“বখাটে বউ”(পর্ব-৭)
বিস্ময়কর ভাবে আমার মতামতের কোনো তোয়াক্কা না করেই আমার বিয়ে ঠিক করলো সীমান্তর সাথে। আম্মু আর আন্টির মধ্যে এতটাই গভীর বন্ধুত্ব হলো যে তারা চান তাদের এই বন্ধুত্ব যেনো চিরকাল থাকে তাই তারা হুট করেই বিয়ের আয়োজন করলেন। আমি তো রেগে আগুন। আমি কিছুতেই বিয়ে করবো না কিন্তু বাড়িতে সবাই এমন ভাবে চলাফেরা শুরু করলো যেনো আমি একটা আত্মা। আমাকে কেউ না দেখতে পাচ্ছে, না আমার কথা শুনতে পাচ্ছে। আমি একাই চিল্লাচিল্লি করে বাড়ি মাত করি আর বাড়ির সবাই স্বাভাবিক ভাবে চলা ফেরা করে যেনো তারা কিছুই শুনতে পাচ্ছে না, দেখতেও পাচ্ছে না। এমনকি যুথীও আমার সাথে একই রকম আচরণ করছে।
বিয়ের তারিখ ঠিক হবার পরেও আমি গো ধরে বসে আছি। ওরা যা ইচ্ছে করুক, আমি “কবুল” শব্দটা উচ্চারণ করবো না, কিছুতেই না, মরে গেলেও না। ধেড়ে বাবু, বুড়ো বাবু, খোকাবাবু, যুবক বাবু, কোনো বাবুকেই আমি বিয়ে করতে চাই না।
সন্ধ্যায় আমি বই পড়ছিলাম হঠাৎ দরজায় নক। দরজা খোলাই ছিল। দেখলাম আন্টি মনমরা হয়ে দরজায় দাড়িয়ে আছেন। মুখ দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে, তার ভয়ানক মন খারাপ। আমি ম্লান হেসে বললাম-
__”দাড়িয়ে কেনো আন্টি? ভেতরে আসেন।”
আন্টি ভেতরে এসে আমার পাশে বসতে বসতে বললেন-
__”আজকাল তো তোর মুখটা দেখা যেনো অমাবস্যায় চাঁদ দেখার মতো। তুই তো আমাদের বাসায় যাওয়া ছেড়েই দিয়েছিস। জানি না আমরা কি এমন অপরাধ করেছি।”
আন্টির গভীর অভিমানের সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পেলাম না আমি। কেনো যাই না সে কথা তো আর বলার অবকাশ নেই, সবাই সেটা জানে। তারপরেও মুখের সামনে ওসব বলা সম্ভব নয় তাই বানিয়ে বানিয়ে বলাটাই বেটার। বললাম-
__”এমন ভাবে কেনো বলছেন? আসলে আমার তো সামনে পরীক্ষা তাই পড়ার চাপে রুম থেকে বের হতে পারছি না। আপনি অন্য কিছু ভাববেন না প্লিজ আন্টি!”
আন্টি আমার কথা বিশ্বাস করলেন কি না জানি না। মুখে দেখে তো মনে হচ্ছে এক চিমটিও বিশ্বাস করেননি। মুখটা গম্ভীর করে বললেন-
__”তোর সীমান্তকে ভাল্লাগে না তাই না? বিশ্বাস কর আমার ছেলেটা খুব ভালো। ওর মতো ভালো ছেলে খুব কমই হয়।”
এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমার কি বলা উচিত তা আমি জানি না। বললাম-
__”আমি জানি আপনার ছেলে খুব ভালো কিন্তু বিয়ে সংসার এই সব আমার ভালোলাগে না। আপনার ছেলে আমাকে নিয়ে কখনো সুখী হবে না।”
__”দেখ বর্ণ আমরা এখানে সারা জীবন থাকবো না। দূরে চলে গেলে তোদের সাথে আমাদের সম্পর্কটা হয়তো ভুলে যাবো; এটাই মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু যদি একটা আত্মীয়তা হয় তাহলে এই সম্পর্কটা মজবুত হয়ে সারাটা জীবন থাকবে। তাই আমি চেয়েছি আমাদের মধ্যে একটা বন্ধনের সম্পর্ক হোক।”
__”আপনার ছেলে আমাকে পছন্দ করে না আর আমিও করি না। ভালোবাসাহীন এই বিয়েটাকে কি আদৌ বিয়ে বলা যাবে?”
__”বিয়ে না হোক, আত্মীয়তা তো হবে। আমি তোর মায়ের মতো তাই তোকে জোর নয় অনুরোধ করে গেলাম।”
আন্টি আর কিছু না বলে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি ভীষণ টেনশনে পড়ে গেলাম। বাড়িতে সবাই আমাকে বয়কট করেছে। জানি না নিজের সিদ্ধান্তে কতক্ষণ অটল থাকতে পারবো।
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
আমিও কারো ইচ্ছেকে পাত্তা না দিয়ে পালিয়ে যাবার প্ল্যান করলাম। অনেক আগে পালিয়ে গেলে খুঁজে ধরে নিয়ে এসে ঠিক বিয়ে দিয়ে দেবে তাই ভাবলাম বিয়ের দিনেই পালিয়ে যাবো। যে যা ইচ্ছে ভাবুক আই ডোন্ট কেয়ার। কিন্তু কোথায় যাবো সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না। বিয়ে উপলক্ষে সব আত্মীয় স্বজন বিয়ের এক সপ্তাহ আগেই আমাদের বাড়িতে এসেছে, তাহলে আমি কার বাড়িতে যাবো? তবুও পথে ঘাটে ঘুরার জন্য প্রস্তুতি নিলাম কিন্তু কোনো ভাবেই পালানোর সুযোগ পেলাম না। কেউ না কেউ সারাক্ষণ আমার রুমে থাকছেই। এদিকে বিয়ে বিয়ে হৈ চৈএ আমার কয়েক দিন ধরে ঘুম নেই। এত আত্মীয় স্বজন আমাদের যে, ফ্লোরেও জায়গা হচ্ছে না। আমার বিছানা ওদের দখলে। এক কাজিনের বাচ্চাওয়ালা বউ তার বাচ্চা নিয়ে আমার খাট দখল করে আছে। আমি কিছু বলতেও পারছি না। শোবার জায়গা না পেয়ে আমিও কয়েকজনের সাথে ফ্লোরেই ঘুমাচ্ছি। বিয়ের এত আগে কেউ বিয়ে খেতে আসে তা আমার জানা ছিল না। ওদের হৈ চৈ দেখে মনে হচ্ছে বিয়েটা যেনো তাদেরই। আর আমি যেনো ওদের বিয়ের দাওয়াত দাওয়াত খেতে এসেছি এ বাড়িতে। এই সব যন্ত্রণার কথা কাকে বলি আমি মাবুদ!
আমার ফুপাতো বোন রেখা, আমার সমবয়সী। এক বছর আগে তার বিয়ে হয়েছে। তার পাশেই রাতে শুয়েছি। শুয়ে শুয়ে পালিয়ে যাবার প্ল্যান করছি। সে আমাকে ঠ্যালা দিয়ে বললো-
__”কি রে বর্ণ, বরের কথা কি ভাবছিস? আমাকে বল আমি কাউকে বলবো না। শুনলাম তোর বর নাকি সেই রকম হ্যান্ডসাম?”
আমার দুঃখে আমি মরি আর এই পাজি বদ মেয়ের আমোদ লেগেছে। রাগ চেপে রেখে বললাম-
__”হ্যাঁ তার হ্যান্ডসামের ঠ্যালায় আমার চোখে ঘুম নাই, কি করি বল তো?”
__”সব মেয়েরই এমন হয় বুঝলি?”
__”সব মেয়েরই এমন হয় মানে? কেমন হয়?”
সে লাজুক মুখ করে বললো-
__” আমার বিয়ের তারিখ ঠিক হবার পর থেকে আমারো চোখের ঘুম উড়ে গেছিল তোর মতো। আর সব মেয়েরই এমন ঘুম উড়ে যায়।”
__”তোর চোখে ঘুম উড়ে গেছিল কেনো?”
__”কত কি মনে মনে ভাবতে ভাবতে ঘুমানোর টাইম পেতাম না। মানে ঘুম আসতো না।”
__”কি কি ভেবেছিস?”
সে লজ্জায় নুয়ে পড়ে বললো-
__”বরের ভালোবাসা টাসা এসব।”
__”তা যে সব জাগরণ স্বপন দেখে ছিলি তার সব পূরণ হয়েছে?”
সে হতাশ চোখে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো-
__”না রে, কি ভেবে ছিলাম আর কি সব হলো!”
__”তুই বরং আরেকটা বিয়ে কর। যেসব পূরণ হয়নি সেসব পূরণ কর।”
__”কি যে বলিস না!”
__”চাইলে ঐ খোকাবাবুকে তুই বিয়ে করতে পারিস।”
__”খোকাবাবু কে?”
__”যার সাথে আমার বিয়ে হতে চলেছে।”
__”ফাজলামি করিস না তো। ঘুমা এখন।”
বিয়ের দিন ভোরবেলা আমি পালানোর জন্য প্রস্তুতি নিলাম। সবাই ঘুমিয়ে আছে, আমি পা টিপে টিপে বাইরের দরজায় দাড়াতেই হঠাৎ যুথী পেছন থেকে ডেকে বললো-
__”বন্ন আফা পলাইতাছেন নাকি?”
আমি চমকে উঠে থেমে গেলাম। পেছনে তাকিয়ে দেখি যুথী দাঁত কেলিয়ে দাড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওর গলা টিপে ধরি আর দাঁত গুলো ভেঙে ফেলি। বললাম-
__”মানে?”
সে রোমান্টিক মুখভঙ্গি করে বললো-
__”ফিলিমে দেখছি জোর কইরা বিয়া দিলে শাবনুর পিছের দুয়ার দিয়া পলাইয়া যায়গা।”
__”আমি পালাবো কেনো?”
__”হেইডাই তো কথা। শাবনুরের বিয়া হারামীর লগে ঠিক হয় বইলা সে পলাইয়া যায়। কিন্তু আপ্নের বিয়া তো রিয়াজের লগেই হইতাছে তাইলে পলাইবেন ক্যা?”
__”রিয়াজের লগে মানে? আই মীন রিয়াজের সাথে মানে কি?”
__”ও সুরি,শাবনুরের নায়কের নাম তো রিয়াজ। আপনের নায়কের নাম হইলো সীমান্ত।”
__”একদম আমার নায়ক বলবি না ঐ বুইড়া বাবুকে। আর সুরি কি?”
__”সুরি মানে হইলো দুঃখ। ঐ যে ঠ্যালা গুতা খাইলে যে ইনলিশডা কয়।”
__”ঐটা সুরি না স্যরি। আর ইনলিশ না, ইংলিশ।”
__”ঐ হইলো, অহন কথা হইলো আপ্নে এই দরজা দিয়া কই যাইতাছেন বন্ন আফা?”
আমি রেগে উঠে ধমকের স্বরে বললাম-
__”তোকে বলতে হবে কোথায় যাচ্ছি?”
__”হ কইতে হইবো। খালাম্মা আমারে পাউর দিছে।”
__”কি দিয়েছে?”
__”পাউর দিছে, মানে ক্ষ্যামতা দিছে।”
__”ওটা পাউর না পাওয়ার হবে। খ্যাঁতা পুড়াই তোর ক্ষমতার। আজ তোকে খুন করে জেলে যাবো থাম।”
আমি কথা শেষ না করতেই হঠাৎ যুথী চিৎকার করতে শুরু করলো।
__”কে কই আছেন জলদি আসেন দেখেন বন্ন আফায় পাগল হই গেছে।”
আমি যুথীর কীর্তি দেখে হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। আর অবাক হলাম আম্মুর ট্রেনিং দেখে। কি কি দিয়ে যে যুথীকে সে পটিয়েছে তা আল্লাহই জানে। এমন ট্রেনিং দিয়েছে যে আমাকে পাগলি প্রমাণ করে তারা তাদের কাজ হাছিল করছে। কি কপাল আমার যে, আমার দলে কেউ নাই। পালাতে তো পারলামই না, উল্টা ধরা খেয়ে চোর সেজে দাড়িয়ে আছি। এখন আমার সম্মানীয় আম্মাজী যে কি করবে তা আল্লাহই জানে! প্লিজ আল্লাহ তুমি অন্তত আমার দলে থাকো! যুথী চিৎকার করেই চলেছে। আম্মু হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এলো।
বিঃদ্রঃ গল্পের কাহিনী এবং চরিত্র সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবতার সাথে গল্প কখনোই মিলবে না। জীবন কখনও গল্পের মতো সাজানো গোছানো হয় না। গল্পটা শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য লেখা হয়েছে তাই বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
পরের পর্ব আগামীকাল…..
Written by- Sazia Afrin Sapna
পর্ব-৬
https://m.facebook.com/groups/884724498624937?view=permalink&id=914008299029890