EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার পর্ব-০৩

0
3217

# EX গার্লফ্রেন্ড যখন পুলিশ অফিসার ?
# লেখকঃ Sahid Hasan Sahi
# পর্বঃ ৩য়

ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে রুম থেকে বের হয়ে নিচে আসলাম। নিচে এসে দেখি আমার আব্বু আম্মু সোফায় বসে থেকে গল্প করতেছে। আমাকে দেখে আম্মু বললোঃ কোথায় যাবি বাবা?

আমিঃ আম্মু সাফিয়া নাকি আজকে ঘুরতে যাবে। তাই ওকে নিয়ে একটু ঘুরতে যাবো।

আম্মুর সাথে কথা বলতেই সাফিয়া ওর রুম থেকে সেজে গুজে বের হয়ে নিচে আসলো।

আম্মুঃ ঠিক আছে ভালোভাবে যাবি।

আমিঃ ঠিক আছে আম্মু।

বাসা থেকে বের হয়ে আসতেই আব্বু বললঃ সাহিদ গাড়ি নিয়ে যাও।

আমিঃ না আব্বু রিকশায় চড়ে যাবো।

আব্বুঃ আচ্ছা যাও।

এরপরে আমি সাফিয়াকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে আসলাম। রাস্তায় এসে একটা রিকশা নিয়ে ঘুরতে বের হলাম ( বাইক আছে, কিন্তু আজকে নিয়ে আসতে মন চাইলো না)। প্রথমে একটা পার্কে আসলাম। পার্কে দুই ভাই বোন কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে একটা
ফুচকার দোকানে যায়ে দুই ভাই বোন একসাথে ফুচকা খেলাম।
ফুচকা খাওয়ার পরে আরেকটু ঘোরাফেরা করে আবার একটা রিকশা নিয়ে বাসায় আসলাম।

বাসায় আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়লাম। নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ স্টাডি করলাম। একটু পরে সাফিয়া এসে ডিনার করার জন্য ডেকে গেলো। আমিও ডিনার করার জন্য নিচে গেলাম।

ডাইনিং টেবিলে যায়ে দেখি আব্বু আম্মু আর সাফিয়া আমার জন্য অপেক্ষা করতেছে। আমি যায়ে আম্মুর পাশে বসলাম। আম্মু আমাকে তার হাত দিয়ে তুলে খাইয়ে দিল। এটা আম্মুর নিত্যদিনের রুটিং।

আমাকে খাইয়ে দেখা দেখে সাফিয়া গাল ফুলিয়ে বললঃ আম্মু তুমি শুধু ভাইয়াকেই বেশি আদর করো । আমাকে একটুও করো না!

আম্মুঃ আমার আম্মুটা তো দেখতেছি রাগ করেছে। এসো তোমাকেও খাইয়ে দেই।

সাফিয়া খুশি হয়ে আম্মুর অন্য পাশে বসলো। আম্মুও সাফিয়াকে খাইয়ে দিতে লাগলো। খুব আনন্দের সাথে ডিনার টা শেষ করলাম।
ডিনার শেষে আব্বু আম্মুর সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। এরপরে রুমে এসে স্টাডি করে ঘুমিয়ে পড়লাম।

সকালে সাফিয়ার ডাকে ঘুম থেকে উঠলাম। ঘুম থেকে উঠে ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি প্রায় নয়টা বেজে গেছে। তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বাইক নিয়ে বের হলাম কলেজের উদ্দেশ্যে। আর আব্বু সাফিয়া কে ওর স্কুলে নামিয়ে দিয়ে কলেজে যাবে। আর হ্যাঁ আমি আব্বুর কলেজেই মানে আব্বু যেই কলেজের প্রিন্সিপাল সেই কলেজেই পড়ি।

কলেজে পৌঁছার পরে বাইকটা পার্কিং লটে রেখে এসে বন্ধুদের কাছে গেলাম । যায়ে দেখি বন্ধুরা আমাদের আড্ডা দেওয়ার জায়গায় বসে আছে।

আমাকে দেখে নিলা ( আমার বন্ধু । আরো আছে ইকবাল, শাকিব, রিয়াদ আর মিতু ) বললঃ কীরে এতো দেরি করলি কেন আসতে?

ইকবালঃ হ্যাঁ আজকে দেরি করলি কেন?

আমিঃ আরে দোস্ত ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে।

রিয়াদঃ কেনো কেউ ডাক দেয় নি।

আমিঃ নারে,,, ডাক দেওয়ার জন্য কেউ থাকলে তো দিবে।( মন খারাপ করে)

নিলাঃ তাহলে বিয়ে কর। তাহলেই তো ডাক দেওয়ার মানুষ পাবি।

আমিঃ কিযে বলিস না তুই। আমার মতো কচি ছেলেকে কে বুঝি বিয়ে করবে। (লজ্জা মাখা একটা হাসি দিয়ে)

মিতুঃ আইসে রে আমাদের কচি খোকা। এখন যদি বিয়ে দেওয়া হয় তাহলে ১২ টা ছেলে মেয়ের বাবা হয়ে যাবে আর সে নাকি কচি খোকা।
হুঁ,,,।

আমিঃ ওই হ্যালো ( মিতুকে) আমার বিয়ে হলে যদি ১২ টা ছেলে মেয়ে হতো। তাহলে তোদের এতদিনে এখনো একটা হলো না কেন?( ইকবাল আর মিতুকে উদ্দেশ্য করে। আর হ্যাঁ মিতু আর ইকবাল চাচাতো ভাই বোন। আর তাদের ছোট বেলাতেই বিয়ে হয়েছে । মানে ওদের দুজনের বয়স যখন ১৩ বছর ছিলো তখন তাদের দাদু মারা যান।আর ওদের দাদু মারা যাওয়ার আগেই ওদের বিয়ে দিয়ে গেছেন।)

আমার কথা শুনে ইকবাল আর মিতু বাদে সবাই অট্টহাসি হাঁসতে লাগলো। ইকবাল মিতুর দিকে মুচকি মুচকি হাসতেছে।

মিতু নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললঃ এই হারামি আমাদের মধ্যে বাচ্চা নেওয়ার জন্য এখনো কি কিছু হয়েছে?

আমিঃ আজ থেকে আট বছর আগে বিয়ে হয়েও যদি তোদের মধ্যে কিছু না হয় তাহলে তো আমার মতো সিঙ্গেল থাকাই ভালো। এখন না পারবি কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে না পারবি প্রেম করতে। ইকবাল তোর কপাল শেষে রে তোর কপাল শেষ?????।

ইকবালঃ ঠিকই বলেছিস। এখন থেকেই যেই প্যাঁড়া দেয় না জানি পরবর্তীতে আরো কতগুলো অপেক্ষা করতেছে ????।

ইকবালের কথা শুনে আমরা আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারলাম না। আমরা সবাই হাসতে লাগলাম। আর মিতু রাগে ফোঁসতেছে।

মিতু রেগে যায়ে ইকবালকে বললঃ আমি তোকে প্যাঁড়া দেই তাই না? দাঁড়া আগে বাসায় চল তোকে দেখাচ্ছি মজা।( রেগে)

ইকবাল মিতুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললোঃ কে বললো তুমি আমাকে প্যাঁড়া দেও। তুমি আমার মিষ্টি বউ। খালি আদর করো।( একটু পাম দিয়ে)

মিতু ওর মাথা থেকে এক ঝটকায় ইকবালের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললোঃ হুঁ,,, আমাকে আর পাম দিয়ে লাভ হবেনা। আমি এমনিতেই মিষ্টি হুঁ,,,,।

আমরা বসে থেকে ওদের দুজনের এসব কাহিনী শুনতেছি। হঠাৎ মেয়েলি কন্ঠে পেছন থেকে কে যেন বললোঃ এখানে সাহিদ হাসান সাহি কে?

মেয়েটির কথা শুনে পিছনে তাকাতেই তো আমি হা হয়ে গেলাম। এটা আমি কাকে দেখতেছি, এটা মেয়ে নাকি পরি। টানা টানা মায়াবী চোখ মনে হচ্ছে সেই চোখগুলো তে ডুব দিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দেই।

হঠাৎ রিয়াদের ধাক্কা ধাক্কিতে আমার ভাবনার ছেদ ঘটলো।
রিয়াদঃ এই সাহিদ তোকে কখন থেকে ডাকতেছি।

আমিঃ ও হ্যাঁ না মানে বল,,। ( মেয়েটার দিকে তাকিয়ে)

রিয়াদঃ মেয়েটা তোকে ডাকতেছে।

আমি মেয়েটিকে বললামঃ হ্যাঁ বলুন,,,(কাঁপা কাঁপা কন্ঠে)

মেয়েটিঃ আপনি কি সাহিদ হাসান সাহি?

আমিঃ হ্যাঁ।

মেয়েটিঃ আসলে আমি এই কলেজে ট্রান্সফার হয়ে এসেছি। প্রিন্সিপাল স্যারকে কিছু ভালো বন্ধুর কথা বললে তিনি আমাকে আপনার কাছে পাঠালেন। আমি কি আপনাদের বন্ধু হতে পারি।( এক নিঃশ্বাসে)

আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার ক্রাশ আমার কাছে এসেছে ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য। ভাবা যায়।

আমি বললামঃ হ্যাঁ বন্ধু হতে পারো কিন্তু তুমি করে বলতে হবে।

মেয়েটি মুচকি হেসে বললোঃ ঠিক আছে বলবো।

ওফফস মুচকি হাঁসি দেখে তো আমি আবার এই মেয়ের প্রতি ক্রাশ খেলাম। কি তার হাসি মন চাচ্ছে সারাক্ষণ তাকিয়ে থাকি।

আমি বললামঃ এসো পরিচয় করিয়ে দেই। এরপরে আমার সকল বন্ধুদের সাথে মেয়েটিকে পরিচয় করিয়ে দিলাম।

আমি ওকে জিজ্ঞাসা করলামঃ তোমার নাম কি?

মেয়েটিঃ আমার নাম সামিয়া আক্তার।

হায় আল্লাহ চেহারা যেমন সুন্দর নামটাও তো তেমন সুন্দর।
এরপরে আরো কিছুক্ষণ মেয়েটি আমাদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় চলে গেল। আজকে নাকি ক্লাস করবে না। আর যাওয়ার সময় আমার ফোন নাম্বার নিয়ে গেল।

আমরা সবাই ক্লাসে গেলাম। সব ক্লাস শেষ করে সবাই মানে আমার বন্ধুরা ক্যান্টিনে গেলাম। আর এটা আমাদের প্রতিদিনের একটা কাজ আরকি।

ক্যান্টিনে যাওয়ার পর যে যার মতো অর্ডার করলাম। আর হ্যাঁ আজকে খাওয়ানোর দ্বায়িত্ব হলো মিতুর মানে ইকবালের জানূর।

খাওয়া দাওয়া করতে করতে শাকিব আমাকে জিজ্ঞাসা করলোঃ আচ্ছা সাহিদ তুই আমাকে একটা কথা বলবি?

আমিঃ হুমম বল।

শাকিবঃ তুমিতো কোনো দিনও কোনো মেয়েকে সহজে বন্ধু বানাতে চাস না। কিন্তু আজকে তোর কি এমন হলো যে, মেয়েটিকে মানে সামিয়া কে একবার দেখার পর তুই তাকে বন্ধু বানাইলি।

নিলাঃ শাকিব ঠিকই বলেছে। আর তুই তো কোনো মেয়ের দিকে ভুলেও তাকিয়ে দেখিস না কিন্তু আজকে সামিয়া কে দেখার পর তুই অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিলে,,,।
কি মামা সামথিং সামথিং নাকি?

আমি মুচকি হেসে বললামঃ আরে না তেমন কিছু না।

ইকবালঃ তুই আমাদের কাছে মিথ্যা বলার চেষ্টা করিস না। ‌ কারণ আমরা তোকে সেই ছোটবেলা থেকেই চিনি বা তোর সাথে চলাফেরা করি।সো কাহিনী কী বল?

আমিঃ আসলে আমি সামিয়া কে প্রথম দেখাতেই ক্রাশ খেয়েছি। প্রথম দেখাতেই তাকে ভালো লাগে ‌ বলতে পারিস তাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি।( মাটির দিকে তাকিয়ে)

রিয়াদঃ যাক মামা তাহলে তুইও কাউকে ক্রাশ খাইলি?

ইকবালঃ আরে ক্রাশ খাবে না কেন আমাদের ভাবি কী দেখতে খারাপ নাকি। সাহিদ না ক্রাশ খাইলে আমিই প্রোপোজ করতাম।
( মজা করে বললো)

মিতুঃ কী বললি?( রেগে)

ইকবালঃ কি কিছু না। এমনি মজা করলাম আরকি।( ভয়ে ভয়ে)

মিতুঃ শ্বাশুড়ি মাকে যদি আজ তোর কথা না বলেছি তাহলে আমার নাম মিতু না। আমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে নজর দাঁড়া।

ইকবালঃ এই না না লক্ষি বউ আমার এমন করে না। আর কারো দিকে নজর দিবো না বলে দিলাম। ( কানে হাত দিয়ে)

মিতুঃ মনে থাকে যেন।

ইকবালঃ ঠিক আছে মিষ্টি বউ।

আমরা নিত্যদিনে ওদের এসব দেখে অভ্যস্ত। প্রত্যেক দিনই তারা এমন করে‌ তবে তাদের ভালোবাসার মধ্যে কোনো কমতি নেই। দিন দিন বেড়েই চলেছে ‌।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে ক্যান্টিন থেকে বের হয়ে বন্ধুদের থেকে বিদায় নিলাম‌ এরপরে পার্কিং লট থেকে বাইক নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে গোসল করে নামাজ পড়ে লাঞ্চ করতে বসলাম। সাফিয়া আর আব্বু এখনো আসেনি। আর তারা একটু দেরি করে আসে। তাই প্রতিদিন আম্মু আর আমি একাই লাঞ্চ করি।

লাঞ্চ করে রুমে এসে একটু রেস্ট নেওয়ার জন্য বেডে গা টা এলিয়ে দিলাম। হঠাৎ করেই ফোন টা বেজে উঠলো। দেখি অপরিচিত নাম্বার। রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে একটা মেয়েলি কন্ঠে ,,,,,
(চলবে)

??? কেমন হচ্ছে তা কমেন্ট করে জানাবেন ? ??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে