#বৃষ্টি_ভেজা_রাত(সিজন ২)💖
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ💖
#পর্বঃ__৮
শীতল পরিবেশ, চার দিকে নিস্তব্দতায় ঘেরা। ছাদের এক পাশে বসে ফোন টিপছে রিদ। একটু আগে আরশিকে বললো তাকে এক কাপ গরম কফি দিতে। মেয়েটার এখনো আসার খবর নাই। রিদ একরাশ বিরক্তি মুখে ভর করে ফোলের স্কিনে চোখ রাখলো। শীতে শীতল হয়ে থাকা আঙ্গুল গুলো স্কিনে নাচাচাচি করছে।
হাতে দু,কাপ কফি নিয়ে রিদের পাশে এসে বসলো আরশি। গায়ে একটা চাদর জড়ানো তার। রিদের দিকে মগটা বাড়িয়ে দিলে রিদ মগটা নিয়ে আবার ফোনের দিকে তাকালো।
– এতোক্ষন লাগে আসতে?
আরশি উত্তর না দিয়ে কফির মগে চুমুক দিলো। গলা টেনে দেখার চেষ্টা করলো রিদ কি করছে। কফির মগে চুমুক দিয়ে আরশি বলে উঠে,
– কি হলো রিদ ভাই, এতো বিজি তুমি? আমি যে তোমার পাশে বসে আছি সেটাও তোমার নজরে পরছেনা? কার সাথে চেটিং করছো? ভালো টালো বাসো নাকি কাওকে?
কথাটা একটু মজার ছলেই বললো আরশি। রিদ একটু মুচকি হেসে বলে উঠে,
– কি করে বুঝলি যে আমি কাওকে ভালোবাসি? তোর মাথার প্রশংশা করতে হবে আরশি। বলার আগেই সব বুঝে জাস।
আরশি একটু ভ্রু জুগল কুচকে বলে উঠে,
– মানে?
– মানে আবার কি? জানিস মেয়েটা আমায় প্রচন্ড ভালোবাসে। আমাকে ছারা কিছু ভাবতেও পারেনা। আমিও খুব ভালোবাসি তাকে। বলতে পারিস আমরা দুজনি এই ব্যারে খুবই সিরিয়াস। আস্তে ধিরে সব কিছু গোচগাচ হয়ে উঠুক, তার পর ফ্যামিলিকে বলে একেবারের জন্য আমার করে ফেলবো তাকে।
আরশি একটু রেগে বলে উঠে,
– তুমি মজা করছো আমার সাথে?
– মজা করতে যাবো কেনো আমি? ও হ্যা তোর কাছে তো আবার সব মজাই মনে হয়। যে তোর জন্য যতই সিরিয়াস থাকুক না কেনো, সবই তো তোর কাছে যাস্ট ফান। উপভোগ করিস এসব। তাদের ইমোশন নিয়ে খেলে অনেক বিনোদন পাস তুই। তোর মতো মেয়ে কি আর সত্যি কারের ভালোবাসার মানে বুঝে? আর আমি তো তাকেই চাইবো যে তার সব কিছু দিয়ে আমায় ভালোবাসবে। যার কাছে আমার ভালোবাসা প্রকাশ গুলো বেহায়ার পরিচয় দিবে না। একটা সময় একটু বেশিই বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম রে। ওসব মনে উঠলে এখন সত্যিই হাঁসি পায়।
আরশি অন্য দিকে চেয়ে আছে। হাঁসি মুখটা মুহুর্তেই ফ্যাকাসে হয়ে উঠেছে। কারন সে বুঝলো যে রিদ তাকে উদ্দেশ্য করেই কথা গুলো বলছে। সত্যিই তো এক সময় এমন একটা রাতে এভাবে ছাদে দাড়িয়ে কতো বাজে বাজে কথা বলেছিলো রিদকে। এতে তার মনে আক্ষেপ থেকে যাওয়াটাই স্বাভাবিক।
আরশি কফির মগটা ছুরে ফেলে দেয় নিচে। ভেঙে টুকরু টুকরু হয়ে গিয়েছে কাপ টা। রিদ কিছু না বলে ফোন টিপতে টিপতে কফির মগে চুমুক দিলো।
আরশি কিছুক্ষন ওভাবে দাড়িয়ে থেকে মাথা নিচু করে হাটা ধরলো। আবার থেকে বলে উঠে,
– অনেক রাত হয়েছে, ঘরে যাবেনা? কুয়াশায় ঠান্ডা লেগে যাবে তো।
– তুই যা, আমি আসবো আরো পরে। তুই গিয়ে ঘুমিয়ে পর।
আরশি আবার হেটে রিদের কাছে গিয়ে তার চাদরটা রিদের গায়ে পড়িয়ে দিলো।
– এটা কেনো পেচাচ্ছিস আবার। আমার দরকার নেই তুই নিয়ে যা।
– দরকার হবে, রাত যখন আরো গভির হবে তখন শীত আরো বাড়বে। আর তোমার দেখছি এখনো ঠান্ডা লাগছে। তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারাতারি ঘরে চলে এসো। নাহলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
পরদিন আরশি কলেজে গেলো একেবারে ঠিক সময়েই। কেও কেও পড়ছে আবার কেও আড্ডা দিচ্ছে। ক্লাস শুরু হয়ে গেলো। আজও গতকালে নতুন স্যারটা আসলো প্রথম ক্লাসে।
আরশি খেয়াল করলো স্যারের ডান হাতের কিছুটা অংশ বেন্ডেজ করা। কেও একজন হুট করে বলে উঠলো, স্যার হাতে কি হয়েছে?
স্যারের কথায় জানতে পারলো কাল রাতে রাস্তা পার হওয়ার সময় হুট করে কে জেনো বাইক নিয়ে এসে তার হাতের তুলু বরারব ধড়ালো ছুরি দিয়ে কেটে দিয়ে চলে গেছে। দুর্ভাগ্য বসতো লোকটাকে চিনতে পারলো না স্যার।
আজ দিনটাই যেনো খারাপ যাচ্ছে আরশির। কোনো কিছুতেই মন বসছেনা তার। কলেজ ছুটির পর রিদের জন্য না দাড়িয়ে রাস্তা পার হতেই একটা গাড়ি তার গাঁ ঘেসে চলে যায়। হয়তো একটু হলেই গায়ে লেগে যেতো আজ। বুকে হাত দিয়ে বড় একটা শ্বাস নিয়ে হাটা ধরলো আরশি। প্রায় বিকেল হয়ে গেলো তবুও বাড়ি গেলোনা আরশি। মিম আজ কলেজে আসেনি। মেয়েটা কলেজ মিস দেয় না। আরশির গত কাল রাতে কথা হয়েছিলো তার সাথে। আরশি কয়েক দিন কলেজে আসেনি তাই মিমের কাছ থেকে কিছু নোটস নিতে চেয়েছিলো। মিম বললো আজ কলেজে আসলে দিবো। কিন্তু আজ কলেজে আসেনি সে। আজ হটাৎ মিমের আবার কি হলো? তার বাসায় ফিরার পথেই মিমদের বাসা। তাই বাড়ি না ফিরে মিমদের বাসায় গেলো আরশি। রাত ফোন দিলে বলে, মিমদের বাসায় আসছি বিকেলে চলে আসবো।
ঘরে গিয়ে দেখে মিম বিছানায় কম্বল মুড়িয়ে সুয়ে আছে। গায়ে হাত দিয়ে দেখে জ্বর এসেছে তার। ধুর আজ দিকটা পুরাই কুপা।
আন্টিকে জিগ্গেস করতেই জামতে পারে, আজ সকালে পাত্র পক্ষ এসেছিলো তাকে দেখতে। গতকাল রাতেই নাকি তাদের সাথে কথা হয়েছে। আজ সকালে আসলো দেখতে।
মিমকে পছন্দও করে গেছে তারা। মিমদের ফ্যামিলিটা মধ্যবিত্ব ফ্যামিলি। যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে সেও নাকি বিদেশ থাকে। তিন মাসের ছুটিতে এসেছে বাড়ি। তাই বিয়েটাও তারাতারি ঠিক করার কথা চলছে। এই নিয়ে সকাল থেকে চিন্তায় চিন্তায় দুপুরে জ্বর উঠেছে মিমের। মিম নাকি এই বিয়ে করতেই রাজি না। কারণ সামনে তার ফাইনাল পরিক্ষা। পাত্রর বাড়িতে গিয়েও নাকি পড়া শুনা করতে পারবে সে। তাও এখন বিয়ে করতে চায় না মিম।
এখনো রিদ দের বাড়িতেই সবাই কথা আছে আগামি কাল চলে যাবে তারা। বিকেলে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখে সোফায় প্রায় সবাই বসে আছে। এতে একটু অবাক হলেও তার চেয়ে বেশি অবাক হলো রিদের সাথে একটি মেয়েকে দেখে। মুহুর্তেই যেনো একটা ছোট্ট ঝাকুনি দেয়ে উঠে আরশির শরির জুরে। এটাই কি তাহলে সেই মেয়ে? যার কথা গত কাল রিদ ভাইয়া বলেছিলো? আরশি ভেতরে গিয়ে বৃষ্টিকে জিগ্গেস করতেই জানতে পায় এটা নাকি রিদের ফ্রেন্ড। ছোট একটা সস্থির নিশ্বাস ছারে আরশি। মেয়েটার সাথে গিয়ে পরিচিত হয় আরশিও।
– হাই আপু, কেমন আছেন?
– ভালো তুমি?
– জ্বি আলহাম্দুলিল্লাহ্।
পাশ থেকে রিদ বলে উঠে,
– আমার ফুফির মেয়ে আরশি।
– ও এটা তাহলে সেই আরশি? বাব্বাহ্।
কথাটা একটু অন্য রকম ভাবে বলে উঠে মেয়েটি।
রিদ আর মেয়েটি কথা বলছে। আরশি গিয়ে ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলো।
বিকেলে আবার মেয়েটা চলে গেলো। রিদ এগিয়ে দিয়ে এলো তাকে।
সন্ধার পর রিদকে বলে উঠে আরশি,
– এটাই কি সেই মেয়েটা যার কথা হতকাল বলেছিলে?
– তোর কি মনে হয়?
– যা বলছি তার উত্তর দাও রিদ ভাই। এটাই কি সেই মেয়ে যাকে তুমি,,,,,,
– হুম, কেমন মানিয়েছে আমাদের?
আরশির এবার চোখের কোনে পানি জমে গেলো। একটু কান্না মাখা অভিমানি কন্ঠে বলে উঠে,
– তুমি না আমায় খুব ভালোবাসতে, তাহলে এটাই বুঝি তোমার ভালোবাসা? তুমি না সব সময় ফিউর লাভ এর কথা বলো? তাহলে এটাই তোমার ফিউর লাভ? কাওকে ভালোবাসলে আবার সেই মনে এতো তারাতারিই আরেকজনকে জায়গা দিয়ে দিতে পারলে তুমি?
– হুম তখন আবেগে একটু বেশিই, বেহায়া হয়ে গিয়েছিলাম। তুই নিজেই তখন আমার বেহায়া নির্লজ্জ বলে দুরে ঠেলে দিয়েছিলি। সেগুলো তোকে নতুন করে শুনাতে হবেনা আরশি।
রিদ একটা দির্ঘশ্বাস ছেরে আবার বলে উঠে,
– অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম তখন। বোকার মতো কেদেছিলামও খুব। কিন্তু দিন শেষে যখন নিজেকে এটা বুঝিয়েছি যে, লাইফে নিজেকে নিজেই গড়ে তুলতে হয়, এমন কারো জন্য নিজের চোখের জল ফেলবোনা যে আমার ইমোশনের আমার ভালোবাসার একটু মর্যাদা দিতে শিখেনি। আমাকে এমন কাওকে বেছে নিতে হবে যে আমাকে পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবে। ধিরে ধিরে নিজেকে বদলে নিয়েছি আমি। একটা সময় ওসব ভেবে কষ্ট নয় বরং হাসি আসতো।
হুট করেই রিদকে জড়িয়ে ধরে আরশি।
– আমায় ক্ষমা করে দাও রিদ ভাই, আমি মানছি তোমার সাথে খুব অন্যায় করে ফেলেছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি অনেক বদলেগেছি আমি এখন সত্যিই তোমাকে খুব ভালোবাসি। রিদ ভাই। বলোনা সব মিথ্যে ছিলো। আর তুমি আমায় সেই আগের মতোই ভালোবাসো?
রিদ আরশিকে নিজের কাছ থেকে ছারিয়ে ঠাস করে একটা চর বসিয়ে দেয় আরশির গালে।
– তোকে বলছিনা, আমার গায়ে টার্চ পর্যন্ত করবিনা, আমার অনুমতি ছারা। নিজেকে কি ভাবিস তুই? এতো কিছুর পরও আমি তোরএই নেকা কান্নায় গলে যাবো? হুট করেই আমার উপর ঝাপিয়ে পরবি আরআমি সব ভুলে যাবো? নো আরশি,,,,,। শরিরের জদি এতোই চাহিদা থাকে তাহলে আমার কাছে না, সেজে গুজে রাস্তায় গিয়ে দাড়া কাস্টমারও পাবি অনেক। নেক্সট টাইম আমার চোখের সামনেও যাতে তোকে না দেখি।
রিদের কথায় ও থাপ্পরের আঘাতে গালে হাতদিয়ে নিরবে কেদে যাচ্ছে আরশি।
রাতে ঘুম আসছেনা আরশির, বালিশে মুখ গুজে কান্না করছি সে। এক সময় সে কাদিয়েছে আর আজ কাদছে। পার্থক্যটা শুধু সময়ের। এটাই বুঝি প্রকৃতির প্রতিশোধ? কাদতে কাদতে এক সময় ঘুমিয়ে পরে আরশি।
ঘুমের মাঝে আরশি অনুভব করে সে হাওয়ার ভাসছে। কেও একজন কোলে করে নিয়ে হাটছে। আরশি কিছু বলে উঠার আগেই লোকটা ধপ করে নামিয়ে দেয় তাকে। চার দিকে খুটখুটে অন্ধকার। আশে পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ছাদে তারা। সামনে বসে আছে সেই মাস্ক পরা ছেলেটা। আরশি কাপা কাপা গলায় বলে উঠে,
– কে আপনি? কেনো আমার সাথে এমন করছেন? কি চান আপনি?
ছেলেটা একটু ভারি গলায় বলে উঠে,
– তোমাকে,
– মানে?
– আজ নিশ্চই তোমার নতুন স্যারের হাতের অবস্থা চোখে পরেছে তোমার?
– তার মানে ওটা,,,,,
– হুম আমিই করেছি। অপরাধ ছিলো তোমার সাথে হাত মিলানো।
– কিন্তু কেনো এমন করছেন আপনি? আমি কি ক্ষতি করেছি আপনার?
– মনটা চুরি করে ফেলেছো তুমি। এটাই তোমার অপরাধ। আর তোমার দিকে যে চোখ তুলে তাকাবে তারই অবস্থা কারাপ হয়ে যাবে। এখন তুমি নিশ্চই বুঝতে পারছো আমার নেক্সট টার্গেট রিদ। আমার ভালোবাসার মানুষকে আঘাত করা। তার তালে চর দেওয়া। তোমার গায়ে হাত তোলা তো দুরে থাকে, যে আঙুল তুলে কথা বলবে তার সেই আঙুল কেটে কুকুরকে খাওয়াবো আমি।
– প্লিজ আপনি রিদ ভাইকে কিছু করবেন না। ওকে কিছু করবেন না আপনি। আপনার দুটু পায়ে ধরছি আমি। প্লিজ,,,,,,,,,
আর কিছু বলার আগেই ছেলেটা আরশির মুখে একটি রুমাল চেপে অজ্ঞান করে ফেলে আরশিকে।
To be continue…….
Next part kobe pabo?