তৈমাত্রিক পর্ব-২৮+২৯

0
1003

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৮

🧚‍♀️✨

দিনটা সেইদিনের মতো আজও মেঘলা। বাইরে বৃষ্টির সাজ করেছে। এখানে সবাই রয়েছে, তাদেরই মাঝখানে স্টীলের বিছানাতে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে তনুকে। তার একপাশে আয়ুশ বসে আছে আরেক পাশে মেহরাম। তনুর লাশের মুখ টা খোলা রাখা হয়েছে। আয়ুশ টাসকি খেয়ে বসে আছে। মেহরাম স্থীর নয়নে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝেমধ্যে দমকা বাতাস এসে ছোয়া দিয়ে যাচ্ছে। আসরের আজানের প্রতিধ্বনি কানে ভেসে আসছে। মন চাইছে সময়ের চাকা টা ধরে টান দিয়ে সময় টাকে এখানেই থামিয়ে দেই। সমটা থাকুক স্থীর, এটা যেন এখন বয়ে না, থাক। কেননা এখন যতো সময় যাচ্ছে বুকের ধুকপুকানি যেন ততোই বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে সময় গড়িয়ে গেলেই তো তনুকে ওরা নিয়ে চলে যাবে অজানায়। সময়টা একটু থামলে তনুও আরেকটু থেকে যাবে। থাক না আরেকটু…………….!! কিন্তু প্রকৃতি যে তা মানতে নারাজ। চোখের সামনে যেন পুরনো স্মৃতি গুলো ছুটোছুটি করছে। ওই মেহরাম & তনুর একসাথে বেড়ে ওঠা, দৌড়াদৌড়ি করে সারা বাড়ি কে মাতিয়ে রাখা। সবই যেন মনের দরজায় আজ উঁকি দিয়ে যাচ্ছে, একদম শেষ উঁকি। মেহরাম অনেক শক্ত থেকেছে, এতো কিছুর পরও সবসময় হাসিখুশি থাকার জন্য চেষ্টা করেই গেছে। কিন্তু এখন আর না, এখন আর তার পক্ষে সম্ভব না। ভেংে গেছে, একদম পুরো ভেংে চুরমার হয়ে গিয়েছে। যে ভাংা কখনো আর জোড়া লাগানোর নয়। কোন কাচ বা আয়না ভেংে গেলে তা জোড়া তো পুনরায় লাগানো যায় কিন্তু তার মাঝে ফাটলের দাগ টা রয়েই যায়। মেহরাম ভেংে গেছে হ্যাঁ অবশ্য জোড়া লেগেছিলো কিন্তু এখন এত্তো পরিমাণে টুকরো টুকরো হয়েছে যে টুকরোর কণা গুলোই খোঁজা দায়। বাড়ির চারিদিক কান্নার আহাজারি আর আত্নচিৎকারে যেন ফেটে পরছে।

দেখতে দেখতে একসময় বিকেলের গোধুলি লগ্ন হয়ে গেলো। আকাশে সূর্য যেন এই ডুব দেয়। বাড়িতে বেশ কিছু হুজুর এসেছেন। তারাই তনুর জানাযা আদায় করবেন। তবে অবাকের ব্যাপার হচ্ছে এটা যে বাড়ির সকলেই কান্নায় ফেটে পরলেও মেহরামের চোখের পানি নেই। সে মুচকি হাসছে। তার মতে তনু এখনও আছে। একদম তনুর মাথার কাছ বসে তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে তনু ঘুমাচ্ছে আর খানিক বাদেই সে উঠে পরবে। আর মেহরাম পরম যত্নে তনুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে আনমনেই কথা বলে উঠছে। এখন কেউ মেহরামকে দেখলে সোজা পাগল ছাড়া আর কিছুই ভাববে না। মেহরামকে কয়েকবার সেখান থেকে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নিয়ে আসতে গেলেই প্রচুর রেগে যায়। এভাবে তার শরীর টা বিগড়াচ্ছে কিন্তু সেদিকে খেয়ালই নেই। এভাবেই থাকতে থাকতে এক সময় মাগরিবের আজান পরে যায়। জানাযার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু কারো সাহস অব্দি নেই যে মেহরামকে তনুর কাছ থেকে উঠিয়ে আনবে। মেহরামের চাচি এবার উঠে গিয়ে মেহরামের কাছে যায়।

আতিয়া;; মেহরাম

মেহরাম;; ___________

আতিয়া;; মেহরাম

মেহরাম;; ___________

আতিয়া;; মেহরাম

মেহরাম;; কি হয়েছে এতো ডাকছো কেন?

আতিয়া;; উঠে আয় মা।

মেহরাম;; না না আমি উঠবো না, চাচি তুমি বুঝছো না আমি চলে গেলে তনু থাকতে পারবে না।

আতিয়া;; পাগলামি করিস না মা উঠে আয়।

মেহরাম;; চাচি আমি তনুকে ছেড়ে যাবো না।

আতিয়া;; তনুই তোকে ছেড়ে চলে গেছে। (চিল্লিয়ে কেদে)

মেহরাম;; চাচি কেউ কাউকে ছেড়ে যায় নি। তনু আছে। আমি যাবো না।

আতিয়া;; মেহ….

আতিয়া মেহরামকে নিয়ে অনেক জোরাজোরি করে কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হয় না। উপায় না পেয়ে আতিয়া সেখান থেকে চলে যায়। সময় যতো যাচ্ছে জানাযার সময়ও চলে যাচ্ছে। কেউ পারছে না মেহরামকে নিয়ে আসতে। অবশেষে আতিয়া আয়ুশকে বলে মেহরামকে তনুর পাশ থেকে উঠিয়ে আনতে। আয়ুশ ধীর পায়ে মেহরামের কাছে যায়।

আয়ুশ;; মেহরাম..!

মেহরাম;; আয়ুশ দেখো না সবাই আমাকে সরে আসতে বলছে। আর কখন থেকে দেখছি তনুকে এই সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। খোল এইসব, ভালো লাগছে না।

আয়ুশ;; মেহরাম ছেলেমানুষী করো না। প্লিজ উঠো

মেহরাম;; না আমি উঠলেই তো তনুকে ওরা নিয়ে যাবে।

আয়ুশ;; তনুকে কেউ কোথাও নিবে না, তনু তোমার কাছে ছিলো আছে আর থাকবেই। তোমার বোন তোমাকে ছেড়ে দূরে কোথাও যাবে না।

মেহরাম;; তাহলে তনু এভাবে শুয়ে আছে কেন। ওকে বলো না উঠে যেতে। কখন থেকে আমার সাথে কথা বলছে না। আমার আর ভালো লাগে না। আচ্ছা ও কি আমার সাথে রাগ করেছে? ওও আয়ুশ বলো না। আমি আর পারছি না। একদম শেষ হয়ে যাবো আমি। প্লিজ ওকে বলো জলদি উঠে গেতে।

আয়ুশ বুঝলো যে মেহরামের বর্তমানে কোন হিতাহিত জ্ঞানই নেই। তাই এইসব উলটা পাল্টা বকছে। এদিকে হুজুর রা এক প্রকার তাড়া দিচ্ছে। তাদের মতে মৃত কাউকে বেশিক্ষণ বাড়ির আঙিনায় রাখতে নেই। কারণ মৃত্যুর পর তার দুনিয়া-জায়গা আলাদা হয়ে যায়। তাই যতো দ্রুত সম্ভব তাকে তার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেওয়া উত্তম। কেউই মেহরামকে তনুর কাছ থেকে আনতে পারে না। সে যাবেই না এক কথায়। পরে আয়ুশ গিয়ে অনেক কথা বলে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মেহরামকে নিয়ে আসে। তবে এবার মেহরামকে তার চাচি আর মায়ের কাছে রেখে এসে আয়ুশ এসে তনুর লাশ কাধে নেয়। একপাশে মেহরামের বাবা আরেকপাশে চাচা লাশ টাকে কাধে নেয়। আরেকজন হুজুর মানুষ। মেহরাম ছাড়া পাওয়ার জন্য অনেক ছুটছে কিন্তু তাকে শক্ত করে ধরে রাখা হয়েছে। মনে হচ্ছে কোন পাগল কে বেধে রাখা হয়েছে। অনেক পরিমাণে চিল্লাচ্ছে। আল্লাহ’র নাম নিয়ে তনু কে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসা হয়। এবার আতিয়া ধপ করে নিচে বসে পরে। তার কোল খালি হয়ে গেছে। তার মেয়ে আর নেই। যদিও আরেক মেয়ে আছে কিন্তু তবুও আরেকটা না থাকার শূন্যতা রয়েই যাবে। তনুকে নিয়ে বাইরে এসে পরলে মেহরাম ঝটকানা মেরে সবাইকে সরিয়ে দেয়। এতে সে পেটে হাল্কা ব্যাথা পায়। চোখ মুখ কুচকে পেটের নিচে হাত দিয়ে দেয়। কিন্তু আবার দ্রুত কদম ফেলে বাইরে এসে পরে। তনু তনু বলে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে। সবাই জানে যে এখানে কেউ একজন মারা গিয়েছে। মেহরাম যখন বাইরে এসে গলা ফাটিয়া তনু বল চিল্লিয়ে ওঠে তখন সবাই তাকিয়ে থাকে তার দিকে। সবারই খারাপ লাগে মেহরামকে দেখে। পা ফেলে গেটের একদম বাইরে চলে আসতে নিবে তখনই আরো কিছু লোক মেহরামকে নিয়ে ভেতরে আসে। মেহরাম এখনো তনু তনু বলে চিল্লিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু বাড়ির ভেতরে আনতেই মেহরাম মাথা ঘুড়িয়ে পরে যায়। মেহরামের মা আর চাচি গিয়ে ধরে। এই অবস্থায় আবার মেহরামের কিছু না হিয়ে যায়। এই ভেবে তার মা আর চাচির আহাজারি আবার শুরু।


ওদিকে আয়ুশ কখনো কল্পনাও করে নি যে সে একদিন তনুর লাশকে কাধে নিবে। তনুকে সে মেহরামের জায়গায় বসাতে পারে নি ঠিক আছে কিন্তু তনু তনুই ছিলো। আয়ুশ তাকে সবসময় নিজের ফ্রেন্ড ভেবেই এসেছে। যদি খুব বেশি মিশুক বা ভালো মনের একজনকে বলা হয় তবে তা হচ্ছে তনু। তনুর সব কিছু চোখে ভাসছে। সেগুলো ভেবে ভেবেই চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনাজল বেয়ে যাচ্ছে। সেগুলো মুছার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আয়ুশের। হাটতে হাটতে কবরস্থানে এসে পরে। কাধ থেকে নামিয়ে নিচে রাখা হয় লাশ। তারপর কবর খোড়া হয়। পালা আসে তনুকে কবরে নামানোর। আয়ুশ এক চোখে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মন টা চাইছে যে তনুর হাত দুটো ধরে আটকে দেয়। কি হয় না গেলে। আয়ুশের বেশ মনে পরছে তনুর তার দিকে মাঝে মাঝে অপলক ভাবে তাকিয়ে থাকা। হুটহাট আয়ুশের নাম ধরে ডেকে ওঠা। খুব বেশি মনে পরছে। অবাধ্য মনকে বাধ্য করে নিলো। তনুর লাশ ধরে কবরে নামানো হয়। সর্বপ্রথম কবরে মাটি দেওয়া হয় তনুর বাবার হাতে। এভাবেই মাটি দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয় কবর। মোনাজাত ধরে সবাই দোয়া করে এসে পরে। কিন্তু আয়ুশ যায় না। মাথা থেকে টুপি টা খোলে হাটু গেড়ে মাটির ওপর বসে পরে। দম আটকে আসছে, শ্বাস গুলো কেমন জানি থেমে থেমে বের হচ্ছে। আয়ুশ আর পারে না নিজেকে সামলাতে। কাপা কাপা হাতে তনুর কবরের ওপরের মাটি গুলো ছুইয়ে দেয়। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর গাল নাক বেয়ে পানির ফোটা গুলো পরছে। এভাবে ঠিক কতোক্ষণ সে ছিলো তার হিসেব নেই।

রাত হয়ে গেছে। মেহরামের জ্ঞানও ফিরে এসেছে। জ্ঞান ফিরেছে ধরে কোন কথা নেই মুখে। হঠাৎ চোখ গুলো ঘুড়িয়ে দেখে সবাই ফুপিয়ে কাদছে। আয়ুশও বসে আছে। মেহরামের চোখ গুলো মুছে উঠে দাঁড়িয়ে পরে। কাউকে কিছু না বলেই সোজা উঠে হেটে যেতে লাগে। মেহরামের বাইরে যাবার কিছুক্ষণ পর সবাই মনে করে যে মেহরাম নেই। আয়ুশের মনে এবার ভয় ঢুকে যায় যে ইদানীং যখন তখন পেটে ব্যাথা শুরু হয়ে যায় তার। আবার সে এতো রাতে কোথায় গেলো। মেহরামের চাচি গিয়ে সব জায়গায় মেহরামকে খুঁজে কিন্তু সে নেই। তনুকে তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মেহরাম এই রাতের অন্ধকারে সোজা সেখানে চলে যায়। এদিকে আয়ুশ, মেহরামের বাবা চাচা চাচি দবাই খুজছে। অবশেষে বড়ো টর্চ লাইট নিয়ে সেই বাইরে কবরস্থানে যাওয়া হয়। আর গিয়েই যা দেখে তা দেখার জন্য কেউই প্রস্তুত ছিলো না।
মেহরাম তনুর কবরের পাশে গিয়ে শুধু মাটির গুলো সরাচ্ছে। আর পাগলের মতো তনু তনু করে ডাকছে। সবাই জলদি গিয়ে মেহরামকে ধরে ফেলে। মেহরাম তো সেখান থেকে উঠবেই না। সে এই মাটির নিচ থেকে তনু কে বের করবে।

আয়ুশ;; মেহরাম কি করছো টা কি তুমি?! উঠো

মেহরাম;; না তনুর এখানে দম আটকে আসছে তো। ওকে বের করতে হবে। আমার মতো তনুও অন্ধকার দেখে ভয় পায় তো তুমি জানো না আয়ুশ। তুমি কিচ্ছু জানো না। আমাকে ছাড়ো আমি তনু কে নিয়েই বাড়ি যাবো।

এই বলেই মেহরাম আবার কবরের মাটি গুলো সরাতে লাগে। আয়ুশ এবার মেহরামের হাত ধরে এক ঝটকায় তাকে তুলে আনে।

আয়ুশ;; মেহরাম তুমি বুঝো না, এতো পাগলামি কেন করছো। তনু নেই। আল্লাহ’র তাকে পছন্দ হিয়েছে আর নিয়ে গেছে। বাস্তবতা বুঝো।

আয়ুশের এমন ধমকে মেহরামের অন্তর আত্মা যেন কেপে ওঠে। এক লম্বা নিঃশ্বাস নিয়ে হু হু করে কেদে দেয় মেহরাম। খুব কষ্টে তাকে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। বলার কিছুই নেই। ভাষাহীন এই পরিস্থিতি, কার অবস্থাবকেমিন বা মেহরাম এখন ঠিক কিসের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা বলা বাহুল্য। বাড়ি গেতেই মেহরাম সোজা তার রুমে চলে যায়। যেই রুমে তনু আর সে একসাথে থাকতো। সোজা রুমে গিয়ে কাবার্ড খুলে দাঁড়ায়। পাগলের মতো খামছে খামছে কাবার্ড থেকে তনুর সব কাপড় জিনিসপত্র সব বের করে। সেগুলো নিয়ে নুচে বসে পরে। সবগুলো হাতে খামছে বুকের ধরে হাউমাউ করে কেদে দেয়। আয়ুশ এগুলো সব দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। সে ভেবেছিলো রুমের ভেতরে যাবে কিন্তু মেহরামকে দেখেই সে থেমে যায়। কি বলবে ভাষা নেই, কি বলে শান্তনা দিবে জানা নেই তার। যখন মানুষ ভেতর থেকে ভেংে যায় তখন তাকে একা থাকতে দেওয়াই ভালো। আয়ুশ পারবে না মেহরামের সামনে গিয়ে দাড়াতে এখন। একে তো তনুর এই আচমকা মৃত্যু তার ওপর মেহরামের এই দশা। এগুলো যেন আয়ুশের নিজের কাছে ঠিক মৃত্যুর সমতুল্য তাই সে সেখান থেকে এসে পরে। নিচে চলে যায়। নিচে সবাই মনমরা হয়ে বসে আছে। সবার মনে এখন কি ভলছে তা বলে বোঝানো অসম্ভব। এভাবেই রাত যেতে থাকে। মেহরাম সেখানে বসে কাদতে কাদতেই কখন যে চোখ লেগে এসেছে তা সে জানে না। চোখ খোলে ফজরের আজানের শব্দে। আলতো করে চোখ মেলে তাকায়। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পুরো ঘরে তনুর জিনিসগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এগুলো মেহরামই করেছে। মেহরামের কেন যেন মনে হলো যে তনু তার পাশেই বসে আছে আর “মেহরু” “মেহরু” বলে ডেকে যাচ্ছে। মেহরাম এখনো কাবার্ডের সাথে হেলান দিয়ে নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে আছে। কাল সারাদিন রাত কান্না করে চোখ গুলো আজ বড়োই ক্লান্ত। চোখ মুখ সব ফুলে একাকার হয়ে গেছে। তাই চোখে মেলে তাকাতেও ব্যাথা পাচ্ছে। কিন্তু কানে ওই তনুর হাসি শব্দ মেহরামকে ডাকার শব্দ সব কানে ভেসে আসছে। মেহরাম আবার ফুপিয়ে কেদে ওঠে। ফোলা ফোলা চোখ গুলো দিয়ে পানি পরে যায়। বাইরে থেকে জানালার পর্দা ভেদ করে খানিক রোদ রুমের ভেতরে এসেছে। দিন টা অনেক চড়া। রোদ প্রখর। হঠাৎ মেহরামের হাত টা তার পেটের ওপর যায়। মাথা নামিয়ে এক নজর পেটের দিকে তাকিয়ে আবার ঠিক আগের মতোই বসে থাকে। তখনই দরজাতে কড়া নাড়ার শব্দ আসে। মেজরাম সেদিকে ক্লান্ত নয়নে তাকিয়ে থাকে।





❤💔চলবে~~

#তৈমাত্রিক
#লেখিকা; Tamanna Islam
#পর্বঃ ২৯

🖤✨



দরজাতে কারো কড়া নাড়ার শব্দ কানে এলে মেহরাম সেদিকে ক্লান্ত নয়নে তাকায়। এখান থেকে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতে বড্ড অনিচ্ছা করছে তার। তবুও নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে বিছানা-দেওয়াল এইসব কিছু ধরে ধরে কোন রকমে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজা খোলে দাড়াতেই দেখে মেহরামের আম্মু দাঁড়িয়ে আছে। মেহরাম দরজা খোলে এক নজর তার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার রুমের ভেতরে এসে পরে। কনিকা রুমের ভেতরে এসে পরে। এসেই দেখে তনুর সব জিনিসপত্র সারা ঘরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বেশ বুঝতে পারলো যে এগুলো মেহরাম ছাড়া আর কেউই করে নি। সারা টা রাত যে তনুর এই সব জিনিস গুলো নিয়েই পার করে দিয়েছে তা টের পাওয়া যাচ্ছে। সারা ঘরে একবার নজর দিয়ে কনিকা আবার মেহরামের দিকে তাকায়। দেখে যে বারান্দায় গিয়ে বড়ো দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহরাম। কনিকা এগিয়ে গিয়ে তার দিকে যায়। মেহরামের কাধে হাত রাখে কিন্তু তবুও যেন মেহরামের কোন হুস নেই। সে তার চিন্তায় মগ্ন।

কনিকা;; মেহরাম…..!

মেহরাম;; যদি এই দুনিয়াতে আসার আগে খোদার সাথে কথা বলার মতো কোন রাস্তা বা পথ থাকতো তাহলে আমি খোদার কাছে এটাই চাইতাম যে আমাকে যেন এই দুনিয়াতেই না পাঠানো হয়। আমি আসতামই না।

কনিকা;; এমন বলে না মা।

মেহরাম;; খুব বাজে ভাবে আমি ভেংে গেছি মা। খুব ভয়ানক ভাবে। আমি আমার কল্পনাতেও কখনো ভাবি নি যে আমার সাথে কখনো এগুলো হবে। এই সমস্ত কাহিনী গুলোর সাথে আমাকে একদিন না চাইতেও মুখোমুখি হতে হবে।

কনিকা;; ভাগ্যে সবকিছু লিখা থাকলে হোক তা অতি জলদি বা দেরিতে ভোগ করতেই হয়।

এবার মেহরাম মাথা ঘুড়িয়ে তার মায়ের দিকে তাকায়।

মেহরাম;; কেন এগুলো লিখা ছিলো। এ আমার কোন জন্মের শাস্তি। কি এমন করেছিলাম তার ফল আমায় এভাবে ভোগ করতে হচ্ছে। এর থেকে ভালো হতো যদি আমিই আগে মরে গেতাম। অন্তত এগুলো তো সহ্য করতে হতো না

কনিকা;; এগুলো বলে না। তুই তো আর এখন একা না তাই না।

মেহরাম;; হ্যাঁ আমি মেহরাম তো সেই কবেই মারা গিয়েছি এখন শুধু আমি আমার বাচ্চার জন্যই বেচে আছি। নয়তো তোমরা কেউ জানতেই না যে আদৌ মেহরাম নামে কেউ আছে কি নেই।

কনিকা;; এখানে কারো কোন হাত নেই। আল্লাহ যা চান তাই হয়েছে।

মেহরাম;; এমন না চাইলেও পারতেন।

কনিকা;; করার কিছুই নেই রে মা। মেনে নে সবকিছু।

মেহরাম;; মেনে তো সেই কবেই নিয়েছি মা। যা হচ্ছে যেমন হচ্ছে সব মেনেই নিয়েছি।

কনিকা;; মা তুই….

মেহরাম;; তনুকে মিস করছি মা 🥺। নিজেকে কেমন ফাকা ফাকা লাগে। কি যেন নেই। কেমন এক শূন্যতা কাজ করে। ব্যাপার টা এমন যে সব থেকেও আমার কিছুই নেই। আমি মেনেই নিতে পারছি না যে আমার তনু এখন আর নেই। আমার বিশ্বাস হয়না।

কনিকা;; তুই না আমার ভালো মেয়ে। এভাবে কাদিস না। সব আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে।

মেহরাম;; চাচি কোথায়?

কনিকা;; নিচেই রয়েছে।

মেহরাম;; চাচ্চু & আকাশ?

কনিকা;; সবাই আছে।

মেহরাম;; হুমম।

কনিকা;; আয়ুশও নিচেই আছে।

মেহরাম;; হুম।

কনিকা আরো টুকটাক কথা বলে মেহরামের কাছ থেকে এসে পরে। মেহরাম সেই একই ভাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে কিছুক্ষণ পর রুমে এসে পরে। তারপর নিজ হাতে সারা ঘর পরিষ্কার করে ফেলে। তবে তনুর জিনিস গুলো সব গুছিয়ে এক সাইডে রেখে দিয়েছে। পুরো ঘর গোছানো শেষে এবার তনুর জিনিস গুলোর কাছে বসে। তারপর চোখের পানি মুছে তনুর সব কাপড় আর বাকি জিনিস গুলো গুছিয়ে ফেলে। তারপর আলাদা বড়ো এক কার্বাডে রেখে দেয়। কার্বাড টাতে শুধু তনুর জিনিসপত্র। আর বাকি কারো কোন কিছুই নেই। মেহরাম খুব যত্নের সাথে গুছিয়ে সেগুলো রেখে দেয়। গোছানোর পর কার্বাড সম্পূর্ণ নিজের সামনে মেলে দাঁড়িয়ে থাকে। ভেজা ভেজা চোখে নিজের হাত দিয়ে এক এক করে সব জিনিস গুলো ছুইয়ে দেয়। তখনই রুমে আয়ুশ আসে। এসেই দেখে মেহরাম তনুর একটা জামা হাতে নিয়ে বুলাচ্ছে আর কাদছে। সাথে সাথে আয়ুশের চোখজোড়াও ভিজে ওঠে। চোখের পানি গুলো মুছে দরজাতে নক করে।

আয়ুশ;; মেহরাম…

মেহরাম;; হুম এসো।

আয়ুশ;; কি করছো?

মেহরাম;; নিজেকে গুছাচ্ছি।

আয়ুশ;; নিচে চলো।

মেহরাম;; ইচ্ছে করছে না।

আয়ুশ;; সবাই বসে আছে তোমার জন্য।

মেহরাম;; কেন?

আয়ুশ;; এমনি।

মেহরাম;; আসছি

আয়ুশ;; তনু….

মেহরাম;; না, একদম না। আমি তনু কে মিস করছি না। ও চলে গেছে আমাকে ছেড়ে। একটা বার ভাবলো না যে ওকে ছাড়া আমার কি হাল হবে। আমি কি করে একা থাকবো। তো আমি ওর কথা কেন মনে করবো। মনে করে শুধু নিজে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই পাবো না। তনু জানতো যে ওকে ছাড়া আমি আমার একটা দিন পর্যন্ত থাকতে পারবো না। তারপরও আমাকে একা ছেড়ে চলে গেছে।

আয়ুশ;; তনু যায় নি, তনু আছে। তোমার কাছেই আছে। তনু তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবে এটা তুমি কি করে ভাবলে। তুমি যেমন তনু কে ভালোবাসো ঠিক তেমনই তনুও তোমায় ভালোবাসে।

মেহরাম;; এতোই যখন ভালোবাসে তাহলে চলে গেলো কেন। ও আমার সাথে আছে তাহলে কেন আমি ওকে ধরতে পারি না, ছুতে পারি না, দেখতে পারি না।

আয়ুশ;; অনুভব করতে পারো..?!

মেহরাম;; হ্যাঁ

আয়ুশ;; অনুভবেই মিশে আছে তোমার বোন।

মেহরাম;; একটা বার শুধু একটা বার কি আমার সাথে কথা বলতে পারলো না, শুধু একটা বার। আমি শেষ বারের মতো ওর সাথে একটু কথা বলতাম, শেষ বার। শেষবার আমাকে একটু মেহরু বলে ডাকতো।

আয়ুশ;; তুমি জানো ও এখনো তোমাকেই দেখছে। এখন যদি তনু দেখে যে তুমি কাদছো তাহলে কেমন লাগবে। তনু তোমাকে কাদতে না বলেছিলো তাই না কারণ তুমি কাদলে তো বেবি সহ কাদবে আর তুমি হাসলে বেবিও হাসবে তাই না। আর তুমি তো এটাও জানো যে তনু বেবি কে কত্তো ভালোবাসে তাই না।

মেহরাম;; হ হহ্য হ্যাঁ।

আয়ুশ;; তাহলে চোখের পানি মুছে ফেলো দ্রুত।

মেহরাম;; হুম।

আয়ুশ;; এবার এগুলো রেখে জলদি নিচে এসো কেমন।

আয়ুশ এই বলেই চলে আসতে নিলে মেহরামের ডাকে আবার থেমে যায়। আয়ুশ পেছন ফিরে মেহরামের দিকে তাকায়।

মেহরাম;; আয়ুশ…!

আয়ুশ;; হুমম

মেহরাম;; আমাকে একটু ত, ততনুর কাছে নিয়ে যাবে?

আয়ুশ;; অবশ্যই।

এই বলেই আয়ুশ বের হয়ে পরে। মেহরাম তার যাওয়ার দিকে খানিক তাকিয়ে থেকে আবার তনুর জামাটার দিকে তাকায়। এখনো হাত থেকে তা রাখেই নি। তনুর জামাটা নিজের সামনে তুনে গালের ওপর রাখে। চোখ বন্ধ করে গালের সাথে লাগিয়ে রাখে। মনে হচ্ছে এইতো তনু এসে তাকে জড়িয়ে ধরে আছে আর মুচকি হাসছে। তনুর গায়ের গন্ধ লেগে আছে এতে। এগুলোতে এখন সে তনুকে খুঁজে পায়। মেহরাম খানিক পর তা রেখে দেয়। কার্বাডের ভেতরে ফ্রেমে তনুর একটা হাসি মাখা ছবি আছে। মেহরাম তার দিকে তাকিয়ে থেকেই কার্বাডের দরজা টা বন্ধ করে দেয়। তারপর রুমের দরজা খোলে বাইরে বের হয়ে পরে। গেতেই দেখে তার চাচি বসে আছে। মেহরাম গিয়ে সোজা তার চাচির পাশে বসে পরে। মেহরাম গিয়ে বসতেই তার চাচি তাকে জড়িয়ে ধরে।

মেহরাম;; চাচি

আতিয়া;; মারে একটা মেয়ে আমাকে রেখে চলে গেছে। তুই জাস না। আমি মরেই যাবো। আমার তনু আমাকে রেখে চলে গেছে রে। আমার মেয়ে। ওও মেহরাম তনু তো তোর সব কথা শুনে ওকে এক বার বল না আমার কাছে আসতে। একটা বার বল তার মায়ের কাছে আসতে। ও জানে না যে ওর মা কি হালে আছে ওকে ছাড়া। ও মেহরাম

.
.

মেহরাম নিজেই জানে না যে এখন তার চাচি কে ঠিক কি বলে বুঝাবে। অবশেষে কনিকা গিয়ে মেহরামের চাচি কে ধরে। অনেকক্ষন বলে বুঝিয়ে আতিয়া কে শান্ত করা হয়। প্রেসার বেড়ে গেছে উনার। মেহরামের মা কোন রকমে ধরে ধরে নিয়ে তাকে রুমে নিয়ে গেছে। মেডিসিন খাইয়ে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। এভাবেই সময় যেতে থাকে। বাড়িতে কারো মনের অবস্থাই ভালো না। সবাই মনমরা হয়ে বসে আছে। কারো মুখ দিয়ে কোন খাদ্য দানা কিছুই যাচ্ছে না। আয়ুশ অনেক বার তার বাড়িতে ফোন দিয়েছিলো। আয়ুশের সাথে কণা আর তার মায়ের অনেক কথা হয়েছে। আয়ুশ বাড়িতে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু তার মা তাকে না বলে দিয়েছে। এই বাড়িতে এখন সবার আয়ুশের দরকার। এখন চলে গেলে কেমন দেখায় তাই এখানেই থেকে গেছে। দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে এলো। আয়ুশ মেহরামকে নিয়ে তনুর কবরের পাশে এসেছে। কবরস্থানের কাছে গেতেই আয়ুশ থেমে যায় কিন্তু মেহরাম না। সে গেট টা খুলে ভেতরে চলে যায়। এবার সাথে আয়ুশও যায়। মরুভূমিতে দীর্ঘক্ষণ কেউ পানি ছাড়া তৃষ্ণাময় থাকলে অবশেষে যখন পানি পায় তখন তাকে দেখে মনে হয় যেন তার জীবন ফিরে পেয়েছে। এখন এই মূহুর্তে মেহরামকে দেখেও ঠিই তেমন মনে হচ্ছে। তনুর কবরের কাছে যেতেই হালকা ভাবে দৌড় দিয়ে সেখানে চলে যায়। গিয়েই পাশে হাটু ভাজ করে বসে পরে। কিছুটা ঝুকে যায়। বৃষ্টি হয়েছে, কবরের ওপরের মাটি গুলো কেমন ভেজা ভেজা। মেহরাম সেখানে হাত দিয়েছে তাই মাটি গুলো হাল্কাভাবে তার হাতে লেগে যায়। সেই হাত টা নিজের মুখের কাছে আনে মেহরাম। মনে হচ্ছে যেন তনু তাকে ছুইয়ে দিলো।

মেহরাম;; তনু, তনু তুই না বলতি যে আমরা একসাথেই থাকবো। যেখানেই থাকি। সবসময় পাশাপাশি থাকবো। মরে গেলেও একসাথে ভূত হয়ে থাকবো। সবাইকে ভয় দেখাবো। কিন্তু, কিন্তু তুই তো চলে গেলি আগেই। এটা এটা কেমন হলো বল। এটা কিন্তু ঠিক না। জানিস চাচি তোর জন্য কত্তো কান্না করে। প্রেসার বাড়িয়ে দিয়েছিস তুই আমার চাচির। তোর তো সাহস কম না। তনু, তনু একটা বার উঠে পর না। উঠে সবাইকে ভুল প্রমাণ করে দে যে বাকি যারা বলছে তারা সবাই মিথ্যা বলছে। তনু, প্লিজ তনু…….

.
.

মেহরাম এভাবেই তনুর পাশে একা একাই কথা বলতে থাকলো। আয়ুশ খানিক দূরে দাঁড়িয়ে দুহাত ভাজ করে মেহরামের এই অবস্থা দেখছে। অন্যপাশে ঘুড়ে চোখের কোণায় পানি গুলো মুছে নিলো। একসময় মাগরিবের আজান পরে গেলো। রাস্তার পাশ দিয়ে দুই-একজন হুজুর যাচ্ছিলো। তারাও মেহরামের এই অবস্থা দেখলো। তারা মেহরামকে কে চেনে। কারণ তনুর মৃত্যুর দিন তারাও সেখানে ছিলো। এক নজর মেহরামকে দেখে তারাও মাথা নামিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলো।

আকবর আলী;; আহারে মেয়েটা, বোনটা মারা গেছে গতকালই। গিয়েছিলাম আমি ওদের বাড়িতে। মা তো মা ই হয়। তবে আমার সব থেকে খারাপ লেগেছে এই মেয়েটাকে দেখে। মেয়েটা অন্তঃস্বত্বা। জানেন ইমাম সাহেব, আমি আমার জীবনে কখনো দেখি নি যে কেউ তার বোন কে এতো ভালোবাসতে পারে।

ইমাম সাহেব;; জীবন & মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। কিছু করার নেই। খারাপ লাগারই কথা। তবে ওই ছেলেটা কে যে দাঁড়িয়ে আছে?

আকবর আলী;; জ্বি উনি হয়তো মেয়েটির জামাই।

ইমাম আলী;; আহারে। এসো দেখি একটু যাই।

আকবর আলী;; জ্বি

তারা দুইজন গিয়ে আয়ুশের পাশে দাড়ালো। আয়ুশ পেছন ঘুরে তাদের দেখলো। দেখেই তাদের সালাম দিলো। তারা সালাম নিয়ে কথা বলতে থাকলো।

ইমাম সাহেব;; বাবা এই সন্ধ্যা বেলা এখানে না থেকে বাড়ি যাও।

আয়ুশ;; জ্বি আসলে কবর টা একটু দেখতে এসেছিলাম।

ইমাম সাহেব;; মেয়েটি গর্ভবতী, এই সন্ধ্যায় এভাবে কবরস্থানে থাকাটা বেশি একটা ভালো হবে না বাবা। তাই তুমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চল যাও।

আয়ুশ;; জ্বি।

ইমামা সাহেব আর আকবর আলী তাকিয়ে দেখলো মেহরাম এখনো সেখানে বসে বসে কাদছে। তারা দেখে মন টা খানিক খারাপই করলো। আয়ুশ গিয়ে মেহরামকে আস্তে করে তুলে। চোখের পানি গুলো মুছে দিয়ে মেহরাম কে বুঝিয়ে বাড়ি নিয়ে এসে পরে। এসে দেখে বাড়ি ঠিক আগের মতোই। তবে তার চাচি উঠে গিয়েছে। কোন রকম সবাই কথা বলে যার যার রুমে চলে গেলো। পরেরদিন উঠেই আয়ুশ চলে যায় সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে। মেহরামের সাথে কথা হয়। এভাবে দেখতে দেখতে চলে যায় পুরো দুই সপ্তাহ। মেহরমের পেটের অবস্থা তেমন ভালো না। আর কিছুদিন গেতেই একদম দশমাসে পরে যাবে তার প্রেগ্ন্যাসি। আয়ুশের সাথে কথা হয় সবারই। তনু মারা যাবার পরও আয়ুশদের সাথে মেহরামের বাবার বাড়ির লোকজন দের মাঝে কোন ঝামেলা হয় নি। বরং তারা আগে যেমন ছিলো এখনো তেমনই। মেহরাম বসে বসে বই পড়ছিলো। তখনই আয়ুশ ছুটে মেহরামের কাছে আসে। এসেই মেহরামকে জড়িয়ে ধরে। মেহরাম ও জড়িয়ে ধরে আলতো করে। আকাশ ছোট মানুষ ও তো আর এতো কিছু বুঝে না। আকাশ এসেই বলে মেহরামকে নাকি নিচে সবাই ডাকছে জরুরী ভাবে। আর সবাই তার জন্য বসে আছে, একেবারে সবাই। আকাশ এই কথা বলেই চলে যায়। যাবার আগে মেহরামের কাছ থেকে এত্তো গুলো চকোলেট নিয়ে যায়। মেহরামও আস্তে করে নেমে একহাত পেটের ওপর রেখে গুটি গুটি পায়ে চলে যায়। গিয়েই দেখে আকাশ যা বলছিলো তা আসলেই সত্যি। সবাই একদম সারি ধরে বসে আছে। মন হচ্ছে সিরিয়াস কিছু। মেহরাম তাদের দেখে খানিক কপাল কুচকায়। কিন্তু আবার আস্তে করে নিচে নেমে পরে। নিচে নামতেই মেহরামের চাচি তাকে নিয়ে নিজের কাছে বসে পরে। মেহরাম শুধু চুপ করে বসে আছে সে বুঝতে পারছে না যে এরা সবাই এভাবে বসেই বা আছে কেন আর কিই বা বলবে। নীরবতা ভেংে অবশেষে বলা শুরু করে……





✨💖চলবে~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে