মেঘের আড়ালে চন্দ্রলোকিত পর্ব-০৯

0
985

পর্ব-০৯
#মেঘের_আড়ালে_চন্দ্রলোকিত💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

সকাল থেকে মেঘকে দেখে নি ভেবেছে হয়ত কোথাও আছে কিন্তু এটা ত আরেক কথা,
সারা তার শ্বাশুড়ি মায়ের কাছে যায়,
–কি বলো বউ মা।
ওদের মাঝে কিছু হয়েছে,
–এটা ত ভাইয়াই ভালো বলতে পারবে মা
–আমান কে ডাকো,
কিছুক্ষণ এর মাঝে আমন নিচে আসে,
–কি হয়েছে আমান।
–কি হবে মা।
–মেঘ ও বাড়ি কেন চলে গেছে কাউকে কিছু না বলে কিভাবে চলে গেল তুমি কিছু বলো নি কেন ওকে?
–মা এটা ওর চয়েজ।
ও চায় না সংসার করতে তুমি বা আমি বাধ্য ত করতে পারি না।
–আমান আমি তোমায় ভালো করে চিনি তুমি মেয়েটাকে কিছু বলেছো।
–এখন যখন বুঝে গেছো তখন আমার ত আর কিছু বলার নেই,
তুমি প্লিজ এটা নিয়ে কথা বাড়িও না।
যদি প্রকৃতি কখনো চায় তবে আমরা আবার এক হবো।
আমান কিছু না খেয়েই বেরিয়ে যায়,
অনিলা বেগম কিছু না বলে সোফায় বসে পরে,
–আমারি ভুল সারা আমার এই হৃদয় হিন ছেলেটার সাথে তোমার নরম সভাবের বোনের বিয়ে টাই দেওয়া উচিত হয় নি।
মেয়েটা এতো নরম এতো ভদ্র।
ওর জীবন ট নষ্ট করে দিলাম।
–মা এভাবে বলবেন না।
–যা হয়েছে তা বলা ন বলা সমান।
আমানকে আমি ছোট থেকে মানুষ করেছি,
কিন্তু জানিস ও শুধু আমায় মা ডাকেই আর আমার প্রতিটা কথার সম্মান ই করে কখনো ভালোবাসে নি।
–মা কি বলছেন আপনার ছেলে আপনাকে ভালোবাসে না।
–ও আমার ছেলে না রে সারা।
–কি বলছেন মা।
–সত্যি বলছি ও আমার বোনের ছেলে,
আমি ওকে ছেলে হিসাবে আদর ভালোবাসা দিলেও ওর থেকে কখনো সম্মান ছাড়া মায়ের প্রাপ্য ভালোবাসা পাই নি।
সারা থ হয়ে যায় ভেবেছিল অনিলা বেগম হয়ত রাগে কথাটা বলছে কিন্তু এটা ত সে সত্যি বলছে,
–কি বলছেন মা এগুলো
–আমি এগুলো বলতাম না যদি না সব কিছু আমার পরিকল্পনা মতো হতো কিন্তু আমি যা ভেবেছি সব উল্টে গেল বুঝলি।
ফুলের মতো মেয়েটার জীবন টা থমকে গেল৷
–মা খুলে বলুন,
–সময় টা ছিল আজ থেকে ২৪ বছর আগের কথা,
আমার আরিফ তখন মাত্র ১ মাস বয়স,
আমার বড়ো আপু মাহিমা রহমাম আর তার প্রভাবশালী স্বামী ।
শুধু প্রভাব শালী না বলতে পারো সে ক্ষমতার অপব্যবহার বেশি করতো,
মানে ইলিগাল কাজ করতো ওনার বিরুদ্ধে কারোর কিছু বলার সাহস ছিল না।
কিন্তু ওনার শত্রুর অভাব ছিল না।
উনি ছিলেন অরফান খান।
ওনাদের ছেলের বয়স তখন মাত্র ৩, (আমান খান))
মা বাবাকে চিনে, আমান ওর মায়ের থেকে বাবাকে অনেক বেশি ভালোবাসত।
সে দিন ওরা ড্রাইভ করে আমাকেই দেখতে আসছিল,
কিন্তু আমাদের শেষ দেখা হলো না।
সে দিন গাড়ি এক্সিডেন্ট এ ওদের মৃত্যু হয়।
আমার বোনটা অনেক চেষ্টা করেছিল তার স্বামীকে এই পথ থেকে সরানোর কিন্তু পারে নি। হয়ত আমার বোন জানত এমন কিছু হবে তাই সব সময় আরিফ কে সরানোর চেষ্টা করত।
তুই জানিস সারা আমান আমায় মা বলতো মনি মা। প্রথম প্রথম কথা শিখে আমায় মনি মা বলত,
কিন্তু সে দিনের পর ওর হৃদয় সত্যি পাথর হয়ে গেছিল,
সময়ের সাথে সাথে আমান বড়ো হয় আমি বুঝতে পারি আমার ভালোবসা ওর হৃদয় গলাতে পারছে না।
ও সেই পথর সভাবের রয়ে গেছে,
আমি ওকে যথেষ্ট ভালোবাসা দিছি,
আমার আরিফ থেকে বেশি খেয়াল রেখেছি কিন্তু ও পারি নি ওকে সাভাবিক মানুষ তৈরি করতে,
আসলে ছেলেটা বাবাকে বড্ড ভালোবাসত,
যে দিন ওর বাার মৃত্যু হয় সে দিন প্রশাসন হাফ চেড়ে বাঁচে,
তার সমস্ত কু কর্মের কথা প্রাকশ হতে থাকে,
আমান সেটা সহ্য করতে পারে নি, তার কাছে তার বাবা পৃথিবীতে সব থেকে ভালো মানুষ ছিল।
ও একা নিজেকে একটা অন্ধকার ঘরে বন্দি রাখতো,
আমি অনেক চেষ্টা করেছি ওর সামনে কখনো চমি গলা উচু করে কথা বলি নি আমার আমান ত জানেই না বকা কাকে বলে,
এতো ভালোবাসা দেবার পরেও আমার ছেলেটা সেই কঠর মনের রয়ে গেল,
ওর জীবনের একটাই লক্ষ্য বাবাকে নির্দোষ প্রমান করা,
ও ওর বাবার কোন সম্পত্তির উপর অধিকার এখনো রাখে নি,
ও চাইলে আমাদের বাড়ির মতো ২০ টা বাড়ি তৈরি করতে পারে কিন্তু কখনো বাবার তো সেই ক্ষমতার দাম্ভিকতা দেখায় নি, আসলে ও সপথ নিয়েছিল যে দিন বাবাকে নির্দোষ প্রমান করতে পারবে সে দিন ই বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তির উপর অধিকার রাখবে।
আমার স্বামী আমনের এখনের বাবা ওকে বলেছিল আমাদের ব্যাবসায় জয়েন হতে কিন্তু কখনো ও সেটাও করে নি
নিজের যোগ্যতা দেখায়,
আমার ছেলেটা পাথর হৃদয় নিয়ে ঘুরে,
ভেবেছিলাম একটা নরম সভাবের মেয়েকে ওর সাথে বিয়ে দিলে ও সব ভুলে যাবে কিন্তু না আমি ভুল ও ত আমার মেয়েটা জীবন টাই বরবাদ করে দিলো,
( হ্যাঁ এটা সত্যি আমান জানত না ওর সাথে কার বিয়ে হবে বিয়েটা আমানের মা ই ঠিক করে,
বিয়ে করার কোন ইচ্ছে তার ছিল না আমান মেঘকে মিথ্যা বলেছে, কোন প্রতিশোধের জন্য না,
আসলে আমান মেঘকে বিয়ে করতে চায় নি তাই এমন বলেছে, যাতে মেঘ বিয়েটা না করে,
কিন্তু যখন মনের মাঝে ওর জন্য ভালোবাসা বাসা বাঁধলো তখন মেয়েটাকে সত্যি ঘটনার উপর মিথ্যা বলে নিজের জীবন থেকে বের করে দিলো
আমানের ধারনা ছিল এমন কথা শুনলে মেঘ সবাইকে বলে দিবে যে ও বিয়ে করতে চায় না, কিন্তু আমন বুুঝতে পারে নি মেঘ সারাকে এতোটা ভালোবাসে,
সবাই কি আর তার মতো কঠর হৃদয়ে হয়।
হয় না।
ভালোবাসা সবার মধ্যে থাকে,)
সারা সব কিছু শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
এতো কিছু হয়ে গেল,
–মা চিন্তা করবেন না সব ঠিক হয়ে যাবে,
সারা শ্বাশুড়ি কে খাইয়ে ঔষধ দিয়ে রুমে দিয়ে আসে,
নিজের রুমে এসে,
–হে আল্লাহ এ কোন বড়ো মুসিবত।
মেঘকে সামলানোর তৈফেত দান করো,
,
,
,
এদিকে,
আমানের অফিসে,
–স্যার মে আই কামিং
–ইয়েস,
–স্যার আমরা সব বের করে ফেলেছি স্যার,
শুধু একটা ডকুমেন্ট লাগবে তার পর পৃথিবীর সামনে আরফান খানের নির্দোষীতা প্রকাশিত করতে পারবো,
ওনার উপর লাগা প্রতিটা অপরাধের ভুল প্রামন করার প্রমান পেয়ে গেছি,
–গুড,
–কিন্তু স্যার সমস্যা একটা আছে,
–কি সমস্যা,
–স্যার আপনার বাবা মানে বড়ো স্যার এর উপর দোষ এর বোঝা চাপিয়ে এই কয় দিন যারা ফয়দা লুটেছে তারা হিংস্র হয়ে পরেছে,
আমাদের হয়ত এক তরফা ফাইট করতে হবে তাদের সাথে,
–সব করতে রাজি,
আমার স্ত্রী এর বাসার পাশে পাহারা বসাও,
আমার স্ত্রী এর গায়ে একটা আচড় লাগলে আমি কাউকে ছাড়বো না।,
–স্যার আমার মনে হয় দুরে না রেখে আপনার বাড়িতে রাখলে কেউ সাহস পেত না ওনার ক্ষতি করার,
–আমার বাড়িতে আনলে ওরা বুঝতে পারবে সে আমার দুর্বলতা এটা হতে দেওয়া যায় না।
–স্যার আপনার ম্যাম এর জন্য ফিলিংস আছে?
–ওয়াট রাবিস। (ধমকে)
–সরি স্যার ব্যাড মিস্টেক সরি স্যার,
–গেট লস্ট,
লোকটা চলে যায়,
আমানের রাগ হচ্ছে সবাই তাকে এমন ভাবে,
ও যে কাউকে ভালোবাসতো পারে এটা কারোর বিশ্বাস ই হয় না।
আসলে কেউ জানেই না
কঠিন মেঘের আড়ালে চন্দ্রা কিন্তু লোকিত হয়ে যায়,
চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে