pyar_tho_hona_hi_tha Part-07

0
1785

#pyar_tho_hona_hi_tha❤
লেখা-পূজা
পর্ব- ৭


নিলি ভার্সিটিতে যেথেই রিত্তিক দৌড়িয়ে নিলির কাছে আসে। তৃনা আর রাহুল ও পিছু পিছু আসে।

নিলিঃকি হয়েছে?

রিত্তিকঃএই নে তর টিকিট।

নিলিঃএর জন্য দৌড়িয়ে আসা লাগে। আমি কি উড়ে যাচ্ছিলাম।

রিত্তিকঃ😐আজ টাকা জমা দিয়ে দিস।

নিলিঃওকে।

নিলি টিকিট টা হাতে নিলো। তারপর তৃনাকে নিয়ে ক্লাসে চলে গেলো।

তীব্র তানভীর আকাশ বিপ্লব আরো অনেকের সাথে প্লেনিং করছে। কে কোন বাসে গাইড করবে। কে কোন দায়িত্ব নেবে। জায়গা ঠিক করা হয়ে গেছে। রিসোর্ট ও ঠিক করা হয়ে গেছে। ২টা ফুল রিসোর্ট বুক করেছে। মানুষ অনেক তাই।

তীব্রঃযারা যারা যাবে তাদের সিট নাম্বার এর সাথে মিলিয়ে লিস্ট তৈরি করে ফেলবি।

তানভীরঃওকে।

তীব্রঃতরা বাকি প্লেনিং কর। আমি আসছি।

আকাশঃকোথায় যাবি?

তীব্রঃতৃষু মেসেজ দিয়েছে। জলদি বাসায় যেথে বলেছে।

তানভীরঃকিছু হয়েছে?

তীব্রঃজানি না। গিয়ে দেখতে হবে। অন্য এক প্রবলেম এ পরেছি।

আকাশঃকি?

তীব্রঃমা নেহার সাথে আমার বিয়ে দিতে চাচ্ছে।

বিপ্লবঃকিইই?

তীব্রঃতরা থাক আমি আসছি। কিছুক্ষনের মধ্যে চলে আসবো।

আকাশঃওকে। বাসায় কিছু হলে ফোন দিয়ে জানাস।

তীব্রঃওকে। বাই।

কাল থেকে আরশি নিলয়ের সাথে একটা কথা ও বলে নি। নিলয় আরশিকে সরি বলতে গিয়েও বলতে পারছে না। কাল একটু বেশিই করে ফেলেছে। ভালো করে বললে ও হতো। নিলয় রেডি হচ্ছে আর আড়চোখে আরশির দিকে তাকাচ্ছে। আরশি বিছানায় কোলে বালিশ রেখে মাথা নিচু করে বসে আছে। নিলয়ের দিকে তাকাচ্ছে ও না।

নিলয়ঃআরশি?

আরশি মাথা তুলে নিলয়ের দিকে তাকালো।

নিলয়ঃকালকের বিহেভিয়ারের জন্য সরি। তখন আমার মাথা ঠিক ছিলো না। না বুঝে…….

আরশি কিছু বললো না আবার মাথা নিচু করে ফেললো।

নিলয়ঃনিচে চলো। ব্রেকফাস্ট করবে।

অরশি এবার ও কিছু বললো না।

নিলয়ঃকি হলো? শুনতে পারছো না কি বলছি?

আরশিঃখাবো না।

নিলয়ঃআমি কিছু শুনতে চাই না। এখন আমার সাথে নিচে আসবে।

আরশি কাদোঁ কাদোঁ গলায় বললো,”আমাকে প্লিজ এখান থেকে যেথে দিন। আমি নিরব এর কাছে যাবো।”

আরশির কথা শুনে নিলয় কিছুক্ষণ আরশির দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর বললো,”নিরবকে খুজে পেলে অবশ্যই আমি তোমাকে ওর হাতে তুলে দেবো। বাট আমি তোমাকে এখন একা ছারতে পারবো না। তোমার বাবা তোমার রেসপন্সিবিলিটি আমায় দিয়েছেন। তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি উনাকে কি জবাব দেবো।”

আরশিঃবাপির সাথে তো আমি সব রিলেশন শেষ করে এসেছি।। আর আপনি তো আমাকে এই বাড়িতে বন্ধি করে রেখেছেন। আমি নিরবকে খুজবো কি করে বাড়ি থেকে না বেরলে।

নিলয়ঃআমি খুজছি তো নিরবকে।

আরশিঃকি? আপনি নিরবকে চেনেন?

নিলয়ঃখুব ভালো করে।

আরশিঃমানে?

নিলয়ঃকিছু না। খেতে আসো।

আরশি আর কিছু বললো না। নিলয়ের পিছু পিছু নিচে চলে গেলো। ২জন ডাইনিং টেবিলে বসলো। সার্ভেন্ট এসে ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেলো।

নিলয়ঃআজ বিকেলে আমার কিছু ফ্রেন্ড আসবে বাসায়। তারা এই দেশের না। সব ঠিক করে রেখো।

আরশিঃ🤨হঠাৎ ফ্রেন্ড কেনো?

নিলয়ঃবলেছি না ওরা এই দেশের না। ইউএস থেকে এসেছে। বিয়েতে আসতে পারে নি। তাই ফোন দিয়ে বললো আজ আসবে।

আরশিঃমানে আমাকে দেখতে আসবে?

নিলয়ঃহুম।

আরশিঃআমি পারবো না ওদের সামনে যেথে।

নিলয়ঃকেনো?

আরশিঃআমি আপনার বউ হয়ে থাকতে পারবো না।

নিলয়ঃতুমি আমার বিয়ে করা বউ। এটা ভুলে যেও না।

আরশিঃভুলবো। কারন আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না।

নিলয়ঃতুমি মানো বা না মানো। এটা মিথ্যে হয়ে যাবে না। আর ওদের আমি না করতে পারবো না। ওরা নিজে থেকে ফোন দিয়ে আসতে চেয়েছে।

আরশিঃআমি…..

নিলয়ঃনিরবের কাছে যেথে চাইলে আমার সব কথা শুনতেই হবে। নয়ত কখনো নিরব এর কাছে যেথে পারবে না।

আরশিঃআপনি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিতে পারেন না।

নিলয়ঃআমি কি পারি। আর না পারি তার কোনো ধারনাই তোমার নেই। তাই বেশি কথা না বলে আমি যা বলেছি তাই করবে। আমার অফিসে যেথে লেইট হয়ে যাচ্ছে। আসি। আর বিকেলে এসে যেনো সব ঠিকঠাক পাই। ওরা লাঞ্চ করে যাবে।

আরশি কিছু বললো না চুপচাপ রাগ করে বসে রইলো। নিলয় চলে গেলো অফিসে।

তীব্র বাসায় এসে দেখে নেহা নেহার বাবা আর তীব্রর মা বসে আছেন ড্রয়িংরুমে আর তৃষি মন খারাপ করে দারিয়ে আছে।

তীব্রঃতৃষু।

তীব্রর কথা শুনে সবাই তীব্রর দিকে তাকালো।

তীব্রর মাঃভালো হয়েছে তুমি এসেছো। তোমাকে নিয়েই কথা হচ্ছিলো।

তীব্রঃমানে?

নেহার বাবাঃতোমার আর নেহার বিয়ের ব্যাপারে কথা হচ্ছে।

তীব্র এই কথা শুনে প্রথমে অবাক হয়ে সবার দিকে তাকালো। তারপর রাগি লুকে নেহার দিকে তাকালো। নেহা তীব্রর দিকে তাকাচ্ছেই না।

তীব্রঃমা। আমার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি। এখনো অনার্সই কমপ্লিট করি নি।

তীব্রর মাঃতো কি হয়েছে? বিয়ের পর কি স্টাডি কন্টিনিউ করা যায় না। আর নেহার রেসপন্সিবিলিটি তোমায় নিতে হবে না। তুমি শুধু বিয়েটা করে নেবে। নেহার সব দায়িত্ব আমাদের।

তীব্রঃআমাকে একটু টাইম দেওয়া যায় না।

নেহার বাবাঃবাবা আমি যদি এখানে থাকতাম তাহলে টাইম দিতাম। বাট আমাকে সামনের মাসেই চলে যেথে হবে। হাতে আর ২০দিন আছে।

তীব্র অসহায়ভাবে তৃষির দিকে তাকালো। তৃষি ইশারা দিয়ে বুঝালো নিলির কথা ওর মাকে বলে দিতে। তীব্র ও ইশারা দিয়ে বুঝালো ও ভয় পাচ্ছে যদি রাজি না হয়। তৃষি আবার ইশারা দিয়ে বুঝালো একটু সাইডে আসতে কথা আছে।

তীব্রঃতোমরা কথা বলো। আমি একটু আসছি।

তীব্র বারান্দায় গেলো। গিয়ে তৃষিকে বললো,”বোন কিছু একটা কর।”

তৃষি:গাধা নিলির কথা বলে দিলি না কেনো?

তীব্রঃমা কখনো রাজি হবে না।

তৃষিঃচেষ্টা তো করবি। আর না হলে বাবার সাথে কথা বল।

তীব্রঃঠিক বলেছিস। বাবার সাথে কথা বলে দেখতে হবে। বাট মনে হয় না মা বাবার কথা শুনবে। তুই তো জানিস বাবা মাকে কতটা ভয় পায়।

তৃষিঃতা অবশ্য ঠিক। বাট একবার কথা বলে দেখে নিস।

তীব্রঃনেহাকে বলেছিলাম এই বিয়েটা ক্যান্সেল করতে। বাট ও আমার কথা শুনেনি।

তৃষিঃশুনবে ও না।

তীব্রঃকেনো?

তৃষিঃও তকে ভালোবাসে এটা আমি অনেক আগে থেকেই জানি। ওর হাভ ভাবেই বুঝতে পেরেছি। আর ওকে আমি যতটুকু চিনি,,, ওর নজর একবার যেদিকে যায় তা ও নিজের করেই ছারে।

তীব্রঃবাট আমি ওকে কোনোভাবেই বিয়ে করতে পারবো না।

তীব্র আর তৃষি ড্রয়িংরুমে আসে। এখনো তীব্রর মা আর নেহার বাবা বসে গল্প করছেন। আর প্লেন করছেন বিয়েতে কি কি করবে। আর নেহা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে চুপচাপ শুনছে ওদের কথা।

তীব্র ড্রয়িংরুমে আসতেই তীব্রর মা তীব্রকে বললেন,”তোমার টুর থেকে ফিরতে কতোদিন লাগবে।”

তীব্রঃএক সপ্তাহ। কেনো?

তীব্রর মাঃতাহলে এর পরের কোনো ভালো ডেইট দেখতে হবে বিয়ের জন্য।

তীব্র বিয়ের কথা শুনে আবার তৃষির দিকে তাকালো। এখন ওর ইচ্ছে করছে নেহাকে খুন করতে। এত করে বললো বিয়ে আটকাতে আটকালো না।

নেহার বাবাঃতনয় এর সাথে এই বিষয়ে ডিসকাস করে না হয় ডেইট ফিক্সড করা যাবে।

তীব্রর মাঃআমি রাতে তনয় এর সাথে কথা বলে নেবো।

নেহার বাবাঃওকে আমি ফোন করে জেনে নেবো।

তীব্রঃমা আমি এখন আসি।

তীব্রর মাঃআবার কোথায় যাবে।

তীব্রঃভার্সিটিতেই। কিছু কাজ আছে। তৃষুর মেসেজ পেয়েই চলে এসেছিলাম। এখন আবার যেথে হবে। তানভীর ফোন দিয়েছে।

তীব্রর মাঃআচ্ছা যাও। জলদি চলে এসো।

তীব্রঃফিরতে রাত হবে।

নেহার বাবাঃতীব্র…….

তীব্র আর কারো কোনো কথা শুনার অপেক্ষা না করে চলে যায়।

তীব্রর মাঃও ঘুরতে খুব পছন্দ করে। বুঝতেই পারছেন বাবার মতো হয়েছে। তাই……..প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

নেহার বাবাঃআরে না। কিছু মনে করিনি। এখনই তো বয়স ঘুরে বেরানোর। আমি মেয়েটাকে একা রেখে যেথে সাহস পাচ্ছি না। তাই এই স্টেপটা নিতে হচ্ছে। না হলে এই বয়সে এতো বড় দায়িত্বের মধ্যে ছেলেটাকে বাধতাম না।

তীব্রর মাঃআমি বুঝি মা বাবার টেনশনটা। আপনি চিন্তা করবেন না। নেহা তো আমার তৃষির মতোই। ওকে আমি আমার মেয়ের মতোই দেখবো।

নেহার বাবাঃআপনাদের উপর বিশ্বাস আছে বলেই এত বড় কাজ করছি। ওয়েল,, এখন তাহলে আমরা আসি। পরে ফোন করবো।

তীব্রর মাঃওকে। নেহামা মাঝে মাঝে এসো কিন্তু বাসায়।

নেহাঃওকে আন্টি। বাই।

নেহা আর ওর বাবা তীব্রর মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। তৃষি এতক্ষণ দুর থেকে দারিয়েই এসব দেখছিলো।

অরশি রাগে ফুসতে ফুসতে সার্ভেন্টদের খাবার মেনু বলে দিচ্ছে। কি কি করতে হবে সব বলছে। তারপর ঘড় কিভাবে ঘুছাতে হবে সেগুলো ও বলে দেয়। সব শেষে ও রুমে যায়। বিছানায় বসে পরে।

আরশিঃউপপ কবে যে এই বাড়ি থেকে বের হতে পারবো। ধম বন্ধ হয়ে আসছে। আর পারছি না এখানে থাকতে। আসহ্য!

কিছুক্ষণ পর আরশি বিছানা থেকে উঠে কি মনে করে নিলয়ের আলমারিটা খুলে। এক সাইডে নিলয়ের কাপড় অন্য সাইডে সব ফাইল। কোনোকিছুই গুছানো নয়। সব অগুছানো।

আরশিঃকখনো এগুলোকে গুছায়নি নাকি। ভেতরের এই অবস্থা কেনো? ছিঃ!!
শেষ বারের মতো একটু গুছিয়ে দিয়ে যাই। বউ এর কর্তব্য একটু পালন করাই যায়। নিরবকে পেলে তো চলেই যাবো।

আরশি এত কিছু না ভেবে গুছাতে শুরু করে। প্রথমে সব কাপড় ঠিক করে রাখে। তারপর সব ফাইল গুলো। সব কাজ শেষে নিচে তাকাতেই আরশি নিচে একটা উয়াইট খাম পায়। নিচ থেকে তুলে দেখে উপরে nir chowdury লেখা।

আরশিঃনির চৌধুরি? তারমানে সেদিন আমি ভুল শুনি নি। মি.চৌধুরি নির বলেই চিৎকার করে উঠেছিলেন। বাট উনি তখন মিথ্যে বললেন কেনো? কে এই নির। দেখি তো ভেতরে কি আছে।

আরশি খামটা চিরতে যাবে তখনি ওর ফোন বেজে উঠে। আরশি খামটা বালিশে কিনারে রেখে ফোনটা হাতে নেয়। স্ক্রিনে দেখে ওর বাবা ফোন দিয়েছেন। ওর বাবার নামটা দেখেই ওর রাগ উঠে যায়। রাগে কল কেটে দেয়। উনি আবার কল দেন। এবার ও আরশি কল কেটে দেয়। আর একবার কল করতেই আরশি কল কেটে ফোন সুইচঅফ করে রেখে দেয়।

আরশিঃকেনো ফোন দিচ্ছে এই লোকটা আবার। আমি চাই না এই লোকটার সাথে কথা বলতে। যে নিজের স্বার্থের জন্য নিজের মেয়ের সুখ, ইচ্ছেকে বলি দেয়। তাকে বাবা বলে মানি না আমি। আই জাস্ট হেইট হার।

আরশি ফোনটা বিছানায় রেখে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে পরে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পরই নিলয় চলে আসবে। আরশি ফ্রেস হয়ে নিচে গিয়ে একবার দেখে আসে সব রেডি কিনা। তারপর ও রুমের জানালার পাশে বসে ফোন অন করে ফোনে গেইমস খেলতে শুরু করে। সন্ধ্যা ৭টায় নিলয়ের গাড়ি গেইটের ভেতর ডুকে। সাথে আর একটি গাড়ি। ৪জন ছেলে আর ২জন মেয়েকে নিয়ে এসেছে। ওদের ড্রয়িংরুমে বসিয়ে নিলয় রুমের দিকে যায়। আরশি রুম থেকে বেরবে তখনি নিলয় রুমে ডুকে। আরশির সাথে কোনো কথা না বলেই একটা টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে যায়। ২মি পর টাওয়াল দিয়ে মুখ মুচতে মুচতে নিলয় ওয়াশরুম থেকে বের হয়।

নিলয় ভ্রুকুচকে আরশির দিকে তাকায়। তারপর বললো,”এখানে দারিয়ে আছো কেনো? নিচে যাও। সবাই বসে আছে ড্রয়িংরুমে।”

আরশিঃআমি ওদের চিনি নাকি। একা গিয়ে কি করবো। আপনি ও আসুন।

নিলয়ঃচলো।

নিলয় আরশিকে নিয়ে নিচে নামে। সবার সামনে দারাতেই আরশি অবাক হয়ে যায় সামনের একজনকে দেখে। চোখ দিয়ে টপটপ করে জল পরছে।


চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে