অতঃপর ভালোবাসি পর্ব-০৫

0
1753

অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৫ম পর্ব

” আপনার কি মনে হয় পৃথিবীর সবাই এক?
” আগে মনে হতো না। তবে এখন মনে হয়। সরি মনে হয় না মনে করতে বাধ্য হই।।
” কেন?
‘” কারণ গত কিছু দিনে যাদের দেখেছি তারা সবাই একই ছিলো।
” পৃথিবীতে সাড়ে সাতশো কোটি মানুষ আপনি সাতশো জনের সাথেও মিশেন নি। তবে আপনি কি করে বলেন যে সবাই এক?
” সবার চোখে ঠিকই লালসা দেখা যায়।
” তাই? আচ্ছা আমার চোখে তাকিয়ে দেখুন তো কি দেখতে পাচ্ছেন?
কথটা বলেই আঁচলের দিকে তাকালো রাহি। এই প্রথম কেউ আচলকে তার চোখের দিকে তাকাতে বললো। আচল অনেক বার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই রাহীর চোখের দিকে তাকাতে পারলো না। কোন এক অজানা কারনে বার বার তার চোখ নিচে চলে আসতো।
” কি হলো তাকান।
” আমি পারবো না।
রাহী মুচকি হাসালো – আসলে আপনি যে সব পুরুষ কে এক ভাবেন এটা আপনার দোষ না। সমাজ আপনাকে সেটা ভাবাতে বাধ্য করেছে। কিন্তু সব পুরুষ এক এটা আপনার ভাবা উচিত না। কারণ আপনার বাবাও একজন পুরুষ। তবে কি সেও?
” না। আমার বাবা খুবই ভালো ছিলেন।
” তেমনি প্রতিটি পুরুষ কারো না কারো বাবা। আর সেও কিন্তু তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। তবে সমস্যা হচ্ছে নিজের সন্তান কে যেভাবে দেখেন তারা অন্যের সন্তান কে সেভাবে বিচার করেন না।
” দেখুন আমি এখানে আপনার এসব মহান উক্তি শুনতে আসি নি। নিয়ে চলুন আমায় আপনার বিছানায় আর জিরিয়ে নিন নিজের পুরুষ সত্তাকে।
রাহী আঁচলের থেকে কিছুটা দূর ছিলো। আঁচলের খুবই কাছে চলে এসে বললো- পুরুষ সত্তা কি জানেন? যারা রাতের আধারে অন্ধ গলিতে গিয়ে নগ্নতায় মেতে ওঠে নিজের তাদের মাঝে কোনো পুরুষ সত্তা নেই । তারা নাম মাত্র পুরুষ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সে কাপুরুষে। আর আমি এখানে আপনাকে কোনো শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য নিয়ে আসি নি। আর আপনার বোনদের তো অবশ্যই না। যার জন্য আপনি শুধু শুধু পায়ে ধরেছেন।
” তাহলে আপনি আমাদের এখানে কেন নিয়ে এসেছেন?
” আপনাকে প্রশান্তি দিতে।
” মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে?
” হ্যাঁ। কারণ আপনার সাথে যতটুকু সময় কাটিয়েছি তাতে মনে হয়েছিলো সত্যি বললে আপনি আসতেন না।
” একটা প্রবাদ আছে ‘ মিথ্যা বলে সাময়িক প্রশান্তি দেওয়ার থেকে সত্যি বলে কাঁদানো ভালো ‘ এটা আপনি জানেন কি?
” হ্যাঁ। তবে মানি না।
” কেন?
” কারণ যে এই উক্তি টা দিয়েছে সে কখনো কোনো দিন বাস্তব জীবনের মুখোমুখি হয় নি।
” মানে?
” বাস্তব জীবনে সুখ শান্তি এসব ক্ষণস্থায়ী। এই আছে এই নেই। যদি আমার একটা মিথ্যার জন্য কাউকে ক্ষনিকের জন্য সুখ মিলে তবে সেটাই আমার বড় পাওয়া । কারণ জীবন তাকে সব সময় কাঁদাবে আমার একটা মিথ্যার জন্য যদি সে কিছুটা সময় কান্না ভুলে হাসে তবে সেটা আমার জন্য কতটা আনন্দের সেটা পরিমাপ করা যাবে না। তাই কাউকে সত্যি বলে কাদানোর থেকে মিথ্যা বলে যদি সাময়িক প্রশান্তি দেওয়া যায় তবে সেটাই করা উচিত। কারণ দুঃখ তো সারাজীবন পিছনে লেগেই থাকবে ।
” হুম। আচ্ছা আপনি কোথায় জব করেন?
” মানে?
” আজ যে আপনি অফিসে গেলেন সেটা কি অফিস?
” সেটা কাল বলবো। আচ্ছা কেউ যদি আপনাকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের সুযোগ করে দেয় তবে আপনি কি করবেন?
” জানিনা। তবে এটা কখনো হবার নয়।
” কেন নয়? আপনাকে স্বাভাবিক ভাবেই বাচতে হবে। কারণ আপনার ছোট দুটো বোন আছে। আপনার প্রভাব আপনার বোনের উপর পরবেই। ওরা বড় হচ্ছে তখন যখন আপনাকে জিজ্ঞেস করবে যে আপনি কি করেন তখন আপনি কি বলবেন?

আঁচল কখনো এই কথাটা ভাবে নি। যে ভবিষ্যতে কি হবে?
আসলেই তো আজ নয় কাল তো জিজ্ঞেস করবে তখন আমি তাদের কি জবাব দিবো?
তখন যদি তারা আমার আসল পরিচয় পেয়ে আমায় ছেড়ে চলে যায়?
এসব ভেবেই আঁচলের চোখে পানি চলে আসলো।।
‘” কান্না করলে সব সমস্যার সমাধান হয় না। নিয়তি কতৃক প্রদত্ত সমস্যা গুলো নিজের বুদ্ধি দিয়েই সমাধান করতে হয়।
” আমার কিছুই করার নেই ।
” আমি গতকাল রাতে অনেক ভেবে একটা সিন্ধান্ত নিয়েছি।
” কি সিদ্ধান্ত?
” আমি আপনাকে আবার নতুন করে বাঁচার পথ দেখাবো। নতুন করে সব কিছু শুরু করার সুযোগ করে দিবো।
” কিভাবে?
” আমি আপনাকে বিয়ে করবো।
রাহির এই কথাটা শুনে খুবই হাসি পেলো আঁচলের। – দয়া দেখাচ্ছেন?
” দয়া না। আমি শুধু আপনাকে একটা সুযোগ দিতে চাচ্ছি।।
” ঐ একই হলো ।।
” কিভাবে?
” আপনি কেন একটা যৌনকর্মী কে বিয়ে করবেন? যার কাছে আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই।
” যৌনকর্মী কি মানুষ না?
” মানুষ তবে সেটা শুধু দেখতে। কিন্তু সমাজে মানুষ হিসাবে গন্য হয় না।
” আমি আপনাকে বিয়ে করবো আপনি কি রাজি?
” আপনি দয়া করে আপনার মজা করা বাদ দিবেন?
” আমায় দেখে বা আমার কথা শুনে কি আপনার মনে হচ্ছে আমি আপনার সাথে মজা করছি?
আঁচল কিছু বলছে না। সে ভেবেই পাচ্ছে না তার এখন কি বলা উচিত। তাই সে চলে যেতে লাগলো।

To be continue…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে