সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৬

0
2013

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৬
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনু তার নীল ডায়েরি বের করলো৷ এটা সে হাত ছাড়া করেনা৷ নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া মুহুর্ত,সুখ, দুঃখ সব লিখে রাখে ডায়েরি’তে৷
ডায়েরির প্রথম পাতা উল্টাতেই সেখানে লিখা “ভালোবাসি আবির”৷

অনু লিখাটার উপরে হাত বুলালো৷
তারপর পরের পাতা উল্টালো সেখানে লিখা,,,,,

“২০১৪ সাল পহেলা ফাল্গুন৷এই দিনটা আমার কাছে সব চেয়ে স্মৃতিময় একটা দিন৷
পহেলা ফাল্গুন উপলক্ষে সারা রাস্তায় ফুলে ভরে গেছে৷ কেউ ফুল বিক্রি করছেতো কেউ কিনছে৷
আমিও এগিয়ে গেলাম ফুল কেনার জন্য একজন লোকের কাছে৷লোকটা বকুল ফুলের মালা এনেছে৷ এই বকুল ফুলটা বরাবরই আমার খুব পছন্দের তাই এই ফুলে কাউকে ভাগ দেইনা আমি৷ লোকটার কাছ থেকে ফুলের মালাটা নিতে যেতেই কেউ ছো মেরে নিয়ে নিলো৷
আমি রেগে পাশে তাকাতেই দেখলাম একটা ছেলে৷ ছেলেটা আর কেউ নয় আমার আবির ছিলো৷ তখন ওকে চিনতাম না৷ এখান থেকেই আমাদের দেখা চেনা, সাক্ষাৎ শুরু হয়৷
আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আবির আমার দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেঁসে লোকটাকে বললো,,

“এই বকুলের মালা কত টাকা মামা?
.
পনেরো টাকা৷
.
অনুঃএক্সকিউজ মি এই মালাটা আমার প্লিজ আমার মালাটা আমাকে দিয়ে দিন৷
.
আবিরঃবকুল ফুলকে এতো ভালোবাসেন৷ এক কাজ করুন আপনি বরং এই যে দেখছেন বেলীফুল ওগুলো কিনুন৷
.
আমি আবিরের দিকে তাকিয়ে একটা গোলাপ নিয়ে ওর মুখে ছুড়ে মেরে চলে আসলাম৷
আসার সময় পিছনে তাকিয়ে দেখলাম সে এই গোলাপটাও কিনছে৷ পাগল কোথাকার হুহ
🍁
রাত নয়টা৷ বাবার সাথে গল্প করে ব্যালকনিতে গেলাম৷ খুব সুন্দর মৃদু বাতাস বইছে৷ব্যালকনিতে যাওয়ার একটা কারন আছে৷ আকাশে আজ খুব বড় চাঁদ উঠেছে৷ আমি একমনে চাঁদের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ প্রকৃতিকে নিখুত ভাবে দেখলে যেনো মনের মধ্যে আনন্দের একটা ঢেউ বয়ে যায়৷আকাশের দিক থেকে মুখ সরিয়ে পাশে তাকাতেই দেখলাম একটা ঝুড়ি৷ঝুড়িটা দেখেই আমি অজান্তেই হেঁসে ফেললাম৷ঝুড়িটা হাতে নিয়ে রুমে গেলাম৷
ঝুড়ির ভিতরে একটা বকুলের মালা, দুটো বেলীফুলের মালা,চৌদ্দটা গোলাপ,আর দু মুঠো কাচের চুড়ি,চকলেট আর সাথে দুটো লাল,নীল চিরকুট৷
চিরকুটটা খুলতে না খুলতেই ফোন বেজে উঠলো আমি তারাতাড়ি ফোন রিসিভ করলাম,,

“হ্যালো অপরাজিতা কেমন আছো? এন্ড আই হোপ আজকের পাঠানো গিফ্ট তোমার পছন্দ হয়েছে৷
.
ওই ওই কে আপনি বলুন তো?আপনাকে কতবার বলবো যে আমাকে অপরাজিতা বলে ডাকবেননা৷
.
তো কী নামে ডাকবে কদম,হাহাহা৷ দেখো অপরাজিতা তোমার নাম আমি জানিনা তবে তোমাকে যেদিন দেখেছিলাম সেদিন তোমাকে একেবার সদ্য ফোটে ওটা অপরাজিতা ফুলের মতোই লাগছিলো তারমধ্যে আবার ড্রেসের কালারও এই ফুলের মতোই ছিলো৷তাই তোমাকে আমি ভালোবেসে অপরাজিতা বলে ডাকি৷
.
দেখুন আমি আপনাকে চিনিওনা কে আপনি৷ আর এভাবে কেনো চিরকুট দেন সামনে আসেননা কেনো?ভয় পান নাকি?
.
আমি আর ভয় নেভার৷তবে এক কাজ করো ফোনটা রেখে চিরকুটটা খুলে পড়ে দেখো তাহলেই চিনতে পারবে আমি কে?

ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিলো৷
আমি তারাতাড়ি নীল চিরকুটটা খুললাম সেখানে লিখা,,

“তোমাকে আমি গোলাপও বলবোনা আর ডালিয়াও বলবোনা৷ তুমি আমার কাছে লতা পাতায় ফুটন্ত অপরাজিতা ফুল৷ জানি তোমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে কে আমি যে তোমাকে প্রত্যেকদিন ফুল আর চিরকুট পাঠাই৷তোমাকে আমি ফুলগুলো পাঠাই কারন তোমায় ভালোবাসি৷ আর আমি আমার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশটা এভাবেই করতে চাই৷ কারন আমি চাই তুমি আমার প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে আমার ছোট ছোট পাগলামুতে আকৃষ্ট হও৷ আমার এমন অদ্ভুদ উপহার পাঠানোতে জানি তুমি আগে অনেক বিরক্ত হতে কিন্তু এখন হওনা কারন এখন এমন উপহার পাঠানো দেখলে তুমি বিরক্তের চাইতে খুশিই বেশি হও অপেক্ষায় থাকো কখন উপহার পাবে আর আমার পাগলামুময় চিরকুট গুলো খুলে পড়বে৷তুমি উইক হয়ে পরেছো আমার আর আমার উপহারের প্রতি৷
আর আমি এটাও জানি তুমি আগে নীল চিরকুটটাই খুলবে৷ তাই নীল চিরকুটটা পড়ে লাল চিরকুটটা খুলও সেখানেই আমার পরিচয় দেওয়া আছে৷

কথাগুলো যা বলেছে সব সত্যি৷ আমি আগে বিরক্ত হতাম কিন্তু আস্তে আস্তে এগুলো আমার অভ্যাস হয়ে গেছে ফুল আর চিরকুট না পেলে একদম ভালো লাগেনা আমার৷ ব্যাক্তিটার প্রতিটি কথা আমার মনে গেঁথে যায় একেবারে৷
আমি নীল চিরকুটটা ভাজ করে রেখে তারাতাড়ি লাল চিরকুটটা খুললাম সেখানে লিখা,,,

“আমি জানি তুমি আমার পরিচয় পাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে পরেছো তাছাড়া আমারো ভালো লাগছেনা আমার পরিচয় গোপন করে রাখতে তাই আজ বলেই দিলাম আমার পরিচয়৷,,,,,,

“আমি আবির রায়হান চৌধুরী৷ নামটা অনেক জায়গাতেই শুনেছো৷ হয়তো তোমার বিশ্বাস না ও হতে পারে যে টপ বিজন্যাস ম্যান আবির তোমাকে চিরকুট ফুল পাঠায়৷ অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্য৷ আজ আমার সাথে তোমার দেখাও হয়েছে ওই যে তোমার হাত থেকে বকুলের মালাটা নিয়ে নিছিলাম আমি সেই আবির৷ বকুলের মালা নেওয়ার আসল কারন ছিলো তোমার এ্যাটেনশন পাওয়া৷
আশা করি আমার ব্যাপারে তোমার আর কিছু জানার দরকার নেই এটুকুই যথেষ্ট৷আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ তবে হ্যাঁ এটা বলবোনা যে তোমাকেও ভালোবাসতে হবে৷ আমিই নাহয় বেহায়া হয়ে তোমাকে ভালোবেসে যাবো৷ ভালো থেকো৷ “ভালোবাসি অপরাজিতা”৷

আমার চোখ থেকে কখন পানি গরিয়ে পরেছে সেটা বুঝতেই পারিনি৷ টপ বিজন্যাস ম্যান আবির আমাকে ভালোবাসে আমার জন্য ফুল, চিরকুট পাঠায় ওহ্ মাই গডন্যাস৷
🍁
দেখতে দেখতে কেটে যায় এক বছর৷ আবির আর অনু একজন আরেকজনকে খুব ভালোবাসে৷দুষ্ট মিষ্টির সম্পর্কে এই দুজন যেনো বাবুই পাখির জোড়া৷

একদিন অনু ক্যান্টিনে বসেছিলো৷তখুনি ওর ফ্রেন্ড রিয়া আসে৷

“কী করছিস?
.
এইতো বসে আছি দেখছিস না
.
কী শুনলাম আবিরের ব্যাপারে?
.
কী শুনেছিস?
.
শুনলাম আবিরের নাকি আরেকটা মেয়ের সাথে রিলেশন আছে৷
.
অনু কথাটা শুনে রিয়ার গালে মিনি একটা চড় বসিয়ে দিলো৷

“আমার আবিরের ব্যাপারে কতটা জানিস তুই যে আবুল তাবুল বকছিস৷ ওকে আমি বিশ্বাস করি৷ ও আমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতেই পারেনা৷
.
বয়ফ্রেন্ডকে এতো বিশ্বাস করিস৷ ভালো বিশ্বাস করা ভালো কিন্তু অন্ধবিশ্বাস ভালো নয়৷
.
কী প্রমান আছে তোর কাছে কী প্রমানের ভিত্তিতে তুই আবিরের নামে উল্টা পাল্টা বলছিস৷
.
প্রমান দেখবি এই দেখ প্রমান৷
.
রিয়া কতগুলো ছবি বেড় করে দেখালো৷ ছবিতে আবির একটা মেয়ের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে আছে৷
.
হুহ চড় তো বসিয়ে দিলি এখন এসব কী৷ আমি তোর ফ্রেন্ড তোর ভালো চাই তাই ছবিগুলো দেখিয়েছি৷ এখন বিশ্বাস করা না করা তোর ব্যাপার৷
.
রিয়া চলে গেলো৷ অনু ফোন বেড় করে আবিরকে কল দিলো কিন্তু আবির ধরলো না৷ অনু একটার পর একটা কল দিয়েই যাচ্ছে তবুও আবির ধরছেনা৷

প্রায় পনেরো মিনিট পর অনুর মেসেঞ্জারে একটা মেসেজ আসলো৷ অনু মেসেজটা ওপেন করলো,,

“আবিরকে কল করছিলে কিন্ত সো স্যাড আবির যে তোমার কল রিসিভ করবেনা সে তো এখন অন্য কাজে ব্যাস্ত৷

অনু রিপ্লাই করতে যাবে ঠিক তখুনি ওর ফোনে একটা ছবি আসলো৷ ছবিটা অস্পষ্ট হলেও দেখা যাচ্ছে আবির একটা মেয়েকে কিস করছে৷

আবারো মেসেজ আসলো,,,আমার কথা বিশ্বাস না হলে বয়ফ্রেন্ডকে কল করে জিজ্ঞেস করো সে এখন কফি শপে আছে কী না আর তার সাথে কোন মেয়ে আছে কী না৷
.
অনু আবিরকে কল দিলো৷ এবার আবির কল রিসিভ করলো৷
.
হ্যাঁ বলো অপরাজিতা৷
.
আপনি কোথায়?
.
হঠাৎ এই কথা জিজ্ঞেস করলে যে?
.
কেনো জিজ্ঞেস করতে পারিনা নাকি৷ না অন্য কেউ জিজ্ঞেস করার জন্য চলে এসেছে?৷
.
কী যে বলো৷ আমি তো এখন কফি শপে আছি৷
.
তোমার সাথে একটা মেয়ে আছে রাইট৷
.
হ্যাঁ,,,
.
আবির আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই অনু কল কেটে দিয়ে আবিরের নাম্বার ব্লক করে দিলো৷

আমার আগেই বুঝা উচিৎ ছিলো৷ অনেক দেড়ি করে ফেলেছি ওকে চিনতে৷
অনু কেঁদেকেটে বাড়ি ফিরে গেলো৷

এরপর থেকেই ওদের ভুল বুঝাবুঝির পর্ব শুরু৷
🍁
অনু আর পড়লোনা ডায়েরি বন্ধ ফেললো৷ এক হাত দিয়ে চোখ মুছে আরেক হাত দিয়ে কাপ টেবিলে রাখলো৷

ঝুমাঃঅনু তো দেখছি আজকাল চা বেচাও শুরু করে দিয়েছে৷
.
ঝুমার এই কথা শুনে অনু ভ্রু কুচকে থাকালো ওর দিকে৷

“কী হলো অনু এটাই তো ভাবছো আমি কী করে জানলাম?তবে শুনো তুমি যখব চা বানাচ্ছিলে তখন আমি টিউশনি পড়ে এদিক থেকেই রিক্সা করে আসছিলাম আর তখনই দেখলাম৷ আগেই বলেছিলাম টাকা পয়সা না থাকলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়না আর তুমি তো চা বেচো৷ চা বেচে কীভাবে লেখা পড়ার খরচ চালাবে৷ হাহাহা তুমি পারোও বটে৷
.
” ব্যস অনেক বলেছো ঝুমা৷ নিজেকে কী মনে করো জানিনা৷ তুমিতো রিক্সা করে বাড়ি ফিরো কিন্তু আমি একসময় নিজের প্রাইভেট কার করে বাড়িতে ফিরতাম৷ আমারতো কেউ নেই তাই আমি মেসে থাকি কিন্তু তোমার তো সব আছে তবুও কেনো মেসে থাকছো৷ তোমাকে দেখেও কিন্তু মনে হয়না যে তুমি উচ্চবিত্ত ফ্যামিলির৷
আমি চা বেচছিলাম না বরং চায়ের দোকানের ছোট্ট ছেলেটার হাত পুড়ে গিয়েছিলো বলে ওকে আমি চা বানাতে সাহায্য করেছিলাম৷তোমরাতো মানুষের বিপদ দেখলে এগিয়ে যাও ওই না আরও দেখা যায় কেউ সাহায্য করতে গেলে তাকে নিয়ে মজা করতেও ছাড়ো না৷ মন মানসিকতা বদলাও৷
আর আমার লেখা পড়ার খরচ আমি কীভাবে বহন করবো সেটা বরং আমার উপরে ছেড়ে দাও৷ আমার বিষয় আমি দেখে নিবো৷ তোমাকে এর মধ্যে নাক না গলালেও চলবে৷ আর আমার কথায় কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দুঃখিত৷

চলবে♥️…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে