বিষাক্তফুলের আসক্তি পর্ব-০৯+১০

0
815

#বিষাক্তফুলের আসক্তি
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
পর্ব-০৯+১০

খাবার খাওয়া শেষে তিতির উঠে নিজের রুমের দিকে যেতেই তাজ গম্ভীর গলায় বললো, ওদিকে কোথায় যাচ্ছো ?

তিতির থমকে দাঁড়ালো আর কাঁপা গলায় বললো, রুমে।

তাজ খাওয়া শেষে উঠে দাঁড়িয়ে তিতিরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, একটু আগে কী বলেছি কানে যায়নি তোমার ?

তিতির কিছু না বলে মাথা নিচু করে ফেললো। তাজ নিজের রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বললো, চুপচাপ রুমে এসো।

তিতিরের গলা শুকিয়ে আসছে বারবার। তাজের এমন অদ্ভুত ব্যবহারের মানে খোঁজে পাচ্ছে না তিতির। তাজ একটু বেশি স্বাভাবিক আচরণ করছে যা তিতিরের কাছে আরো বেশি অস্বাভাবিক লাগছে। তাজ রুমে চলে গেলে তিতির কাঁপা পায়ে অগ্রসর হতে লাগলো তাজের রুমের দিকে। বুকে সাহস সঞ্চার করে দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করতে মুখের উপর এসে কিছু পড়লো। তিতির ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো তখনই কানে এলো।

সরি সরি আমি তোমাকে একদমই খেয়াল করিনি। একবার ডাকলেই চলে আসবে সেটাও বুঝতে পারিনি। অবশ্য তোমার মতো টাকার কাছে নিজের চরিত্র বিক্রি করা মেয়ের এটা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

তিতির চমকে উঠলো তাজের কথা শুনে। অবাক চোখে তাকালো তাজের দিকে। তার ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি তিতিরের রুহ কাঁপিয়ে দিয়েছে।

কী ভাবছো নিচে এসব কেনো বললাম ?

তিতির উত্তর দিলো না দেখে তাজ নিজেই আবার বললো, ভেবে দেখলাম যা হবার হয়ে গেছে। বিয়েটাও হয়ে গেছে সেটা তো মিথ্যা নয়। আমার কপালে হয়তো তোমার মতো একটা চরিত্রহীন মেয়েই আল্লাহ রেখেছিলো। কী আর করার তাই মেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি।

পরের কথাটা তাজ আফসোসের সুরে বললো। অপমানে চোখ থেকে এক ফোটা নোনাপানি গড়িয়ে পড়লো তিতিরের। নিচে তাকিয়ে দেখলো তার পায়ের কাছে একগাদা কাপড় পরে আছে তাজের।

তাজ সেটা খেয়াল করে বললো, আসলে এগুলো অনেক নোংরা হয়ে গেছে ধোয়া প্রয়োজন। আমার রুমের ওয়াশিং মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। একটু ধুয়ে দাও তো।

তিতির অবাক হয়ে বললো, এই রাতের বেলা ?

তাজ গম্ভীর গলায় বললো, রাত হয়েছে তো কী ? আমি বলেছি ধোয়া প্রয়োজন, মানে এখনই ধুবে।

তিতির কিছু না বলে কাপড়গুলো ফ্লোর থেকে তুলে ওয়াশরুমের দিকে গেলো। তাজ বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলে তিতির ভয় পেয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।

দরজায় ধাক্কা দিতেই তাজ বললো, কাপড় কাচার আওয়াজে আমার ঘুম হবে না। কাচা হয়ে গেলে নক করো আমি খোলে দিবো।

তিতির কিছু না বলে কাপড় ধুয়ে দিতে লাগলো। কাটা জায়গায় চাপ করতেই রক্ত বেরুতে লাগলো, ব্যাথায় হাত অবশ হয়ে আসছে। তবে কিছু করার নেই, ওভাবেই কাপড় কাচতে লাগলো। জামার লম্বা হাতার কারণ তিতিরের হাতের ব্যান্ডেজ চোখ পরেনি কারো। অনেক বেশি কাপড় হওয়ায় অনেক সময় লাগলো ধুতে, এদিকে গরমে ঘেমে একাকার অবস্থা তিতিরের। কাপড় ধোয়া শেষ করে উঠে দাঁড়ালে দেখলো পুরো জামাটাই ভিজে গেছে পানিতে নাহয় ঘামে। জামার হাতায় রক্তের দাগ লেগে ভিজে গেছে অনেকটা। তিতির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে দরজায় নক করে অপেক্ষা করতে লাগলো তাজের জন্য। অনেকটা সময় পরেও দরজা না খুললে আবারও নক করলো। দরজা খুলছে না দেখে তিতির ভয় পেয়ে গেলো, জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিচ্ছে তবু কোনো সাড়াশব্দ নেই। একসময় ক্লান্ত হয়ে বসে পড়লো তিতির। এতগুলো কাপড় ধুয়ে এমনই ক্লান্ত সে, এখন আর শরীর চলছে না।

দরজা ঘেঁষে ফ্লোরে বসলো তিতির, ঘুমের মানুষের ঘুম ভাঙানো গেলেও জাগ্রত মানুষের ঘুম কখনো ভাঙানো যায় না। উনি তো ইচ্ছে করেই এখানে আঁটকে রেখেছে আমাকে।

অতিরিক্ত গরম লাগলে তিতির উঠে বাথটাবের দিকে এগিয়ে গেলো। বাথটবে শুয়ে পানি ছেড়ে দিলো। মুহূর্তে ঠান্ডা পানি তার শরীর ঠান্ডা করে দিচ্ছে।

তিতির বিড়বিড় করে বললো, আমাকে অপমান করে, কষ্ট দিয়ে আপনার যদি একটুও শান্তি হয় তাহলে আমার কোনো আফসোস নেই।

এদিকে তিতিরের দরজা ধাক্কানো বন্ধ হতেই তাজ শান্তিতে ঘুমানোর চেষ্টা করলো। মেয়েটা অতিরিক্ত বিরক্ত করছিলো। এবার শান্তিতে ঘুমাতে পারবে সে। মেয়েটাকে প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দিবে সে কতবড় ভুল করেছে তার জীবন এলোমেলো করে। আবার অপর দিকে আসল কালপ্রিট জিতে গেছে মনে করে কোনো ভুল পদক্ষেপ নিবে তার অপেক্ষায় আছে তাজ। এসব চিন্তা করে বাঁকা হেসে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো।

১১.
সকালের সোনালী রোদ চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো আহানের। পিটপিট করে তাকিয়ে সোজা হয়ে বসলো। হাতে চোখ কচলে বুঝার চেষ্টা করলো নিজের অবস্থান। ফ্লোরে বসে বেডে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে। সামনে তাকিয়ে ঘুমন্ত একটা মুখ চোখে পড়লো। মায়াবী সেই মুখে চোখ আঁটকে গেলো তার। হাতটা আপনাআপনি চলে গেলো সামনে থাকা মায়াবিনীর কপালে। ছোটছোট চুলগুলো কানের পিছনে গুঁজে অপলক তাকিয়ে রইলো সেই মুখপানে। আহানের কী হলো সে নিজেও বুঝতে পারছে না। একটু এগিয়ে তার কপালে নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে দিলো। কেঁপে উঠলো সেই মায়াবিনী, হাত আঁকড়ে ধরলো আহানের। হাতটা নিজের বুকে জড়িয়ে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো। তার এহেন কাজে জমে গেলো আহান। নড়াচড়া করার শক্তিটাও যেনো পাচ্ছে না। ধীরে গতিতে তার দখল থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিলো। পিটপিট করে তাকালো পাখি।

আহান মুচকি হেসে বললো, এখন কেমন লাগছে ?

ঠোঁট উল্টে উঠে বসলো সে। অন্যদিন তার এমন ঠোঁট উল্টানো বিরক্ত নিয়ে দেখে আহান তবে আজ সেই ঠোঁট উল্টানোতে অদ্ভুত মুগ্ধতা খোঁজে পাচ্ছে।

পাখি নিচু গলায় বললো, ব্যাথা করছে।

আহান পাখির হাত ধরে দেখে বললো, ব্যাথার মেডিসিন দিয়েছিলাম তো। তবু ব্যাথা কমেনি কেনো ?

পাখি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মাথা দেখিয়ে বুঝালো মাথা ব্যাথা করছে তার। আহান বুঝলো জ্বরের জন্য মাথা ব্যাথা করছে। দিন-রাত জ্বরে ভোগে সকালে জ্বর ছেড়েছে।

আহান বললো, কিছু হবে না। আমি ম্যাজিক করে ব্যাথা গায়ের করে দিবো।

গোল গোল চোখে তাকালো পাখি অবাক কণ্ঠে বললো, আপনি ম্যাজিক পাবেন পঁচা ভাইয়া ?

আহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো পাখির ডাক শুনে। তাকে ভাইয়া ডাকছে তাও আবার পঁচা ভাইয়া।

আহান একটু রেগে বললো, আমাকে পঁচা ভাইয়া বলবে না।

পাখি চিন্তিত হয়ে গেলো, তাহলে কী বলবো ?

আহান বললো, আমার নাম আহান। তুমি আমাকে আহান বলে ডাকবে আর তুমি করে বলবে।

পাখি ব্যস্ত গলায় বললে, না না নাম বলা যাবে না। আপুনি বলেছে, বড়দের নাম ধরে ডাকতে নেই আর তুমি করেও বলতে নেই। এসব বললে আমাকে পঁচা মেয়ে বলবে সবাই।

আহান মুচকি হেসে বললো, আমি তো তোমার বড় না। আমরা বন্ধু আর বন্ধুকে নাম ধরে ডাকতে হয়।

পাখি খিলখিল করে হেসে বললো, আমরা সত্যি বন্ধু ?

আহান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, হ্যাঁ আমরা অনেক ভালো বন্ধু।

পাখি খুশি হয়ে বললো, ঠিক আছে আমি তোমাকে আহান বলবো। জানো তুমি, ঐ টিয়া ছাড়া আমার একটাও বন্ধু নেই। আপুনি তো আমাকে বাইরে যেতেই দেয় না,,,,

হঠাৎ থেমে গেলো পাখি। আহান প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে আছে।

পাখি হঠাৎ অস্থির গলায় বলে উঠলো, আমার আপুনি কোথায় ? আমি আপুনির কাছে যাবো।

কথা শেষ হতেই হাত-পা ছড়িয়ে কান্না করতে লাগলো পাখি।

আহান বেডে উঠে পাখির পাশে বসে তাকে নিজের বুকে জড়িয়ে বললো, কাঁদে না পাখি। তোমার আপুনি আছে তো, আসবে তোমার কাছে।

পাখি হেঁচকি তুলে বললো, আমি এখনই আপুনির কাছে যাবো।

আহান রাগ করার অভিনয় করে বললো, তুমি কান্না করলে আমি নিয়ে যাবো না তোমার আপুনির কাছে।

পাখি কান্না থামানোর জন্য ঠোঁটে এক আঙ্গুল চেপে ফুপিয়ে বললো, আমি কাঁদবো না তাও আপুনির কাছে নিয়ে চলো।

আহান পাখির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, চিন্তা করো না আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমাকে তোমার আপুনির কাছে নিয়ে যাবো। তোমার কাছে এটা আমার ওয়াদা আর আহান চৌধুরী নিজের ওয়াদা রক্ষা করতে ভুলে না কখনো। এখন ন্যান্সিকে ডেকে দিচ্ছি ফ্রেশ হয়ে নাও খেয়ে মেডিসিন নিবে। তারপর আমরা ঘুরতে যাবো আজ।

ইজি চেয়ারে বসে চোখ বন্ধ করে আছে রায়হান। তাজ হার মেনে নিয়েছে এতে তার খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সেটা পারছে না সে। কেনো জানি এতো তাড়াতাড়ি তাজের হার মেনে নেওয়া স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছে না সে। তাজের বাড়ির অনেক জায়গায় গোপনে ক্যামেরা লাগিয়েছে রায়হান সাথে মাইক্রোফোন। তবে বেডরুমে লাগাতে নিজের কাছেই কেমন জেনো লেগেছে তাই সেখানে লাগায়নি। যতই হোক সম্পর্কে তিতির তার ছোটবোন, হোক না মামাতো বোন। রুমে তাজ একা নয় তিতিরও থাকবে তাই ক্যামেরা লাগায়নি। কিন্তু ডাইনিং টেবিলের কাছে ছোট ক্যামেরা আর মাইক্রোফোনের সাহায্যে গতরাতে তাজের কথাগুলো শুনতে তার অসুবিধা হয়নি। তখন থেকেই চিন্তায় ডুবে আছে রায়হান। তাজ তো এতো সহজে হার মেনে নেওয়ার পাত্র নয়। রায়হান ঠিক করলো তাজ আর তিতিরের উপর আরো কড়া নজর রাখতে হবে এবার। তাজের মাথায় কী চলছে বুঝতে হবে।

ফোনের আওয়াজে হুঁশ ফিরলো রায়হানের। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো হসপিটাল থেকে ফোন দিয়েছে। শেষরাতের দিকে তার একটা অপারেশন ছিলো সেটা একেবারে ভুলেই গিয়েছিলো। কিছু কাজ দিনের আলোতে করা যায় না, সেসব করার জন্য বেছে নিতে হয় অন্ধকারে লুকনো রাতকে। রায়হান গাড়ির চাবি নিয়ে বের হয়ে গেলো হসপিটালের দিকে। উদ্দেশ্য আরো একটা পাপ কাজ করা, যাতে হয়তো অন্ধকার নেমে আসবে অচেনা কারো জীবনে।

অলস ভঙ্গিতে রেডি হচ্ছে মৌ। গতরাতে তাজের নাম্বার খোলা পেলেও তাজ রিসিভ করেনি তার কল। তাজের এড়িয়ে চলা কষ্ট দিচ্ছে তাকে। এদিকে তিতির নামক মেয়েটাও সেদিনের পর লাপাত্তা। পুরো কথা শুনার জন্য যোগাযোগের চেষ্টা করেছে মৌ কিন্তু তিতির সেটা হতে দেয়নি। মৌয়ের কাছে নিজের জীবনটা এখন মাঝ নদীতে ভাসমান বৈঠা ছাড়া নৌকার মতো মনে হচ্ছে। জীবন তাকে কোন তীরে নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছে না সে।

মৌয়ের মা রুমে প্রবেশ করে বললো, তোমার বাবা একটা ছেলে দেখেছে। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো, তারা দেখতে আসবে।

মৌ কপাল কুঁচকে বললো, আমি বিয়ে করবো না মা।

তেতে উঠলেন রেহেনা, বিয়ে করবে না কেনো শুনি। উনত্রিশ বছর চলছে তোমার। ঠিক সময়ে বিয়ে দিলে পাঁচ বছরের বাচ্চা থাকতো। কার অপেক্ষায় বসে রইলে, ঐ তাজ ? যার জন্য এতকিছু করলে সে এখন আরেক জনের স্বামী।

আরেক জনের স্বামী কথাটা মৌয়ের বুকে তীরের মতো বিঁধল। সত্যি তাজ এখন অন্যকারো স্বামী, সেটা মানতে পারে না মৌ।

পুনরায় রেহেনার কথা কানে পৌঁছালো মৌয়ের, এখন আর কোনো তালবাহানা শুনবো না আমি। ছেলেটা ঐ তাজের থেকে হাজার গুণ ভালো। ঠিক সময়ে যেনো তোমাকে বাড়িতে দেখতে পাই।

মৌ অসহায় চোখে তাকালো নিজের মায়ের দিকে। রেহেনা তা উপেক্ষা করে হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো রুম থেকে। মৌ ধপ করে বসে বেডে। আজ প্রায় নয় বছর ধরে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে সে। অধিক সুন্দরী হওয়ায় দু’হাতে বিয়ের প্রস্তাব ঠেলে সরিয়ে তাজের জন্য অপেক্ষা করেছে সে। তবে এখন আর জোর পাচ্ছে না মনে। তার জানা নেই সামনে কী হতে চলেছে। সে এটুকু জানে সে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। একটু শান্তি দরকার তার।

সকালে প্রায় ন’টায় ঘুম ভাঙলো তাজের। উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলতে গেলে দেখে লক করা। গতরাতের কথা মনে পরে যায় তার। দ্রুত দরজা খোলে ভেতরের গিয়ে চমকে উঠলো। বাথটাবের পানিতে ওয়াশরুমের ফ্লোরে ভিজে আছে আর বাথটবে ডুবে আছে তিতির। মুহূর্তে রাগে চোখমুখ শক্ত হয়ে গেলো তাজের। রেগে বাথটাবের সামনে দাঁড়িয়ে তিতিরের মুখের দিকে তাকালো। ফ্লোর পানিতে ভাসিয়ে গোসল করে হচ্ছে এখানে তার। পানি বন্ধ করে তিতিরের হাত ধরে টান দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করলো। তিতিরের কোনো হেলদোল না দেখে আরো রাগ হলো তাজের। হঠাৎ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠলো তাজ। পানি মেশানো লাল রক্তে হাত ভিজে উঠেছে তার। সাথে সাথে তিতিরের হাত ছেড়ে দিলো তাজ। এবার খেয়াল হলো বাথটাবের পানি অনেকটা লালচে হয়ে গেছে। ধীর গতিতে আবার তিতিরের বাম হাতটা আলতো করে তুলে নিলো। জামার লম্বা হাতা একটু উপরে তুলতেই লাল টকটকে ব্যান্ডেজ চোখে পড়লো, হাত টাও কেমন বরফের মতো ঠান্ডা। ছিটকে দূরে সরে এলো তাজ।

বিড়বিড় করে বললো, এই মেয়ে কী এখন আমাকে মার্ডার কেসে ফাঁসাতে চাইছে ?

তাজ কাঁপা পায়ে আবার এগিয়ে গেলো তিতিরের দিকে। নাকের কাছে হাত নিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো বেঁচে আছে কিনা, তাজের হাতটা অসম্ভব কাঁপছে।

হসপিটালের করিডোরে বসে আছে তাজ। আজ সাতদিন যাবত এখানেই আছে। তিতিরকে যখন হসপিটালে আনা হয় তার জীবন প্রদীপ নিভু নিভু করছে। তেল শেষে প্রদীপ যেমন নিভু নিভু করে তিতিরের অবস্থাও তেমনই ছিলো। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ আর ঠান্ডার জন্য অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে যায়, এখনো বিপদ কাটেনি। জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত ডক্টর কিছু আশ্বাস দিতে পারছে না। তিতিরের হয়তো জীবনের হিসাব কিছু বাকি আছে তাই মরে মরে বেঁচে গেছে। তার বেঁচে থাকাও ডক্টরদের কাছে বিস্ময়। কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে ফিরে তাকালো তাজ। মৌকে দেখে আবার সামনে তাকালো।

মৌ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, বাসায় যাও একটু রেস্ট নিয়ে এসো।

তাজ নির্বিকার গলায় বললো, আমি মেয়েটাকে কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এভাবে নয় মৌ। ওর কিছু হয়ে গেলে নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবো না।

মৌ শান্ত গলায় বললো, ওর কিছু হবে না তাজ। তুমি চিন্তা করো না।

অপরাধবোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। আমার জন্য একটা মেয়ে আজ সাতদিন ধরে মৃত্যুর সাথে লড়ছে। এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না। একবার চিন্তা কর, আমি প্রতিশোধের নেশায় কতটা অমানুষ হয়ে গিয়েছিলাম। মেয়েটা যখন আধমরা হয়ে বাথটবে পরে ছিলো আমি তখন ওর কথা চিন্তা না করে ভেবেছিলাম ও মরে গেলে আমি মার্ডার কেসে ফেঁসে যাবো।

মৌ কী বলবে খোঁজে পাচ্ছে না। সেদিন ডাক্তার যখন জানালো তিতিরের অবস্থা অনেক খারাপ, বাঁচানো যাবে কিনা বলা যাচ্ছে না। তখন থেকেই তাজ অপরাধবোধে ভুগছে। তখন তার হুঁশ ফেরে সে কতটা অমানুষে পরিণত হয়েছে।

তাজ সোজা হয়ে মৌয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, মৌ বিশ্বাস কর আমি মেয়েটাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চাইনি। ও আমাকে যেমন মানসিক কষ্ট দিয়েছে সেটা ওকে বুঝানোর জন্য মানসিক কষ্ট দিতে চেয়েছিলাম।

মৌ কিছু বলবে তার আগেই একজন নার্স এসে বললো, রোগীর জ্ঞান ফিরেছে। ডাক্তার আপনাকে যেতে বলেছেন।

মৌ আর তাজ চমকে তাকালো নার্সের দিকে। তাজ কিছু না ভেবে উঠে তিতিরের কেবিনের দিকে পা বাড়ালো। মৌ তাজের পিছনে যেতে গেলে রায়হান হাত টেনে ধরলো পেছন থেকে।

মৌ পেছন ফিরে নিজের হাতের দিকে তাকালো যা আপাতত রায়হানের দখলে। মুখ তুলে তাকালো রায়হানের দিকে।

রায়হান বললো, তুই কোথায় যাচ্ছিস ?

মৌ বললো, তিতিরের কেবিনে।

রায়হান বিরক্ত গলায় বললো, তুই কী কিছুই বুঝিস না মৌ। ওরা হাসবেন্ড ওয়াইফ এখন ওদের একা ছাড়া উচিত।

মৌ ভ্রু কুঁচকে তাকালো রায়হানের দিকে। এই ছেলে গত সাতদিন ধরে তাকে বিভিন্নভাবে বুঝাতে চাইছে তাজ মেনে নিয়েছে মৌকে। কারণটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না মৌয়ের তবু সে চুপ আছে। কারণ সে তো জানে তাজের এই অস্থিরতা কেবল অপরাধবোধ থেকে।

মৌ বিরক্ত গলায় বললো, আমি বাচ্চা না রায়হান। আমাকে বুঝানোর প্রয়োজন নেই কোনটা ঠিক কোনটা ভুল।

রায়হান গম্ভীর গলায় বললো, এবার তোর উচিত তাজ আর তিতিরের জীবন থেকে সরে যাওয়া।

মৌ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, কে কার জীবন থেকে সরবে সেটা তো সময় বলে দিবে।

মৌ রায়হানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে তিতিরের কেবিনের দিকে গেলো। রাগে চোখমুখ লাল হয়ে উঠলো রায়হানের। গত সাতদিন তাজ আর মৌ প্রায় সবসময় একসাথেই ছিলো হসপিটালে। রায়হানের এখন ইচ্ছে করছে তিতিরকে মেরেই ফেলতে। সে তাজ আর মৌকে দূরে সরানোর পরিবর্তে আরো কাছাকাছি আনছে।

রায়হান বিড়বিড় করে বললো, যা করার তাড়াতাড়ি করতে হবে। তাজ মৌয়ের থেকে দূরে না সরলেও মৌয়ের বাবা-মার মনে তার জায়গা নষ্ট হয়েছে। সেটাই কাজে লাগাতে হবে।

রায়হান এসব চিন্তা করে সেও মৌয়ের পিছনে চলতে লাগলো। মৌ কেবিনে গিয়ে দেখলো তাজ ডক্টরের সাথে কথা বলছে আর তিতির শূন্য দৃষ্টিতে উপরের সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

মৌ তিতিরের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, কেনো এভাবে কষ্ট পাচ্ছো ? শুধু আমাদের কষ্ট দিতে গিয়ে নিজেও তো কম পাচ্ছো না। বলে দাও না সত্যিটা সবার সামনে।

তিতির ঘুরে তাকালো মৌয়ের দিকে দূর্বল গলায় বললো, আমার জীবনের চেয়ে অন্য একটা জীবন অনেক বেশি দামী আমার কাছে। সেই জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখতে নিজের জীবন দিতেও রাজি। ওপারে গিয়ে বাবা-মার সামনে মাথা উচু করে বলতে পারবো আমি আমার দ্বায়িত্ব পালন করেছি। আর নিজেকে বাঁচাতে গিয়ে তার কিছু হয়ে গেলে এখনো আয়নায় নিজের সাথেই চোখ মেলাতে পারবো না। সেই মুহূর্ত আমি চাই না আপু।

ঠোঁট নড়লেও গলা দিয়ে আওয়াজ আসছে না তার। গলার ব্যাথায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। মৌ কিছুই শুনতে পায়নি তার কথা।

মৌ বললো, আমি বুঝতে পারছি না তোমার কথা।

মৌয়ের কথা খেয়াল করে ডাক্তার বললো, অনেক সময় ঠান্ডা পানিতে ভিজে থাকার কারণ গলার এই অবস্থা। আওয়াজ ঠিক হতে সময় লাগবে। উনাকে কথা বলতে বাধ্য করবেন না ডক্টর মৌ। কথা বলতে উনার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

ডক্টরের কথা শুনে চুপ করে গেলো মৌ। তাজ তাকালো তিতিরের দিকে। সাত দিনে শুকিয়ে অর্ধেক হয়ে গেছে। গলার হাড়গুলো দেখা যাচ্ছে। তাজ গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। মেয়েটাকে সে সবসময় দেখেছে গোছানো, পরিপাটি। আজ কেমন বিধস্ত দেখাচ্ছে। জীবন মৃত্যুর লড়াইয়ে জিতে গিয়েও কেমন উদাসীন। দরজায় দাঁড়িয়ে লাল চোখে তিতিরের দিকে তাকিয়ে আছে রায়হান। তার মনে কোনো মায়াদয়া হচ্ছে না তিতিরের জন্য। মেয়েটা মরে গেলে তার সব খেলা নষ্ট হয়ে যেত সেটা ভাবতেই রাগ হচ্ছে তার উপর। রায়হান সরে গেলো দরজা থেকে। সে অপেক্ষা করছে তিতিরকে একা পাওয়ার।

একটু পর ইরিনা এসে হাজির হলো, ইকবাল আসেনি সে অফিসে।

ইরিনা তিতিরকে দেখে ডক্টরের উদ্দেশ্যে বললো, বাচ্চাটার কী অবস্থা ডক্টর ?

ইরিনার কথা শুনে থতমত খেয়ে গেলো ডক্টর। এদিকে মৌ আর তাজ অবাক চোখে একবার ইরিনার দিকে তো একবার ডক্টরের দিকে তাকাচ্ছে।

ইরিনা বললো, এতদিন ওর জীবন নিয়েই টানাটানি ছিলো তাই এটা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি।

ডক্টর আমতা আমতা করে বললো, মিসক্যারেজ হয়ে গেছে উনার।

তাজের এসব নিয়ে ঝামেলা করার ইচ্ছে হলো না, তাই কিছু বললো না। মৌ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ডক্টর ইশরাকের দিকে। এই ডক্টরও মিথ্যা বলবে ভাবেনি মৌ। তবে মৌও কিছু বললো না।

তিতির মনে মনে বললো, আমার এই অবস্থায় নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভুল করলেন না মিস্টার রায়হান চৌধুরী। অবশ্য ভালোই হলো আরো একটা মিথ্যা নাটক আমাকে করতে হলো না। রায়হান চৌধুরী আপনার পাপের পরিমাণ আকাশ ছুঁতে চলেছে। পাপের শাস্তি আপনাকে পেতে হবে, কঠিন শাস্তি।

ইরিনা তিতিরের মাথায় হাত রেখে বললো, যাক মেয়েটা তো বেঁচে গেছে।

তিতির তাকালো তাজের দিকে। তাজের দৃষ্টিও তিতিরে সীমাবদ্ধ। তিতির ব্যাকুল হয়ে একটু ঘৃণা খুঁজলো তাজের চোখে। কিন্তু আজ তাজের দৃষ্টিতে কেবলই অপরাধবোধ।

তিতির মনে মনে আওড়ালো, আপনার চোখের ঘৃণা দৃষ্টি আমার আসক্তি। আমার জন্য আপনার চোখে কেবলই ঘৃণায় দেখতে চাই আমি অন্যকিছু নয়। আপনার ঘৃণা যে আমার আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। আপনার জীবনের এই বিষাক্তফুলের আসক্তি আপনার ঘৃণা।

১২.
মনে হচ্ছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কেউ তাকিয়ে আছে, প্রচন্ড অস্বস্তি নিয়ে চোখ মেলে তাকালো তিতির। তার ধারণাই সঠিক। রায়হান দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে, দৃষ্টি তার দিকে। তিতির আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলো কেবিনে কেউ নেই। তিতিরকে মৌয়ের কাছে রেখে তাজ তার মায়ের সাথে বাড়ি ফিরেছে। হসপিটালে থাকতে থাকতে সেও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো।

রায়হান বাঁকা হেসে বললো, কেমন আছিস বোন ?

তিতির ঘৃণায় চোখমুখ কুঁচকে ফেললো। রায়হান হুট করে তিতিরের গাল চেপে ধরলো শক্ত করে।

চিবিয়ে চিবিয়ে বললো, তোকে আমি যে কাজে তাজের কাছে পাঠিয়েছি তুই তার উল্টো কাজ করছিস। তোর জন্য যদি আমার পরিকল্পনা বিফলে যায় তোদের দু’বোনকে কেটে টুকরো টুকরো ফেলবো আমি।

ভয়ে রক্তশূণ্য হয়ে গেলো তিতিরের মুখমন্ডল। বারবার মাথা নাড়িয়ে পাখির ক্ষতি করতে না বুঝালো। হাত জোর করলো রায়হানের সামনে। রায়হান তিতিরের গাল ছেড়ে কাটা হাত চেপে ধরলো। সেখানে ইনফেকশন হয়েছে ঠিক হতে সময় লাগবে। ব্যাথায় কুঁকড়ে গেলো তিতির।

আজ তুই মরে গেলে আমার পুরো খেলাটা গন্ডগোল হয়ে গেলো। আমার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত তুই মরতেও পারবি না তিতির। তুই মরে গেলে আমি তোর বোনের জীবন নরক করে দিবো। বেঁচে থেকেও ধুঁকে ধুঁকে মরবে। তোর অবুঝ বোনটাকে মানুষ রুপী হয়নার দল ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নে ভালো করে, তুই মরার আগেও আমার অনুমতি নিতে হবে তোকে।

রায়হান হনহনিয়ে বের হয়ে গেলো কেবিন থেকে। ডুকরে কেঁদে উঠলো তিতির। নিজের নিয়তির উপর কেবলই ধিক্কার আসছে তার। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হচ্ছে। মৌ কেবিনে এসে তিতিরকে কাঁদতে দেখে দ্রুত এগিয়ে এলো।

তিতিরের মাথায় হাত রেখে বললো, কী হয়েছে তুমি কাঁদছো কেনো ?

তিতির কিছু না বলে কেবল কান্না করে যাচ্ছে। মৌ কিছু বুঝে উঠার আগেই তিতিরের পাশে পরে থাকা একটা জিনিস তার চোখে পড়লো। জিনিসটা চিনতে অসুবিধা হলো তা মৌয়ের। কারণ এটা তার নিজের কেনা। মৌ একটু হিসাব করতেই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেললো। তিতিরকে আর কিছু জিজ্ঞেস না করে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগলো। মৌয়ের অজানা কারণে রাগ কাজ করে না তিতিরের উপর। মৌ এটুকু বুঝতে পেরেছে তিতির নিরুপায়, সে বাধ্য হচ্ছে এসব করতে। তাই রেগে থাকতে পারেনি তিতিরের উপর। তিতির কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লো আবার। তিতির ঘুমিয়ে যেতেই জিনিসটা হাতে নিয়ে মৌ বেরিয়ে পড়লো জিনিসটার মালিকের উদ্দেশ্যে। মৌ যেনো একটু একটু করে হিসাবটা মিলাতে শুরু করেছে।

বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুম দিয়েছিলো তাজ। তখনই ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো। বিরক্তি নিয়ে তাকালো ফোনের দিকে। নাম্বারটা দেখে তাড়াতাড়ি রিসিভ করলো।

রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো, স্যার নাম্বারের ডিটেইলস পাওয়া গেছে।

ঠিক আছে আমি এখনই আসছি।

রেস্ট নেওয়া আর হয়ে উঠলো না তাজের। কোনরকমে শার্টটা গায়ে জড়িয়ে বের হয়ে গেলো ফার্ম হাউসের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে হয়তো জীবনের দ্বিতীয় ধাক্কা খেতে চলেছে সে। সহ্য করতে হয়তো অনেকটা বেগ পেতে হবে।

এদিকে রায়হানকে লুকিয়ে পাখির সব ইনফরমেশন বের করার চেষ্টা করছে আহান। এই কয়েকদিনে মেয়েটার পাগলামো তার হৃদয় ছুয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। মেয়েটা যা করে তাতেই যেনো মুগ্ধ হয় আহান। এই কয়েকদিনের কষ্টের ফল হিসাবে বাংলাদেশ থাকা তার এক বন্ধু তাকে কিছু ইনফরমেশন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তার ফোনের অপেক্ষায় বসে আছে আহান। সামনে পাখি পুতুল নিয়ে খেলছে।

পাখি হঠাৎ বললো, আহান তোমার পুতুলের সাথে আমার পুতুলের বিয়ে দিবে ?

পাখির কথায় আহানের ঘোর কাটলে মুচকি হাসলো, আমার তো পুতুল নেই।

পাখি ঠোঁট উল্টে বললো, তোমার পুতুল নেই কেনো ?

আমাকে তো কেউ পুতুল কিনে দেয়নি।

আমার কাছে একটা বয় পুতুল আছে সেটা তোমাকে দেবো। তারপর আমার পুতুলের সাথে তোমার পুতুলের বিয়ে দিবো।

আহান দুষ্টু হেসে বললো, বিয়ে দিলে কী হবে ?

পাখি খিলখিল করে হেসে বললো, এ মা তুমি দেখি অনেক বোকা। তুমি জানো না বিয়ে দিলে একসাথে ঘুমাতে পারবে, তাহলে আর ভয় পাবে না কেউ। আপুনি বলেছে বিয়ে হলে একসাথে ঘুমানো যায় তাই ভূত আসতে পারে না।

আহান ঠোঁটের কোণে হাসিটা বজায় রাখলো, আমাকে বিয়ে করবে তুমি ? আমরাও একসাথে থাকবো তাহলে, একসাথে ঘুমাবো। আমি তো ভূতে ভয় পাই অনেক।

পাখি অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো আহানের দিকে। আহান আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে পাখির উত্তরের অপেক্ষায়।

পাখি খানিকটা সময় চিন্তা করে বললো, আমি তো রিদুকে বিয়ে করবো। তুমি জানো রিদু অনেক কিউট। আমি রিদুকে বিয়ে করে আমার কাছে রাখবো সবসময়। তুমিও কিউট কিন্তু আমি তো রিদুকে বিয়ে করবো বলেছি আপুনিকে।

আহান ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে পাখির দিকে। সে বুঝার চেষ্টা করছে এই রিদু আবার কে। পাখি কথা শেষ করে নিজের মতো খেলতে লাগলো। আহান কিছু জিজ্ঞেস করবে তার আগেই ফোন বেজে উঠলো। স্কিনে বাংলাদেশের সেই বন্ধুর নাম্বার দেখে ফোন নিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো।

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে