বিবাহ বন্ধন পর্ব-৫+৬

0
721

#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৫
#লেখক_দিগন্ত
সূর্য আর বৃষ্টি দুজনেই ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরে তাকায়।মর্জিনা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে আছেন।

পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক করতে বৃষ্টি বলে,
-“আমরা একটু বাইরে ঘুরতে যাচ্ছিলাম দাদি।”

-“এত রাতে বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। যা ঘরে যা।”

বৃষ্টি কিছু বলতে যাবে তার আগে সূর্য তাকে থামিয়ে বলে,
-“আচ্ছা দাদি আমরা ভেতরে যাচ্ছি।”

বৃষ্টি সূর্যর কথায় অবাক হয়।সূর্য বৃষ্টির হাত ধরে একপ্রকার টেনে নিয়ে যায়।রুমে আসতেই বৃষ্টি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“আপনি চলে এলেন কেন? প্রিয়ার সাথে দেখা করবেন না?”

-“আপনার মাথা ঠিক আছে তো? আপনার দাদি যদি সন্দেহ করত তাহলে?”

-“আমি দাদিকে সামলে নিতে পারতাম।আপনি শুধু শুধু একটা মিথ্যা সম্পর্কের জন্য আপনার গার্লফ্রেন্ডকে কষ্ট দিলেন।”

-“প্রিয়ার সাথে আমি কথা বলে নেবো।আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন আমি সোফায় গিয়ে ঘুমাচ্ছি।”

-“আপনি সোফায় থাকবেন?”

-“হুম।আপনি তো বিছানা ছাড়া ঘুমাতে পারেন না।”

বৃষ্টির কেন জানিনা সূর্যের এই ব্যবহারটা খুব ভালো লেগে যায়।পরে নিজেকেই গালি দেয় সে।সূর্যকে নিয়ে ভাবার এত কি আছে?

দরজার বাইরে দাড়িয়ে তাদের সব কথা শুনে ফেলেন মর্জিনা বেগম।সব শুনে তিনি হতবাক হয়ে বলেন,
-“তাহলে কি বৃষ্টির সাথে ওর স্বামীর সম্পর্ক ভালো নয়।এসব কি হচ্ছে।বৃষ্টির সাথে আমার কথা বলতেই হবে।”
__________
পরের দিন সকালে বৃষ্টিকে নিজের রুমে ডেকে পাঠান মর্জিনা বেগম।বৃষ্টি রুমে আসতেই মর্জিনা বেগম বলতে থাকেন,
-“বিয়েকে কি তুই ছেলেখেলা ভেবেছিস? কি শুনলাম এসব আমি? নিজের স্বামীকে অন্য একটা মেয়ের হাতে তুলে দিতে চাস।ছি!”

-“দাদি আগে আমার কথাটা শোন।সূর্য আমাকে না অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে।এই সম্পর্কে আমরা কেউই ভালো থাকব না তাই…”

-“চুপ আর একটা কথাও বলবি না।তুই তো চেষ্টা করতে পারিস এই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখার জন্য।মেয়েদের তো সংসার টিকিয়ে রাখা দায়িত্ব।”

-“কেন দাদি? মেয়েদের কি আত্মসম্মান থাকতে নেই? একজন আমায় বউ হিসেবে মেনে নেবেনা আর আমি তার বউয়ের মর্যাদা পাওয়ার জন্য নি’
*র্লজ্জের মতো পরে থাকব।কেন সবসময় মেয়েদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে? আমি অন্য মেয়েদের মতো নই।আমাকে যে চায়না আমি জোর করে তাকে ছিনিয়ে নিতে শিখিনি।যে আমাকে ভালোবেসে কাছে টেনে নেবে আমি তারই হবো।তাই আমি যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হবে।প্রয়োজনে সারাজীবন একা থাকব তবুও জোর করে কারো জীবনে যায়গা নেওয়ার চেষ্টা করব না।”

-“তুই একটু ভেবে দেখ…”

-“আমার যা ভাবার ভেবে নিয়েছি দাদি।তুমি বাবাকে এইসব কিছু বলো না।আমি আসছি।”

বৃষ্টি কথাটা বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।মর্জিনা বেগম ভাবতে থাকেন এখন কি করা যায়।

বৃষ্টি আর সূর্য বাড়িতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়।বৃষ্টির খালা লুবনা খাতুন বৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
-“ভালো থাকিস বৃষ্টি।আমার কথা মনে পড়লে আমাকে ফোন করিস।আর সময় সুযোগ পেলে তোর স্বামীকে একটু নিউইয়র্কে আসিস আমার সাথে দেখা করতে।”

-“যাবো খালামনি।তোমার কাছে তো আমাকে একদিন যেতেই হবে।”

মর্জিনা বেগম সূর্যকে বলেন,
-“বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক।এই সম্পর্কর গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করো।আর আমার অবুঝ নাতনিটাকে একটু দেখে রেখো।স্বামী হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করো।”

সূর্য তার কথাগুলো ঠিক ভালোভাবে বুঝতে না পারলেও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।

সূর্য বৃষ্টিকে নিয়ে চলে আসে নিজের বাড়ির সামনে।বৃষ্টিকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় অফিসে।
______
বৃষ্টি বাড়িতে ঢুকতেই আরশির রুম থেকে চিৎকারের শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে চলে যায় তাদের রুমের দিকে।

আরশির সাথে তার স্বামী সোহেল ঝগড়া করছে।বৃষ্টি শুনতে পায় সোহেলের কথার কিছু অংশ।সোহেল আরশির দিকে রক্তচক্ষুতে তাকিয়ে বলছে,
-“কি ভেবেছ তুমি আমি কিছু জানি না? আমার অবর্তমানে তুমি অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলো।আমাকে ঠকাচ্ছো তুমি।আমি অফিসের কাজের জন্য সবসময় ব্যস্ত থাকি আর তুমি এই সুযোগে অন্য ছেলেদের সাথে প্রেম করো।তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করাই আমার উচিৎ হয়নি।শুধুমাত্র আম্মুর জন্য আমি তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।নাহলে তোমার মতো মেয়ের কোন যোগ্যতা নেই আমার বউ হওয়ার।”

আরশি সোহেলের কথাগুলো শুনে হাসতে থাকে।আরশির হাসি সোহেলকে আরো রাগিয়ে দেয়।আরশি হাসি থামিয়ে বলে,
-“তোমার আমাকে যে কখনো পছন্দ ছিলনা সেটা আমি ভালো করেই জানি সোহেল।কিন্তু বিশ্বাস করো আমি সেই ছোটবেলা থেকে তোমাকেই ভালোবাসি।অন্য কারো আমি ভাবিনি সোহেল।ঠকিয়েছ তুমি আমায়।আমি তোমায় ভালোবাসি জন্য এতদিন চুপ ছিলাম কিন্তু আজ তোমার এরকম ব্যবহারে বলতে বাধ্য হচ্ছি, তুমি বিয়ের পরেও আমাকে লুকিয়ে অন্য আরো অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করেছিলে। আমি সব জেনেও চুপ ছিলাম কারণ আমি ভেবেছিলাম তুমি একদিন বদলে যাবে।কিন্তু আমারই দো*ষ সব আমি ভুল ভেবেছিলাম।তুমি শোধরাও নি।আর আজ তুমি আমায় ব্লেইম করছো?”

-“আমার সামনে বেশি নাটক করো না।অয়ন কে? যার সাথে প্রতিদিন লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলো।”

-“অয়ন ছেলেটা কলেজ থেকে আমায় বিরক্ত করতো।আমায় ভালোবাসার কথা বলতো।আমি কখনোই ওকে পাত্তা দেইনি।ওর ভয়েই বাবা এত তাড়াতাড়ি আমায় বিয়ে দিয়ে দেয়।এতদিন সব ঠিক ছিল না জানি এক সপ্তাহ থেকে কোথা থেকে ও আমার নাম্বার পেল।দিনরাত কল করে আমায় বিরক্ত করে।আমি তোমাকে বলেও ছিলাম কিন্তু তুমি…”

-“আমি কিছু বুঝিনা ভেবেছ।এসব মিথ্যা বলে কোন লাভ নেই।আমি ডিশিশন নিয়ে ফেলেছি তোমায় ডিভোর্স দেব।”

আরশি অসহায় কন্ঠে বলে,
-“সোহেল…”

সোহেল আর কোন কথা না বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।সোহেল চলে যাওয়ার পর বৃষ্টি রুমের ভেতরে আসে।আরশি অনবরত কেঁদেই চলেছে।

বৃষ্টি এসে আরশির পাশে বসে।আরশির চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে,
-“কার জন্য এভাবে কাঁদছ তুমি? যে তোমাকে একটুও বিশ্বাস করে না, তোমাকে শুধু অবহেলা করে।তার জন্য কেঁদে এভাবে নিজের চোখের জল ন*ষ্ট করো না।”

আরশি বিব্রতবোধ করে।বৃষ্টি সেটা বুঝতে পেরে বলে,
-“আমি বাইরে দাড়িয়ে থেকে তোমাদের কথা শুনেছি।জানি এভাবে অন্যদের কথা শোনা ঠিক না।কিন্তু সবসময় এত নিয়ম মানলে চলে না।”

আরশি বৃষ্টিকে ইতস্তত হয়ে বলে,
-“তুমি যা শুনেছ প্লিজ কাউকে বলোনা।সবাই এসব জানলে সোহেলকে কথা শোনাবে।”

-“যে তোমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করে তুমি তার কথা ভাবছ?”

-“হ্যাঁ ভাবছি।কারণ খুব ভালোবাসি যে তাকে।”

-“ভালোবাসায় অন্ধ হলে চলবে না।অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে জানতে হয়।মনে রেখো অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহ্য করে দুজনেই সমান অপরাধী।আর একটা কথা জানো আমরা মেয়েরা সবসময় এত মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি জন্যই সবাই এত সহজে আমাদের কষ্ট দিতে পারে।শক্ত হওয়ার চেষ্টা করো।এত নরম হলে টিকে থাকা যায়না।”

-“তোমার কথাগুলো শুনে ভালো লাগল বৃষ্টি।আমি তোমাকে ভুল ভেবেছিলাম।তুমি সত্যি অন্যরকম।তোমার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।”

আরশির কথার বিপরীতে বৃষ্টি শুধু একটু মুচকি হাসে।

তন্মধ্যে সোহেলের চিৎকার তাদের কানে ভেসে আসে।সোহেল অশ্রব্য ভাষায় গালাগালি করে আরশিকে ডাকছে।আরশি ভয়ে চুপসে যায়।বৃষ্টি আরশির হাত ধরে অভয় দিয়ে বলে,
-“একদম ভয় পাবে না।আমি আছি তোমার সাথে।”
(চলবে)
#বিবাহ_বন্ধন
#পর্ব_৬
#লেখক_দিগন্ত
বৃষ্টি আরশিকে নিয়ে চলে আসে ড্রইং রুমে।আরশিকে আসতে দেখে সোহেল ছুটে এসে অনবরত তাকে মা*রতে থাকে।বৃষ্টি আরশির ঢাল হয়ে দাঁড়ায়।

সালমা আক্তার সোহেলের এই ব্যবহারে প্রচণ্ড রেগে যান।সোহেলের গালে থা*প্পড় মে*রে বলেন,
-“তোর সাহস কি করে হলো আরশির গায়ে হাত দেয়ার? তোকে কি আমি এই শিক্ষা দিয়েছি? তোর খালামনি সব জানতে পারলে কি মনে করবে একবার ভেবে দেখেছিস?”

সোহেল আজ খুব রেগে আছে।তাই তার মস্তিষ্ক কাজ করছে না।নিজের মায়ের সামনেই সে বলতে থাকে,
-“তোমার বোনের মেয়েকে তো খুব বাড়ির বউ করে এনেছ।আমার জীবন এভাবে ন*ষ্ট করে কি সুখ পেলে? এখন একটা খারাপ মেয়ের সাথে আমায় সংসার করতে হবে।যার ঘরে স্বামী থাকতেও অন্য ছেলেদের সাথে রিলেশন আছে।”

সোহেলের কথাটা শুনে আরশির চোখ টলমল করতে থাকে।সালমা আক্তারও বেশ অবাক হন।তিনি সোহেলকে জিজ্ঞাসা করেন,
-“এসব কি বলছিস তুই? আরশিকে আমি খুব ভালো করেই চিনি।আরশি এমন মেয়েই নয়।”

সোহেল তার মায়ের হাতে কয়েকটা ছবি তুলে দেয় যেগুলো কুরিয়ার করে পাঠানো হয়েছে।ছবিগুলো দেখে সালমা আক্তার যেন নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।আরশির সাথে অয়ন নামের ছেলেটির ঘনিষ্ঠ অবস্থায় অনেকগুলো ছবি।

সালমা আক্তার ঘৃণার দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকান।আরশি বিস্ময়ের চোখে সালমা আক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকে।যেই চোখে এতদিন ভালোবাসা ছিল আজ সেই চোখে নিজের জন্য ঘৃণা যেন সে মেনে নিতে পারছে না।

সালমা আক্তার আরশির দিকে ছবিগুলো ছু*ড়ে দিয়ে বলেন,
-“এই দিন দেখার জন্য তোকে এই বাড়ির বউ করে এনেছিলাম? এখন তো মনে হচ্ছে সোহেলই ঠিক ছিল আমিই তোকে ভুল চিনেছিলাম।সোহেল কখনোই তোকে বিয়ে কররে চায়নি শুধুমাত্র আমার কথায় তোকে বিয়ে করেছে আর তুই….যা এক্ষুনি চলে যা আমার সামনে থেকে আমি তোর মুখ দেখতে চাইনা।”

আরশি আজ আর কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই।এতসব যে হয়ে যাচ্ছে ত্র কোনটাই সে মেনে নিতে পারছে না।এতদিন সোহেলের এত অবজ্ঞা স্বত্বেও সালমা আক্তারের অকৃত্রিম ভালোবাসার জন্য সবসময় হাসিমুখে সব সহ্য করেছে আরশি।আর আজ তিনিই কিনা আরশিকে এভাবে বলছেন।আরশির চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রুবর্ষণ হতে থাকে।কোনরকমে সে বলে,
-“বিশ্বাস করো তুমি এসব মিথ্যা।আমাকে ফাসানো হচ্ছে।”

-“তোকে বিশ্বাস করাই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল।”

বৃষ্টি আর চুপ থাকতে পারে না।তার মনে হয় আর বেশিক্ষণ চুপ থাকলে খুব খারাপ কিছু হয়ে যাবে।তাই বৃষ্টি বলে ওঠে,
-“রাগ মানুষের সবথেকে বড় শত্রু তাই রাগের বসে এমন কিছু করবেন না যাতে ভবিষ্যতে আফসোস করতে হয়।আরশি ভাবিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি মিথ্যা বলছেন না।আপনি তো ওনাকে এতদিন ধরে দেখছেন।আপনার কি মনে হয় উনি এমন কিছু করতে পারেন?”

সোহেল বিরক্তির সুরে বলে,
-“তাহলে এই ছবিগুলো কি সব মিথ্যা?”

বৃষ্টি অকপটে উত্তর দেয়,
-“সবসময় যা দেখা যায় তাই সত্য হয়না।আজকাল অনেকরকম কারসাজি করা যায়।এডিটিং নামেও একটা কথা আছে।”

-“সেসব নাহয় মানলাম কিন্তু আরশি যে সবসময় ঐ ছেলেটার সাথে কথা বলতে সেটা তো অস্বীকার করা যাবেনা।আমি নিজে ওকে শুনেছি অয়ন নামের ছেলেটার সাথে কথা বলতে।”

বৃষ্টি আরশির দিকে তাকিয়ে চোখ দিয়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করে।আরশিও বুঝতে পারে বৃষ্টি কি বলতে চাইছে।সবসময় চুপ থাকলে চলে না কখনো কখনো নিজের জন্য মুখ খুলতে হয়।তাই আরশি আজ আর চুপ না থেকে বলে,
-“অয়নের ব্যাপারে আমি তোমাকে আগেও বলেছি।ছেলেটা সবসময় আমাকে ফোন করে ডিস্টার্ব করে।আমার সাথে ওর কোন সম্পর্ক নেই।আমার তো মনে হয় এসবের পেছনেও ওর হাত রয়েছে।”

সোহেল যেন আজ কোনভাবেই আরশির কাছে মাথা নত করতে প্রস্তুত নয়।তাইতো কোন কথা,কোন যুক্তি মানতে চাইছে না।সোহেল আরশিকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“তোমায় একদিন সময় দিলাম এরমধ্যে যদি প্রমাণ করতে পারো যে এই ছবির সবকিছু মিথ্যা, অয়নের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তাহলেই কেবল আমি তোমাকে এই বাড়িতে থাকতে দেব নাহলে ঘা*ড়ধা*ক্কা দিয়ে বের করে দেব।”

সালমা আক্তারও ছেলের কথায় সায় দেন।সবকিছুর মধ্যে আরশি যেন তাজ্জব বনে যায়।বৃষ্টি আরশিকে বলে,
-“তোমায় কিছু প্রমাণ করতে হবে না।এত অপমান সহ্য করে তুমি কেন বনাক পরে থাকবে।তখন তো আমি শুনলাম তোমার স্বামীও অনেক মেয়ের সাথে রিলেশনে ছিল।তখন তুমি তো তাকে এভাবে বলোনি।তাহলে সে কোন সাহসে তোমায় শুধুমাত্র সন্দেহের বসে এরকম কথা বলবে? নিজেকে যদি সম্মান করতে না পারো তাহলে কেউ তোমায় সম্মান দেবে না মনে রেখো।”

আরশি বলে,
-“আমি এবার নিজেকে সম্মান দেব বৃষ্টি।ওরা আমার কাছে প্রমাণ চেয়েছে তাইতো? আমি দেব প্রমাণ।কিন্তু সোহেলের কথামতো এই বাড়িতে পরে থাকবোনা।ওর মুখে প্রমাণটা ছু*ড়ে মে*রেই আমি চলে যাব এই বাড়ি থেকে।”
___________________
অয়ন ফোনে আরশির ছবি দেখছিল আর হাসছিল।হেসে বলে,
-“কি ভেবেছিলে তুমি আরশি? বিয়ে করেই আমার থেকে মুক্তি পাবে? তাহলে তুমি ভুল ভেবেছ।এখন দেখ তোমাকে ঘুরেফিরে সেই আমার কাছেই ফিরতে হবে।”

-“ফিরে এসেছি আমি তোমার কাছে অয়ন।”

চেনা পরিচিত কন্ঠটি শুনে অয়ন সামনে তাকায়।আরশি এসেছে তাও আবার অয়নের বাড়িতে।অয়ন নিজেকে চি*মটি কে*টে পরীক্ষা করে নেয় সে ঠিক দেখছে কিনা।

আরশি বাঁকা হেসে বলে,
-“একদম ঠিক দেখছ।তোমার বাড়ির ঠিকানা তো ছিল আমার কাছে।একবার তো তোমার বাবাকে নালিশ জানাতে এসেছিলাম।আজ আবার এলাম এতদিন পর।”

অয়ন যেন হাতে চাঁদ পেয়ে যায়।আরশিকে বলে,
-“আমি বলেছিলাম না আমার থেকে ভালো তোমাকে কেউ বাসতে পারবে না।দেখলে তো তোমার ঐ স্বামীর বিশ্বাস কতো ঠুনকো।আমি যদি নিজের চোখেও তোমাকে অন্য ছেলের সাথে দেখতাম তাও তোমাকে অবিশ্বাস করতাম না।”

আরশি অনেক কষ্টে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
-“তুমি তো খুব ভালোই ছবি এডিটিং করতে পারো।”

অয়ন বিনিময়ে শুধু হাসে।আরশি আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।অয়নের গালে খুব জোরে একটা থা*প্পড় মে*রে বলে,
-“ইচ্ছে করছে তোকে এখানেই মে*রে মা*টি চা*পা দিতে শ*য়-তান কোথাকার।”

অয়ন হা করে আরশির দিকে তাকায়।ততক্ষণে সোহেল,বৃষ্টি,সূর্য সবাই ভেতরে চলে আসে।আরশি সবাইকে নিয়েই এসেছিল।সোহেল আর সূর্য দুজনে মিলে অয়নকে ভয় দেখাতেই সে গলগল করে সব সত্য উগড়ে দেয়।সোহেল সব শুনে অয়নকে অনবরত মা*রতে থাকে।

তারপর একবার অসহায় দৃষ্টিতে আরশির দিকে তাকায়।আরশিও সোহেলের দিকে তাকিয়ে ছিল।চোখে চোখ পড়তেই সে চোখ ঘুড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“প্রমাণ করার কথা ছিল যেটা আমি করে দেখিয়েছি।এখন আমার আর কিছু বলার নেই।তোমরা সবাই ফিরে যাও আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে যাব।”

আরশি যেতে নিতেই সোহেল তার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
-“আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি।তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন ভাষা আমার নেই।তবুও আমি মন থেকে ক্ষমা চাইছি তোমার কাছে।প্লিজ আমাকে এভাবে ছেড়ে যেওনা।আমি কথা দিচ্ছি আর কখনো তোমায় কোন কষ্ট দেব না।”

আরশি মুচকি হেসে বলে,
-“এতদিনে নিজের ভুল বুঝতে পারলে।আগের আমি হলে বোধহয় খুব সহজেই তোমায় ক্ষমা করে দিতাম।সব ভুলে তোমায় আপন করে নিতাম।কিন্তু এখন আমি একজনের কাছে আত্মসম্মানবোধ নিয়ে চলার কথা শিখেছি।বৃষ্টি আমায় শিখিয়েছে নিজের আত্মসম্মানই সবার আগে।আমি ভালোবাসায় অন্ধ ছিলাম তাই তোমার সব ভুল দেখেও দেখিনি, নিজের ভালোবাসার উপর ভরসা রেখেছি।তবে এতকিছু সহ্য করর পর আর আমার ভালোবাসার উপর কোন বিশ্বাস নেই।ভালো থেকো তুমি।”

সোহেল কাদো কাদো গলায় বলে,
-“আমাকে ছেড়ে থাকতে পারবে তুমি? আমি কিন্তু তোমার স্বামী হই।”

-“বিবাহবন্ধন খুব সুন্দর একটি বন্ধন হতে পারে কিন্তু এই বন্ধন টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব শুধু একজন মেয়ের একার নয়।তুমি একটু চেষ্টা করলে আজ আমাদের সম্পর্ক এত বা*জে অবস্থায় আসত না।কিন্তু বিশ্বাস করো আজ আর তোমায় ভরসা করার সাহস আমি পাচ্ছিনা।আমি তাই আজ চাচ্ছি এইসব থেকে মুক্তি থেকে।”

-“আরশি…”

আরশি কোন কথা না বলে চলে যায়।সোহেল তার পিছনে যায় তাকে ফিরিয়ে আনতে।বৃষ্টি বিড়বিড় করে বলতে থাকে,
-“আরশি ভাবি একদম ঠিক করেছে।এরকম ছেলেদের সুযোগ দেওয়া উচিৎ না।দুই ভাই একদম একইরকম।”

সূর্য কথাটা শুনে অদ্ভুতভাবে বৃষ্টির দিকে তাকায়।বৃষ্টি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বাইরে চলে যায়।
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে