শূণ্যতায় পূর্ণতা পর্ব -০৯

0
1469

#শূণ্যতায় পূর্ণতা
#নুরুন্নাহার তিথি
#পর্ব-৯(ধা’মাকা ২)

রিমুর চিৎকারে ইভান গিয়ে রিমুর সামনে বসে হাত ধরে বলে,
–কি হয়েছে তোমার? হঠাৎ করে চিৎকার চেঁচামেচি করছো কেনো? আর কাঁদছই বা কেনো?

রিমু জি’দ করে নিজের ফোনটা আ’ছাড় দেয়। ইভান হকচকিয়ে যায়। হঠাৎ করে এতো রা’গের কারন বুঝতেই পারছে না। আশেপাশের মানুষজন দেখছে সবই। ইভান রিমুর হাতে চাপ দিয়ে আস্তে করে বলে,

–কি হচ্ছে রিমু? সবাই দেখছে সব। থামো এবার। সিনক্রিয়েট করোনা এখন। এমনিতে তুমি তোমার সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছো।

রিমু এবার দ্বিগুন জোরে চিৎকার করে বলে,
–আমার বোনের জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো আর তুমি বলছো আমাকে থামতে! থামবো না আমি।

ইভান আশেপাশে একবার তাকিয়ে রিমুর হুইল চেয়ারটা ঘুরিয়ে এক কোনাতে নিয়ে গিয়ে রিমুকে জিজ্ঞাসা করে,

–কি হয়েছে শান্ত হয়ে বলো।

রিমু ফোঁসফোঁস করতে করতে শিমুর বিয়ের কথা বলার পর ইভান কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। অদ্রি দূর থেকে রিমুর হা’হাকার দেখে ক্রু’র হাসে। কিছুক্ষন পরেইতো রিমুর সত্যি ফাঁস হবে। অদ্রি হুট করে ক্ষি’প্ত হয়ে হনহন করে নিজের রুমে চলে যায়। রুহুল আমিনের আশার অপেক্ষা মাত্র। আজকে রফাদফা হবে সবকিছুর। এতোদিনের করা সব পাপের ঘড়া পূর্ন হলো। তা প্রকাশ পাবার অপেক্ষা। রুহুল আমিনের কাছে যা যা বলেছে সব রেকর্ড করা। পুরোটা না বললেও যা যা বলেছে তাতে সবটা সামনে আসার জন্য যথেষ্ঠ। বিভান হয়তো সহ্য করতে পারবে না। আর বিভানের মা, বোন, ইভান ও বোনজামাইও না।

__________
রুহুল আমিন ফরমাল স্যুটে আর শিমু ব্রাইডাল সাঁজে বিদ্ধস্থ অবস্থায় এলো। শিমু রিমুকে দেখা মাত্র গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নাতে ভে’ঙে পরে। রিমুর বাবা-মাও কান্না করছে। রুহুল আমিন বিরক্ত এদের অভিনয়ে। রুহুল আমি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে রূ’ঢ় ভাবে বলে উঠে,

–এনাফ ইজ এনাফ। স্টপ ইউর মেলোড্রামা। এতো কিছু করে আপনারা কান্না করেন কিভাবে? মানুষকে কান্না করাতে যখন দুইবার ভাবেন না তখন কি এটা ভাবেন না, পাশা সবসময় এক পক্ষের থাকে না।

রুহুল আমিনের সাথে আসা তার উকিল প্রশান্ত সিনহা রায় বলেন,
–পাশা খেলার জন্যই এতো বড় বিধ্বংসী মহাভারতের যুদ্ধও হয়েছিল। কারন পাশা তখন বেইমানি করেছিল। এতোদিন আপনাদের পক্ষে সব ছিল কিন্তু এবার আর না। গান্ধার রাজ শকুনিও কিন্তু সবকিছুর নির্মম শাস্তি পেয়েছিল আর পেয়েছিল তার ১০০ ভাগিনারা। মাত্র ৩-৪ জনের কর্মের কারনে পুরো বংশের বিনাশ হয়েছিল কারন প্রশ্ন তখন নারীর ক্রোধে।

রিমু ও শিমু দুজনেই ভয় পেয়ে আছে। সব কি জেনে গেছে? এটাই তাদের ভয়ের কারন। রিমু তোতলানো স্বরে বলে,

–মানে কি এসবের? আমার বোনকে জোর করে তু’লে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে এখন আমাদেরকে ড্রা’মাবাজ বলছেন? বলি ল’জ্জা হয়না আপনার? নিজের থেকে হাঁটুর বয়সি মেয়েকে বিয়ে করতে? আপনি ভাবলেন কি করে এসব? আমি আমার বোনকে দিবো না আপনার সাথে। এই রেজিস্ট্রির কোনো মূল্য নেই। ডিভোর্স আপিল করাবো আমি।

রুহুল আমি উচ্চস্বরে হাসে। রিমু ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় এতে। বাকিরা সবাই নির্বাক শ্রোতার মতো সব শুনছে ও দেখছে। রুহুল আমিন এবার বলে,

–অদ্রির সাথে শিমুর বয়সের ডিফারেন্স জানি কতো? মাত্র ৩ বছর তাইতো? তো মিসেস রিমু, আপনি যদি আমাকে ইনফ্লুয়েন্স করতে পারেন অদ্রিকে বিয়ে করতে তাহলে শিমুকে বিয়ে করতে দোষ কোথায়? যেখানে অদ্রির স্বামী আছে। সংসার আছে। এসব নিয়ে অদ্রি ওর স্বামীর সাথে খুশি। তাহলে আপনি আমায় আগবাড়িয়ে কেনো অদ্রিকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে বললেন? কেনোই বা বললেন অদ্রিকে আজকে কিডন্যাপ করিয়ে জোর করে বিয়ে করতে? যেখানে আপনার হয়তো খেয়ালও নেই অদ্রি ও বিভানের ডিভোর্স হয়নি এমনকি এপ্লাইও করা হয়নি। সেদিন অদ্রির সাথে দেখা করতে এসেছিলাম আর আপনি আমার ভাবগতি দেখে বুঝে গেলেন আমি অদ্রিকে পছন্দ করি! কিন্তু কোন চোখে পছন্দ করি তা বুঝতে ভুল করে ফেলেছিলেন। আমার বয়স ৫০ হলো। অদ্রির সাথে বয়সের ডিফারেন্স ২৪ বছর। আমার বড় ছেলের বয়স ২০ বছর। অদ্রিকে আমি স্নেহ করি। আমার ছেলেও অদ্রিকে আপু বলে আর অদ্রি কলিগের সূত্রে আমাকে ভাই ও আঙ্কেল মিলিয়ে বলে। ওর খারাপ সময়ে ওর পাশে থাকতে চেয়েছি মাত্র আমি। কিন্তু আপনি সেটাকে ভুল বুঝে আমার ফাঁদা জালে পা দিলেন। আমি জানতে পেরে গেছি আপনি অদ্রির ক্ষতি করার সবরকম চেষ্টা করে চলেছেন। নাহলে আপনি সেদিন দৌড়ে হড়বড় করে আমার কাছে এসে বলতেন না, আমি যেনো অদ্রিকে নিয়ে যাই বিয়ে করে! আপনি ভাবলেন কি করে এসব? ভেবে যখন ফেলেছেন তাহলে আমি আপনাকে সুযোগ দিয়েছিলাম যাতে আপনি সবগুলো স্বীকার করেন। আর স্বীকার আপনি করেছেন। যার বদৌলতে আজকের এই দিনটা হাজির হলো। আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন? আপনি আমাকে বলেননি অদ্রিকে বিয়ে করে নিতে?

রিমু গলায় জোর এনে আমতা আমতা করে বলে,
–কি প্রমান আছে আপনার? মুখের ভাষাতে চিঁড়ে ভিজবে না। আপনি আগ্রহ দেখানোতেই আমি সাহায্যর হাত বাড়িয়েছিলাম। আর আপনি এসব করলেন। আমি তো ওর ভালোর জন্য সুখের জন্য বলেছিলাম। তাও জোর দিয়ে না। আপনার উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম।

রুহুল আমিন জাবিরকে বলে প্রজোক্টরের ব্যাবস্থা করতে। জাবির আগে থেকেই রেডি করে রেখেছিল। পাঁচ মিনিটের মধ্যে মোবাইলে প্রোজেক্টর কানেক্ট করে রিমুর সাথে হওয়া সব ম্যাসেজিং দেখায়। যা স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছিল রুহুল আমিন। এরপর কল রেকর্ড ও সেদিনের ক্যাফেতে হওয়া রেকর্ড করা কথা গুলোও শোনায়। রিমু ও শিমুর চোখ-মুখ রক্তশূন্য অবস্থা। সবাই অবাক হয়ে গেছে। রিমু যে অদ্রিকে ঘৃণা করে তা কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। অদ্রির মি’সক্যা’রেজ হওয়াতে রিমু খুশি এটাই যেনো সবাইকে ভাষাহীন করে দিলো। কিন্তু একটা মেয়ের মি’সক্যা’রেজ হওয়াতে আরেকটা মেয়ে পরিবারের সদস্য হয়ে খুশি হতে পারে! শিমুকে যে রিমু এই বাড়ির বউ বানাতে চেয়েছে তা ইভান জানতো কিন্তু সে বুঝতে পারেনি তার বউ মি’সক্যা’রেজকে ফায়দা বানাতে পারে।

রুহুল আমিন এবার একটা কথা বলে। যা শুনে ইভান নির্বাক হতভম্ব হয়ে রিমুর দিকে তাকায়। বাকিরাও কানাঘুষা শুরু করেছে। বিভানের মা ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলতে নিয়েও চেয়ার ধরে সামলে নেয়। রুহুল আমিন বলেন,

–তো মিসেস শিমু ও রিমু যদি অদ্রির মি’সক্যা’রেজের পেছোনের সত্যি স্বীকার করেন তাহলে আমি রেজেস্ট্রি ভাঙার ব্যাপারে ভেবে দেখবো।

রিমু ও শিমু দুজনের চোখ বড় বড় হয়ে গেছে। এই কথা তারা রুহুল আমিনকে বলেনি। তাহলে জানলো কিভাবে? রিমু ও শিমু দুজনে দুজনের দিকে তাকাচ্ছে আর অনবরত ঘামছে। কি হতে চলেছে তা তাদের ধারনারও বাহিরে। রুহুল আমিন এই দুই বোনের বাকহীন থমথমে ভীত মুখশ্রী দেখে আবারো বলেন,

–ভেবে নিন! এখানে উপস্থিত কয়েকজনই আপনাদের কীর্তিকলাপ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত। এখন যদি আপনারা আজকেই সবটা স্বীকার করেন তো আমি এই মুহূর্তে রেজেস্ট্রি বানচাল করার জন্য ভাববো। সাথে কিন্তু উকিল কেও নিয়ে এসেছি। আর যদি স্বীকার করতে না চান তবে আমার সাথে মিসেস শিমুকে সংসার করতে হবে। তখন যদি কোনো অঘটন ঘটে যায় তবে? কিন্তু হ্যাঁ। সব সত্য প্রমাণিত হবার পর আমি মিসেস শিমুকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। এর মধ্যে যদি তার ও আমার মধ্যে কোনোরকম ফিজিক্যাল এটাচডমেন্ট হয়ে যায়? পরে কেও কি তাকে বিয়ে করবে? এমনকি আপনি তো শিমুকে বিভানের বউও কোনোদিন করতে পারবেন না। তখন কি হবে মিসেস শিমুর? কি মিসেস শিমু? বলেন? তখন কি হবে আপনার? আর এটা ভাবার ভুলও করবেন না যে আজকে কিছু স্বীকার করলেন না কিন্তু আমার বাড়িতে গিয়ে আমাকে ইনটক্সিসাইট করে হ’ত্যা করবেন! না না। আমি সব ব্যাবস্থা করে নিয়েছি। আমার যদি কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তবে তার দায়ভার মিসেস শিমুর উপর পরবে। এটাও রেজেস্ট্রি পেপারের নিচে আরেকটা পেপারে লেখা আছে যার ছবি আমি আপনাকে পাঠাইনি মিসেস রিমু। এবার ডিসিশন মিসেস শিমুর। কারন তার লাইফ কিছুটা হলেও বাঁ’চার সম্ভাবনা আছে।

শিমু মূর্তির মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি সিদ্ধান্ত হবে তার? রিমু নিজের হাতেগড়া সংসার হারানোর ভয় পাচ্ছে। সব কিছু শিমুর ডিসিশনের উপর এখন।
অদ্রি সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে রিমুর সামনে চেয়ার টেনে বসে। অদ্রির চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে ক্রু’রতা। তাচ্ছিল্য ভাবে চেয়ে আছে রিমুর চোখের দিকে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে