Monday, October 6, 2025







হৃদয়াক্ষী পর্ব-১১

#হৃদয়াক্ষী
#পর্ব_১১
#সারিফা_তাহরিম

রিনা পূর্ণতার শাড়ির কুচিগুলো ঠিক করে দিচ্ছিল, সেই সময় একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পেলো দুজনেই। সেই সাথে ভেসে এলো একটা চিৎকারের আওয়াজ। এবার দুজনেরই হৃদয় কেঁপে উঠলো। পূর্ণতার হাতে কুচি ধরিয়ে দিয়ে রিনা দৌঁড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। নিজের রুমে এসে দেখল তার এক বছরের মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে একটু করে হাঁটতে গিয়ে কাঠের টুলের সাথে বাড়ি খেয়ে পড়ে গেছে। টুলের উপর ভুলে একটা শোপিস রেখে গিয়েছিল রিনা। সেই শোপিসটাই পড়ে ভেঙে যাওয়ায় বিকট শব্দ হয়েছে। রিনা দৌঁড়ে গেল মেয়ের কাছে। তেমন কিছু না হলেও পড়ে যাওয়ার কারণে হালকা ব্যাথা পাওয়ায় কাঁদছে। তাড়াতাড়ি মেয়েকে কোলে তুলে নিল রিনা। কান্না থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো সে।

এদিকে পূর্ণতা পড়েছে মহাবিপদে। ওদিকে কী হয়েছে তা দেখতে যেতে পারছে না বলে খারাপ লাগছে। শাড়ি পড়া জানলে এত ঝামেলায় পড়তে হতো না তার। এই মুহূর্তে কিছু করার নেই তার। নিজে নিজেই শাড়ি পড়তে হবে। হাতে থাকা কুচিগুলো গুঁজে নিল। তারপর আঁচলটা পেঁচিয়ে নিল। অনেকটা হয়েছে। তবে শাড়ির পিন আপ করতে গিয়ে বাঁধলো বিপত্তি। অনেক চেষ্টা করেও ঠিক করে কাঁধের দিকের পিন আপ করতে পারল না। আর না পেরে হাল ছাড়লো সে। ফ্যানের নিচে বসে হালকা ভেজা চুলগুলো মেলে দিল। মিনিট পাঁচেক পরে উঠে দাঁড়াল। বাচ্চাটার কান্না বেশ কিছুক্ষণ আগেই থেমে গেছে। ওদিকে গিয়ে দেখা উচিত। কিন্তু শাড়ি ঠিকঠাকভাবে পিন আপ করা হয়নি বলে যাবে কিনা তা নিয়ে দ্বিধায় আছে। ঘড়িতে চোখ বুলালো। সময় দুপুর দুইটা ছুঁই ছুঁই। শেষ পর্যন্ত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দু পা বাড়ালো। সেই সময় দরজা খোলার আওয়াজ পেল সে।

হালকা ভিড়িয়ে রাখা দরজা ঠেলে রুমে পা রাখল অরিত্র। অরিত্রকে দেখে জড়োসড়ো হলো পূর্ণতা। আর অরিত্র মুগ্ধ নয়নে চশমা ভেদ করে তার ‘হৃদয়াক্ষী’কে পরখ করে নিল। বাসন্তী রঙের শাড়িটা পূর্ণতার গায়ের রঙের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। পূর্ণতা মাথায় আঁচল টানতেই, নববধূর রূপ আসলো তার মধ্যে। অরিত্র তার দিকে এগিয়ে গেল। এই মুহূর্তে দুই গাছি চুল লেপ্টে থাকা পূর্ণতার কপোলে অধরজোড়া ছুঁইয়ে দেওয়ার তীব্র বাসনা জাগলো মনে। হলুদ আভার গাল দুটোয় পরম আবেশে আঙুলের পরশ বুলাতে ইচ্ছে করছে ভীষণ।

কিন্তু সব ইচ্ছেকে যে সায় দিতে নেই। কিছু ইচ্ছেকে দমিয়ে রাখতে হয় ভালো লাগার অন্তরালে। নিজের ইচ্ছেগুলোকে ধামাচাপা দিয়ে স্মিত হেসে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘ অপ্সরী লাগছে তোমায়।’

পূর্ণতা লজ্জা পেল। এই মানুষটার কথায় কেমন এক ধরনের সম্মোহন থাকে। অদ্ভুত এক আকর্ষণ! আগে কেন খেয়াল করেনি সে? রাগের বসে এই সম্মোহন শক্তির আঁধারকে উপেক্ষা করেছে সে! ভাবতেই অবাক লাগছে তার। একদিনেই তার প্রতি গড়া রাগ, অস্বস্তি, ভাবনা সবকিছু কেমন জানি কর্পুরের মতো উবে যাচ্ছে। সব ভুল ধারণা ভেঙে ভালো লাগায় রূপ নিচ্ছে অল্প কিছু সময়েই! খুব লজ্জা লাগছে পূর্ণতার। আর কিছুক্ষণ এভাবে চললে লজ্জায় অজ্ঞান হয়ে যাবে সে। পূর্ণতা কথা এড়ানোর জন্য বলল,

‘আসাদ ভাইয়ার মেয়ে বোধহয় ব্যাথা পেয়েছে। আমি শাড়ি পড়ছিলাম তাই যাওয়া হয়নি।’

‘ হ্যাঁ, আমি দেখে এসেছি। ঘুম থেকে উঠে হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। তেমন ব্যাথা পায়নি। ভাবি ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে। ভাবি বলল, তুমি এই রুমে আছো, ডেকে নিয়ে যেতে বলেছে। সবাই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। চলো যাই।’

অরিত্র ঘুরে দাঁড়াল। পূর্ণতা ভেবে পাচ্ছে না কি করবে। পিন আপ করা ছাড়া শাড়ি সামলানো যাবে না। শত চেষ্টা করেও সে পিন আপ করতে পারেনি। এভাবে তো বাহিরে যাওয়া যাবে না। অরিত্রের সাহায্য নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। লজ্জাও লাগছে, অস্বস্তিও হচ্ছে। শেষমেষ অরিত্র কয়েক পা বাড়াতেই আড়ষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলো,

‘শুনুন।’

অরিত্র পূর্ণতার দিকে ফিরে তাকাল। মেয়েটার সম্বোধনহীন ডাকে হাসি পাচ্ছে তার। কিন্তু হাসা যাবে না। সে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,

‘কিছু বলবে?’

‘আ..আসলে আ..আমি শাড়ির পিন আপ করতে পারছি না। একটু হেল্প করবেন প্লিজ?’

পূর্ণতার মধ্যে জড়তা কাজ করছে ভীষণ। এবার অরিত্রও হয়তো কিছুটা বিব্রতবোধ করলো। মেয়েলি এসব বিষয়ে সে একদমই অবগত নয়। তার উপর পূর্ণতার এতটা কাছে গেলে পূর্ণতা অস্বস্তিতে অজ্ঞান না হয়ে যায় সেই চিন্তায় আছে। নিজেকে ধাতস্থ করে পূর্ণতার কাছে গেল। অতি সন্তপর্ণে কাঁধের পিনটা লাগিয়ে দিল। অরিত্রের এত কাছাকাছি অবস্থানে পূর্ণতা চোখ বুজে নিল। অরিত্রের উষ্ণতায় কেঁপে উঠলো সে। পিন লাগিয়ে দিয়ে এক হাত পিছিয়ে দাঁড়ালো অরিত্র। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় পূর্ণতার বুজে রাখা চোখ আর রক্তিম মুখশ্রী দেখে হাসলো সে। মেয়েটার মধ্যে বিরাট পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। এতটা পরিবর্তন তার কল্পনাতীত ছিল। ব্যাগ থেকে দুই গাছি চুড়ি বের করল অরিত্র। আয়নায় পূর্ণতার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে নরম সুরে ডাকল,

‘পূর্ণতা’

পূর্ণতা চোখ মেলে তাকাল। সুনিপুণ দর্পনে এক পলক চোখাচোখি হলো তাদের। অরিত্র আবারও নরম কণ্ঠে বলল,

‘চুড়ি পড়িয়ে দিই?’

উত্তরের আশায় পূর্ণতার দিকে চেয়ে রইলো। এই বুঝি পূর্ণতা তার আবদার প্রত্যাখ্যান করল! কিন্তু না, পূর্ণতা তা করেনি। সে আরেক দফা লজ্জা পেল বোধহয়। আগ্রহ ভরে তার দিকে ফিরে হাত দুটো বাড়িয়ে দিল৷ অরিত্র বিস্তৃত হাসলো। অতি যত্নে চুড়ি পড়িয়ে দিতে লাগলো। পূর্ণতা আড়চোখে তাকানোর চেষ্টা করল। তার মাথা অরিত্রের কাঁধের আরেকটু নিচ বরাবর। যার কারণে অরিত্রের চেহারা স্পষ্ট দেখতে পেল না। তবে বুঝতে পারল অরিত্র খুশি হয়েছে। অরিত্র চুড়ি পড়িয়ে দিয়ে বলল,

‘ এবার তাহলে যাওয়া যাক? সবাই অপেক্ষা করছে।’

পূর্ণতা সম্মতি জানিয়ে মাথায় আঁচল টেনে অরিত্রের পিছু পিছু গেল।

___

দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতে চললো। বর্ষণের অন্ত দেখা দিল না। আকাশে কালো মেঘের হাতছানিতে অন্ধকার হয়ে আছে চারপাশ। দুপুরের খাবার শেষে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলল সবাই। এরপর আসাদের দাদি অরিত্র আর পূর্ণতাকে ডেকে পাঠালেন। এতক্ষণ শরীর খারাপ লাগছিল বলে তিনি রুম থেকে বেরোননি। আসাদের দাদি খাদিজা বেগম তাদের ডেকে পাঠালে আসাদ, রিনা, অরিত্র আর পূর্ণতা তাঁর রুমে যায়। আসাদ আর অরিত্র ছোটবেলার বন্ধু হওয়ার সুবাদে খাদিজা বেগম আগে থেকেই অরিত্রকে বেশ স্নেহ করতেন। অরিত্রের বউ দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তাঁর। তাই তো অরিত্র পূর্ণতাকে এখানে নিয়ে এসেছে। রুমে ঢুকতেই অরিত্র আর পূর্ণতা সালাম দিল খাদিজা বেগমকে। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন,

‘কি গো ভাইসাহেব? বিয়া কইরা তো আমাগোরে ভুইলা গেসো। বউ পাইয়া এখন আর আমার কথা মনে পড়ে না?’

অরিত্রও তাঁর সাথে দুষ্টুমির সুর মিলিয়ে বলল,

‘তোমাকে কি করে ভুলি বলো তো? হাজার যতোই বলি, তুমি আমার সেই পিচ্চিকালের বউ বলে কথা। তোমার কথা ভুলা অসম্ভব। ‘

অরিত্রের কথায় সবাই হাসলো। খাদিজা বেগম ফোকলা দাঁতে হেসে বললেন,

‘তোমার নতুন বউ কই?’

অরিত্র ইশারায় পূর্ণতাকে দেখিয়ে দিল। তিনি বললেন,

‘ও নতুন বউ, এদিকে আইসা আমার পাশে বসো। একটু ভালো কইরা দেহি তোমারে।’

পূর্ণতা বিছানায় গিয়ে খাদিজা বেগমের পাশে বসতেই তিনি পূর্ণতাকে ভালো করে পরখ করে দেখলেন। উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন,

‘ মা শা আল্লাহ। দাদুভাই, তোমার বউ তো ভারি সুন্দর। তাই তো সুন্দরী বউ পাইয়া দিওয়ানা হইয়া গেসো।’

অরিত্র হাসলো। পূর্ণতা লজ্জা পেল। তিনি আবারও বললেন,

‘জামাই খুব দেখতে পারে তাই না? তা আমার দাদুভাইয়ের খেয়াল টেয়াল রাখো তো?’

রিনা কথার মাঝখানে ফোড়ন কেটে বলল,

‘ আরে দাদি, উনাদের ভালোবাসা খুব গভীর। দুজনই দুজনের খুব খেয়াল রাখে। দুজনের কি যত্ন! আর ভাবি তো ভাইয়ার পছন্দ আর খুশির ব্যাপারেও খুব সচেতন। এই শাড়িটা ভাইয়া পছন্দ করে নিয়ে দিয়েছে। আর এই শাড়িটা পড়লে ভাইয়া খুশি হবে বলে দুপুরে নীল শাড়িটা পাল্টে এই শাড়িটা পড়েছে।’

রিনার কথায় পূর্ণতা একদম মিইয়ে গেছে। সে তো তখন এমনিতেই বলেছিল কিন্তু রিনা ভাবি যে এভাবে সবার সামনে বলে দিবে তা ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। ইশ! অরিত্র কী না কী ভাবছে! অরিত্র অভিভূত দৃষ্টিতে তাকাল পূর্ণতার দিকে। দুদিন আগেও রাগে কথা বলতে না চাওয়া মেয়েটা আজ তার খুশির চিন্তা করছে! স্তব্ধ হয়ে আছে সে। খাদিজা বেগম হেসে বললেন,

‘আমার দাদুভাইটা কত ভালোবাসতে পারে আমি জানি না? তোমারে প্রথম দেখার পর থেকে যতবারই এহানে আসতো, ততবারই কইতো, ওরে ছাড়া আমি কাউরে বিয়া করুম না। তুমি যহন রাজি হইতে আছিলা না, তহন আমার দাদুভাই কত চিন্তায় আছিল জানো? নাওয়া খাওয়া ভুইলা গেসিলো। তোমারে খুব ভালোবাসে আমার দাদুভাই। বেশি বেশি যত্ন নিবা তার। বেশি বেশি ভালোবাসবা। বুঝলা সুন্দরী বউ?’

এভাবে আরও অনেকক্ষণ কথা চললো তাদের মধ্যে। বৃষ্টি থামার পরে অরিত্র আর পূর্ণতা চলে যেতে চাইল। কিন্তু সবার তীব্র জোড়াজুড়িতে রাতে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু নিয়তি যে অন্যকিছু লিখে রেখেছিল তা তাদের অজানা ছিল।

নিকষ কালো অন্ধকারে ছেঁয়ে আছে চরাচর। বৃষ্টিরা হুড়মুড়িয়ে নেমে আসছে ধরনীর বুকে। সিক্ত মৃত্তিকার মৃয়মান এক সুবাসে সৌরভিত হচ্ছে চারপাশ। অঝোর বৃষ্টির বেড়াজালে ফেঁসে বাড়ি ফেরা স্থগিত হয়েছে অরিত্র আর পূর্ণতার। রাত আটটা থেকে আবারও বৃষ্টি হচ্ছে জোর বেগে। থামার নামই নেই। এই ঝড়ো হাওয়ায় গ্রাম্য এলাকা থেকে বের হওয়াটা নিরাপদ নয়। তার উপর আসাদ ও তার পরিবারও অরিত্র আর পূর্ণতাকে ছাড়তে অপরাগ। শেষ মেষ উপায় না পেয়ে আজ রাতটা এখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। অরিত্র তার ও পূর্ণতার বাবা মাকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে। পূর্ণতাও তাদের সাথে কথা বলে নিয়েছে। অরিত্রের সাথে পূর্ণতা নিজ ইচ্ছায় সময় কাটাচ্ছে ভেবে মঈনুল হাসান ও নাজিবা হাসানের মুখে প্রশান্তির হাসি বয়ে গেল। তাঁরা দ্বিরুক্তি করলেন না।

রাতের খাওয়া শেষে বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বললো সবাই। পূর্ণতা সবার সাথে খুব ভালোভাবে মিশতে পেরেছে। আসলেই মানুষগুলো খুব ভালো। গতকাল থেকে আসা নিয়ে বিরক্তি থাকলেও আজ এখানে এসে বেশ ভালোই লাগছে তার। অরিত্রকেও ভালো লাগছে। ভীষণ ভালো লাগছে। এই মানুষটার সাথে সবকিছুই এত ভালো কেন? জানে না পূর্ণতা। শুধু জানে আজ প্রতিটা মুহূর্তকে অনুভব করছে সে।

দুপুরের সেই রুমটাতে অরিত্র আর পূর্ণতাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো। এতে দুজনেই খানিকটা বিব্রত হয়ে গেল। পূর্ণতা অস্বস্তিতে আছে। আর পূর্ণতাকে অস্বস্তি থেকে বাঁচানোর জন্য যে অন্য রুমে থাকার ব্যবস্থা করবে, সেই উপায় না পেয়ে অরিত্র বিব্রত হচ্ছে। রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিল অরিত্র। কিভাবে পূর্ণতার অস্বস্তি দূর করবে বুঝে উঠতে পারছে না সে। রুমে প্রবেশ করতেই দেখল, রুমটার সাথে লাগোয়া ছোট্ট বারান্দার চৌকাঠে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। শাড়ির আঁচল মাথায় নেই এখন। খোলা চুলগুলো কোমর ছাড়িয়ে পড়েছে। অরিত্র পেছন থেকে ডেকে বলল,

‘ পূর্ণতা, বাসাটা যেহেতু ছোট, তাই আমার অন্য রুমে শোয়ার ব্যবস্থা হয়নি। আর আসাদের সাথে থাকার কথা বারবার বললে তাঁরা মাইন্ড করতে পারে। তাই আজ রাতটা একটু কষ্ট করে ম্যানেজ করতে হবে তোমায়। তুমি বিছানায় থেকো, আমি নিচে শুয়ে পড়বো। রাত হয়েছে কষ্ট করে ঘুমিয়ে পড়ো।’

অরিত্র নিচে বিছানা করার জন্য পেছনে ফিরতেই পূর্ণতার তার দিকে ফিরে ডাকলো,

‘শুনুন’

অরিত্র পূর্ণতার দিকে চেয়ে বলল,

‘বলো’

‘একটা আবদার রাখবেন?’

অরিত্র কৌতুহলী চোখে তাকিয়ে বলল,

‘শুধু একটাবার বলে দেখো। তোমার একটু স্বস্তি আর খুশির জন্য আমি আমার সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে রাজি।’

পূর্ণতা অরিত্রের অন্তরালে হাসলো। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আজকের রাতটা আমার জন্য উৎসর্গ করবেন? বৃষ্টিমুখর পরিবেশটা উপভোগ করবেন?’

অরিত্র চমৎকার ভঙ্গিতে হাসলো। পূর্ণতা যে এত সুন্দর আবদার করবে ভাবেনি অরিত্র। সে একটা প্রশান্তির শ্বাস ফেলে বলল,

‘তবে তাই হোক! আজকের এই সম্মোহিত যামিনী তোমায় দিলাম, ‘হৃদয়াক্ষী’।’

দুজনে হাসলো। বারান্দায় গিয়ে পাশাপাশি বসলো। দৃষ্টি ঐ দূরের আকাশের অন্তমিল রেখায় গিয়ে ঠেকেছে। টিনের চালে বৃষ্টির আওয়াজগুলো সুমধুর সুর তুলছে। খানিক্ষন নিরবতা বিরাজের পর অরিত্র বলল,

‘এই মুহূর্তে হুমায়ূন আহমেদের সেই ছন্দটা ভীষণ মনে পড়ছে। অনুভব হচ্ছে।’

‘কোনটা?’

‘পৃথিবীতে ফিনিক ফোটা জোছনা আসবে,
শ্রাবণ মাসে টিনের চালে বৃষ্টির সেতার বাজবে,
সেই অলৌকিক সঙ্গীত শোনার জন্য আমি থাকব না।
কোনো মানে হয়…’

এক মুহূর্তের জন্য পূর্ণতার হৃদস্পন্দন থেমে গেল। কী বলছে অরিত্র! শেষ কথাটার অর্থ সে বোঝে? পূর্ণতার বুকে চিনচিন ব্যাথা হলো। চোখে পানি জমলো। অরিত্রের গা ঘেষে বসে তার বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো। অরিত্র স্তব্ধ হয়ে গেল। পূর্ণতার এমন আচরণ তার কাছে অপরিচিত। পূর্ণতা কাঁপা কণ্ঠে বলল,

‘বাজে কথা বললে খুন করে ফেলব।’

পূর্ণতার শ্লেষাত্মক কণ্ঠের হুমকিতে হেসে ফেলল অরিত্র। তারপর বলল,

‘আচ্ছা, তাহলে সময়টা উপভোগ করার জন্য গান ধরি? কি বলো?’

পূর্ণতা কিছু বললো না চুপচাপ অরিত্রের কাঁধে মাথা দিয়ে রাখলো। অরিত্র তাকে হালকা জড়িয়ে ধরে সুর তুলল,

‘ভেজা সন্ধ্যা অঝোর বৃষ্টি,
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি,
বাদলে ঘিরেছে আকাশ,বইছে বাতাস,
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি।

হয়নি বলা কোনো কথা শুধু হয়েছে অনুভূতি,
হয়নি বলা কোনো কথা, শুধু হয়েছে অনুভূতি।’

চলবে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ