মেঘের আড়ালে চন্দ্রলোকিত পর্ব-১০

0
944

পর্ব-১০
#মেঘের_আড়ালে_চন্দ্রলোকিত💖
#লেখিকা-লামিয়া রহমান মেঘলা

আমানের রাগ হচ্ছে সবাই তাকে এমন ভাবে,
ও যে কাউকে ভালোবাসতো পারে এটা কারোর বিশ্বাস ই হয় না।
আসলে কেউ জানেই না
কঠিন মেঘের আড়ালে চন্দ্রা কিন্তু লোকিত হয়ে যায় ,
আমান রেগে লোকটাকে বার করে দিলেও তার বলা কথা গুলো আমান ভেবে দেখে ,
আসলেই মেঘকে লোকটা ঠিকি বলেছে ,
যদি ওই বাড়িতে থাকলে কিছু হয় আমান কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না৷
আর যদি মেঘ কোন প্রয়োজন এ বাসা থেকে বের হয় তখন ,
আমানের মাথার ভেতর হাজার প্রশ্ন ।
আমান অফিস থেকে বেরিয়ে আসে মেঘের বাসার উদ্দেশ্যে ,
আমান গাড়ি নিয়ে মেঘের বাসার সামনে আসে ,
মেঘের বাসার ভেতর,
মেঘ কাল থেকেই নিজেকে ঘরের মাঝে বন্দি করে রেখেছে,
ইতিমধ্যে সারা মেঘের মাকে সব বলে দিয়েছে সব বলে নি শুধু বলেছে ভাইয়ার দোষ আমান মেঘকে অপমান করেছে,
তাই বাসা থেকে কেউই মেঘকে কিছু বলে নি উল্টে ভলোবাসা দিয়ে মেয়েকে কষ্ট ভুলানোর চেষ্টা করেছে,
মেঘের মা মেঘের প্রিয় বিরিয়ানি রান্না করেছে,
— মেঘ,
— জি মা বলো
— রান্না করেছি বিরিয়ানি আয় খাবি,
— না মা এখন না। রাতে, একটু আগে ত খেলাম দুপুরে
— দেখলাম ত কি খেলি।
— মা প্লিজ এখন না।
— আচ্ছা এখন ত বিকাল যা দেখ পারায় ছোট রা বেরিয়েছে খেলবি তুই ছি কুতকুত আর দাগ বুড়চ্ছি
— ইস আমি কি বাচ্চা নাকি,
— ও মা আমার মেয়েটা কি বড়ো হয়েছে নাকি,
যা মা। –
— আচ্ছা মা যাই তাহলে ?
— হুম যা আমি বলছি ত যা ।
মেঘ একটা গোল অনপিস আর জিন্স পরে ওড়না নিয়ে বের হয়,
আমান গাড়িতে বসে দেখে মেঘ বাইরে বের হচ্ছে,
চুল গুলো উচু করে ঝুটি করা মেয়েটার,
মেঘ চলে আসে পাশের একটা খোলা জায়গায় সেখানে বাচ্চারা খেলা করছে,
মেঘকে দেখে সবাই দৌড়ে আসে,
— আপু আপু তুমি এসেছো কবে এলে ?
– – দিদি চলো খেলি ?
— দিদি তুমি আমার দলে হবে আজ দাগ বুড়চ্ছি খেলব ।
— আপু চলো চলো অমেক মজা হবে
— আরে আরে তোরা এতো উত্তেজিত কেন আজ অনেক সময় কাটাবো তোদের সাথে বুঝলি।
— হুম দিদি চলো ,
মেঘ ওদের সাথে বেশ মজা করে ,
আর দুর থেকে ওর এই পুরো দৃশ্য কেউ উপোভগ করছে ,
— মেয়েটা পাগল ,
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো,
এখন মেঘ
— এই যা বাড়ি যা বুঝলি, আর না।
অনেক খেয়লিছি,
মেঘের মা বাইরে থেকে দেখছে সব,
মেয়েটার মনটা ভালো হবে ওদের সাথে সময় কাটালে এই কথা ভেবেই মেয়েকে ওদের কাছে পাঠায়,
সারা মেঘ বিকাল সময় টা ছুটি পেলে এদের সাথেই সময় কাটাতো,
মেঘ বাসায় চলে আসে কিন্তু হটাৎ মেঘের মনে হয় কেউ ওকে দেখছে,
মেঘ পেছনে ফিরতে আমান৷ গাড়ির কাচ লাগিয়ে দেয়,
মেঘ চোখ সরিয়ে বাসায় চলে আসে,
আমান বাসায় চলে আসে,
মেঘের কথা কোন মতে মাথা থেকে নামাতে পারছে না।
ভালোবাসা কি এমন হয়,
সত্যি এমন হয়,
আমান গোসল করে আসে,
আমানের মা সারার হাতে খাবার পাঠায়,
— ভাইয়া আসব।
— হ্যাঁ এসো,
— ভাইয়া আপনার খাবার,
— মা রেগে আছে তাই না।
— হ্যা ন না মানে আসলে,
– -তুমি যাও,
— জি ভাইয়া,
একটা কথা বলব,
— হ্যা বলো।
— মেঘ কখনো প্রেম করে নি কারন ও সব সময় চেয়েছে যে কেউ ওকে ভিশন ভালোবাসুক আর সেই সম্পর্ক টা যেন কোন বাঁধা না আসে,
ওর স্বপ্ন গুলো হয়ত সব আপনাকে নিয়েই ছিল,
আপনার সাথে বিয়ের কথা হবার পরে,
মেঘ আমায় বলেছিল ওর সব স্বপ্নের কথা,
আপনি সব ভেঙে দিয়েন না,
মানে ওকে একটু ভালোবাসা দিন দেখবেন ও তার ১০ গুন ফেরত দিবে,
আসা করি আমার কথা বুঝতে পেরেছেন,
আসি,
সারা চলে যায়,
আমান ভেঙে পরে,
ভিশন কষ্ট হচ্ছে এটা ভেবে যে সবাই তাকে হার্টলেস ভাবে,
সবি শেষ হয়ে যাচ্ছে,
আসলে এতো বছর পর এসে আমানের রিয়েলাইজ হচ্ছে সে তার মাকে ভালোবাসে,
হ্যাঁ সে তার মাকে ভালোবাসে সে তার স্ত্রী কেও ভালোবাসে,
সেও ভালোবাসতে পারে,
যখন আমানের বাবা মারা গেছিল তখন আমনের বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর ,
বাবার ঘাড়ে আর মায়ের আদরে ,
দুষ্টু মিষ্টি আমান তখন বাবা মাকে ভিশন ভালোবাসে,
ফ্লাস ব্যাক,
— এই যে আমার আমান সোনাটা কই রে,
— পাপা এসে গেছে পাপা এসে গেছে,
ছোট্ট আমান দৌড়ে আমানের বাবার কোলে উঠে,
— কি করছিল আমার বাবা টা,
— আম্মু বলেছে পাপা এলে ছোট ভাইকে দেখতে যাবো।
— তাই,
তুমি কি এক্সাইটেড বাবা।
— হ্যাঁ বাবা আমি ভিশন এক্সাইটেড,
— আচ্ছা চলো তাহলে,
যাওয়া যাক৷
— আম্মু আম্মু রেডি হও পাপা যাবো দেখতে আমরা ছোট ভাইকে,
— হ্যাঁ বাবা আসছি,
— হ্যাঁ আমানের আম্মু এসো আমরা গাড়িতে উঠছি,
— ওকে,
— আমান বাবার সাথে গাড়িতে উঠে,
প্রায় ৫-৬ মিনিট পর চলে আসে আমানের মা,
ওরা তিনজন রওনা হয়,
কিছু সময়ের মধ্যে আমানের বাবা খেয়ল করে কেউ তার পেছনে আসছে,
ককেউ তাদের ফলো করছে,
সময় কাটতে কাটতে হটাৎ পেছন থেকে ধাক্কা খায় গাড়িটা,
আমানের বাবা আমান কে জড়িয়ে ধরে রেখেছিল৷
তখন গাড়িটা উল্টে যায় তখন আমানের বাবার মাথা গিয়ে লাগে আর আমান তার বাহুডোর থাকে,
যার জন্য আমান বেঁচে যায়,
তার বাবা এতোই ভালোবাসতো যে নিজের জীবনের শেষ টুকু দিয়ে বাচ্চা কে বাঁচিয়ে দিয়ে গেল,
সে দিন,
আমানের খালা অর্থাৎ অনিলা বেগম এসেছিল আমান কে নিতে,
আমান পাথর হয়ে গেছিল,
ওর ভেতরে কোন কান্না ছিল না৷
অতি দুঃখে সে পাথর হয়ে গেছিল,
কোন রকম অনুভুতি কাজ করছিল না,
সেদিনের পর সে দেখতে পায় সব টিভি চ্যানেলে তার সেই বাবা সম্পর্কে বাজে বাজে খবর।
ছোট্ট আমানকে সবাই লেগপুল করা শুরু করে,।সেখান থেকে অনিলা বেগম ই বের করেছে,
বর্তমান,
আমান মেঘের একটা শাড়ি ধরে কান্নায় ভেঙে পরেছে,
একটা কঠর মনোভাবের ছেলেটা আজ কান্নায় ভেঙে পরেছে,
আমান আগেও এভাবে কেঁদেছে যখন বাবাকে খুব মনে পড়ত তখন,
ভিশন কষ্ট হতো বাবার জন্য,
যে কোন বাচ্চা ই কষ্ট হবে যখন যে বাবা প্রান দিয়ে বাচিয়ে গেছে তাকে সে বাবার সম্পর্কে বাজে কথা শুনতে,
সত্যি আমান ভেতর ভেতর ডিপ্রেশনে ভুগেছে,।অন্তরের রোগ সব থেকে বড়ো।রোগ,
আর এই সময়ে কেউই নেই তার,
স্ত্রী, মা, ভাই বা বোন নেই কেউই নেই৷

একটা মানুষ কতো কষ্টের পরে নিজেকে পাথরে পরিনত করতে পারে তা হয়ত কারোর ধারনা নেই,
আমরা হয়ত তার কষ্ট টা ফিল করতে পারি না কিন্তু তার কষ্ট ভাগ করে তাকে শন্তনা দিতে পারি,
চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে