বক্ষ পিঞ্জর পর্ব-০২+০৩

0
953

#বক্ষ পিঞ্জর
#Anaisha_Ehmat
#পর্বঃ২+৩

“আম্মু বেড়িয়ে গেলে আমি ক্যান্ডেল টা স্টাডি টেবিল এ একটা ছোট্ট হোড এর উপর রেখে দিলাম। বেলকনির দরজা দিয়ে বাইরের হালকা বাতাশ আসছে। তাই আমি দরজা টা লাগিয়ে দিতে গেলাম। ওখানে দরজার কাছে যেতেই দেখতে পেলাম রাস্তার পাশে ফুটপাতে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু অন্ধকার এ ঠিক চিনতে পারলাম না। ল্যাম্পপোস্ট এর আলো না থাকায় খুব বেশি দেখা গেলোনা তাই চেনা দায় হয়ে গেলো। তাই বেশি মাথা না ঘামিয়ে দরজা টা লাগিয়ে রুমে চলে এলাম। রুমে এসে খাটে বসে হেলান দিতে যাবো ওমনি কারেন্ট চলে এলো। তাই দেরি না করে চট জলদি ক্যান্ডেল টা এক ফূঁ দিয়ে নিভিয়ে গিয়ে পড়তে বসলাম। বাংলা বইটা খুলে যা দেখলাম তা দেখে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। এটা দেখে আমার আর বুঝতে বাকী রইলো না এটা কার কাজ। তাই রেগে বইটা হাতে নিয়ে দরজা খুলে চলে গেলাম রায়াফ এর রুমে। গিয়ে ওকে বললাম, কিরে তুই আমার বই এ এসব আঁকি বুকি করেছিস কেনো? আর এসব বে’য়াদব মার্কা লেখা লিখি কেনো করেছিস? ও হ্যা’বলার মতো তাকিয়ে আছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে দুনিয়ার ভালো মানুষ। কিছু বুঝেনা, মাত্র কালকে পৃথিবীতে উদীত হয়েছেন ওনি। ওর কোনো ভাবাবেগ না দেখে আমি ওর মাথা ২-৩ টা গা’ট্টা মারলাম। তাও কোনো শব্দ করলোনা। উলটে মাথা নিচু করে পড়ায় মন দিলো। চে’চামেচি শুনে আম্মু ভাইয়া দুজনেই এলো। ভাইয়া বলল, কিরে কি হয়েছে। এতো চি’ল্লানি কিসের জন্য? ভাইয়া কিছুটা রেগেই বললেন।”

“ভাইয়া দেখো রায়াফ আমার বই এ এসব কি করেছে। বলেই বইটা ভাইয়ার হাতে দিয়ে দিলাম। ভাইয়া নিয়ে আঁকিবুঁকি গুলো দেখতে দেখতে লেখা গুলো পড়তে লাগলো। ”

“১-২-৩-৪ রাত্রি আপু মূলার আচার।
৫-৬-৭-৮ রাত্রি আপু গাছের কাঠ।
৯-১০-১১-১২ রাত্রি আপুরে সবাই মারো।
১৩-১৪-১৫-১৬ রাত্রি আপু চুরি করলো।
ভাইয়া এইটা পড়ছে আর আম্মু রায়াফ মিট মিটিয়ে হাসছে।”

“আমাকে নিয়ে মজা করা হচ্ছে তাই না দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা তোকে বলেই রায়াফ কে আরেকটা থা’প্পর দিলাম পিঠ এ। ও হাসি বন্ধ করে পড়ায় মন দিলো। ”

“রাত্রি! থামবি নাকি আমি তোকে এখন মাইর দিবো। আমাকে বলতে দে। রায়াফ তুই এসব কেনো লিখেছিস?ভাইয়া রায়াফ এর দিকে রাগী লুক দিয়ে বলল।”

“এটা আমি অনেক দিন আগে লিখেছিলাম। যেদিন আমার বলটা আপু ড্রেন এ ফেলে দিয়েছিলো না ওইদিন।”

“আর এসব কখনো লিখবি? ”

“না ভাইয়া আর লিখবোনা। বলেই রায়াফ আবার বই এর দিকে নজর দিলো। ”

“ভাইয়া আরও কিছু কথা বলে আমাকে বলল, রুমে যা গিয়ে পড়তে বস। আর হ্যাঁ যদি আবারও দুইটাকে ঝগড়া করতে দেখেছি তাহলে দুইটাকে হোস্টেল এ পাঠিয়ে দিবো। মনে থাকে যেনো কথা টা। বলেই ভাইয়া চলে গেলো। আম্মু আরও আগেই চলে গেলো। কারন ভাইয়া আমাদের কিছু বললে আম্মু সেখানে কিছু বলেনা। ”

” কিন্তু আজ আমি রায়াফ এর এমন নিশ্চুপ থাকার কারন টা কিছুতেই বুঝতে পারছিনা। তাই ওর পাশে চেয়ার টেনে বসে বললাম। ভাই একটা বলবো তোকে। ”

“কি বলো। ও আমার দিকে না তাকিয়েই বলল।”

“আজকে তুই এমন বিহেভ কেনো করছিস। অন্য দিন চি’ল্লা ফা’ল্লা করে মাথায় চড়িস আজ হটাৎ তুই এমন চুপ করে গেলি কেনো? ”

“তোমাকে এতো কিছু জানতে হবেনা যাও।”

“প্লীজ ভাই বলনা। তুই এমন চুপ থাকলে আমার যে ভালো লাগেনা। ”

“আচ্ছা তাহলে শুনো। তুমি আজকে যখন ক্যান্টিন এ ছিলা তখন কি কেও তোমাকে ডিস্টার্ব করেছিলো? ”

“কই না তো। ”

“মিথ্যে বলবানা একদম। নইলে ভাইয়ার কাছে বিচার দিবো কিন্তু।”

“আরে না মিথ্যে বলছিনা। ”

“তাহলে ওই ছেলেটা কে যে তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো ক্যাম্পাস এ? ”

❝ওহ এই বেপার। ভাই আমি না এই ছেলেটা কে কখনো দেখিনি চিনি না ভালো করে। তবে যতটুকু জানি সিনিয়র ভাই। এই ছেলেটা ক্যান্টিন এ তাকিয়ে ছিলো। আবার ক্যাম্পাশ এ ও তাকিয়ে ছিলো। আবার হাসছিলো। যখন ছুটি দিলো তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম তখনই ছেলেটা আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি উঠে দাঁড়িয়ে যেতেই দেখি তুই চলে এসেছিস। আর কিছু নই। ভাই তুই কিভাবে দেখলি ওই ছেলেটা কে। ”

“আমাকে আমার ফ্রেবড তামীম বলেছে। তারপর যখন হাসছিলো তখন তামীম ডেকে নিয়ে ছেলেটা কে দেখিয়েছে। ভেবেছিলাম ভাইয়া কে বলে দিবো। পরে ভাবলাম যে আহে তোমার থেকে জেনে নিবো। তারপর ভাইয়া কে বলবো। কিন্তু যা শুনলাম ছেলেটা কিছু বলেনি। যদি কিছু বলে তবে ওই ছেলেটা ছাড় পাবেনা। ভাইয়া কে বলার আগে আমি মে’রে ফেলবো।”

“ওহ এই কাহিনী তাই আপনি আমার সাথে এমন করছিলেন। ”

“হুম তাই।”

“আচ্ছা বাদ দে ওইসব পোলাপান কে পাত্তা দেই নাকি আমি। আমার দুই ভাই থাকতে আমার কি কোনো চিন্তা আছে! কোনো ভয় আছে! আমি একদম চিন্তা বিহীন। আচ্ছা তাহলে পড়। বলেই আমি রুমে চলে আসলাম।”

“এই সবাই খেতে আয়৷ ১১ টা বাজে, আর কতো পড়বি। পড়তে পড়তে তো মহা ভারত শুদ্ধ করে ফেলেছিস তোরা। আম্মু কথা গুলো বলছে আর ডাকছে। ”

“সবাই গিয়ে টেবিল এ বসে খাবার খাওয়া শুরু করলাম ওমনি ভাইয়ার ফোন এলো। ভাইয়া
ফোন টা রিসিভ করে কি সব বিজনেস এর কথা বলতে লাগলো। তাতে ভাবলাম অফিসের লোক। আচ্ছা আম্মু আব্বু কবে আসবে?খুব মিস করছি আব্বুকে।”

“দুপুর এ কল করেছিলো বলেছে আরও ১০-১২ দিন লাগবে। ”

“ওহ অনেক দেরি আছে। এতো দেরি যে আমার আর সহ্য হচ্ছেনা। ”

“আপু তুমি কেনো সহ্য করতে পারছোনা জানো? লম্বা সুরে বলল। কারন তোমাকে তো আব্বু কুড়িয়ে এনেছে। তাইতো শুধু আব্বু তোমাকে একটু খানি ভালোবাসে। আর ভাইয়া আম্মু আব্বু তিনজনেই আমাকে ভালোবাসে। তাইতো তুমি শুধু আব্বুর খুঁজ করো। বলেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো। ”

“আম্মু রেগে বললো, চুপ করবি নাকি মাইর দিতে হবে দুই টা কে।”

“না না মারতে হবেনা খাচ্ছি তো ভাত দেখতে পাচ্ছোনা। ভাত খাওয়ার সময় যদি কারও মা তার সন্তান কে মাইর দেই তাহলে ভাত তাকে দেখতে পারেনা তুমি যানো না আম্মু। আর আমরা কি চাই নাকি আমাদের আম্মু কে কেও বাকা নজরে দেখুক। একদম না তাই তুমিও ভাত খাও আমরাও খাই। মা’রা-মা’রির দরকার নেই একদম। বলেই রায়াফ ঠোঁট টিপে হাসতে লাগলো ভাত মুখে পুরে।”

“রায়াফ এর কথা শুনে আমি না পেরে বেশ জুড়েই হেসে দিলাম। ভাইয়া ফোন আলাপ করছিলো। এত জুড়ে হেসে ফেলায় ভাইয়া বেশ বিরক্ত হলো। তাই ভাইয়া রাগি চোখে তাকালো আমার দিকে। ভয়ে তাড়াতাড়ি খাবার শেষ করে রুমে চলে আসলাম।”

“ওইদিকে সবাই খাবার শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। আমি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মুখে বেবি স্নো লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটা ফোন ও নেই যে স্ক্রল করবো। আব্বু বলছিলো ফোন দিবে। কিন্তু ভাইয়া নিতে দিলো না। এমন ভিলেন মার্কা ভাই কই জনের আছে আল্লাহ মালুম। লাইট অফ করে কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরে বাম কাত হয়ে চোখ বন্ধ করলাম৷ আমার আবার কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসেনা। কেও নে’গেটিভ মাইন্ড এ নিয়েন না হি হি। ঘুমিয়ে গেলাম গুড নাইট।”

“যেহেতু বৃষ্টি বাদলের দিন তাই সকাল এ ঝুম ধরে বৃষ্টি পড়ছে। কিন্তু ঘুম এ এতোটাই গা’ধা যে টেরও পাইনি। তার উপর দেওয়াল থাকায় বৃষ্টির শব্দ রুমে আসেনা। এলার্ম এর শব্দে ঘুম থেকে উঠে জানালা দিয়ে বৃষ্টি পড়া দেখে খুবই খুশি লাগলো। মনে মনে ভাবলাম আজ হইতো কলেজ যাওয়া হবেনা। তাই বেলকনিতে গিয়ে রেলিং এ শরীর ভর দিয়ে সামনের দিকে ঝুকে দু হাত মেলে দিলাম। আইরন রেইলড না থাকায় সামনের দিকটাই বেশ খানিকটা ঝুকে থাকা গেলো। হাত দিয়ে বৃষ্টি ধরছি খুব ভালো লাগছে কিন্তু ভিজতে পারিনা ভয়ে। বাসার কেও আমাকে বৃষ্টি তে ভিজতে দেইনা। কারন আমার এলার্জি সমস্যা আছে যার দরুন জ্বর ঠান্ডা কাশি লেগে যায়। আমিও আর ভয়ে ভিজিনা। জ্বর উঠলে আমাকে অন্ধকার জগৎ ঘুড়িয়ে আনে আমার মন। ভাবনার মাঝেই আম্মুর ডাক পড়লো।”

“এই রাত্রি ঘুম থেকে উঠিস নি নাকি। কলেজ যেতে হবে তো তোর ভাইয়া ডাকছে। নাস্তা করে তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। ”

“আসছি আম্মু। বলেই চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বে’টা বজ্জাত ভাই বৃষ্টির দিনেও কলেজ যেতে বলছো তোমার কপালে একটা আন রোমান্টিক একটা বউ জুটবে দেখে নিয়ো। তুমি রুম্যান্স করতে চাইবা আর তোমার বউ তোমাকে এটা ওটা বাহানা দিবে মিলিয়ে নিও আমার কথা। বিরবির করেই ফ্রেশ হয়ে একবারে রেডি হয়ে বের হলাম। নাস্তা করে রায়াফ আমি দুজনেই একসাথে দাঁড়িয়ে আছি ভাইয়া রেডি হচ্ছে।”

“আপু দেখলি এতো সুন্দর একটা ওয়েদার এ ও ভাইয়া আমাদের স্কুল কলেজে পাঠাচ্ছে। ভাইয়া কতোট আনরোমান্টিক ভাবতেই আমার রাগ হচ্ছে।”

“আর বলিস না ভাই দেখে নিস ভাইয়া খুব বে রসিক একটা বউ যাবে।”

“হ্যাঁ একদম রাইট কথা আপু। একদম ঠিক বলেছো। আমি তোমাকে এই কথার জন্য একটা লাইক একটা কমেন্ট আর একটা এই নাও মিল্ক ক্যান্ডি দিলাম।শেয়ার করলাম না কারন এইটা আমাদের পার্সোনাল বেপার। যদি বাইরের লোক জানে তাহলে আমাদের মান সম্মান সব শেষ হয়ে যাবে। বলেই আমার হাতে একটা ১ টাকা দামের চকোলেট ধরিয়ে দিলো।”

“আমি ওকে দিলাম পিঠে এক ঘা’। তারপর দুজনেই হাসতে লাগলাম। ভাইয়া রেডি হয়ে আসতে আসতে বৃষ্টি মামা প্লালিয়ে গেলো। বুঝলাম যে বৃষ্টি মামা ও আমাদের সাথে বেইমানি করলো। ভাইয়া কে ভয় পেয়ে। তারপর আমরা গাড়িতে গিয়ে উঠলাম আমি পেছনে ভাইয়া রায়াফ সামনে। প্রতিদিনকার মতোই বসা আর কি। যাই হোক কলেজ যাত্রা শুরু হলো।কলেজ গেইটে নেমে আমি রায়াফ এক প্রকার দৌঁড়েই গিয়ে বেলকনিতে দাঁড়ালাম। হাঁপাচ্ছি দুজনে, ওমনি ইতি কে দেখতে পেলাম ছাতা নিয়ে গেইট দিয়ে আসছে। আমাদের ছাতা আনতে হয়নি কারন আসা যাওয়া গাড়িতেই হয়। বের হয়না কোথাও তাই প্রয়োজন হয়না।”

“রায়াফ ক্লাস এ চলে গেলো। আমি ইতির সাথে কৌশল বিনিময় করে ক্লাস এ ঢুকলাম। ঢুকতেই দেখি সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে যেনো তাকিয়ে আছে। ঠিক বুঝতে পারলাম না কেনো তাকিয়ে আছে। কিরে ইতু হয়েছে টা কি। আমরা কি এলিয়েন নাকি এভাবে ওরা তাকিয়ে আছে কেনো? ”

“আমিও তো বুঝতেছিনা কিন্তু কিছু তো একটা গন্ডগোল আছেই। যাই হোক চাপ নিস না আই বসি গিয়ে। যা হবার পরে দেখা যাবে। বলেই ইতি আমাকে নিয়ে প্রথম বেঞ্চে বসে পড়লো। আজকে বৃষ্টি থাকায় স্টুডেন্ট কম এসেছে। তাই বেশ মনোরঞ্জন একটা নিরিবিলি পরিবেশ মনে হচ্ছে। কারন অন্য সময় কা’কের মতো কা কা – পক পক শব্দ শুনা যায় শুধু ছেলে মেয়ে সব গুলার। ”

“কিছুক্ষন বসে রইলাম চুপ চাপ ক্লাসে স্যার আসলো। এখন বাংলা ক্লাস করাবে বই বের করে পড়াই মন দিলাম। স্যার লেকচার দিয়েই চলেছে। আজ সামনের বেঞ্চে বসায় ইতি ফোন স্ক্রল করতে পারছেনা। বেচারির মুখ টা পান’সে হয়ে আছে। ৩ টা ক্লাস শেষ করে টিফিন এর বেল পড়লে ক্যান্টিন এ যেতে নিলাম। এমন সময় একটা জুনিয়র মেয়ে এসে বললো, আপু তোমাকে সেকেন্ড ইয়ারের ক্লাসে যেতে বলেছে একটা ভাইয়া। ”

“ভাইয়া! কোন ভাইয়া? কে ভাইয়া? বলেই ব্রু কুচকে তাকালাম জুনিয়র মেয়েটির দিকে। ”

“ইতি বলল, দুস্ত চল তো কে ডাকে গিয়ে দেখি। ”

“না দুস্ত আমি যাবোনা আ আমার না ভয় ভয় করছে। কোনো অঘটন হবেনা তো আবার। বলেই ভীতু চাহনি দিলাম ইতির দিকে।”

“রিল্যাক্স ‘ চল আমার সাথে। বলেই ইতি আমাকে এক প্রকার টানতে টানতে নিয়ে গেলো ৫ম ফ্লোর এ।ক্লাসে ঢুকতেই যা দেখলাম তাতে আমার কিছুটা ভয় হলো। আবার বেশ অবাক হলাম।”

“ক্লাস টা খুব সুন্দর করে সাজানো। চারদিকে বেলুন দিয়ে সাজানো, ঝালর দুলানো, আলপনা আঁকা। মনে হয় মেয়ে গুলা এসব করেছে। হইতো আজকে তাদের কোনো অনুষ্ঠান ছিলো। তাই এতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। আমি যেনো এক স্বপ্ন পুরিতে চলে গেছি এসব ভাবতে ভাবতে।”

“ইতি ধাক্কা দিয়ে বলল, কিরে কোথায় হারিয়ে গেছিস। আমি যা দেখছি তুই ও কি তাই দেখছিস।”

“আ ব ব হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো দেখছি। তুতলে বললাম। আরে এসব দেখার জন্য এখানে এসেছি নাকি ইতু। হালকা মেজাজ দেখিয়ে বললাম। ”

“আরে এতো অধৈর্য হয়ে পড়ছিস কেনো চল ভিতরে যাই। বলেই আমাকে হাত ধরেই নিয়ে গেলো ক্লাসে ইতি।”

“ইতি একটু জুড়ে বলে উঠলো, এক্সকিউজমি সিনিয়র ভাইয়া আপুরা। রাত্রি কে ডেকে পাঠিয়েছে কে? ”

“তখনই পেছন ফিরে তাকালো ক্লাসে সিনিয়র সব আপু ভাইয়া রা। তাদের মাঝ খানে কালকের ওই তাকিয়ে থাকা ভাইয়া টা ও ছিলো। ”

“ভাইয়া টা বললো, আমি ডেকে পাঠিয়েছি৷ ”

“আমি ইতি কিছুটা অবাক হলাম। ইতি বললো, কেনো? ওকে কি প্রয়োজন। কেনো ডেকে পাঠালেন।”

“হুম ডেকে যখন পাঠিয়েছি তাহলে নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে। কেও তো কাওকে অহেতুক ডেকে পাঠাই না। তাই না! বলেই ভাইয়া টা ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো নিঃশব্দে।”

“আমি শুকনো ঢুক গিললাম। মনে মনে ভাবতে লাগলাম। কি এমন দরকার আমাকে। আমি কি কোনো অপরাধ করেছি? আমাকে কি কোনো প্রকার দায়িত্ব দিবেন। সামনে তো কলেজে তাদের বিদায় অনুষ্ঠান আছে হইতো দিতে পারে দায়িত্ব। কিন্তু দায়িত্ব দিলে তো টিচার রা দিবেন। ওনি কেনো দিবেন।”

” ভাবনার মাঝেই ভাইয়া টা বলে উঠলো, এটেনশন প্লীজ গায়েজ। আজকে আমি এই পার্টি টা দিয়েছি বিশেষ দুইটা কারনে। প্রথমত আমার জন্মদিন উপলক্ষে। আর দ্বিতীয়ত কি সেটা কিছুক্ষনের মধ্যেই সবাই বুঝতে পেরে যাবে। ইতি মধ্যে অনেকেই জানে। তাই আমি আগে দ্বিতীয় কাজটা সম্পন্ন করতে চাই তারপর কেক কাটতে চাই। বলেই ভাইয়া টি থামলো।”

“আমি এতোক্ষন ভাইয়া টা কে শুধু দেখছিলাম চোখ দিয়ে। ভীষণ হ্যান্ডসাম, অনেক ফর্সা। গালের খুচা খুচা দাঁড়ি। কলেজ ইউনিফর্ম পড়া ইন করা শার্ট টা।শার্ট এর হাতা গুলো কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। হাতে ব্রান্ডেড ওয়াচ৷ সব মিলিয়ে সুন্দরই লাগছে৷ আমি কখনো কলেজে তেমন কারোর দিকে এভাবে তাকায়নি। এই ভাইয়া টা কে অনেকবার দেখেছি কিন্তু এতোটা নিখুঁত ভাবে লক্ষ করিনি। তার নাম পরিচয় তেমন কিছুই আমি জানিনা। ”

“ইতি ধাক্কা দিলো। কিরে চুপ করে আছিস যে। কিছু কি বুঝতে পেরেছিস। ”

“আ আমি আবার কি বুঝবো। চল তো এখান থেকে ভালো লাগছেনা এসব। রায়াফ জানতে পারলে ভাইয়া কে বিচার দিবে। তারপর ভাইয়া আমাকে তোকে আমের শরবত বানিয়ে খাবে। ”

“পেছন ফিরতেই দেখলাম আমাকে আর ইতিকে ঘেরাও করে দাঁড়িয়ে আছে ক্লাসের ছেলে মেয়েরা। আমি ভয় পেলাম। তখনই ভাইয়া টা আমার সামনে এসে হাঁটু গেরে বসে পড়লো তার দুইটা হাত পেছনে। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম এক কদম পিছিয়ে গেলাম। ইতির হাত শক্ত করে ধরে রাখলাম। ”

“ভাইয়া টা পেছন থেকে একটা গোলাপ ফুলের তোড়া বের করে আমার সামনে ধরলো। তোড়া টাই প্রায় ১০০+ গোলাপ আছে এমন হবে। তোড়া টা আমার দিকে ধরে, আমার চোখে চোখ রেখে বলতে লাগলো, তুমি যখন এই প্রতিষ্ঠান এ প্রথম নবম শ্রেণিতে এডমিশন নিয়েছিলে সেদিন আমি তোমাকে দেখেছিলাম। ওইদিন তোমার দিকে শুধু তাকিয়ে ছিলাম। অন্যরকম একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো তখন। কিন্তু বুঝতে পারিনি সেটা আসলে কি ছিলো। ধীরে ধীরে যখন সময় যেতে লাগলো আমি বুঝতে পারলাম যে আমি তোমাকে পছন্দ করি। আর আমি প্রতি সময় তোমার উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে রাখতাম। কিন্তু তুমি কখনো টের পেতে না। যখন ইন্টার ১ম বর্ষে উঠলাম তখন পুরোপুরি বুঝতে পারলাম যে আমি তোমাকে ভালোবাসি৷ হ্যাঁ অনেকটা গভীর ভাবে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। যদিও সবাই বলবে এটা ক্ষনিকের আবেগ কিন্তু আমি বলবো না। আমি বলবো সব সময় এটা আমার ভালোবাসা মন থেকে উদ্বীত ভালোবাসা। এটা কোনো আবেগ নয়। কলেজের সবাইকেই খেয়াল করেছি কেও তোমার আশে পাশে যাওয়ার চিন্তা করলে সবাই তোমার বড় ভাইয়ার৷ আই মিন রাত ভাইয়া রাইট। তার কথা বলে। হইতো এটাই যে তাকে সবাই ভয় পাই । একটা সময় আমিও পেতাম। কিন্তু যখন ২য় বর্ষে উঠেছি আস্তে আস্তে পরিক্ষার সময় হয়ে গেলো। আমি পরিক্ষা দিয়ে এখান থেকে চলে যাবো। তাই ভাবলাম যদি আমার এই না বলা ভালোবাসা মনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে চলে যাই তাহলে হইতো সব সময় আমাকে আপচোশ করে ধুকে যেতে হবে। যার জন্য আজকের এই এরেঞ্জমেন্ট৷ আমার জন্মদিন আজ তাই আমি আমার এই স্পেশাল দিনেই তোমাকে আমার অনুভূতি গুলো জানানোর জন্য এখানে তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আশা করি তুমি আমার ভালোবাসা কে ফিরিয়ে দিবেনা। হইতো আমি সবার মতো করে তোমাকে বলতে পারবোনা। কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যতটুকু বলতে পারবো তোমার জন্য ততটুকুই যথেষ্ট ভালোবাসি। ”

“আমি তার বলা বচন বাক্য গুলো মস্তিষ্কের মাঝে ঘুড়াতে লাগলাম৷ ভাবতে লাগলাম, ফ্লার্ট করার জন্যই কি আমাকে এখানে এনেছে। আর ইতিও যেনো পাথর হয়ে গেছে। এমন কিছু হবে আমাদের ধারনা ছিলোনা। আমি মুখ ফুটে কাঁপা কাঁপা গলায় বলেই ফেললাম, ভা ভাইয়া আপনি এসব কি বলছেন৷ আপনি সুস্থ আছেন তো? আর এসবের মানে কি আপনি যেহেতু জানেন আমার ভাইয়া কেমন তাহলে এসব করার মানে কি। যত্তসব! বলেই ইতিকে নিয়ে বিরবির করতে করতে সেখান থেকে চলে এলাম ক্যান্টিন এ৷ এতোক্ষনে বুঝতে পারলাম যে কলেজে আসার পর মেয়ে গুলা কেনো ওইভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। হইতো এমন টা হবে তারা আগে থেকেই জানতো। ”

“ইতি বললো, দুস্ত কি প্রপোজ রে এক্সেপ্ট করলিনা কেনো। আমি হলে তো রাজিই হয়ে যেতাম। ”

“তো মানা করেছে কে যা না তুই এক্সেপ্ট করে নে। ইতিকে রাগ দেখিয়ে বললাম কথা টা। ”

“কি যে বলিস না আমার তো অনলি ওয়ান পিস একজন আছেই। ”

“হুহ একদিন ও তো তাকে দেখালিনা যাকে এতো ভালোবাসিস৷ আমি কিনা তোর বেস্টু ভাবতেই অবাক লাগে৷ ১ মাস ধরে প্রেম করছিস অথচ আমাকে তার ছবিই দেখালিনা । ”

“আরে দুস্ত রাগ করছিস কেনো। একদিন দেখা করিয়ে দিবো কেমন সারপ্রাইজ হিসেবে।”

“লাগবেনা তোর সারপ্রাইজ তোর পকেটে রাখ৷ মেকি রাগ দেখিয়ে ইতিকে বললাম। তারপর লাঞ্চ করে ক্লাসে চলে গেলাম। ক্লাসে বসে ভাবতে লাগলাম পা’গল ছা’গল নাকি তামাশা করার আর যাইগা পাই না। আমাকে ডেকে নিয়ে গেছে প্রপোজ করবে বলে। হুহ শখ কতো। তারপর বাকী ২ টা ক্লাস এর পর ছুটি হলো। আজকে ক্যাম্পাসে বসে থাকিনি সোজা অফিসের দরজার কাছে ইতিকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ইতিমধ্যেই রায়াফ এসে পড়লো। ওকে দেখতে বেশ হাসি খুশি লাগছে। আমি মনে মনে বললাম, ভা’জ্ঞিস আজকে কিছু টের পাইনি নইলে যে আমার কি অবস্থা করতো দুই ভাই মিলে আল্লাহ মালুম। সস্থির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম। তারপর ইতিকে বিদায় জানিয়ে রায়াফ কে নিয়ে চলে এলাম মেইন গেইট এর কাছে। দেখি ভাইয়া দাঁড়িয়ে কথা বলছে কার সাথে যেনো। একটু কাছে গিয়ে দেখতে পেলাম আভা আপু। তাকে সালাম দিলাম। তিনি উত্তর দিলেন । তারপর আপু আমাকে জিজ্ঞাসা করলো, কেমন আছো? পড়াশুনা কেমন চলছে?”

“জ্বি আপু আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। পড়াশুনা আপনাদের দোয়ায় ভালোই চলছে। মুচকি হেসে আপুর সাথে কথা গুলো বললাম। ”

“তো রায়াফ তোমার কি অবস্থা। মাই ডেয়ার লিটল ব্রাদার। আভা আপু বলল।”

“প্রথমত আমি লিটল নয় এখন অনেক বড় হয়ে গেছি । দেখতেই পাচ্ছেন ঠিক কতোটা বড় হয়েছি। তাই আমাকে বড় ভাইয়া বলে ডাকবেন। আর হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তবে আপনি যদি আমাদের বাসাই একেবারে চলে আসতেন তাহলে আর একটু ভালো থাকতাম। গল্প করতে পারতাম। মজা করতে পারতাম। বলেই রায়াফ চোখ গোল গোল করে ঘুড়াতে লাগলো আর মুখ টা পেঁচার মতো করে ফেললো। ওর হাব ভাব দেখে মনে হচ্ছে বেচারা খুবই দুঃখিত। ”

“ওহ আচ্ছা তাই! তাহলে বড় ভাইয়া আপনি আমাকে আপনাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলেন। এতোই যখন আমাকে নিজেদের কাছে রাখার শখ তাহলে তো আর এমনি এমনি আমাকে আম্মু আব্বু আপনাদের বাসায় যেতে দিবেনা তাই না। তাই কিছু একটা ব্যবস্থা করুন। আভা আপু রায়াফ কে বললো। ঢং করে করে। ”

“রায়াফ গালে আঙুল এর ঠোকা দিতে দিতে বললো, আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে অতি শিঘ্রই আমি আপনাকে আমার বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাপনা করিবো। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। বেহেন সাহেবা। ”

“রায়াফ এর কথা শুনে আমি আভা আপু রাত ভাইয়া একসাথে হেসে দিলাম। পরক্ষনে ভাইয়া বললো রায়াফ তুই এতো দুষ্টু হয়েছিস না! তোকে মা’ইর দিতে হবে। পাকা ছেলে কোথাকার। এতো পাকামো করতে কে বলে তোকে।”

“রায়াফ বললো, ভাইয়া তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো। মন খারাপ হয়েছে এমন করে মাথা নিচু করে বললো। ”

“একদম চুপ বেয়াদব, যা গাড়িতে উঠে বস। আমি আসছি কথা বলে। ”

“তারপর আমি আভা আপুকে বললাম আপু আমাদের বাসায় বেড়াতে যায়েন। আসি ভালো থাকবেন আল্লাহ হাফেজ৷ বলেই আমি রায়াফ কে নিয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম। রায়াফ সামনের সিটে আমি পেছনে। ড্রাইভিং সিটে ভাইয়া বসবে।তারপর রায়াফ কে বললাম, ভাই তুই কি কিছু বুঝতে পারছিস? ”

“রায়াফ আমার দিকে না তাকিয়েই বললো, ডাল মে কুচ কালা হে বেহেন জি। কুচ তো গারবার হে। আচ্ছা আপু আমি যা ভাবছি তুমিও কি তাই ভাবছো। বলেই রায়াফ আমার দিকে পেছন ফিরে তাকালো।”

“তুই কি ভাবছিস আমি কিভাবে জানবো না বললে।”

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে