তৈমাত্রিক পর্ব-৩৩+৩৪

0
994

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৩

💖🌹

।।

এভাবেই চলে গেলো পাঁচ দিন। মেহরাম যে বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে এতে বাড়ির কার খুশি কে দেখে। বিয়ে হবে, এই কিছুদিনের মাঝেই হবে। তবে আয়ুশ চাইছে যে বিয়েতে যেন বেশি কোলাহল না থাকে। একটা শান্তশিষ্ট ঘরোয়া ভাবেই যেন বিয়েটা হয়ে যায়। মেহরামও তাই চাইছে। শুধু বাড়ির মানুষ গুলোই থাকবে, তাদের নিয়েই ছোট খাটো একটা আয়োজন করে বিয়ে টা শেষ করে নিবে। সবাই তাদের মতামতকে সাই দেয়। আর বড়ো কথা হচ্ছে মেহরাম এই অবস্থায় বেশি দৌড় ঝাপ করতে পারবে না, এখন তো আরো না। তাই এই কথা মাথায় রেখেই আয়ুশের বিয়ের ব্যাপারে এই চিন্তা করা। আজ ১৭ ই মার্চ, ২০ মার্চের দিন আয়ুশ আর মেহরামের বিয়ে। সব ঠিকঠাক এখন শুধু ভালোয় ভালোয় সব কেটে গেলেই হয়। এখন রাত বেজে চলেছে প্রায় ১;৩৫ মিনিট। মেহরাম ঘুমায় না। প্রতিদিন রাতে কথা হয় আয়ুশের সাথে তার। কারণ মেহরাম যে রাতে ঘুমাতে পারে না এটা আয়ুশ জানে। একা একা থাকতেও ভালো লাগে না তাই আয়ুশ রোজ রাতে মেহরামকে ফোন দেয়। মেহরামের বেশি খারাপ লাগলে সে চুপ করে শুয়ে থাকে আর আয়ুশ নিজে নিজেই বকবক করে যায়। এখনো তার ব্যাতিক্রম নয়। মেহরাম আয়ুশের সাথে কথা বলছে। আয়ুশ তার হাতে একটা ছোট বল নিয়ে ঘোড়াচ্ছে আর সারা ঘরে পায়চারি করে মেহরামের সাথে কথা বলছে। আর মেহরাম সে জানালার পাশে হেলান দিয়ে সব শুনছে। হঠাৎ আকাশে ঘন কালো মেঘ জড়ো হয়ে গেলো। বিদ্যুৎ চমকে উঠলো। মেহরাম এক ধ্যানে আয়ুশের কথা শুনছিলো কিন্তু এভাবে হুট করে আকাশে বিদ্যুৎ চমক দিলে মেহরাম চমকে কিছুটা চিৎকার দিয়ে ওঠে।

আয়ুশ;; মেহরাম, ঠিক আছো?

মেহরাম;; হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি আমি, ওইতো হুট করেই আকাশ জোরে ডেকে ওঠেছে তো তাই খানিক চমকে গিয়েছিলাম আরকি।

আয়ুশ;; ভয় পাচ্ছো?

মেহরাম;; আরে না না।

আয়ুশ;; আচ্ছা বসে থাকো এক জায়গায় চুপ করে। বেশি নড়াচড়া করো না। আমি কি বড়োমা কে ফোন দেবো, তোমার রুমে আসতে বলবো?

মেহরাম;; আরে না না একদম না, ওরা সবাই হয়তো ঘুম। ফোন দিও না আর আমি ঠিক আছি তো কিছুই হয় নি। তুমি শুধু কথা বলে যাও।

আয়ুশ;; আচ্ছা। তো কি কি প্ল্যান করলে?

মেহরাম;; কি নিয়ে প্ল্যান?

আয়ুশ;; আরে বিয়ে আর কি।

মেহরাম;; আরে তেমন কোন প্ল্যান নেই।

আয়ুশ;; কিন্তু আমার আছে তো।

মেহরাম;; কি প্ল্যান শুনি?!

আয়ুশ;; শোন, বিয়ের দিন একদম সাদা একটা ড্রেস পরবে কেমন।

মেহরাম;; আচ্ছা পড়লাম। তারপর?

আয়ুশ;; তারপর আর কি তোমাকে বিয়ে করে এনে পরবো আমি।

মেহরাম;; হুমম হয়েছে।

তারা কথা বলছিলো তৎক্ষনাৎ আরো একটা বিদুৎ চমক দিয়ে উঠলো আকাশে। তবে এবার মেহরাম চমকায় না। তীব্র বাতাশ বয়ে যাচ্ছে চারিপাশে। জানালা খোলা সেখানের পর্দা অনেক জোরে দুলছে বাতাসে। বাইরে থেকে শীতল বাতাসও আসছে। মেহরাম জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।

আয়ুশ;; কি করো?

মেহরাম;; তেমন কিছুই না, বসে আছি। বাইরে থেকে অনেক ভালো বাতাস আসছে।

আয়ুশ;; হ্যাঁ।

মেহরাম;; কিছু খাবো আমি, খিদে লেগে গেছে।

আয়ুশ;; রাতে কি খেয়েছিলে?

মেহরাম;; রাতে কি খেলাম, কি খেলাম? ওহহ হ্যাঁ মনে পরেছে কষা মাংস, খিচুড়ি আর…

আয়ুশ;; হয়েছে থাক থাক আর বলতে হবে না। আমারই খিদে পেয়ে যাচ্ছে তোমার কথা শুনে। আচ্ছা এখন কি খাবে?

মেহরাম;; খাবো না।

আয়ুশ;; কেন?

মেহরাম;; এখন সিড়ি বেয়ে আবার নিচে নামতে হবে তারপর খাবার গরম করতে হবে তারপর খেতে হবে আর অনেক শব্দ হবে। ধুর ছাই এতো ভেজাল করবে কে তার থেকে খাবোই না।

আয়ুশ;; হায়রে, আচ্ছা কি খেতে ইচ্ছে করছে এখন?

মেহরাম;; ফুচকা, ইশশশশ। কি যে ভালো লাগে আর কবে থেকে খাওয়াই হয় না।

আয়ুশ;; ফুচকা খাবে?!

মেহরাম;; হ্যাঁ কিন্তু উপায় নেই যাজ্ঞে বাদ দাও। কি করো?

আয়ুশ;; কেন বাদ দিবো। আচ্ছা শুনো আমি তোমার সাথে আধা ঘন্টা পর কথা বলি!!

মেহরাম;; না না বেশি দরকার হলে কাল কথা বলো। এতো তাড়া নেই কিন্তু করবে টা কি?

আয়ুশ;; কি করবো তা তো আমিই জানি। এবার তুমি ফোন টা রেখে একটু চুপ করে বসে থাকো। আমি পরে ফোন দিচ্ছি কেমন। টাটা

মেহরাম;; আচ্ছা।

মেহরাম এই বলেই ফোন কেটে দেয়। বিছানার ওপর দুই পা তুলে চুপ করে বসে থাকে। এর মধ্যে ধুপ করে কারেন্ট ও চলে যায়। শুরু হয় আরেক জ্বালা। মেহরাম ফোনের ফ্ল্যাস লাইট জ্বালিয়ে আগের মতো করেই বসে থাকলো। আর এদিকে আয়ুশ সোজা চলে যায় রান্নাঘরে কারণ সে ফুচকা বানাবে হ্যাঁ ফুচকা বানাবে। আয়ুশ আগে থেকে মোটামুটি ভালোয় রান্না করতে পারে। আগে একা বাইরে থাকতে হতো তাকে তো সেই সুবাধে তাকে রান্না টা শিখতে হয়েছে। এখন অনেক দিন যাবত রান্না করে না তবে ভুলেও যায় নি। মেহরাম ফুচকা খেতে চেয়েছে। আর আয়ুশ জানে যে এটা আগে থেকেই মেহরামের কি পরিমান পছন্দের একটা খাদ্য। প্রথময় এতো রাতে ফুচকা পাবে না বাইরে। আর দ্বিতীয়ত মেহরামের এই অবস্থায় বাইরের ফুচকা বা অন্য কিছু খাওয়া তেমন একটা ভালো হবে না। তাই নিজেই বানাতে চলে এলো। আয়ুশ রান্নাঘরে এসেই দেখে গ্যাসের ওপর একটা পাতিল জাতিয় কিছু রাখা। তবে গ্যাস অফ করা। সেটার ঢাকনা তুলেতেই ভাগ্যক্রমে সিদ্ধ আলু পেয়ে যায়। ফুচকার যে চিপস গুলো ছিলো সেগুলো নিয়ে এক এক করে গরম তেলে ছেরে দিলো। আর সাথেসাথেই এক একটা ফুলে উঠছে। এভাবেই বেশ কিছু ফুচকা ভেজে ফেলে। আস্তে আস্তে ফুচকা গুলো বানাতেও থাকে। তবে একটু দেরি হয়ে যায়। ত্রিশ মিনিটের জায়গায় চল্লিশ মিনিট হয়ে গেছে। আয়ুশ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুত কাজ করা শুরু করে দেয়। অবশেষে দুটো বক্স রেডি করে। একটা বক্স নিয়ে নেয় আরেকটা বক্স রান্নাঘরেই রেখে দেয়। ওদিকে মেহরাম চুপ করে বসে আছে। তবে এখন কারেন্ট এসে পরেছে। ফলে হাতে বই নিয়ে পরছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে দশ মিনিট টাইম ওভার হয়ে গিয়েছে। মেহরাম ভাবে হয়তো আয়ুশ কোন দরকারি কাজ করছে তাই দেরি। যাই হোক মেহরাম আবার বই পড়াতে মনোযোগ দেয়। এভাবেই আরো চলে গেলো ত্রিশ মিনিট। এদিকে এখন বাইরে ঝড় শুরু হয়ে গেছে। যেমন জোরে বাতাস চালাচ্ছে তেমন ভাবেই বৃষ্টি পরছে। ঘরের বাতি বার বার আসা-যাওয়া করছে। আর এগুলো দেখে তো মেহরাম ভয়ে জমে গেছে পুরো। বিছানার এক কোণায় গিয়ে খাপটি মেরে বসে থাকলো। কারণ পরিবেশ টা এখন খানিক ভয়ার্ত লাগছে মেহরামের কাছে। ফোন টা বিছানার ঠিক মাঝখানে রাখা ছিলো। অন্ধকার ঘরে ক্ষীন আলো নিয়ে টুটু করে ফোন টা বেজে ওঠে। এভাবে একদম নীরব অবস্থায় হুট করে ফোনের শব্দে মেহরাম ভয় পেয়ে যায়। সামান্য ঝুকে ফোন টা হাতে তুলে দেখে আয়ুশের ফোন। এবার যেন সে হাফ ছেড়ে বাচে। ফোন টা রিসিভ করে কানে ধরে।

মেহরাম;; হ্যালো..

আয়ুশ;; হ্যাঁ মেহরু ভয় পাচ্ছো?

মেহরাম;; আরে না আমি, আমি ভয় পাই নাকি। তুমি জানো না আমি কতো সাহসী।

আয়ুশ;; হ্যাঁ হ্যাঁ তা তোমার গলা শুনেই বোঝা যায়। (হেসে)

মেহরাম;; এইই, একদম মশকরা করবা না।

আয়ুশ;; আচ্ছা কি করো?

মেহরাম;; বসে আছি।

আয়ুশ;; খেয়েছো কিছু?

মেহরাম;; না।

আয়ুশ;; কন্ঠ এমন কেন বেশি ভয় পাচ্ছো?

মেহরাম;; আরে না, আচ্ছা শোন ঘুমাও তুমি আমি রাখি।

এই বলেই মেহরাম ফোন কেটে দেয়, আয়ুশকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দেয় না। আয়ুশ অবাক হয়। সে আবার মেহরাম কে ফোন দেয়।

মেহরাম;; আরে আবার ফোন কেন দিলে শোন রাত অনেক হয়েছে ঘুমাও, আমিও ঘুমাবো। যাও যাও ঘুমাও আমি রাখি বায়।

মেহরাম আবার ফোন কেটে দেয়। আয়ুশ কিছু বলতে গিয়েও বলে না। সুযোগই দিচ্ছে না। কিন্তু এবার আয়ুশের সত্যি রাগ হতে লাগে প্রচুর। আয়ুশ আবার ফোন দেয় মেহরামকে । তবে এবার আয়ুশ কিছুটা চিল্লিয়ে ওঠে….

মেহরাম;; আরে তুমি…

আয়ুশ;; এইই গাধা মেয়ে তোমার রুমের দরজা খোল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি কখন থেকে। এই বৃষ্টি তে ভিজে আমার জ্বর এলে সব তোমার দোষ।

মেহরাম;; কিহহহ, এই সময়ে তুমি এখানে কি করো। আর কোন দরজা খুলবো?

আয়ুশ;; তোমার রুমের সামনের করিডরের দরজা খোল দ্রুত।

মেহরাম;; হ্যাঁ খুলছি খুলছি।

মেহরাম উঠে কিছুটা দ্রুত গিয়েই রুমের দরজা খোলে দেয়। আসলে করিডরের সাথে একটা দরজা আছে ওটা দিয়ে মেহরামের রুমে ঢোকা যায়। দরজা টা খুলে দাড়াতেই আবার সামনে করিডর টা পরে। আর আয়ুশ ওইদিক দিয়েই এসেছে। মেহরাম জলদি গিয়ে দরজা খুলে দেয় দেখে আয়ুশ কাক ভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনের চুল গুলো দিয়ে টপ টপ করে পানি গড়িয়ে পরছে। আয়ুশকে মেহরামের দেখে হাসিও পাচ্ছে আবার মায়াও লাগছে। কিন্তু খুব কষ্টে হাসি টা ধামাচাপা দিয় দেয়।

আয়ুশ;; এখন কি সামনে থেকে সরবা নাকি আবার চলে যাবো।

মেহরাম;; আরে আরে রাগ করো কেনো। এসো ভেতরে।

আয়ুশ রুমের ভেতরে এসে পরে। আর মেহরাম মুখে হাত চাপা দিয়ে হাসছে। আয়ুশ এসে তার কাধ থেকে বিছানার ওপর একটা ব্যাগ রাখে। মেহরাম আয়ুশের দিকে একটা টাওয়াল এগিয়ে দেয়। তা দিয়ে আয়ুশ হাত মুখ মাথা মুছছে। কিন্তু মেহরাম এবার অবাক হয়ে আয়ুশকে জিজ্ঞেস করে…৷

মেহরাম;; তুমি কোথা দিয়ে আর কীভাবে এলে? তাও সোজা আমার দরজার সামনে?

আয়ুশ;; বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম ওপরে তাকিয়ে দেখলাম তোমার রুমের দরজা তো করিডরের সাথে একদম লাগানো। তাই করিডর বেয়ে ওপরে এসে পরেছি।

মেহরাম;; কি, বানর নাকি তুমি। যদি পরে টরে যেতে তো?

আয়ুশ;; কিন্তু পরি নি।

মেহরাম;; আর তুমি এখন এখানে কি করছো আর এই ব্যাগ কেন??

আয়ুশ;; আরে আস্তে হরান হয়ে গিয়েছি আমি। আর তুমি না বললে যে ফুচকা খাবে তাই ফুচকা এনেছি। গ্যারাজ থেকে বাইকের চাবি টা নিয়ে দ্রুত এসে গেলাম। আর রইলো ব্যাগের কথা তো ওইটা কণার ব্যাগ। হারামীর রুমে গিয়ে দেখি কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছে। সেই ফাকে ওর কলেজ ব্যাগ টা নিয়ে এসেছে পরেছি।

মেহরাম;; বাহহহ 😕😕। আর কি লাগে।

আয়ুশ;; আর আধা ঘন্টা টাইম চেয়েছিলামও এর জন্যই।

মেহরাম;; মানে?

আয়ুশ;; ফুচকা নিজে বানিয়েছি।

মেহরাম;; এ্যাহ..!

আয়ুশ;; হ্যাঁ।

মেহরাম;; তুমি কীভাবে বানালে। আর পারো তুমি বানাতে?

আয়ুশ;; তো পারি না তো কি হাওয়ায় উড়ে এসেছে। এটা বানাতে গিয়েই সময় লেগে গিয়েছে এতো।

মেহরাম;; কেন শুধু শুধু কষ্ট করতে গেলে?

আয়ুশ;; এখানে কষ্টের কিছুই নেই। বাইরের খাবার তো আর খেতে দিতে পারি না। আর বড়োমা যদি শুনেছে যে তুমি বাইরের ফুচকা খেয়েছো তো তোমায় পরে আবার বকবে তাই নিয়ে এলাম। আর ব্যাগের ভেতরে বক্স আছে সেখানে সব কিছুই আছে। শুধু খুলে খাওয়া শুরু করো। আর হ্যাঁ ইউ টিউবের হেল্প লেগেছে আমার একটু। তবে এতো বাজেও হয়নি যে খাওয়া যাবে না। খাও।

মেহরাম;; 😒😒

আয়ুশ;; আরে তাকিয়ে না থেকে খাও তো।

মেহরাম আর কোন কথা না বলেই ব্যাগ টা খুলে দিলো। ভেতর থেকে বক্স বের করলো। বক্স টা খুলেই দেখে বক্স ভর্তি ফুচকা। আরেক টা ছোট বক্সে তেতুলের টক রাখা। মেহরাম মুচকি হেসে আয়ুশের দিকে তাকায়। দেখে আয়ুশ এক মনে ফোন ঘাটছে। মেহরাম মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কি বলবে ভাষা খুঁজে পায়না। মেহরাম আয়ুশের দিকে তাকিয়ে ছিলো আর আয়ুশ ফোনের দিকে নজর রেখেই মেহরামকে বলে ওঠে…

আয়ুশ;; খাবার এখানে না ওইদিকে, তাকিয়ে না থেকে খাও।
মেহরাম;; 😆

মেহরাম বিছানার ওপর দুই পা তুলে গপাগপ খাওয়া শুরু করলো। আয়ুশ এবার তার ফোন রেখে দুই গালে হাত দিয়ে মেহরামের দিকে তাকিয়ে রইলো। মেহরাম তো মেহরাম ই খাচ্ছে সে।

মেহরাম;; তাকিয়ে আছো ভালো কথা, কিন্তু আমার যদি পেট খারাপ হয়েছে দেইখো তোমারে কি করি। (খেতে খেতে)

আয়ুশ;; আরে না হবে না।

মেহরাম;; তাহলে তাকিয়ে থাকা বন্ধ করো।

প্রায় পঁচিশ মিনিট পর মেহরামের খাওয়া শেষ হয়। মেহরাম আর আয়ুশ জানালার কাছেই বসে আছে। কথা বলছে মাঝে মাঝে হাসছে তবে কি যেন ভেবে হঠাৎই মেহরামের মন টা খারাপ হয়ে যায়। সে আয়ুশকে বলে ওঠে…

মেহরাম;; আয়ুশ..!

আয়ুশ;; হুমম বলো।

মেহরাম;; তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো।

আয়ুশ;; হুম বলে ফেলো।

মেহরাম;; দেখো আমি জানি না ব্যাপার টাকে তুমি ঠিক কীভাবে নিবে তবে হ্যাঁ প্লিজ সত্যি কথা বলবে আর যদি এটা নিয়ে তোমার মনে কোন করম কোন খুট থাকে তাও প্লিজ বলে দিবে ওকে..!

আয়ুশ;; হ্যাঁ বাবা বুঝেছি এবার বলো (হেসে)

মেহরাম;; আয়ুশ আসলে তুমি তো জানোই যে আমার গর্ভের বাচ্চা টা সোহেলের। হ্যাঁ ঠিক আছে যে তুমি আমায় ভালোবাসো আর বিয়ে করবে এতে সবাই খুশি। কিন্তু যতোই হোক বাচ্চা টা আমার আয়ুশ। আমি চাই না যে ও কখনো কারো জীবনে ঝামেলা হয়ে দাড়াক। তাই বলছি যে যদি তোমার কোন আপত্তি থাকে ওকে নিয়ে তাহ……….

মেহরামের পুরো কথা শেষ হবার আগেই এবার আয়ুশ বলে ওঠে…

আয়ুশ;; মেহরাম পাগল হয়েছো তুমি, মাথা ঠিক আছে তোমার। কি সব উল্টো-পাল্টা বকছো। সোহেল একজন অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। না ই কখনো সোহেল কে নিয়ে আমার কোন সমস্যা ছিলো আর না ই ওর বাচ্চা কে নিয়ে। আর দাড়াও তুমি কেন বারবার বলছো যে এটা তোমার বাচ্চা। মেহরাম এটা আমাদের বাচ্চা বুঝলে তুমি। এটা শুধু তোমার একার না এটা আমার বাচ্চাও, আমাদের বেবি এটা। আমাদের দুজনের। আর জানো আমার কাছে সবথেকে বড়ো আর খুশির ব্যাপার হচ্ছে এটা যে যখন ও বড়ো হবে তখন আমাকে বাবা বলে ডাকবে। আর তখন আমার খুশির কোন সীমা থাকবে না। আর তুমিও শুনে রাখো। আজ & এখন বলেছো বলেছোই। আজই ফার্স্ট আর লাস্ট এই কথা টা আর কখনোই তুমি বলবে না যে এটা তোমার বাচ্চা। বেবির বাবা মা আমরা দুইজন বুঝলে বোকা মেয়ে। (মেহরামের হাত ধরে)

মেহরাম;; হুমম….

আয়ুশ;; এই দেখো আবার কাদছে। আরে মেয়ে তোমাকে নিয়ে আমি কোথায় যে যাবো।

মেহরাম তার মাথা টা আয়ুশের কাধে রেখে দেয় আর আয়ুশ তার এক হাত মেহরামের মাথার পেছনে রেখে দেয়। আর কিছুক্ষণ থেকে যায় আয়ুশ। এদিকে ঝড় & বৃষ্টির বেগ অনেক টাই কমে এসেছে। আয়ুশ মেহরামের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এসে পরতে ধরে….

আয়ুশ;; মেহরু তুমি থাকো ভালোভাবে থেকো বেশি চলাচল করতে হবে না। আর আমি এখন যাই।

মেহরাম;; তা বুঝলাম কিন্তু যাবে কোন দিক দিয়ে?

আয়ুশ;; কেন যেই দিক দিয়ে এসেছি সেইদিন দিয়েই।

মেহরাম;; এতো বেশি বুঝো কেন। আমি বাড়ির মেইন গেট খুলে দিচ্ছি সেখান দিয়ে যাও।

আয়ুশ;; আচ্ছা।

মেহরাম;; এই দাড়াও কণার ব্যাগ টা তো নিয়ে যাও।

আয়ুশ;; ওহহ হ্যাঁ মনেই ছিলো না। ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো নয়তো কাল সকালে আমার মাথা খেতো।

আয়ুশ এসে পরে। মেহরাম খুব সাবধানে হলরুমে এসে পরে। মেইন গেটের চাবি নিয়ে আস্তে করে বের হয়ে পরে। দরজা খুলে দেয়। আয়ুশ বাইরে গিয়ে বাইকে করে চলে যায়। আর মেহরাম গেটে আবার তালা লাগিয়ে হলরুমের বাতি অফ করে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরে। এবার মেহরামের চোখে আপনা আপনিই ঘুম চলে আসে আর সে ঘুমিয়ে পরে। ধূসর আকাশ আস্তে আস্তে পরিষ্কার হয়ে যায়। কালো মেঘ সরে যায়। আকাশে সূর্যের আলো ফুটে ওঠেছে। প্রখর রোদ। কেউ দেখে ভাববেই না যে গতকাল রাতে এতো জোরে তুফান হয়েছে।


কণা ঘুম থেকে ওঠে পরে। আড়মোড়া ভেংে ঘুম থেকে ওঠেই প্রথমে কণার নজর যায় তার পড়ার টেবিলের ওপর থাকা তার ব্যাগ টার দিকে। কণা কপাল কুচকে সেদিকে তাকায়। এগিয়ে গিয়ে ব্যাগ টার দিকে হাত বাড়ায়। ব্যাগ টা কেমন যেন ভেজা ভেজা। ব্যাগ টা হাতে নিতেই ভেতরে কিছু একটা বেজে ওঠে। কণা আবার কপাল কুচকায়। ব্যাগ টা হাতে নিয়ে চেইন খুলে ভেতরে দেখে একটা বক্স। বক্স টা হাতে নিয়ে কণা আরো অবাক হয়। কেননা বক্সের ভেতরে অনেক গুলো ফুচকা। কেন যেন কণার আয়ুশের ওপর না চাইতেও সন্দেহ হলো। কণা হাতে ব্যাগ টা নিয়ে সোজা তার ভাইয়ের রুমে চলে গেলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে আয়ুশ নেই। কণা আবার চলে গেলো নিচে। নিচে গেতেই দেখে আয়ুশ সোফার ওপর বসে ফোনে কথা বলছে। কণা গিয়ে আয়ুশের পাশে দাঁড়িয়ে পরে। আয়ুশ কণা কে দেখে ফোন টা কেটে দেয়।

আয়ুশ;; আয়নাতে দেখেছিস নিজেকে একবারও। কেউ দেখলে অজ্ঞান হয়ে নিচে পরে যাবে। কি হয়েছে ঘুম থেকে উঠেই এসেছিস কেন এখানে?

কণা;; ঝাড়ি কম মার আমায়। আমার ব্যাগে ফুচকা কিভাবে এলো আর ব্যাগ ভিজা কেন??

আয়ুশ;; আমি কি করে জানবো তা? আমায় কেন বলছিস?

কণা;; কারণ আমার গুণোধর ভাই আপনি ছাড়া এই কাজ আর কেউই যে করবে না তা আমি জানি।

আয়ুশ;; ফুচকা পেয়েছিস না এক বক্স??

কণা;; হ্যাঁ, তা তো পেয়েছি।

আয়ুশ;; তাহলে এখন মুখ বন্ধ কর আর যা গিয়ে ফ্রেশ হ।
কণা;; হুম হুম যাচ্ছি।

কণা এক নজর আয়ুশকে দেখে আবার চলে গেলো। এদিকে আয়ুশ কণা কে কথা শুনিয়ে মুচকি হাসছে। কণা আবার কিছুক্ষন পর ঘুড়ে এসে আয়ুশের গালে টুক করে একটা চুমো খায়।

কণা;; থ্যাংস্ ভাই। লাপ্পিউ 🥰।

কণা আবার ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে চলে যায়। আয়ুশ এবার হেসে দেয়। আয়ুশ কাল রাতে দুটো বক্স ফুচকা বানিয়েছিলো। একটা বক্স মেহরামের জন্য নিয়ে গিয়েছিলো আর একটা বক্স কণার জন্য। মেহরামের কাছ থেকে আসার পর কণার জন্য বক্স টা তার ব্যাগে তুলেই আবার তার রুমে রেখে দিয়ে আসে চুপটি করে। আর কণা সকালে উঠেই তা পেয়ে যায়। এভাবেই মাঝখানে দিনগুলো চলে যায়। আস্তে আস্তে বিয়ের দিন চলে এলো আয়ুশ & মেহরামের। আজ ২০ মার্চ।





🌼চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিক; Tamanna Islam
#পর্বঃ ৩৪

আজ ২০ মার্চ। আয়ুশ & মেহরামের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো এই দিনেই। আয়ুশের মা লায়লা খাতুন আর কণা মেহরামদের বাড়িতে। তবে আয়ুশ অফিসে। বাকি সবাই যেতে মানা করলেও কাজের চাপের ফলে তাকে বাধ্য হয়ে যেতেই হয়েছে। মেহরামের বাড়িতে তার মা চাচি কণা আর কণার মা সবাই মিলে গল্প করছিলো। কিন্তু এরই মাঝে মেহরামের মা বলে ওঠেন….

কনিকা;; আচ্ছা মেহরামের আর মাত্র কিছুদিন বাকি আছে দশ মাসে পরার। আর এখনই আমরা সবাই বিয়ের আয়োজন করছি। কিন্তু গর্ভবতী থাকা কালিন তো বিয়ে করা যায় না। এটা নিয়মে নেয়। বাচ্চা হবার পর বিধান অনুযায়ী বিয়ে করতে হয়।

কণা;; তাহলে কি এখন বিয়ে হবে ভাইয়া আর আপুর।

কনিকা;; না আসলে…

লায়লা;; তাহলে ডেলিভারির পর বিয়ে টা হোক।

আতিয়া;; হ্যাঁ তাই হবে, তাহলে বিয়ের ডেট টা পিছিয়ে দেই।

লায়লা;; হ্যাঁ মেহরাম মা তোর কোন সমস্যা আছে।

মেহরাম;; না আমি আর কি বলবো। তোমরা সবাই যা ভালো বুঝো তাই।

আতিয়া;; তাহলে তো হলোই। আয়ুশকে বলে দিতে হবে।

মেহরাম;; ওকে শুধু বিয়ে পিছাচ্ছে এটা বলে দিলেই হবে।

সবাই আলোচনা করে ডেলিভারির পরই বিয়ের আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিলো। কথা বলার মাঝেই মেহরামের হুট করে ফোন বেজে ওঠে। তাকিয়ে দেখে আয়ুশেরই ফোন। মেহরাম উঠে গিয়ে কিছুটা দূরে চলে গেলো। তারপর কথা বলতে থাকে।

আয়ুশ;; হ্যালো

মেহরাম;; হুমমম

আয়ুশ;; কি করো আর বাকি সবাই কোথায়?

মেহরাম;; হ্যাঁ এইতো আছি আর বাকি সবাই কথা বলছে।

আয়ুশ;; কি নিয়ে?

মেহরাম;; আসলে আয়ুশ আমি না বিয়ে টা করবো না।

আয়ুশ;; মানে কি?

মেহরাম;; মানে এই যে আমি বিয়ে করবো না।

আয়ুশ;; এখন এইসব কি বলছো মেহরাম।

মেহরামের এমন খাপছাড়া কথা শুনে তো আয়ুশ অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়। কিন্তু এদিকে আয়ুশকে এমন কথা বলে মেহরাম নিজেই মুখ চেপে ধরে হাসছে। আসলে মেহরাম আয়ুশের সাথে ফাজলামি ছাড়া আর কিছুই করছে না। তবে আয়ুশ তো আর তা টের পায় নি। সে ভেবেছে মেহরাম সিরিয়াস। আয়ুশ ঘাবড়ে গিয়ে মেহরামের সাথে বকবক করেই যাচ্ছে আর মেহরাম হাসছে।

আয়ুশ;; দেখো মেহরু এমন করো না তো আমার ভালো লাগে না। এগুলো কি ধরণের কথা। আর এখন এইসব বলার মানেই বা কি। আর কি হয়েছে এনি প্রব্লেম। খুলেও তো বলতে পারো আমায় তাই না..?!

অবশেষে মেহরাম আর না পেরে জোরেই হেসে দেয়।

মেহরাম;; হাহাহাহাহাহা,,, হিহি হাহাহাহাহ আল্লাহ হাহাহাহাহাহা 😆।

আয়ুশ;; কি হলো আবার এমন পাগলের মতো হাসছো কেন?

মেহরাম;; আরে আমি মজা করতাছি, সিরিয়াস ভাবে নিও না।

আয়ুশ;; ধুউউউর ছাই। এমন করে কেউ। যেভাবে তুমি বললে আমি তো ভেবেছি যে কি না কি। তো কি হয়েছে এভাবে হঠাৎ বললে যে!

মেহরাম;; আমি আসলে জানতাম না, মা বললো যে প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বিয়ে করা জায়েজ না। এটা নিয়মে নেই।

আয়ুশ;; ওহহ আচ্ছা।

মেহরাম;; তো বিয়ের ডেট পেছানো হয়েছে।

আয়ুশ;; ওহহ আচ্ছা। আচ্ছা যা ভালো হয় তাই। এখন নিজের দিকে মনোযোগ দাও। বেশি খেয়াল রাখো নিজের।

মেহরাম;; আমি কিছুই করি না, বাড়ির সবাই অনেক করে আমার জন্য।

আয়ুশ;; তা তো অবশ্যই।

মেহরাম;; এই জানো কণা আজ কি বলছিলো!

আয়ুশ;; কি বলে?

মেহরাম;; বলছিলো যে ” আমার ভাইটা কবে যে এত্তো বেশি ভালো হলো, কাল আমার জন্য আমার ব্যাগে এক বক্স ফুচকা রেখে দিয়েছিলো, আমাকে বলেও নি। সারপ্রাইজ দিয়েছে জীবনে ফার্স্ট যদিও কিন্তু দিয়েছে তো “।

আয়ুশ;; হাহাহা, ওর কথা বাদ দাও। তাড় ছিড়া বোন আমার। তুমি কিছু বলো নি তো?

মেহরাম;; না আমি আর কি বলবো শুধু শুনছিলাম।

আয়ুশ;; 😅। আচ্ছা আমি এখন রাখি ওকে ফাইল আছে অনেক গুলো চেক করতে হবে।

মেহরাম;; আচ্ছা।

মেহরাম আয়ুশের সাথে কথা বলে ফোন রেখে দেয়। হলরুমে এসে দেখে এখনো সবাই আগের মতোই কথা বলছে। মেহরাম এসে কণার পাশে বসে পরে।

কণা;; আমার বিয়ে খাওয়া টা আবার পিছিয়ে গেলো 😒।

কণার কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। সেইদিন এক বেলা কণা আর তার মা সেখানে থেকে এসে পরে। এভাবেই সেইদিন চলে যায়। আস্তে আস্তে রাত হয়। মেহরাম চেয়ারে হেলান নিয়ে বসে করিডরের দরজা খুলে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমটা অন্ধকার। এটা তেমন কিছু না এখন। এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস। নিজেকে অনুভব করা যায় এমন পরিস্থিতিতে। মেহরামের হাতে একটা ছবি আছে। সেটা বুকের ওপরে রেখে দিয়েছে। অবশ্যই ছবি টা তনুর। আগে তনু কখনোই মেহরামকে এমন করে একা একা বসে থাকতে দিতো না। সে ভাবতো যে মেহরামের মন খারাপ হলেই সে এভাবে বসে থাকে আসলে তা না। এমন পরিবেশ খুব বেশি পছন্দের। মেহরাম ছবি টা তুলে তনুর দিকে তাকায়। তনুর বাম গালের টোল টা একদম ঝকঝক করছে। হাসলে তনুর গালে টোল পরতো। কিছু কিছু জিনিসে মেহরাম আর তনুর মাঝে এক অদ্ভুত মিল পাওয়া যায়। তনুর বাম গালে টোল পরতো আর আর মেহরামের ডান গালে। ছোট থাকতে কখনো দুইজন ভিন্ন ভিন্ন রকমের ড্রেস পরতো না। তনুর কথা ছিলো সবকিছুই এক থাকতে হবে তাদের। যার দরুন দুইজন একই ড্রেস পরলে মনে হতো জমজ। বড়ো হলে তাদের মাঝে কিছুটা ভিন্নতা এসেছে। মেহরাম ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হেসে ওঠে। পরিস্থিতি টা এমন যে তার ঠোঁটে হাসি ঝুলছে আর চোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। কার কার তনুর কথা মনে পরে তা তো জানে না কিন্তু মেহরামের খুব করে মনে পরে। আজ পুরনো কথা গুলো যেন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠছে। হ্যাঁ আগেও মনে পরতো কিন্তু আজ যেন অনেকটা বেশিই। স্কুলে যখন একসাথে পরতো তখন মেহরামের পাশে কেউ যদি ভুল করেও বসে পরতো তাহলে ওর কাম সারছে। একদিন স্কুলে এক নতুন মেয়ে এসেছিলো, আর হ্যাঁ না জেনেই মেহরামের পাশে বসেছিলো। তনু যেইভাবে ওর চুল গুলো টেনেছিলো একদম দেখার মতো। ব্যাপার টা মনে হতেই মেহরাম খিলখিলিয়ে হেসে দেয়। বইয়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কথা বলতো যেন স্যার না বুঝে যে তারা গল্প করছে। বেশি দুষ্টমি করলে কান ধরে ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে বলতো স্যার। কান ধরে তো দাড়াতোই না উল্টো ঝালমুড়ি খেতে চলে যেতো। খুব করে মনে পরছে আগের কথা গুলো। দিন গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আর দিনগুলোর সাথে মেহরামের তনুও। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে যে বোনটাকে দুই হাত দিয়ে অনেক শক্ত করে জড়িয়ে ধরুক কিন্তু চেয়েও পায় না। মেহরাম তার পরনের ওরনা দিকে তনুর ছবিটা মুছে আবার আগের জায়গায় রেখে দেয়। রুমের দরজায় কড়া নাড়ে। মেহরাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পনে একটা বাজে। এই সময়ে কে আবার! মেহরাম গিয়ে দরজা খুলে দেয় দেখে তার মা।

মেহরাম;; আম্মু ঘুমাও নি?

কনিকা;; না আসলে ঘুম ধরছিলো না তুইও তো ঘুমাস না তাই ভাবলাম যে একটু আসি।

মেহরাম;; অনেক ভালো করেছো ভেতরে আসো।

কনিকা;; হুমম।

মেহরাম;; বাবা ঘুমিয়েছে?

কনিকা;; অনেক আগেই।

মেহরাম;; হুমম।

কনিকা ভেতরে বসে মেহরামের সাথে কথা বলতে থাকে।

কনিকা;; জানিস ভাবতেই খুশি লাগছে আমারও নাতিন হবে। ইইইইইইই কি যে খুশি লাগে। (হেসে)

মেহরাম;; আমি তো আমার নানু আপু কে কখনো দেখিই নি। নয়তো তাকে বলতাম যে তোমার মেয়ে এখনো বাচ্চামো করে। আর এতো তাড়াতাড়ি কেন বিয়ে দিয়েছো।

কনিকা;; হাহাহা, আরে তখন যুগ টাই ছিলো এমন যে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিতো।

মেহরাম;; দেখো আমার আদর যেন আবার না কমে।

কনিকা;; এহহ তুই কে আমি চিনিই না।

মেহরাম;; এইই খবরদার আমার আদরে কাউকে ভাগ বসাতে দিবো না আমি। আল্লাহ বাচাইছে যে আমার বাপের আর কোন ছেলে মেয়ে নাই। নয়তো বিশ্বযুদ্ধ লেগেই থাকতো।

কনিকা;; তোর বাবার খুব শখ ছিলো যে একটা ছেলে হবে।

মেহরাম;; কিন্তু হয়েছি আমি।

কনিকা;; হ্যাঁ।

মেহরাম;; আচ্ছা মা একটা সত্যি কথা বলো তো।

কনিকা;; কি?

মেহরাম;; আমি হয়েছি বলে কি তোমরা খুশি ছিলে না?

কনিকা;; না।

মেহরাম;; কি!

কনিকা;; খুশি ছিলাম কিভাবে কারণ ওইদিন তো আমার খুশি হয়েছিলো।

মেহরাম;; মানে?

কনিকা;; আমার আমার সকল খুশির মূল তুই। আমার মুখে হাসি থাকার কারণ তুই। আমার খুশি হ্যাপিনেস সব তুই। আর তুই তো সেইদিন হয়েছিলি তাই না। তাই খুশি আগে ছিলাম না কিন্তু পরে হয়েছি।

মেহরাম;; এটা কোন কথা 😐।

কনিকা;; আচ্ছা যাই হোক আয়ুশের সাথে কথা হয়েছে?

মেহরাম;; দিনে হয়েছিলো রাতে হয় নি। হয়তো কাজের চাপ বেশি তাই। কিন্তু ওকে সব ক্লিয়ারলি বলে দিয়েছি।

কনিকা;; ওহহ আচ্ছা।

মেহরাম;; আচ্ছা আমার মতো জেগো না তো। আমার তো ঘুম আসে না। আর তোমার ঘুম আসবে গিয়ে শুয়ে পরো।

কনিকা;; আচ্ছা আমি যাই তাহলে আর তুই শুয়ে থাকিস। থাকতে থাকতেই ঘুম এসে পরবে।

মেহরাম;; আচ্ছা।

কনিকা মেহরামের রুম থেকে চলে যায়। মেহরাম শুয়ে থাকে। একসময় ঘুমিয়েও পরে। এভাবেই আস্তে আস্তে আকাশে ভোরের আলো ফুটে ওঠে। ফজরের আজানের শব্দে মেহরামের ঘুম ভেংে যায়। আস্তে করে বিছানা থেকে নেমে। ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে আসে। তারপর বসে থেকেই নামাজ আদায় করে নেয়। ১০-১৫ মিনিট পর নামাজ শেষ হয়ে যায় মেহরামের। উঠে জায়নামাজ টা গুছিয়ে নেয়। দরজা খুলে বাইরে এসে পরে। কাউকে দেখা যাচ্ছে না, হয়তো এখনো কেউ ঘুম থেকে ওঠেনি। মেহরাম তো আজান দেওয়ার সাথে সাথেই একদম উঠে পরেছে। হয়তো খানিক পরে সবাই উঠে পরবে। মেহরাম আস্তে হেটে তার দাদির রুমে যায়। তার দাদি সালেহা বেগম। বয়স্ক কিন্তু মোটা সোটা। মেহরামের সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে তার দাদির গাল গুলো। তার দাদির আগের ছবি গুলো দেখলেই বুঝা যায় যে তার দাদি কি পরিমাণ সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন। আর এর জন্যই হয়তো মেহরামের দাদা তার দাদির পেছনে লাট্টু ছিলো। মেহরাম তার দাদির রুমে গিয়ে দরজা টা হাল্কা খুলে দেয়। তার দাদির রুমের দরজা কখনোই লাগানো থাকে না। চাপানো থাকে। মেহরাম কিছুটা উকি দিয়ে দেখে তার দাদি নামাজ পড়ছে। মেহরাম এক নজর তাকে দেখেই এসে পরে। হঠাৎ মেহরামের খেয়াল হয় যে এখন তো ভোরের সময়। একদম সাজ সকাল। এখন নিশ্চই বাইরের খোলা ঠান্ডা বাতাস আছে। মেহরামের যেন আর তর সইলো না। সে নিচে নেমে পরে। মাথায় এখনো সাদা ওরনা দিয়ে ঘোমটার মতো করে পরে আছে। কি যে সুন্দর লাগছে দেখতে তাকে। মেহরাম বাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। বাড়ির বাইরে আসতেই নাকে বেলি ফুলের তরতাজা গন্ধ ভেবে আসে। মেহরাম তার পাশে তাকিয়ে দেখে গাছ ভর্তি বেলি ফুল ফুটে রয়েছে। কিছু ফুল গাছের নিচেও পরে রয়েছে। মেহরাম গিয়ে নিচ থেকে কিছু ফুল হাতে তুলে নেয়। তারপর তাদের গন্ধ নিতে থাকে। মন টা যেন জুরিয়ে গেলো। মন মাতানো গন্ধ এক প্রকার। ভোর সকাল, রাস্তায় হাতে গোনা দু একজন মানুষ রয়েছে। সাই সাই করে বাতাস বইছে। মেহরাম মুচকি হেসে বাইরের রাস্তায় চলে গেলো। উদ্দেশ্য খানিক রাস্তা হাটবে। হাটতে হাটতে বেশ দূরেই চলে গেলো। এক সময় যেতে যেতে মেহরামের হুট করে খেয়াল হলো বাড়ির বাইরে যেহেতু এসেছেই তাহলে তনুর পাশেও চলে যাক। যেই ভাবা সেই কাজ মেহরাম হাটতে হাটতে তনুর কবরের পাশে এসে পরে। যেই দাড়োয়ান এই কবরস্থান টা পাহাড়া দেন তাকে দেখা যাচ্ছে না। উনি মেহরাম কে বেশ ভালো করেই চিনেন। এই কবরস্থানের কবর গুলো টাইলস্ দিয়ে সুন্দর করে চারিদিকে মুড়ে দেওয়া আছে। কিন্তু যেই দরজা টা দিয়ে করবস্থানের ভেতরে প্রবেশ করা হয় তা চিকন বাশের বেড়া দিয়ে লাগানো। মেহরাম এখন কবরস্থানের বাইরের দরজা তে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ তার তনুর কবরের দিকে স্থীর। মন চাইছে ছুটে যেতে কিন্তু এখন দাড়োয়ান নেই। আর উনার অনুমতি ছাড়া কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না। পাশেই মসজিদ রয়েছে। মসজিদে নামাজ শেষ। মেহরাম ঘুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার পেছন দিয়ে কয়েকজন হুজুর যাচ্ছে। হঠাৎ একজন মেহরামের নাম ধরে ডাক দেয়।

আব্দুল সাহেব;; কে ওখানে মেহরাম মা না?

মেহরাম পেছন ঘুড়ে তাকায়।

মেহরাম;; আরে আব্দুল চাচা আপনি। কেমন আছেন?

আব্দুল সাহেব;; হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি মা। তুমি কেমন আছো?

মেহরাম;; জ্বি চাচা আলহামদুলিল্লাহ।

আব্দুল সাহেব একজন ইমাম। মেহরাম আর তার পরিবারের সাথে উনার খুন ভালো সম্পর্ক। আব্দুল সাহেব এক নজর তনুর কবরের দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠেন..

আব্দুল সাহেব;; বোনের কথা মনে পড়ছিলো বুঝি??

মেহরাম;; হ্যাঁ। কবে থেকে যে দেখি না। আর দেখতেও পারবো না জানি। কিন্তু না এসে তো আর থাকা যায় না।

আব্দুল সাহেব;; নামাজ পরে দোয়া করো।

মেহরাম;; জ্বি।

আব্দুল সাহেব;; বাসায় সবাই কেমন আছে?

মেহরাম;; হ্যাঁ চাচা সবাই ভালোয় আছে।

আব্দুল সাহেব;; শোন মা নিজের প্রতি খেয়াল রাখবে। দেখে শুনে চলাচল করবে। আর এখন তো সকালই হয়ে গেলো মানুষের আনাগোন বেড়ে যাবে। বাড়িতে চলে যাও।

মেহরাম;; জ্বি চাচা ভালো থাকবেন, আজ আসি। আসসালামু আলাইকুম।

আব্দুল সাহেব;; ওয়ালাইকুম সালাম মা।

মেহরাম একবার পেছনে ফিরে তনুর দিকে তাকিয়ে এসে পরে। আস্তে আস্তে হেটে বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে গিয়েই দেখে সবাই উঠে পরেছে। আর মেহরামকে দেখেই অবাক। সবাই ভেবেছিলো যে মেহরাম তার রুমে।

আতিয়া;; কি রে কোথায় গিয়েছিলি তুই?

মেহরাম;; না মানে বাইরে এইতো এখানেই একটু হাটতে গিয়েছিলাম আর কি।

আতিয়া;; একা কেন গেলি। কাউকে নিজে যেতি আমাকেই ডাক দিতি। একা বাইরে বের হলি তাও এতো সকালে।

মেহরাম;; আরে চাচি কিছুই হবে না। আর আমি ভেবেছি তোমরা সবাই ঘুম তাই।

আতিয়া;; আচ্ছা খেতে আয়।

মেহরাম;; আচ্ছা আমি রান্না তে হেল্প করছি আসো। বসেই আর কতো থাকবো।

সবাই উঠে পরেছে। মেহরাম তার চাচিকে টুকিটাকি সাহায্য করছে কাজে। এভাবে সকালের সময় টুকু কেটে যায়। দুপুরের পরে মেহরামকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়া হয় চেকাপের জন্য। ডাক্তার চেকাপ করে দেখে সবকিছুই ঠিক। প্রেগন্যান্সিতে কোন কমপ্লিকেশনস্ নেই। চেকাপ করিয়ে সেইদিন বাসায় এসে পরে। মাঝখানে আরো কয়েকদিন কেটে যায়। এখন মেহরামের দশ মাস হয়ে একদিন চলছে। ডাক্তার ডেলিভারির ডেটও বলে দিয়েছে। সবকিছুই ভালোই যাচ্ছে।





💖চলবে~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে