ভালোবাসার দূরত্ব পর্ব-০২

0
941

#ভালোবাসার_দূরত্ব #পর্ব 2
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

,,
,,
আমি,নাহিদ আর সামির ভাইয়া হেঁটে হেঁটেই মামার বাড়িতে আসলাম। সন্ধ্যার পর হাটতে ভালোই লাগে,আরো সাথে যদি প্রিয় মানুষটা থাকে। আমারো ভালো লাগছে কিন্তু ওনার ওপর রাগ করে আছি আমি ।

আসলে যে এই রাগের মানে বুঝে না সেখানে রাগ করাটা বেমেনান। তবুও আমি রাগ করি।আমি একটুতেই রাগ করি , ঠিক রাগ না অভিমান করি আমি চাই উনি আমার অভিমানটা বুঝুক। আমার আভিমান ভাঙ্গাক।

সারা রাস্তা একটা কথাও বলি নি আমি। এদিকে নাহিদ আর সামির ভাইয়া কথা বলতে বলতে যাচ্ছে। আমি যে একটা মানুষ আছি সেদিকে কি কারো খেয়াল আছে নাকি।

মামার বাড়িতে এসেই মামাকে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম। মামা খুব যত্নে আগলে নিয়ে বললো কি রে মা আজ আসিস নি কেনো।

এমনি মামা,ওই একটু মাথাব্যথা করছিলো।

এই কথা শুনে মামি বললো সে কি নেহা, মাথাব্যথা করলো কেনো,আর ওষুধ খেয়েছো তো।
মামির সাথে আমার তেমন মিল নেই, মামি একটু অহঙ্কারী ধরনের।তবে কখনো খারাপ ব্যবহার ও করে নি। এখনো অনেক সুন্দর তাই সবসময় সুন্দরদেরকেই বেশি ভালোবাসে।ওনার কাছে সুন্দর মানে সাদা চামড়া। আমি দেখতে সুন্দর হলেও খুব ফর্সা নই।সবাই বলে আমার নাকি মায়াবি চেহারা।

আমি বললাম, না মামি ঘুমালে ঠিক হবে।
মামা বললো না তা বললে তো হবে না, খাবারের পর ঔষধ খেয়ে যাবি,তারপর সামির ভাইয়াকে বললো তোর কাছে কি মাথাব্যথার ঔসধ আছে।

উনি আসতে করে বললো আছে।

এতোক্ষনে সামির ভাইয়ার দিকে তাকালাম,মানুষটা এক দৃষ্টিতে মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে । এতোক্ষন তো ভালই ছিল হুট করে কি হলো যে এমন পেঁচার মতো মুখ করে আছে। আসলে আমি এখন নিজের অভিমান রাগ সব বাদ দিয়ে ওনার গম্ভীর হয়ে থাকার কারন ভাবছি। ভাবতে অবাক লাগলেও সত্যি যে আমার মন খারাপের থেকে বেশি কষ্ট হয় যখন ওনার মন খারাপ দেখি।

খাবারের পর উনি উঠে গেলো আর যাবার সময় বললো,নেহা আমার কাছে থেকে ঔষধ নিয়ে যাস। আমি খাওয়া শেষ করে ওনার রুমের দিকে গেলাম। ওমা লক করা। এই মানুষটা নিজেকে কি ভাবে বুঝি না,এখনে বলে আসলো ঔষধ নিয়ে যেতে তো রুমের দরজা লাগিয়ে রাখার কি আছে আজব। ভাবতেই দরজা খুলে উনি বাহিরে এসে আবার দরজা লাগিয়ে দিলো, যতোটুকু বুঝলাম ওনার ঘর অন্ধকার, কই কি আছে কিছুই বোঝা গেলো না। এ জিবনে বুঝি ওনার রুম দেখা হলো না।

উনি আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে গেলেন,

সমস্যা কি তোর

আমি আমতা আমতা করে বললাম, ক কই আমার কিসের সমস্যা

তাহলে আমাকে মিথ্যে বলছিলি কেনো

আমি আপনাকে কি মিথ্যে বলছি (অবাক হয়ে)

তোর মাথাব্যথা করছিলো তাই আসিস নি, আমাকে বললি এমনি। আর আজকে কি হয়েছে কথা বলছিস না কেনো আমার সাথে।

কিছু না বলে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকলাম

উনি এবার একটু জোরেই বললেন, কিছু জিজ্ঞেস করছি তোকে,উত্তর দিচ্ছিস না কেনো। কেনো এমন করছিস।

আমি কিছুটা পিছিয়ে গেলাম, তারপর ছোট ছোট করে বললাম আমি কথা বললেও দোষ না বললেও দোষ তাহলে কি করবো আমি।

আমার এমন বাচ্চামো কথা শুনে মনে হয় ওনার রাগ কমে গেলো। জিভ দিয়ে দুই ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বললো , তোকে কথা বলতে কখন নিষেধ করলাম আমি।

আমি চট করে বলে উঠলাম, অফিসেই তো বললেন কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করিস না , মনে নেই।

উনি নিচের ঠোঁট কামড়িয়ে কিছু একটা ভেবে একটু হাসলেন।আচ্ছা মহারানি এইজন্য রাগ করেছে(মনে মনে) তারপর বললেন, ঠিক করে মনে করে বল তো আমি কথা বলার জন্য বলেছিলাম নাকি অন্যকিছু।

আমি একটু ভেবে নিলাম। আচ্ছা উনি তো আমায় কথা বলার জন্য বলে নি। আমি কান্না করেছি তাই বলছিলো। নিজের করা কাজের জন্য নিজেই লজ্জা পাচ্ছি এখন।
তারপরো জোর খাঁটিয়ে বললাম ঐ একি তো হলো

আচ্ছা তাই বুঝি, কান্না করা আর কথা বলা এক হলো।

নাহ্ এখন আর এখানে থাকা যাবে না। তাই দ্রুত ওনার হাত থেকে ঔষধ নিয়ে দৌড় দিলাম। নিচে এসে মামার সাথে কথা বলার সময় সামির ভাইয়া আসলো।

আজকে এখানেই থেকে যা মা (মামা)

না মামা আজ থাকবো না,অন্যদিন কেমন

আব্বু আমি তাহলে এদেরকে রেখে আসি,চল তারাতারি (সামির)

রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি হেঁটে চলছি,আমি নাহিদ আর সামির ভাইয়া,আগের বারের থেকে এবার বেশি ভালো লাগছে।
,,

পরেরদিন অফিসে বসে আছি, সামির ভাইয়া ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে, এমন সময় নীলা আসে। নীলা আর সামির ভাইয়া ফ্রেন্ড।বড়লোক বাবার সুন্দরি মেয়ে ।ওনারো নিজের বিজনেস আছে। কিন্তু এই মেয়েকে আমার একদম সহ্য হয় না,অসহ্য লাগে,কিছুতেই ভালো লাগে না আমার একে। এসেই,

ওহ হ্যান্ডসাম, দিনদিন এতো সুন্দর কেন হচ্ছিস, বলেই জরিয়ে ধরে সামির ভাইয়াকে।

আরে তুই এই সময় (আবাক হয়ে)

আসলাম একটু কাজে, কেনো খুশি হস নি

আরে খুশি হবো না কেনো, এতো বড় বিজনেস ম্যান আমার কাছে এসেছে খুশি না হয়ে থাকা যায়। হেসে হেসে বললো।

উফ তুই ও না, তুই যে আমায থেকেও ওপরে সেটা মাথায় রাখিস।

নেহা যাও দুইটা কফি নিয়ে আসো(সামির)

আজকে ওনার কথায় খুব রাগ হলো,আজকেও কি আমাকেই বলতে হবে কফি আনার জন্য।

হনহন করে চলে আসলাম। অনেক্ষন পর কফি নিয়ে এসে দেখলাম দরজা ভেতর থেকে লক করা।
আমি কি করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।ডুকরে কান্না আসছিলো,প্রিয় মানুষটাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে এক রুমে কিভাবে সহ্য করি আমি।

ওখানেই দাড়িয়ে আছি, অনেক্ষন হয়ে গেলো বের হচ্ছে না। আমি আর পাচ্ছি না। দরজায় কয়েকবার নক করেছি, সামির ভাইয়া শুধু বলেছে ব্যাস্ত আছি।
ঐ নীলার সাথে কিসের এতো ব্যাস্ততা ওনার। উনি কি একটুও বুঝতে চায় না আমাকে।

আবার নক করবো, এই সময় নীলা বের হলো আর সামির ভাইয়া ওনাকে বলছে যে আমি তো রেডি, তুই বিয়ের জন্য তৈরি হয়ে নে।

এই কথা শোনার পর আমার আর বুঝতে বাকি নেই কিছু। আমি থ হয়ে দাড়িয়ে আছি। নীলা মেয়েটা আমার পাশে এসে বলছে যে,এই যে মিষ্টি মেয়ে তুমিও বিয়ে খাওয়ার জন্য তৈরি হয়ে নাও কেমন।বলে একটা লজ্জারাঙা হাঁসি দিয়ে চলে গেলো।

নাহ্ আমার আর এখানে দাড়িয়ে থাকা সম্ভব নয়। কফি ওখানেই রেখে এক দৌড়ে অফিসের বাহিরে চলে আসলাম।

আমার এমন কান্ডে সামির ভাইয়াও অবাক। উনিও আমার পিছে পিছে আসছে।
নেহা কি হয়েছে, নেহা দাড়া

না আমি ওনার কোনো কথা শুনবো না, কি ভেবেছি কে উনি। ওনার যখন ইচ্ছা আমাকে দিয়ে সেটাই করাবে। আমার ইচ্ছের কোনো দাম নেই নাকি। ওনার কোনো কথা না শুনে একটা ট্যাক্সি নিয়ে চলে আসলাম বাড়িতে।

বেশি বেড়েছে মেয়েটা, আমার কোনো কথা শুনলো না (রেগে)
আজ বাড়িতে গিয়ে এর একটা ব্যবস্থা করতেই হবে।

আচ্ছা আজ কি এমন হলো যে ও এভাবে রেগে গেলো। ও কি তাহলে আমাদের সব কথা শুনে ফেললো নাকি।নাহ আজ আর কাজে মন বসবে না।

,,

নেহা বাড়িতে এসে কাউকে কিছু না বলে ঘরের দরজা লাগিয়ে কাঁদতে লাগলো। নেহার আব্বু আম্মু ঘরেই বসে ছিলো,নেহাকে এমন করে দরজা লাগাতে দেখে তারা অনেকটা ভয় পেয়ে গেলো। তারাতারি মেয়ের দরজার সামনে গিয়ে নেহাকে ডাকতে লাগলো,

নেহামা কি হয়েছে তোর,এমন করে দরজা লাগালি কেনো মা(নেহার আব্বু)
মা দরজা খোল, বল আমাদের কি হয়েছে, না বললে বুঝবো কিভাবে (আম্মু)

আমার কিছু হয়নি তোমরা যাও এখান থেকে।ভালোলাগছে না আমার।

মেয়ের কন্ঠ শুনে বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে,ওর মা ওকে আবার ডাকতে লাগলো।

নেহা উঠে দরজা খুলে দিয়ে আম্মুকে জরিয়ে ধরলো। পাশেই নেহার আব্বু দাড়িয়ে আছে । আহিরা বেগম(নেহার আম্মু) মেয়েকে বুকের সাথে জরিয়ে নিয়ে বললো কি হয়েছে মা,কাঁদছিস কেনো।

মায়ের বুকে থেকে মায়ের এমন আদুরে মাখা কথা শুনে নেহা আরো ডুকরে কেঁদে উঠলো।কাঁদতে কাঁদতে বললো ,,

তোমার ভাতিজা কেনো বুঝলো না আম্মু আমাকে। আমি যে অনেক ভালোবাসি আম্মু ওনাকে। কেনো আমাকে ভালোবাসলো না উনি। কি হতো একটু ভালোবাসলে,
আসলে নেহা কি বলছে কাকে বলছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।

আহিরা বেগম আর রহমান সাহেব(নেহার আব্বু) মেয়ের কথা শুনে চুপ করে আছে।

নেহা আবার বলতে শুরু করলো, ভালোই যখন বাসবে না তাহলে আমার ওপর অধিকার দেখাইছে কেনো। কেনো আমাকে ওনার পি এ বানালো। কেনো ঐ বাড়িতে একদিন না গেলে নিতে আসে। বলো কেনো এমন করে,বলে আবার কেঁদে উঠলো।

আহিরা বেগম এবার নেহার মাথাটা তুলে , কোনো ভনিতা ছাড়াই ওকে জিজ্ঞেস করলো তুই সামির কে ভালোবাসিস।

নেহা মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলো, হ্যাঁ

নেহার আম্মু ঠাস করে এক থাপ্পড় মারলো নেহার গালে।

ফুপিইইইইই,,,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে