প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-২৭+২৮+২৯

0
2003

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কিরে?তোরে যে জিজ্ঞেস করতেছি এত করে উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?
.
হ্যাঁ!কিছু বললি?
.
নওশাদ!শান্ত মনে হয় আমাদের আলোচনা থেকে বেরিয়ে গেমস খেলতেছে তাই তোর কথা মনে হয় শুনে নাই
.
শান্ত এটা ঠিক করস নাই,তোর শাস্তি হলো আহানাকে নিয়ে নাচবি স্টেজে
.
কাজ নাই আর আমার,তোদের কাজ নাই?সকাল থেকে আমার অফিসে কি করিস তোরা?
.
হেহহ!!আমরা এত কাজের বাহানা দেখাই না,অফিসের স্টাফদের উপর দায়িত্বভার দিয়ে আমরা চলে আসছি,তুই তো একা হাতে সব সামলাস

আচ্ছা সুহানা একটা কথা বলবো?
.
হুম ঊষা আপু বলো
.
স্যার তোমাকে সবসময় আহানা বলে কেন?আর এতকিছুর পরেও স্যার তোমাকে ব্যাক আনিয়েছে তোমরা কি পরিচিত?
.
আসলে আমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম,আমি বিবাহিত নই,আর আমার নাম আহানা
.
ওহ আচ্ছা,বাট মিথ্যা বললে কেন?
.
সত্যি বললে তো উনি চিনে ফেলতো আমাকে
.
স্যার তো এমনিতেও তোমাকে দেখতো পরে
.
আসলে আমি সেটা জানতাম না তাই নাম পাল্টিয়েছিলাম,আমি উনার বাবার বন্ধুর মেয়ে
.
ও মাই গড,!!সত্যি?
.
হুম
.
তাই তো বলি পূর্বপরিচিত বলেই স্যার তোমাকে সব কাজে ছাড় দেয়,তা নাহলে স্যার সামান্য একটা ভুলের কারণেও অননেকের চাকরি খান
.
আমাকে ভয় পায় তো তাই😎
.
কে কাকে ভয় পায়?
.
আহানা ঢোক গিলে সামনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত পকেটে হাত ঢুকিয়ে একটুদূরে দাঁড়িয়ে আছে,কপাল কুঁচকানো তার
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”কিছু না তো!ঊষা আপু যাও না”
.
হুম যাচ্ছি
ঊষা হালকা হেসে চলে গেলো,নওশাদ রিয়াজ আর সূর্য ওরাও চলে গেছে এতক্ষণে
বাকি রইলো শান্ত আর আহানা,আহানা এখনও পুতুলের মত দাঁড়িয়ে আছে,শান্তিতে বসতেও পারতেছে না কারণ একটু সামনেই শান্ত দাঁড়িয়ে থেকে ওর পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে যাচ্ছে
.
কি সমস্যা? এরকম তাকিয়ে আছেন কেন?
.
আমার অফিসের স্টাফদের আউটফিট এরকম কেন বুঝি না!তুমি অফিস থেকে টাকা এডভান্স নিয়ে নতুন জামা কিনে তারপর ওগুলা পরে আসবা,এসব পরে আর আসবা না
.
আহানা বিড়বিড় করে বললো”মামার বাড়ির আবদার পাইছে,ঐ টাকা দিয়ে আমি আমাদের বড় একটা বাড়ি বানাবো টাকা জমিয়ে জমিয়ে,এখন টাকা খরচ করা যাবে না কোনোমতেই”
.
শান্ত আহানার দিকে তাকাতে তাকাতে আবার চলে গেছে
শান্তর চলে যাওয়া দেখে আহানা হাঁপ ছেড়ে বেঁচে চেয়ারে দুম করে বসে গেলো,আহা শান্তি!এবার আজকের কাজগুলো শেষ করতে হবে
শান্তদের যে বিদেশি শাড়ীর আমদানি হবে সেটা কত গুলো হবে,কার দ্বারা হবে সেটার হিসাব রাখার দায়িত্ব আহানার
তো সে এখন সেটাই করছে আবার মাঝে মাঝে ফোনে ক্লাইন্টদের সাথে ইংরেজিতে কথাও বলতে হচ্ছে
আহানার আজ কাজের চাপ অনেক বেশি,তবে তার একটুও খারাপ লাগছে না কারণ বেরিং কাজ তার ভাল্লাগে না,এরকম পরিশ্রমের কাজই ভালো মনে হয় তার কাছে
ওদিকে শান্ত টেবিলে মাথা রেখে চুল টানতেছে আর কিছুক্ষন বাদে বাদে ল্যাপটপে তাকিয়ে কিসব টাইপ করছে
তার কাজ হলো অফিসের ২০৫জন কর্মচারীর সবাই ঠিকমত কাজ করছে কিনা সেটার লিস্ট দেখে চেক করা
কারণ সবাই তাদের কাজ যখন যেটা সম্পন্ন হয় তখন সেটার কপি নাম সহ অফিসের মেইন তথ্য ভাণ্ডারে পাঠিয়ে দেয় যেটা সোজা শান্ত দেখে
শান্ত এই নিয়ে ৬কাপ কফি খেয়েছে,ঊষা একের পর এক কফি নিয়ে যাচ্ছে,আহানা কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিষয়টা খেয়াল করতেছে
তো ৭ম বার ঊষা কফি নিয়ে যাওয়ার সময় আহানা থামিয়ে বললো সে দিয়ে আসবে,ঊষা তাই ওর হাত কফি দিয়ে নিজের কাজে চলে গেলো
আহানা কফি হাতে নিয়ে শান্তর রুমে এসে দরজায় নক করলো তারপর ভিতরে ঢুকে দেখলো শান্ত চেয়ারে আধশোয়া অবস্থায় চোখ বন্ধ করে নিজের মাথা টিপতেছে দুই হাত দিয়ে
.
এই যে শুনুন!
.
শান্ত তার মাথা থেকে হাত নামিয়ে দরজার দিকে তাকালো
আহানা কফি নিয়ে ওর সামনে এনে রেখে বললো”আমি টিপে দিবো?”
.
বাপ রে বাপ!সূর্য তো মনে হয় আজ উঠেই নাই
.
ঢং করতে হবে না,দিতাম কিনা সেটা বলেন
.
লাগবে না,কফি খেলে ঠিক হবে
.
কফি একবার খেলেই মাথা ধরা যায় যদি টেকনিক জেনে কফি খাওয়া যায় তবে
তাহলে আর ৭বার কফি খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না বুঝলেন?
.
আচ্ছা তা কিসের টেকনিক?
.
মুখে দিয়ে মাথা উঁচু করে গিলতে হয়
.
ইন্টারেস্টিং বাট আমি ঠিক বুঝলাম না
.
আমি দেখাচ্ছি!
আহানা কফির মগ নিয়ে এক ঢোক গিলে দেখালো তারপর থুথু করতে করতে বাইরে চলে গিয়ে ২মিনিট বাদে এসে বললো এটা কিসের কফি খান আপনি?ছিহ ছিহ বাপের জন্মে এরকম ফালতু খাবার খাইনি,একে তো তিতা তার উপর চিনির ছিঁটেফোটাও নাই,তাই তো আপনার মাথা ব্যাথা যাচ্ছিলো না
.
চিনি খাইলে আমার শরীর খারাপ করে
.
কি বললেন?চিনি খাইলে শরীর খারাপ করবে কেন?আপনার তো ডায়াবেটিস না,জোয়ান একটা ছেলে তার কিনা চিনিতে সমস্যা!তাই তো বলি আপনাকে সবসময় এলিয়েন মনে হয় কেন!
আপনার মুখ থেকে তেতো কথা বের হয় কেন,পাজল এখন মিললো
.
শান্ত চেয়ার থেকে উঠে আহানার চুল টেনে ধরে বললো”তুমি এলিয়েন তোমার ১৪গুষ্টি এলিয়েন,যাও আমার রুম থেকে!মাথা ব্যাথা আরও বাড়াতে এসেছে!”
.
আহানা রুমের বাইরে এসে বোকার মতন তাকিয়ে আছে আর শান্ত ওর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে ভিতরে চলে গেছে
.
আহানা অফিসের কিচেনে গিয়ে নিজের হাতে এলাচ,দারুচিনি দিয়ে দুধ চা বানালো ঘাড়ো করে তারপর সেটা নিয়ে আবারও দরজা ধাক্কালো
শান্ত টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছিলো,মাথা উঠিয়ে রাগি রাগি লুক নিয়ে দরজার কাছে এসে দরজা খুলতেই দেখলো আশেপাশে কেউ নেই,নিচে এক কাপ চা তার মধ্যে একটা চিরকুটে লিখা “মাথা ব্যাথা কমাতে চাইলে চা টা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করেন”
.
শান্ত পুরো করিডোরটায় একবার চোখ বুলিয়ে নিলো
আহানার এক অংশও দেখা যাচ্ছে না কোথাও,এত জলদি উধাও হলে কি করে
শান্ত চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে আবার ভিতরে চলে গেলো
আহানা আবারও পা টিপে টিপে করিডোর পেরিয়ে শান্তর রুমের দরজার ফুটো দিয়ে দেখতে লাগলো শান্ত চা টা খাচ্ছে কিনা
হুম খাচ্ছে,আহানা তাই মুচকি হেসে চলে আসলো তার কেবিনে
.
শান্ত চা খেতে খেতে একটা কাজ শেষ করলো,পরে কাজটা শেষ করে তার মনে হলো তার মাথা ব্যাথা একটুও নেই,নিজের অজান্তেই হেসে দিলো সে
আহানা কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে টেবিলে মাথা রেখে,বিকাল সাড়ে ৫টা বাজে তখন
অফিসের বাকি স্টাফরা উঁকি দিয়ে ওর ঘুম দেখছে,ঊষা বাদে আর কেউ জানে না যে আহানা শান্তর রিলেটিভ হয়
তো সবাই তো একজন আরেকজনের সাথে বলাবলি করছে যে আজ আহানা শান্ত থেকে বিরাট বড় ঝাড়ি খাবে,সবাই মজা দেখার জন্য ওয়েট করছে
ঊষা গেছে থার্ড ফ্লোরে,সেও নাই
শান্ত তার রুম থেকে বেরিয়ে স্টাফদের কেবিনদের সামনে এসে পা রাখতেই যে যার কাজে মন দিয়ে দিলো সাথে সাথে
আহানা এখনও ঘুমাচ্ছে,শান্ত সবাইকে দেখার পর এবার আহানার কেবিনের দিকে তাকালো,কিন্তু কিছুই বললো না,এগিয়ে এসে আহানার ঘুমন্ত চেহারাটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে অনেকক্ষণ ধরে তারপর বাকি স্টাফদের তাকানো দেখে টেবিলে দুম করে একটা বাড়ি দিলো সে
আহানা হকচকিয়ে উঠে গিয়ে বললো”কি হয়েছে,কে মরেছে?কে বেঁচেছে??”
.
শান্ত আর কিছু না বলেই চলে গেলো আবার
.
আহানার এবার হুস আসলো যে সে এতক্ষণ কাজ রেখে ঘুমাচ্ছিলো
এদিকে সবাই কনফিউশানে পড়ে গেছে এই ভেবে যে শান্ত আহানাকে ধমক তো দূরে থাক একটা ঝাড়িও দিলো না কেন!

৬টা বাজে এবার শান্তর চলে যাওয়ার পালা,সে ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে যেতে নিতেই দেখলো আহানা ঊষার সাথে কথা বলতেছে এখনও
.
কি হলো?চলো?
.
কে আমি?
.
না তোমার ভূতে
.
আমি রিকসা নিয়ে যেতে পারবো,আপনি যান
.
শান্ত হাত মুঠো করে শার্টের হাতা খানিকটা উঠাতে নিতেই আহানা তার সাইড ব্যাগ হাতে নিতে নিতে বললো’আসতেছি”

আচ্ছা একটা কথা বলেন তো
.
কি?
.
আমি আপনার সাথেই কেন বাসায় ফিরতাম?
.
শুনো!তোমার এসব আজগুবি কথা অফ দাও
.
সামান্য এক লাইন বললাম শুরুতেই মুখে তালা মেরে দিলেন,আজ সারাদিন আমি একা একা কথা বলছি,আপনার সাথে একটুও ঝগড়া করি নাই,আমার কেমন খিধা খিধা পাচ্ছে
.
হোয়াট!ঝগড়ার আবার খিধা!তাহলে তুমি স্বীকার করছো যে তুমি ঝগড়া করো বেশি
.
না মানে কে বললো!এক হাতে তো আর তালি বাজে না,আপনিও তো ঝগড়া করেন
.
যাই হোক,দুপুরে কিছু খেয়েছিলা?
.
ঊষা আপুর সাথে চকবার খেয়েছিলাম
.
ভালো
.
ভালো মানে?লাঞ্চে কেউ আইসক্রিম খায়?
আপনি কিনা আবার বলতেছেন ভালো?
.
আমি লাঞ্চে কিছু খায়নি,তুমিও খাও নি,তাহলে এটা তো ভালোই হলো তাই না?
.
আমি ভাত খাবো😭আপনি কেমন বস,স্টাফরা খেলো কি খেলো না খোঁজ নেন না
.
আমার অফিসের স্টাফরা টিফিন নিয়ে আসে,তুমি আনলা না কেন?আর তুমি যদি এটা ভেবে থাকো আমি তোমার প্রতি ওভারপ্রোটেক্টেড তাহলে এটা ভুল ভাবছো
তোমাকে আমি বিয়ে করবো না,বুঝছো?
.
আপনি মানুষ না এলিয়েন
.
বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবা
.
না আমি এখন খাবো,গাড়ী থামান
.
এখন কি খাবা!আমার মাথা ধরে আছে নাহলে রেস্টুরেন্টে যেতাম,মুড নাই,সো সোজা বাসায় যাচ্ছি
.
আমি নেমে যাই আপনি চলে যান, গাড়ী থামান
.
তুমি এই সন্ধ্যাবেলায় কি খাবে?টাকা আছে তোমার কাছে?
.
১০টাকার ঝালমুড়িতে পেট ভরে যাবে,গাড়ী থামান আপনি,আমি নাহলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবো আর একটু সময় খালি পেটে থাকলে
.
উফ!
.
শান্ত গাড়ী থামিয়ে চুপ করে আছে
আহানা মনে মনে ওকে গালি দিতে দিতে কার থেকে নামলো,ভাবলো শান্ত কার থেকে নেমে ওর জন্য ঝালমুড়ি এনে দিবে কিন্তু তা হলো কই,উল্টা সে এখন ঝালমুড়ি নিতে এসেছে,ঝালমুড়ি কিনে গাল ফুলিয়ে গাড়ীতে এসে বসলো আহানা
শান্ত আবারও কার স্টার্ট দিয়ে নিশ্চুপ ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে
আহানা সাউন্ড করে করে ঝালমুড়িটা খাচ্ছে
গাপুসগুপুস,গাপুসগুপুস!!
.
শান্তর মন চাচ্ছে আহানাকে কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে নিতে কিন্তু পারছে না সে
.
আহানা একটু খেয়ে শান্তর দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো”নিন”
.
শান্ত সামনে থাকা ইয়া বড় জ্যামের দিকে চেয়ে থেকে বললো”খাবো না”
.
খেতে তো দিই নাই,মরিচ বেছে ফেলে দেন,আমি ঝাল খেতে পারি না,আমার এপাশে অন্ধকার বলে মরিচ খুঁজে পাচ্ছি না,আপনার পাশে একটা বাসের থেকে আলো আসতেছে,সেই আলোয় দেখে দেখে মরিচ বেছে দেন
.
শান্ত শার্টের কয়েকটা বোতাম খুলে ঢিলা করে রাগটা সামলিয়ে আহানার দিকে চেয়ে বললো”আমি তোমার কি লাগি?”
.
ভাইয়া!
.
শান্তর রাগ এবার ১০তলা বিল্ডিংয়ের উপরে উঠে গেছে,বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে বললো”আর?”
.
শত্রু
.
আচ্ছা!
শান্ত আহানার হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে মরিচ বাছতে লাগলো
কারের ভিতরে লাইট দেওয়ার সিস্টেম আছে আর তা আহানাও জানে শান্ত ও জানে
শান্ত আগে থেকে রেগে আছে আরও রাগানোর জন্য আহানা ওকে কাজ দিলো
শান্ত কারের লাইট অন না করে চুপচাপ বাসের আলোয় মরিচ বাছতেছে দেখে আহানা ব্যাপারটা স্বাভাবিক ভাবেই নিলো কিন্তু তার ধারনার বাইরে শান্তর মেজাজ ঠিক কতটুকু বিগড়ে আছে
আহানা জানালা দিয়ে বাইরের একটা বিল্ডিংয়ের লাল নীল বাতি দেখতেছে
শান্ত গুনে গুনে ৬টুকরো মরিচ বাছলো ঝালমুড়ি থেকে তারপর মরিচের টুকরো গুলো ঝালমুড়ির উপরে সুন্দরমতন লেপে রাখলো যাতে প্রথমবার নিলেই সব মরিচ উঠে আসে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে আহানার দিকে চেয়ে রইলো কিছুক্ষণ ,আহানা দূরের বাতিগুলো দেখতে দেখতে বললো”হলো?এত সময় লাগান কেন?”
.
হলো!
.
আহানা শান্তর দিকে ফিরে ওর হাত থেকে ঝালমুড়ি নিয়ে চিমটি কেটে ঝালমুড়ি নিয়ে মুখে দিয়ে ১বার চিবালো তারপরই সে টের পেলো এটায় সব মরিচ পড়েছে,চোখ বড় করে ঝালমুড়ির দিকে না তাকিয়ে আহানা সোজা শান্তর দিকে তাকালো
শান্ত স্বাভাবিক ভাবেই জ্যমের দিকে তাকাচ্ছে আবার মাঝে মাঝে হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে
আহানা ওড়না দিয়ে নাক চোখ মুছতে মুছতে ঝালমুড়িটা জানালা দিয়ে ফেলে দিলো রাগ করে
বাচ্চাদের মত কেঁদেই যাচ্ছে সে
শান্ত হাসি থামিয়ে কারের ডেস্ক থেকে এক বোতল পানি নিয়ে এগিয়ে ধরলো আহানার দিকে
আহানা কাঁদতে কাঁদতে পানির বোতল নিয়ে পুরো হাফ লিটার পানি খেয়ে শেষ করে দিলো তারপর আবার নাক মুছতে লাগলো বসে বসে
এত মরিচ সে আগে কখনও খায়নি
.
আমার মন মেজাজ ভালো না থাকলে আমাকে ডিস্টার্ব করলে তোমার সাথে সবসময় এমনটাই হবে মিস আহানা ম্যাডাম
.
আহানা গাল ফুলিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসে আছে,চিৎকার করে চিল্লাইতে মন চাচ্ছে কিন্তু সেটা করা যাবে না,এখন কারের দুপাশেই যানবাহন,মানুষ ভাববে পাবনা থেকে পাগল রিলিজ করে বাসায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
এরে তো আমি বাসায় গিয়ে টাইট দিব,আমাকে মরিচ খাওয়ানো?তোকে আমি বোম্বাই মরিচ খাওয়াবো মনে রাখিস
.
জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে,শান্ত কার স্টার্ট দিতে দিতে বললো”আমার কিন্তু মরিচ ভাল্লাগে”
.
আহানা জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে শান্তর দিকে চেয়ে মনে মনে ভাবলো”মনেও এখন আর প্ল্যানের ব্যাপারে ডিসকাস করা যাবে না যা বুঝলাম”
.
হুম ঠিক বুঝছো!অন্য কিছু ট্রাই করতে পারো,যেমন আমি অনেক কিছুই খাই না
রিপার থেকে জেনে নিয়ে কাজে লেগে যেতে পারো
.
আহানা আবারও নাক মুছে বললো”আপনাকে আমি মাটিও খাওয়াবো মাটির তলের পানিও খাওয়াবো,মনে রাইখেন!
.
জি আপু মনে রাখবো
.
আহানা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সামনে তাকালো,”আপু তোর কণা!আমি তো তোর ক্রাইম পার্টনার লাগি”
.
ইয়া রাইট!আমার একমাত্র ক্রাইম পার্টনার,যে আমার বিরুদ্ধে কাজ করে সবসময়”
.
বিশ্বাস করেন আপনার মতো বস থাকলে আর শত্রুর প্রয়োজন হবে না
.
প্রয়োজন নেই তো!আমি তো সিরিয়াসলি তোমার শত্রু,আমি তো পারি না তোমাকে রতনের সাথে বিয়ে দিয়ে দিই
.
আর আমার তো ইচ্ছা করে আপনাকে কণার সাথে বিয়ে দিয়ে দিতে
বাট কণা আপু আপনাকে আমার মতন জ্বালাতে পারবে না বলে বিষয়টা আই মিন মনোভাবটা শীতলক্ষ্যা নদীতে ফালায় আসছি আমি
নাহলে কবেই শত্রুতার খাতিরে আপনার গলায় কণা আপুকে ঝুলায় দিতাম আমি
.
exactly!!আমিও তোমাকে রতনের বউ বানাতাম বাট কি জানো রতন তোমার থেকে শারীরিক চাহিদা নেওয়া ছাড়া আর কিছুই চায় না বাট আমি তো তোমাকে সকাল থেকে শুরু করে রাত শেষ হওয়া পর্যন্ত জ্বালাবো যেটা বস্তির সেই রতন পারবে না
.
এক মিনিট!আপনাকে কে বিয়ে করবে?
.
২মিনিট!তোমাকে কে বিয়ে করবে?
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
বাসায় আসতেই আহানা ডাইনিংয়ে বসে গেলো খাওয়ার জন্য আর অন্যদিকে তার নজর নেই
শান্ত নিজের রুমে চলে গেছে,আহানা ভাত আর ডাল দিয়েই খাবার শেষ করে ফেললো
রিপা মাংসের বাটি আনতে আনতে সে খাওয়া শেষ করে উঠে চলেও গেছে
এত খিধা লেগেছিলো যা বলার বাইরে
শান্ত ফ্রেশ হয়ে একটা ছোট বিয়ারের বোতল নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে
এতদিনের ব্যস্ততায় ভালোমতন খাওয়াই হয় নাই
ঢক ঢক করে ২চুমুক দিয়ে এদিকে ওদিকে একবার চেয়ে নিলো,আহানা বা নিতু দেখে ফেললে বিপদ
ওদের কাউকে না দেখে শান্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বিন ব্যাগে বসলো পা টা বারান্দার গ্রিলে উঠিয়ে
লাউডলি গান চালিয়ে চোখটা বন্ধ করে একটু চিল হতে চাইছে শান্ত
আহানা চাদর টেনে পাশের রুমে শুয়েছে একটু,কিন্তু তীব্র গানের আওয়াজে লাফ দিয়ে উঠে বসে এদিক ওদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো গানের আওয়াজটা শান্তর রুম থেকে আসতেছে
বালিশ মাথায় দিয়ে আবারও শুয়ে পড়লো সে
কিন্তু নাহহ আওয়াজ মনে হয় কমতেছেই না বরং বাড়তেছে
এদিকে শান্তর মা বই পড়ছেন কোনো মানাও করছেন না তিনি
আর আমার নিজের মা তো রিপার সাথে রান্নাঘরে কি যেন কাজ করছে
শয়তানটা আমাকেই জ্বালায় খায় সবসময়
আহানা বিছানা থেকে নেমে ওড়না গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো,সোজা শান্তর রুমে এসে দেখলো শান্ত বিনব্যাগে আধশোয়া অবস্থায় কি যেন খাচ্ছে
আহানা নক না করেই হনহনিয়ে ভিতরে ঢুকে গেলো,বারান্দার কাছে এসেই থেমে গেলো সে
শান্ত এটা কি খাচ্ছে ভালো করে দেখে আর গন্ধ শুঁকেই বুঝতে পারলো এটা মদ
আহানা আরেকটু এগিয়ে আসতেই শান্তর নজরে পড়লো সে
শান্ত কিছুটা ভয় পেয়ে বোতলটা লুকিয়ে ফেললো তারপর হাত দিয়ে থুতনি আর মুখ মুছে উঠিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সে
.
আপনি কি খাচ্ছিলেন ওটা?
.
কারোর রুমে ঢুকতে হলে নক করে ঢুকতে হয় এই টুকু কমনসেন্স নেই তোমার?
.
আগে এটা বলুন! কি খাচ্ছিলেন
.
পাইনএপেল জুস,শুনছো?এবার বের হও আমার রুম থেকে,এখন তো মনে হচ্ছে রুম লক করে রাখতে হবে সবসময়
.
আপনি এত জোরে গান বাজাচ্ছিলেন কেন?আমি একটু ঘুমোতে চাইলাম তা আর পারলাম না আপনার কারণে
আর আপনি কিনা এখানে বসে মদ খাচ্ছিলেন?আমি আনারসের জুস চিনি না তাই না?এখনই আন্টিকে বলে দিচ্ছি আমি
.
আহানা সোজা বাইরের দিকে ছুটতেই শান্ত ওর হাত খিঁচে টান দিয়ে আবারও আগের জায়গায় নিয়ে আসলো
.
আপনাকে না বললাম আমাকে ছুঁবেন না
.
সবসময় এরকম করো কেন যখনই আমি তোমাকে ধরি
আমি কি তোমাকে বিয়ে করবো নাকি?
হাত ধরা নরমাল ব্যাপার তুমি সবসময় নেগেটিভলি নাও কেন?
বাই দ্যা ওয়ে! কি বলবা মাকে?
.
বলবো আপনি লুকিয়ে মদ গাঁজা এসব খান
.
এটা জুস,ওকে?
.
তাহলে দিন আমি খেয়ে দেখবো
.
নাহহহহ!
.
কেন না?জুসই যদি হয় তাহলে আমি খেয়ে দেখলে কি সমস্যা?
.
সমস্যা আছে,ইয়ে আসলে আমি মুখ লাগাই খাইছি,আমার থুথু ভিতরে চলে গেছে,তুমি সেটা খাবা?
.
ইয়াকককক!জীবনেও খাবো না,আপনার মতো খাচ্ছর আর দুটো দেখিনি আমি,হাত ছাড়ুন আমার
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানার কোমড়ে হাত চেপে ওকে আরও কাছে নিয়ে আসলো
.
কি ব্যাপার?আমি বুঝতে পারতেছি আপনি মদ খেয়েছেন,কেমন নেশাখোরের মতন বিহেভ করতেছেন,ছাড়ুন আমাকে তা না হলে আমি চিৎকার!!
(না সেটা কেমনে করবো এত জোরে গান বাজতেছে)
হাত ছাড়ুন আমার
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বললো”আমার মুখ লাগানো বোতলটা থেকে জুস খাবা?”
.
ইচচচচ!ছাড়ুন জীবনেও খাবো না আমি
খবিশ!ছাড়ুন
.
আহানা অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে এসে দরজা লাগালো,হাঁপাতে হাঁপাতে টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে খেয়ে বিছানায় পা তুলে বসে পড়লো সে
শান্তর মতন ডেঞ্জারাস ছেলে আর দুটো দেখেনি সে,একসময় এক রুপ ধারণ করে লোকটা
কখনও গুন্ডা,তো কখনও দাদাগিরি,কখনও বলদা
.
শান্ত মদের বোতলটা শেষ করে লুকিয়ে ফেলে মাউথ ওয়াস নিয়ে কুলি করতে চলে গেছে ওয়াসরুমে
.
আহানা লুকিয়ে এতক্ষণ শান্তর গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখছিলো,ওর নামে বিরাট বড় একটা বিচার সে শান্তি আন্টিকে দিবে তাই তার জন্য প্রমাণ লাগবে
এরকম লুকিয়ে খাচ্ছিলো তার মানে নিশ্চয় আন্টি জানলে কেলাবে
হিহি,বাবু তোমাকে আমি কেলানি খাওয়াবো,তোমার একটা মাত্র শত্রু আমি
আহানা পা টিপে টিপে শান্তর রুমে ঢুকলো,শান্ত এখন ওয়াসরুমে
আহানা পুরো রুমে তন্নতন্ন করে খুঁজেও একটা বোতল পেলো না,কোন সিন্ধুকে লুকিয়েছে কচু পাচ্ছিইই না ধুর ধুর!
আচ্ছা গন্ধ শুঁকে তো খোঁজা যায়?
আহানা ফ্লোরে শুয়ে শুয়ে গন্ধটা ধরে ধরে বোতল পর্যন্ত পৌঁছে গেলো,একেবারে আলমারির উপরে রেখেছে,এত বড় আলমারি আমি তো নাগাল পাবো না
কি করবো এখন!এদিকে শয়তানটার বের হওয়ার সময় হয়ে গেছে
আমি বরং গভীর রাতে আসবো এখন যাই
আহানা পালালো সেখান থেকে
.
রাত ১টা বাজে ৮মিনিট
আহানা কোমড়ে ওড়না বেঁধে তার রুম থেকে বেরিয়েছে,মা গভীর নিদ্রায়,নিতুও ঘুমাচ্ছে,শান্তি আন্টিও ঘুমাচ্ছেন তার রুমে
রাস্তা ফাঁকা মানে করিডোর ফাঁকা
আহানা এবার শান্তর রুমের কাছে এসে আল্লাহর নাম নিয়ে দরজায় টোকা দিলো কারণ শান্ত বেশির ভাগ সময় দরজা আটকে রাখে
তো ভাগ্যবশত দরজাটা খোলাই আছে
আহানা তো আল্লাহকে থ্যাংক ইউ দিয়ে ভিতরে ঢুকলো
মাটির তলের গুহাকেও হার মানাবে এই রুমের অন্ধকারের পরিমাণ
গায়ে কিছুক্ষণ বাদে বাদেই ঠাণ্ডা হাওয়া এসে লাগতেছে
এসির হাওয়া,এই হাওয়া গায়ে এমন কাঁটা দেয় মনে হয় এই বুঝি ধরা পড়ে গেলাম,শীতের পরিমান বেড়ে গেছে
ওমাগো!
আহানা অন্ধকারে কিছুই দেখছে না, আসলেই সে ঠিক কোনদিকে যাচ্ছে এখন
একটু বাতির আলো ও নেই,এমন জানলে টর্চ নিয়ে আসতো সাথে করে
নিচে বসে ফ্লোর ধরে ধরে সে আলমারির দিকে না গিয়ে সোজা বেডের দিকে গেলো অন্ধকারে,বেড ধরে বুঝলো এটা বেড
তাই ওদিকে ঘুরে যেতে নিতেই দামমমম করে একটা হাত এসে আহানার ঘাড়ের উপর পড়লো
শান্ত ঘুমের ঘোরে হাত নাড়াতেই সেটা আহানার গায়ে গিয়ে পড়েছে
আহানা তো ভয়ে মনে হয় মরেই যাবে,ভাবছে শান্ত বুঝি জেগে গেছে কিন্তু না জাগে নি
শান্তির একটা নিশ্বাস ফেলে সে কিছুদূর এগোতে নিতেও পারলো না,কারণ শান্ত আহানার ঘাড়ের উপরের জামার হাতাটা মুঠো করে ধরে রেখেছে
আহানা এবার কি করবে,ঘুমের ঘোরে শান্ত এত শক্ত করে আহানার জামা ধরেছে মনে হয় চোর ধরেছে
আহানা কাঁপা কাঁপা হাতটা উপরে উঠিয়ে শান্তর হাতটা ধরলো তারপর আস্তে আস্তে সেটা ঘাড় থেকে সরালো
তারপর কপালের ঘাম মুছে আবারও একটু এগোতেই কেউ একজন ওর গলার সামনে দিয়ে হাত নিয়ে চেপে ধরে পিছন দিকে এক টান দিয়ে নিয়ে গেলো
আহানা চিৎকার করা ধরতেই শান্ত তার আরেক হাত দিয়ে আহানার মুখও চেপে ধরলো,আহানা চুপ হতেই ল্যাম্পশ্যাডটা অন করলো সে
আহানা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সামনে আয়নার দিকে তাকালো,আয়নায় স্পষ্ট শান্তকে দেখতে পাচ্ছে সে
শান্ত জেগে গিয়ে আহানাকে ভালো করে ধরেছে
যাকে বলে হাতেনাতে ধরা
আহানা কাঁপতে কাঁপতে বললো” ইয়ে আসলে ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে এদিকে চলে আসলাম, এই আর কি!
অন্য কিছু না সত্যি”
.
শান্ত আহানাকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরালো
আহানা এত এত ভয় পেয়েছে মনে হয় এখনই কেঁদে দিবে
শান্ত সবেমাত্র ঘুমিয়েছিলো আর আহানা কিনা এই কান্ড করলো
.
তুমি ঘুমের ঘোরে হাঁটতেছিলো?
.
হুম হুম সত্যি
.
তাহলে ওড়না এমন করে বেঁধেছো কেন মনে হচ্ছে কোনো যুদ্ধে যাচ্ছো!
.
ইয়ে আমি স্বপ্নে দেখছিলাম যে আমি বাহুবলির যুদ্ধে আছি তাই বাঁধলাম মনে হয়
.
আচ্ছা,তো হামাগুড়ি দিয়ে আমার বিছনার পাশ দিয়ে কই যাচ্ছিলে?আর আমার হাতই বা ধরলে কেন?
.
আরে আপনি আমার ঘাড়ের উপর জামা টেনে ধরছিলেন ওদিকে যেতে আমার সমস্যা হচ্ছিলো তাই
(ইস কি বলে ফেললাম)
.
আচ্ছা তাই??ওদিকে যেতে প্রব হচ্ছিলো বুঝি?তা কি করে বুঝলে?তুমি তো ঘুমের ঘোরে ছিলে তাই না?
.
না মানে,হাত ছাড়ুন আমি যাই ঘুমাতে
.
না না,তা হচ্ছে না,চোরের মতো আমার রুমে তুমি এত রাতে কি করতে এসেছিলা তার সম্পূর্ণ তথ্য তো আমাকে বের করতে হবে
.
বললাম তো ঘুমের ঘোরে আসছিলাম
.
তোমাকে আমি হারে হারে চিনি,কি কুবুদ্ধি নিয়ে আসছো বলো নাহলে আজ রাত তোমাকে আমার রুমেই কাটাতে হবে
.
শান্ত আহানার হাত ছেড়ে নিজের রুমের দরজা লক করে আসলো
তারপর দেয়ালে হেলান দিয়ে বললো”বলো”
.
আহানা টেবিলের উপর থেকে পানি নিয়ে খেয়ে ধপ করে বিছানায় বসে গেলো,ওড়না দিয়ে গলার আর কপালের ঘাম মুছে বললো”আমি সত্যি ঘুমের ঘোরে এসেছিলাম”
.
শান্ত এক ধমক দিয়ে বললো”চুপ!!!অনেক মিথ্যা হইছে,তোমার যে ঘুমের ঘোরে হাঁটার রোগ নাই তা জানা আছে আমার,খালি খালি মিছা বলে লাভ নাই বুঝছো??
.
আহানা অনেক ভাবলো,এখন সত্যি বললে শান্ত ওকে কাঁচা গিলে খাবে,তাই ভালো মেয়ের মতন বিছানায় শুয়ে চাদর টেনে মুখ ঢাকলো সে
.
আরে আরে এসব কি?তোমাকে আমার বিছানায় শুতে বলছি আমি?উঠো
.
উহু!ঘুম পাচ্ছে,ঘুমাতে দেন
.
শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছো তুমি,তা হবে না,উঠো!!
শান্ত আহানাকে জোর করে ধরে বসিয়ে দিলো
.
আহানা এবার কি করবে সেটাই ভাবতেছে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে
.
ঠিক আছে যাও নিজের রুমে,তাও আমার রুমে ঘুমাবা না,যাও
.
আহানা সাথে সাথে বিছানা থেকে নেমে এক দৌড় দিলো,এক বাঁচা বাঁচলাম আমি,আর এ ভুল হবে না
.
শান্ত তার রুমের দরজা ভালো করে লাগিয়ে এসে শুয়ে পড়েছে আবার
.
এত বড় চান্সটা গেলো আমার,কোথায় ভাবলাম আন্টিকে দিয়ে কেলানি দিব তা আর হলো কই,উল্টো আমি ফেঁসে যাচ্ছিলাম একটুর জন্য
আহানা নিজেকে বকতে বকতে রুমে এসে শুয়ে পড়লো
কাল থেকে আর কোনো টিউশনি করাবো না,যে বেতন আসবে অফিস থেকে সেটা দিয়েই হয়ে যাবে,এত ঝামেলা বহন করতে পারবো না,এমনিতেও শয়তানটার অফিসে এত এত কাজ বাপরে বাপ

পরেরদিন ভোরবেলায় চোখ খুলে আহানা আবারও শান্তর রুমের সামনে এসে হাজির,ভেবেছিলো শান্ত এখন ঘুমে থাকবে এখনই কাজটা সেরে ফেলবে কিন্তু শান্ত তো ঠিকই ঘুমাচ্ছে কথা হলো গিয়ে শান্তর রুমের দরজা বন্ধ,শান্তর সাথেই অফিস যেতে হবে আবার ফিরার সময় তার সাথেই ফিরতে হবে তাহলে কাজটা করবো তো করবো কখন!??
আহানা মন খারাপ করে গন্ধরাজফুলের বাগানটার সামনে হাঁটা হাঁটি করছে,একটা ফুল কানে দিয়ে বাসার ছাদের দিকে একবার তাকালো সে
তারপর আবারও ঘাসের দিকে চোখ রাখতেই মাথায় ঘুরপাক খেলো এক্সিলেন্ট একটা আইডিয়া
আর সেটা হলো শান্তর রুমের বারান্দা!!
আহানা এক দৌড়ে সূর্যমুখীর বাগানটায় এসে হাজির
শান্তর রুমের বারান্দাটা একটু অদ্ভুত!নিচে দিয়ে ওয়াল,তার উপরে ২বিঘে গ্রিল,তারপর উপরে খোলা ছাদ পর্যন্ত
তো আহানা ওখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো কি করে সে এই গ্রিল টপকে ভিতরে যাবে,যা করার এখনই করতে হবে,এখন বাজে ভোর সাড়ে ৫টা,শান্ত ৮টা ছাড়া জাগবে না যতদূর জানি
এ সময়ের মাঝে আমাকে কাজটা সেরে ফেলতে হবে
আহানা বারান্দার কাছা কাছি এসে গ্রিল ধরে ঝুলে রুমটার ভিতরে তাকালো
শান্ত উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে,নির্ঘাত ঘুমাচ্ছে,জেগে থাকার চান্সই নাই এখন
আহানা এবার গ্রিল ধরে বাঁদরের মত ঝুলতে ঝুলতে ৪বার চেষ্টা করলো তাও ভিতরে ঢুকতে পারলো না,তারপর বাসায় এসে একটা মোড়া নিয়ে আবারও সেই জায়গায় উপস্থিত হলো সে
মোড়ায় পা রেখে সুন্দরমত গ্রিল টপকে ভিতরে চলে গেলো আহানা
এখন হয়ে গেলো এক সমস্যা
গ্রিলেগুলো যে প্রান্তে শেষ হয়েছে ঠিক সেই প্রান্তে একটা এ্যারো আকৃতির মশাল বানানো লোহার
আহানার ওড়না সেটাতে গেঁথে গেছে ভালোমতন
আহানা বারান্দায় নেমে সামনে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ওড়না টান খেয়ে দুম করে নিচে পড়ে গেলো সে
তারপর পিছনে তাকিয়ে দেখলো ওড়না আটকে গেছে
ওড়না অনেক টেনেও খুলতে না পেরে ওড়না ছাড়ায় হাঁটা ধরলো সে
এবার হলো ২য় বিপদ
আর সেটা হলো শান্ত বিছানায় নেই
আল্লাহ গো!!
আমার এখন কি হবে
ওয়াসরুমের আলো জ্বলতেছে তার মানে শান্ত সেখানে
আহানা কি করবে কোথায় যাবে ভেবে না পেয়ে বারান্দার দিকে দৌড় দিলো ফের
.
দাঁড়াও!
.
ইহ রে কেলো করেছে
.
আহানা ঢোক গিলে দাঁড়িয়ে পড়লো আর পিছনে তাকালো না
আল্লাহর নাম নিয়ে এক দৌড় মেরে দিলো
গ্রিলে পা রেখে নিচে লাফ দিতে নিতেই শান্ত দৌড়ে এসে ওর কোমড় জড়িয়ে ধরে ভিতরে নিয়ে আসলো
.
পালাও কই??আমি তোমাকে এমনি এমনি যাইতে দিব?
.
শান্ত আহানাকে ফ্লোরে বসিয়ে দিলো
আহানা চোরের মতো মুখ করে হাত নিয়ে গ্রিলে আটকে থাকা তার ওড়নাটা ছুটাচ্ছে
শান্ত কোমড়ে হাত দিয়ে আহানাকে দেখে যাচ্ছে
.
এবার বলো এখনও কি ঘুমের ঘোরে আমার বারান্দার গ্রিল টপকে এসেছো নাকি সজ্ঞানে এসেছো?
.
না মানে আমি আসলে
.
চুপ!!তোমার মতো মেয়ে আমি আর দুটো দেখিনি,এত সাহস তোমার কই থেকে আসে?আমার রুম থেকে কি চাই তোমার?সোজা সাপ্টা বলে দিলেই পারো আমিও দিয়ে দিব
এরকম চোরের মতন আসার কি দরকার?
.
আপনি যে মদ খান সেটার সেম্পল একটা দিলেই হবে
.
ওওওওওওও আই সি!!তাহলে এটা হলো কথা!তোমার মদের একটা বোতল লাগবে যেটা নিয়ে মাকে দেখাবে তাই তো?
.
না মানে হ্যাঁ,না না,এমনি দেখবো একটু
.
একটা শর্তে
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_২৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
কি শর্ত?
.
রিয়াজের বিয়ের সব অনুষ্ঠানে আমার সাথে এটেন্ড করতে হবে তোমাকে এজ মাই ওয়াইফ
.
এহহহহ,শখ কত,পারবো না আমি
.
শান্ত নিচু হয়ে আহানার নাক বরাবর মুখটা লাগিয়ে বললো”তাহলে তোমার কপালে শনির দশা আছে মিস আহানা”
.
আহানা একটু পিছিয়ে গিয়ে বললো”আচ্ছা যাব তবে আমারও একটা শর্ত আছে”
.
কি?
.
আমাকে ছুঁবেন না একদম
.
সেটাতে ওকে বলতে হলে এখন এই মূহুর্তে তোমাকে আমি মদের বোতলের সেম্পলটা দিব না,ভেবে উত্তর দাও
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে ৩মিনিট ধরে ভাবলো তারপর বললো”ঠিক আছে”
.
ওকে তাহলে আর তোমাকে ছুঁবো না
.
হুমম এখন সরুন আমি আমার ওড়না নিব
.
শান্ত গাল ভেটকিয়ে রুমের দিকে চলে গেলো
আহানা ওড়না ছুটিয়ে আবারও গ্রিল টপকে নামতেছে
.
এই তোমার কি মিনিমাম কমনসেন্স ও নাই??আমার সাথে তোমার কথা দুই এ দুই এক হয়ে গেছে তাহলে এরপরেও তুমি চোরের মতন গ্রিল টপকে যাচ্ছো কেন?
.
ও হ্যাঁ তাই তো
.
আহানা মাথা চুলকাতে চুলকাতে সোজা দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে
শান্ত বিছানায় হেলান দিয়ে বসে টিভি অন করলো,দারুন একটা শো দেখাচ্ছে,শো টার নাম হলো”আজকের সকাল”ঢাকার বিভিন্ন জায়গা লাইভ দেখাচ্ছে,শান্ত হাতে চিপসের প্যাকেট নিয়ে খেতে খেতে শো টা দেখছে
আহানা টেবিল থেকে আপেল একটা নিয়ে সোফায় বসে টিভি অন করে বসে কার্টুন দেখতেছে আরামসে
আর ২/৩দিন বাদেই রিয়াজের বিয়ের সব কাজ শুরু,প্রথমে গায়ে হলুদটাকেই ইম্পরট্যান্স দিচ্ছে শান্ত,নওশাদ আর সূর্য
কাল ব্যাচেলর পার্টি,শান্ত এই সকালবেলায় সময় পেয়েছে বলে আলমারি খুলে কাল কি পরে যাবে সেটা দেখতেছে
আহানা সোফায় ঘুমিয়ে গেছে টিভি দেখতে দেখতে,সকাল ৬টা বাজে তখন
হঠাৎ ল্যান্ডলাইনের ফোনটা বেজে উঠলো,আহানা ভয় পেয়ে জেগে গিয়ে এদিক ওদিক তাকালো,কেউ নেই তার মানে ফোনটা তাকেই ধরতে হবে
হ্যালো,কে?
.
আমি নওমি বলছি,শান্ত ভাইয়া আছে তাকে একটু দেওয়া যাবে?
.
নওমি আপু? মানে রিয়াজ ভাইয়ার বউ?
.
আহানা?
.
হুম
.
আরেহহহ দাঁড়াও দাঁড়াও,শান্ত ভাইয়াকে দিতে হবে না,আমি তো তোমাকেই খুঁজছিলাম,শান্ত ভাইয়াকে দিতে বলেছিলাম কারণ উনার থেকে তোমার নাম্বারটা নেওয়ার দরকার ছিল আমার,এখন তোমাকে পেয়ে গেলাম নাম্বার লাগবে না
.
কি হইছে?কোনো দরকার?
.
হ্যাঁ আসলে আমি জানতে পারলাম রিয়াজ,শান্ত ভাইয়া আর নওশাদ সূূর্য ভাইয়া তারা আরও কিছু ফ্রেন্ডরা মিলে গায়ে হলুদের আগের ব্যাচেলর পার্ট করবে
.
ওহ আচ্ছা তাই?
.
তো আমি আর আমার কাজিন,ফ্রেন্ডরা ভাবলাম তারা ছেলেরা বিয়ের আগে আবিয়াইত্তা পার্টি পালন করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না,সো আমরাও মেয়েদের একটা পার্টি করবো,কিটি পার্টি
তুমি ও আসবা,তোমাকে ডাকার জন্যই ফোন করলাম
.
আমি??কিন্তু!
.
আরে কোনো কিন্তু নয়,তুমি আমার ভালো ফ্রেন্ড হয়ে গেছো তার উপর শান্ত ভাইয়ার হবু ওয়াইফ তুমি,তোমাকে তো আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হয়,সুইমিং প্লাজায় চলে এসো কাল সন্ধ্যা ৬টায়
.
আহানা আর কিছু বলার সুযোগই পেলো না কারণ নওমি লাইন কেটে দিয়েছে,আহানা বোকার মতে বসে আছে
পার্টিতে যেতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু কথা হলো যদি কণাও আসে?সে তো নির্ঘাত আসবে,আর আমাকে একা পেলে মাথা চিবিয়ে খাবে,উফ কি করে বাঁচবো এখন
আহানা ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে গেলো চা বানাতে,মাথাটা ধরেছে,চা খেলে ঠিক হবে,এখন সকাল ৬টা ১৭বাজে
আহানা কি পরে যাবে ভাবতে ভাবতে চা বানাচ্ছে
.
শান্ত ঠিক করলো সে কাল ব্রাউন কালারের জ্যাকেট,ভিতরে কালো টিশার্ট পরে যাবে সাথে ডিপ ব্ল্যাক জিন্স,পারফেক্ট!
সেগুলো একসাইড করে রেখে শান্ত রান্নাঘরের দিকে চললো কফি বানাতে
আহানা চা বানিয়ে পিছন ফিরতেই শান্তর সাথে এক ধাক্কা খেলো
.
চোখ কোথায় রেখে হাঁটেন আপনি?
.
তুমি দেখে হাঁটতে পারো না?সবসময় আমার দোষ দেয় এই মেয়ে
.
সরুন তো
.
আমার জন্য কফি বানিয়ে দাও
.
ইহ মঘেরমুলুক পাইছে উনি
.
শান্ত আহানার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে নিলো ছোঁ মেরে
.
এটা কি ধরনের অসভ্যতামি?দিন আমার চায়ের কাপ
.
আগে কফি বানিয়ে দাও
.
আহানা শান্তকে গালি দিতে দিতে পানি গরম করতে চুলায় বসিয়ে শান্তর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে চলে গেলো
.
সকালের নাস্তা সেরে সেই দুজন মিলে একসাথে অফিসে ফিরেছে
আহানা ঠিক করলো সে শাড়ী পরে যাবে,যেহেতু তার ভালো কোনো জামা নাই তো শাড়ী একটা আছে তার কাছে যেটা শান্তর মা ওকে দিয়েছিলো কিছুদিন আগে,খয়েরী রঙের সেই শাড়ীটা
আজ কাজের এত চাপ যে অফিসে শান্ত আহানার তেমন একটা দেখা হয়নি,একেবারে সন্ধ্যাবেলায় বাসায় ফিরার সময় দেখা হয়েছে
.
পরেরদিন সকাল সকাল শান্ত আর আহানা দুজন মিলে রেডি হয়ে নিলো একেবারে অফিস থেকে পার্টিতে যাবে এই ভেবে
রুম থেকে বেরিয়ে দুজন দুজনকে দেখে তো রীতিমত অবাক
শান্ত অফিস কোট না পরে, পরে আছে জ্যাকেট -জিন্স
আর আহানা থ্রি পিস না পরে,পরে আছে শাড়ী
.
তুমি এরকম সেজেছো কেন?
.
আপনি এরকম সাজছেন কেন?
.
সেটা তোমার জানার বিষয় না,আগে বলো তুমি শাড়ী পরছো কেন?
.
আপনাকে কেন বলবো আমি?
.
শান্ত আর কিছু না বলে কারের দিকে হাঁটা ধরেছে,আহানার সাথে ঝগড়া করার মুড তার নাই
সন্ধ্যায় একটু চিল করবে সবাই মিলে আর এখন এই মেয়েটার সাথে ঝগড়া করে সন্ধার পার্টিটায় মুড খারাপ করতে চাই না আমি
আহানার মনে পড়লো নওমি আপু বলেছিলো যে আজ শান্ত আর রিয়াজ ভাইয়ারা মিলে ব্যাচেলর পার্টি করবে হয়ত তাই শান্ত এমন তৈরি হয়ে নিয়েছে আগে থেকে
অফিসে এসে আহানা নওমিকে ফোন করলো একবার
সেদিন নওমির থেকে মনে করে নাম্বারটা নিয়ে নিয়েছিলো সে
নওমি জানালো আজ ৬টায় আসতে
আহানা ফোনটা রেখে নিজের কাজে মন দিয়েছে
শান্ত নিজের রুমে এসে নওশাদকে ফোন করলো তারা বললো তারা আজ শান্তর অফিস ছুটি হলে ওকে নিয়ে একসাথে পার্টিতে যাবে
শান্ত তাই অফিস রুম থেকে বেরিয়ে আহানার কাছে এসে বললো আহানা যেন আজ অফিসের কারে করে বাসায় ফেরে কারণ সে আজ এখান থেকে একটা কাজে যাবে,কি কাজে যাবে সেটা আর বললো না
আহানা মাথা নাড়ালো,তারপর মনে মনে অনেক খুশি হলো এই ভেবে যে শান্তকে কৈফিয়ত দিতে হবে না সে সন্ধ্যাবেলায় কই যাবে,এখন আর শান্ত জানবেও না
আহা কি মজা
সন্ধ্যা হয়ে গেছে আহানা চোরের মতন তাকিয়ে আছে শান্তর অফিস রুমের দিকে
উফ কখন যাবে!!ধুর ধুর,আমার তো দেরি হয়ে যাচ্ছে
শান্ত জ্যাকেটের চেইন খুলে আহানার কেবিনের সামনে নিয়ে চলে গেলো
আহানা সাথে সাথে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে
শান্ত চলে গেছে একদিকে আর আহানা আরেকদিকে
ইয়া বড় এক শপিং মল,এই শপিংমলটার ছাদে কিটি পার্ট হবে
আহানা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে মুখটা হাত দিয়ে মুছে ভিতরে গেলো শপিং মলটার
তারপর লিফটে ঢুকে মুখে হাসি ফুটালো সে,সারাদিনের কর্মব্যস্ততা থেকে বেরিয়ে এখন একটু রিল্যাক্স করা যাবে
ছাদে এসে আহানা তো রীতিমত অবাক,বিরাট আয়োজন এখানে
যাকে বলে এলাহি কান্ড
সবাই এখানে ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে এসেছে
আহানা এটা দেখে মন খারাপ করলো,তার একটা ভালো জামা থাকলে সেটা পরে আসতে পারতো সে,জামা না থাকায় এরকম একটা পার্টিতে শাড়ী পরে আসতে হইছে
.
আরে আহানা যে আসো আসো
.
আহানা মুচকি হেসে নওমির কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,নওমি হলুদ রঙের একটা ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরে আছে,সাথে কণা এসে দাঁড়াতেই আহানার মনে হয় কলিজায় কেউ খোঁচা দিছে
ভয়ে আহানার গলা শুকিয়ে গেছে
নওমি সবাইকে নিয়ে গোল হয়ে চেয়ার নিয়ে বসলো
তারপর বললো!”শুনো সবাই,আমাদের সবার উড বি/বিএফরা ব্যাচেলর পার্টিতে সো আমি আর কণা মিলে ঠিক করেছি আমরা তাদের ব্যাচেলর পার্টিতে গিয়ে তাদের ইয়া বড় সারপ্রাইজ দিব, ইয়ে!!”
.
আহানা চোখ বড় করে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়লো
.
কি ব্যাপার আহানা?খুশি হও নাই?সেখানে তো শান্ত ও আছে কিন্তু হুমমমম☺
.
না আমি বাসায় যাব,বাই
.
নওমি দৌড়ে এসে আহানাকে আটকালো
আহানা কোথায় যাও,এটা কিন্তু ঠিক না,তুমি বলেছিলে আমাদের সাথে পার্টিতে জয়েন হবে তাহলে এই পার্টি আর ঐ পার্টিতে কি সমস্যা,বরং আরও মজা হবে সেখানে
.
কণা হেসে হেসে বললো”নাকি তোমার হাসবেন্ডের কাছে যেতে লজ্জা করে?”
.
আহানা চুপ করে আছে,তারপর কণার কথার চাপে হ্যাঁ বলে দিলো সে
সবার সাথে শান্ত দের পার্টিতে এসে হাজির হলো অবশেষে
শান্ত মদ এই নিয়ে ৫গ্লাস খেয়েছে,কাজু বাদাম মুখে নিয়ে নওশাদের সাথে হাসাহাসি করতেছে সে
হঠাৎ অনেকজন মিলে বলে উঠলো “সারপ্রাইজ!!!”
শান্ত আর বাকিরা পিছনে তাকিয়ে তো চমকে গেলো সবাইকে দেখে
পুরো মেয়েদের গ্যাং হাজির এখানে
শান্ত আহানাকে এখনও দেখেনি কারণ সে সবার শেষে দাঁড়িয়েছে,সে দেখেছে শুধু কণাকে
শান্ত ঢোক গিলে জ্যাকেটের চেইন টেনে উপরে তুলে ফেললো
কণার একমাত্র দূর্বলতা হলো শান্তর বডি,আর তাই শান্ত সেটা ওকে দেখলেই লুকায়
.
কিগো পুরো ব্যাটেলিয়ন এখানে কি করে?তাও আমাদের ব্যাচেলর পার্টিতে
কথাটা বলে রিয়াজ মদের গ্লাসটা রেখে নেমে গিয়ে নওমির কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো ওরা সবাই এখানে কেন
নওমি বললো “সারপ্রাইজ”
যাই হোক রিয়াজ আর কি করবে ওদের নিয়েই পার্টিটা শুরু করলো
শান্ত নওশাদকে সামনে বসিয়ে নিজে কোণায় গিয়ে বসেছে,কণা নির্ঘাত জ্বালিয়ে খাবে এখন
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খুঁজতেছে
সবাই তাদের পার্টনারকে নিয়ে ব্যস্ত
আহানার ভয় করছে,এখানে কাউকে তেমন চিনে না সে
নওমি আপুকে চিনতো সে এখন রিয়াজের সাথে কোণায় গিয়ে বসেছে
বাকি রইলো নওশাদ আর সূর্য,ওদের খুঁজে পেলে নিশ্চয় শান্তকেও পাওয়া যাবে
এখানে তো শান্তই ভরসা,ওর কাছে থাকলে সেফটি ফিল হয়
আহানা এগোনোর জন্য পা বাড়াতেই একটা ছেলে ওর হাত ধরে ঘুরিয়ে ওকে আরেকদিকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলো
আহানা কপাল কুঁচকে বললো”আপনি!আপনাকে না বলছিলাম আমালে ছুঁবেন না!এরকম করে ধরলেন কেন,আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম”
ছেলেটার মুখে পার্টি মাস্ক থাকায় আর ঠোঁটটা একদম শান্তর মত হওয়ায় আহানা ভাবলো ছেলেটা শান্ত
কিন্তু শান্ত তো কণার ভয়ে নওশাদের পাশে লুকিয়ে অরেঞ্জ জুস খাচ্ছে,আবার হাতিয়ে টেবিলের উপর থেকে চিপস নিয়ে খাচ্ছে মাঝে মাঝে
কণা পাগলের মতো শান্তকে খুঁজতেছে
অবশেষে সে শান্তকে পেয়েও গেলো
শান্ত!!!
.
উফ কার মুখ দেখে আজ উঠেছিলাম
.
কণা শান্তর পাশে এসে বসে পড়েছে,তারপর শান্তর ঠোঁট আর গলার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো”দিন দিন এত কিউট কেন হচ্ছো শান্ত!আমি যে পাগল হয়ে যাবো”
.
রিয়াজ নওশাদের কানে ফিসফিসিয়ে বললো”এখন মনে হয় পাগল নয়,এখন তো পুরো পাগল,তাহলে আর কত পাগল হবে?”
সূর্য আর নওশাদ ফিক করে হেসে দিলো রিয়াজের কথায়
নওমি ওদের দিকে চোখ রাঙিয়ে বললো”মজা অফ দাও আমার বেস্টিকে নিয়ে,কত মানায় ওদের,আমি তো ভেবেছিলাম ওদের বিয়েতে অনেক অনেক মজা করবো কিন্তু শান্ত ভাইয়া কিনা আহানার সাথে এঙ্গেজমেন্ট করে নিলো!সব স্বপ্ন মাটি!
আরে আমি তো ভুলেই গেসিলাম,আহানাও তো এসেছে আমাদের সাথে,সে কোথায়?

.
কি হলো হাত ছাড়ুন!
.
ছেলেটা নিজের মুখ থেকে মাস্ক সরিয়ে ফেললো
ছেলেটার মুখ দেখে আহানার মনে হয় পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে,রতনের চেয়েও নিকৃষ্ট কোনো ছেলে যদি আহানা দেখে থাকে তা হলো এই ছেলেটা,এর চরিত্র কত খারাপ আহানা তা খুব ভালো করে জানে
ছেলেটা একটু পাগল প্রকৃতির
আহানা ১বছর আগে একটা মেয়েকে প্রাইভেট পড়াতো,তার নাম টিয়া,টিয়ার ভাই হলো এই ছেলেটা
নাম সাইমন
এই ছেলেটা আহানাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতো সবসময়,খারাপ নজরে তাকাতো আর তাই আহানা সেই প্রাইভেট ছেড়ে দেয়
এরপর আর ছেলেটা আহানাকে কোথাও খুঁজে পায়নি
তবে আজ ঠিকই পেয়ে গেলো
আহানা ভয়ে কিছুদূর পিছিয়ে গেছে
ছেলেটা হেসে বললো”এট লাস্ট তোমাকে খুঁজে পোলাম আমি,এরকম একটা জায়গায় পাবো সিরিয়াসলি ভাবিনি”
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তকে খুঁজলো
সাদা লাইট অফ করে লাল নীল বাতি জ্বালানো হয়েছে
আহানা এতক্ষণ যা নওমি,কণাকে দেখেছিলো এখন সেটাও দেখতেছে না এই আলোতে
ছেলেটা এগিয়ে এসে আহানার দুহাত ধরলো আবারও
.
আহানা!!চলো আমরা ইঞ্জয় করি
.
হাত ছাড়ুন আমার,বেয়াদবির স্বভাব আপনার এখনও যায়নি,অতিরিক্ত করতেছেন,হাত ছাড়ুন আমার নাহলে চিৎকার করে মানুষ ডাকবো
.
একটা ইংরেজী গান খুব জোরে বাজানো হচ্ছে
আহানা শান্তকে ২/৩বার ডাক দিলো,সাইমন আহানার হাত আরও শক্ত করে ধরে বললো”কে শান্ত?ওকে ডাকছো কেন?আমি তো তোমার সামনে,আমার দিকে তাকাও,আসো না প্লিস,এই সুন্দর মূহুর্ত আমরা ইঞ্জয় করবো,আসো না”
.
আহানা হাত মুছড়াতে মুছড়াতে ভাবলো আজ তার হাতে একটা চুড়িও নেই,কিছুই নেই,ব্যাগটাতে ফোন ছাড়া কিছু ছিলো না,ব্যাগটা ধরার সুযোগ ও পাচ্ছে না সে
এত এত মানুষের ভীড়ে একটা ছেলে ওর সাথে খারাপ বিহেভ করছে কিন্তু কেউ খেয়ালই করছে না
সাইমন আহানাকে টেনে নিয়ে গেলো সিঁড়ির দিকে
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে গুনে গুনে ৫/৬টা কেবিন
আহানা শান্তকে ডাকতে ডাকতে তার গলা ফেটে যাওয়ার মতন অবস্থা কিন্তু গানের তীব্র আওয়াজের কাছে তার এই চিৎকার কিছু না,সাইমনের সাথে পেরে উঠছে না সে
.
আজ আমি তোমার সাথে কিছু করলে তোমার মায়ের কিছু করার থাকবে না,তোমার তো কিছুই করার থাকবে না
তখন বাধ্য হয়ে আমাকেই বিয়ে করতে হবে তোমায়
.
আহানা কেঁদে দিয়েছে শান্তর কোনো সাড়া না পেয়ে,আজ বুঝি সে নিজেকে বাঁচাতে পারবে না
.
সাইমন আহানাকে কেবিন একটার দিকে নিয়ে যাচ্ছে টেনে হিঁচড়ে
আহানা হাতে প্রচণ্ড রকম ভাবে ব্যাথা পাচ্ছে,শান্তকে ডাকা অফ করে এখন সে শুধু বলতেছে তার হাত ছেড়ে দিতে
সাইমন আহানার হাত ছেড়ে ওর পিঠে হাত দিয়ে ওকে কাছে নিয়ে এসে বললো”ভাবতেও পারিনি আজ এখানে এসে এত বড় বোনাস পাবো,তোমাকে পাওয়া ছিলো আমার একটা জেদ,আর এতদিন পর সেই জেদ পূরণ হবে”
.
সাইমন আহানার চুলে হাত বুলিয়ে ওর কোমড় ছুঁতে নিতেই পিছন থেকে একটা হাত এসে ওর নাকে আঘাত করলো খুব জোরে
এত জোরে যে সে আহানাকে ছেড়ে দূরে থাকা রুমের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে পড়লো
আহানা সাথে সাথে পিছনে তাকিয়ে দেখলো শান্ত দাঁড়িয়ে আছে,শান্তকে দেখে আহানা কিছু না বলেই ওর বুকে গিয়ে মাথা লুকিয়ে ফেললো,ওকে শক্ত করে ধরে বললো”আমি আপনাকে ডেকেছিলাম শান্ত!অনেকবার ডেকেছিলাম”
.
শান্ত সাইমনের দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে,সাইমন পিঠে হাত বুলিয়ে ঠিক হয়ে দাঁড়ালো
আহানার কাঁপা কাঁপা হাতটা গিয়ে শান্তর জ্যাকেটটা শক্ত করে ধরেছে
শান্ত আঙ্গুল তুললো সাইমনের দিকে তারপর আহানাকে বুক থেকে সরিয়ে ওর হাত ধরে কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো
সোজা তার কারের কাছে এসে আহানাকে কারের ভিতর বসিয়ে গায়ের জ্যাকেটটা খুলে আহানার হাতে দিয়ে সে আবারও পার্টি সেন্টারটাতে ফেরত গেলো
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে