সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-১২

0
1907

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_১২
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

“আপনি আমাকে এতো কিছু দিলেন আমার ওতো কর্তব্য আপনাকে কিছু দেওয়া৷ চোখ বন্ধ করুন৷
.
কেনো?
.
যেটা বললাম সেটা করুন নাও চোখ বন্ধ করুন৷

আবির চোখ বন্ধ করলো৷ অনু আস্তে আস্তে আবিরের কাছে গিয়ে ওর গালে একটা কিস করে দৌড়ে চলে গেলো৷

আবির চোখ খুলে দেখলো অনু নেই৷গালে হাত দিয়ে মুচকি হাসলো৷

“পাগলী একটা৷
.
🍁পাঁচদিন পর~~~

আবির আজ ফিরে যাচ্ছে আমেরিকায়৷ সবারই ভিষন মন খারাপ৷ অনু তো কাঁদতে কাঁদতে শেষ৷ আবির অনেকবার ধমক দিয়েছে তাতেও কাজ হয়না৷ সে কাঁদছেই৷

“অনু তুমি যদি এভাবে কাঁদতে থাকো তাহলে আই
প্রমিস আমি আমেরিকায় যাবোনা৷ তুমি কী চাও তোমার স্বামী আমেরিকায় না যাক আর বিজনেসের লস হোক?যদি এটাই চাও তাহলে ঠিকাছে আমি যাবো না৷
.
“কী রকম মানুষ আপনি হ্যাঁ৷ আমি কাঁদছিলাম বলে এভাবে বলবেন নাকি৷ কোনো স্ত্রীই চায়না তার স্বামীর লস হোক তেমনি আমিও চাইনা৷ আপনি গিয়ে ভালো করে আপনার বিজনেসের দেখবাল করুন যাতে আমাদের কোম্পানি এগিয়ে যেতে পারে৷
.
এই তো লক্ষী মেয়ে৷ এবার আমার শার্টের বাটনস্ গুলো লাগিয়ে দাও তো তারাতাড়ি৷ লেট হয়ে যাচ্ছে৷
.
অনু আবিরের শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে আর আবিরের মুখের দিকে তাকাচ্ছে৷ আবিরও এক দৃষ্টিতে অনুর দিকেই তাকিয়ে আছে৷

অনু বোতাম লাগিয়ে দিয়ে এবার আবিরের সব কাপড় চোপড় গুছিয়ে দিচ্ছে৷ আবিরের মা ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দিচ্ছেন৷

আবির সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অনুর কাছে গেলো৷ কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দিয়ে বললো,,,
ভালো করে চলবে আর সাবধানে ভার্সিটিতে যাবে৷ আর হ্যাঁ লেখাপড়া নিয়ে একদম ফাঁকি বাজি করবেনা আমি কিন্তু আমেরিকায় বসে বসেই সব দেখতে পারবো৷তোমার এখন একটাই লক্ষ্য আর সেটা হলো নিজের স্বপ্ন পুরন করা৷ তোমাকে ফ্যাশন ডিজাইনার হতে হবে অনু৷

অনুও মাথা ঝাঁকিয়ে আবিরের পায়ের উপর ওর দুই পা রেখে ভর দিয়ে উঠে আবিরের কপালে ভালোবাসার পরশ একেঁ দিলো৷,,,,

“সাবধানে যাবেন!আর গিয়ে ফোন দিবেন৷
.
অনুর চোখ থেকে না চাইতেও পানি পরছে৷ আবির আর পিছনে তাকালো না রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো৷ পিছনে তাকালে সে আর আজ যেতেই পারবেনা৷

আবির চলে যেতেই অনু ফুপিয়ে কেঁদে দিলো৷

“পাঁচটা বছর আপনাকে দূরে সরিয়ে রেখেছি৷ আপনি আমার কাছে কী সেটা বুঝতে পারিনি কিন্তু এখন যখন বুঝতে পারলাম তখন আপনাকে আমার কাছে রাখতে পারিনি৷
🍁
একমাস পর ~~~~

অনু আজ ফাইনাল এক্সাম দিয়ে এসেছে৷ বাড়ির সবাই ওকে জিজ্ঞেস করছে পরিক্ষা কেমন হয়েছে অনু সবাইকে হাসিমুখেই বললো,,তার পরিক্ষা খুব খুব ভালো হয়েছে৷

সে খুশিমনে রুমে গেলো আবিরকে ফোন করে জানাবে তার পরিক্ষা খুব ভালো হয়েছে৷

আবির অনুর পরিক্ষা ভালো হয়েছে বলে সেও খুব খুশি৷ অলরেডি বাড়িতে মিষ্টি কেনার জন্য টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে৷
রেজাল্ট দেওয়ার দুইমাস পড়েই অনু চাকরির জন্য এপ্লাই করবে৷
🍁
বিকেলে অনু ছাঁদের দোলনায় বসে বসে ফুল দিয়ে মালা গাঁথছে আর গুন গুন করে গান গাইছে,,

দিও তোমার মালা খানি,বাউলের এই মনটারে,,
.
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে৷

অনুর গান গাওয়ার মধ্যেই ওর ফোন বেজে উঠলো পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো আবিরের৷ অনু মুচকি হেসে ফোনটা রিসিভ করলো৷

“হ্যালো!!!
.
বাহ্ আজ এত তারাতাড়ি ফোন রিসিভ করলে যে৷ তা কী করছে আমার জানপাখি?
.
মালা গাঁথছি আর,,,
.
গান গাইতেছো রাইট??
.
আপনি কী করে জানলেন?
.
এটা জানা কোন ব্যাপার না৷ মানুষ অসময়ে কখন মালা গাঁথে জানো যখন তার মন ফুলের মতোই ফুরফুরে থাকে৷ আর আনন্দে আবেশে মালা গাঁথার সাথে মনের সুখে গানও গায়৷
.
বাহ্ নারী সম্বন্ধে অনেক জ্ঞান আছে দেখছি৷
.
তা তো থাকবেই৷ বিয়ে হয়েছে বউ আছে এখন তো সব জানার দরকার তাই-না?
.
হুম সেটাই! আচ্ছা আপনি এখন কী করছেন?
.
এইতো কয়েকটা ফাইলে চেক করছি৷
.
আর কখন আসবেন দেশে?
.
এইতো তিন চারমাস পরেই৷

ওহ,,(মন খারাপ করে)
.
মন খারাপ করোনা সুইটহার্ট৷ তুমি তো জানোই ঘন ঘন বাংলাদেশে যাওয়া পড়েছে এইবার৷ তাছাড়াও কোম্পানি লসের দিকে৷ কোম্পানিকে দাড় করিয়েই তোমার কাছে দৌড়ে চলে আসবো৷কিন্তু একটা আফসোস৷
.
কী???
.
এই যে তুমি মালা গাঁথছো সেই মালাটা আমি গলায় দিতে পারবোনা৷
.
আপনি আসলে মালা বানিয়ে দিবো তখন গলায় দিয়েন৷
.
আচ্ছা কী ফুল দিয়ে মালা বানাচ্ছো সেটা তো বললেনা৷
.
বকুল ফুল দিয়ে৷ একটা ছোট ছেলেকে দেখলাম নিয়ে যেতে ব্যস ওর কাছ থেকেই রেখে দিলাম৷ মালাটাকে ডায়েরির মধ্যে ঢুকিয়ে রাখবো৷ শুকনো বুকলের মালায় অনেক ঘ্রান,সুবাস থাকে৷
.
রেখে দাও৷শুকনো বকুলের মালাই আমি এসে গলায় দিবো৷

আউচচচ!!!!
.
কী হয়েছে অনু?
.
ও কিচ্ছু না একটু সুই আঙুলে ঢুকে গেছে৷
.
রক্ত ঝরছে?
.
না৷
.
মিথ্যা বলোনা৷ আ’ম ড্যাম সিওর তোমার রক্ত ঝরছে৷ খুব বেশিই ব্যাথা পেয়েছো তুমি তা নাহলে এতো জোরে চিৎকার করতে না৷ আমি এক্ষুনি ভিডিও কল দিচ্ছি রিসিভ করো৷ আর হ্যাঁ একদম চালাকির চেষ্টা করবানা৷

আবির সাথেসাথেই ভিডিও কল দিলো৷অনু একবার আঙুলের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার ফোনের দিকে৷ আঙুল বেয়ে রক্ত ঝরছে আবির যদি দেখে তাহলে অনেক বকবে৷ অনু আঙুলটা ঝারা দিয়ে ফোন রিসিভ করলো৷
.
এতো দেরি লাগে ফোন রিসিভ করতে?(রেগে)
.
কোথায় দেরি হয়েছে?
.
আজকাল মিথ্যা কথা বলা তোমার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ দেখি আঙুল দেখাও৷
.
অনু ক্যামেরার সামনে আঙুল ধরলো৷
.
তুমি না বললে সামান্য তাহলে রক্ত ঝরছে কেনো? ড্যাম ইট!!!
.
অনু কিছু বলছেনা এখন কিছু বললে আবার আবির বকবে৷

“একটু সাবধানে থাকতে পারোনা তুমি?কথা বলার সময় মালা না গাঁথলে কী ছিলো?যাও আঙুলে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিয়ো৷ কথাটা বলে আবির ফোন কেটে দিলো৷
.
ধ্যাত!!!বুঝা যায় তার আঙুলে সুই ঢুকেছে৷
🍁
“অনুর ব্যাপারে জানো কিছু?
.
অনুর চাচা মুখে খাবার দিতে যাবে ওমনি উনার ছেলের মুখে কথাটা শুনে খাবার খাওয়া থামিয়ে দিলো৷

“কেনো?হঠাৎ এই কথা বললি যে?
.
কেনো আবার তোমার ভাতিজি৷ খোঁজ তো তোমার রাখাই উচিৎ তাই নয় কী?
.
বাহ আজ আমার ছেলে এতো সতী সাবিত্রী হলো যে৷
আকাশ আমি কানে কম শুনছি না তো?
.
আকাশঃনা আমরা ওতো সেম কথাই শুনলাম৷ তা প্রোপার্টি ভাগ করার কী হলো?
.
চাচাঃকেনো বলোতো?
.
আকাশঃকারন আমি চাইছি আমার প্রোপার্টি আমি নিয়ে যেতে?
.
চাচাঃযদি বলি তুমি সম্পত্তি পাবে না তো?
.
আকাশঃদেখুন বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না ওকে৷ আমি যদি সেদিন অনুর সাথে মিথ্যা বিয়ের নাটক না করতাম তাহলে একটা কানাকড়িও আপনারা পেতেন না৷
.
চাচাঃদেখো আকাশ এতে তোমার কোন ভুমিকা নেই৷ সো এটাই ভালো হবে যদি তুমি এসবে নাক না গলাও৷
.
আকাশঃভুমিকা নেই মানে?অবশ্যই ভুমিকা আছে৷ আপনারা বলেছিলেন যে আমি অনুকে বিয়ে করে ওর বাবার সম্পত্তি নিজের নামে করে ফেলবো আর এর থেকে আপনাদের অর্ধেক দিবো তাহলে এবার আপনারা আমাকে দিবেন না কেনো?
.
চাচাঃদেখো আকাশ তোমাকে যে কাজটা করতে দিয়েছিলাম সেইটা আমার মেয়ে করে ফেলেছে আর দেখো তুমি এই বাড়িতে ঘর জামাই হয়ে আছো আমার মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিয়েছি সো জামাই, জামাইর মতো থাকবে৷
.
সেটআপ৷ তোমরা মুখটা অফ করবে৷সারাদিন শুধু প্রোপার্টি, প্রোপার্টি, প্রোপার্টি৷ উফ এই কথাটা শুনতে শুনতে আমার কান পঁচে গেছে৷ দেখো আবার এই প্রোপার্টি না আবার তোমাদের ডেস্ট্রয়ের কারন না হয়ে দাঁড়ায়৷ বাই দ্যা ওয়ে অনু কোথায় আছে কিছু জানো তোমরা?
.
বাবাঃনাতো ও আবার কোথায় থাকবে, হয়তো টাকার অভাবে,কোন ছেলের সাথে চলে গেছে নয়তো পতিতা পল্লিতে৷
.
“এসব কিচ্ছুনা টপ বিজনেস ম্যান আবির রায়হান চৌধুরীর ওয়াইফ ও৷আবির ওকে বিয়ে করেছে৷এখন বুঝতে পারছো আমাদের সামনে কী হতে পারে৷ অনু যে মেয়ে কিছুতেই চুপ করে বসে থাকবেনা ও৷
.
চাচাঃটপ বিজনেস ম্যানের চোখ এই এতিমের দিকে কীভাবে পরলো?
.
অনুর সাথে ওর ছয় বছরের সম্পর্ক ছিলো৷
.
কীহ!!!!!
.
হ্যাঁ শুধু তাই নয় আর কয়েক মাস পরেই ও ফ্যাশন ডিজিইনার হতে যাচ্ছে৷
.
চাচাঃফ্যাশন ডিজাইনার কী হাতের মোয়া যে চাইলেই পেয়ে যাবে?
.
বাবা তুমি ভুলে যাচ্ছো যে অনু কতটা ইনটেলিজেন্ট৷ ও সব পারে আর হাতের কাজ তো আরও বেশি৷ ও সব দিক থেকে পারফেক্ট বাবা এসব ওর জন্য কোনো ব্যাপার না৷
.
আকাশঃতাহলে তো আমরা খুব বিপদে পড়ে যাবো৷
.
চাচাঃনা সেটা হতে দিলে চলবেনা কিছু তো একটা করতে হবেই৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে