অতঃপর ভালোবাসি পর্ব-০৪

0
1904

অতঃপর ভালোবাসি
Sumon Al-Farabi
৪র্থ পর্ব

” কেউ কি নিজের শখে যৌনকর্মী হয়? আপনার ভদ্র সমাজ হতে বাধ্য করে।
” সমাজে তো অনেক কাজেই আছে আপনি চাইলে অন্য কাজও তো করতে পারতেন।
” চেষ্টা তো আর কম করি নি । কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই বিছানায় যাওয়ার অফার পেতে হয়েছে নয়তো অপমানিত হতে হয়েছে, হয়েছে হাসির পাত্র হতে। কেন জানেন? কারণ আপনার ভদ্র সমাজ Give and Take মেনে চলে। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে। আর সেই কিছুটা হলো প্রতি নিয়ত তাদের বিছানায় যেতে হবে ।
” ওহ।
” একজন আমায় কি অফার করেছিলো জানেন?
” কি?
” তার মাদকাসক্ত ছেলে যে কি না নেশা করার পর হিংস্র জানোয়ারের থেকেও হিংস্র হয়ে যায় মেয়েলী মাংসের স্বাদ নিবে জন্য প্রতিদিন তার বিছানায় যেতে । তার যৌনতা চাহিদা মেটাতে।
” আপনি কি বলেছিলেন?
” আমি শুধু বলেছিলাম এসবের থেকে আমার সাথে বিয়ে দিন আমি ওনাকে শুধরে দিবো। পাল্টা উত্তর কি শুনতে হয়েছে জানেন?
” কি?
” তোমার মতো রাস্তার মেয়ের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দিবো এটা ভাবলে কিভাবে? তোমাকে শুধু তার চাহিদা মেটাতে বলেছি। তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে নয়। ভাবুন তাহলে আপনার সমাজ কতটা ভালো। বাবা তার ছেলের যৌনতার জন্য একটা মেয়ের বয়সের মেয়েকে তার বিছানায় পাঠাতে একবার ভাবে না। ভাবুন দারিদ্র্য ঘরের মেয়েদের সমাজে কোন চোখে দেখা হয়?
” তবুও তো আপনার চরিত্রে যৌন কর্মী ছাপটা উঠতো না। তাহলে
” আপনার সমাজ
” আচ্ছা আপনি তখন থেকে আপনার সমাজ আপনার সমাজ বলছেন কেন? এই সমাজ টা আপনার না?
” না। আমি সেই অন্ধকার, নোংরা বাজে সমাজের। যে সমাজের নাম শুনলেও আপনারা থুথু ফেলান। আবার রাতের আধারে চোরের মতো সেই সমাজেই হারিয়ে যান।

” চলুন ওখানটায় বসি।
রাহী আঁচল এসে দালানে হেলান দিয়ে বসলো।
” বাবা মার মৃত্যুর পর জমানো কিছু টাকা ছিলো। সেগুলো দিয়ে কিছু দিন চলি। এরপর থেকেই শুরু হয় জীবন যুদ্ধ । অনেক বার চেয়েছিলাম সুইসাইড করতে কিন্তু পারিনি। ছোট বোন দুটোর মুখ চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি মরে গেলে হয়তো ওদের ও আমার রাস্তায় আসতে হবে । কিন্তু আমি চাই না। আমি ঝড় সামলে নিয়ে তাদের ছাতা হবো। বাকীটা জীবন ।

রাহী কিছু বলছে না। শুধু ভাবছে মেয়েটা কতটা চাপে পরে আজ এমন অবস্থায়। পৃথিবীতে যার মা বাবা নেই পৃথিবী টা সত্যি তার কাছে মৃত্যু যন্ত্রণার মতো ভয়ংকর । যেখানে কেউ কাউকে এক ফোটা জায়গা ছেড়ে দেয় না ।

রাহী আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। বেশ কিছু সময় পর হঠাৎ তার কাঁধে কিছু একটা পড়লো মনে হলো।
আঁচল ঘুমিয়ে পড়ছে। সেই রাহীর ঘাড়ে মাথা হেলিয়ে দিয়েছে।
রাহী আঁচলের দিকে কিছুটা সরে আসলো। যাতে আঁচলের কষ্ট না হয়।
আঁচল বার বার হিংস্র শব্দটা ব্যবহার করছিলো এর মানে কি আমরা পুরুষ জাতি সত্যি নিজের চাহিদা পূরণে হিংস্র পশুর ন্যায় আচরণ করি? হয়তো বা।

রাহী আঁচলের দিকে তাকালো। চোখের পাতায় এখনো পানি জমেই আছে । আলতো করে পানিগুলো মুছে দিয়ে আঁচল কে কোলে করে নিয়ে নিচে আসলো। অধরা আর আরসির পাশে শুইয়ে দিয়ে রাহী অন্য রুমে চলে গেলো।

আঁচল অধরা আরসি, আমাদের সমাজ ব্যাবস্থা এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো বুঝতে পারে নি।

সময় ঠিক কয়টা মনে নেই। তবে খুব বেশি সকাল হয় নি এটা ঠিক । চোখে সূর্যের আলো পড়ায় ঘুম ভেঙে গেলো রাহীর।
চোখ খোলার চেষ্টা করছে কিন্তু চোখ খুলছেই না। হাত দিয়ে চোখ মুছে এবার চোখ খুললো রাহী। আঁচল জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়েছে তাই আলো এসে সরাসরি চোখে পড়ছে।

” আপনি রুমে আসলেন কিভাবে?
” দরজা তো খোলায় ছিলো।
” ওহহ আচ্ছা । ক’টা বাজে?
” ১০ঃ৩০।
” আমাকে অফিসে যেতে হবে তাড়াতাড়ি। আজ নাকি একটা মিটিং আছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার সিগনেচার লাগবে ।

আঁচল কে আর কিছু না বলতে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে রাহী। ইতিমধ্যে আঁচল রাহীর জন্য খাবার গরম করতে রান্না ঘরে চলে আসছে।
রাহী তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে ।
” একটু অপেক্ষা করুন। বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। খাবার গরম হয়ে গেছে প্রায়।
” সময় নেই। এসে খাবো। আর হ্যাঁ সব কিছু ফ্রিজে আছে । তাড়াতাড়ি রান্না করেন।। আপনারা সকালের টা খেয়ে নেন আমিও একটু পরেই আসছি।

রাহী আর কিছু না বলে চলে গেলো। আঁচল পিছনে থেকে ডাকলো কিন্তু রাহী সে কথায় কান দিলো না।

অফিসে গিয়ে অফিসের কাজ শেষ করলো। এরপর ঐদিন যে বন্ধুর বউকে রক্ত দিয়েছিলো তাকে দেখার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলো।
এখন প্রায় রাত ৯ টা। কলিং বেল বাজার সাথে সাথেই আঁচল দরজা খুলে দিলো। মনে হয় দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো। রাহী কখন আসবে সেই অপেক্ষা করছিলো।
” আপনারা চলে যান নি?
” না মানে।
” আচ্ছা আসুন।
ভিতরে এসে অধরা কে জিজ্ঞেস করলো – খাওয়া করছো রাতে?
” হ্যাঁ ভাইয়া।
” আরসি খাইছে?
” হ্যাঁ। ও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। শুধু আপু খায় নি।
রাহী ঘাড় বাকা করে আঁচলের দিকে তাকালো। চোখাচোখি হতেই আঁচল মাথা নিচু করলো।
” তুমি ঘুমাবে না?
” হ্যাঁ ।
” যাও শুয়ে পড়।
আঁচলের দিকে তাকিয়ে বললো- ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিন।
আঁচল অধরাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। রাহী রুমে এসে ফ্রেশ হলো। এরপর বাইরে এসে সোফায় বসে টিভি দেখতে শুরু করলো।
একটু পরেই আঁচল এসে দাঁড়ালো।
” অধরা ঘুমিয়েছে?
” হ্যাঁ
” এতো তাড়াতাড়ি?
” হুম ।
” আপনি পারবেন এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাতে?
ঘাড় নাড়িয়ে না বললো আঁচল ।
” ছোটবেলা টা আসলেই সুন্দর কোনো চিন্তা নেই। তাই জন্য বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই রাজ্যের ঘুম এসে চোখে বাসা বাঁধে।
” হুম ।
” চলুন খাওয়া করি।
আঁচল কে নিয়ে খেতে আসলো রাহী। চুপচাপ খাওয়া শেষ করে রাহী নিজের প্লেট টা পরিস্কার করে ছাঁদে চলে আসলো । আঁচলের খাওয়া তখন ও বাকী।
রাহী চাঁদের দিকে তাকিয়ে ভাবছে যদি চাঁদে যেতে পারতাম তাহলে আর কোনো দিন পৃথিবীতে আসতাম না। এসব বড় বড় দালান ভালো লাগে না। কেমন জেনো মানুষের মন গুলোও ইট পাথরের মতো কঠিন হয়ে গেছে ।
” আমরা চলে যাই নি জন্য রাগ করছেন তাই না?
আঁচলের কথায় রাহী পিছনে ফিরলো। মুচকি হেঁসে বললো- আমি চাইতাম যাতে আপনারা না যান।
” কেন?
” আচ্ছা সেটা আমি পড়ে বলছি। আগে আপনি বলুন আপনি কেন জান নি?
” আপনার কাছে যে জন্য টাকা নিয়েছি সেই কাজটা শেষ করি নি তাই । কারণ আমি বাজে হতে পারি চিটার নই।
” ওহহ আচ্ছা । আপনি চাইলে চলে যেতে পারতেন।
” হুম। আমি বলবো আপনি কেন চাইতেন যেন আমরা না যাই?
আঁচলের কথাটা শুনে খুবই উৎসাহিত হলো রাহী। হাসি হাসি মুখে বললো- তাই? বলুন শুনি।
” আপনার চাহিদা পূরণ হয় নি। আপনি কি আপনার টাকা পানিতে ফেলবেন নাকি। তাই জন্য।।

আঁচলের কথাটায় রাহীর মনের কোথাও যেন একটা বড় জখমের সৃষ্টি করলো। হাসি মুখটা নিমিষেই ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। রাহী আবার ফিরে আকাশের দিকে তাকালো।
রাহী মনে মনে ভাবছে – পৃথিবীর সবাই কি চাহিদার জন্যই অন্য কে কাছে টানে? হয়তো হ্যাঁ আবার হয়তো না। তবে জীবন যাকে যেভাবে শিখিয়েছে সে সেভাবেই সবাইকে বিচার করবে এটাই স্বাভাবিক।

To be continue….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে