সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব-০২

0
1546

#সেদিন দেখা হয়েছিলো❤
#লেখিকাঃ নাবিলা আহমেদ
#পর্ব- ২

সারারাত আর দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি। বিছানায় এপাশ ওপাশ করেই রাত পার করে দিয়েছি। ফজরের আযান দিতেই বিছানা ছেড়ে উঠে গেলাম। নামাজ পড়ে ছাদে চলে এসেছি। এই শুভ্র আমাকে ছাড়বে না। ও এবার যে কোন মূল্যে আমাকে ওর কাছে নিয়ে যাবে। এটা আমি বেশ বুঝতে পারছি। আমি নিজের কোনো ক্ষতিও করতে পারবো না। তাহলে ও আমার পরিবারের ক্ষতি করে দেবে। কেন সেদিন দেখা হয়েছিলো?যদি সেদিন ওর সাথে দেখা না হতো। তাহলে আজ আমাকে এভাবে ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো না। আমিও সুন্দরভাবে থাকতে পারতাম। এসব ভাবতে ভাবতে কখন সকাল হয়েছে বুঝতেই পারিনি। আম্মুর ডাক শুনে নিচে নেমে এলাম। আমাকে দেখেই আম্মু প্রশ্ন ছুড়লো,!

____হ্যা রে রোজ রাতে ঘুমাসনি?

জানতাম এমন প্রশ্ন করবে। এখন যদি বলি না ঘুমাইনি। তখন আবার আম্মু বলবে কেন ঘুমাইনি?তখন আমি কি বলবো?কোন মিথ্যে কথা বলতে হবে আজকেও। এরমাঝে ভাইয়াও চলে এলো ড্রয়িংরুমে। ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললো,!

____কি রে পেঁচা রাতে ঘুমাসনি?

আমি আমতা আমতা করে বললাম,!

____না মাথা ব্যথা করছিলো তাই ঘুমাইনি,!

তখনি বাবা এসে বললো,!

____কি বলছো রোজ মামনি?তোমার মাথা ব্যথা করছিলো?তাহলে আমাকে কেন বলোনি?আমি তোমাকে মেডিসিন দিয়ে দিতাম। মাথা ব্যথা কি এখনো আছে মামনি?

এই হলো বাড়িতে ডক্টর থাকার প্রবলেম। মানে কিছু হলেই মেডিসিন গেলাবে। আমি মুখটা কাঁচুমাচু করে বললাম,!

____বাবা তোমার মেডিসিন তুমি বরং তোমার পেশেন্টদের দিও,!

বাবা মুখটা ছোট করে বললো,!

____আচ্ছা,!

ভাইয়া দাত কেলিয়ে বললো,!

____রোজ তোর না মাথা ব্যথা?তাহলে তোর উচিত ইনজেকশন নেয়া,!

বাবা মুচকি হেসে বললো,!

____রোদ আয় তোকে ইনজেকশন দেই,!

ওমনি ভাইয়া মুখ কালো করে বললো,!

____লাগবে না বাবা,!

এবার বোঝ কেমন লাগে!ব্রেকফাস্ট শেষ করে রুমে চলে এলাম। ভেবেছি আমি আর মিম আজকে ঘুরতে যাবো!তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম। একটা রিক্সা নিয়ে মিমদের বাড়ি চলে এলাম!ওদের বাড়ি ঢুকতেই সামনে মিমের ভাই পড়লো। কেমন একটা দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে!আমি ওনাকে পাশ কাটিয়ে মিমের রুমে গেলাম। মিমও রেডি তাই বেরিয়ে এলাম!দুজনে মিলে রিক্সা নিয়ে রেস্টুরেন্টে চলে এলাম। এখানে এসে আমার কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো!কারন সামনেই স্বয়ং শুভ্র বসে আছে। মনে হচ্ছে মিটিং করতে এসেছে!মিম আমাকে টেনে নিয়ে ভেতরে এলো। এই ছেলেটা দেখতে যতটা সুন্দর ঠিক ততটাই ভয়ংকর!হুট করেই শুভ্র আমার দিকে তাকালো। এবার যেন আমার প্রানপাখি বেরিয়ে আসবে। শুভ্র বসা থেকে উঠে এসে সোজা আমার সামনে দাড়ালো। ভয়ে আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। হঠাৎ শুভ্রর কথায় আমি শকড হলাম। শুভ্র এক আঙুল ঠোটে দিয়ে বললো,!

____আপনাকে চেনা চেনা লাগছে,!

___________________________________________

আমি হা করে তাকিয়ে আছি। শুভ্র আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও বললো,!

____হ্যা খুব চেনা চেনা লাগছে আপনাকে। বাট ঠিক মনে পড়ছে না, কোথায় দেখেছি?

এই ছেলে বলে কি?এত নাটক কি করে করতে পারে?এরমাঝে শুভ্রকে একটা ছেলে নিয়ে গেলো। আমি ওই ছেলেটাকে গিয়ে বললাম,!

____আপনার কি হয় উনি?

ছেলেটা মুখ কালো করে বললো,!

____আমার ভাই,!

মুচকি হেসে আমি বললাম,!

____আপনার ভাই খুব ভাল নাটক পারে। আমার জীবনটা নরক করতে চেয়ে। এখন এমন নাটক করছে যেন আমাকে চেনেই না,!

____আপনি কি রোজ?

আমি ভীষন অবাক হয়ে বললাম,!

____আপনি কি করে জানলেন?

ছেলেটা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,!

____ভাইয়ার কাছ থেকে শুনেছি। ভাইয়া আপনাকে অনেক ভালবাসে। কিন্তুু আপনি মাএ বললেন না?যে ভাইয়া আপনাকে না চেনার নাটক করছে। এটা আপনি ভুল বললেন ভাইয়া সত্যিই আপনাকে চেনেনা,!

আমি শকড হয়ে বললাম,!

____মানে?

ছেলেটা ছলছল চোখে বললো,!

____ভাইয়ার মেমোরি লস হয়েছে। সেটাও ১বছর আগে মিস রোজ আহমেদ। আর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো আপনার জন্য। আপনি সেদিন ভাইয়াকে এতটা হার্ট করেছিলেন। যে ভাইয়া পাগলের মতো রাস্তা দিয়ে হাটছিলো। আর ঠিক তখনি একটা ট্রাক এসে ভাইয়াকে ধাক্কা মারে। আর সেদিনই ওর মেমোরি লস হয়ে যায়। যার জন্য এতগুলো দিন আমরা আমেরিকা ছিলাম। আজকে রাতের ফ্লাইটেই বাংলাদেশে এসেছি,!

আমি স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি। শুভ্র অভ্র বলে ডাক দিতেই ছেলেটি চলে যায়। আর এদিকে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। একদিকে এই ভাবনা যে আমার জন্য শুভ্রর এই অবস্থা হয়েছে। আরেক ভাবনা যদি শুভ্রর মেমোরি লস হয়ে থাকে। তাহলে রাতে আমার রুমে কে এলো ২দিন?আবার রেড রোজও বললো। একমাএ শুভ্র আমাকে রেড রোজ বলে। এ কোন গোলকধাধায় পড়ে গেলাম আমি?কি করে জানবো আমি সব সত্যিটা?

#চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে