প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩০+৩১+৩২

0
2043

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩০
#Writer_Afnan_Lara
🌸
সাইমন ভিড়ের মাঝে আহানাকে আর শান্তকে খুঁজতেছে,রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে
শান্ত একটা খালি মদের বোতল হাতে নিয়ে হনহনিয়ে এসে সাইমনের সামনে দাঁড়ালো
মাথায় ফাটালে মরে যাবে পরে জেলের ভেজাল বইতে হবে
তাই শান্ত সাইমনের হাতেই ফাটালো এই হাত দিয়ে সে আহানাকে কষ্ট দিয়েছিলো
সাইমন চিৎকার করে নিচে বসে গেছে সাথেসাথে
একটা আহাজারি লেগে যাওয়ায় গান অফ হয়ে গেছে ততক্ষণে
লালা নীল বাতি বন্ধ হয়ে সাদা বাতি জ্বলে উঠেছে,সবাই অবাক হয়ে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,ওর চোখ মুখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে
শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে সাইমনের রক্তাক্ত হাতটা পা দিয়ে মাড়িয়ে ধরে বললো”আহানা আমার!শুধু আমার!তাকে ছোঁয়ার অধিকার আমি ছাড়া আর কারোর নেই,হাত কেটে রেখে দিব কেউ ওকে ছোঁয়ার চেষ্টা করলে,গট ইট??”
.
নওশাদ এগিয়ে এসে বললো”কি হয়েছে শান্ত?এনিথিং রং?
.
শান্ত কিছু বলছে না,সাইমনের হাতে আরেকটা চাপ দিয়ে তারপর চলে যেতে নিতেই সাইমন বলে উঠলো “দাঁড়ান মিঃশান্ত”
.
শান্ত থেমে গিয়ে সাইমনের দিকে তাকালো,সাইমন তার পকেট থেকে রুমাল নিয়ে হাতে বাঁধতে বাঁধতে বললো”আপনি তো সেই শান্ত না?? যে “শান্তি গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের” মালিক?”
একজন বলে উঠলো “হুম”
সাইমন দাঁত কেলিয়ে বললো”তা আপনার জন্য কি মেয়ের অভাব পড়েছে নাকি?আপনার ভক্ত/ফলোয়ার তো কম না,ডেইলি শতে শতে মেয়েরা আপনাকে নিয়ে ক্রাশ পোস্ট করে,আপনার গানে কত মেয়ে মুগ্ধ আর সেই আপনি কিনা বেছে বেছে বস্তির একটা মেয়ের জন্য এত নিচে নামছেন??আহানার ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু জানেন?তার বাড়িতে গেছেন কখনও?ওর তো বাপই নেই”
.
শান্ত টেবিল থেকে কাঁচের গ্লাস নিয়ে সাইমনের মাথায় ছুড়লো এবার,চিৎকার করে বললো”তোর মাথায় ফাটানো উচিত ছিলো সবার আগে তা করতে দেরি করায় এখন তোর মুখ দিয়ে এত চিপ কত বের হলো!
আহানা আমার রিলেটিভ হয়,আর আমার রিলেটিভদের স্টেটাস আমাকে বুঝাতে হবে না! তারা এমনিতেই হাই লেভেলের,তোর থেকেও!
আহানার বাবা আর আমার বাবা একসাথে কার এক্সিডেন্টে মারা গেছেন,আমাকে বুঝাতে হবে না আহানার বাবা আছে কি নাই
আহানাকে এই টুকুন থেকে আমি চিনি,ওর চরিত্র নিয়ে আমাকে কারোর সার্টিফিকেট দিতে হবে না
ও হাসলেও সেই হাসির কারণ আমার জানা থাকে,ওর এ টু জেট সবটা আমি জানি,ওর ব্যাপারে কেউ একটা কথাও বলবে না,মাথা কেটে হাতে ধরিয়ে দিব তাহলে
.
সাইমন মাথায় হাত বুলিয়ে জোরে জোরে হেসে দিলো তারপর বললো”তোমাদের তো বিয়ে হইনি তাই না??আহানা কি করে তোমার হয় সেটাও আমি দেখবো!!কালকেই সে আমার হয়ে যাবে,ইউ জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!আহানাকে বিয়ে না করলেও ওকে সবার আগে আমিই টাচ করবো,আমার কথা নোট করে রাখো মিঃ শান্ত!তখন তোমার কিছু করার থাকবে না,তখন ওকে বিয়ে করতেও তোমার ঘৃনা হবে!”
.
শান্ত কণার দিকে তাকালো এবার তারপর গলার স্বরটা হালকা করে নওশাদ আর রিয়াজ সূর্যর দিকে তাকিয়ে বললো”রুপাকে নিয়ে মইনুদ্দিন আঙ্কেলের বাসায় আসো তোমরা ১ঘন্টার ভিতরে
সাথে করে ফুলের মালা আর মিষ্টি ও নিয়ে আসবে,রুপাকে বলবে সাথে করে আহানার আইডিকার্ড নতুবা জন্মনিবন্ধন অথবা এসএসসির সার্টিফিকেটটা নিয়ে আসতে,পাসপোর্ট সাইজের ছবিও ম্যানেজ করতে বলবা এই এক ঘন্টার ভিতরে,ওকে?
কথাটা বলে শান্ত বেরিয়ে পড়লো
আহানা কারের ফ্রন্ট সিটে পা তুলে গুটিশুটি দিয়ে বসে আছে শান্তর জ্যাকেটটা মুঠো করে ধরে
চোখ তার সামনের দিকে,অন্য কোথাও তাকাচ্ছে না সে
শান্ত এসে কারের দরজা খুলে বসে কার স্টার্ট করলো
আহানা পা নিচে নামাতে যেতেই শান্ত বললো”যেভাবে কমপোর্ট ফিল করো সেভাবে বসো”
.
আহানা পা আর নিচে নামালো না,চুপ করে শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে সে
শান্ত স্পিড বাড়িয়ে কার চালাচ্ছে,রাত ৮টা বাজে তখন
চারিদিকে বাতি আর বাতি, নিরিবিলি রোড দিয়ে তারা যাচ্ছে,ঢাকার বাইরে,জ্যাম তেমন একটা নেই,২/৩মিনিট অস্থায়ী জ্যাম লাগে মাঝে মাঝে
আহানার মুখ দিয়ে কথা আসতেছে না,কি দিয়ে শুরু করবে ভাবতে পারছে না সে
শেষে মুখ ফুটে বললো”আমি এখানে আসতে চাইনি,নওমি আপু অনেক করে বললো,তারপর এখানে এসে আমি আপনাকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পেলাম না,তারপর এই লোকটা এসে গেলো ততক্ষণে
আমি বুঝি না সবাই কেন মেয়েদের সাথে জোরজবরদস্তি করতে চায়
শান্ত আহানার এই কথাটায় আহানার দিকে তাকালো তারপর আবারও রোডের দিকে চোখ রেখে বললো”তবে আজ আমি তোমার সাথে জোরজবরদস্তি করবো”
.
আহানার মুখটা এমনিতেও ছোট হয়ে ছিলো শান্তর এমন কথায় সে নড়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে আছে এখন
.
শান্ত একটা বাড়ির সামনে এসে কার থামিয়ে জানালা দিয়ে মাথা বের করে বললো”রফিক!আমি শান্ত”
.
রফিক হচ্ছে এই বাড়ির দারোয়ান,সে শান্তকে দেখে গেট খুলে দিলো
আহানার মনে হচ্ছে কিছু একটা হতে চলেছে যেটা হওয়া উচিত না,কিন্তু সে বুঝতেছে না ঠিক কি হতে যাচ্ছে
শান্ত কারটা বাড়ির সামনে থামিয়ে কার থেকে নেমে ঘুরে এসে দরজা খুলে আহানার হাত ধরে ওকেও বের করে আনলো
.
আআআআপনি কি করবেন এএএএখন?
.
শান্ত কিছু না বলে আহানাকে নিয়ে বাড়িটার ভিতরে চলে আসলো,একজন বয়স্ক লোক সোফায় বসে কাগজপত্র নিয়ে লেখালেখি করতেছেন
শান্তকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে বললেন”আরে শান্ত যে,এ সময়ে কি মনে করে?”
.
শান্ত আহানাকে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিলো জোর করে তারপর বললো”আঙ্কেল আমি এরে এখন এই মূহুর্তে কাগজে কলমে বিয়ে করতে চাই,আপনি সব বন্দবস্ত করুন”
.
আহানা চোখ বড় করে শান্তর দিকে তাকালো তারপর সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো”আপনি এসব কি বলতেছেন?”
.
আঙ্কেল আমার হাতে সময় নেই জলদি করুন
.
কিন্তু শান্ত কিছুই তো বুঝতেছি না,এসব কি বলছো?এ সময়ে বিয়ে??আর কাগজে কলমে বিয়ে করতে হলে তো তোমার আর ওর আইডিকার্ড/জন্মনিবন্ধন কপি এসব লাগবে,বললেই তো আমি জলদি করতে পারবো না
.
আমার সব কিছু পকেটে আছে আর আহানার কাগজপত্র রুপা নিয়ে আসতেছে ওর মায়ের কাছ থেকে
.
আপনি আমার দিকে তাকান,এসব কি বলতেছেন আপনি?বিয়ে মানে?
হঠাৎ করে এসব কি শুরু করছেন আপনি?আমি আপনাকে বিয়ে করবো না কিছুতেই,আপনি আমার সাথে এ বিষয় নিয়ে কিছুতেই জোর করতে পারেন না,আমি এখনই মাকে ফোন করতেছি
আহানা তার সাইড ব্যাগ থেকে ফোন নিতে যেতেই শান্ত ছোঁ মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো ওর থেকে
স্বাভাবিক ভাবেই বললো “উনি আমার সম্পর্কে আঙ্কেল হয়,উনার সামনে সিনক্রিয়েট করবা না,চুপচাপ সোফায় বসে থাকো
.
কিন্তু শান্ত,তোমার মা?উনি কি জানেন এসব?
.
জানে না,তবে জানবে,আজ এখন এ মূহুর্তে আমার এসব করা জরুরি,আপনি কাইন্ডলি সব তৈরি করুন,নিন আমার কাগজপত্র, আর আহানার গুলা কয়েক মিনিটেই এসে যাবে
.
আমরা হাজির!!!
.
শান্ত পিছনে তাকিয়ে দেখলো নওশাদ,রিয়াজ, সূর্য আর রুপা দাঁড়িয়ে আছে, রুপার হাতে একটা কাগজের ফাইল আর নওশাদের হাতে মিষ্টির প্যাকেট,সূর্যের হাতে ফুলের মালা দুটি
আহানা রুপার দিকে চেয়ে চোখ রাঙিয়ে বললো”রুপা তুইও!!”
রুপা আহানার কথার উত্তর না দিয়ে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”ভাইয়া আমি ওর আম্মুকে বলছি ওর অফিসের কাজে কাগজপত্র গুলা লাগবে,উনি আর সন্দেহ করেননি”
.
গুড জব!
.
শান্ত এগিয়ে এসে সূর্যর হাত থেকে ফুলের মালা গুলো নিয়ে আহানার গলায় একটা পরিয়ে দিলো
আহানা মালা টা খুলে শান্তর মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো তারপর হনহনিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো সে
.
শান্ত হাত দিয়ে তার মাথার চুলগুলো টানতে টানতে মালাগুলো সোফার উপর রেখে বললো”আমি ওরে নিয়ে আসতেছি,আঙ্কেল আপনি কাগজপত্র রেডি করেন যেন আসার পর জাস্ট সইতেই বিয়ে হয়ে যায়
কথা শেষ করে শান্ত বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে
আহানা একা একা অন্ধকার একটা পথের কিনারা দিয়ে হেঁটে চলেছে,কোনদিকে যাচ্ছে সে জানে না তবে এখানে আর থাকা যাবে না এটাই ঘুরতেছে তার মাথায়,দৌড়ের চোটে জুতাটা ফেলে এসেছে সে,খালি পায়ে হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে কিন্তু না এভাবে দূর্বল হলে চলবে না
শান্তকে বিশ্বাস নেই যদি সত্যি সত্যি বিয়েটা সেরে ফেলে?
একে বিয়ে করলে আমার জীবনটা পুরো নদীর পানিতে ডুববে
আহানা পিছনে একবার তাকিয়ে আবার সামনে তাকাতেই এক ধাক্কা খেলো সামনে দাঁড়িয়ে থাকা শান্তর সাথে
আহানা কিছুটা ভয় পেয়ে পিছিয়ে গিয়ে বললো”আমি বললাম না এই বিয়ে করবো না আমি,আপনি কেন জোর করতেছেন আমাকে,আর আপনি তো বলেছিলেন আমাকে কখনও বিয়ে করবেন না,তাহলে আজ এসব কেন?”
.
শান্ত চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে আহানার দিকে চেয়ে,হাত দুটো তার পকেটের ভিতর
আহানা কপাল কুঁচকে যখন দেখলো শান্তর কোনো উত্তর নেই তখন সে পাশ কেটে চলে যেতে নিতেই শান্ত ওকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ফেললো শক্ত করে,ওর গলার কাছে মুখ নিয়ে বললো”প্লিস আহানা!”
.
আহানার সম্পূর্ণ শরীর কাঁপতেছে,এভাবে শান্ত ওকে ধরবে সে ভাবতেই পারেনি,কাঁপা কাঁপা গলায় বললো”ছেড়ে দিন,আমি বিয়ে করবো না আপনাকে”
.
শান্ত ছেড়ে দিলো আহানাকে,আহানা কাঁদতে কাঁদতে রোডের উপর বসে পড়েছে,মাথায় হাত দিয়ে বললো”বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয় যে আপনি বললেন আর হয়ে গেলো,আমার কত স্বপ্ন এই বিয়ে নিয়ে,আমি চাই না এই বিয়ে,আমাকে জোর করবেন না”
.
শান্ত আহানার হাত ধরে ওকে টেনে রোড থেকে তুলে দাঁড় করালো
তারপর কাছে টেনে বললো”আমি চাই না এরপর কোনো পুরুষ তোমাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করুক,আমি চাই না তুমি আর অন্য কারোর দ্বারা কষ্ট পাও!আমি শুধু চাই তুমি আমার স্ত্রীরর অধিকারে আমার চোখের সামনে থাকো,আহানা আমি তোমাকে ভালোবাসি না
কি আছে তোমার মধ্যে যে আমি তোমাকে লাভ করবো?
তোমাকে আমি বিয়ে করতে চাই জাস্ট তোমার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য,আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেতো মা আমাকে জীবনেও ক্ষমা করতেন না,কারণ সেই পার্টিতে আমিও উপস্থিত ছিলাম
রতনের বেলায় মা আমার সাথে রাগ করে ছিলেন
এরপরে যদি তোমার কিছু হয় তাহলে মা আর আমার দিকে ফিরেও তাকাবেন না,আমার জীবনে মা আর নিতু ছাড়া কেউ নেই,ওরাই আমার সব,আর ওরা যখন তোমাকে আমার সাথে দেখতে প্রিপার করে তো ফাইন!বিয়েই শেষ পরিণতি হওয়া উচিত
.
এক মিনিট!আপনার আর আপনার পরিবারের খুশির জন্য আমি কেন এই বিয়েতে রাজি হবো?আমার কি কোনো ইচ্ছা নাই??বিয়েটাতে মত দেওয়ার রাইট আমারও আছে
.
না নেই!আমার মা বলেছে তুমি আমার ওয়াইফ হবে তো হবে
আর তোমার দায়িত্ব নেওয়ার জন্য হলেও তোমাকে বিয়ে করতে হবে আমায় আর আমি সেটাই করবো,এখন থেকে সবসময় তুমি আমার চোখের সামনে থাকবে,কেউ তোমাকে একটা টোকাও দিতে পারবে না
.
আমি এই বিয়ে করবো না,আমি আপনাকে পছন্দ করি না
বিয়ে তো দূরের কথা,আমি আন্টিকে বুঝিয়ে বলে দিব তাই বলে আজ আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না,হাত ছাড়ুন আমার
আমি বাসায় ফিরে যাবো
.
শান্তর কাছে আর কোনো উপায় নেই,নিজেকে শক্ত করে সে আহানাকে একটা কঠিন কথা বলার জন্য মুখ খুললো
.
আহানা তুমি কি চাও আমি এখন তোমার সাথে ঠিক সেই কাজ করি যেটা রতন আর সাইমন করতে চেয়েছিলো?
সেটা ভালো হবে নাকি বিয়ের পরেরটা ভালো হবে?লিগালি?
.
আহানা বিস্মিত হয়ে শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,পিছোতে পিছোতে কিছুদূর চলে গেছে সে
তারপর ডানে বামে সব পাশে তাকালো,দুপাশে ঝোপঝাড়,মাঝ দিয়ে ফাঁকা একটা রোড
কত শত পোকার গায়ে কাঁটা লাগানো শব্দ হচ্ছে
.
আহানা কাঁদতে কাঁদতে বললো”আপনার আর ওদের মধ্যে কেনো তফাৎ নেই শান্ত!,আপনি আমার দূর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন
.
শান্ত কথাটা না শুনার ভান ধরে দাঁড়িয়ে আছে আরেকদিকে ফিরে
.
আহানা দুহাত দিয়ে মুখটা মুছে আর ১মূহুর্তও দেরি না করে ছুটলো সামনের দিকে
.
উফ!এই মেয়েটাকে নিয়ে আমি পারি না!
.
আহানা দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছেই,থামাথামি নেই
.
আহানা দাঁড়াও!অন্ধকারে বিপদ হতে পারে এভাবে দৌড়াইও না প্লিস!
.
আহানা শান্তর কথায় কোনো পাত্তায় দিচ্ছে না,সে যতদূর পারছে দৌড়ে যাচ্ছে,অনেকদূর চলে গেছে সে,আজ শান্তকেও খুব খারাপ মনে হচ্ছে,মোট কথা ওর থেকে বাঁচার জন্যই দৌড়াচ্ছে সে
একটু থেমে পিছনে তাকিয়ে দেখলো দূরে শান্তকে দেখা যায়,সেও আসতেছে তেড়ে
আহানার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে,পা চলছে না আর,তাও দৌড়ানোর জন্য পা বাড়াতেই নিচে থাকা কয়েকটা কঙ্করের সাথে হোচট খেয়ে নিচে পড়ে গেলো সে
.
শান্ত এবার থেমে গেছে আহানাকে পড়তে দেখে,তারপর কপাল কুঁচকে বললো”এটাই দরকার ছিল,এতে যদি একটু সুবুদ্ধি হয় আর কি”
.
আহানা পা ধরে চোখ মুখ খিঁচে বসে আছে,শান্ত ততক্ষণে কাছেও চলে এসেছে
.
একদম কাছে আসবেন না আপনি!আমি আপনাকে বিয়ে করবো না কিছুতেই
.
শান্ত নিচু হয়ে আহানাকে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো বিপরীত দিকে
আহানা হাত দিয়ে শান্তর মুখ গলা বুক সবকিছুতে কিল ঘুষি দিয়ে যাচ্ছে
শান্তর চুল টানতে টানতে শুধু একটা কথায় বলতেছে সে আর সেটা হলো”বিয়ে করবো না”
শান্ত রোডের দিকে তাকিয়ে নরমালি হেঁটে চলেছে
আহানা একসময় ক্লান্ত হয়ে হাত পা নাড়ানো বন্ধ করে দিলো
তার আর বুঝতে বাকি নেই যে শান্ত ওকে আজ বিয়ে করেই ছাড়বে
শান্ত আহানাকে নিয়ে মইনুদ্দিন আঙ্কেলের বাসায় এসে ওকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে রুপাকে বললো ফার্স্ট এইড বক্স আনতে
তারপর আহানার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তুলো দিয়ে আহানার পায়ের রক্ত মুছতে মুছতে বললো”আমি আজ তোমাকে বিয়ে না করলে সাইমন তোমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না কিছুতেই,সে মানুষভর্তি পার্টিতে দাঁড়িয়ে আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে সে তোমাকে হাসিল করবে যেকোনো কিছুর বদলেই হোক,আর আমি তোমাকে নিয়ে চান্স নিব না
.
আহানা দাঁতে দাঁত চেপে শান্তর গালে চড় মেরে দিলো একটা
তারপর চিৎকার করে বললো”আমার পা ছাড়ুন বলতেছি”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩১
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্ত গালে হাত দিয়ে চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে
নওশাদ হা করে চেয়ে থেকে বললো”এই নিয়ে কত হলো”
.
সূর্য মুখে হাত দিয়ে বললো”২বার”
.
রুপা চোখ বড় করে নওশাদকে খুঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতেছে আরেকবার চড় দিয়েছিলো কেন?
.
রিয়াজ ধমক দিয়ে আহানার কাছে এসে বললো”কি সমস্যা তোমার???তোমার সাহস হয় কি করে শান্তর গায়ে হাত তুলার?তোমার থেকে বয়সে কত বড় শান্ত আর তুমি হুটহাট করে ওকে চড় মারো সবসময়,তোমার মা কি তোমাকে এসব শিখিয়েছে?”
.
শান্ত মইনুদ্দিন আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে বললো”আর কত সময় লাগবে?”
.
এই তো বাবা আর ১০মিনিট
.
ফাইন!
শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে আহানার হাত মুঠো করে ধরে টেনে নিয়ে গেলো,মইনুদ্দিন আঙ্কেল বাসায় একাই থাকেন তাই সবগুলো রুম খালি থাকবে এটা শান্তর জানা আছে
শান্ত তাই আহানাকে নিয়ে দূরের এক রুমে চলে গেছে
রুমে ঢুকে দরজাও লাগিয়ে ফেললো ভেতর থেকে
নওশাদ রুপা,সূর্য আর রিয়াজ এক দৃষ্টিতে রুমটার দিকে চেয়ে আছে
.
নওশাদ ওদিকে তাকাতে তাকাতে সোফায় এসে বসলো,রুপা পা টিপে টিপে নওশাদের পাশে বসে বললো”এখন কি করবে শান্ত ভাইয়া?আহানাকে মারবে নাকি?”
.
রিয়াজ মুখটা গম্ভীর করে একটা টুল টেনে বসতে বসতে বললো”শান্তর যদি মারারই ইচ্ছা থাকতো তো এতক্ষণে ৪০টা থাপ্পড় খেতো আহানা”
.
তাহলে কি করতে নিয়ে গেছে?
.
সেটা তো শান্তই ভালো জানে
.
সূর্য রুমটার দিকে যেতে নিতেই নওশাদ বললো”ওদের একা থাকতে দেওয়া উচিত আমাদের”
.
সূর্য “হুম”বলে রিয়াজের পাশে এসে বসলো
পাক্কা ১০মিনিট পর রুমটার দরজা খুললো শান্ত
ভেতর থেকে আগে শান্ত বের হলো তার পাশে আহানা জ্যান্ত লাশের মত দাঁড়িয়ে আছে,শান্ত ওকে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে দিয়ে আঙ্কেল থেকে কাগজটা নিয়ে ওর দিকে বাড়িয়ে ধরলো
আহানা রোবটের মতন ওর হাত থেকে কাগজটা নিলো,তারপর চুপচাপ সই করে দিলো,দেওয়ার সাথে সাথেই কেঁদে ফেললো সে
.
নওশাদ শান্তকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো”কিরে?কি এমন করলি যে রাজি হয়ে গেলো”
.
রিয়াজ ফিসফিস করে বললো”মেরেছিস?”
.
সূ্র্য দাঁত কেলিয়ে বললো”আরেহহহ নাহহহ,মনে হয় কিস করেছে😜”
শান্ত চুপচাপ কাগজটা নিয়ে এবার সেও সই করে দিলো
রুপা আহানার মুখের দিকে চেয়ে আছে,আহানার মুখের ভাবগতি একদম অসহায়ত্ব প্রকাশ করতেছে,কিছু একটা তো করেছে শান্ত তা নাহলে আহানা এতক্ষণ বিয়েটা করতে নারাজ ছিলো আর সে কিনা ১০মিনিটেই রাজি হয়ে গেলো সই ও করে দিয়েছে চুপচাপ কিছু না বলেই
রুপা আহানার পাশে বসে ওকে ঝাঁকিয়ে বললো”কিরে!কিছু বলছিস না যে?কি হয়েছে তোর?এরকম হয়ে আছিস কেন?কি করেছে শান্ত ভাইয়া?”
.
আহানা তার সামনে থাকা কাঁচের সেন্টার টেবিলটার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে,চোখ দিয়ে অশ্রুর জলধারা বইতেছে
শান্ত সই করে দিতেই মইনুদ্দিন আঙ্কেল বললেন”আলহামদুলিল্লাহ, এখন থেকে তোমরা লিগালি হাসবেন্ড ওয়াইফ”
.
শান্তর মুখেও হাসি নেই,আহানার তো হাসি গায়েবই হয়ে গেছে,শান্ত সোফার উপর থেকে ফুলের মালাগুলো নিয়ে একটা নিজে পরলো আরেকটা আহানার গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে সূর্যর হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেটটা নিয়ে এক এক করে সবার মুখে একটা করে মিষ্টি ঢুকিয়ে দিলো
মুখে তার বিন্দু মাত্র হাসি নেই
রিয়াজ শান্তর হাত ধরে বললো”শান্ত তোর আর আহানার কি হয়েছে?মুখ এমন করে আছিস কেন?এই বিয়েতে যখন তোরা খুশিই ছিলি না তখন বিয়ে করতে গেলি কেন?”
.
শান্ত টিসু দিয়ে হাত মুছে বললো”আঙ্কেল থ্যাংকস ফর হেল্প!আজ আসি আমরা”
এটা বলে শান্ত সোফায় বসে থাকা আহানার হাত মুঠো করে ধরে বেরিয়ে গেলো ওকে নিয়ে
আহানা রোবটের মতন শান্তর সাথে সাথে আসতেছে
বাকিরা ওদের দুজনের অবস্থা দেখে ঠিক বুঝতেছেই না যে কি এমন হলো যে ওদের মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো চিরতরে
.
আহানা কারে বসে গলার থেকে ফুলের মালাটা ছিঁড়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিলো তারপর কাঁদতে কাঁদতে জানালায় মাথা ঠেকিয়ে ধরেছে
হাত দিয়ে জানালার কাঁচে কয়েকটা ঘুষি দিলো সে,চিৎকার করে কাঁদতে মন চাচ্ছে এখন
.
শান্ত চুপচাপ কার চালাচ্ছে,আহানা কাঁদতে কাঁদতে এবার থামলো,চোখ মুছে নিজেকে ঠিক করলো সে
বাসায় আসতে আসতে দেড় ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে,রাত তখন ১১টা বাজে,আহানা কার থেকে নেমেই চলে গেলো বাসার দিকে
শান্ত গলার মালাটা ফেলে দিয়ে সেও গেলো সেদিকে
মা আর আন্টি সোফায় বসে টিভি দেখতেছেন,ওদের দুজনকে দেখে টিভি থেকে চোখ সরিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছেন এখন
আহানার চোখ মুখ ফুলে আছে, সে কিছু না বলেই রুমে চলে গেলো
শান্ত ও চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
আহানার মা বললেন”ওদের দুজনের চোখ মুখের এ অবস্থা কেন?”
.
শান্তর মা ও বুঝলেন না কিছু
আহানা বাথরুমে ঢুকে নিচে ফ্লোরে বসে পড়লো,হাত দিয়ে চুল টানলো জোরে জোরে অনেকগুলে চুল ছিঁড়েও ফেললো সে
তারপর টেনে কানের দুল খুলে ফেললো,চিৎকার করলো হাত উঠিয়ে ঝর্ণা অন করে দিলো যাতে ওর কান্নার আওয়াজ বেশিদূর না যায়
হাতে, পায়ে আর গলায় পানি পড়তেই গা শিউরিউয়ে উঠলো তার
শান্ত ওকে আজ অনেক কষ্ট দিয়েছে,তার দোষ ছিলো সে শান্তকে চড় মেরেছিলো
শান্ত আজ তার সাথে যা করলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তত ছিলো না
এর ভিতরে মা এসে বাথরুমের দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বললেন “কিরে ভাত খাবি না?এসেছিস দেরি করে খাবি কখন?নাকি খেয়ে এসেছিস?”
.
আহানা নিচু স্বরে বললো”খাব না,খিধে নেই,তুমি যাও”
.
শান্ত বারান্দায় বসে আছে এক কোণায়,আহানাকে এভাবে জোর করতে চায়নি সে,বিয়েতে রাজি করানোর জন্য সে আহানাকে আজ বাধ্য করেছে
চাইলেই আজ চড়টার পর ওর সবটা কেড়ে দিতে পারতাম আমি কিন্ত আমি সেটা করিনি,রাজি করানোর আরও অনেক ওয়ে আমার হাতে ছিল আমি সেটাই প্রয়োগ করেছি
একটু ভয় দেখিয়েছি জোরজবরদস্তি করার তাতেই ভয় পেয়েছে সে
.
স্যার?
.
শান্ত দরজার দিকে তাকিয়ে বললো”রিপা চলে যাও,আমি আজ ডিনার করবো না,আমার খিধে নেই”
.
রিপা মাথা নাড়িয়ে চলে গেলো

কিরে আহানা?শরীর খারাপ তোর?এমন চুপচাপ শুয়ে আছিস কেন?
.
কিছু না,ঘুমাও তুমি
.
আগে বল আমাকে কিছু কি হয়েছে?তোরা আজ এত দেরি করে আসলি যে?
.
আহানার বিরক্ত লাগছে এর ভিতর মা ১০০টা প্রশ্ন করে যাচ্ছে একের পর এক
রেগে আহানা রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসলো,সোফার রুমে আসতেই শান্তকে দেখলো সে
শান্ত পানি খেতে এসেছিলো তখন
ভেজা চুল আহানার,চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পড়ে যাচ্ছে অনবরত,পরনে হালকা হলুদ রঙের থ্রি পিস,কিছু সময়ের জন্য শান্ত ভ্রমে চলে গিয়েছিলো,হাতে গ্লাসটা ধরে রেখে চেয়ে আছে সে,আজকের পর থেকে আহানা তার বৈধ স্ত্রী, আর আজ অধিকার একটু বেশিই চাওয়া যায় কিন্তু কোনো এক বাধা মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,শান্তর হুস আসতেই সে মুখ ফিরিয়ে নিলো
আহানা ওকে দেখে আর দ্বিতীয় বার তাকায় নিই,সোজা বাসার বাইরের গন্ধরাজ বাগানটার কাছে এসে দাঁড়ালো সে,মৃদু শীত অনুভূত হচ্ছে চারিদিকে
আহানা নিজের ওড়নাটা গায়ে পেঁচিয়ে ঘাসের উপর এসে বসলো,তারপর সোজা আকাশের দিকে চেয়ে রইলো
শান্ত মাকে দেখতে এসে মায়ের রুমের বারান্দাটা দিয়ে আহানাকে দেখতেছে স্পষ্ট, কারণ গন্ধরাজ ফুলের বাগানটা ওর মায়ের রুমের সামনে বরাবর একদম
আহানার শুস্ক চোখ দিয়ে দুফোটা পানি বেরিয়ে আসলো,হাত দিয়ে মুছে সে পাশে তাকাতেই দেখলো শান্ত চেয়ে আছে ওর দিকে,তারপর যখন সে দেখলো আহানা ওকে দেখে ফেলেছে তখন সে চলে গেলো নিজের রুমের দিকে
আহানা আবারও আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকে বিয়ের ১০মিনিট আগ মূহুর্তটা মনে করলো
শান্ত ওর হাত চেপে ধরে রুমটায় নিয়ে গিয়ে কিছু না বলেই ওর হাত আরও জোরে চেপে ধরে কাছে নিয়ে এসেছিলো
রুমটা ছিল অন্ধকার!!বাসার পাশের বাউন্ডারিতে থাকা এক লাইটের আলোয় তারা একে অপরকে দেখতেছিলো
তারপর আহানার চোখের দিকে না তাকিয়েই শান্ত ওর গলার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো
আহানা হাত নাড়াতে নাড়াতে বললো”কি অসভ্যতামি শুরু করছেন কি আপনি?চড়ে হয় নাই?আরেকটা দিব?”
.
শান্ত বড় করে একটা শ্বাস নিয়ে আহানার গলায় মুখ লাগাতেই আহানা কেঁপে দূরে সরতে গিয়েও পারলো না,তার তখন এত খারাপ অনূভূতি হচ্ছিলো যে সে বুঝে গেছিলো বিয়েতে হ্যাঁ না বললে শান্ত সেই সব কিছু করবে যেটা করলে সম্পর্কটা হারামে পরিণত হবে
আহানার নিশ্চুপ হয়ে চোখ দিয়ে পানি দুফোটা ফেলে মুখ ফুটে একটাই কথা বললো আর সেটা হলো”আমি বিয়েতে রাজি”
.
সাথে সাথে শান্ত ওকে ছেড়ে দিলো,তারপর স্বাভাবিক ভাবেই ওর হাতটা ধরে টেনে নিয়ে গেলো সবার সামনে
আহানার আর কোনো উপায় ছিলো না তখন,শান্ত ওকে এমন ভাবে দূর্বল জায়গায় আঘাত করে বুঝিয়ে দিয়েছিলো ওর আর কিছু করার ছিলো না সেই মূহুর্তে
শান্ত কেন আজ এমন করলো সেটাই ভেবে পাচ্ছে না আহানা
শুধু কি আমার সেফটির জন্যই উনি এমন করলেন?
আমাকে বিয়ে করার জন্য উনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলেন,আমাকে রাজি করাতে এতটা নিচে নামলেন!
আমারই দোষ,শুরুতেই রাজি হয়ে গেলে এত কিছু করতো না
কিন্তু শুরুতে কি করে রাজি হই আমি??আমার কি বিয়ে নিয়ে কোনো ইচ্ছা নেই?সেই মূহুর্তে এত বাজে ব্যবহার করলেন আমার সাথে ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে আমার!বিয়েতে হ্যাঁ না বললে এতক্ষণে তো!!!
আমার অসহ্য লাগছে এই ভেবে যে এই লোকটা আজ থেকে আমার স্বামী!
আমার সেফটি না ছাই,মন চাচ্ছে গলা টিপে মেরে ফেলি
.
খুব জোরে আহানার হাতের ফোনটা বেজে উঠেছে,আহানা বুকে থুথু দিয়ে ফোনটা নিয়ে দেখলো আননউন নাম্বার
রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে শান্ত এক ধমক দিলো
এত জোরে ধমক দিলো যে আহানার হাত থেকে ফোনটাই ঘাসের উপর উল্টে পাল্টে পড়ে গেলো
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে ফোনটা নিয়ে আবারও কানে ধরলো
.
কি ব্যাপার উত্তর দিচ্ছোনা কেন?
.
কে আপনি?
.
তোমার সবেমাত্র বিয়ে করা বর বলছি
.
ওহহ,কি চাই?আমার নাম্বার পেলেন কই
.
আমার রুমে আসো
.
কি করতে?নাকি এবারও নেক কিস করে বাসররাত কম্পলিট করার থ্রেট দিবেন?
.
তোমার মধ্যে কি আছে যে তোমার সাথে বাসররাত করার ইচ্ছা জাগবে আমার??তোমাকে যে তখন নেক কিস করসিলাম আমার বমি পাচ্ছে এখন
.
তো বিয়ে করছেন কেন তাহলে?
.
সেটা দায়িত্বের খাতিরে,তোমার সেফটির খাতিরে
.
বাহানা দেওয়া অফ দেন,আমাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাহস আছে কারও?
.
আসলে হইছে কি তুমি যেমন ছাইয়া টাইপের তোমার সাইকো লাভার রাও তেমন ছাইয়া টাইপের,কি জানি কখন কি করে বসে তাই আমি চান্স নিই নাই
.
আপনার এত দরদ কেন? আমাকে কেউ উঠায় নিয়ে গেলে আপনার কি সমস্যা?
.
কি সমস্যা?দেখাচ্ছি,আসো আমার রুমে
.
যাব না,বাই
.
তুমি কি চাও আমি এখন তোমাকে গন্ধরাজ বাগানটার সামনে এসে তোমাকে কোলে তুলে নিয়ে আসি?
.
আসতেছি,আজ একটা বিহিত করে তারপর আমি যাব
.
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে সেদিকে ছুটলো
শান্ত নিজের বিছানায় বসে রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে
আহানা দরজার কাছে এসে ফোনের ক্যামেরা অন করে শান্তর ড্রেসিং টেবিলে ফোনটা হেলান দিয়ে রাখলো তারপর শান্তর পাশে এসে দুপ করে বসে পড়লো
.
ওকে রিয়াজ কাল দেখা হচ্ছে,বাই
.
শান্ত ফোন রেখে আহানার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকালো তারপর ড্রেসিং টেবিলের দিকে চেয়ে বললো”কি ব্যাপার?ফোন ওখানে রাখসো কেন,আর ওখানে তো দেখছি ভিডিও রেকোর্ড হচ্ছে আমার আর তোমার
.
হুম ঠিক দেখছেন,আপনি এখন এই ভিডিওতে আমার কিছু শর্ত মানতেছেন সেসব বলবেন,সেটা প্রমান হিসেবে থাকবে আমার কাছে
.
কিসের শর্ত?
.
এই যে এই বিয়েটা নামেই বিয়ে আর আমাকে আপনি কখনও ঐভাবে ছুঁবেন না
.
“ঐভাবে ছোঁয়া মানে?কোন ভাবে?”
কথাটা বলে শান্ত আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে নিলো একবার
আহানা চোখ বড় করে নিজের ওড়না ঠিক করে একটু নড়েচড়ে বসে বললো”ঐভাবে মানে হচ্ছে আপনি কখনও আমাকে ওয়াইফকে যেভাবে ছোঁয় ওভাবে ছুঁবেন না”
.
তাহলে কি ভাবে ছুঁবো?
.
উফ!আমার কথার মানে হচ্ছে কোনো ভাবেই ছুঁবেন না
.
আচ্ছা,তো এবার আমার কথা শুনে রাখো,আমি তোমাকে ছুঁবো না কারণ কেন জানো?কারণ তোমাকে ছোঁয়ার মতন তেমন ইন্টারেস্টিং কিছুই নাই
না ঠোঁট সুন্দর,না গাল সুন্দর, না হাত পা,আর না বডি,কিছুই সুন্দর না তোমার,তাহলে কেন ছুঁবো তোমাকে?
.
এসব বলে বলে তো বিয়েটাও সেরে ফেলেছেন
.
শুনো,তোমাকে ছোঁয়ার হলে এখন এত নরমালি কথা বলতাম না,বিয়েটা যে কারণে করসি তা তো তুমি জানোই তাহলে বারবার জিজ্ঞেস করো কেন?
.
ঠিক আছে!
আহানা উঠে দাঁড়িয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে ভিডিওটা সেভ করে মুখ ফুলিয়ে বললো”এই ভিডিওটা আমার কাছে প্রমাণস্বরুপ থাকবে,এখন কি জন্য ডেকেছিলেন বলুন আমি যাই
.
কাল রিয়াজের গায়ে হলুদ,সকাল সকাল তৈরি থাকবা তোমাকে নিয়ে যাত্রামুড়া রওনা হবো
.
যাবো না,আমি
.
কি বললে?
শান্ত বিছানা থেকে নামতে নিতেই আহানা দৌড়ে যেতে যেতে বললো”রেডি থাকবো”
.
এই দাঁড়াও
.
আহানা থেমে গিয়ে পিছনে তাকিয়ে বললো”কি?”
.
নাও
.
কি এটা?
.
গায়ে হলুদে পরার একটা শাড়ী,আমি কিনেছিলাম তোমার জন্য,তোমার ভালো কোনো জামা/শাড়ী নেই তো তাই
.
ভালো
তারপর আহানা আর কিছু না বলেই চলে গেলো
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩২
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা রুমে এসে প্যাকেটটা চেয়ারের উপর রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে
পরেরদিন সকালে সে ঘুম থেকে জাগলো শান্তর মুখ দেখে
শান্ত হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি পরে কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে,মুখে কঠিন রাগের ছাপ
আহানা হাত পা ছড়িয়ে আরামসে ঘুমাচ্ছে,দূরের জানালা দিয়ো শীতল বাতাস আসতেছে জোরে জোরে,সম্ভবত বৃষ্টি হচ্ছে তাই এত বাতাস,ঘুমটাও সেই রকম আসতেছে,এই ওয়েদারটা ঘুমকে আরও মনোমুগ্ধকর করে দেয়
আহানা শান্তকে দেখে চোখ ডলে আরেকদিকে ফিরে সেই ঘুমিয়ে গেলো আবার
শান্ত এবার রেগে আহানার হাত ধরে টেনে উঠিয়ে ফেললো এক টান দিয়ে
.
উফ!ঘুমাতে তো দিবেন,এমন করেন কেন
.
কয়টা বাজে খবর আছে তোমার?সাড়ে ৯টা বাজে,কখন যাব আমরা,তোমাকে বললাম সকাল সকাল রেডি হয়ে থাকবা আর তোমার কিনা কোনো পাত্তাই নেই
.
কিহ!এত সকাল হলো কি করে,আমি তো!
.
জলদি করে রেডি হয়ে নাও তুমি,পথে একটা রেস্টুরেন্ট থেকে ব্রেকফাস্ট করে নেওয়া যাবে
.
আহানা বিছানা থেকে নেমে তড়িগড়ি করে প্যাকেটটা হাতে নিতেই দেখলো শান্ত এখনও দাঁড়িয়ে আছে
.
কি?এবার কি আপনার সামনে চেঞ্জ করবো আমি?বের হোন রুম থেকে
.
শান্ত এমন ভাবে তাকালো যেন কেউ ওকে নিজের রুম থেকে বের হতে বলতেছে,হাতের ঘড়ি ঠিক করতে করতে চলে গেলো সে
আহানা শাড়ীটা পরে চুল ছেড়ে দিয়ে,হাতে চুড়ি পরতে পরতে বের হয়ে গেলো
মা আবারও হাত ধরে টেনে রুমে ঢুকিয়ে বললেন”এরকম যাবি??একটু সাজিস ও নাই,এদিকে আয়
বিয়েবাড়িতে এরকম নিরামিষ কেউ সাজে?
.
সাজবো??আমার সাজার কিছু আছে নাকি যে সাজবো?
.
ধর এই লিপস্টিকটা লাগিয়ে নে,রিপার থেকে নিয়েছি
.
আহানা লিপস্টিকটা লাগিয়ে এবার বের হলো
শান্ত কারের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে নওশাদের সাথে কথা বলতেছে
.
আহানা মুখ কালো করে হেঁটে আসতেছে দূর থেকে
শান্ত কথা বলতে বলতে যেই না ওদিকে তাকলো ওমনি ওর মুখ দিয়ে কথা বের হওয়াই বন্ধ হয়ে গেলো
হলুদ রঙের শাড়ীটায় আর খোলা চুলে আহানাকে বেশ মানিয়েছে,আহানা কাছে এসে বললো”চলুন”
.
শান্ত এখনও চেয়ে আছে আহানার দিকে,ওদিকে নওশাদ চিল্লাচ্ছে শান্ত কেন ওর কথার জবাব দিচ্ছে না সে জন্যে
শান্ত যে তার নতুন বিয়ে করা বউকে দেখে হতবাক হয়ে গেছে সেটা কেউ জানে না
আহানা দরজা খুলো ভিতরে গিয়ে বসেছে ততক্ষণে
শান্ত এবার নওশাদকে বাই বলে সেও ভেতরে এসে বসলো
কার চালাতে চালাতে ১০০বার তাকাচ্ছে সে আহানার দিকে
আহানার সেদিকে খেয়াল নেই,সে বৃষ্টভেজা শহরটা দেখতে ব্যস্ত
কি সুন্দরটাই লাগতেছে,সবকিছু ভিজে তাদের আসল রুপ ধারণ করে আছে,সবুজ সবুজ গাছ,পরিষ্কার রাস্তাঘাট
আহানার মনে হলো কেউ ওর দিকে তাকিয়ে আছে,সাথে সাথে সে শান্তর দিকে তাকাতেই শান্ত আরেকদিকে মুখ করে ফেললো
.
আমি না সুন্দর না?আমার মধ্যে তো কিছু নাই তাহলে এমন ড্যাবড্যাব করে দেখতেছেন কেন?আমার চাইতে তো কণা আপু সুন্দর,তাহলে?
.
সাজলে সবাইকেই সুন্দর লাগে
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে হাতের চুড়িগুলো ঠিক করে আবারও জানালার দিকে চেয়ে থাকলো
শান্ত ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নেমে নাস্তা করতে বসেছে
আহানা পরোটা এক টুকরা মুখে দিয়ে শান্তর দিকে তাকাতেই দেখলো সে এক দৃষ্টিতে ওর দিকেই চেয়ে আছে
.
কি ব্যাপার বলুন তো?এমন দেখতেছেন কেন আমাকে?একবার বলে আমার মতো বিচ্ছিরি আর নাই আবার নিজেই ক্যাবলার মতন চেয়ে থাকে সারাক্ষণ,টেনে দিব আরেক চড়,অসভ্যের মতো এরকম তাকিয়ে থাকলে
কথাটা বলে আহানা আশেপাশে চেয়ে দেখলো সবাই ওর কথা শুনে ওর দিকে চেয়ে আছে
আহানা নড়েচড়ে বসে বললো”কি?উত্তর দিচ্ছেন না কেন?”
.
বিয়ে করা বউয়ের দিকে তাকাতেই পারি,তাই বলে তোমার কোনো অধিকার নেই আমার থেকে এই বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়ার
.
আহানা বিরক্ত হয়ে চায়ে চুমুক দিলো,রিয়াজ ফোন করতে করতে শেষ যে শান্ত কখন আসবে
শান্ত বলতেছে রোডে জ্যাম কিন্তু আসল কথা হলো আহানার কারণে দেরি হয়েছে
আহানা ঘুম থেকে উঠতে দেরি করে ফেলেছিলো আজ
.
তোমার কারণে আজ এত দেরি হয়ে গেছে
.
যাক বাবা,বৃষ্টিতে এত ভালো ঘুম এসে গিয়েছিলো তো আমি কি করতাম শুনি?
.
নাচতা!কাল বলেছিলাম সকাল সকাল রেডি হবা,ঢাকা থেকে যাত্রামুড়া কি কাছে?যেতেও তো সময় লাগে
.
আপনি নাস্তা করে নিতে পারেননি?আমি পানি খেয়েই পেট ভরিয়ে নিতাম
.
চুপ থাকো
.
আহানা জানালা খুলে চুপ করে থাকলো,জড়ো হাওয়া এসে গায়ে লাগতেই মনে হয় ভেতরের সব দুঃখ নিঃশেষ হয়ে যায় সাথেসাথে
অবশেষে যাতামুড়া এসেই গেলো
আহানা আর শান্ত রিয়াজদের বাসায় ঢুকতেই সবাই বলে উঠলো “অভিনন্দন”
সবাই বলতে নওশাদ,সূর্য আর শান্তর আরও কয়েকটা ফ্রেন্ড
শান্ত থ্যাংক ইউ বলে রিয়াজকে খুঁজে বের করতে গেলো
আহানা সোজা গিয়ে নওমির কাছে এসে বসলো
নওমি ওর আন্টির সাথে কথা বাদ দিয়ে আহানার হাত ধরে জিজ্ঞেস করলো কাল রাতে কি হয়েছিলো
আহানা নিচু স্বরে বললো”কিছুই হয়নি”
.
নওমি আশ্চর্য হয়ে বললো”কি বলো এসব!তাহলে শান্ত ভাইয়া ওভাবে ঐ ছেলেটাকে মেরেছিলো কেন?”
.
আহানা চমকে বললো”মেরেছিলো?”
.
হুম!কাঁচের বোতল নিয়ে ছেলেটার হাতে ভেঙ্গে ছিলো তারপর কাঁচের গ্লাস দিয়ে ওর মাথাও পাঠিয়ে দিয়েছিলো
চিৎকার করে বলতেছিলো “আহানা শুধু আমার,ওকে ছোঁয়ার অধিকারও আমার,কেন,তোমাকে বলেনি?”
.
আহানা ইয়া বড় হা করে পরে ভাবলো নওমি মিথ্যা বলতেছে,শান্ত কেন এসব বলবে
আহানা দূরে তাকিয়ে দেখলো শান্ত নওশাদ সূর্যর সাথে হাসাহাসি করতেছে
আহানা নওমিকে বলে উঠে গিয়ে সেদিকে ছুটলো,কিছুদূর যেতেই কণা এসে ওর সামনে দাঁড়িয়ে পড়েছে
.
আহানা কি খবর!!শুনলাম কাল নাকি সাইমন নামের একটা ছেলে তোমার সাথে কি না কি করেছে?
.
আহানা কিছু বলতে যাবে তার আগেই শান্ত এসে বললো”সাইমন কি করেছে সেটা না ঘেঁটে এটা শুনো যে আমরা কি করেছি”
.
কণা ব্রু কুঁচকে বললো”কি করেছো?”
.
নেক কিস,আহা!
.
আহানা চোখ বড় করে চলে গেলো আরেকদিকে শান্ত ওর হাত ধরে আটকিয়ে বললো”প্রমাণ দেখবা?”
.
শান্ত প্লিস,হাত ছাড়ুন,এসব কি বলতেছেন আপনি?
.
কণা দাঁতে দাঁত চেপে বললো”কই দেখি প্রমাণ ”
.
শান্ত আহানাকে কাছে টেনে এনে ওর গলার থপকে চুল সরিয়ে বললো”দেখো”
.
কণা চোখ বড় করে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো”তুমি আমার সাথে চিট করতে পারলে?”
.
আহানা এদিক ওদিক তাকিয়ে শান্তর হাত ছাড়িয়ে চলে গেছে ততক্ষণে
লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে,আর শান্ত কিনা খোলামেলা সব বলে যাচ্ছে,এই কণা না জানি কি না কি করে বসে
মনে হয় বিয়ের কথা জানে না
.
কই চিট করলাম,আহানার থেকে এসব তো আমার প্রাপ্য
.
নওশাদ আর সূর্য দাঁত কেলিয়ে মজা নিচ্ছে,কণা শান্তর মুখ দুহাত দিয়ে ধরে বললো”ছেড়ে দাও না ওকে,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসবো”
.
শান্ত কণার হাত সরিয়ে বললো”একসাথে অনেকজনকে লাভ করাকে রিয়েল লাভ বলে না কণা”
.
আহানা একজন আন্টির পাশে এসে বসলো হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে,আন্টিটার হাতেও জুস,উনি আহানার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নিলেন,তারপর দেখলেন আহানা শান্তর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে
আন্টি মুচকি হেসে বললেন”তোমার বর বুঝি?বেশ দেখতে তো,তোমাদের দুটোকে অনেক মানিয়েছে,তা বিয়ের কতদিন হলো?”
.
আহানা জুস খেতে খেতে বললো”১৩ঘন্টা ৩মিনিট ১০সেকেন্ড ‘
.
ওমা সেকি!কাল বিয়ে হয়েছে নাকি?
.
হুম
.
বাহ বাহ!দোয়া করি সুখী হও,বেশ লাগে তোমাদের, তোমার স্বামী যেরকম সুন্দর তুমিও ঠিক সেরকমই নজরকাড়া সুন্দরি
.
আহানা তাচ্ছিল্য করে হেসে বললো”আমার স্বামীর কাছে মনে হয় আমি সুন্দর না,আমার মধ্যে এমন কিছুই আহামরি নেই”
.
এসব সে নিজের মুখে বলেছে?
.
হুম
.
তাহলে তো মিথ্যা বলেছে
.
আহানা চমকে উনার দিকে চেয়ে বললো”আপনি বুঝলেন কি করে যে মিথ্যা বলেছে?”
.
আরে যে স্বামী নিজের মুখে বলে যে তার স্ত্রী সুন্দর না এটা তো ডাহা মিথ্যা কথা,কোনো স্বামীই বলে না তার স্ত্রী অসুন্দর,আর তোমার স্বামী বলেছে এর পিছনে কারণ আছে হয়ত,তুমি খুঁজে নিও,আর তুমি নিজেও জানো তুমি কম সুন্দরি নও,তাহলে ভাবো তোমার স্বামী তোমাকে এটা কেনোই বা বললো
.
আহানা পড়ে গেলো মহা চিন্তায়,নওমি আপুর কথা আর এই আন্টিটার কথা মিলালে মনে হবে শান্ত আমাকে ভালোবাসে আর যেটা একদম মিথ্যে,আমি তো জানি উনি আমাকে ভালোবাসেন না
.
রিয়াজ আর নওমি স্টেজে এসে বসেছে,নওমি হলুদ রঙের একটা সুতির শাড়ী বাঙালি স্টাইলে পরেছে সাথে ফুলের গয়না,আর রিয়াজ হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পরেছে
আহানা সেই কখন থেকে চারিদিকে চোখ বুলাচ্ছে,শান্তকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না সে
ওদিকে কণাকেও দেখতেছে না
না জানি দুজন মিলে কি করতেছে,যাগ গে,আমার গায়ে লাগে কেন,ঐ লোকটাকে তো আমি ভালোবাসি না আর সেও বাসে না
নওমির ছোট বোন আরবি এসে বললো শান্ত আর তার কিছু বন্ধুরা ভিতরের রুমে নাচের প্র্যাকটিস করতেছে
আহানা মাথা নাড়িয়ে গাপটি মেরে বসে থাকলো
আরবি যেতে যেতে বললো”কণা আপুও সেখানে”
.
আহানার মনে হলো ওর গায়ে কেউ এক বালতি গরম পানি ঢেলে দিয়েছে,সাথে সাথে সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সোজা সেই রুমটার দিকে ছুটলো
রুমে এসে দেখলো এক কোণায় শান্ত নওশাদ আর সূর্য একসাথে নাচের প্র্যাকটিস করছে,আর কণা আর কিছু মেয়েরা ফোনে ভিডিও দেখতে দেখতে তারাও একপাশে নাচতেছে
আহানা মন খারাপ করে চলে যেতে নিতেই নওশাদ আহানাকে ডাক দিলো
আহানা পিছনে তাকিয়ে বললো”কি ভাইয়া?”
.
আহানা তুমিও জয়েন হও না আমাদের সাথে”
.
আমি নাচ পারি না
.
শান্ত তাচ্ছিল্য করে বললো”বাদ দে,ঠিকমত নাচতে পারবে না পরে আমার নাচের ১২টা বাজাবে,আমি বরং ঐ কণার সাথেই নাচবো”
.
আহানা মনে মনে ভাবলো কণার সাথে নাচার এত শখ তো নাচুক না আমার কি,আমিও নাচবো না আমার গায়ে কেন লাগতেছে বুঝি না আমি
আহানা আবার আগের জায়গায় ফেরত এসে বসলো
“এই যে বিয়ানসাব” গানটা অন হয়েছে,সূর্য তার পাঞ্জাবির উপর দিয়ে একটা হালকা নীল শাড়ী পেঁচিয়ে কেকা ফেরদৌসি সেজে হেলেদুলে স্টেজে এসে দাঁড়িয়েছে,ওর এমন বেশ দেখে পুরো বিয়েবাড়িতে হাসির হট্টগোল লেগে গেছে
আহানাও ফিক করে হেসে দিয়েছে এটা দেখে
নওশাদ এসে বললো”তা কেকা আপা আজ আমাদের কি রান্না করে খাওয়াবেন?”
.
আমি আজ নুডুলস রান্না করে খাওয়াবো
.
না না,এই নুডুলসে তো অনেক ফ্যাট
.
সূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো”তোমাকে আজ আমার হাতের বানানো নুুডুলস খেতেই হবে,না না খেতেই হবে”
.
আহানা হাসতে হাসতে শেষ,বাকিরাও হাসতেছে
এবার শান্ত হেঁটে আসলো কালো চশমা চোখে দিতে দিতে
সূর্য শাড়ী খুলে সেও আসলো,সাথে আসলো নওশাদ,আরও ৩/৪জন এসে দাঁড়িয়ে নাচ শুরু করলো
এক কাতারে কণা,ইশা,মিষ্টি,ঐশি সবাই আসতেছে কোমড় দুলিয়ে দুলিয়ে
আহানা ব্রু কুঁচকিয়ে আরেকদিকে ফিরে বসলো
.
আন্টি আহানাকে এক খোঁচা দিয়ে বললেন”কি গো মেয়ে তোমার বর দেখি এদিকেই আসতেছে”
.
কথাটা শুনে আহানা সামনে চেয়ে দেখলো শান্ত এদিকেই আসতেছে স্টেজ থেকে নেমে
বাকিরা গানের তালে নাচতেছে আর কণা মুখটা বেলুন বানিয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে আছে
শান্ত কাছে এসেই আহানার হাত ধরে সেদিকে নিয়ে যাচ্ছে এবার
.
আরে আমি নাচ পারি না তো আমাকে স্টেজের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?
.
এই গানের সাথে নাচ নাই জাস্ট তুমি অলওয়েজ যেটা করো সেটাই করবা
.
অলওয়েজ যেটা করি মানে?
.
মানেটা সহজ,মুখ বাঁকা করবা,গাল ফুলাবা,ভাব দেখাবা আর মাঝে মাঝে কোমড় দুলাবা
.
আমি সবসময় ভাব দেখাই?
.
হু
.
কণা আপুর সাথে না নাচবেন??আমি তো ভালো না তাহলে আমাকে নিচ্ছেন কেন?
.
শত হোক বউ তো,বউকে রেখে অন্য একটা মেয়ের কোমড়ে হাত দিই কি করে বলো?
.
ঢং!!! বলার সময় তো আমাকে নিচু করেন সবসময় তাহলে এখন এত দরদ হচ্ছে কেন?
.
শান্ত আহানাকে স্টেজে উঠিয়ে নওশাদ আর সূর্যর সারিতে দাঁড়িয়ে নাচা স্টার্ট করে দিয়েছে
আহানা বাকি মেয়েদের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওরা কোমড় দুলাচ্ছে আর ভাব দেখাচ্ছে এমন অভিনয় করতেছে
আহানাও তাই করলো
কণা রেগে স্টেজ থেকে নেমে চলে গেছে আরও আগে
শান্ত কাছে এসে আহানার হাত ধরে গানের লাইন বলতে বলতে ওকে ঘুরালো,আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”আপনার ভিতর আর বাইরের অভিনয় টা দেখে কেউ বলবে না যে আপনি আপনার বউকে তাওয়ায় টালেন ডেইলি”
.
শান্ত মুচকি হেসে আহানাকে ঘুরিয়ে এনে বললো”সেটা যেই যাই বলুক,আমার বউয়ের কোমড় দোলানো বাকিদের থেকে একটু বেশিই ভাল্লাগতেছে
.
আজ মনে হয় সূ্র্য মামা এলোমেলো হয়ে অস্ত যাবে,আপনার হাবভাব দেখে সুবিধা লাগছে না
.
শান্ত হেসে আহানাকে ছেড়ে আরেকটা স্টেপ নাচতে নাচতে বললো”সত্যিটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি?”
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে