মিসেস চৌধুরী পর্ব-১৩

0
1682

#মিসেস_চৌধুরী
#Part_13
#Writer_NOVA

মিটিং শুরু হয়ে গেছে আরো ২০ মিনিট আগে।এক এক করে সব ক্লায়েন্ট বক্তব্য রাখছে।আদিয়াত মনোযোগ সহকারে গুরুত্বপূর্ণ ইনফরমেশনগুলো টুকে নিচ্ছে। আকশি মহাশয়ের কথা কি বলবে?তিনি তো কিছু সময় পর পর আড়চোখে ফিহাকে দেখতেই ব্যস্ত।ফিহার মনটা আনচান করছে অনিয়ার জন্য। কেন জানি বার বার মনে হচ্ছে অনিয়ার কোন বিপদ হবে?কথায় আছে না মায়ের মন সবার আগে বিপদ সংকেত পায়।সন্তানের বিপদের ইঙ্গিত মায়ের মনে ঘন্টা বাজায়।ফিহা হয়তো অনিয়াকে জন্ম দেয়নি।কিন্তু এতোদিন লালন-পালন করে তো ওর প্রতি দূর্বল হয়ে গেছে। আল্লাহ হয়তো এই কারণে অনির সাথে ফিহার মনের কানেকশন জুড়ে দিয়েছে।

আকশি বেশ কিছু সময় ধরে খেয়াল করছে ফিহা মিটিংয়ে মনোযোগী নয়।খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা ভাবছে।

আকশিঃ আজ ফিহার কি হলো?অনান্য সময় তো ওকে বেশ গম্ভীর দেখায়।কিন্তু আজ মনে হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে অনেক চিন্তিত।কি ভাবছে এতো?হাব-ভাব তো ভালো ঠেকছে না।আমি যতটুকু জেনেছি ফিহা সামান্য ব্যাপার নিয়ে কখনও চিন্তা করে না।মেয়েটা নাকি বেশ স্ট্রোং।ভেতরে ভেতরে ভয় পেলোও কখনও মুখে তা বুঝতে দেয় না।কিন্তু আজ কি হলো ওর?আমি ফিহাকে এভাবে নিতে পারছি না।ফিহা কি আমাদের ব্যক্তিগত কোন কারণ নিয়ে টেনশনে আছে।না, আমাকে জানতেই হবে।(মনে মনে)

ফিহা এক ধ্যানে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।অনিকে ঘুম পারিয়ে রেখেছে।টেবলেট পাহারা দিচ্ছে। তারপরও মনটা কু-ডেকেই যাচ্ছে। কোন কিছুতে শান্তি লাগছে না।

ফিহাঃ আমার অনিকে নিয়ে ভয় কেন করছে?আমার মনে হচ্ছে আমার মেয়ের নিশ্চয়ই কোন ক্ষতি হবে।টেবলেট তো ওর পাশে আছে।তারপরেও কেন ভয় করছে আমার।কিছু সময় পর পর বুকটা ধক করে উঠছে।একটা শব্দ হলেই মনে হচ্ছে আমার অনিয়ার সাথে খারাপ কিছু হচ্ছে। কোথায় আগে তো এরকম কখনও মনে হয়নি।অস্থির, অস্থির লাগছে ভেতরটা।আল্লাহ তুমি আমার মেয়েটাকে দেখো।অনি আমার কাছে চৌধুরী বাড়ির আমানত।তাছাড়া আমার নিজের মেয়ে।হ্যাঁ,যে যাই বলুক।আমি কারো কথা শুনবো না।অনিয়া আমারি মেয়ে। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে মাফ করতে পারবো না।বাবা আমাকে বিশ্বাস করে ওর দায়িত্ব দিয়েছে।আমি যদি সেটা পালন করতে না পারি তাহলে আমার নিজেকে শেষ করা ছারা অন্য কোন উপায় থাকবে না।আল্লাহ যত কষ্ট দেওয়ার,যত বিপদ দেওয়ার আমাকে দিয়ো।কিন্তু তোমার কাছে আমার আর্জি দয়া করে আমার অনির কোন ক্ষতি তুমি হতে দিও না।(মনে মনে)

ফিহার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে।এই মনে হয় টুপ করে পরে যাবে।পৃথিবীর সব মা এমনি হয়।নিজের চাইতে বেশি সন্তানের জন্য ভাবে।তাই তো আল্লাহর পর মা কে সম্মান করতে বলা হয়েছে।মায়ের দোয়া আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবে।মায়ের পদতলে সন্তানের বেহশত। কিন্তু কোন মা তার সন্তানকে পায়ের নিচে কখনও রাখে না।শত, হাজার কষ্টের মধ্যেও নিজের বুকে পরম যত্নে সন্তানকে আগলে রাখে।নিজের জীবন যায় যাক কিন্তু সন্তানের কিছু হতে সে দিবে না।এই জন্যই তো মায়েরা পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন।সবার ওপরে আমাদের মা।তার ওপরে কাউকে মর্যদা দেয়নি আল্লাহ। ভালবাসি তোমাকে মা।তোমার মতো আর কেউ আমাদের জন্য এত ভাবে না।এতো ভালোবাসা দিয়ে বুকে আগলে রাখে না।এই জন্য আল্লাহ এতো মর্যদা দিয়েছে মা-কে।একজন মা সন্তানের জন্য যতটা কষ্ট স্বীকার করে তা আর কেউ কখনও করে নি, করবেও না।

আকশিঃ আদি, এই আদি।ঐ আদি বজ্জাতের কাঁদি।
আদিয়াতঃ কি হয়েছে এত ডাকছিস কেন?দেখছিস না মিটিং চলছে।এখন কথা বলে মান-সম্মানের মাথা খাস না।যদি তারা বুঝতে পারে আমরা কথা বলছি তাহলে রুম থেকে বের করে দিবে।কতবড় পানিশমেন্ট এটা ভেবেছিস?এই বয়সে এসব মানা যায়।

আকশিঃ তোর বক্তৃতা বন্ধ করবি।নিজে যে এক লাইনের বদলে পুরো রচনা শুনিয়ে দিচ্ছিস। সেই বেলা কিছু হয় না।আর আমি সামান্য ডাক দিয়েছি তাতেই এতো কিছু হয়ে গেলো।শালা,হারামী,শয়তান।

আদিয়াতঃ গালি না দিয়ে কি জন্য ডেকেছিস তা বল?

আকশিঃ ফিহার মনটা মনে হচ্ছে অনেক খারাপ।

আদিয়াতঃ তো আমি কি করবো?তোর বউ মন খারাপ করে আছে সেটা ঠিক করার দায়িত্ব তোর, আমার নয়।আপতত মন খারাপের কথা ছাড়।মিটিংয়ে মনোযোগ দে।একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিকে কথা হচ্ছে। তোদের বিজনেসের জন্য অনেক দরকারী।
আদিয়াতঃ তোর মিটিংয়ের পেচাল বন্ধ কর। আমার এখন ফিহার জন্য চিন্তা হচ্ছে। ফিহাকে আমি এইভাবে নিতে পারছি না। আমার ভীষণ খারাপ লাগছে।

আদিয়াতঃ ভাই আমার এখন একটু চুপ কর।মিটিং থেকে বের হওয়ার কোন ইচ্ছে আমার নেই।

আকশিঃ তুই একটু ভেবে দেখ ফিহা শুধু শুধু কারণে মন খারাপ করে না।ফিহা খুব শক্ত গঠনের মানুষ। সামান্য ব্যাপারে মন খারাপ করবে এমন মেয়ে তো ফিহা নয়।
আদিয়াতঃ আল্লাহ বাচাও আমায়।🤦‍♂️🤦‍♂️
আকশিঃ আমার কথাটা শোন।
আদিয়াতঃ আরেকটা কথা বললে আমি তোর নামে কমপ্লেন করবো।
আকশিঃ 🤭🤭

🌿🌿🌿

রিয়ানা খুব সাবধানে সিকিউরিটি সামলিয়ে ভেতরে ঢুকলো। হাতের সাইড ব্যাগে কড়া ডোজের ঘুমের ঔষধ। এতোটা কার্যকরী যে মৃত্যুর সম্ভাবনা একশ পার্সেন্ট।তা যদি ছোট কোন বাচ্চাকে দেওয়া হয় তাহলে ২৮ মিনিটের মধ্যে মৃত্যু পুরো নিশ্চিত। আজ তার অপমানের বদলা নিবে।তবে সেটা অনিয়ার ওপর নিবে।সেদিন ফিহার কাছে অপমানিত হয়ে এতটা প্রতিশোধ পরায়ন হয়েছে যেকোন মূল্যে ফিহার ক্ষতি চায়।যেহেতু এখন ফিহার চৌধুরী বাড়ি থাকার মূল কারণ হলো অনিয়া।তাই অনিয়াকেই মেরে ফিহাকে শিক্ষা দিবে।

ফিহাঃ খুব সাহস তোর ফিহা।এবার তোর বড়মুখ আমি বের করবো।তোর কলিজার টুকরো অনিয়াকে আমি দূরে সরিয়ে দিবো।তোর চৌধুরী বাড়ি এখনো মাথা উঁচু করে থাকার কারণটাই আমি দূরে সরিয়ে দিবো। এক ঢিলে আমি তিন পাখি মারবো।অনিয়া শেষ হবে,ফিহা জেলে যাবে,পুরো কোম্পানি আমার হাতে আসবে।আমার যে এতো খুশি লাগছে।এখন ফিহা মিটিংয়ে। সবাই কাজে ব্যস্ত।অনিয়া নির্ঘাত রুমে একা।কিন্তু ঐ বজ্জাত টেবলেটের কি ব্যবস্থা করবো সেটা একটু ভাবতে হবে।আইডিয়া পেয়ে গেছি।

কিছু একটা ভেবে খুশি মনে হাঁটতে লাগলো। চুপিচুপি ফিহার কেবিনে সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজাটা হালকা ফাঁক করে দেখলো অনি দোলনায় ঘুমাচ্ছে। ওর দোলনার পাশে টেবলেট চোখ বন্ধ করে মুখ গুঁজে শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে নাকি জেগে আছে তা বুঝতে পারলো না রিয়ানা।কিন্তু ওর মনে তো এখন শয়তানি বুদ্ধি উঁকি ঝুঁকি মারছে।কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে রিয়ানা বিকট একটা শব্দ করলো।কি হয়েছে তা দেখার জন্য টেবলেট এক দৌড়ে বাইরে চলে এলো।এটায় ছিলো রিয়ানার টেবলেটকে সরানোর বুদ্ধি।এই সুযোগে রিয়ানা আড়াল থেকে বের হয়ে রুমে ঢুকে পরলো।দরজাটা আটকে দিলো।আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে লাগলো অনিয়ার দোলনার দিকে।

টেবলেট ফিরে এসে দেখলো দরজা বন্ধ। পশু,পাখি তার মনিবের বিপদ নাকি আগের থেকে টের পায়।দরজার উপরের দিকে কিছুটা সাদা কাচ লাগানো।ঐ কাচ দিয়ে তাকালে ভেতরের সব দেখা যায়।কিন্তু এতো ওপরে টেবলেট দেখবে কি করে?আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে থাকে। একসময় পেয়েও যায়।দরজার থেকে কিছুটা দূরে একটা হালকা পাতলা ছোট টুল দেখতে পায়। টেবলেট সেটাকে মাথা দিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে দরজার সামনে নিয়ে আসে।তারপর সেটায় উঠে সাদা কাচটার দিকে উঁকি দেয়।ততক্ষণে রিয়ানা অনির ফিটারে দুধ গুলে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে ফেলেছে।বাঁকা হেসে অনির দিকে এগুতে থাকে।

রিয়ানাঃ আর কিছু সময় পর সব শেষ হয়ে যাবে।ঘুমিয়ে নেও ছোট্ট মা-মণি।তোমার মা সেদিন খুব বড় মুখ করে আমায় অপমান করেছিলো।সেই মুখ আজ আমি গুড়িয়ে দিবো।এই রিয়ানাকে অপমান ও পাঙ্গা নেওয়ার মজা আমি হারে হারে টের পাইয়ে দিবো।

এক পা এক পা করে এগুচ্ছে রিয়ানা।মুখে তার বিশ্ব জয় করা হাসি।টেবলেট দরজার বাইরে থেকে ঘেউ ঘেউ করছে।ওর চোখেও আজ ভয়।কিন্তু সাউন্ড প্রুফ থাকায় রিয়ানা টেবলেটের চেঁচামেচি শুনতে পাচ্ছে না।সাধারণত এদিকে কেউ আসে না।যে যার যার কাজে ব্যস্ত।টেবলেটের গলার আওয়াজ কেউ পাচ্ছে না।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে