সুপ্ত অনুভূতি ২ পর্ব-০৩

0
2536

#সুপ্ত_অনুভূতি🍂♥️
#সিজন_২
#পর্ব_৩
#Writer_Nusrat_Jahan_Sara

অনুর পাশেই একটা মেয়ে এসে বসলো৷ প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও শেষে বলেই ফেললো,,”আচ্ছা এখানে থাকার মতো কোনো ম্যাচ বা হোস্টেল কী পাওয়া যাবে৷

মেয়েটা একবার ভালো করে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,,হুম আছেতো৷ ম্যাচ পাওয়া যাবে৷ এখান থেকে সোজা গিয়ে ডানে গিয়ে বামের যে একটা মুচর আছে সেখানে পাঁচতলা একটা বিল্ডিংয়ের চারতলা আর পাঁচতলা ফ্লোর নিয়ে ম্যাচের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়েছে৷আমিও থাকতাম সেখানে বেশ উন্নত৷

কথাটা শুনে অনু যেনো স্বস্তি পেলো৷
“”আচ্ছা সেখানের ভাড়া কতো নিবে৷??
.
“ওইতো বেশি না মাত্র আড়াই হাজার টাকা৷
.
আড়াই হাজার টাকা শুনে ঘাবড়ে গেলো অনু৷ তার কাছে আছেই মাত্র দশ হাজার টাকা৷ একসময় তার কাছেও আড়াই হাজার টাকা হাতের ময়লা ছিলো৷ কিন্তু এখন আড়াই হাজার টাকাই তার কাছে আড়াই লাখের সমান৷
অনু চুপচাপ ব্যাগ হাতে নিয়ে উঠে গেলো৷
সামনের দোকান থেকে কিছু হাঁড়ি পাতিল,তালা বাসন, সাবান,ডিটারজেন্ট পাউডার,সুই,সুতো,রঙ্গিন পেপার আর কাচি কিনলো৷ আপাতত এই প্রয়োজন জিনিসগুলো হলেই চলবে৷পাশের আরেকটা দোকানে গিয়ে প্রয়োজনীয় বই,খাতা, কলম পেন্সিল নিলো৷
অনু দুই হাতে দুই ব্যাগ নিয়ে হাঁটতে লাগলো৷ মেয়েটার কথামতো ডানে গিয়ে বামের মুচরে গেলো৷ পাঁচতলা বিল্ডিং দেখে অনু একেবারে সিওর এখানেই ভাড়া দেওয়া হয় আরও শিওর হলো নোটিশ বোর্ড দেখে৷
সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখছে৷ অনেক মেয়ে উপর থেকে জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে৷ একটা লোক একেবারে নিচতলা থেকে বেড়িয়ে আসলো৷

“এই মেয়ে কে তুমি?আর তোমার হাতের ব্যাগপত্র কিসের?
.
“আসসালামু আলাইকুম আংকেল৷ আসলে আমি ম্যাচে থাকার জন্য এসেছি৷ শুনলাম এখানে নাকি ম্যাচের ব্যবস্থা করা আছে৷।।
.
“ওয়ালাইকুম আসসালাম৷ হ্যাঁ এখানে আমরা মেয়েদের থাকার জন্য ম্যাচ দিয়েছি৷ কিন্তু তুমি কী লেখা পড়া করো আসলে আমরা ছাত্রীদের ছাড়া ভাড়া দেইনা৷
.
“হ্যাঁ আংকেল আমি কলেজ ছাত্রীই৷
.
“তাহলে প্রবলেম নেই৷ তবে তোমাকে তিন হাজার টাকা করে এডভান্স দিতে হবে প্রথমে৷
.
“কিন্তু আমিতো শুনলাম আড়াই হাজার৷
.
“ঔ যে বললাম এডভান্স৷
.
অনু কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে টাকা বেড় করে লোকটির হাতে দিলো৷ চোখে পানি টলমল করছে যেনো এখুনি গড়িয়ে পরবে৷

লোকটি টাকাটা নিয়ে হেঁসে চলে গেলো৷ অনুও নিজের ব্যাগপত্র নিয়ে পাঁচতলায় চলে গেলো৷ যে রুম ওকে দেওয়া হয়েছে সেখানে আরও চারজন আছে৷ অনু সবকিছু গুছিয়ে রেখে শাওয়ার সেরে নিলো৷ ওর রুমের সবাই তখন লাঞ্চ করছে৷

“ম্যাচেতো নিজের খাবার নিজে রেধেই খেতে হয়৷ খাওয়ার জন্য কিছু আনলাম ওতো না৷ সকালে দুটো পরোটা আর ভাজি খেয়েছিলাম এরপর পেটে একটা দানাপানিও পড়ে নাই বড্ড খিদে পেয়েছে৷ অনু তার ব্যাগ থেকে টাকা বেড় করে দেখলো মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বাকি আছে৷
তিন হাজার টাকা ভার্সিটিতে দিতে হবে৷ দুই হাজার টাকা দিয়ে কিভাবে এতোদিন কাটাবো আমি৷হে আল্লাহ কিসের ভুলের শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো৷
অনু টাকাটা নিয়ে বেড়িয়ে গেলো৷আসার সময় দেখেছিলো একটা ছোটখাটো মুদির দোকান আছে সামনে৷ সে টাকাটা নিয়ে সেখানেই গেলো৷
দুই কেজি আটা আর পাঁচ কেজি চাল কিনলো৷ আধা কেজি আলু,টমেটো আর আধা কেজি পেয়াজ একশো কাঁচা মরিচ,তেল আর যাবতীয় রান্নার মশলা৷
এখানেও পাঁচশ টাকা খরচ হয়ে গেলো৷

অনু ম্যাচে ফিরে একটা আলু আর একটা টমেটো ছোট ছোট করে টুকরো করলো৷আপাতত আজ এসব দিয়েই খাবে সে৷ পেয়াজ আর মরিচও কাটলো৷ কড়াইয়ে তেল ঢেলে তাতে পেয়াজ কুঁচি আর মরিচ দিয়ে একটু পর মশলা,টমেটো আর আলু দিয়ে ভেজে নিলো৷ দুটো রুটি করলো আজ নিজের হাতের খাবার খাবে সে পেট পুরে৷ রুমের অন্যান্য মেয়েরা কেমন দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে অনুর দিকে৷ অনু বিষয়টা দেখেও না দেখার ভান করলো৷

খাটে বসে এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে অনু৷ কাঁধে কারও স্পর্শ পেয়ে পাশে তাকালো সে৷ একটা মেয়ে মুখে হাসি টেনে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷

“হাই আমি রুমি তোমার রুমমেট৷ তুমি এখানে নতুন তাই আমাদের কাউকেই চেননা৷নিজের বাড়ির সবাইকে ফেলে এসেছো এই জন্যই বোধহয় তোমার মন খারাপ৷আমি বলি কী তুমি সবার সাথে পরিচিত হয়ে নাও দেখবে আস্তে আস্তে আমাদেরকে তোমার পরিবারের লোকজন আর এটাকে তোমার নিজের বাড়িই মনে হবে৷
.
“নিজের বাড়ির আপন বলতে কেউ থাকলে তবেই না কাউকে ফেলে আসতাম৷ যারা আছে তারা ওতো খুনি৷ নিজের পরিবারের মানুষকেই বিশ্বাস করতে পারিনা আর অপরিচতরা তো,,(মনে মনে)
.
অনু রুমির দিকে তাকিয়ে হাল্কা হেঁসে আবারো বাইরে তাকিয়ে রইলো৷ রুমিও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুর পাশ থেকে উঠে গেলো৷রুমের অন্যেন্যরা ভাবছে অনুর দেমাগ বেশি তাই কারো সাথে কথা বলেনা সেজন্য অনুর জন্য তাদের মনে এক প্রকার রাগ সৃষ্টি হচ্ছে৷

রাতে🍁
কালারিং পেপার কাটছে বসে বসে আর তাতে পেন্সিল দিয়ে ডিজাইন করে রাখছে৷ কোন ড্রেসের জন্য কোন ধরনের সুতো কোন ধরনের ডিজাইন বেস্ট হবে সেটা মনোযোগ দিয়ে ভাবছে অনু৷একটা লাল পেপার হাতে নিলো তাতে সুন্দর করে ডিজাইন করলো৷ তারপর নীল সুতা দিয়ে খুব নিখুত ভাবে সেলাই করলো৷ রুমি ওর পাশের টেবিলেই পড়তেছিলো অনুর এতো সুন্দর হাতের কাজ আর ডিজাইন দেখে সে অবাক হয়ে গেলো৷

রুমিঃওয়াও কী সুন্দর৷ তুমি কী সুন্দর করে ডিজাইন করো৷ আর কী নিখুত তোমার হাতের কাজ৷ আচ্ছা তুমি কী ফ্যাশন নিয়ে লেখা পড়া করছো৷
.
অনুঃহ্যাঁ৷ ছোটবেলা থেকে এটাই আমার হবি৷ এখন যদি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি তাহলে আলহামদুলিল্লাহ৷
.
জুহীঃফ্যাশন ডিজাইনার হতে গেলে কিন্তু অনেক পয়সার দরকার৷ তুমি কী তা পারবে নাকি৷ ভালো ড্রেস ওতো পরতে পারোনা৷ ভালো জুতো ওতো নেই৷ এত খরচ চালাবে কীভাবে তুমি৷
.
অনুঃআমারটা নাহয় আমিই ভেবে নেবো৷ আপনি বরং নিজের চরকায় তেল দিন৷ পোষাক আষাকই কী আসল ম্যাটার৷ আজ আপনি বলছেন আমি ভালো ড্রেস পরতে পারিনা জুতো পরতে পারিনা অথচ আমার কী বিরাট স্বপ্ন তাইনা৷ তবে একটা কথা কী জানেন ইতিহাসের পাতাটা একটু উল্টে দেখুন তখন দেখতে পারবেন পৃথিবীতে যে এতো বড় বড় ব্যাক্তিবর্গ গন আছে না সবাই কিন্তু ছোট থেকেই বড় হয়েছে৷ আমি গরীব তাই বলে হেলা করবেন না৷ নিজের ভালো আমি বুঝি৷সো চিল আমারটা আমি নিজেই বুঝে নিবো৷
.
অনু কথাগুলো বলে জুহীর থেকে চোখ সরিয়ে নিলো৷ জুহীকে ইচ্ছেমতো কথা তো শুনিয়ে দিলো কিন্তু মনে মনে অনেক কষ্ট পেয়েছে৷ওর জীবনযাপন দেখে একসময় মানুষ আফসোস করতো কিন্তু এখন ওর জীবনযাপন দেখলে মানুষ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসবে৷ থাক সব সময় মানুষের দিন তো একরকম যায়না৷ প্রথমে সুখ করেছি তারপর দুঃখ এরপর নাহয় আবার সুখ করবো৷
🍁
“তোমাকে যে বলেছিলাম অনুর সম্বন্ধে খোঁজ নিতে নিয়েছো তুমি৷
.
“হ্যাঁ স্যার৷ অনুর বাবা কাল মারা গেছেন৷ আর অনুও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে৷ ওর চাচা চাচীকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ও নাকি একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে৷
.
আবির ফোনটা রেখে ছুড়ে মারলো ফ্লোরে৷অনু এরকম করতে পারেনা কিছুতেই না৷ অনু খুব আত্মসম্মান বোধ মেয়ে,ও কোনো ছেলের সাথে পালিয়ে যেতেই পারেনা৷ অনুর বাবা মারা গেছে অথচ অনু ওর বাবার জন্য শুক পালন না করে নিজের সুখের জন্য অন্যের হাত ধরে নিজের বাড়ি ছেড়ে কিছুতেই পালিয়ে যেতে পারেনা৷ এটা ওর সংস্কার নয়,শিক্ষা নয় বিশ্বাস করিনা আমি এসব৷ অনুকে নিয়ে খুব বড় চক্রান্ত করা হচ্ছে৷আমি আর লেইট করবো না খুব শীগ্রই যাচ্ছি বাংলাদেশে৷
🍁
অনু নিজের বাবার ছবির ফ্রেম হাতে নিয়ে বসে আছে আর কাঁদছে৷

ঝুমাঃ”বয়ফ্রেন্ড বোধহয় সেই লেভেলের ছ্যাকা দিসে দেখ বেচারার ছবি বুকে নিয়ে কেমন কাঁদছে৷
.
রিয়াঃঠিক বলেছিস৷
.
রুমমেট ঝুমা আর রিয়ার মুখে কথাটা শুনে রাগ উঠে গেলো অনুর৷
.
“সব সময় নিজেদের মতো মানুষকে ভাবেন কেনো হে৷ আমি আগেও বলেছি আর এখনও বলছি সব সময় নিজেদের নিচ মন-মানসিকতার পরিচয় দেওয়াটা কী খুব জরুরী৷ আপনারা বোধ হয় নিজেদের বয়ফ্রেন্ডকে মিস করে কেঁদেকেটে রাত পার করেন৷ কিন্তু আমার কাছে সময়ের অনেক মুল্য বয়ফ্রেন্ডের জন্য কেঁদে টাইম ওয়েস্ট করার ওতো টাইম নেই আমার কাছে৷

অনু ছবিটা হাতে নিয়ে সবাইকে দেখালো৷
.
“দেখতে পাচ্ছেন, এই দেখুন এই ফ্রেমের মধ্যে যে লোকটা আছে উনি আমার বাবা৷ আমার বাবা কালই মারা গেছেন৷ বাবাকে খুব মিস করছিলাম তাই বাবার ছবিটা নিয়ে বসেছিলাম কিন্তু আপনারা আমার বাবাকে বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে দিলেন৷ আপনাদের এমন কথা একজন মানুষকে কতোটা কষ্ট দিতে পারে তা আপনারা বুঝতে পারবেননা৷ তাই আপনাদের মন-মানসিকতা চেঞ্জ করুন৷ভেবে চিন্তে কথা বলুন৷ আমি ওতো মানুষ নাকি৷

চলবে♥️

[ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন৷ গল্পটা নিয়ে অনেকেরই সমস্যা হচ্ছে৷ আর তাদের একটাই সমস্যা অনুর জীবনে এতো কষ্ট কেনো৷ মানুষ যত জীবন বেঁচে যায় তত জীবন শুধু সুখি আর দুঃখি ভাবেই কাটায় না৷ সবার জীবনে একবার হলেও সুখ দুঃখ আসে৷ অনু বোকা সে তাদের কথা মতো কেনো বাড়ি ছেড়ে চলে এলো এটাও সমস্যা৷ যে জায়গায় একজন ভাই আরেক ভাইকে খুন করে ফেলতে পারে সে জায়গায় তো অনু কোন ছা৷ যদি অনু বাড়িতে থাকতোও তাহলে প্রত্যেক দিন সে অমানুষদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে এক সময় ঝরে পরতো৷অনেকে বলছে অনু কেনো আইনের আশ্রয় নিলোনা৷ নিবে কী করে ওর চাচাতো প্রমানই রাখেনি৷ এই গল্পটা বাস্তবতা রিলেটেড৷ আপনারা ভেবে দেখেনতো অনুর সাথে যা হয়েছে সেটা যদি আপনার সাথে হতো তাহলে কী আপনি এখন যেভাবে মন্তব্য করে জ্ঞান দিচ্ছেন সেভাবে কী বাস্তবে করতে পারতেন৷ না পারতেননা কারন বাস্তবতা অতটাও সহজ নয়৷ আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন৷ আর গঠনমূলক মন্তব্য করবেনা৷ ধন্যবাদ🙏]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে