সাদা মেঘের আকাশ পর্ব-০২

0
868

#সাদা_মেঘের_আকাশ
(২)
লেখক: হানিফ আহমেদ

তুমি ফ্লোরে থাকা পুরুষটির লা’শ দেখেছিলে?
নাওশিন চোখ বন্ধ করে বিছানায় বসেছিল৷ মিফতা মাহবুবের প্রশ্নটি শুনে চোখ মেলে তাকায় নাওশিন, ছোট্ট করে শুধু বলল।
না।
মিফতা দীর্ঘশ্বাস নেয়। তার চোখে জল টলমল করছে।
নাওশিন চুপচাপ বসে আছে। অনেক প্রশ্নই তো করতে ইচ্ছে করছে তার, কিন্তু খুব ভয় পাচ্ছে প্রশ্নগুলো করতে। তবুও সে প্রশ্ন করল,
আপনারা ওই চারজনকে মে’রেছেন?
নাওশিনের প্রশ্নে মিফতা জল ভরা চোখে শুধুই হাসলো।
মিফতা নাওশিনের পাশে বসল। নাওশিন এবার বিছানার একবারে শেষ মাথায় চলে যায়। ভয়ে কাঁপছে সে। নাওশিনকে এভাবে ভয় পেতে দেখে মিফতা উঠে দাঁড়ায়। তার বুঝতে অসুবিধা হয় নি, তার বিছানায় বসার জন্যই মেয়েটা খুব ভয় পেয়েছে।
পারুল, এই পারুল এদিকে আসো।
মিফতার ডাক শুনে একটি মেয়ে রুমে ঢুকে। নাওশিন মেয়েটিকে সকালেই দেখেছে, এখন নাম জানতে পারল। পারুল, অনেক সুন্দর নাম।
হুম বলো।
মিফতা চোখের পানি মুছে বলল,
নাওশিনকে কাপড় দাও। ওর গোসল করা প্রয়োজন এখন।
মিফতা কথাটি বলে মুহূর্তেই রুম ত্যাগ করে।

নাওশিন দেখতে পায় পারুলের চোখেও পানি৷
নাওশিনকে খুব ভাবাচ্ছে। সে এখন একটি রহস্যে ভরা বাড়ির ভিতরে আছে। একের পর এক প্রশ্ন তার মনের ঘরে এসে জমা হচ্ছেই।
আপনার চোখে পানি কি জন্য?
নাওশিনের প্রশ্নে পারুল মাথা নাড়িয়ে বুঝাতে চাইলো তার চোখে পানি নেই। কিন্তু সে ঠিকই দেখেছে চোখের কোণে পানি জমে আছে পারুলের।
এই নাও কাপড়।
কাপড় হাতে নিয়ে এক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পারুল। সে নাওশিনকে এক অন্যরকম দৃষ্টিতে দেখেই যাচ্ছে। এই দিকে যে নাওশিন কাপড় নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছে, সেই দিকে কোনো খেয়াল নেই তার। নাওশিন হাতজোড়া থেকে কাপড়গুলো নিয়ে ‘আপা’ শব্দটি দুইবার উচ্চারণ করল। কিন্তু পারুল তাকিয়েই আছে।
পারুল নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে নেয়৷

কষ্ট লুকিয়ে কীভাবে এতো স্বাভাবিক থাকো নাওশিন?

এমন প্রশ্নে আবারও অবাক হয় নাওশিন। একের পর এক অবাক হয়েই যাচ্ছে সে, তার সাথে এসব কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছে না সে। তবে নাওশিন এবার এই কথার উত্তর দিলো।

আপনি যেভাবে চোখের পানি আড়াল করে মাথা নাড়িয়ে চোখে পানি নেই বলে দাবি করতে পেরেছেন। অথচ আমি আপনার এই মায়াবী চোখে স্পর্শ পানি দেখতে পেয়েছিলাম।
আমিও না হয় লক্ষকোটি কষ্ট বুকে নিয়ে স্বাভাবিক থাকার নাটক করি একটু।
নাওশিন কথাগুলো বলে একটু সময় নীরব থাকে। আবারও নাওশিন বলতে শুরু করে,
একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন আপা?
পারুল ইশারায় ‘হ্যাঁ’ বলল।
আপনারা সবাই আমাকে কীভাবে চিনেন?
নাওশিনের এমন প্রশ্নে পারুল চুপ করে আছে। তার যেন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।
নাওশিন অপেক্ষা করে আবারও বলল,
বলুন!
পারুল শুধু বলল,
গোসলটা করে নাও।
কথাটি বলে পারুল রুম ত্যাক করে। নাওশিন এবার আর অবাক হয় নি। ঘর থেকে পালানোর পর থেকে তো অবাক হয়েই যাচ্ছে।
এই যে ওই রহস্যময় বাসা থেকে এই বাসায় এসেছে তারপর থেকে এখানের সবাইকে দেখে একটু একটু করে অবাক হচ্ছে সে। তার এখন অবাক হওয়ার একটি ছোট্ট আকাশ আছে, ওই আকাশে অবাক হওয়ার হাজারো তারার মেলা।
নাওশিন ক্লান্ত শরীর নিয়ে গোসল করার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে।

সাজেদা বেগমের সকালের ঘুম ভেঙেছিল স্বামী আনিছুর রহমান এর চিৎকার চেচামেচিতে। কারণ জানতে চাইলে আনিছুর রহমান চিৎকার করে বলেছিলেন,
তোমার মেয়ে নাওশিন পালিয়েছে।
স্বামীর মুখে এমন বাক্য শুনে আর স্বামীর এই কঠিন চেহারা দেখে দৌড়ে মেয়ের রুমে যান। হ্যাঁ নাওশিন সত্যিই পালিয়েছে।
বিছানার ঠিক মধ্য জায়গায় কাগজটি দেখে তা হাতে নেন।
মেয়ের ওমন কষ্টের অনুভূতি গুলো পড়ে একটুও মন খা’রাপ হয় নি। উলটো স্বামীর মতো চেহারায় কঠিন রূপ নিয়ে কেমন বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে উঠলেন,
দেখো লিখেছে,
‘তুমি থেকে আপনি বলার কষ্ট জানেন আম্মা?’
অথচ এর পরেই এই কাগজেই কতোবার তুমি বলে সম্বোধন করল আমায়।
পিছন থেকে ছোট্ট বায়েজিদ বলে উঠলো,
আম্মু তুমি কখনো কাউকে তুমি থেকে আপনি শব্দে ডেকেছিলে? প্রিয় কোনো মানুষকে আপনি ডাকতে চাওয়ার শতো চেষ্টা করা হয় মাত্র। তবুও তুমি শব্দটি চলে আসে বারবার।
আরো কিছু বলতে চেয়েছিল ১৩বছরের বায়েজিদ, কিন্তু আনিছুর রহমানের রাগী চেহারা দেখে ছেলেটি একবারে নীরব হয়ে যায়।
এই মেয়ে যদি মাটির নিচেও লুকাতে চায়, আমি সেখান থেকেও তাকে বের করবো। এতো সাহস কীভাবে হয় ওর? ওর শরীর টু’করো টু’করো না করা পর্যন্ত আমার শান্তি নাই।
স্বামীর এমন গর্জে উঠা কণ্ঠে বলা কথার উপর সাজেদা বেগম বললেন,
শান্ত হও তুমি। বাহির থেকে দরজা বন্ধ হওয়ার পরেও কীভাবে ও পালাতে পারে, কে পালাতে সাহায্য করেছে নাওশিনকে?
ওরা যখন নাওশিন কীভাবে পালিয়েছে সেই সন্দেহের তীরটি বায়েজিদের দিকে নিতে যাচ্ছিল, ঠিক তখনই সাজেদার ফোনে কল আসে। ফোনে কথা বলার পরেই তিনজন কোথায় যেন বের হয়ে যায়।

দুপুর ১২টা, নাওশিন কিছুই খাচ্ছে না। কেন জানি তার গলা দিয়ে আজ খাবার যাচ্ছে না। অথচ তার সামনে বাহারি রকমের খাবার ছিলো। তার ভিতর ঘরটি কান্না করছে। সে-তো পালিয়েছিল একটু ভালো ভাবে বাঁচতে, কিছু মানুষের শাস্তি দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার ভাগ্য তাকে কোথায় নিয়ে আসলো আজ।
সকাল ৯টায় ওরা বের হয়েছিল নাওশিনকে বাসায় রেখে।
মিফতা ছাড়া আর কাউকে এখনো আর দেখতে পায় নি সে। নাওশিন চোখ দু’টো বন্ধ করে কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার শত চেষ্টা করে যাচ্ছে।
ওই চারজনকে কে মে’রেছে? এরা সবাই কী ডা’কাতের দল? তাকেই বা কীভাবে চিনে?
এরকম হাজারো প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিল নাওশিন, তখন পারুল এসে নাওশিনকে ডেকে যায়।

নাওশিন বিশাল ড্রয়িং রুমে এসে সবাইকে আবিষ্কার করল৷ সে যেন কিছু লালচোখের মানুষের ভীড়ে হারিয়ে যাচ্ছে। সবার চোখ কেন লাল? নাওশিন এতো প্রশ্ন আর নিতে পারছে না।

তুমি ওই বাসায় কীভাবে গিয়েছিলে?

নিয়াজ নাবীলের এই প্রশ্নে নাওশিন চুপ থাকে। নিয়াজ সে ওই পাঁচজনের বাহিরের একজন। এই বাসায় এসে নাওশিন তাকে আবিষ্কার করেছিল।
নাওশিনকে চুপ থাকতে দেখে নিয়াজ চিৎকার করে জিজ্ঞেস করল,

কেন খু’ন করেছো ওই চারজন নিরীহ মানুষকে?

নাওশিন কেঁদে দেয়। তার ভিতর ফেটে যাচ্ছে। ১৬বছর বয়সে কি মানুষ খু’ন করা যায়? খু’নীর তকমা যদি এভাবেই লাগতে হতো, তাহলে সে নিজের আপন মানুষদের খু’ন করতো।
নাওশিন ভাবনার সাগরে ভেসে যাচ্ছে। কেউ তাকে কিছু প্রশ্ন করেছে, সেই দিকে তার খেয়াল নেই।

নাওশিন,,,,
নিয়াজ আবারও চিৎকার করল।
নাওশিন সবার দিকে তাকিয়ে আছে। নাওশিন বুঝে নিয়েছে, তাকে চুপ থাকলে চলবে না। তাই বলতে শুরু করে।

ভাইয়া, ১৬বছর বয়সে কেউ কাউকে কখনো মা’রতে পারে না। আমি কাউকে খু’ন করিনি। আমি তো একটু আশ্রয় চেয়েছিলাম। দরজা খোলা দেখেই প্রবেশ করেছিলাম। ভাইয়া আমি দুই বছর ধরে চার দেয়ালে বন্দী হয়ে ছিলাম। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখুন, আমি কীভাবে মানুষ খু’ন করবো? আমি একটু ভালো ভেবে বেঁচে থাকার জন্য পালিয়েছিলাম। আমি একটু স্বাভাবিক জীবনে বাঁচতে চাই ভাইয়া। অ’ত্যাচারের ভারে আমি আজ খুবই ক্লান্ত।

নাওশিন কান্না করছে, দুই চোখে তার নাম না জানা দুটো ঝর্ণা। সমান ধারায় পানি পরে যাচ্ছে তার। সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
একটু ভালো ভাবেই তো বাঁচতে চেয়েছি আমি। মশার র’ক্ত দেখলেই আমি ভয় পাই ভাইয়া, আমি কীভাবে মানুষ খু’ন করবো। আমি আমার মা বাবার আদরের কন্যা ছিলাম। শরীরে মশা যখন র’ক্ত খেয়ে খুব বড় হয়ে যেত, সে মশাকে না মে’রে তাড়িয়ে দিতাম। কারণ আমি র’ক্ত ভয় পাই। বিশ্বাস করুন আমায়।

নিয়াজ এবার নিজের কণ্ঠ শান্ত করল। চোখে আসা পানি মুছে নাওশিনের দিকে একটি পত্রিকা এগিয়ে দিতে চেয়েছিল মাত্র৷ কিন্তু নাওশিন আবারও বলতে শুরু করে,

আমি কাল রাত থেকে ভেবেই যাচ্ছি। আপনারা ওই চারজনকে মে’রেছেন। আপনারা যখন আমাকে আপনাদের সাথে আসতে বলেছিলেন, তখন গাড়িতে সারাটা সময় আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম। তাকালেই যদি আপনারা আমায় মে’রে ফেলেন। তবুও সাহস করে আমি এসেছি। আমি এক সাহসী বাবার সন্তান ছিলাম। বন্দী জীবন আমাকে ভীতু করে দিলেও আমি এখনো সাহসী। ১৬বছরের মেয়ে হলেও আমি নিজেকে ৮০বছরের বয়স্ক নারীর সাথে নিজের তুলনা করতে পারি, কারণ এতো কষ্ট ৮০বছরের মহিলারাও তাদের জীবনে পায় না। আপনারা আমাকে চিনেন, জানিনা কীভাবে চিনেন। এইজন্যই আমি সব প্রশ্ন এক পাশে রেখে আপনাদের সাথে এসেছিলাম। খু’নী তকমা না লাগিয়ে আমাকে মে’রে ফেলুন। এখন বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাও হারিয়ে ফেলেছি আমি।

সবাই চুপ হয়ে আছে। নীরব দর্শকের মতো শুনেই যাচ্ছে। সবার চোখেই পানি। কেউ কোনো কথা বলছে না।
নাওশিন ছোট্ট করে দুইটি বাক্য বলল,
ওই পুরুষ আপনাদের কী হয়?
আমাকে এখানে রেখে আপনারা কোথায় গিয়েছিলেন?
নাওশিন বুঝতে পেরেছে ওরা শুধু নীরব দর্শকের ন্যায় শুনেই যাবে। তাই নিজের বুকে জমে থাকা কথাগুলো চাপা দেওয়ার চেষ্টা করল।

আদিব মাহমুদ এবার নাওশিনের প্রশ্নের উত্তরগুলো দেওয়ার জন্য মুখ খুললো।

ওই পুরুষটি আমাদের বাবা। উনি আমাদের ৭ভাইয়ের পিতা। আমাদের আকাশ। উনি আমাদের মাথার উপরে থাকা বিশাল আকাশ ছিলেন।

কথাটি বলে আদিব নিজের চোখে আসা পানি মুছতে থাকে পরনের সাদা পাঞ্জাবি দিয়ে। পাঞ্জাবিতে এখনো লাল র’ক্ত লেগে আছে। এই র’ক্ত তাদের বাবার। যাকে একটু পূর্বে পুলিশ নিয়ে গিয়েছে।
যেই মানুষটি গাছের ছায়া ছিলো, আজ সেই মানুষটি এই পৃথিবীতে নেই। পুরুষ জাতিকে নাকি চিৎকার করে কান্না করতে মানা। কিন্তু তার খুব ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে।

বাবা শব্দটি শুনে নাওশিন তাকিয়ে আছে ওদের দিকে, সবার চোখের বাঁধ যেন ভেঙে গিয়েছে। নাওশিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। সে একজন দর্শক, শুধুই দর্শক।

কে মে’রেছে উনাদের?
নাওশিন কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে প্রশ্নটি করল,

নিয়াজ নিজের হাতে থাকা পত্রিকাটি নাওশিনের দিকে এগিয়ে দেয়।
নাওশিন পত্রিকাটি হাতে নিয়ে সেটি পড়তে শুরু করে৷ তার শরীরটি জমে যাওয়া শীতল বরফের ন্যায় হয়ে গিয়েছে মূহুর্তেই। হাত দুটো বৃদ্ধদের হাতের ন্যায় কাঁপছে। এমন কিছু সে কল্পনা করেনি কখনো৷ হাত থেকে পত্রিকাটি পড়ে যায়।
দাঁড়িয়ে থাকার শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলেছে নাওশিন। ঠোঁট কামড়িয়ে বা মুখ চেপে কান্না করতে পারলো না সে। চিৎকার করে কেঁদে দেয় নাওশিন। মুখ দিয়ে শুধু একটি কথাই বের হয়।

আমাকে ওই বাসায় নিয়ে যাও। আমি শেষ দেখাটা দেখবো। আমি খু’ন করিনি, আমাকে নিয়ে যাও ওই বাসায়। আমি শেষবারের মতো দে,,

মাটিতে লুটে পড়ে নাওশিন। সাথে সাথেই জ্ঞান হারায় সে।
নাওশিনকে পারুল এবং মিনহা দুজন ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। নাওশিনকে ডাকলেও আর চোখ মেলে তাকায় নি। বন্ধ চোখের কোণে এখনো পানি জমে আছে। পানির ছিটা দিলেও নাওশিন চোখ মেলে তাকায় নি। সবাই নাওশিন বলে চিৎকার করলেও সেই ডাক তার কানে পৌঁছায় নি।
সাইফ নিশ্চিত হয়, হ্যাঁ নাওশিন হারিয়েছে। সাইফ একজন ডক্টর৷
সে সবাইকে শান্ত হতে বলে, একটু পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
নিয়াজ, আদিব, মিফতা, সামিন, রবিন এবং জাহেদ ছয় ছয়টা ভাই রুমের বাহিরে সবাই পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। এক দিকে প্রিয় মানুষটিকে হারানো, অন্যদিকে এই নাওশিনের এই অবস্থা৷ তাদের ভালো থাকাটা যেন কেড়ে নিয়েছে। আজ তাদের কিছু মনে করিয়ে দিচ্ছে এইসব মুহূর্ত গুলো। ওরা কী শুধুই চোখের পানি ফেলবে?
সাত ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আদিব। কষ্ট তো তার বেশি হচ্ছে। সব কিছু ভুলে তো ভালোভাবেই বাঁচতে চেয়েছিল।
নাওশিনের জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায়।
নিয়াজ এবং সাইফ ছাড়া অন্যরা বিবাহিত। এই বিশাল পরিবারে এখন সুখের ছায়া। মাথার উপরের আকাশটি ভেঙে পরেছে তাদের।
কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। নাওশিন কি করছিল সেখানে?

বেশ কিছুক্ষণের পর নাওশিনের জ্ঞান ফিরে।
সাইফ নাওশিনকে ঘুমের ওষুধ জোর করে খাইয়ে দিয়েছে।
এমনিতেই খুব দূর্বল নাওশিন। এতো চাপ নেওয়ার শক্তি নেই নাওশিনের। এমন ওমন কিছু হলে নাওশিনকে বাঁচানো যাবে না।

রাত ৯টা,
নাওশিনের ঘুম ভেঙেছে। আদিবের স্ত্রী মিনহা বসে আছে তার পাশে। মিনহা নাওশিনকে মন ভরে দেখছিল। এই বয়সে মেয়েটা কতোটা কষ্টে জীবন কাটাচ্ছে। নাওশিনকে চোখ খুলতে দেখে জিজ্ঞেস করে মিনহা। কেমন লাগছে এখন?
কিন্তু নাওশিন নীরব হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
এক এক করে সবাই রুমের ভিতর ঢুকে।
আদিব এসে নাওশিনের মাথায় হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে কেমন লাগছে এখন।
কিন্তু নাওশিন কেঁদেই যাচ্ছে।
নাওশিন চোখের পানি মুছে নিজ থেকেই বলতে শুরু করে।

সবাই বিশ্বাস করুন, আমি আমার মামাকে খু’ন করিনি। আমি তো আমার মামাকে ভীষণ ভালোবাসি। কীভাবে পারবো প্রিয় মানুষকে খুন করতে। আমি তো আজ মাত্র পালিয়েছি। আমি মামার বাসাতেও যাই নি। বিশ্বাস করুন সবাই আমাকে। আমার মা আমাকে না পেয়ে আমার উপর মিথ্যে অপবাদ দিয়েছেন। এই পত্রিকায় যা লেখা আছে সব মিথ্যা। আমাকে তো ওই বাসায় পেয়েছিলেন আপনারা। তাহলে কীভাবে আমি খু’ন করবো?

সাইফ বুঝতে পেরেছে, জ্ঞান হারানোর পূর্বে সে পত্রিকায় যা পড়েছিল। তার আংশিক কিছু মনে আছে।
ইশারা করে সবাইকে চুপ থাকতে। কিন্তু জাহেদ বলে উঠলো,

নাওশিন কাল রাতে তুমি ওই ফ্লোরে থাকা পুরুষটিকে ভালোভাবে দেখোনি। ওই পুরুষই তোমার মামা, খালেদ আহমেদ। কাল আমরা অবাক হয়েছিলাম তুমি চিনতে পারোনি আমাদের বাবাকে।
তোমার মামাকে খু’ন তুমি করেছো সেটা তোমার মা বলেছে। তোমার মামি সহ তোমার পিচ্চি দুই মামাতো বোনকে তুমিই খু’ন করেছো। এই কথাগুলো তোমার মা পুলিশকে বলেছে।

জাহেদের কথাগুলো শুনে সাইফ আল্লাহকে ডাকছে। নাওশিন যেন সহ্য করতে পারে। এটাই বারবার মনে মনে বলে যাচ্ছে।
নাওশিন কথাগুলো শুনে মুখ তুলে জাহেদের দিকে তাকায়। পত্রিকায় কি লেখা ছিল, সেটা মুহূর্তে মনে হয়ে যায়।

আমি আমার মামার কাছে যাবো। একটাবারের জন্য আমি আমার মামাকে দেখবো। বিশ্বাস করুন আমার মামাকে আমি খু’ন করিনি।
নাওশিন কথা বলেই যাচ্ছে।
আমি আমার মামার লা’শ সামনে রেখেও চিনতে পারিনি। কতোটা অভাগা আমি। আমাকে আমার মামার কাছে নিয়ে যান৷ আমি এখন কার কাছে যাবো?

সাইফ সবাইকে রুম ত্যাগ করতে বলে। এখানে সবাই থাকলে খা’রাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।
ও একা থাকুক, কান্না করুক। মন হালকা হবে।
সবাই রুম ত্যাগ করে।
নাওশিন কান্না করছে। তার ভাগ্যটা এমন কেন?
এখান থেকে তাকে পালাতে হবে। নয়তো এরা পুলিশে দিয়ে দিবে তাকে।
জন্মদাত্রী মা হয়ে কীভাবে এতো বড় অপবাদ দিতে পারলো ওই মহিলা।
নাওশিন আস্তে করে বলল, আম্মা ডাকতেও ঘৃ’ণা লাগছে এখন।
কেঁদে যাচ্ছে একা একা। কষ্টের সমাপ্তি বুঝেছিল, কিন্তু তা এখন দিগুণ।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে