বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-১৬+১৭

0
740

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ১৬+১৭

“এক নব্য দিনের সূচনা হলো এক অপূর্ব সকাল দিয়ে। রাত্রি ঘুম থেকে উঠে লিভিং রুমে গিয়ে দেখলো আবির বসে আছে সাথে আভা রাত রায়াফ ও বসে আছে। সবাই হাসা হাসি করছে। তাদের হাসির শব্দ শুনেই রাত্রি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ না হয়েই বেরিয়ে চলে গেলো লিভিং এ। রাত্রিকে ওইভাবে আসতে দেখে সবাই ওর দিকে তাকালো। বেচারি রাত্রি যখন বুঝতে পারলো ও এলোমেলো হয়ে আছে এক ছোটে রুমে চলে গেলো। আর সবাই ফিক করে হেসে দিলো। ”

“কি লজ্জা কি লজ্জা এইভাবে বেরিয়ে গেলাম ইশ খেয়াল ছিলোনা একদম। তারপর রাত্রি একদম শাওয়ার নিয়ে বের হলো পরিপাটি হয়ে৷ বেলা ১১ টা বাজে। আর রাত্রি এখন সকালের নাস্তা করবে আর কি। নাস্তা করে লজ্জায় আর ওদের সামনে যায়নি আবার নিজের রুমে চলে এসেছে৷ ”

“ভাইয়া যাও যাও তোমার রাণী তো লজ্জা পেয়ে চলে গেলো যাও গিয়ে দেখে এসো। মজা নিতে বলল আভা। ”

“আবির মুচকি হেসে রাত এর দিকে তাকালো। রাত ইশারায় মাথা ঝাকিয়ে আবিরকে উৎসাহ দিলো।”

“রায়াফ বলল, এই এই ব্যাপার টা কি তোমরা কি শুধু তোমাদের নিয়েই পড়ে থাকবে নাকি। আমার জন্য একটা বউ খুঁজে দাও আমিও তোমাদের মতো আমার বউ এর সাথে গল্প করবো। ”

“তবে রে দাড়া খুজে দিচ্ছি তোর বউ কে। দাঁত আজকে একটাও যায়গায় রাখবোনা। রাত হাসতে হাসতে বলল।”

“এহ তুমি মারলেই হবে নাকি। তোমরা তো ঠিকি লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করো আর আমি কিছু বললেই দোষ তাই না! ওইযে তোমার বিয়ের আগেও তো তোমার রুমে আ। আর কিছু বলতে পারলোনা রায়াফ আভা মুখ চেপে ধরে বলল, রায়াফ তুমি না গুড বয় এসো আমার সাথে রুমে একটা জিনিস দিবো চলো। তারপর আভা রায়াফ কে নিয়ে তাদের রুমে গেলো।”

“এইদিকে রাত তো বেচারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। কি’রে আবির কি ভাবছিস যা রাত্রি কি করে দেখে আয়। ”

“আবির তখনই উঠে রাত্রির রুমে গেলো। আসবো।”

“হ্যাঁ কে? আসুন।”

“আবির রুমে ঢুকে দেখলো রাত্রি একটা উপন্যাস এর বই পড়ছে। আবির দাঁড়িয়ে রইলো।”

“কেমন আছেন? ”

“আলহামদুলিল্লাহ তুমি কেমন আছো কুইন।”

“আলহামদুলিল্লাহ। দাঁড়িয়ে আছেন কেনো বসুন। ”

“ঠিক আছি আমি। তুমি টেবিল থেকে উঠে এসো।”

“কে কেনো।”

“আবার কেনো কেনো করছো। দিবো এক চ’র।”

“কি আপনি আমায় মারবেন। ”

“না মারবোনা আদর করবো হয়েছে এবার এসো। ”

“তারপর রাত্রি উঠে আবিরের কাছে গিয়ে দাড়ালো। ”

“আচমকাই আবির রাত্রির কোমর পেচিয়ে ধরলো। রাত্রি হকচকিয়ে গেলো আর বলল, কি কি করছেন দরজা খুলা তো কেও চলে আসবে। রায়াফ এর তো ঠিক ঠিকানা নেই কখন চলে আসে।”

“ওহ আচ্ছা তাই না তাহলে দরজা টা আটকে দেই। ”

“দুষ্টু হয়ে গেছেন দেখছি। আপনি তো এমন ছিলেন না। হটাৎ কি হলো।”

“এমন ছিলাম না এমন হয়েছি তাতে তোমার কোনো সমস্যা আছে। ব্রু কুচকে ঝুকে বলল আবির।”

“না আমার আবার সমস্যা হবে কেনো। এমনি বলছিলাম আর কি।”

“তাহলে এতো ভয় পেয়ে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছো কেনো। আমি যদি এখন ছেড়ে দেই তাহলেই তো চিত পটাৎ হয়ে যাবে।”

“তারপর রাত্রি একটু সোজা হয়ে আবিরের ব্লেজার এর কলার চেপে ধরলো আর আবিরের চোখে চোখ রেখে বলল , আজকে অফিস নেই। ”

“না আজকে অফিস নেই আজ অফ ডে। ”

“ওহ আচ্ছা। ”

“হুম আভা ফোন করে বলল, ভাইয়া আসো আজকে বাসায় তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে। তাই চলে এসেছি। কিন্তু তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে তোমায় দেখিনি। এতো ঘুমাও কিভাবে হুম।”

“রাত্রি চোখ বন্ধ করে কবি সাহিত্যিক দের মতো বলতে লাগলো, আই লাভ ঘুম। আমি ঘুমের প্রেমিকা ঘুম আমার প্রেমিক। ওকে ছাড়া আমি বাচবোনা। ঘুমালে আমার মনে হয় আমি সুখের রাজ্যে আছি। এই সুখের রাজ্য ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করেনা। ”

“আবির মুচকি হেসে ওর দিকে তাকিয়েই রইলো৷ তারপর রাত্রি কে বলল, তাই না! ঘুম এতো আপন তোমার কাছে। দাঁড়াও একবার নিয়ে যাই আমার কাছে তখন তোমার ঘুম কোথায় যায় তুমিও নিজেও টের পাবেনা। ঘুম তোমার প্রেমিক তাই না! তোমার প্রেমিক এর যদি ১২ টা না বাজিয়েছি আমিও আবির খান নয়। ”

“আচ্ছা আচ্ছা তাই বুঝি। রাত্রি ঘন ঘন চোখের পলক ফেলতে ফেলতে ঠোঁট ভেঙিয়ে বলতে লাগলো।”

“হুম তাই। এতো ঘুমালে তুমি মেডিকেল বলো আর ভার্সিটি বলো কোনোটাতেই চান্স পাবেনা। তখন তোমার যে কি হাল করবো তুমি ভাবতেও পারছোনা।”

“কি আর করবেন কিছু না। তার চেয়ে বরং বিয়ের পর আর পড়ালেখা করবোনা আপনার বেবিদের সামলাবো হয়ে যাবে একদম ভার্সিটি পাশ।”

“আবির ঠোঁট চওড়া করে বলল, ভেবে বলছো তো কি বলছো।”

“এইরে সেরেছে। কি বলে ফেললাম। এখন তো ওনি আমায় আরও লজ্জা দিবেন জানা হয়ে গেছে আমার। তার চেয়ে বরং পালাই এখান থেকে। দৌড় দেয়ার চেষ্টা করলেও বৃথা হলো আবিরের বাধন থেকে ছুটতে পারলোনা।”

“পালাচ্ছো কোথায়। কথা টা বলার আগে মনে ছিলোনা কি বলছো।”

“না মানে আ আসলে মুখ ফসকে বেড়িয়ে গেছে সরি সরি।”

“আবির বেডে বসে রাত্রি কে ওর কুলে বসালো আর দুই হাত দিয়ে ওকে চেপে পেচিয়ে ধরে রাখলো। আর বলল, খুব শখ তাই না বেবি পালনের। অবশ্যই হবে কেনো হবেনা। আমিতো আমার কুইন এর কোনো শখ অপূর্ণ রাখবোনা৷ শুধু সময়ের অপেক্ষা। বুঝলে পাগলি আমার।”

“হুম বুঝেছি।”

“তো এখন কি করবে। ”

“কিছু করবোনা পড়বো আর কি। ”

“হুম গুড গার্ল মন দিয়ে পড়ো। যদি মেডিকেলে চান্স পেয়ে যাও তাহলে তো অনেক ভালো। যদি না পাও তাহলে ভার্সিটি তে এক্সাম দিতে হবে চান্স এর জন্য। যদি সেখানেও চান্স না পেয়েছো তো তোমাকে একটা না পর পর একটা ফুটবল টিম এর মাম্মা বানিয়ে দিবো।”

“এ্যাঁ! ”

“হ্যাঁ। তুমি তো শুধু ঘুমাও তোমার দ্বারা বেবি পালনই ঠিক হবে। ওদের যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারবেনা তখন মনে মনে বলবে যে ইশ আমার পড়াশুনায় ভালো ছিলো।”

“এইভাবে বলতে পারলেন আপনি। মন খারাপ করে বলল রাত্রি।”

“তোমার ভালোর জন্যই বলছি পাগলি। তারপর আবির রাত্রির ঘাড়ে এক হাত রেখে আর এক হাত কোমরে রেখে রাত্রিকে আর একটু কাছে নিয়ে এলো। রাত্রি কিছুটা ঝুকে আসলো। আবির ওর কপালে ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে বলল, ভালোবাসি পাগলি একটু মন দিয়ে পড়ো। ”

“রাত্রি চোখ বন্ধ রেখেই বলল, আমিও ভালোবাসি আপনাকে। বলেই রাত্রি আবিরকে জড়িয়ে ধরলো ওর কুলে বসে থাকা অবস্থায়।”

“আচ্ছা পাগলি পড়তে বসো আমি চলে যাবো এখন।”

“এখনই চলে যাবেন!”

“হুম এতক্ষন থাকা টা কেমন দেখায় ভাবো তো আমি তো তোমায় এখনো বিয়ে করিনি।”

“তাতে কি হয়েছে বিয়েতো হবেই।”

“না পিচ্চি সেটা তো হবেই। কিন্তু বেশিক্ষন তোমার কাছে থাকাটা এখন শ্রেয় হবেনা। সমস্যা হতে পারে অনেক।”

“কি সমস্যা। ”

“আবির জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, তুমি একটা এডাল্ট মেয়ে রাত্রি অবশ্যই এটুকু জানার কথা। আমি তোমার কাছে এতোক্ষন ক্লোজলি বসে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবোনা তখন খুব খারাপ পরিস্থিতি হয়ে যাবে এটা ভালো দেখাবে ভাবো তো।”

“রাত্রি মাথা টা নিচু করে বলল, হুম ঠিকি তো বলেছেন। কিন্তু আবার কবে আসবেন বাসায়। আর কবে আমায় আপনার কাছে নিয়ে যাবেন একবারের জন্য।”

“খুব শিঘ্রই নিয়ে যাবো আমার কাছে। একটু ধৈর্য ধরো। সবে মাত্র আভা আর রাতের বিয়ে হলো ৪-৫ মাস যেতে যাও তখন না হয় সবার সাথে কথা বলব। আমিতো চেয়েছিলাম তোমার এইচ এস সি এর পরে বিয়েটা হবে। কিন্তু তুমি তো আমার কুইন তো দেখছি খুব দিওয়ানা আমার জন্য তাই আগেই নিয়ে যাবো কেমন।”

“আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বলুন কবে আবার দেখা হবে।”

“প্রায় সময়ই তো দেখা হয়। আচ্ছা অফিসের ফাকে সময় পেলে না হয় কোথাও যাবো তোমায় নিবে হ্যাপি।”

“হুম হ্যাপি।”

“আচ্ছা পড়তে বসো তাহলে আমি উঠি।”

“চলুন আপনাকে দিয়ে আসি। ”

“আচ্ছা চলো তাহলে। ”

“তারপর দুজনেই একসাথে বের হলো। আবির রাত্রির আম্মু আব্বুর থেকে বিদায় নিলো। অবশেষে আভা আর রাত কে বলে বেড়িয়ে গেলো। আবিরের যাওয়ার সময় আভা রাত্রি রায়াফ তিনজনেরই মন খারাপ হলো। অবশ্যই তিন জনের মন খারাপের কারন ভিন্ন ভিন্ন। ”

“দেখতে দেখতে ১৫ দিন চলে গেলো এর মাঝে রাত্রির সাথে আবিরের একদিন দেখা হয়েছিলো।রাত্রি ভীষণ অভিমান করে আছে আবিরের উপর। আভাও তার বাসায় গেছে বেড়াতে। ওর ইচ্ছে মতোই ওর পড়ালেখা বন্ধ করেছে রাত। ”

“আজ ফয়সালের এক্সাম শুরু হয়েছে এইচ এস সি। এক্সাম শেষে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো ক্যাম্পাস এ। এমন সময় একটা মেয়ে দৌড়ে এসে ফয়সাল কে বলল ভাইয়া কেমন আছেন। আর আপনার পরিক্ষা কেমন হয়েছে। ”

“আলহামদুলিল্লাহ দুইটাই ভালো। বলেই উপরে তাকালো ফয়সাল চমকে উঠে বলল, তুমি এখানে!”

“হুম আমাদের স্কুল এন্ড কলেজ অবশ্যই আমি থাকবো তা নইতো কি আপনি থাকবেন।”

“ওহ আচ্ছা। চলো ওইদিকে যাই। বলেই ফয়সাল মেয়েটার সাথে হাঁটতে হাঁটতে পুকুর পাড় টার দিকে গেলো।”

“হ্যাঁ মেয়েটা আর কেও নয় ইভা। ফয়সালের এক্সাম যে সেন্টারে পড়েছে ওই সেন্টার এর স্টূডেন্ট ইভা। ”

“দুজনে পুকুর পাড়ের সিড়িতে গিয়ে বসে কথা বলতে লাগলো। ”

“আচ্ছা ভাইয়া আপনার বাসার সবাই কেমন আছে।”

“আলহামদুলিল্লাহ তোমার।”

“হুম আলহামদুলিল্লাহ। তো ভাইয়া বললেন না তো আপনার জি এফ আছে।”

“উহুম নেই। কাওকে ভালোবেসেছিলাম কিন্তু সে অন্য কাওকে ভালোবাসে। তাই তাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ”

“কে সে জানতে পারি।”

“উহুম। আমি বলতে চাইছিনা সরি।”

“ওহ আচ্ছা।”

“আচ্ছা ইভা তুমি যে এখানে আমার সাথে বসে আছো কেও দেখলে মাইন্ড করবেনা। আর তোমার ভয় করছে না।”

“উহুম ভয় করবে কেনো। আর কেও কিছু বলবেনা কারন সবাই জানে আমি কেমন তাই আমাকে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসেনা। যদিও কেও কিছু বলে তাহলে বলবো আপনি আমার বয়ফ্রেন্ড তাতে কার কি সমস্যা। ”

“ফয়সালের কাশি উঠে গেলো। বলে কি মেয়ে। ”

“আরে আরে আপনার কি হলো পানি খাবেন।”

“না না ঠিক আছি। কিন্তু তুমি এসব কি বলো। আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হতে যাবো কেনো। ”

“কথার কথা বললাম আর কি। ”

“হুম বুঝেছি।”

“আচ্ছা ভাইয়া উঠুন আমার ছুটি হয়েছে সেই কখন বাসায় যেতে হবে হবে আম্মু চিন্তা করছে মনে হয়। শুধু আপনার জন্য বসে ছিলাম। কখন বের হবেন হল থেকে আর কখন কথা বলবো আপনার সাথে সেই জন্যই অপেক্ষা করে ছিলাম।”

“তুমি জানলে কি করে এই খানে আমি পরিক্ষা দিতে এসেছি।”

“গেইট দিয়ে যখন ঢুকছিলেন তখন আমি উপর থেকে দেখেছি। ”

“ওহ আচ্ছা চলো তাহলে।”

“তারপর দুজন উঠে হাঁটা দিলো। মাঝ পথে ঝালমুড়ি খাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে গেলো ইভা। তারপর ঝালমুড়ি কিনে নিলো। ফয়সাল কে জিজ্ঞাসা করলে সে বললো এসব পছন্দ করেনা। ছেলেরা বরাবরই এসব পছন্দ করেনা মনে হয়।”

“ঝালমুড়ির বিল ইভা কে দিতে দেয়নি ফয়সাল নিজেই দিয়েছে। ইভা যখন ঝালে হু হা করছিলো তখন ফয়সাল মিনারেল ওয়াটার বোতল কিনে দিলো। আর বলল, একদম এসব বাজে খাবার খাবেনা পেটে অসুখ করবে তাড়াতাড়ি বাসায় যাও আমি এখান থেকে উলটো দিকে যাবো। তুমি কোন দিকে যাবে।”

“ভাইয়া আমি এই রাস্তায় যাবো। আচ্ছা আপনি চলে যান আমি রিক্সা করে এই দিকে যাচ্ছি। মানে দুইজনই বীপরিত দিকে। একটা রিক্সা ডেকে ফয়সাল ভাড়া মিটিয়ে ইভাকে বসিয়ে দিলো। ইভা বলল, আবার দেখা হবে ভাইয়া আল্লাহ হাফেজ। বলেই রিক্সাওয়ালা মামা কে যেতে বলল।”

“খুব মিশুক মেয়েটা। ফ্রেশ মাইন্ড গার্ল। তারপর ফয়সাল মুচকি হাসলো আর সেও রিক্সা করে চলে গেলো। ফয়সাল দের গাড়ি থাকা সত্যেও সে গাড়ি করে আসেনা। এটা তার ভালো লাগেনা। রাত্রির সাথে ঝামেলা হওয়ার পর ফয়সাল আজ প্রথম হাসলো তাও ইভার জন্য। রাত্রির জন্য ছেলেটা ভেঙে পড়েছিলো একদম এই ১৫-২০ দিন যেনো অন্ধকার জগৎ ছিলো ফয়সালের জন্য। পরিক্ষার প্রিপারেশন খুব একটা ভালো হয়নি।”

“দুইদিন পর আবার এক্সাম শুরু হলো ফয়সাল এর বন্ধুরা ওকে নিয়ে হাসা হাসি করতে করতে বলল, কি মামা নতুন জি এফ বুঝি। ”

“শাট আপ ননসেন্স পোলাপান। ও আমার ছোট বোন হয়। কোনো জি এফ নয় ঠিক আছে।”

“তুই বলবি আর আমরা বিশ্বাস করে নিবো।”

“সেটা তোদের ব্যাপার। আমার বলার আমি বলেছি। চল এখন টাইম নেই। ”

“এক্সাম শেষে আজও ইভা ফয়সাল একসাথে করে কথা বলতে বলতে বাসায় গেলো। মানে দুই পথের কাছে গিয়ে দুইজন আলাদা হলো আর কি সেদিনকার মতোই।”

“রাত্রির খুব মন খারাপ কিছুতেই আজ তার মন বসছেনা পড়ায়। আবিরের নাম্বার ও নেই যে কথা বলবে। চাইলেও দেয়নি আবির। বলেছে তাহলে নাকি সারাদিন কথা বলবে পড়ায় মন দিবেনা। একবার আমার সামনে আসেন জিরাফ বেটা। কথায় বলবোনা আপনার সাথে। ভালোই বাসেন না আপনি আমায়। নিজ নিজে কথা গুলো বলছে আর মন খারাপ করে খাতায় আকিঁবুকি করছে।”

“কি করছো আমার ডেয়ার আপু। রায়াফ উঁকি মেরে বলল।”

“কিছুনা, উঁকি দিচ্ছিস কেনো আয় ভেতরে।”

“মন খারাপ তোমার। ”

“কই না তো।”

“বললেই হলো আমার আপুর মন খারাপ থাকলে আমি বুঝি। তুমি যতই না না করোনা কেনো হুহ।”

“হুম ভালো তো। কি জন্য এসেছিস পড়তে বসিস নি কেনো।”

“এতো পড়া পড়া ভালো লাগেনা। আমি আড্ডা দিতে আসছি তোমার সাথে। একটু খেলো আমার সাথে। আমার ভালো লাগছেনা। ভাবিও বাসায় নেই যে খেলবে।”

“রাত বাজে ৮ টা এখনো পড়তে না বসে খেলতে এসেছিস ভাইয়া এসে দেখলে আমাদেরকে বুড়িগঙ্গা নদীতে ডুবিয়ে মা’রবে।”

“ভাইয়া কলিং বেল দিলে চলে যাবো সত্যি। এসো এসো ১২ সার্কেল বক্স টা নিয়ে আসি ওইটা খেলবো।”

“আচ্ছা যা নিয়ে আয়।”

“দৌড়ে গিয়ে আবার ফিরে আসলো বক্স টা নিয়ে। দুই ভাই বোন চিপস খাচ্ছে আর খেলছে। রায়াফ
এর ওয়ান পয়েন্ট হলো। আর বলল, আপু মন দিয়ে খেলছোনা কেনো। কী ভাবছো! নিশ্চয় হবু জিজুর কথা ভাবছো তাই না। আমি গিয়ে ফোন করে বলি আবির ভাইয়া কে আসতে।”

“এই না না একদম না। আমি মোটেও ওনার কথা ভাবছিনা। ভালো লাগছে না তাই খেলায় মন বসছেনা।”

“ওহ আচ্ছা, ঠিক আছে শুয়ে থাকো তুমি আমি তোমার মাথায় ম্যাসায়েজ করে দেই।”

“না লাগবেনা তুই দরজা টা আটকে চলে যা। আম্মু খেতে ডাকলে বলবি ঘুমিয়ে পড়েছে। খাবোনা আমি আমি খিদে নেই।”

“আচ্ছা। বলেই রায়াফ দরজা আটকে চলে গেলো।”

“১১ টার সময় রাত্রিকে খেতে ডাকলে রায়াফ বলল, খাবেনা আপু ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাকে বলে দিয়েছিলো না ডাকতে আর তোমাদের বলতে তাই বলেছি। ”

“রাত উদ্বিগ্ন হয়ে বললো, কি হয়েছে ওর যে খাবেনা।”

“রাত্রির আম্মু বলল, মেয়েটার আবার শরীর খারাপ করেনি তো। তার বাবাও চিন্তিত হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো। ”

“খাবার রেখেই সবাই রাত্রির রুমের দিকে গেলো, রাত হালকা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো। ভিতরে ঢুকে দেখলো লাইট জ্বালানো। রাত্রি বেঘোরে পড়ে আছে বেডে। দেখে মনে হচ্ছেনা ও স্বাভাবিক আছে। চোখ মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে আছে। রাত্রির আম্মু মেয়ের পাশে বসে গায়ে হাত দিতেই বুঝলেন মেয়ের প্রচুর জ্বর গায়ে। ওনি কান্না করে বললেন, মেয়েটা পড়তে পড়তে এমন হয়ে গেছে তুই বেশি প্রেশার দিয়ে যাচ্ছিস মেয়েটাকে। এতো প্রেশার দেয় কেও পড়ার জন্য। রাত কে উদ্দেশ্য করে বলল।”

“আহ, থামো তো তুমি। দেখছো তো মেয়েটার এই অবস্থা এতো কথা না বলে ওকে ডেকে উঠাও কিছু খাইয়ে ঔষধ খাওয়াও। রাত এর আব্বু বলল।”

“আম্মু ডাক্তার ডাকবো। রাত বলল।”

“দেখি আগে শরীরে অবস্থা কি।”

“রাত্রি কে ডেকে তুললো তার আম্মু। রাত্রি জ্বরে কাতর তাই কথা বলতে পারছেনা। বিছানায় বসতেও পারছেনা উঠে।”

“রাত ডাক্তার কে কল করলো। কিছুক্ষন পর ডাক্তার এসে সেলাইন দিয়ে বলল, বেশি চাপ সৃষ্টি হচ্ছে ওর ব্রেইন এ। আর অতিরিক্ত চিন্তা করার জন্য প্রেশার বেড়ে গেছে। এই জন্য জ্বর আসছে। আপাতত সেলাইন না দিলে সেন্সলেস হয়ে যেতো তাই সেলাইন দিলাম। আর কিছু ঔষধ দিচ্ছি আনিয়ে নিবেন। বলেই ডাক্তার চলে গেলো। রাত এগিয়ে দিয়ে আসলো।”

“রায়াফ এর মন টা খুব খারাপ রাত্রির পাশে বসে আছে হেলান দিয়ে বিছানায়। রাত্রির আম্মু ও বসে আছে। রাত আর তার আব্বু দুজনে রুমে গেছে। কারোর চোখেই ঘুম নেই রাত বাজে ১ টা। আভা ফোন করেছে রাত কে কিন্তু ওরা টেনশন করবে বলে রাত কিছু জানায়নি। সকালেই জানাবে ভাবলো আর কল কেটে দিলো।”

“ভোরের দিকে রাত্রির চোখ খুললো আর বলল, আম্মু পানি দাও বড্ড পিপাসা লেগেছে।”

“রায়াফ স্বজাগ দিলো ওর আম্মু ঘুমিয়ে পড়েছে ভোরের দিকে। বোনের শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি করে ডাইনিং রুম থেকে ঠান্ডা পানি মিশিয়ে গ্লাস নিয়ে আসলো আর রাত্রি কে বসিয়ে পানি খাইয়ে দিলো।আর বলল, আপু তুমি ঠিক আছো তো। তোমার কিছু হয়নি তো।”

“না ভাই আমার কিছু হয়নি কিন্তু তুই এখানে কি করছিস আর আম্মু ও এখানে। আর হাতে সেলাইন লাগানো কেনো। ”

“রায়াফ সব কিছু বলল। তারপর রাত্রি রায়াফ দুজনই দুজনকে জড়িয়ে ধরলো রায়াফ কান্না করে দিলো।”

“পাগল ভাই আমার আমি ঠিক আছি তো কিচ্ছু হয়নি আমার। ”

“রাত্রির আম্মু চোখ খুলে উঠে বসলো মেয়ের সাথে কিছুক্ষন কথা বলে রুমা কে নাস্তা বানাতে বলতে চলে গেলো।”

“রাত ৮ টার দিকে উঠলো। উঠে ফ্রেশ হয়ে আগে বোনকে দেখে গেলো। তারপর নাস্তা করে নিলো। রাত্রিকেও নাস্তা করিয়ে দিলো তার আম্মু। সাথে রায়াফ কে ও।”

“রাত রুমে এসে ৯ টার সময় আভা কে কল দিলো কিন্তু ফোন বন্ধ। এতো সকালে ও বাসায় উঠেনা। তারপর আবার ১০ঃ৩০ এ কল দিলো রাত্রির কথা বললে আভা টেনশনে পড়ে গেলো। দৌড়ে বের হলো রুম থেকে তার আম্মু আব্বুকে জানালো। তারপর আবিরকে জাগিয়ে তুললো আর রাত্রির কথা বলল।
আবির ভয় পেয়ে গেলো রাত্রির জ্বরের কথা শুনে। মেয়েটার সাথে অনেকদিন হয়ে গেলো আবিরের দেখা হয়না কথা হয়না। তারপর আভা আবির দুই ভাই বোন কেওই নাস্তা করেনি রেডি হয়ে গেলো রাত্রি কে দেখতে যাবে। আবিরের মা বাবা ও রেডি হলো। তারপর গাড়ি করে রওনা দিলো রাত্রিদের বাসার উদ্দেশ্যে। ”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে