ভালোবাসা অন্যরকম পর্ব-০১

0
1714

#ভালোবাসা অন্যরকম
[সূচনা পর্ব ]
লেখক – আবির চৌধুরী

হঠাৎ করে রাস্তায় আমার স্ত্রীকে অর্ধ উলঙ্গ অবস্থায় দেখে আমি থমকে গেলাম। ওর শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখি অনেক যায়গায় রক্ত লেগে আছে। গলায় নখের দাগ স্পষ্ট দেখতে পারছি। আমার শরীর থেকে ঘাম ঝাড়তে শুরু করে দিল। আমার স্ত্রীকে এই ভাবে দেখিব তা আমি কখনও কল্পনাও করিনি। নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা। আমার স্ত্রী বুকের উপরে হাত দিয়ে তার বুক ডেকে রেখেছে। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। এসব দেখে আমার চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই কয়েক ফোটা পানি বের হয়ে পড়লো। আমি আমার স্ত্রীর দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের গায়ের কোট খুলে তার গায়ে পড়িয়ে দিলাম। সে আমার দিকে করুনার দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।

— দিয়া এসব কি করে হলো?

দিয়া আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল। সবাই খারাপ দৃষ্টিতে দিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি পরিস্থিতি বুঝতে পেরে দিয়াকে গাড়িতে তুলে বাসার দিকে রওনা দিলাম। আমি নিজে গাড়ি ড্রাইভিং করছি দিয়া আমার পাশে বসে কান্না করেই যাচ্ছে। আমি বুঝতে পারছিনা এসব কি করে হলো। দিয়াকে নিয়ে বাসায় চলে গেলাম। বাসার সামনে গিয়ে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো। আম্মু দিয়ার এমন অবস্থা দেখে অবাক হয়ে দিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।

আম্মু — বউমা তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? কি হইছে তোমার?

আমি — আম্মু এখন কোনো প্রশ্ন করতে হবে না। আগে আমি ওঁকে নিয়ে আমার রুমে যাই।

আম্মু — ঠিক আছে যা তাড়াতাড়ি।

তারপর আমি দিয়াকে নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম। রুমে গিয়ে দিয়াকে ফ্রেশ হতে পাঠিয়ে দিলাম।

অন্যদিকে দিয়া ওয়াশরুমের ভিতরে গিয়ে ঝরনা ছেড়ে দিল। আর দিয়া তার পুরো শরীর ভিজিয়ে নিচ্ছে আর কান্না করছে। দিয়া প্রায় একঘন্টা পরে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো।

— দিয়া এবার বলো এসব কি? তোমার এই অবস্থা কি করে হলো?

দিয়া কিছু না বলে চুপ হয়ে রইল। এই দিকে রাগে আমার শরীর জ্বলতে শুরু করে দিল।

— দিয়া চুপ করে থেকোনা আমার কথার উত্তর দাও। এসব কি করে হলো আর তোমার এই অবস্থা কি করে হলো?

— এখন আমার খুব খারাপ লাগছে পরে সব কথা বলব।

এই কথা বলে দিয়া খাটের উপরে শুয়ে পড়লো। কিছুদিন ধরে দিয়ার মধ্যে কেমন যেনো একটা হতাশা দেখতে পাচ্ছিলাম। সব সময় কিছু নিয়ে ভাবত আমি জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দিত না। সব সময় আমাকে এড়িয়ে চলত। ওর মধ্যে অন্য রকম কিছু একটা অনুভব করতে পারতাম। রাতে আমার সাথে ঠিক করে কথা বলতোনা। আমার আগেই ঘুমিয়ে যেতো। দিয়া আগে এমন ছিলনা আমাকে রেখে কখনোই একা খাবার খেতো না। সেই দিয়া আমাকে রেখে খাবার খেয়ে নেয় কয়েকদিন ধরে। ঘুমানোর আগে আমার সাথে গল্প না করলে নাকি তার চোখে ঘুম আসতো না আর সেই দিয়া আমার সাথে কথা না বলে ঘুমিয়ে যায়। এসব এর কারণ টা আমি বুঝতে পারিনি। আজকে আবার এমন একটা ঘটনা ঘটছে যেটা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম। দিয়া আমার থেকে কেন এসব লোকাচ্ছে বুঝতে পারছিনা। আজকে দিয়ার এমন অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিলো। সবাই কি ভাবে আমার স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে ছিল। এসব ভাবতে ভাবতে আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি দিয়া আমার পাশে নাই। তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠে দিয়াকে খুজতে শুরু করে দিলাম। কিন্তু পুরো বাসা খুজে দিয়াকে কোথাও পেলাম না। পরে ছাদের উপরে গিয়ে দেখি দিয়া ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে। দিয়াকে দেখে একটু ভালো লাগছে। আমি গিয়ে দিয়ার পাশে দাড়ালাম।

— দিয়া তুমি এখানে আর আমি তোমাকে পুরো বাড়ি খুঁজে কোথাও পেলাম না।

— আপনি অফিসে যাবেন না?

— যাবো তার জন্য তো তোমার খোঁজ করছি। তোমার হাতের চা না খেলে তো আমার সারাদিন ভালো যায়না।

দিয়া আমাকে কিছু না বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল, একটু সামনে যেতেই আবার দাড়িয়ে গেলো।

— আসেন আমি চা করে দিচ্ছি।

দিয়া এই কথা বলে আবার হাঁটা শুরু করে দিল।আমি দিয়ার পিছু পিছু হাটা শুরু করে দিলাম। তারপর নিজের রুমে গিয়ে চায়ের জন্য অপেক্ষা করে বসে রইলাম। একটু পরে দিয়া এক কাপ চা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিল। চা দিয়ে রিয়া চুপ করে আমার পাশে বসে রইল। আমি চা খেয়ে অফিসের দিকে রওনা দিলাম।

এবার আমার পরিচয় দিয়ে দেই অফিসে যেতে যেতে। আমি ঈশান আহামেদ। মা বাবার এক মাত্র ছেলে। বাবা অনেক বছর আগেই মারা গেছেন। তারপর থেকে আমি আর আমার আম্মু এক সাথে থাকি। আমি পড়াশোনা শেষ করে একটা অফিসে জব নিলাম। চাকরি পাওয়ার কিছুদিন পরেই দিয়ার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। দিয়ার সাতে আমার বিয়ে হয়েছে মাত্র এক বছর পার হলো। আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়েছে। তবে আমাদের মধ্যে ভালোবাসার কমতি কখনোই ছিলনা। দিয়া আমকে অনেক ভালোবাসে। কিন্তু হঠাৎ কি হয়ে গেলো দিয়ার আমি বুঝতে পারিনি দিয়া ও আমাকে কিছুই বলছেনা।

আপনাদের আমার পরিচয় দিতে দিতে আমি অফিসের সামনে চলে এলাম। অফিসে গিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে বসলাম আর কাজে মন দিলাম। হঠাৎ করে আমার কেবিনে আসলো রাজ। রাজ আমার সাথেই কাজ করে আমার পাশের কেবিনে।

— ঈশান সাহেব কি অবস্থা কাল রাত কেমন কাটলো আপনার?

রাজের মুখে এমন প্রশ্ন শুনে আমি অবাক হয়ে বললাম — কাল রাত কেমন কাটছে মানে কি?

— মনে হয় আপনি কিছুই জানেনা আমি কাল সব দেখেছি।

— কি দেখেছেন আপনি?

— কাল যে একটা মেয়েকে নিয়ে বাসায় গেলেন আমি কিন্তু ওখানেই চিলাম। খুব মজা করছেন তাইনা? পতিতা মেয়েটা কিন্তু সেই ছিল। যদি আপনার যায়গায় আমি থাকতাম ভাবতেই কেমন লাগছে।

রাজের কথা শুনে আমার গায়ে আগুন ধরে গেলো।

আমি — Talk to you soon and keep up the good content. She is my wife. Don’t talk nonsense about him ok.

রাজ — What?

— যেটা বললাম সেটাই। ওই মেয়েটা আমার স্ত্রী ছিল। কোনো পতিতা মেয়ে না।

— i am sorry but এই মেয়েকে আমি কালকে একটা ছেলের সাথে দেখছি।

— একটা ছেলের সাথে মানে কি? আর কোথায় দেখেছেন?

— আমি কাল অফিস থেকে বের হয়ে একটা রেস্টুরেন্টে লান্স করতে গিয়ে দেখলাম একটা ছেলের সাথে আপনার স্ত্রী কি নিয়ে কথা বলছে। দেখে মনে হচ্ছিলো আপনার স্ত্রী খুব রেগে ছিল। কিন্তু যে ছেলের সাথে ছিলো ছেলেটা কেমন যেনো ব্যাবহার করছিল।

— আপনি কি ছেলেটাকে চেনেন?

— নাহ। আমার কথায় কিছু মনে করবেন না। আমি না বুঝেই এসব বলে ফেললাম।

এই কথা বলে রাজ আমার কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। রাজের কথা শুনে আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেলো। মাথায় কোনো কিছুই কাজ করছেনা। দিয়া আমার সাথে এমন করতে পারলো? এসব ভেবে আমার রাগ চরমে ওঠে গেল। আমি কাজে মনযোগ দিতে পারছিনা। নিজের মনের ভিতর অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে৷ সব প্রশ্নের উত্তর আমার চাই৷ এসব ভেবে আমি অফিস থেকে বেরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় পৌছে গেলাম। নিজের রুমে গিয়ে দেখি দিয়া খাটের উপরে বসে আছে। আমি দিয়ার কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে টেনে দাড় করালাম। দিয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইল।

— দিয়া এসব কি শুনি আমি তুমি কাল কোন ছেলের সঙ্গে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলে আর ছেলেটা কে? আমার সব প্রশ্নের উত্তর চাই আমি।

দিয়া কিছু না বলে হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে গেল। আমি দিয়াকে কোলে তুলে খাটের উপরে শুইয়ে দিয়ে আম্মু কে ডেকে নিয়ে আসলাম।

আম্মু — ঈশান তুই ডাক্তার কে কল দিয়ে বাসায় আসতে বল।

আম্মুর কথায় আমি ডাক্তার কে কল দিলাম। ডাক্তার কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসলো। ডাক্তার দিয়াকে চেকাফ করলো। দিয়ার জ্ঞান ফিরছে।

আমি — ডাক্তার কি হইছে দিয়ার?

ডাক্তার — তেমন কিছুই না মিষ্টি খাওয়ান আপনি বাবা হতে চলছেন।

ডাক্তারের কথা শুনে আমি খুশি হতে পারলাম না। কারণ এই সন্তান আদোও আমার কিনা আমি জানিনা। এসব ভাবতেই খুব খারাপ লাগছে। আমি দিয়ার দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। বের হয়ে আসতেই দিয়া রুমের দরজা বন্ধ করে দিল। দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনে আমি দরজা ধাক্কা দিতে শুরু করে দিলাম। এই মেয়ে যে পরিমাণ রাগি কি করে বসে আল্লায় ভালো যানে।

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে