ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-১৭

0
766

#ভালোবাসা অন্যরকম
[পর্ব – ১৭]
লেখক – আবির চৌধুরী

আমি দিয়াকে নিয়ে একটা রুমের মধ্যে শুইয়ে দিলাম। দিয়ার জ্ঞান এখনও ফিরে আসেনি। দিয়াকে শুয়ে দিয়ে আমি রুম থেকে বের হবো তখনই আম্মু আমাকে ডাক দিয়ে বলল — ঈশান তুই এই মেয়েকে আবার আমাদের বাসায় নিয়ে আসলি কেন? তোর কি কিছুই মনে নেই এই মেয়ে তোর সাথে কি কি করছে?

— হুম সব মনে আছে।

— দেখ তুই এই মেয়েকে বাসা থেকে এক্ষুনি বের করে দে। রাইসা দেখলে অনেক কষ্ট পাবে।

এমন সময় রাইসাও চলে আসলো।

রাইসা — কি হইছে আম্মু? আমি আবার কি জন্য কষ্ট পাবো? কি হইছে?

আম্মু — ঈশান ওই মেয়েকে নিয়ে আবার বাসায় এসেছে।

রাইসা — কোন মেয়ে?

আম্মু — আরে দিয়ার কথা বলছি আমি।

আম্মুর মুখে দিয়া নামটা শুনে রাইসা এবার চুপ হয়ে গেলো। তারপর আমি সবাইকে সব ঘটনা খুলে বললাম।

আম্মু — যাই হোক আমি এই মেয়েকে বাসায় রাখা যাবেনা তুই এই মেয়েকে বাসা থেকে চলে যেতে বল।
এমন মেয়েকে আমাদের বাসায় রাখতে আমি চাইনা।

ঈশান — আম্মু আসতে কথা বলো ও শুনতে পাবে।

আম্মু — শুনলে আমার কিছু যায় আসেনা। তুই এই মেয়েকে বাসা থেকে বের করবি নাকি সেটা বল নাকি আমি বের করে দেবো?

— আম্মু তুমি একটু বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।

আমি এই কথা বলতেই রাইসা আমার সামনে থেকে চলে গেলো আমার রুমের দিকে।

আম্মু — দেখ আমি এই মেয়ের জন্য আর আমার সংসারে কোনো ঝামেলা চাইনা। তোকে আমি বলে দিলাম।

এই কথা বলে আম্মুও আমার সামনে থেকে চলে গেলো। এখন আমি কি করব বুঝতে পারছিনা। আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি এইবার আমার রুমে দিকে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দেখি রাইসা খাটের উপরে শুয়ে কান্না করছে। আমি রাইসার দিকে এগিয়ে গেলাম।

— তুমি কান্না করছো কেন? কি হইছে তোমার?

— তুমি কি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে? আবার ওই মেয়েকে মেনে নিবে?

— কি বলছ এসব? পাগল হলে নাকি! দিয়াকে আমি বাসায় নিয়ে আসছি তার মানে এটা নয় যে আমি ওঁকে আবার মেনে নেবো। আমার উপরে কি তোমার কোনো বিশ্বাস নেই?

— আছে৷

— আর আমি তোমাকে ভালোবাসি দিয়াকে না।

এই কথা বলতেই রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।

— আমি তোমাকে হারাতে চাইনা। আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা ঈশান। খুব ভালোবাসি তোমাকে আমি।

— আমিও তোমাকে ভালোবাসি।

এইটা বলে রাইসা আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। এই ভাবে আমরা দু’জন দু’জনকে অনেক্ষন জড়িয়ে ধরে রাখলাম। তারপর আমি আমার রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলাম দিয়ার রুমের দিকে। দিয়ার রুমের সামনে যেতেই আম্মু আমাকে আবার ডাক দিলেন।

— কিরে কই যাস তুই?

— দিয়ার রুমে দেখি ওর জ্ঞান ফিরছে কিনা।

— কোনো দরকার নেই। আর এই মেয়েকে আমি বলে দেবো ও যেনো আমার বাসা থেকে চলে যায়৷ তুই তোর রুমে যা এখন।

— আম্মু তোমার একটু বুঝার দরকার আছে এই মেয়েটা এখন কোথায় যাবে এই অবস্থায়?

— যেখানে ইচ্ছে যাক আমার বাসায় থাকতে পারবে না এটাই আমার শেষ কথা। আর কোনো কথা আমাকে বলতে আসবিনা। আর এই মেয়ে এই বাসায় থাকলে আমি চলে যাবো রাইসা কে নিয়ে তুই থাকিস এই বাসায়।

এই কথা বলেই আম্মু চলে গেলো। আমি আম্মুকে অনেক বার ডাকলাম তাও আম্মু তাকালো না। তারপর আমি দিয়ার রুমে গিয়ে দেখি দিয়া বসে আছে।

— দিয়া তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

— আমি জানি আপনি কি বলবেন। আমি এমনি চলে যেতাম। আমি এখানে থাকতে চাইনা। আমি আর চাইনা আমার জন্য কারোর সংসারে ঝামেলা হোক। আমি তো একটা খারাপ মানুষ। আমাকে নিয়ে আপনার কোনো চিন্তা করতে হবে না।

— কিন্তু,,,

— আমাকে নিয়ে ভাবতে হবেনা। আপনি সত্যি অনেক ভালো মনের মানুষ। নিজের লোভের জন্যই এমন মানুষকে আমি হারিয়েছি। আমি চাইনা আমার জন্য আবার আপনার সংসারে কোনো অশান্তি নেমে আসুক।আমি চলে যাচ্ছি আমার পথে। ভালো থাকবেন আর পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

এই কথা বলে দিয়া বের হয়ে গেলো। আর সে বাসা থেকে চলে গেলো। তারপর থেকে আর দিয়ার সাথে আমার কোনো যোগাযোগ নেই। এই ভাবে কেটে গেলো ৫ মাস। আমি আর রাইসা শুয়ে আছি হঠাৎ করে কারো কাতর মাখা গোলে শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। পাসে তাকিয়ে দেখি রাইসা পেটে হাত দিয়ে কান্না করছে।

— রাইসা কি হইছে তোমার কান্না করছো কেন? খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে?

কিন্তু রাইসা আমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলনা। সে বিছানার ছাদুর টা খামচে খামচে ধরেছে। বুঝতে পারছিনা কি করব আমি। সাথে সাথে আম্মুকে নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম। আম্মু দিয়াকে দেখেই বুঝতে পারছে যে রাইসা সন্তান জন্মদানের সময় হয়ে আসছে।

আম্মু — ঈশান তাড়াতাড়ি ডাক্তার কে ফোন লাগা। আর একটা এম্বুল্যান্স পাঠাতে বল তাড়াতাড়ি।

এই দিকে রাইসার চিৎকারের শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। ও মাগো বাবাগো বলে চিৎকার করছে। রাইসা এমন অবস্থা দেখে আমার শরীর থেকে ঘাম বের হতে শুরু করে দিল। আমি নিজের হাত দিয়ে ঘাম মুছে দিচ্ছি। তারপর হাসপাতালে ফোন দিয়ে বলে দিলাম তাড়াতাড়ি করে যেনো একটা এম্বুল্যান্স পাঠিয়ে দেয়।

আম্মু দিয়ার মাথায় হাত ভুলিয়ে দিচ্ছে আর দিয়াকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। আমি শুধু দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি একটা মেয়ে তার সন্তানকে দুনিয়াতে আনিতে কতটা কষ্ট করতে হয়। আর আমাদের মতো কিছু নরপশু আছে যারা স্ত্রীর গায়ে হাত তুলে। নারী দের সম্মান করেনা। সে ভুলে যায় যে সেও একজন নারীর পেট থেকে এসেছে। যাইহোক এসব কথা বাদ দিলাম। মুল গল্পে ফিরে আসি৷

দিয়া কিছুতেই সান্ত হতে পারছেনা। ধিরে ধিরে দিয়ার প্রশবের যন্ত্রণা বেড়ে যাচ্ছে।

আম্মু — মা আরেকটু অপেক্ষা কর এম্বুল্যান্স চলে আসবে এখনই। কিছু হবে না একটু অপেক্ষা করো।

রাইসা — আমি আর পারছিনা মা। আমি মরে যাচ্ছি কিছু একটা করুন প্লিজ।

এই দিকে আমার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি বের হচ্ছে। দিয়ার এমন অবস্থা দেখে আমার বুকের ভিতর টা পেটে যাচ্ছে। এবার আমি দিয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।

আমি — রাইসা কিছু হবেনা তোমার আমি আছি তোমার পাসে। তোমার কোনো কিছু হতে দেবোনা।

— ঈশান আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি আর পারছিনা এই যন্ত্রণা সহ্য করতে। আমি মনে হয় বাচব না।

— এই সব কথা মুখেও আনবে না আমি থাকতে তোমার কোনো কিছু হতে আমি দেবোনা।

আম্মু — ঈশান আবার ফোন দিয়ে দেখ বাবা এম্বুল্যান্স কি পাঠিয়ে নাকি?

আমি আবার হাসপাতালে কল দিলাম। ওখান থেকে কল রিসিভ করে বলছে অনেক আগেই তারা এম্বুল্যান্স পাঠিয়ে দিয়েছে। রাইসা একটু পর পর চিতকার দিয়ে উঠছে। মেয়েটার খুব কষ্ট হচ্ছে। কি করবো আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। আমি গিয়ে আবার রাইসার পাসে বসে ওর একটা হাত খুব শক্ত করে ধরে বসে রইলাম। আর ওঁকে বলতে থাকলাম।

আম্মু — ঈশান তুই একটু রাইসার বাসায় ফোন দিয়ে বলেদে তারা যেনো হাসপাতালে চলে আসে।

তারপর আম্মু কথায় আমি রাইসার বাসায় কল দিতে থাকলাম কিন্তু কেউ কল রিসিভ করে নাই। এই দিকে অনেক রাত হয়ে গেছে সবাই হয়তো ঘুমাচ্ছে। তাও অনেক গুলা কল দিলাম।

— রাইসা আর একটু অপেক্ষা করো এম্বুল্যান্স চলে আসবে এক্ষনি।

রাইসাকে এই কথা বলতে বলতে এম্বুল্যান্স এর আওয়াজ আমার কানে ভেসে আসলো। এইবার আমি রাইসাকে কোলে তুলে তাড়াতাড়ি করে বাসা থেকে বের হয়ে ওঁকে গাড়িতে শুয়ে দিলাম।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে