মনের অন্তরালে পর্ব-১২

0
828

#গল্পের_নাম_মনের_অন্তরালে
#লেখনীতে_Alisha_Rahman_Fiza
পর্বঃ১২

ঢাকায় পৌছাতেই নয়নাকে ডক্টর দেখানো হয় ডক্টর সব কিছু চেক করে বললেন নয়না ঠিক আছে পরিবেশ পরিবর্তনের কারাণে এই অবস্থা সে কিছু মেডিসিন লিখে দিলো আর বললো নয়নার খেয়াল রাখতে।
পরশ আর প্রলয় দুজনই হাফ ছেড়ে বাঁচলো ডক্টরের কথা শুনে প্রহেলী আর নয়নাকে তাদের বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে পরশ বললো,
~প্রলয়,নয়নাকে উপরে দিয়ে আয়।
প্রহেলী বললো,
~আমি নিয়ে যেতে পারবো আর ২দিন এখানেই থাকবো।
প্রলয় বললো,
~আমি নয়নাকে দিয়ে আসি।
বলেই সে নয়নার একহাত ধরে আস্তে আস্তে উপরে নিয়ে যেতে লাগলো।পরশ বললো,
~প্রহেলী,আমি আগামীকাল আসবো আজ মাকে নিতে একটু মামার বাড়ি যেতে হবে।
প্রহেলী বললো,
~মাকে সাথে করে আগামীকাল নিয়ে আসবেন।
পরশ বললো,
~আচ্ছা।
তাদের কথার মাঝেই প্রলয় এসে পরলো প্রহেলী তাদের বিদায় দিয়ে উদাস মনে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে পরলো।বাসার দরজা খোলা থাকায় সে ভিতরে ঢুকে পরলো আর প্রথমেই তার দেখা হলো আমেনা সিকদারের সাথে মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~কেমন আছো মা?
আমেনা সিকদার বললেন,
~ভালো।তুই কেমন আছিস?
প্রহেলী বললো,
~আছি ভালোই।
আমেনা সিকদার বললেন,
~নয়নার এতোটা শরীর খারাপ হলো কী করে?
প্রহেলী গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বললো,
~কক্সবাজারের আবহাওয়া ওকে মানায়নি মা।
তখনই মারিয়া সিকদার উপস্থিত হলেন আর বললেন,
~প্রহেলী,মেয়েটার জ্বরটা কমেছে মেডিসিন গুলো কোথায়?
প্রহেলী হাতে থাকা প্যাকেটটা এগিয়ে দিলো মারিয়া সিকদার বললেন,
~আমার মেয়েটার খেয়াল রাখার জন্য ধন্যবাদ।
প্রহেলী বললো,
~আমার বোনের খেয়াল আমিই তো রাখবো বলুন।
মা তুমি সব কিছু গুছিয়ে নিয়ো ২দিন পর তুমি আমার সাথে যাবে।
মারিয়া সিকদার বললেন,
~সে কি বুবু কোথায় যাবে?
প্রহেলী বললো,
~আমার সাথে যাবে এ বাড়ি এখন আপনার সন্তানদের আমার মায়ের সন্তান আমি তাই সে আমার সাথে থাকবে।
জামিলা সিকদার সেখানে চলে আসলেন আর এসব শুনে বললেন,
~তাহলে তোর দাদী কী দোষ করেছে? আমাকেও সাথে নিয়ে চল।
প্রহেলী বললো,
~তোমার সন্তানকে ছেড়ে যেতে পারবে।
জামিলা সিকদার বললো,
~তুই নিয়ে গেলে যাবো।
প্রহেলী কিছু না বলে মুচকি হেসে তার নিজ রুমে চলে আসলো বারান্দায় গিয়ে টবের মরে যাওয়া ফুলটির দিকে তাকিয়ে বললো,
~সব কিছুরই শেষ আছে।
মারিয়া সিকদার রান্নাঘরে দাড়িয়া নয়নার জন্য সুপ রাঁধছেন আর ভাবছে,
~এরকম কেন হলো?প্রহেলী কেন এই সিদ্ধান্ত নিলো?
হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো মারিয়া সিকদার হাতের কাজ রেখে দরজা খুলতে চলে গেলেন।দরজা খুলেই দেখতে পেলেন আমরুল সিকদার আর মাহিন দাড়িয়ে আছে।আমরুল সিকদার বললেন,
~নয়নার শরীর কেমন এখন?
মারিয়া সিকদার বললেন,
~এখন ভালোই।
তারা দুজন রুমে চলে গেলেন প্রহেলী নিশ্চুপ ভাবে আমরুল সিকদারের রুমে ডুকে পরলেন।যেমনটি ছোটবেলায় ঢুকতো আমরুল সিকদার প্রহেলীকে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন,
~যা বলার তাড়াতাড়ি বলো।

_______________

প্রহেলী বললো,
~আমি কী আপনার নিজ সন্তান?
প্রহেলীর মুখে এমন কথা শুনে ভরকে যান আমরুল সিকদার সে মেয়ের মুখের দিকে তাকাতেই তার বুক কেঁপে উঠলো।এই কয়েক বছর পর প্রথম সে প্রহেলীকে কাঁদতে দেখছেন প্রহেলী কোনো জবাব না পেয়ে বললো,
~মায়ের সব সম্পত্তি আপনার নামে করে দেওয়া হয়েছে আমি মাকে নিয়ে চলে যাবো।আশা করি আপনার কোনো কিছু আমাট কাছে অবশিষ্ট নেই।
আমরুল সিকদার চুপ করে আছেন কিছুই বলছেন না তার মনে ঝড় উঠেছে।প্রহেলী বললো,
~আমি কী জানতে পারি আপনি কেন আমাকে মারতে চেয়েছেন?
আমরুল সিকদার করুন চোখে প্রহেলীর দিকে তাকালো প্রহেলী বললো,
~থাক বলতে হবে না দাদীও আমার সাথে যেতে চায়।কিছুদিন থাকার পর আমি তাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দিবো।
বলেই প্রহেলী রুম থেকে বের হয়ে গেলো আমরুল সিকদার সেখানেই দাড়িয়ে রইলো।সম্পত্তির লোভে সে নিজ সন্তানকেই মেরে ফেলতে চেয়েছিল তাদের দুজনের সবকথাই মারিয়া সিকদার শুনেছে তার কেন যেন প্রহেলীর জন্য খারাপ লাগতে শুরু করলো মেয়েটা সেই ছোটবেলা থেকে একা লড়ছে।মারিয়া সিকদার রুমে ঢুকে স্বামীর দিকে তাকিয়ে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওয়াশরুম চলে গেলো।
২দিন পর
এই দুদিনে আমরুল সিকদার কারো সাথেই ভালো মতো কথা বলিনি।আজ প্রহেলী আর নয়না চলে যাবে তাই প্রলয় আর পরশ আসবে।সবাই আয়োজনে ব্যস্ত আমেনা সিকদার বললেন
~মারিয়া,তুৃমি যদি অনুমতি দাও তাহলে নয়নার বাবার সাথে একান্তে কিছু কথা বলতাম।
মারিয়া সিকদার আমেনা সিকদারের দুহাত ধরে বললো,
~অবশ্যই বুবু।
আমেনা সিকদার বললেন,
~একটু কাজটা সামলাও।
আমেনা সিকদার তার রুমের কার্বাড থেকে বড় বক্স বের করে চলে আমরুল সিকদারের রুমে।
আমরুল সিকদার চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন আমেনা সিকদার বললেন,
~আমি ভিতরে আসতে পারি?
আমরুল সিকদার চোখ খুলে তাকালেন আমেনা সিকদারকে দেখে উঠে বসলেন আর বললেন,
~আসো।
আমেনা সিকদার ভিতরে ডুকে হাতের বক্সটা বিছানায় রেখে বললো,
~এটার ভিতরে আমার বিয়ের সব গহনা আছে আর নাকফুলটা আমি নিয়ে যেতে চাই।
আমরুল সিকদার বললেন,
~তোমার জিনিস আমায় কেন দিচ্ছো?
আমেনা সিকদার বললেন,
~আমার এখানে কিছুই নেই মাফ করবেন। এগুলো এতবছর আমি সামলিয়ে রেখেছি মাহিনের জন্য আমার ছেলের বউকে আমি এগুলো দিতে চাই।
বলেই আমেনা সিকদার রুম থেকে চলে আসলো আমরুল সিকদার একবার বক্সের দিকে তাকিয়ে বক্সটা হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো,
~আমার ভাবনাই কী তাহলে ভুল?প্রহেলী আর আমেনা তো নিজের সবকিছু আমায় দিয়ে চলে গেলো এতোটা স্বার্থপর কী করে হলাম?
তার ভাবনার মাঝে ঘরে প্রবেশ করলো মারিয়া সিকদার তাকে দেখে আমরুল সিকদার হাতের বক্সটা এগিয়ে দিয়ে বললো,
~আলমারিতে তুলে রাখো এটা।
মারিয়া সিকদার বললেন,
~আমি তো ভাবতাম আমিই বুঝি খারাপ কারণ অন্যের সংসারে আগুন দিয়ে নিজ সংসার গড়েছি।কিন্তু আপনি তো নিজ মেয়েকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন।
পরশ,প্রলয় আর রুমানা তালুকদার এসে পরেছেন প্রহেলী, নয়না আর আমেনা সিকদার সব গুছিয়ে নিয়েছেন প্রহেলী জামিলা সিকদার কে বুঝিয়ে এখানেই রেখে যাচ্ছে।
প্রহেলী নয়নার হাত ধরে বললো,

________________

~বোন আমার আমি জানি তুই ছোট কিন্তু সংসারের হাল ধরতে হবে।প্রলয় তোকে অনেক সাহায্য করবে এগিয়ে যেতে পড়াশোনা মন দিয়ে করবি কোনো সাহায্য লাগলে আমাকে জানাবি।আমি তোর পাশে আছি তুই তো আমার লক্ষ্মী বোন সবকিছু বুঝিস।সুখে থাক অন্যকেও সুখে রাখ।
নয়না প্রহেলীকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আপু,আমি তোমার সাথে দেখা করতে যাবো প্রতি সপ্তাহে তুমিও যাবে আমার বাসায় বড়মাকে নিয়ে।
প্রহেলী বললো,
~অবশ্যই যাবো।
তখনই দরজায় টোকা পরলো প্রহেলী নয়নাকে ছেড়ে দিলো দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো আমরুল সিকদার দাড়িয়ে আছে।নয়না হাসি মুখে বললো,
~বাবা ভিতরে আসো বাহিরে কেন দাড়িয়ে আছে?
আমরুল সিকদার একবার প্রহেলীর দিকে তাকিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো।প্রহেলী নিজ কাজ করতে লাগলো বোঝাই যাচ্ছে আমরুল সিকদারের আগমনে তার কোনো ভাবান্তর নেই।আমরুল সিকদার নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
~ভালোভাবে থাকবি পড়াশোনায় মনোযোগ দিবি।আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবি।
নয়না বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~অবশ্যই জানাবো বাবা।
আমরুল সিকদার নয়নার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন আর প্রহেলীকে দেখতে লাগলেন।প্রহেলী নিজ কাজে ব্যস্ত এখানে তার কোনো খেয়াল নেই।
নয়না আমরুল সিকদারকে ছেড়ে দিয়ে বললো,
~আমি দাদীর কাছে গেলাম।
নয়না চলে গেলো আমরুল সিকদার প্রহেলীর কাছে এসে বললো,
~প্রহেলী মা তোমার সব গুছানো শেষ?
প্রহেলী অবাক নয়নে আমরুল সিকদারের দিকে তাকালো পরক্ষনেই মনে পরলো সবকিছু পরিশোধ করা হয়ে গেছে তাই হয়তো এতো ভালোবাসা।
প্রহেলী বললো,
~হ্যাঁ সব গোছানো শেষ আর দাদীকে বুঝিয়ে দিয়েছি সে কোথাও যাবে না।
আমরুল সিকদার আরো কিছু বলতে যাবেন তার আগে পরশ রুমে প্রবেশ করলো।পরশকে দেখে আমরুল সিকদার চলে গেলেন প্রহেলী পরশকে দেখে বললো
~আপনার শরীরটা কেমন?
পরশ বললো,
~ভালো।
বলেই সে প্রহেলীকে জড়িয়ে ধরলো প্রহেলী বললো,
~মা আমাদের সাথে যাচ্ছে তাতে কী কোনো সমস্যা হবে?
পরশ বললো,
~কোনো সমস্যা হবে না তুমি ওসব নিয়ে চিন্তা করো না।
তারা সবাই দুপুরের খাওয়ার পর রেস্ট নিয়ে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সবার থেকে বিদায় নিতে লাগলো।
মারিয়া সিকদার আমেনার হাত ধরে বললো,
~বুবু,আপনার বাসা ছেড়ে কোথাও যেতে হবে না আমরা সবাই একসাথে থাকবো।
আমেনা সিকদার বললেন,
~ভালো থেকো ওনার খেয়াল রেখো।
আমেনা সিকদার আমরুল সিকদারের কাছে এসে বললেন,
~দোকান এখন আপনার নামে সবকিছু দেখে শুনে রাখবেন।
পরশ,প্রহেলী,আমেনা সিকদার আর রুমানা তালুকদার রওনা হলো। অন্য গাড়িতে নয়না আর প্রলয় রওনা হলো।

____________

প্রলয় বললো,
~তোমার বাবার আজ অনেক খুশি হবে।
নয়না বললো,
~কেন?
প্রলয় বললো,
~প্রহেলী নামের আপদ যে তার জীবন থেকে দূর হয়ে গেলো তাই।
নয়না বললো,
~এভাবে বলবেন না আমি জানি বাবা ভুল করেছে।
প্রলয় বললো,
~কোনোদিন প্রহেলীর হয়ে প্রতিবাদ করেছো?করো নি তাই না?
নয়না চুপ করে রইলো প্রলয় নয়নার হাত ধরে বললো,
~নয়না,প্রহেলী তোমাকে অনেক ভালোবাসে একথাটা মনে রাখবে।
নয়না মাথা দুলালো প্রহেলী বাসায় পৌছে সবকিছু গুছিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো খাবার রাঁধতে তখনই আমেনা সিকদার বললেন,
~তোর করতে হবে না এবাসায় কী বসে বসে খাবো?আমি এসব কাজ করবো।
প্রহেলী কিছু বলবে তার আগে রুমানা তালুকদার বললেন,
~এসব কথা বলবেন না আপা এটা আপনারও বাসা আপনি চলেন দুই বুড়ি মিলে আড্ডা দেই।প্রহেলী সব সামলে নিবে।
এ বলে সে আমেনা সিকদারকে নিয়ে চলে গেলো।
রাতে সবাই একসাথে খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো পরশ প্রহেলীকে বললো,
~কোনো ধরনের চিন্তা করবে না সব ঠিক হয়ে যাবে।
প্রহেলী পরশের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরলো একটু শান্তির ঘুম প্রয়োজন।
প্রলয় সোফায় শুয়ে পরলো তখনই নয়না বললো,
~আপনি বিছানার এ সাইডে শুয়ে পরুন কোনো সমস্যা নেই।
প্রলয় বললো,
~তুমি সিউর?
নয়না বললো,
~একদম কোনো সমস্যা নেই।
প্রলয় বিছানার অন্যসাইডে শুয়ে পরলো নয়না নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে শুয়ে পরলো।
সকালে প্রহেলী নাস্তা তৈরি করছে তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো প্রহেলী শাড়ির আঁচলে হাত মুছে দরজা খুলে সামনে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো এ মানুষটি এখানে কী করছে?

চলবে

(বিদ্রঃকেমন হয়েছে জানাবেন।ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো🥰🥰।Happy Reading 🤗🤗)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে