শেষ পরিণতি পর্ব-০৮

0
890

#শেষ_পরিণতি – ৮
__________________
দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ডাইনিং রুমের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার।
আমি দেখলাম, রাজন এবং রাজনের বাবা, সৎমা ও সাদেক বসে আছেন সোফায়।
হঠাৎ এভাবে স্ব-পরিবারে রাজনকে আমাদের বাসায় আসার কোনো কারণ পেলাম না।
আমি একধ্যানে তাকিয়ে আছি রাজনের দিকে।
সাদা শার্টে অনেক মানিয়েছে ওকে।
রাজনের দিকে তাকিয়ে থাকার এক পর্যায়ে রাজনেরও চোখ পড়ে আমার দিকে।
দু’জনের চোখাচোখি হতেই রাজন আমাকে চোখ মেরে দেয়।
আমি এমন অপ্রস্তুতকর পরিস্থিতির জন্য রেডি ছিলাম না। আমি বেশ লজ্জা পেয়ে দরজার কাছ থেকে সরে এলাম।
.
.
.
.
.
.

এর পর অতিবাহিত হয় ৬ টি মাস।
————-
.
.
.
অন্ধকার বদ্ধ একটা রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় পরে আছে নীলিমা।
মুখে শক্ত করে স্কচটেপ লাগানো। পানির পিপাসায়
গলা শুকিয়ে এসেছে তার।
কিন্তু পানি পান করায় সে অপারগ।
গলা ফাটিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে চলেছে , কিন্তু তার সেই চিৎকার নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ। স্কচটেপ ভেদ করে গোঙানির শব্দ ছাড়া আর কিছুই বাইরে আসছে না। এ অবস্থায় নীলিমা ভাবে, “এখান থেকে আজ পালানোর চেষ্টা না করাটাই বোধহয় ভালো ছিলো,অন্তত এভাবে বাঁধা অবস্থায় তো আর পরে থাকতে হতো না”
কিছু মানুষের পায়ের শব্দে নীলিমার বুক কেঁপে ওঠে।
হায়েনার দল আবারও এসেছে। কিন্তু একটা দিক তো ভালোই হলো, অন্তত একটু পানি তো পাওয়া যাবে।
.
.

____________________
রাজন আজ খুব খুশি।
তুবার ফোন পাওয়ার পর থেকে খুশিতে যেন তার মাটিতে পা পড়ছে না।
কয়েক’শ লাল ও গোলাপি রঙের বেলুন দিয়ে
পুরো বাসা সাজিয়েছে সে। রাজনের বাসায় ঢোকার মেইন দরজা থেকে শুরু করে তাদের বেড রুম পর্যন্ত গোলাপের পাপড়ি বিছিয়ে পথ বানিয়েছে।
কাজের লোকদেরকে রাজন বলে দেয়, তুবার রুমটা পুতুল দিয়ে সুন্দর করে সাজাতে। রাজন
আজ তুবার পছন্দের সব খাবার নিজ হাতে রান্না করবে।
রাজন রান্নার কাজে পুরোই অষ্টরম্ভা।
কিন্তু আজ তুবার জন্য স্পেশাল কিছু করতে তার খুব ইচ্ছে করছে।
ইউটিউব দেখে একটা ভ্যানিলা কেক বানিয়ে ওভেনে ঢুকিয়ে দেয়। অন্যান্য আইটেমের রেসিপি একটা খাতায় টুকে নেয়।
রান্নার জন্য চুলায় প্যান বসাতেই কলিংবেল বেজে ওঠে।
কলিংবেলের শব্দ শুনে রাজনের চেহারা চুপসে যায়।
একটা কেক বানাতেই অনেক সময় লেগে গেছে,বাকি কোনো রান্নাই তো হলোনা।
তবে যাই হোক কেকটা হয়েছে এতেই শান্তি।
ওভেন থেকে কেক বের করে রাজনের মনটা খারাপ হয়ে যায়। যেমন কেক বসিয়েছিলো ঠিক তেমনই আছে। একটুও ফোলেনি।
নতুন করে কেক বানানোর মতো সময়ও নেই। অগত্যা রাজন দরজা না খুলে কেকটা বের করে একটা ট্রেতে সাজিয়ে নিজেদের রুমে গিয়ে রাখে।
.
.__________________

.
.
.
প্রায় পনেরো মিনিট ধরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি আমি। ভেতর থেকে দরজা খোলার নামই নেই।
রাজনের ফোনে কয়েকবার কল দিয়েছি কিন্তু রিসিভ করেনি ও।
এবার আমি ও আমার শ্বাশুড়ী মা বেশ বিরক্ত হয়ে গেলাম।
আমি বিরক্ত হয়ে আবারও কল দেই রাজনকে, ফোনে রিং হওয়ার মাঝেই গেট খুলে দেয় রাজন।
আমি দরজা দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই।
এতো সুন্দর করে সাজানো বাসা দেখে আমার রাগ ও বিরক্তি নিমিষেই মিলিয়ে যায়।
দরজা দিয়ে ঢোকার সময় উপর থেকে অনেকগুলো গোলাপের পাপড়ি এসে পরে আমার উপর।
আমি দরজা দিয়ে প্রবেশ করার পরে রাজন এগিয়ে এসে আমার পেটের উপর কান পেতে বলে,
– কংগ্রাচুলেশনস আমার ছোট্ট রাজকন্যা।
তোমার প্রাসাদে তোমাকে স্বাগতম।
রাজনের এমন পাগলামো দেখে আমি হেসে উঠলাম। পাশ থেকে মা বললেন,
-রাজকন্যাই যে হবে সেটা তুই বুঝলি কিভাবে রাজন?
-আমার মন বলছে মা আমার রাজকন্যাই হবে।
তুবা শোনো, রাজকন্যাকে আমি গুড্ডি বলে ডাকবো ঠিক আছে?
আমি বললাম,
-মাত্র আজই তো জানলে তুমি বাবা হতে চলেছো, এর মধ্যে বেবিকে কি বলে ডাকবে সেটাও ঠিক করে ফেলেছো? বড্ড পাগল তুমি।
আমার কথা ইগনোর করে রাজন আমাকে কোলে তুলে নেয়।
কোলে করে আমাদের রুমে নিয়ে আসে।
আনার সময় শুরু হয়ে যায় তার হাজারটা উপদেশ।
“আজ থেকে কোনো কাজে হাত দেবে না তুমি।
আমাদের রুম দোতলা থেকে নিচ তলায় শিফট করেছি। চলাচল করবে খুব সাবধানে। যখন যেটা প্রয়োজন হবে আমাকে বলবে, নিজ থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু করতে যাবে না। ”
– বাসায় এসব আয়োজন করবে বলে যখন হসপিটাল থেকে তোমাকে খবরটা দিয়েছিলাম তুমি বলেছিলে, আমি যেন বাবার বাসা থেকে ঘুরে আসি, আর সুখবরটা দিয়ে আসি তাই না?
রাজন একটু মুচকি হেঁসে বলে,
-সকালে যখন মা কল দিয়ে বললো যে তুমি মাথা ঘুরে পড়ে গেছো, জ্ঞান ফিরছে না তাই হসপিটালে নিয়ে গেছে, তখন মনে হচ্ছিল আমার পুরো পৃথিবী থেমে গেছে। সব কাজ বাদদিয়ে তখনই রওনা হয়েছিলাম হসপিটালের উদ্দেশ্যে। কিন্তু পথিমধ্যে তুমি কল করে এই সুসংবাদটা দাও।
তখন হসপিটালে না গিয়ে শপ থেকে সবকিছু কিনে বাসায় চলে আসি।
আমার রাজকন্যাকে স্বাগত জানানোর জন্য একটা সারপ্রাইজ প্ল্যান তো করতেই হতো।
.
.
রুমে ঢুকে আমি আরও বড় ধাক্কা খাই।
পুরো রুম পুতুল দিয়ে সাজানো,
ওয়ালে সুন্দর সুন্দর বাচ্চাদের ছবি টানানো।
টেবিলের উপর পিঠার মতো কিছু একটা সাজানো।
আমি টেবিলের দিকে এগিয়ে বললাম,
-পিঠা কে বানালো? কি পিঠা এটা?
রাজন আমতা আমতা করে বললো,
-ইয়ে মানে, আসলে এটা পিঠা না, এটা কেক।
ফার্স্ট টাইম বানিয়েছি তো তাই।
ওর বানানো কেক দেখে আমার অনেক হাসি পেলো,কিন্তু হাসিটা চাপিয়ে বললাম।
-সমস্যা নেই চলবে।
আমরা একসাথে কেকটা কাটলাম।
রাজন আমাকে কেক খাইয়ে দিলো।
আমি রাজনের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখের কোণায় পানি চকচক করছে।
আমি কোনো প্রশ্ন করার আগেই সে আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে বললো,
-প্রতিটি মেয়ের তার বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকে। সবার মতো তোমারও বিয়ে নিয়ে মনে অনেক স্বপ্ন সাজানো ছিলো আমি জানি।
কিন্তু সেগুলোর কিছুই পূরণ করতে পারিনি।
দেখতে গিয়েই আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। কি আর করার ছিলো বলো!
তখনের সিচুয়েশনই এমন ছিলো। ফাহিমের বন্ধুরা ওঁৎ পেতে ছিলো আমাদের ক্ষতি করার জন্য।
তাইতো তাড়াতাড়ি করে গোপনে বিয়েটা সেড়ে ফেলতে হয়েছে।
সেদিন আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, এরপর থেকে প্রতিটা খুশির মুহুর্ত আমি তোমার কাছে স্পেশাল করে তুলবো।
আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
-তুমি কথা রেখেছো রাজন। আমাকে কখনো অখুশি রাখোনি,তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার কাছে এমনিতেই স্পেশাল। আলাদাভাবে সেলিব্রেট পকরার কোনো দরকার নেই।
আমাদের জীবনে এখন শুধু আনন্দ আর আনন্দ, এরমাঝে আগের কথা মনে করে মন খারাপ করার কোনো কারণ আছে বলো? আমার বিয়ে বা ফাহিমের বন্ধুদের করা কোনো ঘটনাতেই এখন আমার মন খারাপ হয় না।
তাই আজ আমাকে একটা কথা দাও, আজ থেকে পেছনের কোনো কথা মনে করে মন খারাপ করবে না! সব চিন্তা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যত জুড়ে হবে।
রাজন “কথা দিলাম” বলে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
.
.
.
এদিকে
টানা দুই ঘন্টা ধরে নীলিমার উপর পাশবিক নির্যাতন করে পশুরা ক্ষান্ত হয়। প্রতিদিনের মতো আজও রক্তে ভেসে যায় বিছানা।
শুধু আজ না, গত দুই সপ্তাহ ধরে নীলিমা এই অত্যাচারের স্বীকার।
প্রতিদিন কয়েকজনের যৌন ক্ষুধা মেটানোর যন্ত্র হিসেবে নীলিমা বেঁচে আছে এখন।
এই দুই সপ্তাহ ধরে, প্রতিদিন গ্যাং রেপ করা হচ্ছে তাকে।
শুধু যে রেপ করেই তারা ক্ষ্যান্ত হয় এমন না, তাদের চাহিদা মেটানো শেষে, নীলিমার সাথে করা হয় অমানবিক যৌন নির্যাতন।
নীলিমার সেই আকর্ষণীয় সুন্দর শরীরের বিভিন্ন স্থানে খামচির গভীর ক্ষত অগণিত।
নীলিমাকে রেপ করার আগে পশুগুলো একত্রে বসে মদ্যপান করে।
তারপর নেশাগ্রস্ত হয়ে নীলিমার সাথে করে এমন কাজ। রেপ করার সময় হাত পা বেঁধে নেয়।
বেল্ট দিয়ে জোরে জোরে আঘাত করে, এমনকি নীলিমার নিম্নাঙ্গে মদের বোতল ঢুকিয়ে ওরা পৈচাশিক আনন্দে মেতে ওঠে।
দিনে দু’বার খাবার দেওয়া হয় নীলিমাকে।
ওয়াশরুমের প্রয়োজন পড়লেও ওদের অনুমতি নিয়ে যেতে হয়।
এমন জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবসময় প্রার্থনা করে নীলিমা। কিন্তু এই কালো অন্ধকারের জাল ভেদ করে বের হওয়াটা যে তার জন্য অসম্ভব।
তবুও সারাক্ষণ চেষ্টা চালিয়ে যায় নিজেকে মুক্ত করার। এ পর্যন্ত প্রতিবারই চেষ্টায় বিফল হয়েছে সে।
বরং ধরা পড়লে তাকে সহ্য করতে হয়েছে অসহ্য মাত্রার অত্যাচার।
এ জীবন থেকে বের হওয়ার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছে সে।
স্কুল জীবনের কথা মনে করে ডুকরে কেঁদে ওঠে নীলিমা। কতো সুন্দর ছিলো সেই জীবন।
মায়ের শাসন, বাবার ভালোবাসায় জীবনটা কতো রঙ্গিন ছিলো। কিন্তু এখন!
জীবনে ঘন কালো অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
জীবনের এতো বড় ভুল সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস করতে থাকে প্রতিনিয়ত।
দরজা খোলার শব্দে নীলিমা নড়েচড়ে বসে।
প্লেটে করে খাবার নিয়ে একটা লোক প্রবেশ করে ভেতরে।
খাবার দেখে নীলিমার ক্ষুধা লেগে গেলেও অবাক হয় আজ একজনকে আসতে দেখে।
এ পর্যন্ত রুমে যখনই কেউ এসেছে দলবদ্ধ হয়ে এসেছে। আজ একজনকে আসতে দেখে নীলিমার মাথায় বুদ্ধি খেলে যায়। মনে মনে নীলিমা ভাবে, এটাই সুবর্ণ সুযোগ।
এই সুযোগ কাজে না লাগাতে পারলে কখনোই এখান থেকে বের হওয়ার সম্ভব হবে না।
নীলিমা বাথরুমে যাওয়ার নাম করে বাথরুমের সামনে ইচ্ছে করেই মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার ভাণ করে।
( চলবে)
– Tuba Binte Rauf

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে