Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"তৈমাত্রিক পর্ব-৩০+৩১+৩২

তৈমাত্রিক পর্ব-৩০+৩১+৩২

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩০



মেহরাম চুপ করে বসে আছে সে বুঝতে পারছে না যে সবাই এভাবেই বসেই বা আছে কেন আর কিই বা বলবে। অবশেষে নীরবতা ভেংে মেহরামের চাচি আতিয়া বলা শুরু করে দিলো….

আতিয়া;; দেখ মা আসলে ব্যাপার টা হচ্ছে যে কেউ তার জীবনে একা চলতে পারে না। সবার জীবনেই কাউকে না কাউকে লাগে। আমরা সবাই জানতাম যে তুই পড়াশোনা করে একটা ভালো চাকরি করতে চাস, নিজের পায়ে দাড়াতে চাস। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনি। আসলে আমরাই তোকে বিয়ের জন্য এক প্রকার চাপ দিয়েছিলাম। আর পরিবারও ভালো ছিলো।

মেহরাম;; তোমরা সবাই বলতে কি চাও বলতো ক্লিয়ারলি। আমি কিছু বুঝছি না। এতোদিনে সেই আগের কথা গুলো কেন বলছো?

কনিকা;; তোর শাশুড়ি ফোন করেছিলেন।

মেহরাম;; হ্যাঁ তো?

আতিয়া;; সোহেল আর নেই তো এখন তোর শাশুড়ী একমাত্র আপন বলতে তার সেই বড়ো ভাই-ই আছে। এখন কুসুম আপা চাইছেন যে উনি বর্তমানে যেই বাড়িতে রয়েছেন সেই বাড়ি টা বিক্রি করে দিতে।

মেহরাম;; হুম এছাড়াও বাড়ি টা আমার শশুড়ের ছিলো না, তারা কিনেছিলেন। তো এখন ওই বাড়ি বিক্রি করে দিলেও তেমন কিছু যায় আসে না।

কনিকা;; কিন্তু বড়ো কথা হচ্ছে তোকে নিয়ে।

মেহরাম;; আমাকে নিয়ে মানে?

কনিকা;; মানে কুসুম আপা একজন বয়স্ক মানুষ তিনি এখন তার ভাইয়ের সাথেই থাকবেন। সত্যি বলতে এখন তোর হাসবেন্ড আর বেচে নেই আর এটা মেনে নিতেই হবে তো….

মেহরাম;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা, তো এই কথা হয়েছে। থাক আমাকে আর কিছু বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি। মানে মা যদি উনার ভাইয়ের বাসায় চলে যান আজীবনের জন্য তাহলে আমি কোথায় থাকবো তাই না। মানে আমি তো আর আমার শাশুড়ীর ভাইয়ের বাড়ি গিয়ে একদম পারমানেন্ট ভাবে থাকতে পারি না তাই তো।

আতিয়া;; হ্যাঁ সেটাই।

মেহরাম;; বাবার বাড়ি কি জায়গা হবে আমার?

আতিয়া;; ছি মেহরাম এগুলো কি ধরনের কথা তোর। বাড়ির মেয়ে বাড়িতে থাকবে না তো আর কোথায় থাকবে। তুই এখানে না থাকলে তোর পা ভেংে দেবো। আর এর জন্যই তোকে ডাকছিলাম যে তুই আসলে কোথায় থাকতে চাস এখানে না ওখানে?

মেহরাম;; তুমি কি বলছো বুঝে বলছো চাচি?

কনিকা;; দেখলি আতিয়া আমি আগেই বলেছিলাম যে মেহরাম জীবনেও তার মামা শশুড়ের বাড়ি গিয়ে উঠবে না।

মেহরাম;; আসলে আমি না খেয়াল করেছি যে তনু যখন আমাদের সাথে ছিলো তখন থেকে শুরু করে আজ এখন পর্যন্ত মা আমার তেমন কোন খোঁজ-খবর ই নেন নি। শুধু তনুর ওইদিন এসেছিলেন একটু। আমার জন্য না হোক আমার বাচ্চা টার জন্যও আসেন নি। জানো আম্মু মা না আগে এমন ছিলো না বুঝলে। আমি ভাবতাম আমার মতো লাকি আর কোন মেয়েই হয় না কারণ এত্তো ভালো একজন শাশুড়ি কে পেয়েছি দেখে তাই। কিন্তু সোহেলের যাবার পর থেকে তিনি কেমন যেন একটু পালটে গেলেন। ইভেন আমি ফোন দিলেও ধরেন না।

আতিয়া;; আজ সকালে ফোন করেছিলেন।

মেহরাম;; সত্যি আমাকে আগে কেন বলো নি কেউ।

আতিয়া;; কি বলতাম, উনি শুধু ফোন করে বললেন যে মেহরাম কি এখন আমাদের সাথে থাকবে না আপনাদের সাথে।

মেহরাম;; তুমি কি বললে?

আতিয়া;; কিছুই বলি নি। তার জন্যই তো আগে তোর কাছ থেকে শুনে নিলাম যে তোর ইচ্ছে কি।

মেহরাম;; মা কে বলে দিও যে মা যাতে ভয় না পায় এই অপয়া মেহরাম কে নিয়ে। সে কখনোই তাদের কাছে যাবে না। ওদের ওপর বোঝা হতে যাবে না। জামাই বেচে নেই তাই এখনো তাদের ঘাড়ে ঝুলে থাকবো তেমন মেয়ে আমি নই। না আমি এটা বলছি না যে সব শাশুড়ীই খারাপ কিন্তু মা আগে থেকে অনেক পালটে গেছেন। আগের মতো নেই আর। আর হ্যাঁ অবশ্যই আমাকে ক্ষনিকের জন্য হলেও তাদের উটকো ঝামেলা মনে হয়েছে নয়তো আজ ফোন দিয়েই বাকি সব কথা ছেড়ে সোজা এই কথা বলতো না। যাই হোক মানুষ পরিবর্তনশীল।

এই বলেই মেহরাম উঠে পরে। উঠে চলে যেতে নেয়, তবে মেহরাম আবার পেছনে তাকায়। তাকিয়ে দেখে সবাই মনমরা হয়ে বসে আছে। মেহরাম তখন সবার মুড ঠিক করার জন্য হুট করে বলে ওঠে…

মেহরাম;; আমার হাতের চা কে কে খাবে?

সবাই ফট করে মাথা তুলে মেহরামের দিকে তাকায়। মেহরাম তার ভ্রু জোড়া নাড়া দিয়ে ইশারাতে আবার জিজ্ঞেস করে। তৎক্ষনাৎ সবাই বলে ওঠে আমি। মেহরাম আস্তে আস্তে হেটে সবার জন্য চা বানাতে চলে যায়। এদিকে মেহরামের চাচি আতিয়া মেহরামের মা কনিকার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখ টা কেমন ছোট করে রেখেছে। আতিয়া কনিকার হাতে হাত রেখে দেয়….

আতিয়া;; ভাবী মন খারাপ করো না তো।

কনিকা;; শুনেছি আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। কিন্তু এমন ভালো যেন আল্লাহ আর কারো সাথেই না করেন।

আতিয়া;; মেহরামের মতো মেয়ে পেয়েছো শুকুর করো। নয়তো অন্য সমস্ত মেয়ে হলে এতোক্ষণে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিতো।

কনিকা;; তার আর দরকার নেই। এমনিতেই জীবনে কম ঝামেলা নেই তার ওপর আবার এই নতুন কাহিনি। আমি আমার মেয়ে কে তেমন শিক্ষা দেয় নি। যে একজন বড়ো মানুষ যতোই অন্যায় করুক, যতোই আঘাত করুক তুই তাদের মুখের ওপর কোন কথা বলবি না। সহ্য হবে না ব্যাস সেই জায়গা ত্যাগ কর কিন্তু বেয়াদবের উপাধি নিয়ে ঘরে আসবি না। আমার মেয়ে আমার শিক্ষার দাম দিয়েছে। নয়তো কীভাবে কুসুম আপা আজ সকালে ফোন দিয়ে এটা বললেন যে
“”” মেহরাম এখন কি আপনাদের সাথেই থাকবে না আমাদের সাথে। আপনাদের সাথে থাকলেই আমাদের সকলের জন্যই সুবিধে হয়””। লাগবে না কাউকে আমার মেয়ে এখানেই থাকবে আজীবন। এটা ওর বাড়ি (কিছুটা রেগে)

আতিয়া;; তোমার মেয়ে না আমাদের মেয়ে বলো।

আতিয়ার কথা শুনে কনিকা একটু হেসে দিলন। তখনই আশরাফ আলম অর্থাৎ মেহরামের বাবা এসে সবার সাথে বসলেন। মেহরামের শাশুড়ি যে এই কথা গুলো বলেছেন তা তিনি জানেন। চোখ ঘুড়িয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখেন মেহরাম রান্নাঘরে চা বানাচ্ছে। অন্য দিকে তার নজর নেই। ইচ্ছে করেই গুটি গুটি পায়ে কাজ করছে। আশরাফ আলম তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তারপর আবার সবার সাথে কথা বলা শুরু করেন। তাদের কথা বলার মাঝেই মেহরাম চা নিয়ে এলো ট্রে তে করে।

মেহরাম;; এই নাও তোমাদের চা (টেবিলের ওপর ট্রে টা রেখে)

আতিয়া;; আরে এটা একা আনতে গিয়েছিস কেন। আমাকে ডাক দিতি।

মেহরাম;; আরে হলো একই কথা। দাড়াও আমি দিচ্ছি।

মেহরাম একে একে সবাইকে চা দিচ্ছে।

মেহরাম;; মা চা নাও, চাচি তুমিও নাও। এই আকাশ চা খাবি?

আকাশ;; আমি চামচ দিয়ে চা খাবো।

মেহরাম;; আঙুল দিয়ে খা 😅। এদিকে আয় চায়ের কাপ নিয়ে যা।

আকাশ;; আসতাছি।

মেহরাম;; চাচ্চু তোমার চা।

বিল্লাল;; চিন…

মেহরাম;; নেই, চিনি নেই। আমি জানি।

বিল্লাল;; হুমমম।

এবার মেহরাম তার বাবার কাছে গেলো। কোন রকম কথা বললো না। শুধু চা টা তার বাবার সামনে ধরলো তার বাবাও চা টা হাতে তুলে নেন। মেহরাম ঘুড়ে গিয়ে চায়ের ট্রে টা রাখবে তখন তার বাবা বলে ওঠে…….

আশরাফ আলম;; মেহরাম

মেহরাম;; জ্বি

আশরাফ আলম;; একটু বাবার কাছে বোস মা।

মেহরাম;; হুম।

মেহরাম হাত থেকে ট্রে টা রেখে তার বাবার পাশে বসে। আসলে পাশে না বেশ কয়েক হাত দূরেই বসে। আর এটা বাকি সবাই খেয়াল করে…

আশরাফ আলম;; মেহরু মা আসলে আমার বলার কিছুই নেই। আমি জানি যে ছোট থেকেই আমি তোকে কোন সময় দিতে পারিনি। তোর স্কুলেও যাই নি কখনো। এমনকি তোর জন্মদিন টাও আমার মনে নেই, থাকে না। হ্যাঁ বলতে পারিস যে বাবা হিসেবে আমি তোর কোন খেয়ালই রাখতে পারিনি। কিন্তু মা একটা কথা তোর এই বাবা তোকে অনেক বেশি ভালোবাসে।

এতোক্ষণ মেহরাম তার মাথা নিচু করে রেখেছিলো কিন্তু তার বাবার কথা শুনে মাথা তুলে তাকায়।

আশরাফ আলম;; সব বাবাই তাদের সন্তান দের অনেক ভালোবাসে৷ হয়তো কেউ কম প্রকাশ করে আবার কেউ বেশি প্রকাশ করে। আমি না হয় কমের ভাগেই পরলাম কিন্তু ভালোবাসি। আরে মেয়ে শোন শোন আমি তোর মাকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম কিন্তু তোর জন্য এই যে এখানে (বুকের দিকে দেখিয়ে) যে ভালোবাসা আছে না তা হয়তো তোর মায়ের জন্যও নেই বুঝলি। (চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে)

মেহরাম মাথা তুলে তার বাবার দিকে তাকায়। ফিক করে হেসে দেয়। আজ এই প্রথম তার মনে হচ্ছে যে সে তার বাবার আদর ভালোবাসা পেয়েছে।

আশরাফ আলম;; আমার মেয়ে টা যে কখন আর কবে এতো বড়ো হয়ে গেলো তা বুঝতেই পারিনি।

মেহরাম;; তুমি হেরে গেছো (তার মায়ের দিকে তাকিয়ে)

কনিকা;; কীভাবে?

মেহরাম;; বাবা তোমার থেকে আমাকে বেশি ভালোবাসে।

মেহরামের মা হেসে দেন। এভাবেই সময় যেতে থাকে। আস্তে আস্তে রাত হয়ে যায়। সবাই এখনো নিচে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তবে মেহরামের একটু রেস্টের প্রয়োজন ছিলো তাই সে তার রুমে এসে পরেছে। মেহরাম রুমের আলো নিভিয়ে বারান্দায় বসে আছে। বাইরে থেকে জোছনা রাতের আলো ভেতরে এসে পরেছে। তার মধ্যে বাইরে থেকে খানিক ল্যাম্প পোস্টের আলোও এসে পরেছে ভেতরে। রকিং চেয়ারে বসে বসে হাতে একটা হুমায়ুন আহমেদের বই নিয়ে পড়ছে। সাধারণত মেহরামের কাছে এমন পরিবেশ খুব বেশি পছন্দের। হঠাৎ হাত থেকে বই টা রেখে বাইরের দিকে তাকায় মেহরাম। মূলত তনুকে মিস করছে সে, অনেক বেশি। চোখ নামিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই চোখ পরে তনু আর তার একসাথে সেই ছবিটার দিকে৷ মনে হচ্ছে সেইদিন সেই ছবি তোলার ব্যাপার টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। ছবি টা হুট করেই তোলা। মানে মেহরাম আর তনু কি যেন একটা নিয়ে হাসছিলো আর ঠিক তখনই মেহরামের চাচ্চু এসে ছবি টা ক্লিক করে। তখন কেউই জানতো না যে এই হঠাৎ তোলা ছবিটা এত্তো বেশি পছন্দের আর মেমোরেব্যাল হয়ে ওঠবে। ছবিটা হাতে নিয়ে মেহরাম দেখতে থাকে। কেন জানি মেহরামের মনে হয় যে যখনই সে তনুকে অনেক বেশি মিস করে বা ওর কথা মনে পরে তখন এমন লাগে যে তনু এখানেই আছে তার আশে পাশে। সে তনুকে অনুভব করতে পারে এমন কিছু একটা। পরিবারের সবার মাঝেই কষ্ট তো আছে কিন্তু তবুও সবাই যথাসম্ভব হাসি খুশি থাকার চেষ্টা করে। নয়তো এভাবে তিলে তিলে যন্ত্রণা আর কতো। মেহরাম তাদের ছবিটা হাতে নিয়ে দেখছিলো তখনই দরজাতে আকাশ আসে।

আকাশ;; মেহরাপু মেহরাপু

মেহরাম;; হ্যাঁ রে আয়,, ওহ দাড়া আগেই আসিস না রুমের বাতি টা জ্বালিয়ে দেই। নয়তো অন্ধকারে আবার হোচট খেয়ে পরে যাবি।

মেহরাম উঠে গিয়ে রুমের বাতি টা জ্বালিয়ে দেয়। এবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মেহরাম অবাক হয়। কেননা আকাশের হতে ইয়ায়ায়া বড়ো একটা পারপাল কালারের বক্স। বক্সে আকাশের মুখ টাই ঢেকে গিয়েছে।

মেহরাম;; কিরে এটা কি আর কে দিয়েছে?

আকাশ;; ভাইয়া দিয়েছে।

মেহরাম;; কোন ভাই?

আয়ুশ;; আমি (আকাশের পেছনে দাঁড়িয়ে)

মেহরাম;; ওহহ আব.. আসলে মানে তুমি কখন এলে?

আয়ুশ;; একটু আগেই।

মেহরাম;; এটা কি?

আয়ুশ;; ওইতো.. আসলে তুমি এইটা খুলেই দেইখো যে কি আছে।

মেহরাম;; হুম তবে আকাশ…!

আকাশ;; ভাইয়া আমাকে তোমার থেকেও বড়ো একটা বক্স দিয়েছে।

মেহরাম; হাহা তাই, আচ্ছা ভালো।

আকাশ;; ধরো।

আকাশ মেহরামের হাতে বক্স টা ধরিয়ে দিয়ে দৌড়ে নিচে চলে গেলো। মেহরাম আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার আয়ুশের দিকে তাকায়।

আয়ুশ;; তো..!

মেহরাম;; কি?

আয়ুশ;; নিচে যাবে না?

মেহরাম;; হ্যাঁ যবো, তুমি যাও আমি আসছি।

আয়ুশ;; ওকে।

আয়ুশ নিচে চলে যায়। আয়ুশ যাচ্ছে আর মেহরাম তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। যাওয়ার মাঝেই আয়ুশ আবার ঘুড়ে মেহরামের দিকে তাকায়। এভাবে দুইজনের চোখাচোখি হয়ে গেলে মেহরাম কিছুটা ইতস্তত বোধ করে পিছিয়ে দরজা টা লাগিয়ে দিয়ে রুমের ভেতরে চলে যায়। আয়ুশ কোন রিয়েকশন না করেই সোজা চলে আসে। আয়ুশ একা না সাথে তার মা আর কণাও এসেছে। আয়ুশ তার পকেটে হাত দিয়ে রেখেছিলো তখনই তার হাতে কিসের যেন একটু খোচা লাগে। মনে হচ্ছে কাগজ জাতীয় কিছু একটা। আয়ুশ কিছুটা কপাল কুচকে পকেটের ভেতর থেকে তা বাইরে আনে। এনে দেখে টা একটা কাগজ, মেলে দিয়ে দেখে যে এটা তনুর হাতে লিখা সেই ল্যাটার টা। এটা সেইদিন আয়ুশ তুলে তার কাছেই রেখেছিলো। ঠিক সেইদিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এটা তার কাছেই আছে। আয়ুশ কাগজ টার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে আবার সুন্দর করে আগের মতোই রেখে দেয়। তখন মেহরাম আসে, এসেই সবার সাথে বসে পরে। টুকটাক কথা হচ্ছে। কণা তো মেহরামের পাশ ছেড়ে উঠছেই না। মেহরামের মা আর চাচি আয়ুশের মায়ের সাথে মেহরামের শাশুড়ীর ব্যাপার টা শেয়ার করে। আরো নানা কথা হয়, ইতোমধ্যে তাদের মাঝে বেশ কয়েকবার তনুর কথাও উঠেছে। এভাবেই যাচ্ছে সময়, খানিক পর আয়ুশের মা আবার মেহরামের মা আর চাচির সাথে কথা বলতে শুরু করে।





💖চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩১

🧡🍂
..
..
..
..
..

কণা মেহরামকে ধরে বসলো যে ছাদে যাবে। আসলে মেহরামদের বাড়ির ছাদ টা বেশ বড়োসড়ো আর অনেক খোলামেলাও। জোৎস্না রাতের আলো আর শীতল বাতাস দুটোই খুব ভালো আসে ছাদের ওপর। আর তার জন্য মেহরামের কাছে বাড়ির সবথেকে পছন্দের জায়গা টা হচ্ছে ছাদ। কণা জেদ ধরে বসে মেহরামকে সাথে নিয়ে ছাদে যাবে।

কণা;; মেহরাপু ওও মেহরাপু চলো না ছাদে যাই।

লায়লা খাতুন;; এই না, কণা তুই ছোট বাচ্চা নাকি রে দেখছিস না। মেহরাম এই অবস্থায় ছাদে কিভাবে উঠবে।

মেহরাম;; আরে না খালামনি সমস্যা নেই। আমি ছাদে উঠতে পারি। আর প্রায়ই যাই।

লায়লা খাতুন;; কিন্তু এই সময়ে আর রাত হয়ে গেছে তো!

মেহরাম;; সমস্যা নেই খালামনি, যেতে পারবো। কণা চলো।

কণা;; আচ্ছা।

লায়লা;; এই সাবধানে সবাই।

ছাদের চাবি নিয়ে সিড়ি বেয়ে কণা আর মেহরাম ছাদে চলে গেলো। কিন্তু এখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার। মেহরাম বুঝতে পারলো যে কণা হয়তো কিছুটা ভয় পাচ্ছে। তা দেখে মেহরাম ফিক করে হেসে দিলো।

মেহরাম;; আরে ভয় পেয়ো না কিছুই হবে না। (হেসে)

কণা;; আপু এখানে অনেক অন্ধকার তো।

মেহরাম;; আরে অন্ধকার দেখে এতো ভয় পেতে নেই। দেখবে যখন তোমার জীবনে কেউ থাকবে না তখন শুধু তোমার জন্য তুমি নিজে থাকবে আর থাকবে এই অন্ধকার। তখন এই অন্ধকার কেই এতো ভালো লাগবে যে তুমি অন্য কিছুর কথা ভুলেই যাব। (আলো জ্বালিয়ে দিতে দিতে)

কণা;; হুমম বুঝলাম।

মেহরাম;; হুমম।

কণা;; আচ্ছা আপু পাশের বাড়িতে এতো তোড়জোড় কিসের?

মেহরাম;; বিয়ের, আসলে পাশের বাড়ির এক মেয়ের বিয়ে তো তাই আর কি।

কণা;; হুমম অনেক সুন্দর করে ডেকোরেট করেছে।

মেহরাম;; হুম। কণা একটা কাজ করলে কেমন হয়..!

কণা;; কি কাজ?

মেহরাম;; পাশেই কিছু শুকনো কাঠ আছে। একটা পটের ভেতরে কাঠ গুলো নিয়ে আগুন ধরাই এতে আলোও হবে আর দেখবে সুন্দরও লাগবে।

কণা;; বাহহ ভালো তো। আচ্ছা চলো।

কণা গিয়ে সেই শুকনো কাঠ গুলো এনে দিলো। মেহরাম সেগুলো একত্রে করে একটা পটে নিয়ে নিলো। তারপর আগুন ধরিয়ে দিলো। আগুনের পট টা মাঝখানে রেখে তার পাশে গোল হয়ে কণা আর মেহরাম বসে থাকলো। রাতের এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তার ওপর আলতো আচে আগুন জ্বলছে। এটা যেন ভালো লাগার আরেকটা উৎস। কণা আর মেহরাম বসে বসে কথা বলছিলো আর হাসছিলো তখনই আকাশ আয়ুশের হাত ধরে টেনে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।

আকাশ;; আরে আসো আসো। সবাই এখানে তুমি আর আমি ওখানে কি করবো বলো। আরে আসো (হাত ধরে টেনে)

আয়ুশ;; আচ্ছা আমি না হয় না যাই। তুমি যাও,

আকাশ;; না আসো তুমি, ভাইয়া আসো।

আয়ুশ;; আহা কিন্তু আমি, আরে..

কণা;; আরে ভাই আয় না, এতো করে বলছে। এসে পর।

অবশেষে আর না পেয়ে আয়ুশ ছাদে এসে পরলো। এসেই দেখে মেহরাম বসে আছে তাদের সামনেই হালকা আগুন লাগানো দেখে অবাক হয়।

আয়ুশ;; এই তোরা আগুন কোথায় পেলি?

কণা;; আরে সাইডেই কিছু শুকনো কাঠ ছিলো সেগুলো নিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি। অবশ্য বুদ্ধি টা মেহরাপুর ই ছিলো। সুন্দর লাগছে না!

আয়ুশ;; হ্যাঁ অনেক সুন্দর।

কণা;; আরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন বসে পর।

আয়ুশ আর আকাশ এক পাশে বসে পরে আর কণা আর মেহরাম আরেক পাশে। কণা, মেহরাম আর আয়ুশ নানা ব্যাপার নিয়ে কথা বলছে। আর আকাশ সারা ছাদে টই টই করে ঘুড়ছে। হঠাৎ আকাশ ছাদের কিণারে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাল্কা উকি ঝুকি দিয়ে পাশের বাড়ির দিকে দেখতে লাগলো। দেখলো প্রায় অনেক মানুষ। সবাই অনেক সেজেছে আর বাড়িও অনেক সাজানো। আকাশ আবার দৌড়ে গিয়ে মেহরামের পাশে বসে পরে।

আকাশ;; মেহরাপু..!

মেহরাম;; হুমম

আকাশ;; আচ্ছা বিয়ে কি?

মেহরাম;; কি?

আকাশ;; না মানে শুধু তো দেখেই আসলাম যে বিয়ে করে সবাই আসে বাড়িতে এত্তো করে সাজগোছ করে। তারপর আবার কান্না করতে করতে মেয়ে চলে যায়। এগুলোর মানে কি, বিয়ে কি?

আকাশের এমন উদ্ভট প্রশ্নে কণা হিহি করে হেসে দিলো। আয়ুশ চুপ করে মুখে দুই আঙুল ঠেকিয়ে তাকিয়ে আছে। কিন্তু মেহরাম তো পরে গেলো এক মুশকিলে এখন একে কি করে বুঝাই যে বিয়ে কি। এর জন্যই বাচ্চাদের আশে পাশে এমন কিছু দেখাতে নেই কারণ কখন কি প্রশ্ন ছুড়ে মারে বলা বড়ো দায়।

আয়ুশ;; বলোনা বিয়ে কি?

মেহরাম;; আ আব..বিয়ে মানে হচ্ছে। মানে হচ্ছে, আসলে বিয়ে মানে হচ্ছে এক সুতোয় দুইজন মানুষ কে আজীবনের জন্য বেধে দেওয়া। আমরা তো দেখি যে বিয়ে একটা ছেলে আর মেয়ের মধ্যে হয় তাই না কিন্তু না আসলে বিয়ে হয় দুটো পরিবারের মধ্যে। বিয়ে খুব পবিত্র একটা বন্ধন। মানুষের জীবনকে নতুন রুপে শুরু করা হচ্ছে বিয়ে। তাই তো বলা হয় যে “জন্ম, মৃত্যু আর বিয়ে এই তিনটে জিনিস হচ্ছে আল্লাহ’র হাতে”।

আকাশ;; তাহলে এতো কান্না করে নে সবাই। চোখে কি পানি দিয়ে কাদে নাকি। কই আমার তো কান্না বের হয় না। নাকি চোখে আঙুল দিয়ে গুতো মেরে কাদে সবাই।

এবার আয়ুশ হেসে দেয়। কিছুটা জোরেই হেসে দেয়। সাথে কণাও। আর মেহরাম হাবলাকান্তের মতো করে তাকিয়ে থাকে।

মেহরাম;; আরে ভাই আমার তোর মাথায় এইসব যাবে না। এই ছোট্ট মাথায় এতো কিছু ঢুকবে না। বড়ো হলে আপনা আপনিই সব বুঝে যাবি। এখন শুধু তুই এটা জেনে রাখ যে একটা সময়ের পর সবাই কেই বিয়ে করতে হয় বুঝলি।

আকাশ;; হুমম।

এভাবেই গল্প করতে করতে কখন যে বেশ কয়েক ঘন্টা পেরিয়ে গেছে তার ওপর কারো খেয়ালই নেই। এদিকে মেহরামের মা চাচি দাদি আর আয়ুশের মা মিলে বসে বসে কথা বলছেন। কথার মাঝেই হঠাৎ আয়ুশের মা কথা বলেন আরেক নতুন প্রসঙ্গ নিয়ে।

লায়লা;; আব..আপা আসলে আপনাদের সাথে আমার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা ছিলো। আমি আসলে জানি না যে কথা টাকে আপনারা ঠিক কিভাবে নিবেন বা ভাববেন। তবে আমার যতটুকু বলার আমি বলবো। বাকি টুকু আপনাদের ওপর নির্ভর করে।

আতিয়া;; আরে না আপা আপনি যাই বলেন না কেন নির্দ্ধিধায় বলতে পারেন।

লায়লা;; আসলে আমরা সবাই ব্যাপার টা জানি।

কনিকার কেমন যেন একটু সন্দেহ হয় তাই তিনি বলে ওঠেন।

কনিকা;; কথা টা কি মেহরাম আর আয়ুশকে নিয়ে?

লায়লা;; জ্বি।

আতিয়া;; আপা সব খুলে বলুন তো।

লায়লা;; দেখুন আমরা সবাই জানি যে আয়ুশ আর মেহরামের মাঝে আসলে কি ছিলো। তবে তখনকার পরিস্থিতি আর এখনকার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমি চাইছি যে দুটো পরিবার যেন আবারও এক হয়। আবারও খুশি থাকে।

আতিয়া;; আপা আপনি কি চাইছেন হয়তো তা আমি বুঝতে পেরেছি। আয়ুশ আর মেহরামের

লায়লা;; বিয়ে।

কনিকা শুধু এমন কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। আতিয়া এগুলো শুনে মুচকি হাসে। কিন্তু লায়লা খাতুন তো বেশ ভয় নিয়ে তাকিয়ে আছে যে কি না কি বলে।
কিন্তু কিছুটা শব্দ করে হেসে আতিয়া বলে ওঠে।

আতিয়া;; বিয়ের দুই বছরের মাথায় যখন ডাক্তারের কাছে যাই ডাক্তার তখন আমার চেকাপ করে সুস্পষ্টভাবে বলে দেন যে আমি কখনো মা হবো না। সেই ক্ষমতা নেই আমার মাঝে। তারপর তনুর বাবার সাথে মুখ টা কালো করে বাসায় আসি। সবাই অনেক বুঝায় আমাকে কিন্তু আমার অবুঝ মন তো আর মানে না। বুঝতাম আমি যে মা হওয়ার বেদনা ঠিক কতটুকু আর কেমন। ঠিক তার ২-৩ মাস পর জানতে পারি যে ভাবী প্রেগন্যান্ট। বিশ্বাস করেন আপা আমি মিথ্যা বলবো না। ভাবী যখন প্রেগন্যান্ট হয় তখন সেই খবর শুনে আমি কি যে খুশি হয়েছিলাম। আমি যে মা হবো না তার বেদনা টা প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম এক প্রকার। ভেবেছিলাম আমি নিজেই মা হবো। আমার বাচ্চা। আমি না তবে মাঝেমাঝে ভাবী এই ভেবে মন খারাপ করতো যে আমি সব কিছু ভুলে ভাবীর বাচ্চাকেই নিজের বাচ্চা ভাবি। আর গুণে গুণে ঠিক তার এক মস সতেরো দিন পর আমার শরীর কেমন খারাপ লাগে। ডাক্তারের কাছে গিয়ে শুনি আমি প্রেগন্যান্ট। আমার জীবনের সব থেকে বড়ো পাওয়া ছিলো। আমার তিন ছেলে মেয়ে। মেহরাম, তনু, আকাশ। আমি জানি মেহরাম তনুর জন্য যা করেছে তা তনুর জন্য ভালো থাকলেও নিজের সাথে বড্ড অন্যায় করেছে মেহরাম। আগে যদি আমরা মানে পরিবারে লোকেরা এই ব্যাপার টা জানতাম তাহলে মেহরামকে এমন কোন পদক্ষেপ নিতেই দিতাম না। যাই হোক যা হয়েছে তা হয়েছে। এবার মূল কথা হচ্ছে কবে থেকে শুরু করছি আমরা।

কনিকা;; মানে কি বলছিস তুই?

আতিয়া;; আরে ভাবী মানে এই যে বিয়ের আয়োজন কবে থেকে শুরু করবো?

কনিকা;; কিইইইহ সত্যি?!

আতিয়া;; হ্যাঁ অবশ্যই সত্যি।

লায়লা;; এতো জলদি আপনারা মেনে যাবেন আমি সত্যিই ভাবি নি।

কনিকা;; কিন্তু এখন তো আরেকটা প্রব্লেম হয়ে গেলো।

আতিয়া;; আবার কি?

কনিকা;; মেহরাম, মেহরাম যদি রাজি না হয় তাহলে কি হবে?

আতিয়া;; কেন রাজি হবে না।

কনিকা;; আতিয়া তুই জানিস যে তনু আয়ুশের সাথে ছিলো এখন মেহরাম কি করে..!

আতিয়া;; ভাবী হয়তো ভুলে যাচ্ছো যে মেহরাম আয়ুশকে ভালোবাসে।

কনিকা;; কিন্তু বিয়ে অব্দি। আমার না কেন জানি মনে হচ্ছে যে মেহরাম হ্যাঁ বলবে না।

আতিয়া;; আচ্ছা ওটা দেখা যাবে। আগে আয়ুশের সাথে কথা বলতে হবে।

লায়লা;; আয়ুশের সাথে আমি কথা বলে নিবো।

আতিয়া;; সব যেন ভালোয় ভালোয় কেটে যায়।



মেহরাম;; আচ্ছা এখন হয়েছে অনেক সময় হয়েছে। এবার ঘরে চলো সবাই।

কণা;; হ্যাঁ অনেক তো সময় হলো।

আয়ুশ;; তোমরা যাও আমি আগুন নিভিয়ে তারপর আসি।

মেহরাম;; আগুনও শেষ হয়ে এসেছে। বেশি কিছু করতে হবে না। শুধু যেই কাঠ গুলো পুড়ে নি সেগুলো কিছু একটা দিয়ে ফেলে দাও আর ওপরে ছাই ফেলে দাও তাহলেই সবটুকু নিভে আসবে।

আয়ুশ;; হুমম।

মেহরাম, কণা আর আকাশ চলে গেলো নিচে। তাদের নিচে আসতেই মেহরামের মা মেহরামকে নিজের কাছে ডাকে। মেহরাম সেখানে গিয়ে বসে পরে।

মেহরাম;; কি হয়েছে মা?

কনিকা;; কিছু না।

আতিয়া;; আয়ুশ কোথায় রে?

মেহরাম;; হ্যাঁ আসছে।

কনিকা;; আপা আজ থেকে কাল চলে যায়েন।

লায়লা;; না আপা আজ যাই, আপনারা এইদিক টা সামলান আর আমি ওইদিক টা। আর এছাড়াও কণার কাল সকালেই কলেজ আছে তো যেতে হবে।

মেহরাম;; কি সামলাবে খালামনি বুঝলাম না।

আতিয়া;; ও তোকে এখন বুঝতে হবে না পরে বুঝিস।

ততক্ষণে আয়ুশও নিচে নেমে পরে। এসেই দেখে দবাই কথা বলছে।

কণা;; ওই তো ভাই এসে গেছে।

আয়ুশ;; হুমম।

আতিয়া;; আয়ুশ বাবা কিছু খাবে না?

আয়ুশ;; না মা এখন আর কিছুই খাবো না। আজ চলি রাত হয়ে এলো।

কনিকা;; বলছিলাম কি যে আজকের রাত টা থেকে যেতে।

কণা;; হ্যাঁ আমিও তো তাই বলছি।

আয়ুশ;; এই একদম চুপ,, না বড়োমা কাল এই পেত্নির কলেজ আছে। পড়াচোর কোথাকার। আর আমার অফিস আছে, বাবা দুইদিন পর বাইরে থেকে আসছেন। অনেক কাজ তাই যেতে হবে। আজ না তবে আরেকদিন থাকবো।

কনিকা;; আচ্ছা।

লায়লা;; তাহলে আপা আজ চলি।

এই বলেই তারা উঠে পরে। সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরে। মেহরাম আয়ুশের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আয়ুশের চোখ তার ওপর পরতেই সে চোখ নামিয়ে ফেলে। আজ সারাদিন ধরেই এটা হচ্ছে মেহরামের সাথে জানে না কেন। না চাইতেও বার বার মানুষ টার সাথে নজরবন্দি হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাকে লজ্জা পেয়ে বার বার চোখ নামিয়ে ফেলতে হচ্ছে। যাই হোক সবাই বিদায় নিয়ে এসে পরে।

.
.

সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। কিন্তু মেহরাম না। কি আর করবে ঘুমই আসে না। একবার পুরো রুমে পায়চারি করছে তো আরেকবার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। হাসি পাচ্ছে তার পেট এতো বড়ো দেখে। মেহরাম ভাবছে যে এমন যদি তার ভুড়ি হতো তাহলে তাকে কেমন লাগতো এটা ভেবে আরো হাসি পাচ্ছে। মেহরামের তো কোন কাজ নেই তাই সে ভাবলো যে পুরোনো কিছু বই আছে হয়তো ধুলো জমেছে তাত। বসেই তো আছি শুধু শুধুই তাহলে বের করে একটু পরিষ্কার করা যাক। যেই ভাবা সেই কাজ মেহরাম একটা কাপড়ের অংশ বিশেষ নিয়ে বুকসেল্ফ টা খুলে দাড়ালো। একটা একটা করে বই মুছে মুছে নিজের পাশে রাখছে। হঠাৎ বই গুলো বের করতে করতে একটা বইয়ের মাঝ থেকে কিছু পরে যায়। মেহরাম সেটা হাতে তুলে নেয়। তুলেই দেখে আয়ুশের একটা ছবি। এটা ভার্সিটি লাইফের ছবি। মানে যখন এই জনাব আয়ুশ তার বাইককে উড়োজাহাজ বানিয়ে ঘুরতো, চুলগুলো বাতাসের সাথে কথা বলতো, ভার্সিটির সিনিয়র বলে একটা ভাব ছিলো নিজের মাঝে তখনকার ছবি এটা। খুব স্টাইল মেরে বাইকে বসে আছে। মেহরাম তার এক বন্ধুকে বলে লুকিয়ে এই ছবি টা তুলেছিলো। তবে হঠাৎ করে হলেও বেশ ভালো হয়েছে ছবি টা। মেহরাম ছবিটা দেখতে দেখতেই হেসে দিলো খিলখিল করে। তার এখন একদম গলা ফাটিয়ে জোরে হাসা যাবে না কারণ পেটে ব্যাথা পায় নয়তো এখন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতো সে। যাই হোক ছবিটা আবার আগের জায়গা তেই রেখে দেয়। আবার বই গুলো সুন্দর করে গোছানো তে মনোযোগ দেয়।

ওদিকে আয়ুশ ল্যাপটপ সামনে নিয়ে কাজ করছে। তার মা কে ঘরে আসতে দেখে আয়ুশ ল্যাপটপ টা বন্ধ করে রেখে দেয়।

আয়ুশ;; আরে মা এসো এসো। কিছু বলবে?

লায়লা;; না আমি আর কি বলবো। তবে কিছু বলার আছে।

আয়ুশ;; কিছু বলবে না আবার কিছু বলার আছে। মানে কি 😅 আচ্ছা কি বলবে বলো না।

লায়লা;; বলছিলাম যে। আসলে

আয়ুশ এবার তার মায়ের দিকে ঘুড়ে বসলো। তার মায়ের হাত ধরে হেসে বলে ওঠে।

আয়ুশ;; মা বলো তো।

লায়লা;; মেহরাম

আয়ুশ;; হ্যাঁ মেহরাম কি?

লায়লা;; দেখ বাবা যা হয়েছে তা হয়েছে। আমি চাইছি সবকিছু আবার নতুন করে শুরু কর। জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না, সবকিছুর যেমন একটা শেষ আছে তেমন শুরুও আছে। সবকিছু নতুন করে শুরু কর, এগিয়ে নিয়ে যা।

আয়ুশ;; মানে?

লায়লা;; আমি চাইছি তুই আর মেহরাম বিয়ে করে নে।

আয়ুশ তার মায়ের কথা শুনে কপাল কুচকে ফেলে। মাথা নিচু করে মলিন হাসে। তারপর আবার বলে ওঠে…

আয়ুশ;; মা মেহরাম রাজি হবে না।

লায়লা;; কেন হবে না। সব কিছু কেন আবার শুরু করা যায় না। ওইখানে ওই মেয়টা ভালো নেই এখানে তুই ভালো নেই। এভাবে হয় না আয়ুশ।

আয়ুশ;; মানলাম ভালোবাসি দুইজনই তবে বিয়ে। মা মেহরাম মানবে না।

লায়লা;; আর যদি মানে তাহলে।

আয়ুশ;; ______________________

দেখতে দেখতে ফজরের আজান দিয়ে দেয়। মেহরাম সেগুলো পরিষ্কার করে উঠে পরে। তারপর ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পরে। দাঁড়িয়ে নামাজ পরতে পারে না মেহরাম। এতে বারবার উঠা-বসা করতে হয়। পেটে চাপ পরে। তাই মেহরাম বসে বসেই নামাজ আদায় করে নেয়। নামাজের সময় শেষ হতেই মেহরামের দরজায় টোকা পরে। মেহরাম তখন সবেমাত্রই নামাজ পরে উঠেছে জায়নামাজ গোছাচ্ছে। জায়নামাজ হাতে নিয়েই দরজা খোলে দেয়। দিয়েই দেখে তার চাচি আতিয়া দাঁড়িয়ে আছে। আতিয়া কে দেখেই মুখে হাসি ফুটে ওঠে তার।।

মেহরাম;; আরে চাচি এসো এসো।

আতিয়া;; নামাজ পড়েছিস?

মেহরাম;; হ্যাঁ মাত্রই। এসো বসো। আমি চা বানিয়ে আনি।

আতিয়া;; এই তোকে কেউ বলেছে চা বানাতে। সাজ সকালেই রান্নাঘরে কেন যাবি। এখানে আমার পা।শে বোস। দুটো কথা বলি আগে।

মেহরাম;; আচ্ছা 😊।

মেহরাম আর তার চাচি মিলে বসে কথা বলতে থাকে।





🥀🥀চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩২

💙🐦

।।

।।

।।

মেহরাম আর তার চাচি বসে কথা বলতে থাকে।

আতিয়া;; আর মাত্র এগারো দিন বাকি।

মেহরাম;; কিসের চাচি?

আতিয়া;; তোর দশ মাস হাওয়ার।

মেহরাম;; ওহহ আচ্ছা।

আতিয়া;; খাবি খিদে পেয়েছে?

মেহরাম;; না ঠিক আছি।

আতিয়া;; মেহরাম কিছু কথা ছিলো রে তোর সাথে।

মেহরাম;; হ্যাঁ বলো না।

আতিয়া;; দেখ মা আমি জানি তনুর ওপর তুই নিজের জান দিতি কিন্তু হায়াতের কথা তো আর কেউ বলতে পারে না তাই না। আর সময়ও কারো জন্য বসে থাকে না। কিছুই থামে না কারো জন্যই না। কিন্তু

মেহরাম;; কিন্তু কি?

আতিয়া;; দেখ মেহরু আমি কোন বাহানা করতে চাইছি না। আমি সোজাসাপটা সব বলে দেই। বাকি তোর ইচ্ছে। শুধু একটা কথা জেনে রাখ যে এটা শুধু আমি না বাড়ির সকলেই চায়।

মেহরাম;; হয়েছে কি চাচি?

আতিয়া;; আয়ুশ খুব ভালো একটা ছেলে। আমি আসলে ভাগ্যবান যে মেয়ের জামাই হিসেবে ওকে পেয়েছি নয়তো সবার ভাগ্যে কিন্তু ভালো জামাই জোটে না। কিন্তু দেখ না যার জন্য তুই এতো কিছু করলি সেই আর রইলো না। এখন দুইজন দুই প্রান্তে না থেকে এক হয়ে যা না। শোন কিছুদিন পর যখন তোর বাচ্চা দুনিয়ার আলো দেখবে তখন হয়তো তুই ওকে বাবা-মা উভয়েরই ভালোবাসা দিয়ে বড়ো করতে পারবি। তবে যখন তোর বাচ্চাটা বড়ো হবে, বুঝতে শিখবে তখন মনের কোণে বাবা না থাকার কষ্ট টা কিন্তু ঠিকই তাকে তাড়া করে বেড়াবে। মুখ ফুটে হয়তো বা কখনো বলবে না কিন্তু কষ্ট টা রয়েই যাবে। তোদের দুইজনের এক হওয়াতে যদি দুটো পরিবার আবার জোড়া লাগে বা পরিবার টা পূর্ণ হয় তাতে ক্ষতি কি।

মেহরাম;; চাচি….

আতিয়া;; আমরা শুধু এটা চাইছি যে তুই আর আয়ুশ বিয়ে করে নে।

মেহরাম;; কিন্তু চাচি তনুর জায়গায় আমি কি করে…

আতিয়া;; তনুও তো এটাই চাইতো তাই না। যখন সে সব জেনে গেলো।

মেহরাম;; আমার ভালো ঠেকছে না। (অন্য দিকে ঘুড়ে)

আতিয়া;; মানুষ যখন মিথ্যা বলতে পারে না তখন এভাবে চোখ ফিরিয়ে নেয়। চোখে চোখ রেখে কথা বলতে বাধে তাদের।

মেহরাম;; চাচি তুমি বুঝছো না কেন?

আতিয়া;; তুই কেন বুঝিস না। আয়ুশ ছেলেটা পাগলের মতো ভালোবাসে তোকে আর তুই…

মেহরাম;; চাচি এমন হয় না। লায়লা খালামনি কি ভাববেন?

আতিয়া;; লায়লা আপা কি ভাববেন তাই না..! আরে লায়লা আপা নিজেই এই প্রস্তাব দিয়েছেন।

মেহরাম;; কিইইহ?

আতিয়া;; হ্যাঁ।

মেহরাম;; কি বলছো এইসব?

আতিয়া;; সত্যি।

মেহরাম;; কিভাবে কি!!

মেহরাম মুখে চিন্তার ছাপ নিয়ে কপাল কুচকে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। আতিয়া মেহরামের দিকে তাকিয়ে উঠে পরে তারপর মেহরামের জায়নামাজ টা ভাজ করে কাবার্ডে রাখতে রাখতে বলে ওঠে….

আতিয়া;; মেহরু কোন মা কখনোই চায় না যে তাদের সন্তানের কোন ভাবে কোন ক্ষতি হোক। আমরাও চাই না। যা ভেবেছি বা যা করার জন্য ভাবছি তা নিতান্তই তোদের ভালো ছাড়া আর কিছুই না। কারণ এভাবে থাকলে পরিবার টা একদম আলাদা হয়ে যাবে। ভাংা ভাংা অংশে ভাগ হয়ে যাবে। একজন এই প্রান্তে তো আরেকজন ওই প্রান্তে। তবে আমরা যে শুধু পরিবার বা আমাদের কথা ভেবে এই পদক্ষেপ টা নিয়েছি তা কিন্তু না। আমরা সবার কথাই ভেবেছি। বড়ো কথা হচ্ছে তোরা ভালোবাসিস একে অপরকে। (মেহরামের হাত ধরে)

মেহরাম;; কিন্তু চাচি তনু তো…… (চোখের কোণে ইতোমধ্যেই পানি জড়ো হয়ে গেছে)

আতিয়া;; মনে রাখবি তনুর শেষ কথা। ভাববি যে দূর থেকে হলেও তনু তোকে দেখছে আর শান্তি পাচ্ছে। কারণ ওই ও এটাই চাইতো।

মেহরাম;; চাচি আমার কিছুটা সময় দরকার প্লিজ। আমি আগেই কিছু বলতে পারছি না।

আতিয়া;; হুম তা নে। যতো সময় নেবার নে কিন্তু পরবর্তীতে যেন হ্যাঁ ই হয়।

আতিয়া এই বলেই ঘর ত্যাগ করে কিন্তু এদিকে তো মেহরামের মাথায় আরেক চিন্তা ভর করে বসে। সবেমাত্রই কি বলে গেলো তার চাচি। আর প্রস্তাব নাকি লায়লা খাতুনই দিয়েছেন। তাহলে তো অবশ্যই এই সব ব্যাপারে কনিকা অর্থাৎ মেহরামের মা ও জানে। এইসব চিন্তাই যেন মাথার ওপরে এখন ঘুর ঘুর করছে মেহরামের। সাদা ওরনা দিয়ে হিজাব পড়েছিলো সেটাও খুলে নি এখনো। বিছানাতে বসে ভাবছে এই সব। তার কিছুক্ষণ পর আকাশ আসে। রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মেহরামকে ডাকতে থাকে….।

আকাশ;; মেহরাপু

মেহরাম;; হ্যাঁ

আকাশ;; ওভাবে বসে আছো কেন?

মেহরাম;; না রে এমনি। তুই কি কিছু বলবি? আর আজ এতো সকাল সকাল উঠে পরেছিস যে?

আকাশ;; ওমা ভুলে গেলে আমার না আগামীকাল পরিক্ষা আর তুমিই তো সকালে উঠতে বলেছো।

মেহরাম;; ওহহ হ্যাঁ। আচ্ছা নাস্তা করে তারপর বই খাতা নিয়ে আসিস।

আকাশ;; আচ্ছা। আর চলো তোমাকে ডাকতেই তো এসেছিলাম।

মেহরাম;; আসছি।

আকাশ চলে যায়। মেহরাম ধীরে উঠে মুখ চোখ সব মুছে নেয়। চুল গুলো কোন রকমে খোপা করে নেয় একটা চিকন কাটা দিয়ে। তারপর নিচে নেমে আসে। এসেই দেখে সবাই বসে আছে। মেহরামের বাবা আর চাচা মিলে কথা বলছে আর চা খাচ্ছে। মেহরাম তাদের দেখে মুচকি হাসে তারপর তার দাদির পাশে বসে পরে।


লায়লা খাতুন এসে ছেলের রুমে দেখে গেছেন। কাথা গায়ে দিয়ে মুখ অন্যপাশে ঘুড়িয়ে ঘুম পারছে। তিনি ভেবেছেন আয়ুশ ঘুম কিন্তু না আয়ুশ অন্যপাশে ঘুড়ে চোখ মেলে তাকিয়ে আছে। লায়লা খাতুন একবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার আয়ুশের দিকে তাকায়। অফিসের সময় প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আয়ুশের ওঠার নাম নেই। অন্যান্য দিন হলে ঝড়ের গতিতে উঠে অফিসে চলে গেতো কিন্তু আজ…..। যাই হোক লায়লা খাতুন চলে গেলেন। নিচে গিয়েই দেখে কণা মনের সুখে খাচ্ছে। কারণ তার বান্ধবী ফোন করে বলেছে যে আজ তাদের ক্লাস নেই তো কলেজেও যেতে হবে না। কণা খেয়াল করলো যে তার মায়ের মুখ টা কেমন ভার ভার। খাওয়া রেখে কণা বলে ওঠে…..

কণা;; মা কি হয়েছে?

লায়লা;; আয়ুশের কি যেন হয়েছে।

কণা;; মানে, ভাইয়ের আবার কি হলো? ভালোই না ছিলো।

লায়লা;; ওহহ তোকে তো বলাই হয় নি। আসলে আমরা সবাই মেহরাম আর আয়ুশের বিয়ের ব্যাপারে কথা বলছি।

কণা;; কি?

লায়লা;; হ্যাঁ আর এই ব্যাপারে আয়ুশের সাথে গতকাল রাতে আমার কথাও হয়েছে।

কণা;; ওহহ তো এই কথা বুঝেছি। তবে মেহরাপু কি মানবে?

লায়লা;; আটকে যাই ওই কথা তেই।

কণা;; ধৈর্য ধরো, সবুর করো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

লায়লা;; তাই যেন হয়।

কণা;; ভাই কোথায়?

লায়লা;; রুমেই।

কণা;; উঠে নি?

লায়লা;; না।

কণা;; আমি দেখছি।

কণা টেবিল ছেড়ে ওঠে আয়ুশের রুমে চলে যায়। রুমের দরজা টা ধীরে খোলে উকি দেয়। দেখে তার ভাই ওপর পাশ হয়ে শুয়ে আছে। কণা আয়ুশের রুমে চলে গেলো।

কণা;; ভাইয়া, ভাইয়া।

আয়ুশ;; _______________

কণা;; ভাইয়া, ওইই ভাইয়া।

আয়ুশ;; _______________

কণা;; এইই আয়ুশের বাচ্চা।

আয়ুশ;; কি বললি?

কণা;; এইতো বুলি ফুটেছে।

আয়ুশ;; কেন এসেছিস?

কণা;; তোকে তুলতে।

আয়ুশ;; আমি উঠতে জানি।

কণা;; অফিসে যাবি না?

আয়ুশ;; জানি না রে বইন। কাজও আছে আর ইচ্ছেও করছে না। কি যে করি।

কণা;; ভাইয়া তাহলে তুমি এক কাজ করো বাসায় থেকেই কাজ গুলো করে ফেলো না।

আয়ুশ;; ওরে এতো মিষ্টি সুরে ডাক।

কণা;; না ইয়ে মানে মাঝে মাঝে ডাকতে হয় আরকি।

আয়ুশ;; হুমমম।

আয়ুশ উঠে বসে পরে। কণা আয়ুশকে দেখেই হেসে দেয়। কারণ আয়ুশের চুলগুলো খানিক বড়ো বড়ো। সেগুলো কাকের বাসা হয়ে আছে।

আয়ুশ;; ভেটকাচ্ছিস কেন?

কণা;; বহোত খুবসুরাত লাগতাছে তুমারে ভাইজান 😁।

আয়ুশ;; পেত্নী, এই তোর কলেজ নেই।

কণা;; ক্লাস নেই এখন কি কলেজ গিয়ে মুড়ি খাবো। এহহহ আমাকে খালি কথা শুনাস নিজের অফিসে যাবার নাম নাই।

আয়ুশ;; হাহ আরামে পড়াশোনা করো তো ভালো লাগে না তাই না। আমার মতো রাত দিন খাটতে হতো বুঝতা।

কণা;; এর জন্যই তো বলি যে বিয়ে টা দিয়ে দাও ভালো কাউকে দেখে।

আয়ুশ;; কিইইই তবে রে দাড়া,, ওওওও মা তোমার মেয়ে কে নিয়ে যাও তো। হারামী গেলি এখান থেকে।

কণা;; যাক তোকে উঠানো আমার কাজ ছিলো তা হয়ে গেছে এবার আমি যাই।

আয়ুশ চিল্লাচ্ছে আর এদিকে কণা হাসতে হাসতে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে পরে।

লায়লা;; কি রে কি করে এসেছিস?

কণা;; আবোল তাবোল কথা বলে চেতাই রাইখা আসছি। এছাড়া আমার কাজই একটা ওকে চেতানো। হিহিহিহিহি।

লায়লা;; বড়ো কবে হবি?!

কণা;; কেন বড়ো হলে কি বিয়ে দিবে।

আয়ুশ;; দেখলে মা দেখলে তোমার মেয়ের কান্ড। কি রকম বিয়ে পাগল মেয়ে তোমার। শোনো শোনো একটা বুড়া ধামকে ধরে ওর গলায় তোমার মেয়েকে ঝুলিয়ে দাও তখব বুঝবে। (নিচে এসে)

কণা;; এই তুই অফিসে যা।

আয়ুশ;; যাবো না আমি।

লায়লা;; আসলেই যাবি না?

আয়ুশ;; না আসলে যাবো না। ভালো লাগছে না সব কাজ বাসায় থেকেই করবো।

লায়লা;; আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।

আয়ুশ চলে যায় ফ্রেশ হতে। কণা আবার তার খাবার নিয়ে টিভি দেখতে লেগে পরে। ওদিকে মেহরামের বাড়িতে সবাই যার যার কাজ করছিলো। তখনই লায়লা খাতুনের ফোন আসে। কনিকা গিয়ে ফোন রিসিভ করে…..

কনিকা;; হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।

লায়লা;; ওয়ালাইকুম সালাম আপা। কেমন আছেন?

কনিকা;; আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি আর ছেলে মেয়ে কেমন আছে?

লায়লা;; সবাই অনেক ভালো। আপা আসলে কথা হয়েছে কি মেহরামের সাথে?

কনিকা;; জ্বি আজ সকালেই আতিয়া গিয়ে মেহরামকে বুঝিয়ে বলে এসেছে।

লায়লা;; মেহরাম কি বললো?

কনিকা;; ওর নাকি কিছুদিন সময় দরকার।

লায়লা;; ওহহ আচ্ছা।

কনিকা;; আপা কি যে হবে..!

লায়লা;; দোয়া করি সব যেন ভালোই হয়।

কনিকা;; আপা এককাজ করুন না আপনি আয়ুশকে নিয়ে আজ এসে পড়ুন।

লায়লা;; কিন্তু আজ?

কনিকা;; আপা আমার মনে হয় আয়ুশ আর মেহরামের একা কিছুক্ষণ একে ওপরের সাথে কথা বলা উচিত।

লায়লা;; হ্যাঁ যদি একে ওপরের সাথে কথা বলে ভালো হয় বা সব ক্লিয়ার করে নেওয়া যায় তাহলে এতে আর মন্দ কি।

কনিকা;; জ্বি তাই বলছি এসে পড়ুন বিকেলের দিকে।

লায়লা;; জ্বি আচ্ছা আপা।

কনিকা;; আচ্ছা।

লায়লা খাতুন আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দেন। পেছনে ঘুড়তেই আতিয়া কে দেখে। আতিয়া ইশারাতে তার ভাবী কে জিজ্ঞেস করে কে ছিলো কনিকা বলে লায়লা খাতুন। আর তারা বিকেলে আসছেন৷ মেহরামকে কিছু জানাতে মানা করে দেন। তারপর গিয়ে সবার সাথে বসে পরে।

মেহরাম;; হুমম অংক এটা কর আগে। ২০ জন শ্রমিক যদি ১ টি পুকুর ৬ দিনে খনন করতে পারে তাহলে ২৭ জন শ্রমিকের পুকুরটি খনন করতে কতোদিন লাগবে। কর এটা

আকাশ;; একটু দেখি না।

মেহরাম;; মাইর না খাইতে চাইলে না দেখে অংক কর। সেম নিয়মের অংক ৩ টা করেছিস এটা পারবি না কেন। তাহলে কি করলি এতোক্ষন, অংক কর চুপচাপ।

মেহরামের ধমক খেয়ে আকাশ চুপটি মেরে অংক করতে লাগলো তখনই তার চাচি হাতে এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে মেহরামের পাশে বসে। দুধের গ্লাস দেখে এই যেন মেহরামের মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। কারণ দুধ থেকে তার জন্ম-জন্মান্তরের শত্রুতা।

আতিয়া;; ওভাবে নাক কুচকে লাভ নেই। চুপ করে খেয়ে নে।

মেহরাম;; আমি মাফও চাই দোয়াও চাই। আমার পক্ষে সম্ভব না গো চাচিজান।

আতিয়া;; হপ চুপ করে খা। বেশি না তো হাফ গ্লাস।

মেহরাম;; কি এটা হাফ গ্লাস, এটা তুমি বলতে পারলে। কানার ভাই আন্ধাও তো এটাকে হাফ গ্লাস বলবে না।

আতিয়া;; হ্যাঁ হাফ গ্লাস না ফুল গ্লাসই এবার খা তো।

মেহরাম;; চাচি দেখো সত্যি আমি পারবো না। এটার স্মেলও ভালো লাগে না।

আতিয়া;; নাক চেপে ধরে গিলে ফেল। তোর জন্য না হোক বেবির জন্য খা।

মেহরাম;; ওর জন্য আর কতো দোহায় যে দিবে তোমরা।

মেহরাম আর কোন উপায় না পেয়ে নাক চেপে ধরে বাধ্য হয়ে খেয়ে নিলো। কিন্তু হাফ গ্লাস খেয়েই আর পারলো না। আতিয়াও আর জোরাজোরি করে না ছেড়ে দেয়। এভাবেই সময় যেতে যেতে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো।

.
.

লায়লা;; আয়ুশ রেডি হ।

আয়ুশ;; কেন কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লায়লা;; মেহরামদের বাড়িতে।

আয়ুশ সোজা হয়ে বসে পরে।

আয়ুশ;; কালই না এলাম আজ আবার…!

লায়লা;; কাজ আছে তাই যাচ্ছি। তাড়াতাড়ি উঠ

আয়ুশ;; কণা..

কণা;; আমি রেডি হয়ে বসে আছি।

আয়ুশ;; বাপরে বাপ। যাচ্ছি

আয়ুশ গিয়ে রেডি হয়ে নেয়। সে রেডি হচ্ছে আর ভাবছে যে সেখানে গিয়েই কি করবে আর মেহরাম কি আদৌ রাজি হবে। অত:পর সব চিন্তা ভাবনা কে এক সাইডে রেখে রেডি হয়ে আয়ুশ নিচে নেমে আসে।
তারপর সবাই রওনা দেয় মেহরামদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রায় আধাঘন্টা পর পৌছেও যায়। মেহরাম আকাশের সাথে বসে বসে দশ বিশ খেলছিলো আর হাসছিলো তখনই তারা ভেতরে আসে। তাদের আসতেই কনিকা আতিয়া আর বিল্লাল এগিয়ে যান। আয়ুশ আর মেহরামের চোখাচোখি হয়ে যায়। তারা বসে পরে। সবাই বসে কথা বলছে। মেহরাম তাদের মাঝখান থেকে উঠে আসতে নেয় তবে আতিয়া আবার হাত ধরে তাকে থামিয়ে দেয়। কিন্তু মেহরাম বুঝিয়ে আবার এসে পরে। সোজা চলে যায় ছাদে। আয়ুশ তার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ নামিয়ে ফেলে। এবার মূল কথা উঠে। এক কথায় বাড়ির সবাই রাজি শুধু মেহরাম কিছুটা কনফিউশনে পরে আছে। আয়ুশ হয়তো মেহরামের অবস্থা টা এবার আন্দাজ করতে পেরেছে। তাই সে উঠে গিয়ে ছাদে চলে আসে। এসে এদিক ওদিক খুজতে থাকে মেহরামকে কিন্তু ছাদের কোথাও নেই মেহরাম। আয়ুশ ভাবে হয়তো মেহরাম তার রুমে চলে গিয়েছে। এই ভেবে আয়ুশ চলে আসতে নেয়। কিন্তু ঠিক তখনই কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দ কানে আসে, আয়ুস থেমে যায়। এটা মেহরামের কান্নার আওয়াজ। আয়ুশ ছাদের মাঝখানে চলে যায়। আরো একটু এগিয়ে নিজের ডান পাশে তাকাতেই দেখতে পায় মেহরাম ছাদের এক কিণারে দাঁড়িয়ে দুই হাত দিয়ে সমানে চোখের পানি মুছে যাচ্ছে আর হিচকি তুলে কাদছে। আয়ুশ তাকে দেখে থেমে যায়। এগিয়ে গিয়ে মেহরামের পেছনে দাঁড়িয়ে পরে। মেহরাম এখনো টের পায় নি যে তার পেছনে আয়ুশ দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ আয়ুশের ডাকে মেহরামের হুস আসে। সে তড়িঘড়ি করে নিজের চোখের পানি গুলো মুছে ফেলে।

আয়ুশ;; মেহরাম।

মেহরাম;; আব..হুম হ্য হ্যাঁ বলো। আর তুতুমি এএখানে কেন? (আয়ুশের দিকে তাকিয়ে)

আয়ুশ;; কাদছো কেন?

মেহরাম;; কই ননা না আমি কাদছি কই না তো। ঠিক আছি আমি।

আয়ুশ;; প্রথমে কীভাবে মিথ্যা বলতে হয় তা আগে ভালোভাবে শেখো তারপর মিথ্যা বলতে এসো তাও আবার আমার সাথে ওকে।

মেহরাম;; হ্যাঁ কাদছি, কি হয়েছে তাতে। কান্না পাচ্ছে আমার কি করবো আমি (কেদে)

আয়ুশ;; আচ্ছা কেন কাদছো তা তো আগে বলবে নাকি?

মেহরাম;; সবাই কি চাইছে জানো তুমি?

আয়ুশ;; কি চাইছে?

মেহরাম;; তোমার… ত তোমার আর আমার ববিবিয়ে।

আয়ুশ;; সবার ভালো আর খুশির কথাই ভেবেই এই কথা উঠে এসেছে। তবে তুমি চিন্তা করো না। সবটাই তোমার ওপর নির্ভর করে মেহরাম। কেউ তোমাকে কোন প্রকার জোর করবে না। সবটাই তুমি আর তোমার ইচ্ছে। তুমি রাজি থাকলে আমি আছি নয়তো না।

মেহরাম;; তনু…

আয়ুশ;; মাঝে মাঝে হিংসে হয় জানো। তনুর থেকে অনেক হিংসে হয়। কারণ তুমি তনু কে এত্তো বেশি যে ভালোবাসো তাই। কেন এতো ভালোবাসো। আমাকে দেওয়া যায় না কিছুটা 😅। তনুর কথা এখনো ভাবছো। জানি আমি সেটা আর তুমি আজীবন ভাববে। কারণ ভাবার অধিকার টা আছে তোমার। কাশ আমার পেত্নী মার্কা বোন টাও এতো ভালোবাসতো আমায়।

মেহরাম;; সবাই ভালোবাসে।

আয়ুশ;; তুমি আমাকে বাসো?

মেহরাম;; ________________

আয়ুশ;; কি হলো বলো..!

মেহরাম;; বাসলেই কি?

আয়ুশ;; বিয়ে।

মেহরাম;; কিন্তু তনু..!

আয়ুশ;; হয়তো তুমি ভুলে গেছো।

মেহরাম;; কি?

আয়ুশ;; এটা।

আয়ুশ তার পকেট থেকে তনুর লিখা ওই চিঠি টা বের করে মেহরামের হাতে দেয়। মেহরাম অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। একবার চিঠির দিকে তো আরেকবার আয়ুশের দিকে তাকাচ্ছে।

মেহরাম;; এটা??

আয়ুশ;; তনুর লিখা শেষ চিঠি। আমি এটা সরাই নি কখনো। সেইদিন নিজের পকেটে খুঁজে পাই আর তখন থেকে প্রতিবার নিজের কাছেই রাখি। তনু কি লিখেছে হয়তো ভুলে গেছো তুমি।

মেহরাম;; ভুলি নি, কিছুই ভুলিনি আমি।

মেহরাম চিঠি টার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তারপর আবার আয়ুশ কাছে দিয়ে দেয়। আয়ুশ নিজের কাছে রাখে।

আয়ুশ;; সব তোমার ইচ্ছে মেহরু, সব।

আয়ুশ পেছন ঘুড়ে চলে আসতে নেয়। তবে এখন মেহরাম আয়ুশকে পেছন থেকে ডাক দেয়।

মেহরাম;; আয়ুশ..!

আয়ুশ থেমে যায়, পেছন ফিরে তাকায়।

আয়ুশ;; হমম।

মেহরাম আবার তার চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে। ছলছল চোখে আয়ুশের দিকে তাকিয়ে থাকে। আয়ুশ হয়তো বুঝে এই চোখের ভাষা। আয়ুশ মেহরামের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের হাত টা খানিক এগিয়ে দেয় মেহরামের দিকে। আয়ুশ বলে ওঠে….

আয়ুশ;; তো মেহরাম আফরিন আপনি কি আমার অর্ধাঙ্গিনী হবেন। আমার অংশবিশেষ। বিয়ে করবেন আমাকে..?! (বেকুল দৃষ্টিতে মেহরামের দিকে তাকিয়ে)

মেহরাম তো এবার আরো কেদে দেয়। জোরে জোরে কয়েকবার মাথা নাড়িয়ে কোন রকমে বলে ওঠে…

মেহরাম;; হ্য..হ হ্যাঁ। (কেদে)

আয়ুশের হাতে মেহরাম তার হাত রেখে দেয়। আয়ুশ মুচকি হেসে মেহরামকে জড়িয়ে ধরে। তার এক হাত মেহরামের মাথার পিছনে রেখে দেয়। মেহরাম ও তাকে জড়িয়ে ধরে।





🍂চলবে~~

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ