মায়াবন বিহারিনী পর্ব – ০২

0
965

#মায়াবন বিহারিনী🖤
#২য় পর্ব
#ফাহমিদা চৌধুরী

শেষমেষ সে কারো জীবনের মধ্যে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে ঢুকে পরলো কথাটা মস্তিষ্কে আসতেই মায়া একমুহূর্তও রাহিদের সামনে দাড়ালো না, রাহিদকে পাশ কাটিয়ে মায়া দৌড়ে রুমে চলে আসে। রাহিদ মায়ার এমন আচরণ দেখে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। মায়া কি তাকে কোনোভাবে ইগ্নোর করতে চাইছে কিন্তু কেন? রাহিদ আপাতত সেসব কিছু না ভেবে বৃষ্টি দেখাই মনযোগী হলো।
মায়া রুমে এসে আয়ানায় নিজেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে, নাহ তার তো কোনো কিছু কমতি নেই, তাহলে কেন সে কারো জীবনে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে ঢুকে পরলো, নাহ আর ভাবতে পারছে না সে.।
এবার সে ও নিজের সাথে রাহিদকে আর জড়াবে না যেই সম্পর্ক ভিত্তিহীন সেই সম্পর্কে না থাকাই ভালো কথাগুলো মনে মনে ভেবে মায়া কিচেনে চলে গেলো।

রাহিদ রুমে এসে মায়াকে না দেখে বিছানায় শুয়ে মোবাইল টিপছে।অপরদিকে মায়ার শাশুড়ী কিচেনে এসে মায়াকে পর্যবেক্ষণ করছে মায়া অনেক গুছিয়ে কাজ করছে তা দেখে মায়ার শাশুড়ী আলতো হাসে। মায়া তার শাশুড়ীকে দেখে বলে “মা আপনার কি কিছু লাগবে?”
নাহ আমি তো দেখতে এসেছিলাম তুই কি করছিস আর তুই একটু বস তোর সাথে আমার কথা আছে ( মায়ার শাশুড়ী)

হুম মা বলুন কি বলবেন হাতের কাজ রেখে ( মায়া)
রাহিদ কি তোকে কিছু বলেছে দুপুরের ঘটনার জন্য? ( মায়ার শাশুড়ী)
নাহ মা উনি আমায় কিছু বলেননি। আর হে উনি আগের ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত তাই উনাকে আর কিছু বলবেন না প্লিজ ( মায়া)

আচ্ছা বেশ তো আমার ছেলে তাহলে লাইনে এসেছে হেসে বলে (মায়ার শাশুড়ী)

মা আপনি যান আমি আপনাদের জন্য চা করে আনছি এই বলে মায়া কাজে ব্যাস্ত হয়ে পরে। মায়ার শাশুড়ী চলে গেলেন কিচেন থেকে। মায়া চা করে সবার জন্য ড্রয়িংরুমে নিয়ে গেলো। শশুর শাশুড়ী কে চা দিয়ে রাহিদের চা নিয়ে রুমে যাওয়ার সময় রাহিদ এসে মায়ার হাত থেকে চা নিয়ে তার বাবার পাশে বসে পরে। রাহিদের এমন আচরণ দেখে তার বাবা মা অবাক চোখে ছেলেকে দেখছে। রাহিদ তাদের চাহনি দেখে মুচকি হেসে মায়াকে বলে মায়া আপনি ও বসুন আমাদের সাথে চা নিয়ে। মায়া অবাক হলে ও পরে তার রাহিদের কথাগুলো মনে পড়ে যায় সাথে সাথে মুখে তাচ্ছিল্যর হাসি ফুটে উঠে। মানুষটাকে সে চিরদিনের জন্য মুক্তি দিবে তাই এই আচরণ।

রাহিদের বাবা মা শুধু ছেলেকে দেখছে দুপুরের ঘটনার পর কি এমন হলো যে রাহিদ পালটে গিয়েছে, মায়ার সাথে একদম স্বাভাবিক ব্যবহার করছে তাহলে কি রাহিদ মায়াকে মন থেকে মেনে নিয়েছে! কথাটা মাথায় আসতেই তাদের মুখে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে। যাক ছেলে তাহলে বুজেছে তার জন্য মায়াই পারফেক্ট জীবনসঙ্গী হিসেবে। মায়ার শাশুড়ী মায়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে কি হলো মায়া তুই ও বস আমাদের সাথে, হুম বলে মায়া তার শাশুড়ীর পাশে বসে পরে। সবাই যে যার মতো করে আড্ডা দিচ্ছে কথা বলছে একপর্যায়ে রাহিদ চা শেষ করে যাওয়ার সময় মায়াকে তার রুমে যেতে বলে গেলো। তা দেখে মায়ার শাশুড়ী হেসে মায়াকে বলে যা আমার ছেলেটা তোকে ডাকছে
যা গিয়ে দেখে আয় কিছু লাগবে কিনা, মায়া তার শাশুড়ীর কথাই রুমে এসে দেখে রাহিদ রুমে নেই হয়তো ওয়াশরুমে তাই মায়া বিছানার একপাশে বসে রাহিদের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। বেশকিছুক্ষন পর রাহিদ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে তে হাত মুছতে মুছতে মায়ার পাশে এসে বসে পরে। মায়া রাহিদের দিকে একনজর তাকিয়ে মাথা নিচু করে, জিজ্ঞেস করে আপনি কি আমায় কিছু বলবেন??
হুম আমি আপনাকে কিছু বলতে চাই। (রাহিদ)
জ্বি বলুন কি বলবেন। (মায়া)
দেখুন আমাদের ডিভোর্স হওয়ার পর তো আপনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন তাই না? (রাহিদ)
হুম কিন্তু হঠাৎ এসব কেন বলছেন? (মায়া)
আমি চাই আপনি আপনার পড়াশোনা আবার কন্টিনিউ করুন। যেই বিয়ের জন্য পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছেন সেই বিয়েটাই যেহেতু আর থাকবে না তাই নিজের এতবড় ক্ষতি করাটা বোকামি বলে আমি মনে করি।(রাহিদ)

আপনি কি আমাকে এই কথা বলার জন্য ডেকেছেন? (মায়া)
জ্বি আপনি চাইলে আপনার পড়াশোনার সমস্ত খরচ আমি বহন করতে রাজি আপনি আপনার পড়াশোনা আবার শুরু করুন। (রাহিদ)
টেনশন করবেন না ডিভোর্স এর পর ঠিক ই চলতে পারবো আর হে আপনার চাই মুক্তি তাই আমি আপনাকে বিয়ে নামক বন্ধন থেকে মুক্তি দিয়ে দিবো। তআমায় নিয়ে না ভাবলে ও চলবে আমি চাই না আপনি আমায় নিয়ে ভাবুন। (মায়া)
দেখুন আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাইনি আপনি আমায় ভুল বুজছেন। আমি আগেও বলেছি আমি বাধ্য ছিলাম তাই এই বিয়ে, আর অবশেষে আপনার সাথে রাগের মাথায় খারাপ আচরণ করে সত্যি আমি দুঃখিত। আমি চাই না আপনি আমার দ্বারা আর কোনো কষ্ট পান। (রাহিদ)

নাহ আমার আপনাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। আর হে আমি যতদিন আছি ততদিন মা বাবাকে বুঝানোর চেষ্টা করবো এতে ওদের কষ্ট কিছুটা কম হবে। তারা এমনিতেও আপনার হঠাৎ বদলে যাওয়াতে মনে করে নিয়েছেন যে আপনি আমায় মেনে নিয়েছেন তাই তাদের এই ভুল ধারণাটা ভেঙে দিতে হবে। আমি চাই না তারা আর কষ্ট পাক আমাদের জন্য। তাই ডিভোর্স টা তাড়াতাড়ি হলে ভালো হয়। (মায়া)
হুম আমি উকিলের সাথে কথা বলেছি।তিনি বলেছেন এভাবে হুটহাট ডিভোর্স হয়না তাই কমপক্ষে আমাদের তিনমাস একসাথে থাকতে হবে। এরপর যা করার করা যাবে। (রাহিদ)
হুম সবই বুজলাম এই তিনমাস আপনাকে আমার সাথে মানিয়ে নিতে হবে আশাকরি আপনার কোনো সমস্যা হবে না। আর যদি আপনার আমাকে নিয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হয় তাহলে বলে দিবেন। এতদিন না জেনে থেকেছি তাই হয়তো বুঝতে পারিনি। এখন যদি জেনেশুনে আপনার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ব্যাপারটা খুব খারাপ হবে তাই না কথাগুলো একনিশ্বাসে বলে থামে মায়া। রাহিদ মায়ার এরুপ কথায় ভড়কে যায়। মায়াকে সে সহজ সরল ভেবে ছিল কিন্তু তার ভাবনার উল্টো হলো মায়া। সে স্বাভাবিক তবু্ও রাহিদের কাছে মায়ার এই স্বাভাবিক রুপটা কঠোর লাগলো। রাহিদ মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মায়া মাথা নিচু করে এখনো স্থির বসে আছে।বেশকিছুক্ষণ নিরবতাই কেটে যাওয়ার পর, মায়া মাথা উঠিয়ে রাহিদের দিকে তাকালেই চোখাচোখি হয়ে যায়। মায়া দ্রুত চোখ সরিয়ে নেই। রাহিদ এখানো মায়ার দিকে তাকিয়ে আছে মায়া বুঝতে পেরে রাহিদকে জিজ্ঞেস করে আপনার কি আর কিছু বলার আছে? আমাকে যেতে হবে হাতের কাজ পরে আছে এই বলে মায়া আবার ও থেমে যায় রাহিদের কাছ থেকে উত্তরের আশায়। কিন্তু রাহিদের কাছ থেকে কোনো উত্তর না আসায় মায়া উঠে পরে যাওয়ার জন্য, পা বাড়াতেই রাহিদের কথায় স্তির হয়ে যায় তার পা জোড়া। রাহিদ মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে” মায়া আপনি চান আমি আপনার কোনো বিষয় নিয়ে না ভাবি তাইতো? বেশ তাহলে আমি আর আপনার কোনো ব্যাপারে ইন্টারফেয়ার করবো না। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন বিয়েটা আমি না মানলে ও আমার জন্য আপনার কোনো ক্ষতি হোক এটা আমি চাই না। আর আমি এটাও জানি আপনি পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলেন তাই আপনাকে এই আবার ও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে বলেছিলাম। আর রইলো আমার স্বাভাবিক আচরণ তা আমি আর আপনার সাথে কোনোরকমের খারাপ ব্যবহার করবো না। তাই বাবা মা যা ভাবার ভাবুক ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত আপনার সাথে আমাকে এভাবেই থাকতে হবে মনে রাখবেন কথাটা……

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে