শূণ্যতায় পূর্ণতা পর্ব -০৬

0
1330

#শূণ্যতায় পূর্ণতা
#নুরুন্নাহার তিথি
#পর্ব-৬

কাঙ্খিত সময় ঘনিয়ে এসেছে। দুই পক্ষেরই এখন পরিকল্পনার বাস্তবায়নের উত্তেজনা। কিন্তু গুপ্ত-চরের দিক দিয়ে আগানো কেউ। সেই গুপ্ত-চর হচ্ছে রুহুল আমিন। অদ্রি নিজেই তাকে ঠিক করেছে। কাউকে যথাযোগ্য শা/স্তি দিতে আর মনোবল দুর্বল করতে যা সে আশাও করেনি।
গায়ে হুলুদের রাতে অদ্রি বিভানের ব্যাগ প্যাক করছে আর বিভান গালে হাত দিয়ে সব দেখছে। বিয়েটা হবে নিকুঞ্জের কাছাকাছি একটা ভেন্যুতে। বিভানের কাল সকাল ১০টায় ফ্লাইট ফ্রাঙ্কফুর্টের উদ্দেশ্যে ফ্লাই করবে। এয়ারপোর্ট কাছেই বিয়ের ভেন্যু। একটু আগেই বিভান জানতে পেরেছে অদ্রির ঠিক করা মেয়ের সাথে অদ্রির ফ্রেন্ড রিয়ানের বিয়ে হচ্ছে। এমনকি রিয়ান ও রিয়ানের হবু স্ত্রী নিহার মায়েরা বান্ধুবী। অদ্রি রিয়ানের সাথে ও রিয়ানের বাবা-মা ও নিহার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে সব ঠিক করেছে। রিয়ান ও নিহার আনুষ্ঠানিক বিয়ে আরো দুইমাস পরে হবে তাই অতিথি আপ্যায়নের ঝামেলা নেই।

অদ্রির গোছ-গাছ শেষ। তখন রিয়ান ফোন করে। বিভান ইশারায় বলে ফোন যেনো ব্লুটুথে কানেক্ট করে শোনে। কারন ওরা নিজেদের মধ্যে ইমপোর্টেন্ট কথাও বলছে মেসেজের মাধ্যমে। রিমুরা রুহুল আমিনকে সব কিছু তো বলেনি! যদি ওরাও অদ্রির মতো মাইক্রোচিপ সেটিংস করে! অদ্রি ফোন রিসিভ করার পর বলে,

–হ্যাঁ বল!

–দোস্ত কাল আমার বউ আমার হবে তো?

–হুম।

–সত্যি করে বল প্লিজ! তুই তো জানিস আমি নিহাকে ছোট থেকে পছন্দ করি। এখন তোর জন্য আমি এই রিস্ক নিচ্ছি। প্লিজ কোনো প্রবলেম যেনো না হয়।

–আচ্ছা।

–এই তুই এভাবে কথা বলছিস কেনো? তোর পাশে কি কেউ আছে?

–তোর জিজু আছে।

–জিজুকে কিছু বলিস নি এখনো? হায় আল্লাহ্! এখন কি হবে? কাল সকালে তার ফ্লাইট আর তুই এখনো বলিস নি? বলি তুই কি তাকে সে’ন্স’লেস করে তারপর বিমানে তুলবি?

এতোক্ষন অদ্রি রিয়ানের কথার জবাব দিচ্ছিলো আর বিভান এক কানে ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে শুনছিল। এবার বিভান জবাব দেয়।
–জানি আমি। চিন্তা করো না।

রিয়ান হঠাৎ ভয় পেয়ে বলে,
–ফোন কি লাউডে নাকি? তাড়াতাড়ি লাউড অফ করেন। আমি আমার বউ নিয়ে আর রিস্ক নিতে চাইনা।

বিভানের হাসি পেয়ে যায় এই ভেবে, তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন বউয়ের সহোযোগিতায় যারা আছে সবাই ভীতু! একমাত্র মিস্টার রুহুল আমিন সে শান্ত মাইন্ডের। বিভান আর কিছু বলে না। অদ্রি বলে,

–চিন্তা করিস না। এভরিথিং উইল বি মেইনটেইন।

কল কাটার পর বিভান অদ্রিকে মেসেজ করে,
–সিরিয়াসলি! কালকে রিয়ান আমার যায়গায় বসবে? এর থেকে ভালো হতো প্রফেশনাল এক্টর ভা’ড়া করতে। রিস্ক কম থাকতো না। মায়ের সামনে পড়লেই তো সে ভয় পাবে। আর মা ও ভাবি মুখ দেখতে আসলে তো সব শেষ!

অদ্রি হাই তুলে মেসেজ করে,
–মা কে ম্যানেজ হয়ে যাবে আর ভাবিকে তো এসবে থাকতেই দিবো না। উনি যা যা করেছে আমি সেগুলোর কিছুটা করবো। তারপর যে যার যার জায়গায়।

বিভান মেসেজ করে,
–ভাবি কি করেছে? উনি মা কে উস্কেছে বিয়ের জন্য এটা জানি। আর কিছু করেছে?

অদ্রি মেসেজ না করে বিভানের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোনে মলিন হাসি। তারপর মুখেই বলে,
–সবটা জানলে তোমার রিয়াকশন শান্ত থাকতো না। বাদ দেও। পরে জানবে নাহয়।

অদ্রি রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সে ভাবতে থাকে কি করবে। রিহাকে আসতে মানা করেছে আজকে কারন এতে রিহার প্রবলেম হতে পারে। অদ্রি রুহুল আমিনকে মেসেজ করে,

“ভাই, আপনি রিমু ভাবিকে বলেন আপনি রিসোর্টের বাহিরে একটা বক্স রেখেছেন। যেটাতে কিছু ইম্পরট্যান্ট জিনিস আছে। সে যেনো নিয়ে যায়।”

রুহুল আমিন তৎক্ষণাৎ রিপ্লে করেনি। প্রায় আধঘন্টা পর রিপ্লে করে,
“কি জিনিস? আর আমি তো কিছু পাঠাইনি। মিথ্যে বললে ধ’রা খে’য়ে যাবো তো!”

অদ্রি এতোক্ষনে বক্স রেডি করে ফেলেছে। সে রুহুল আমিনের মেসেজ দেখে মেসেজ করে,
“তিনটা ভারী লেহেঙ্গা। তিনটার কারন সেখান থেকে একটা রিমু আমাকে দিবে আর বাকি দুইটা তাদের। আর কোনটা কার জন্য তা নাম লেখা আছে। কিন্তু পরে আপনি কালকে কাজ হবার পর বলবেন ভুল নামকরন হয়েছে। আর বক্সটা যেনো রিমুই নেয়। মানে আপনি এমন ভাবে বলবেন যে রিমু ছাড়া শিমু নিলে মানুষ সন্দেহ করতে পারে।”

রুহুল আমিন কথামতো তাই করে। রিমু নিজে কিছুক্ষন পর বক্স নিতে আসে। বক্সটা তুলনামূলক ভারী। রুহুল আমিন রিমুকে বলেছে বক্সটা যেনো কারো হাতে না দেয়। রিমু বক্স নিয়ে রিসোর্টের দুই তালায় যাবে। সেখানে রিমুর রুম, শিমুর রুম ও অদ্রির রুম আর দুয়েকজন গেস্টের রুম। রিমু দোতালার মাঝ সিঁড়ির উপরে কস্ট করে উঠার পর হঠাৎ পিচ্ছিল কিছুতে পিঁছলিয়ে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পরে যায় নিচে। স্যান্ডেলের তলা একদম মশ্রিন ছিল। রিমু পিঁছলিয়ে পড়ার পর পরই বক্সটাও পরে যাচ্ছিলো। অদ্রি নিচ থেকে দেখে দৌড়ে এসে প্রথমে বক্সটা ধরে কিন্তু রিমুকে ধরে না! বক্সটাকে অদ্রি নিচে পড়ার দুই সিঁড়ি আগেই ধরেছে। রিমু নিচে পরে পা ও কোমড় ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে। অদ্রি বক্সটা রেখে তার কাছে গিয়ে বসে। এদিকে রিমুর চিৎকারে নিচে ডেকোরেশনের কাজ দেখছিল ইভান ছুটে আসে আর বিভান উপর থেকে নেমে আসতে নিলে অদ্রি বিভানের দিকে চোখের ইশারায় মানা করে। শিমুও দৌড়ে আসতে নিয়ে ওই সিঁড়িতে পিঁছলিয়ে পরতে নিয়েও রেলিং ধরে ফেলে তবে পা খানিকটা মচকে যায়। দুই বোন দুই জায়গায় কাত’রাচ্ছে।

ইভান চিৎকার করে স্টাফদের ডাকে। স্টাফদের উপর চিৎকার করার আগে অদ্রি বলে,

–ভাইয়া, দোষ ওদের না। দোষটা আমার। বিভানের হলুদের জন্য গায়ে তেল লাগাতে চেয়েছিল তাই আমি বড় বাটিতে করে তেল নিতে গিয়ে বাটিটা পরে গেছিলো। আমি একজনকে বলেছিলাম যেনো এখন কাউকে আসতে না দেয়। কিছুক্ষন পর আমিই ক্লিন করতাম। আপনি ওই যে সাইডের ওই স্টাফকে জিজ্ঞাসা করেন। আমি আবারো নিচেই গিয়েছিলাম কিছু আনতে। এমনিতে তো সিঁড়ি গুলো সাবান জল দিয়ে ধোঁয়া। তাই আরেকটা বাটি আনতে গিয়েছিলাম তেল গুলো তুলে বাকিটা ওই স্টাফ ক্লিন করতো।

ইভান ওই স্টাফের দিকে তাকালে সে সায় দেয় আর ভয়ে ভয়ে বলে,
–স্যার আমি রিমু মেমকে মানা করেছিলাম দূর থেকে যেনো উপরে না যায়। আর আমি তখন হাতে করে বালতি আনছিলাম।

ইভান রিমুর দিকে তাকালে সে ব্যাথায় থতমত খেয়ে বলে,
–উম না মানে হ্যাঁ। সে বলেছিল। কিন্তু অদ্রি নাকি আমাকে যেতে মানা করেছে সেটা বলেছে। তাই গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু অদ্রির নাম না বলে তেলের কথা বললেই হতো। আমি তো এই বক্সটা নিয়ে যাচ্ছিলাম। আর অদ্রি একটু দেখে কাজ করতে পারো না? এখন বিভানের গায়ে তেল দেওয়ারই বা কি দরকার? যতসব আজব কাজ!

অদ্রি ব্যাথাতুর কন্ঠে বলে,
–বিশ্বাস করেন ভাবি এটা এক মিনিটের মধ্যে হয়েছে। আমি বুঝতে পারিনি আপনি আসবেন তখন। স্যরি ফর দেট। আর বিভানকে কি মাখাবো আর কি না সেটা আমার ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আপনার ও ইভান ভাইয়ার যেমন ব্যাক্তিগত বিষয় আছে ঠিক তেমনি আমাদেরো আছে।

রিমু আর কিছু বলে না। ব্যাথায় তার কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না। কিছুক্ষন পর ডাক্তার চেকআপ করে যায়। ডাক্তার বলেছে এক সপ্তাহ বেড রেস্ট। আর রিমু এখন দাঁড়াতেও পারছে না। শিমুর পা এক দিন রেস্টে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে। একটু মোচড় খেয়েছে তাই। এই ঝামেলার জন্য বিভানের হলুদের অনুষ্ঠান হবে না ওভাবে। এমনিতেও বিভানের এসবে রুচি নেই। জাস্ট হলুদ ছোঁয়াবে।

অদ্রি তার শাশুড়িকে বলেছে অদ্রিই লাগিয়ে দিবে কারন বিভান একদম রাজী হচ্ছিলো না। রিমু সুস্থ থাকলে হয়তো বাগড়া দিতো। অদ্রি হলুদ ও তেলের বাটি নিয়ে নিজেদের রুমে যায়। অদ্রি বিভানের সাথে রিসোর্টে একসাথে থাকবে তা নিয়েও রিমুর প্রবলেম ছিলো! কিন্তু যুক্তি টিকাতে পারেনি বিভানের কথার উপর। অদ্রি দরজা বন্ধ করে ড্রেসিংটেবিলের সামনে হলুদের বাটি রেখে বিভানকে টেনে নিয়ে এসে নিজে আয়নার সামনে বসে আহ্লাদী স্বরে বলে,

–এখন আমাকে হলুদ লাগাও জামাই!

বিভান ঠোঁটের কোনে দুষ্টমির হাসি ফুটিয়ে আয়নায় তার হৃদয়হরণীর চোখের দিকে দেখে নিজের গালে হলুদ লাগিয়ে তার হৃদয়হরণীর গালের সাথে নিজের গাল লাগায়। প্রেমময় হলুদ সন্ধ্যা দুজনের। ভালোবাসার বর্ষন হোক প্রেমময় পূর্ণ প্রহরে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে