প্রেম তুমি পর্ব-০৬

0
1311

#প্রেম_তুমি
#part:6
#mishmi_muntaha_moon

অর্নিল চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে।আয়রাও চুপ করে বসে আছে।নিরবতা ভেঙে অর্নিল বলল

–তুমি এই ক্যাফে তে কাজ করো।

আয়রা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল।

–হ্যা।

তারপর আবার চুপ।অর্নিলকে চুপ থাকতে দেখে আয়রা বলল।

–এখন বলেন আপনি সবার সামনে আমাকে গার্লফ্রেন্ড বললেন কেনো।

–লিসেন তোমাকে গার্লফ্রেন্ড বানানোর কোনো শখ আমার কোনো কালেই ছিলো না।আমি তো জাস্ট ফারহা আরও কিছু বিরক্তিকর মেয়েদের থেকে পিছু ছুটাতে বলেছি।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মনে মনে বলল

–আর ওই রিমুর বাচ্চায় কি বলল পছন্দ করে আমায়।

আয়রাকে চুপ থাকতে দেখে অর্নিল বলল।

–কি হলো।

–না কিছু না।কিন্তু আমি আপনার হেল্প কেনো করবো?

আয়রার কথা শুনে অর্নিল হাসলো।

–আমি জানতাম তুমি এমন কিছুই বলবে তাই তো আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম।শর্তের কথা মনে আছে এইটাই তোমার শর্ত আমার গার্লফ্রেন্ড হয়ে থাকতে হবে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা যেনো আকাশ থেকে পরল।

–আমি বলেছিলাম আপনি সুবিধার শর্ত দিবেন না।ওই রিমুর জন্য আমাকে ফাসতে হচ্ছে।উফফ।

–এখন কিছু করার নেই

আয়রা কিছুক্ষন মুখ গোমড়া করে রেখে আবারও বলল।

–আচ্ছা আপনি কি পাগল যে ফারহা আপুর থেকে পিছু ছুটাতে চান কত সুন্দর উনি।আপনার পিছে পাগল এইটা তো আপনার ভাগ্য।নাহলে আপনি,,,,

কথা বলার মাঝে হঠাৎ বাইক থামায় আয়রা পড়ে যেতে নিতেই অর্নিলের কাধ ধরে ফেলে।

–পাগল নাকি এতো জোরে বাইক থামালেন কেনো আমি এভাবেই হাল্কা ভাবে বসেছিলাম এখনই পরে যেতাম।

–বাইক থেকে নামো।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা ভয় পেয়ে বলল

–কেনো।আপনি আমায় মাঝ রাস্তায় রেখে চলে যাবেন কত খারাপ আপনি।

–নামো আগে।

আয়রা নেমে দারালো তারপর অর্নিলের দিকে তাকিয়ে রইল।অর্নিল চোখ ছোট ছোট করে বলল

–কি বললে তুমি ফারহা আমায় পছন্দ করে এইটা আমার ভাগ্য।আমার পিছে কত মেয়ে ঘুরে তোমার ধারণা আছে।আর ভার্সিটি তে আমি কি পরিমানে ফেমাস জানো তো।আমি যদি বলি আমার গার্লফ্রেন্ড প্রয়োজন তাহলে লাইন লেগে যাবে।

অর্নিলের কথা শুনে আয়রা মনে মনে বলতে লাগলো

–হাহ! নিজের প্রশংসা করা তো উনার থেকে শিখা উচিত।

অর্নিল আয়রাকে চুপ থাকতে দেখে বলল।

–আমি চললাম এখন তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো।

অর্নিল বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো।আয়রার তো কান্না পাচ্ছে।কি করবে এখন।ভাবতে ভাবতে আশেপাশে তাকাতেই মুখে হাসি ফুটলো।

–এইটা তো রিমুদের বাড়ি।ফাজিল কোথাকার আমাকে বোকা বানালো।কি পরিমানে ভয় পেয়েছিলাম।

আয়রা ওরনা ঠিক করে যেতে লাগলো।রিমুদের বাসায় যেতেই দেখতে পেলো রিমুর বাবা হাটছে।আয়রা রিমুর বাবাকে দেখেই সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল।

–কেমন আছেন আংকেল?

রিমুর বাবা কিছুক্ষন ব্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে গম্ভীর মুখে বলল।

–ভালো আছি।

রিমুর বাবা জবাব দিয়ে উনার রুমে চলে গেলেন।আয়রার ছোট বেলা থেকেই এমন গম্ভীর লোক দের কেমন যেনো ভয় ভয় লাগে মনে হয় কিছু বললেই ধমক দিবে।
আয়রা ঢোক গিলে রিমুর রুমে গেলো।রিমু একটা ড্রেস নিজের শরীরের সাথে লাগিয়ে আয়নার সামনে দারিয়ে দেখছে।আয়রা চুপ করে ব্যাগটা এক সাইডে রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।এসে দেখে রিমু খুশি মনে ড্রেস্ টা ভাজ করে ড্রয়ারে রাখছে।
আয়রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বারান্দায় চলে গেলো।বাবাকে খুব মিস করছে।
আয়রা বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখের কিনারায় জমা পানিটুকু আঙুল দিয়ে মুছে নিলো।

–আয়রা এখানে কি করছিস।আর এতো চুপচাপ কেনো।কিছু হয়েছে?

আয়রা পাশে রিমুকে দেখে মুচকি হাসলো তারপর বলল

–নাহ কিছুই না এভাবেই।

–আচ্ছা চল খেতে আয়।বাবা এসেছে দেখেছিস?আজ আমরা একসাথে বসে খাবো উফফ ভাবতেই ভালো লাগছে।বাবা আমার জন্য একটা নিউ ড্রেস ও এনেছে দেখেছিস?

আয়রা হেসে বলল

–হ্যা দেখলাম তো।

–আচ্ছা তাহলে চল খেয়ে আসি।বাবা চকলেট ও এনেছে একসাথে খাবো চল।

আয়রা আর রিমু খেতে যায়।বাহিরে গিয়ে দেখে রিমুর বাবা খাবার টেবিলে আগে থেকেই বসে আছে।আয়রাকে দেখে আবারও ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো।
আয়রার অনেক বেশি আনকমফর্টেবেল ফিল হচ্ছে ওদের মাঝে।তবুও চুপচাপ এসে বসল।রিমু তো আগেই গিয়ে ওর বাবার পাশে বসে পরেছে।
আয়রা কোনোরকম খাচ্ছে।রিমুর বাবার প্রশ্নে আয়রার গলা দিয়ে আর খাবার নামলো না।

–তোমার মা বাবার সাথে কথা হয়?

আয়রা রিমুর বাবার প্রশ্নে থতমত খেয়ে বলল।

–না,,,না আংকেল কথা হয় না।

আয়রা কথা শুনে রিমুর বাবা খেতে খেতে আবারও বলল

–একে তো পালিয়ে এসেছো তার উপর মা বাবার সাথেও কোনো সম্পর্ক রাখো নি।আমার মেয়ে রিমু হলে কখনই এমন করতে পারতো না আমরা ওর জান।

রিমুর বাবার কথা শুনে আয়রার অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছে।ঠিকই তো বলছে।আয়রা চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে আছে।
রিমু ওর বাবার কথা শুনে চাপা স্বরে বলল।

–বাবা তুমি কি বলছো এই সব?প্লিজ আর কিছু বলো না।

রিমুর বাবা আর কিছু বললেন না চুপচাপ খেতে লাগলেন।আয়রা কিছুক্ষন না খেয়ে চুপচাপ বসে থেকে উঠে দারালো।তারপর মুচকি হেসে বলল

–আংকেল আন্টি আমার খাওয়া শেষ।আমি যাই খুব ক্লান্ত লাগছে।

আয়রা রুমে গিয়ে একপাশ হয়ে শুয়ে পরল।খুব রাগ লাগছে। এখন মনে হচ্ছে যে নিজের বাবা মার বিশ্বাস ভেঙেছে।আর আয়রার ওর মা বাবার প্রতি এই প্রগাঢ় ভালোবাসাও পানির মত মিলিয়ে গেলো।
আয়রা চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছে।রিমুকে রুমে ঢুকতে দেখে আয়রা চোখের জল মুছে চোখ বুজে রইল।রিমু আয়রার পাশে এসে আস্তে বলল

–আয়রা ঘুমিয়ে পরেছিস।

রিমুর ডাকায় আয়রা কোনো সাড়া দিলো না।রিমু রুমের লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পরল।আয়রার ঘুম পাচ্ছে না।কিছুক্ষন এদিক ওদিক করে উঠে দরজা খুলে বেরিয়ে পরল।তারপর রান্নাঘরে পানির জন্য যেতেই দেখলো রিমুর মা বাবার রুমে লাইট জ্বালানো আর কিছু নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে।আয়রা না চাওয়া সত্ত্বেও আস্তে করে গিয়ে দরজার পাশে দারালো।রিমুর বাবার কথার আওয়াজ আসছে

–দেখো এই মেয়েকে তুমি কালকেই এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য কথা বলবে।

–দেখো রিমুর বাবা তুমি এমন করছো কেনো।আয়রা রিমুর বান্ধবী হয় কিভাবে মুখের উপর চলে যেতে বলব।আর কি করেছে মেয়েটা।

–একেতো পালিয়ে এসেছে আবার জিজ্ঞেস করছো কি করেছে।আর আমি আজকে এই মেয়েকে একটা ছেলের সাথে দেখেছি।ছেলেটার বাইক করে আসছিলো।ঢাকায় এর জন্যই এসেছিলো নাকি পালিয়ে।মা বাবার উপর ও তো প্রশ্ন করতে হয় এই মেয়ের।আমার বিশ্বাস আমার মেয়ে কখনই এমন করতে পারবে না।

আয়রা আর শুনতে পারলো কান্নার চটে হেচকি উঠে যাচ্ছে আয়রা কোনোরকম নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে রুমে চলে গিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।তারপর মুখ চেপে কাদতে লাগলো।

–আমার জন্য আমার মা বাবার ব্যাপারেও খারাপ কথা বলছে।

আয়রা অনেকক্ষন কেদে মুখ ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে গেলো তারপর আবারও ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু এখন তো আর ঘুম চোখে আসছে না।

সকাল হতেই রিমু আয়রা কে ডেকে তুললো।আয়রা উঠে হাত মুখ ধুয়ে ব্যাগ গুছাতে লাগলো।রিমু ও ব্যাগ গুছাতে গুছাতে আয়রাকে বলল।

–এই তোর চোখ গুলো এমন ফুলে আছে কেনো?

আয়রা ব্যাগ গুছাতে গুছাতেই বলল

–না এভাবেই রাতে বেশি আগে ঘুমিয়েছিলাম তো তাই হয়তো।

–ওহ আর কালকে বাবার কথায়,,,

রিমুর কথার মাঝেই আয়রা বলল

–না না আমি কিছুই মনে করি নি আর আমার সাথে কিসের ফর্মালিটি তোর?

–আচ্ছা চল খেয়ে তারাতারি কলেজে যেতে হবে।

আয়রা ব্যাগ কাধে নিয়ে বলল।

–আমার ক্ষিদে নেই।তুই খেয়ে বাহিরে আস আমি ওয়েট করছি।প্লিজ খাবারের জন্য ফর্স করিস না।

রিমু আর কিছু বলতে পারলো না।আয়রা বাহিরে গিয়ে রিমুর জন্য ওয়েট করতে লাগলো রিমু আসতেই কলেজে চলে গেলো।

আয়রাদের আজ দুটো ক্লাস হয়েছে।রিমু কলেজের বাহিরে গিয়ে আয়রাকে বলতে লাগলো।

–ওয়াও আজ তারাতারি শেষ হয়েছে ক্লাস চল আমরা ফুচকা খাই।

রিমুর কথা শুনে আয়রা বলল

–নারে আজ খেতে পারবো না তুই বাড়িতে চলে যা আমার আজ একটু তারাতারি ক্যাফে তে যেতে হবে।

রিমু মন খারাপ করে চলে গেলো।রিমু যেতেই আয়রা ক্যাফেতে গিয়ে ছুটি নিয়ে ঘর খুজতে চলে গেলো।
আয়রা ভেবে নিয়েছে রিমুদের বাড়িতে থাকবে না আর।তাই বাড়ি খুজার জন্য রিমুকে মিথ্যা বলে পাঠিয়ে দিলো।

বাড়িতে পৌছাতে পৌছাতে ৮:০০ বেজে গেলো।বাড়ি খুজার জন্য আজ অনেক বেশি ঘুরতে হয়েছে।অবশেষে একটা রুম পেয়েছে।তিনটা ফ্লেটের রুমে হাসবেন্ড ওয়াইফ থাকে সেই ফ্লেটেই একটা রুম ভাড়া নিয়েছে কালকেই সেখানে শিফট হবে বলেছে।
আয়রা এতো ঘুরাঘুরি করে খুব ক্লান্ত রাতেও আবার না খেয়ে ঘুমিয়ে পরল।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই আশা করি❤️❤️)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে