হৃদয়াক্ষী পর্ব-১০

0
1022

#হৃদয়াক্ষী
#পর্ব_১০
#সারিফা_তাহরিম

‘কোনো এক নির্দিষ্ট মানুষের কাছে অপরাধের জন্য ‘সরি’ না, ‘ভালোবাসি’ বলতে হয়।’

অরিত্রের কথায় কেঁপে উঠল পূর্ণতা। অদ্ভুত হিমশীতল শিহরণ বয়ে গেল। নেত্রপল্লব মিলিত করল সে। এই মুহূর্তে অরিত্রের দিকে তাকিয়ে থাকার মতো সাহস তার নেই। পূর্ণতার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে হাসলো অরিত্র। পকেট থেকে মোবাইল বের করে আসাদকে ফোন করল। ফোন রিসিভ হওয়ার পর ওপাশ থেকে নারী কণ্ঠ ভেসে এলো,

‘হ্যালো’

অরিত্র বুঝতে পারল ওপাশের মানুষটা আসাদের স্ত্রী। সে বিনম্র স্বরে বলল,

‘ আসসালামু আলাইকুম ভাবি। আমি অরিত্র বলছি। আসাদ আছে বাসায়?’

‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম ভাইয়া। আসাদ তো একটু আগেই মসজিদে গেল। আপনারা আসছেন না ভাইয়া?’

‘জ্বি ভাবি, আমরা চলে এসেছি। বৃষ্টির কারণে আটকা পড়েছি। কলিম স্টোরে দাঁড়িয়ে আছি।আসাদকে ছাতা আনতে বলার জন্য ফোন দিয়েছিলাম।’

‘ কি বলেন! আমি আসাদকে বলেছিলামও আপনাদেরকে এনে তারপর মসজিদে যেতে। কিন্তু ও বলল আপনি নাকি বাসা চিনবেন তাই আসতে পারবেন। এজন্য একটু আগে বের হয়ে গেছে। যাই হোক, আমি আসছি ছাতা নিয়ে।’

অরিত্র খানিকটা ইতস্তত করে বলল,

‘ভাবি বাসায় কি দুটো ছাতা আছে? আসলে পূর্ণতাকে আপনার সাথে বাসায় পাঠিয়ে দিলে, আরেকটা ছাতা নিয়ে আমি মসজিদে চলে যেতাম।’

‘ সমস্যা নেই ভাইয়া। আমি ভাবিকে আমার সাথে একই ছাতায় নিয়ে আসবো। আপনার জন্য আরেকটা ছাতা আনবো। আমি আসছি।’

‘আচ্ছা।’

অরিত্র ফোন কেটে দিল। অরিত্র পূর্ণতার দিকে তাকাল। মেয়েটা জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশি ভিজে গেছে কিনা তা জানার জন্য একটু ভালো করে পরখ করে দেখল। না, অতটা ভিজে যায়নি, অল্প ভিজেছে। জামদানী শাড়ি হওয়ার কারণে পানি কিছুটা হলেও শুষে নিয়েছে। আর কিছুক্ষণ এত কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকলে মেয়েটা নির্ঘাত বেহুঁশ হয়ে যাবে। অরিত্র আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখল দোকানের ছাউনির নিচেই একটা বেঞ্চ আছে। অরিত্র পূর্ণতাকে সেদিকে নিয়ে বসতে বলল। পূর্ণতা বসার পরে একটু দূরত্ব রেখে অরিত্রও বসল।

ঝুম বৃষ্টির আওয়াজ চারপাশকে মুখরিত করে রেখেছে। শীতল হাওয়া নিজ দাপটে বিচরণ করছে চারপাশে। কিছুক্ষণ পরে একটা মেয়েকে ছাতা হাতে তাদের দিকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল। অরিত্র বুঝতে পারল মেয়েটা আসাদের স্ত্রী। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। তার দেখাদেখি পূর্ণতাও উঠে দাঁড়াল। আসাদের স্ত্রী রিনা ছাউনির নিচে এসে ছাতা বন্ধ করল। অরিত্র সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে বলল,

‘ আপনাকে কষ্টে ফেলে দিলাম ভাবি।’

‘আরে না না ভাইয়া। কি যে বলেন! কষ্ট কিসের? উল্টো এখানে আসতে আপনাদের কষ্ট হলো।’

অরিত্র হাসিমাখা মুখে বলল,

‘ না আমরা ঠিক আছি। পূর্ণতা, ইনি হলেন আমাদের ভাবি। আসাদের ওয়াইফ। আর ভাবি, ইনি আমার অর্ধাঙ্গিনী।’

পূর্ণতা রিনাকে সালাম দিল। সে একটু অস্বস্তি বোধ করছে। অর্ধাঙ্গিনী শব্দটাতে অদ্ভুতভাবে শিহরিত হয়েছে সে। রিনা পূর্ণতার সালামের জবাব দিয়ে বলল,

‘ভাবি, বাকি কথা বাসায় গিয়ে বলব। এখন বৃষ্টি বেড়ে গেলে যেতে আরও কষ্ট হয়ে যাবে। অরিত্র ভাই, এই নিন আপনার ছাতা। আমি ভাবিকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি।’

অরিত্র রিনার কাছ থেকে ছাতা নিয়ে ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে পূর্ণতার উদ্দেশ্যে বলল,

‘ তুমি ভাবির সাথে বাসায় যাও, আমি নামাজ পড়ে আসি।’

পূর্ণতার মনে হুট করে চিন্তা হানা দিল। শান্ত মনটা হুট করেই যেন নব কিশোরী বধুর রূপ ধারণ করল। এত বৃষ্টি তার উপর গ্রাম্য এলাকা, যদি কোনো বিপদ হয়! ভয়ে কলিজা শুকিয়ে এলো। অরিত্র যেন তার জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সে খানিকটা দায়িত্বশীল হয়ে উদ্বেগ মাখা নিচু কণ্ঠে বলল,

‘ সাবধানে যাবেন।’

অরিত্র খুশি হলো৷ পূর্ণতা বুঝি এবার তাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে! সে হাস্যোজ্জ্বল মুখে তাকে আশ্বস্ত করে প্রতিত্তোরে বলল,
‘তুমিও।’

তারপর দুজনেই দুপথ ধরে এগিয়ে গেল। মাথায় আঁচল দিয়ে হেঁটে চলা পূর্ণতাকে পুরো নববধু লাগছে। মিনিট পাঁচেক বাদে পূর্ণতা আর রিনা ঘরে পৌঁছুল। মেলা থেকে কেনা জিনিসপত্রের শপিংব্যাগ, আর আসাদের বাড়িতে আনা নাস্তার প্যাকেট নিতে দুজন এক ছাতায় আসতে একটু কষ্ট হয়েছে। দুজনই মোটামুটি ভিজে গেছে। বাড়িটা সেমিপাকা করা। উপরে টিনশেড। আসাদের পরিবারে আসাদ, রিনা, তাদের এক বছরের একটা মেয়ে, আসাদের মা আর আসাদের দাদি থাকে। আসাদ আর অরিত্র নামাজ পড়তে যাওয়ায় বাড়িতে কোনো পুরুষ মানুষ নেই। নাহলে ভালোই অস্বস্তিতে পড়তে হতো। ভেবেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল পূর্ণতা। আসাদের মা আর দাদির সাথে টুকটাক কথা বলার পরে উনারা পূর্ণতাকে জামা পাল্টে নিতে বলল। রিনা পূর্ণতাকে একটা পাকা বেডরুমে নিয়ে গিয়ে বলল,

‘ভাবি, আমার জামা আপনার একটু ঢিলেঢালা হলেও মোটামুটি হবে। অন্তত এই ভেজা শাড়ি পড়া থেকে রেহাই। নাহলে সর্দি লেগে যাবে। শাড়ি পড়বেন নাকি থ্রি পিছ?’

পূর্ণতা খানিকটা বিব্রতবোধ করল। এমনিতেই মা বা বোন ছাড়া অন্য কারো জামা পড়তে তার একটু অস্বস্তি হয়। তার উপর রিনা স্বল্প পরিচিত ব্যক্তি। তার জামা পড়তে আরেকটু ইতস্তত লাগবে। সে একটু ভেবে বলল,

‘ভাবি, কিছু মনে করবেন না। আজ মেলা থেকে উনি পছন্দ করে একটা শাড়ি নিয়ে দিয়েছেন। ওটা পড়লে উনি খুশি হবেন। তাই…’

কথাটা বলতে বলতে পূর্ণতা কিছুটা লজ্জা পেল। ইশ! সে কি বলে ফেলেছে? কোনো এক ছুতো ধরে হলেও কি তার মন কি তবে অরিত্রের খেয়াল করছে? রিনা পূর্ণতার লজ্জামাখা মুখ দেখে সশব্দে হাসলো। তারপর বলল,

‘ভাবি দেখি ভাইয়ার মন ভালো করার সব কৌশল জানেন। শাড়ি কি পড়তে পারবেন? নাকি আমি পড়িয়ে দিব?’

‘আসলে, আমি নিজে কখনো শাড়ি পড়িনি, সবসময় মা পড়িয়ে দেন৷ তাই একটু হেল্প লাগবে। আপনাকে আবারও কষ্ট দিচ্ছি।’

‘মোটেও না, আমার আরও ভালো লাগবে।’

বলেই রিনা দরজাটা হালকা ভিরিয়ে পূর্ণতাকে শাড়ি পড়ানো শুরু করল। রিনা কুচিগুলো ঠিক করে পূর্ণতাকে দিতেই সশব্দে চারপাশ কেঁপে উঠল আর সেই সাথে তাদের দুজনের মনটাও।

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে