বাদলে ঘেরা আকাশ পর্ব-০৩

0
2017

#বাদলে_ঘেরা_আকাশ
#Part_3_
#Writer_Tahsina_Islam_Orsha

টিপটাপ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বাহিরে হইচই করে বইছে বিস্তীর্ণ বাতাস। কাচের জানালার গা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে বৃষ্টির ফোটা। বর্ষা বেডে শুয়ে থেকে তাকিয়ে আছে জানালার দিকে। বৃষ্টির মতো করে কেমন জেন তার জীবন ও ঝরে যাচ্ছে। ভালো লাগে না এখন কোন কিছুই। মুহুর্তে মুহুর্তে আবহাওয়ার মতো সব কিছু পালটে যায়। তাই ভয় হয় বর্ষার৷ বর্ষা বৃষ্টি গুলো ছুঁয়ে দিতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পাচ্ছে না শরীরে।

আকাশ ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখে তনিমা বসে টিভি দেখছে। সিএনে কার্টুন দেখছে আর হাসছে। আকাশের ভিষণ রাগ হলো দুটো বোনই এক রকম। একটা কিছু করলে অন্য কিছু মনে থাকে না। কেউ যে এসেছে তার দিকে বেখেয়াল। আকাশ হালকা কাশি দিয়ে
‘ তনিমা বর্ষা কোথায়?

তনিমা হকচকিয়ে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে
‘ আরেহ ভাইয়া! কখন এলেন?
‘ অনেকক্ষন হলো।
‘ সরি ভাইয়া আসলে টিভি দেখছিলাম তো বুঝতে পারিনি।
‘ বুঝার উচিত ছিলো।

তনিমা আকাশের কথা শুনে নিচে তাকায়
‘ আরে আমি তো মজা করছিলাম। এই ভাবে তো কেউ এসে কিডন্যাপ করে নিয়ে যাবে । তখন আমার এক মাত্র শালিকাকে কোথায় পাবো?

তনিমা আকাশের কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়। আকাশ একটু হেসে
‘ বর্ষা কোথায়?
‘ আপু অসুস্থ হয়ে পড়েছে, তার রুমেই শুয়ে আছে, আমি এতক্ষণ আপুর সাথেই বসে ছিলাম। তারপর আপু বললো একটু একা থাকতে চাই তাই আমি এসে টিভি ছাড়লাম। আব্বু ও বাসায় নেই একা একা বোরিং লাগছিলো।
‘ কি হয়েছে বর্ষার?
‘ আপু ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না। আর কিসব চিন্তা করে তাই হয়তো অসুস্থ হয়ে গেছে।আব্বু বলেছে ডাক্তার দেখাতে বা আপনাকে খবর দিতে কিন্তু আপু মানা করলো বললো এমনি ঠিক হয়ে যাবে। ফোনটা ও সাইলেন্ট করে ড্রয়ারে যে রেখেছে আর ধরেনি হয়তো।

আকাশ চুপ থেকে
‘ আচ্ছা তুমি টিভি দেখো আমি বর্ষার রুমে যাচ্ছি।

আকাশ দরজায় নক না করেই রুমে ডুকে দেখে বর্ষা শুয়ে আছে। জানালার দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক ভাবে। কিছু গভীর চিন্তায় নিমজ্জিত খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। ডাক্তার হওয়ার একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে রোগীকে দেখলেই বুঝতে পারা যায় সে খুব চিন্তায় আছে।

আকাশ আস্তে আস্তে বর্ষার কাছে কাছে গিয়ে বেডের এক কোনায় বসে বর্ষার মাথায় হাত দেয়। বর্ষা এখনো তাকিয়ে আছে জানালায়।

‘ বর্ষা!

বর্ষা একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার জানালার দিকে তাকায়

‘ এতো অসুস্থ হলে কি ভাবে? আর আমায় জানাও নি কেন? আংকেলও কিছু বলেনি তুমি নাকি মানা করেছো বলতে। রাগ করেছো আমার সাথে?
‘ ভালোবাসেন আমায়?
‘ চলো হসপিটালে যাবে এখন আমার সাথে। ( এক হাতে ধরে)

বর্ষা আকাশের হাত সরিয়ে
‘ আগে বলুন ভালোবাসুন আমায়?

আকাশ একটু চুপ থেকে বর্ষার চোখে তাকিয়ে
‘ হ্যা বাসি

বর্ষা চোখ বন্ধ করে আবার নিঃশ্বাস ছাড়লো।

‘ আমায় একটু জড়িয়ে ধরবেন? আমার কেমন যেন ভয় লাগছে।

আকাশ কোন কথা না বলে বর্ষাকে দুবাহুতে তুলে নেয়। বর্ষা দুহাতে আকাশের কাধে ধরে জড়িয়ে ধরেছে আকাশকে। বর্ষা কান্না করছে।
আকাশ চুপ করে আছে কিছু বলছে না বর্ষাকে। এখন কিছু বললে বর্ষা রাগ দেখাবে। আকাশের জন্যই তো বর্ষা কান্না করছে এমন, এখন কিবা বলবে বর্ষাকে। আকাশের চোখ দিয়েও টপ করে একফোটা পানি পরলো৷ মানুষকে চোখের সামনে কাঁদতে দেখলে অপর মানুষের ও কান্না পায় এই জন্যই হয়তো, নয়তোবা ভালোবাসার মানুষকে চোখের সামনে কান্নারত অবস্থায় দেখলে অপর মানুষটার চোখে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয় তাই আকাশের চোখেও পানি। কিন্তু আকাশের চোখে কেন পানি আসবে? পানি আসা যাবে না। আরো অনেক কিছু বাকি এখনি চোখে পানি আসলে কি ভাবে হবে?

হঠাৎ বর্ষার কান্না বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আকাশ বর্ষার মাথায় হাত দিয়ে
‘ বর্ষা!
বর্ষা কোন শব্দ করছে না দেখে আকাশ বর্ষার মাথা বুক থেকে তুলতেই দেখে বর্ষা নেতিয়ে পড়েছে চোখ।

হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে বর্ষা। ডাঃ মেহেদী আকাশের কাছে এসে
‘ ডাঃ আকাশ তেমন কিছু সিরিয়াস না। বেশি স্ট্রেস নেওয়ার কারনে আর না খেয়ে থাকার ফলে এমন হয়েছে। আমি স্যালাইনের সাথে এনার্জির একটা ইঞ্জেকশন দিয়ে দিয়েছি ঠিক হয়ে যাবে।
‘ থ্যাংস মেহেদী।
‘ ইটস মাই ডিউটি। টেক কেয়ার অফ হার।

বর্ষার পাশে বর্ষার হাত ধরে বসে আছে বর্ষার বাবা নাইম সাহেব। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পরে তিনি৷ তার হাসিখুশি মেয়েটা আজকে এই অবস্থা তিনি ভাবতে ও পারছে না। কি হয়েছে বর্ষা তাকে সব কিছু খুলে ও বলছে না। এমন অবস্থায় মেয়েকে জিজ্ঞেস ও করতে পারছে না কি হয়েছে ওর। ওই দিন আকাশকে কেন বিয়ে চায়নি বর্ষা আর জিজ্ঞেস করা হয়নি। ভেবেছিলো হয়তো নিজেদের মাঝে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে যা ঠিক হয়ে যাবে। বর্ষা সুস্থ হলে ওর মধ্যে কি চলছে জানতে হবে তার। দুই মেয়ের কথা ভেবে সারাজীবনের সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়েছে তিনি৷ এখন কি ভাবে মেয়েদের কষ্ট দেখবে নিজের চোখে!? এই সব ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়ে নাইম সাহেব। মেয়ের হাত ধরে কান্না করছে তিনি। এই দিকে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা আকাশের মুখ ঝলমল করছে। নাইম সাহেবের চোখে পানি দেখে আকাশের মুখে বিশ্ব জয়ের হাসি ফুটে উঠে অজান্তেই। এই হাসি মনে হচ্ছে অনেক সাধনার হাসি। অনেক অপেক্ষিত মুহুর্তের পর এই হাসি ফুটেছে আজ আকাশের মুখে। আকাশ তৃপ্তি নিয়ে দেখছে এই কান্না।।

নাইম সাহেব চোখ মুছে রুম থেকে বের হতে নিলেই দেখে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে। আকাশ নাইম সাহেব তাকিয়ে তাকায় সামনে এগিয়ে এসে

‘ আংকেল ঠিক আছেন আপনি?
‘ আকাশ বাবা আমার মেয়ের কি হয়েছে?
‘ তেমন কিছুনা ঠিক হয়ে যাবে। না খাওয়ায় এমন হয়েছে আর স্ট্রসে।

নাইম সাহেব মুখ গম্ভীর করে
‘ আমি সেটাই বলছি আমার মেয়ের কি হয়েছে, ওর কি নিয়ে স্ট্রেস? তুমি তো সব জানার কথা। আমার মেয়ের যদি কিছু হয় আমি কাউকে ছাড়বো না। ও সুস্থ হলে আমি সম্পুর্ন বিষয় জানবো কি হয়েছে, তুমি কি কিছুই জানো না?

‘ আংকেল বর্ষা আমায় তেমন কিছু বলেনি। ও সুস্থ হোক জেনে নিবো।
‘ হুম তাই ভালো।
‘ আংকেল আজকে রাতটা বর্ষার হসপিটালেই থাকতে হবে। আপনি বাসায় চলে যান আমি এই খানে আছি বর্ষার সাথে৷

‘ না আমি বাসায় যাবো না আমার মেয়েকে একা রেখে।
‘আংকেল আমি আছি তো টেনশন করবেন না। আমি সকালে বর্ষাকে বাসায় পৌঁছে দিবো। ও এমনিতেও ঘুমাচ্ছে আর উঠবে বলে মনে হয়না। শুধু শুধু আপনি বসে থেকে কেন কষ্ট করবেন? আর তনিমা ও বাসায় একা। আপনি বাসায় যান। আমি আছি এই খানে।

‘ আচ্ছা বাবা তুমি বর্ষাকে দেখে রেখো। আর কোন সমস্যা হলে আমায় ফোন দিও।
‘ জ্বী আংকেল।
.
.
.

রাত দুটো বাজে আকাশ বসে আছে বর্ষার ডান হাতটা তার হাতের মুঠোয় নিয়ে। বর্ষার হাত গুলো যতবার আকাশ ধরেছে ততবারই বর্ষার প্রেমে পড়েছে। বর্ষার হাতে এক অন্য রকম জাদু আছে মনে হয়। আকাশ বর্ষার হাতে একটা চুমু দিয়ে বর্ষার মুখের দিকে তাকায়। কি নিষ্পাপ মেয়ে না চাইতে ও আকাশ ভালোবেসে ফেলে এই মেয়েটাকে তার উদ্দেশ্য সে ভুলে যায় বার বার। আকাশ বর্ষার কপালে একটা চুমু দিয়ে বর্ষার হাতে তার গাল রেখে চোখ বন্ধ করে।

সকালের ঝলমলে রোদের ঝাপটা এসে বর্ষার মুখে পড়তেই ঘুম ভেঙে যায়। হাতের স্যালাইন খোলা৷ ডানহাতটা টান দিতে ভারী অনুভব হলে
বর্ষা তাকিয়ে দেখে আকাশ তার হাতে গাল পেতে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। বর্ষা আরেক হাত বাড়িয়ে আকাশের গাল ছুঁয়ে দিতেই আকাশ জেগে যায়৷

‘ গুড মর্নিং জান।

বর্ষা ভ্রু কুঁচকে
‘ আসলেই কি জান নাক….

আর কিছু বলার আগেই আকাশ বর্ষার ঠোট আলতো করে ছুঁয়ে দিয়ে

‘ গতকাল তো আমায় ভয় দেখিয়ে দিয়েছিলে। এখন উঠে পড় আংকেল হয়তো অপেক্ষা করছে আমাদের। গতকালকে আংকেল অনেক চিন্তায় ছিলো তোমার। এখন তার আদরের মেয়েকে সুস্থ দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলবে।

আকাশ এমন ভান করছে যেন কিছুই হয়নি। বর্ষা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আকাশকে।

🍁🍁🍁🍁🍁🍁

‘ আকাশ কোথায় যাচ্ছি আমরা? এটা তো আমাদের বাসার রাস্তা নয় তাহলে কোথায় যাচ্ছি?
‘ আর পাচঁমিনিট তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে………..

চলবে……….

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে