর শ্রেয়ানকে নিয়ে দূরে চলে যায়।আরাদ্ধা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেদিকে।হেসে হেসে কথা বলছে।কোনো পার্সোনাল কথা মনেই হচ্ছে না।তাকে বললে কি হতো! ঢং!

রোদ্দুর কিছুক্ষণ পর এসে বলে,আরু চল।

— কোথায়?

— এখানে থাকার ইচ্ছে আছে নাকি।পরশু আমার বিয়ে,,,, আমার অনেক কাজ আছে।

আরাদ্ধার বিরবির করে বলে,বিয়ে পাগল!

হালকা গলা ঝেড়ে বলে,শুনেন ওই সময় যা বলতে চেয়েছিলাম,,,,,,সেটা হলো কালকে আপনার কাছে যে মেসেজ গুলো এসেছে সেগুলো আমি করিনি।

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,জানি না।তুই যে গাধী তোর পক্ষে এসব রোমান্টিক মেসেজ করা সম্ভব না।

আরাদ্ধা মেকি হেসে বলে,ওই আরকি! ট্যালেন্টেড!

— তোর মতো গাধী না।বাই দা ওয়ে,তোর কাছে কিন্তু প্রমাণ নেই যে মেসেজ গুলো তুই করিস নি।

— মানে?

— যদি আমি আন্টিকে দেখাই?

আরাদ্ধা চোখমুখ কুঁচকে বলে,ভয় দেখাচ্ছেন?

রোদ্দুর রাগী গলায় বলে,গাধী তোকে আমি ভয় পেতে বলেছি?এখন তুই যদি ভয় পেতে চাস তো আমার কি করার আছে।শোন তোকে একটা কথা বলি,কার সাথে কখন কি হয়,,,সেটা কিন্তু আগে থেকে বলা যায় না।তোর সাথেও কিন্তু এমন অনেক কিছুই হতে পারে যেটা তুই ভাবতেও পারিস না।

আরাদ্ধা বড়বড় চোখে প্রশ্ন করে,মানে?

— তোর ছোট মাথায় এসব ঢুকবে না।

আরাদ্ধা ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, শ্রেয়ান ভাইয়াও একি কথা বলেছে। আচ্ছা সত্যি কি আমার মাথা আকারে ছোট?

রোদ্দুর ভ্রু উঁচিয়ে বলে,নিজেই মেপে দেখে নে।

♡♡♡

ঘুমের মধ্যে মনে আরাদ্ধার মনে হচ্ছিল কেউ তাকে দেখছে।চোখ খুলে দেখে শ্রেয়ান তার দিকে তাকিয়ে আছে।আরাদ্ধা প্রশ্ন করে, ভাইয়া কখন এসেছ তোমরা? অদ্রি কোথায়?

শ্রেয়ান জবাব দেয়, অদ্রির মা বাবা আমাদের মেনে নিয়েছে। অদ্রি খুব কাঁদছিল।একটু আগে ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে এসেছি।

আরাদ্ধা আবার প্রশ্ন করে,এত রাতে এখানে কেন এসেছো?যাও গিয়ে রেস্ট নাও।

শ্রেয়ান মলিন হেসে জবাব দেয়,তোকে দেখতে এসেছিলাম। আমাদের অগোচরে কত্তো বড় হয়ে গেছিস তুই। কিন্তু আফসোস,,, তোর বড় হওয়াটা দেখতে পারি নি। নিজের হাতে বড় করবো ভেবেছিলাম কিন্তু সে সুযোগটা আসে নি। কিন্তু দোয়া করি, তুই অনেক বড় হ।

আরাদ্ধার চোখে পানি চলে আসে। তবুও রাগী গলায় বলে,এই এতো রাতে তুমি বউয়ের কাছে না যেয়ে আমার কাছে এসে আমাকে কাঁদাচ্ছো!যাও বউয়ের যাও!
আরাদ্ধা শ্রেয়ানকে জোর করে ওর রুমে পাঠিয়ে দেয়।



ঘরির কাঁটায় সন্ধ্যা ছয়টা বাজছে।পড়ার টেবিলে বসে পরছে আরাদ্ধা।পরীক্ষার বেশি দেরি নেই। আগামী মাসে পরীক্ষা।একটু পর রুমে প্রবেশ করে অদ্রি।ভারী সাজ।আরাদ্ধার কাছে গিয়ে বই টেনে নিয়ে বন্ধ করে দেয়।
আরাদ্ধা বিরক্তি সহকারে অদ্রির দিকে তাকায়।রাগী গলায় বলে, অদ্রি বই এভাবে টেনে নিলি কেন?

অদ্রি আরাদ্ধার হাত টান দিয়ে বসা থেকে উঠিয়ে দেয়। বলে, পাঁচ মিনিট সময় দিচ্ছি। তাড়াতাড়ি গিয়ে রেডি হয়ে নে।শ্রেয়া আপুও রেডি হয়ে গেছে।

আরাদ্ধা অদ্রিকে একবার স্ক্যান করে নেয়। মৃদু গলায় বলে,তোকে দেখতে দারুণ লাগছে কিন্তু কোথায় যাচ্ছিস?

অদ্রি চড়া গলায় বলে,জেনেও না জানার ভান কেন করছিস?আজ রোদ্দুর স্যারের বিয়ে ভুলে গেছিস নাকি?

আরাদ্ধা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। সত্যি ভুলে গিয়েছিল আজ রোদ্দুরের বিয়ে। শেষ পর্যন্ত বিয়েটা করেই নিচ্ছে।হয়ত সেদিন সে ভুল শুনেছিল।
অদ্রি আবার বলে, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? তাড়াতাড়ি যা!
আরাদ্ধা হালকা মাথা নেড়ে রেডি হতে চলে যায়।



রোদ্দুরদের এ্যাপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরাদ্ধা । ভেতরে ঢুকতে অস্বস্তি হচ্ছে।এখানে আসার পরই লক্ষ্য করেছে সবাই আড় চোখে বারবার তাকাচ্ছে তার দিকে।যেন সে কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী।
অদ্রি আর শ্রেয়া তার হাত ধরে ভিতরে নিয়ে যায়।
আরাদ্ধা চারিদিকে তাকিয়ে রোদ্দুরকে খোঁজার চেষ্টা করে। কিন্তু পাচ্ছে না। হঠাৎ রোদ্দুরের মা এসে শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে।আরাদ্ধা ঘাবড়ে যায়। রোদ্দুরের মা তাকে এ্যাপার্টমেন্টের নিচ তলার একটা দ খালি রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। পেছন পেছন অদ্রি আর শ্রেয়াও যাচ্ছে।

রোদ্দুরের মা খালি ঘরটায় এনে দরজা বন্ধ করে দেয়।আরাদ্ধা তাকিয়ে দেখে সবাই আছে এখানে।তার মা বাবা, রোদ্দুর তার বাবা। সুমাইয়ার মা বাবা আর মার্জিয়া।

আরাদ্ধা গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করে,কেমন আছ আম্মু?

— ভালোই।তোর আন্টির কথাটা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন।

রোদ্দুরের মা এসে আরাদ্ধার ধরে বলে,আরু!আমার মাথা একদম কাজ করছে না। প্লিজ কিছু কর।

আরাদ্ধা কথার মানে বুঝতে পারছে না। অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,কি হয়েছে আন্টি?

রোদ্দুরের মা আরাদ্ধার হাতে চিঠি ধরিয়ে দেয়।আরাদ্ধা আগ্রহ নিয়ে চিঠি পড়া শুরু করে। সুমাইয়ার চিঠি।বড়বড় করে লেখা,আমাকে ক্ষমা কর সবাই।আমি এই বিয়েটা করতে পারবো না।

আরাদ্ধার চিঠি পড়া অনেক আগেই শেষ।সে আড় চোখে দেখছে সবাইকে।কি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে।এভাবে তাকানোর মানে কি?
আরাদ্ধা গলা ঝেড়ে বলে, ব্যাপারটা সত্যি খুব খারাপ হয়েছে।

রোদ্দুরের সামনে গিয়ে বলে,ইস,,,আপনার বউও পালিয়ে গেছে।হায়রে,,,,ভাইয়া বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল আপনার। ভেঙ্গে গেল। খারাপ লাগছে। শুধু শুধু পড়া নষ্ট করে এখানে এসেছি। সমস্যা নেই। আচ্ছা আমি বরং আসি।পরেরবার যখন বিয়ে করবেন তখন আবার আসব।আসি!

আরাদ্ধা দূরে যেতেই হাতে টান পড়ে। তাকিয়ে দেখে রোদ্দুরের মা হাত ধরে রেখেছে। রোদ্দুরকে চোখ রাঙিয়ে আরাদ্ধাকে বলে,মা তুই এভাবে চলে যাস না। কিছু কর।নয়তো আমাদের মান সম্মান নষ্ট হবে।সব আত্মীয় স্বজন পরিচিত লোকজন এসে পড়েছে।

আরাদ্ধা মিনমিন করে জিজ্ঞেস করে,আমি আবার কি করবো!

— তুই রোদ্দুরকে বিয়ে করে আরু মা।

আরাদ্ধার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। রোদ্দুরকে বিয়ে!তাও সে! চেঁচিয়ে বলে, অসম্ভব।এটা সম্ভব না।

আরাদ্ধার মা গিয়ে বলে, কেন সম্ভব না। ব্যাপারটা ভেবে দেখেছি। রোদ্দুর ভালো ছেলে।ওর কাছে তুই ভালো থাকবি।

আরাদ্ধা বাবা গম্ভীর গলায় বলে,আমারও তাই মনে হয় আরু। ব্যাপারটা ভেবে দেখ।

মার্জিয়া মন খারাপ করে বলে,আরু ছাড়াও আমি আছি।আমাকে তোমরা দেখতে পাও না।

মার্জিয়ার মা ধমক দিয়ে বলে, চুপ কর।এক মেয়ের জন্য মান সম্মান গেছে। তুই আর নষ্ট করতে যাস না।

রোদ্দুরের মা আবার বলে, প্লিজ আরু!

আরাদ্ধা আড় চোখে রোদ্দুরের দিকে তাকায়।মুখ টিপে হাসছে।আরাদ্ধা অবাক হয়।বউ পালিয়েছে তাও হাসছে!আরাদ্ধা গলা ঝেড়ে বলে, ইম্পসিবল!আমি আসছি।

আরাদ্ধা তাড়াতাড়ি দরজা খুলতে যেতেই আরাদ্ধার মা আটকে দেয়।বলে,তোকে তো শুধু শুধু জোর করছি না। কারণ আছে বলেই জোর করছি। তাছাড়া তুইও তো রোদ্দুরকে পছন্দ করিস।

আরাদ্ধা বিস্ময়ভরা চোখে তাকায় মায়ের দিকে।বলে,কে বলেছে? অসম্ভব!

— রোদ্দুরের সাথে সেদিন তোর কথা বলা মেসেজ গুলো দেখেছি।তোর রুমে তোর ডায়েরীও পেয়েছি যেগুলোতে তুই তোর মনের কথাগুলো,,,,,

আরাদ্ধা থামিয়ে দিয়ে বলে, আম্মু ওগুলো আমি করিনি।শ্রেয়া আপু করেছে। জিজ্ঞেস কর!

শ্রেয়া নিরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে দেখছিল। হঠাৎ আরাদ্ধার এমন কথায় বলে উঠে,না আন্টি আমি করিনি।

রোদ্দুরের মা গিয়ে বলে, আমাদের মান সম্মানের দিকটা একবার ভাববি না?

আরাদ্ধা নির্বিকার ভাবে বলে,না!

তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। পেছনে শ্রেয়া আর অদ্রি তাকে ডাকছে।আরাদ্ধা শুনেও না শোনার ভান করে দ্রুতগতিতে হেঁটে যাচ্ছে।

গেটের সামনে এসে দেখে টাইগার বসে আছে।সাথে আরেকটা কুকুর আছে।তবে এই কুকুরটাকে আগে দেখেনি।

আরাদ্ধা আরেকটু সামনে এগোতেই টাইগার উঠে দাঁড়ায়।
আরাদ্ধা ভয়ে চেঁচিয়ে উঠে, আম্মু টাইগার,,,,, হেল্প!

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে