ভালোবাসার দূরত্ব পর্ব-০১

0
1316

#সূচনা_পর্ব
#ভালোবাসার_দূরত্ব
#লেখনীতে_নাফিসা_আনজুম

সামির ভাইয়া আসবো

এটা বাড়ি না যে তুই আমায় সামির ভাইয়া বলে ডাকবি, এটা অফিস, আর এখানে যতক্ষণ থাকবি স্যার বলেই ডাকবি (রেগে গিয়ে)

আচ্ছা ঠিক আছে, বুঝলাম না এতো রাগ করার কি আছে,এখানে তো কেউ নেই যে সামির ভাইয়া বললে শুনবে(আসতে করে)

কিছু বললি,,

না না কিছু বলি নি, আমি কি করবো সেটা জানতে চাইলাম।

আপাতত কিছুই করতে হবে না, শুধু মাথাটা একটু টিপে দে।

এএ

এ না হ্যাঁ

মাথা টিপে দিচ্ছি আর মনে মনে যতো প্রকার গালি জানি তা বলতেছি।

আমি নাফিসা আনজুম নেহা। সবাই নেহা বলেই ডাকে।এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ার । এতোক্ষন যার সাথে কথা বললাম উনি আমার মামাতো ভাই সামির। আমার থেকে ছয় বছরের বড়।পড়াশুনা শেষ করে বাবার বিজনেস সামলায় ।বাকি কিছু গল্পেই জানবেন।

আমি মাথা টিপে দেওয়ার সময় খেয়াল করলাম সামির ভাইয়া মুচকি মুচকি হাসছেন।তাই জিজ্ঞেস করলাম, এই আপনি হাসছেন কেনো

আমি হেসেছি বুজি ,অবাক হয়ে

একদম নাটক করবেন না ড্রামাবাজ কোথাকার, আপনি হাসছেন আমি দেখেছি।

তুই আমাকে ধমকাচ্ছিস,দেখি তোর জ্বর আসছে নাকি এই বলে আমার কপালে হাত দিলেন। কই জ্বর আসে নি তো।

না মানে,আমি ধমকাই নি , মাথা নিচু করে।

উনি আবারো হাসলেন,দেখি নি কিন্তু মনে হলো হেসেছে।

এবার যা,ভদ্র মেয়ের মতো আমার জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আয়।

আমি মাথা নিচু করেই ওনার ক্যাবিন থেকে বের হয়ে আসলাম।
আচ্ছা উনি নিজেকে ভাবেন টা কি। অফিসে কফি দেওয়ার জন্যে তো রহিম ভাই (অফিসের কর্মচারী) আছেই। তাকে না বলে আমাকেই বলবে।

তারপর ভাবলাম, আচ্ছা আমার তো এছাড়া আর কোনো কাজ ও নেই,কোনো কঠিন কাজ ও তো নয় এসব।

আসলে আমি ওনার পি এ । জানিনা কোন কারনে উনি আমাকে ওনার পি এ বানাইছে। আমার আব্বু আম্মুর দুইমাত্র সন্তানের মধ্যে আমি বড়। আর আমার ছোট ভাই(নাহিদ)এবার ক্লাস এইটে। আমার এসব পি এ টি এ হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিলো না, কিন্তু ওনার কথা আমাকেই নাকি ওনার পি এ হতে হবে। সবসময় ওনার সাথেই থাকতে হবে। শুধু মাত্র পড়ার সময় ছাড়া। আম্মু তো ওনার ভাতিজা বলতে পাগল। তাই উনি যা বলবে তাই করতে হবে।

বেশ অনেক্ষন পর আমি কফি নিয়ে আসলাম। এসে দেখি সামির ভাইয়া রুমে নেই। আমি গিয়ে ওনার চ্যেয়ারে বসলাম। উদ্দেশ ওনাকে কপি করা। আমার ওনাকে কপি করতে অনেক ভালো লাগে।সুযোগ পেলেই ওনাকে কপি করি আমি,তবে সেটা ওনার অগোচরে, উনি জানতেও পারে না ।

নেহা,তুই আমাকে কখনই কারো সামনে ভাই বলে ডাকবি না। এখানে যেনো কেউ না জানে তুই আমার ফুপাতো বোন। তুই আমার পি এ। আর সবসময় সেভাবেই থাকবি যেভাবে আমি বলবো।
এসব বলে নিজে নিজেই হেসে উঠলাম। আসলে উনি আমায় এই কথাগুলো বলছিলেন। তাই আমি বললাম।

আর কি কি নকল করতে পারিস দেখি(পেছন থেকে)

হুট করে এরকম কথা শুনে পেছনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি সামির ভাইয়া দুই হাত বুকের ওপর ভাজ করে দাড়িয়ে আছে। চোখঁ গুলো স্থির করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।একদম পলক পরছে না চোখেঁর।

না আমি ঐ চোখেঁর দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারবো না। এই লোকটাকে যতোবার দেখি ততোবার হারিয়ে যাই ভাবনায়। একটা মানুষ এতো সুন্দর আর পরিপাটি কি করে হয়। দেখতে উজ্জ্বল ফর্সা, চোখঁ গুলোর ওপর নিচে একটা করে ভাজ যেনো যে কাউকে আকৃষ্ট করতে পারে। গালের চাপ দাড়ি যেনো মুখের সৌন্দর্য আরো কয়েকগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।

কি রে বল আর কি কি করতে পারিস

ওনার কথায় একটা ঢোক গিললাম,কারন ওনার চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে উনি খুব রেগে যাচ্ছে। বুঝি না আমার ওপর একটুতেই এতো রেগে যান কেনো উনি। যখন অফিসের অন্যকারো সাথে কথা বলে বাড়িতে সবার সাথে কথা বলে তখন তো রাগেন না। আমি কিছু করলেই শুধু রেগে যান।

চুপ করে আছিস কেনো (জোড়ে চিল্লিয়ে)

আমি ওনার ধমক শুনে কেঁদেই ফেললাম, আমি আর কিছু করবো না সামির ভাইয়া, প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন আমি আর কখনো আপনাকে নকল করবো না।

উনি কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন, আমি যে এখন এভাবে কান্না করবো এটা ভাবতে পারেন নি।

এই এই তুই কাঁদছিস কেনো, (উত্তেজিত হয়ে)

আমি তবুও কেঁদেই যাচ্ছি

আচ্ছা আর বলবো না,তবুও কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করিস না প্লিজ।

ওনার কথা শুনে কিছু বলতে যাবো এর মধ্যে,বেল বেজে ওঠে আর উনি আমাকে চোখঁ মুছে ঠিক হতে বলে।

,,

আমরা এক অফিসে থাকি, আর আমাদের বাড়ি ও পাশাপাশি তবুও উনি আমায় কখনো নিয়ে আসে না বা নিয়ে যায় না। অফিসের অন্য গাড়ি আমাকে রোজ নিয়ে আসে আবার বাড়িতে রেখে যায়।

আমি প্রতিদিন মামার বাড়িতে একবার হলেও যাই।মামার নাকি আমাকে একদিন না দেখলে ভালো লাগে না। মামা একাই আর তিন বোন ,মানে আমার খালামনি আর সামির ভাইয়ার ফুপি।বড় খালামনির দুই মেয়ে এক ছেলে,হীরা আপু,মীরা আপু এরা জমজ। দুই জনের বিয়ে হয়ে গেছে। রাসেল ভাইয়া আর সামির ভাইয়া সমবয়সী।রাসেল ভাইয়ার নিজের ব্যাবসা আছে,পাশাপাশি সাংবাদিক। আর মেজো খালামনির শুধু দুই মেয়ে ছেলে নেই। মিশু আপু আমার থেকে দুই বছরের বড়,অনার্স থার্ড ইয়ারে পরে। আর রশনি দুই বছরের ছোটো। রশনিটা দেখতে খুব সুন্দরী,এবার ইন্টারে উঠলো। আর আমার আম্মু ছোট।আমরা তো দুই ভাইবোন আমি নেহা আর ভাই নাহিদ।

বিশাল এড়িয়া বিশিষ্ট দুই তালার একটা বাড়ি। বাড়ির মেইন গেট থেকে বাড়ি পর্যন্ত গাড়ি যাওয়ার রাস্তা, দুই পার্শে বিভিন্ন ফুলের গাছ।সবসময় কোনো না কোনো গাছে ফুল থাকে। বাড়ির পেছনের দিকে কিছু শাক,সবজি গাছ লাগানো,এটা সামির ভাইয়া লাগিয়েছে, তার মতে নিজের তৈরি টাটকা শাক,সবজিতে স্বাদ বেশি,তাই নিজেই বেশিভাগ যত্ন করে এসবের। অবশ্য এতে ভালই হয়েছে, জায়গা টা পরে থাকার থেকে সবজি হয়েছে,আমার ইচ্ছা হলে আমিও শাক,সবজি নিয়ে আসি।
তবে ঐ বাড়িতে গেলেও আমি কখনো সামির ভাইয়ার রুমে যেতে পারি নি। উনি যতক্ষণ বাড়িতে থাকবে ওনার জানালা দরজা সব বন্ধ করে রাখে আর বাহিরে গেলে লক করে রাখে। টাইম মতো নিচে নামে খাবার খায়,সবার সাথে গল্প করে। বুঝি না ওনার মাথায় এতো সব কি করে মনে থাকে।একদিনো কি ভূল করে ঘর লক করতে ভুলে না।

আমি তো মাথা থেকে ব্যান্ড খুলে রেখে চুল আচরানোর পর ঐ ব্যান্ড খুজে পাই না। একহাত দিয়ে চুল ধরে ব্যান্ড খুজতে শুরু করি।

,,,,

আমার আব্বু একাই,আর কোনো ভাই বোন নেই,একটা বোন ছিলো ছোটো থাকতে মারা গেছে,আমি নাকি আমার ফুপির মতো কিছুটা তাই আব্বুর চোখেঁর মনি আমি। এমনিতেও বাবারা মেয়েকে একটু বেশিই ভালোবাসে।
আমাদের বাড়ি একতালা, বাড়ির সামনে বেলকুনি ছাড়া আর কিছু নেই। আমাদের নিজস্ব গাড়ি নেই, আমারো ফুলের বাগান আছে তবে ছাঁদে, সামির ভাইয়াদের ওখানে যে যে ফুলের গাছ ভালো লাগে সেই গাছের ডাল নিয়ে এসে আমিও লাগাই।তবে গাছ পরিচর্যা করে আমার ছোট ভাই নাহিদ। আব্বু আগে আর্মিতে ছিলো এখন রিটার্ন হয়েছে, গ্রামে আমাদের কিছু জমি আছে,দাদু,দিদা কেউ বেঁচে নেই জন্য আব্বু এখানে মামাদের বাড়ির পাশেই জায়গা কিনে বাড়ি করছে। বছরে একবার করে গ্রামের বাড়িতে যাই, আশেপাশের সবাই ওনেক ভালোবাসে।ওখানকার একটা ফ্যামিলির ওপর সব দায়িত্ব আছে ওনারা দাদু বাড়িতে থাকে আর জমিজমা গুলো দেখাশুনা করে।

আজ অফিস থেকে আসার পর একবারো মামার বাড়িতে যাই নি। সন্ধ্যার আম্মু রান্না করছে আর নাহিদ পরতে বসেছে,আব্বু বাহিরে গেছে এতো তারাতারি আসবে না আমি বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছি আর টিভিতে কাগজ দিয়ে পাখি বানানো দেখতেছি। এমন সময় বেল বেজে ওঠে,আমি তবুও টিভি দেখতেই আছি।আবার বেল বাজে।

আম্মু চিল্লিয়ে বলতেছে, কখন থেকে বেল বাজতেছে কানে যায় না নাকি তোর , পড়াশুনা বাদ দিয়ে এই সময় টিভি দেখিস,বলি আমাকেও তো একটু সাহায্য করতে পারিস।তা না করলি অন্তত দরজা টা তো খুলতে পারিস নাকি।

আমি হাবলার মতো চেয়ে আছি আর মনে মনে গালি দিচ্ছি দরজার ওপাশের মানুষটাকে। আমাকে একগাদা কথা শোনানোর জন্য। আর আমার আম্মুটাও এক, একটা কথা না শুনলে পড়াশুনা থেকে শুরু করে কি কি করি কি করি না সব টেনে আনে।

একরাশ বিরক্তি নিয়ে,দরজা খুলে দিলাম। দরজা খোলার পর দেখলাম সামির ভাইয়া। পড়নে ছাই কালার টি-শার্ট আর নেভিব্লু ট্রাউজার,কিছু চুল কপালের দিকে পরেছে, ওনাকে দেখে তো আর এক দফা ক্রাশ খেলাম।
আম্মু বলতেছে কে এসেছে রে, বললাম তোমার ভাতিজা। আম্মু রেগে বললো,তোমার ভাতিজা আবার কি নেহা,সামির ভাইয়া বলতে পারিস না।

উনি বললেন,ফুপি তোমার মেয়ে কিন্তু দিনদিন বেশি বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে, মুখের ওপর কথাও বলে।এই বলে আম্মুর কাছে গিয়ে কথা বলে আসলো।

অন্যসময় হলে বিরবির করে হলেও ওনাকে কিছু বলতাম।কিন্তু এখন কিছু না বলে দরজা লাগিয়ে চুপচাপ টিভি দেখতে লাগলাম।

উনি একটু অবাক হলেন, তারপর বললেন আজ যাস নি কেনো ঐ বাড়িতে।

আমি কিছু না বলে চুপচাপ টিভি দেখায় মন দিলাম।

উনি আবারো বললেন,আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি।

আমি বললাম,এমনিতেই যাই নি।

আব্বু বারবার বলছিলো তোর কথা। বাদ্ধ হয়ে আমাকেই পাঠালো নিয়ে যেতে।আজ ওখান থেকেই খেয়ে আসবি নাহিদ আর তুই।

আমি কিছু বললাম না, আমার যাওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু মামা পাঠিয়েছে আর সামির ভাইয়া এসেছে,ইনি আমাকে না নিয়ে কিছুতেই যাবে না সেটা বুঝতে পারছি।নিশ্চয়ই আম্মুকেও বলে এসেছে,,

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে