রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০৬

0
3033

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৬
” খবরদার আমার কাছ থেকে আর এককদম দূরে সরার চেষ্টা করবা ; এমন কিছু করলে I swear তোমাকে আমার সাথে বেঁধে রাখবো ”
মাইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে । এ কোন আয়াতকে দেখছে সে?
মাইশা এখন পুতুলের ন্যায় চুপ হয়ে আছে। কেন তা সে জানে না। আয়াতের warning এর জন্য নাকি তার শরীরের দুর্বলতার জন্য। আয়াতের হার্টবিট স্পষ্ট শুনতে পারছে সে। তার মনে হয় আয়াতের হৃদয়ের ছন্দ শুধুমাত্র তার জন্য এভাবে বাজছে । কিন্তু কেন বাজবে ? মাইশা এই সমীকরণটি মিলাতে পারছে না।
.
” এখন শরীর কেমন লাগছে….?”
মিহি কণ্ঠে মাইশাকে জিজ্ঞেস করে সে। মাইশা বুঝতে পারছে না ওর কি হয়েছিলো , আর আয়াতই বা এখানে কেন?
.
”আমার আবার কি হয়েছিলো?”
ছোট ছোট চোখ করে প্রশ্ন করে আয়াতকে। আয়াতের নরম চোখ ক্রমশই কঠোর হয়ে যায় এ কণ্ঠ শুনে । কড়া গলায় বলে উঠে….
.
”এত careless কিভাবে হতে পারো তুমি ? তুমি জানো তোমার sinusitis এর সমস্যা তারপরও কি হিসেব করে বৃষ্টিতে ভিচ্ছিলে? তোমার যদি রাস্তায় কিছু হতো তাহলে কি হতো আমা…..”
এ কথা বলেই থেমে যায় আয়াত । চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতার ছাপ । ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে সে । মাইশা এখনো আয়াতের বুকে। আড়চোখে আয়াতের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । আয়াত কি তবে ওর কাজের জন্য অনুতপ্ত ? মনে তো হচ্ছে না ।
.
ইনায়ার দিকে তাকিয়ে আয়াত বলে….
”আমি এখনই আসছি ! তুমি একটু ওর খেয়াল রেখো।”
.
”জ্বী ভাইয়া…..”
আয়াত চলে যেতেই ইনায়া মাইশার কাছে বসে। চোখে মুখে তার ভয়ের ছাপ।

”’ দেখ ইনা! এবার তুই বল , হয়েছেটা কী ? ওই আয়াত তো রেগেমেগে কতকিছুই বললো সবকিছু তো আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে !”
মাইশা মিনমিন করে বলে।
,
ইনায়া অবাকে আপ্লুত হয়ে বললো ………
”পুরো ১ ঘণ্টা তুই দরজা লাগিয়ে রেখেছিলি। আমি অনেকক্ষণ নক করছিলাম কিন্ত তুই দরজা খুলছিলি না। আমি একটু ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। পরে তোর ভাইকে কল দিলে সে আয়াত ভাইয়াকে পাঠিয়ে দেয়। সেও অনেকক্ষণ নক করলো বাট তোর তো কোনো রেসপন্স পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই ভাইয়া দরজা ভেঙ্গে দেয় । তুই কম্বল মুড়িয়ে অজ্ঞান অবস্থায় শুয়ে ছিলি……
আমি আর ভাইয়া দুজনেই তোর এ অবস্থা দেখে অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। বাইরে তখন বৃষ্টিও পড়ছিলো অনেক ,তাই তোকে ডাক্তারের কাছে নিতে পারেনি। পরে আমি তোকে জলপট্টি দিয়ে দেই আর ভাইয়া তো তোর জ্ঞান ফেরার আগ পর্যন্ত তোকে তার বুকে আগলে রেখেছিলো।”
.
মাইশা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছি ইনায়ার দিকে । আয়াত কি সত্যি এসব করছিলো ? ভাবছে মাইশা ।
ওর ভাবনায় ছেদ ঘটে যখন আয়াত আসে। ওদের কাউকে আর কোনো কথা না বলতে দিয়ে কোলে তুলে নেয় মাইশাকে। মাইশা বিস্ফোরিত চোখ করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
.
” গাড়ি গ্যারেজ থেকে বাইর করতে গিয়েছিলাম …..তাই সময় লাগলো…”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই আয়াত বলে।
.
” আমি এখন এতটাও weak না যে হাটঁতে পারবো না। প্লিজ আমাকে নামাও…..”
.
”সিরিয়াসলি মাইশা ? একে তো বৃষ্টিতে ভিজে এখন আমার কোলে করে ঘুরছো। তুমি এখন চাও যে আমি তোমাকে নামাই আর তুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে হাসপাতালে ঘুরাঘুরি করি ?”

মাইশা এখন আর কিছু বলে না। এই ছেলের সাথে কথা বলা মানেই নিজের মান-সম্মান puncher করা !
.
গাড়িতে মাইশাকে বসিয়ে আয়াত নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে । আর মাইশার কোমড় চেপে একেবারে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আচমকা আয়াতের এমন টান দেয়ার ফলে মাইশা মিশে গিয়েছে আয়াতের সাথে। আয়াতের চোখে-মুখে একধরনের রাগ দেখতে পারছে সে।
” ভার্সিটি থেকে সরাসরি বাড়ি যাও নি কেন?”
.
মাইশা নিশ্চুপ
.
” I ask you something Maisha …..tell me dam…”(চিল্লিয়ে)
,
মাইশা এখনো কিছু বলে না। কি বলবে সে , বারবার যে আয়াত তাকে আদ্রাফের কথা মনে করিয়ে নাজেহাল করে দেয়।
.
” ওওওও…I think আমি তোমার BF এর সাথে তোমার ব্রেকআপ করিয়েছিলাম না ? তার জন্য দেবদাসী হয়ে ঘুরে বেড়ানোর plan করছিলে?”(দাঁতে দাঁত চেপে)
মাইশার আয়াতের এ কথা শুনে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত আরও জোরে মাইশাকে নিজের সাথে চেপে ধরে।
.
বৃষ্টি অনেকখানি কমে গিয়েছে। আকাশটাও পরিষ্কার হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে রৌদ্দুরের আভাস দিবে । এমন এক পরিবেশে গাড়িতে আয়াত মাইশাকে এভাবে ধরায় অনেক অস্বস্তি হচ্ছে মাইশার। তার বুকের ধুকধুকানিটা স্পষ্ট শুনতে পারছে সে । আয়াত মাইশার চোখে চোখ রেখে নেশাক্ত কণ্ঠে বলে,
.
” এত কিসের রাগ তোমার মাইশা ? বারবার এভাবে দূরে সরে আসতে চাও। আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত ভাবতে পারছো কি অবস্থাটা হতো…..”
,
আয়াতের চোখের সাগরে হারিয়ে যাচ্ছে মাইশা। তার চোখের দৃষ্টি আর আদ্রাফের দৃষ্টির ভাষা এক ; তাৎপর্য এক । আয়াত তো তাকে পছন্দইকরে না । তাহলে কেন এভাবে নিজের মায়ার জালে ফেলছে মাইশাকে?
.
” কি হতো আমার ? কিছুই হতো না…..আর কেন এত চিন্তা আমার জন্য ….আমি তো playgirl , পতিতালয়….”
মাইশাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে আয়াত মাইশার ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করিয়ে দেয়।
” হুসসসস . next time এই কথাগুলো মুখে আনবা না মাইশুপাখি।”
আয়াতের এমন ফিসফিসিয়ে মাইশুপাখি ডাক দেয়ার ধরন দেখে থমকে গিয়েছে মাইশা। মনে এক অদ্ভুদ শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আয়াত ঘোর লাগা চোখে তাকিয়ে আছে মাইশার ঠোঁটের দিকে । আয়াত আবার বলতে থাকে..
.
” তোমার রোদ্দুর হতে চাই মাইশুপাখি ….যেখানে কোনো বাঁধা থাকবে না ; কোনো পিছুটান থাকবে না ”
বলেই আয়াত এগোতে থাকে মাইশার ঠোঁটযুগলের দিকে । মাইশা এবার একটা চিল্লানি দেয় …..
.
” আয়াত ! ”
.
সাথে সাথেই আয়াত দূরে সরে যায় মাইশার কাছ থেকে। এতক্ষণ একটা ঘোরের মধ্যে ছিল সে। দুজনেই বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেছে এবার। মাইশাও ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে । কপালে আছড়ে পড়া চুলগুলো আয়াত বামহাত দিয়ে পেছনে ঠেলে গাড়ি স্টার্ট দেয় ।
গাড়িতে দুজনেই একেবারে নিশ্চুপ ছিলো।
.
আয়াত তারপর মাইশাকে কোলে নিয়ে মাইশাদের বাড়িতে ঢোকে। মাইশার আম্মু তড়িঘড়ি করে সেদিকে যায়।
.
” মাইশা….এখন ঠিকাছিস মা ? কতবার করে বলেছি এভাবে বৃষ্টিতে ভিজিস না….”
.
” খালমণি ওকে এখন এ কথা বলে লাভ নাই । তুমি একটু ওর জন্য ক্লিয়ার স্যুপ করে নিয়ে আসো আমি ওকে ওর বেডরুমে দিয়ে আসি। আঙ্কেল আর ভাইয়াকেও কল করে বলো সব ঠিক আছে ”
এটা বলেই আয়াত মাইশাকে বেডরুমে নিয়ে যায়। এই কয়েক মিনিটে আয়াত একবারও মাইশার দিকে তাকায়নি। কিন্ত মাইশা তাকিয়েছে। বারবার। কেন তা মাইশার অজানা।
.
কিছুক্ষণ পর মাইশার আম্মু soup নিয়ে আসে। আয়াত এতক্ষণ এখানেই ছিলো। আয়াত চলে যাওয়ার আগে মাইশাকে মিহি কণ্ঠে বলে যায়…
.
” Next Time এমন পাগলামি করো না please , দুদিন ভার্সিটি যাবে না তুমি ….take care….”
.
আয়াত চলে যাওয়ার সাথে সাথেই দরজা লাগিয়ে দেয় মাইশা। কাবার্ডের এক ছোট্ট কোণা থেকে বের করে নীল রঙের একটি ডায়েরী। ডায়েরীটা নিয়ে খাটে বসে পড়ে সে ।
রৌদ্দুরটা ডায়েরীর উপরের আবরণে সমান্তরালভাবে আছড়ে পড়ছে। ডায়েরীটা খুলতেই বের হয়ে আসে হালকা সবুজ শার্ট পড়া একটা ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি । মাইশা নিজের হাতটি আলতো করে বুলায় ছবিটার দিকে। চোখ দুটো তার ছলছল করছে।কাপাঁকাপা কণ্ঠে বলে ওঠে,
.
”আদ্রাফ ! ”
.
ছেলেটা আর কেউ না ; আদ্রাফ । মাইশার সোনালী অতীত । যাকে সে নিজের স্মৃতির কোঠায় গুছিয়ে যত্নে রেখেছে । আলতো কন্ঠে বলে ওঠে….
.
” আদ্রাফ তোমায় আমি মনে করতে চাই না..খুব কষ্ট হয় আমার । কিন্ত তোমায় আমি ভুলতেও চাই না । আর চাই না তোমার জায়গাটা অন্য কাউকে দিতে । আয়াত ! আয়াত ! বারবার বাধ্য করে তোমায় মনে করাতে। ওর মতো mysterious character আমি কখনোই দেখিনি….অপমান করে সে , আঘাত করে সে , আমার care ও করে সে ,
এককথায় আমায় তার মায়ায় ফেলে দিয়েছে। ”
.
ডায়েরীটা পাশে রেখে দেয় মাইশা। মনে তার ঘুরছে হাজারো অনুভূতির খেলা । আয়াত নামক character এ হারিয়ে যাচ্ছে সে। বারবার তার মনে পড়ছে গাড়িতে থাকাকালীন ঘটনাগুলো।
.
” সত্যিই অনেক অদ্ভুদ তুমি আয়াত !”
.
.
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে