ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১১

0
919

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১১]
লেখক – আবির চৌধুরী

আমি রুমে আসার পরে রাইসা আমার রুমে আসলো। এসেই চুপচাপ সে ঘুমিয়ে গেল। একটু পরে আমিও ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি অফিসে চলে গেলাম। অনেক দিন পরে অফিসে এসে দেখি অনেক কাজ জোমা হয়ে আছে৷ তারপর নিজের মতো করে কাজ শুরু করে দিলাম। কাজ করতে করতে দুপুর হয়ে আসল। হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো। আমি ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি রাইসা কল দিয়েছে। প্রথম বার কল কেটে দিলাম। তারপর আবার কল দিল আমি এবার কল রিসিভ করলাম।

— হ্যালো দেখছো না কল কেটে দিচ্ছি তাও কেন কল দিচ্ছো?

— কি কতিস তুই?

— কাজ করছি, ফোন রাখ।

— খাবার খেয়েছিস তুই?

— না আমার সময় হলে আমি খেয়ে নেবো। তুই খেয়ে নিস বায়।

এই বলে কল কেটে দিলাম। বিরক্ত লাগছে ওর সাথে কথা বলতে। ফোন রেখে দিয়ে কাজ করতে শুরু করে দিলাম আবার। একটু পরে আবার কল দিল রাইসা। এবার আর কল রিসিভ করলাম না। একের পর এক কল দিতেই থাকলো। মেজাজ টা গরম হয়ে যাচ্ছে আমার তাই ফোন অফ করে আবার কাজ শুরু করে দিলাম। দেখতে দেখতে অফিসের সব কাজ শেষ করে নিলাম। তারপর বাসার দিকে রওনা দিলাম। দুপুরে আজকে আর খাবার খাওয়া হলো না। বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।

— ঈশান তুই এসব কি শুরু করলি?

আম্মু এমন প্রশ্ন শুনে আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম — মানে, আমি আবার কি করলাম?

— তুই ফোন অফ করে রাখলি কেন? রাইসা তোকে কল দিয়েছে তুই কল রিসিভ করিস নাই আবার ফোন অফ করে দিলি!

— আমি কাজ করছিলাম, আর ও বার বার কল দিয়ে আমাকে বিরক্ত করছিল তাই আমি ফোন অফ করে দিয়েছি।

— খুব ভালো করছিস মেয়েটা দুপুর থেকে না খেয়ে শুধু কান্না করেই যাচ্ছে। আর তুই মেয়েটার সাথে এমন করছিস? এগুলো ঠিক না।

তারপর আম্মু আর কিছু না বলে চলে গেলো। আমি আম্মুকে কয়েকবার ডেকেছি কিন্তু আম্মু আমার ডাকে সারা না দিয়েই চলে গেলো। নিজের অফিসের ব্যাগটা সোফায় রেখে আমি আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি রাইসা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে যাচ্ছে। আমি গিয়ে রাইসার পাসে বসলাম।

— রাইসা তুই এই ভাবে কান্না করছিস কেন? কি হইছে তোর! আর তুই নাকি খাবার খাসনি দুপুরে?

— কেউ আমার খোঁজ নিতে হবে না।

কেঁদে কেঁদে কথাটা বলল রাইসা। নিজের কাছে কেমন জানি খারাপ লেগে উঠলো। তাই নরম গলাতে বললাম — রাইসা আমি সরি তখন কাজে ছিলাম তাই ফোন অফ করে দিয়েছি।

— আমাকে সরি বলতে হবেনা, আমি তো আপনাকে সব সময় বিরক্ত করি। আপনাকে আমি অনেক জ্বালাই তাইনা?

— নাহ,,

— না বলতে হবে না আর বিরক্ত করবোনা আপনাকে আমি। আপনার কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার। তাই আপনাকে আমি কিছু বলতে চাইনা।

এই কথা বলেই রাইসা অন্য দিকে ফিরে আবার কান্না করতে শুরু করে দিল। আজ কেন জানি খুব খারাপ লাগছে নিজের কাছে সত্যি তো মেয়েটাকে আমি কতো কষ্ট দেই। সব সময় খারাপ ব্যাবহার করি। কিন্তু মেয়েটা আমার সব কিছু সহ্য করে পড়ে আছে৷

— রাইসা সরি বলছি তো আর এমন হবে না কখনও। কথা দিচ্ছি তোমাকে এই ভাবে আর কান্না করোনা।

— কান্না করলে আপনার কি হুম? আমি তো আপনার কেউ না! আমি তো আপনার কাছে একটা আপদ মাত্র। আমাকে সরি বলতে হবে না।

— রাগ করলি কেন? আচ্ছা দেখ কান ধরছি আমি এমন আর কোনো দিন হবে না।

— রাগ! রাগ কি আমাকে মানায়? আমি কার উপরে বা রাগ করব? বাদ দেন এসব কিছু করার দরকার নেয়। আর কি বলছেন আর কোনো দিন করবেন না? করবেন কি ভাবে আমাকে তো আর আপনি পাবেন না খুঁজে।

— মানে?

— কিছুনা আপনাকে আমি আর বিরক্ত করবোনা। অনেক তো করলাম। এই বার আপনি খুব ভালো থাকবেন৷ যান খাবার খেয়ে নিন আপনি।

— তুই খাবিনা?

— আমার চিন্তা করতে হবেনা আপনি গিয়ে খেয়ে নিন আম্মু না খেয়ে আছে আপনার জন্য।

— তুই ও চল এক সাথে খাবো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

— না আমার খিদে নেই।

আমি আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। বুঝতে পারছি মেয়েটাকে আমি অনেক কষ্ট দিয়েছি। মানুষ সব কিছু সহ্য করতে পারলেও অবহেলা জিনিস টা সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু রাইসা দিনের পর দিন আমার অবহেলা সহ্য করে এসেছে আমি মেয়েটার সাথে অনেক অন্যায় করছি। কিছুক্ষণ পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে খাবার টেবিলের দিকে চলে গেলাম। টেবিলের সামনে গিয়ে দেখি আমাদের জন্য খাবার রেডি করে রেখেছে আম্মু। আমি এক প্লেট খাবার নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম।

— অনেক্ষন তো কান্না করলি এবার থাম খাবার খেয়ে নে। আমি আমাদের দুজনের জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

— আমি খাবো না বলছিনা? আমার খিদে নেই আপনি খেয়ে নিন।

এবার আমি কিছু না বলে রাইসার হাত ধরে টান মেরে বসিয়ে দিলাম।

— একটা কথাও বলবিনা আর একদম চুপচাপ খেয়ে নে।

ধমক দিয়ে কথাটা বললাম। রাইসা আমার ধমক শুনে আর কোনো কথা বলছেনা। তারপর আমি নিজের হাতে রাইসাকে খাইয়ে দিতে শুরু করে দিলাম। রাইসা আনার দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে আছে আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। আমি রাইসার চোখের পানি মুছে দিলাম। তারপর রাইসা আমার হাতে খেতে শুরু করে দিল। কেন জানি এখন নিজের মধ্যে খুব ভালো লাগা কাজ করছে। দুজনেই খাবার খাওয়া শেষ করে নিলাম। রাইসার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বের হচ্ছে-না।

— অনেক রাত হইছে এবার ঘুমা তুই।

তারপর আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রাইসা এখনও ঘুমিয়ে আছে। আজকে প্রথম বার রাইসার দিকে ভালো করে তাকালাম। রাইসার ঘুমন্ত মুখটা সত্যি অনেক মায়াবী। রাইসার মুখের সামনে তার এলোমেলো চুলে গুলো পড়ে আছে। আমি নিজের হাত দিয়ে চুল গুলো সরিয়ে দিলাম। এবার আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিলাম। রাইসা এখনও ঘুমিয়ে আছে। রাইসাকে আর ডাকলাম না আমি অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। অফিসে গিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কিন্তু আজকে কাজে মন দিতে পারছিনা রাইসার কথা খুব মনে পড়ছে৷ রাইসার কলের অপেক্ষা করে রইলাম। দেখতে দেখতে দুপুর হয়ে গেলো কিন্তু রাইসা আজকে আর একটা কল ও দিলনা। আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও রাইসা কল দিলনা। কেন্টিনে গিয়ে লান্স সেরে আসলাম। লান্স সেরে অফিসে এসে বসে রইলাম কাজ করতে ভালো লাগছে না। ভাবিলাম রাইসাকে একটা কল দেই। তারপর রাইসার ফোনে কল দিলাম রিং হচ্ছে কিন্তু রাইসা আমার কল রিসিভ করছেনা। অনেক গুলা কল দিলাম তাও রিসিভ করেনাই। মেজাজ টা আমার প্রচুর গরম হয়ে গেছে। ফোন রেখে দিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কাজ শেষ করে বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে আবার চলে গেলো। আম্মু আমার সাথে কোনো কথা বলল না। এবার আমি আমার রুমে চলে গেলাম রুমে গিয়ে দেখি রাইসা রুমেও নাই। ফোন টা বালিশের পাসে পড়ে আছে। তারপর রাইসাকে পুরো বাসা খুজতে থাকলাম। কিন্তু কোথাও পেলাম না। তারপর আমি আম্মুর রুমে চলে গেলাম।

— আম্মু রাইসা কই? রাইসাকে তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা?

— রাইসা চলে গেছে তার আব্বুর আম্মুর কাছে। তুই তো এবার অনেক হ্যাপি তাই না? তুই রাইসার ভালোবাসা টা বুঝতে পারিস নাই। একটা মেয়ে দিনের পর দিন এই বাড়িতে পড়ে ছিলো শুধু তোর জন্য আর তুই মেয়েটাকে শুধু কষ্ট দিয়েই গেলি। যা তুই তো এবার শান্তি আর কি? এটাই তো চাইছিলি তুই? এখন ওর খোঁজ করছিস কেন আবার? আরো কষ্ট দিয়ে ছাস নাকি তুই?

আম্মুর কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো। মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে-না আমার।

— এই নে রাইসা তোর জন্য একটা চিঠি দিয়ে গেছে। আর সে বলছে এই বাড়িতে সে আর ফিরে আসবেনা। এখন তুই আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।

আমি আর কিছু না বলে মনখারাপ করে আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমে চলে এলাম। রুমে এসে চিঠি টা খুলে পড়তে শুরু করে দিলাম,,

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে