প্রেমের পাঁচফোড়ন ২ পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
1928

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৩
#Writer_Afnan_Lara
🌸
গান শেষ হতেই সবাই স্টেজ থেকে নেমে যাচ্ছে
আহানা শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছে,আর শান্ত সে তো দাঁত কেলিয়ে শুধু হাসতেছে আজ
কি হয়েছে এই ছেলেটার!!
.
গায়ে হলুদের বিরিয়ানি খাওয়া শেষে রিয়াজ দাঁড়িয়ে তার মাকে বলতেছে একটা রুম খালি করতে
শান্ত পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বললো”রিয়াজ আজ যাই,কথা দিচ্ছি কাল ভোরেই এসে পড়বো”
.
তা হচ্ছে না,আমি তোর আর আহানার জন্য আলাদা একটা রুম খালি করে ফেলেছি,তোরা আজ আমার বাসাতেই থাকবি
কথা ছিলো আমার বিয়ের ৭দিন আগে আসবি সেটা রাখোসনি তো এটা রাখতেই হবে
.
কিহ?এক রুমে আমি আর আহানা?ইম্পসিবল,আহানা এটা শুনলে আমাকে কাঁচা গিলে খাবে আর আমার পক্ষেও পসিবল না আহানার সাথে এক রুমে রাত কাটানোর
.
শুন,শান্তি আন্টি আর আহানার আম্মু,নিতু ওরা কাল আসবে,তোরা আজ থেকে যা,তোদের পরার সব ওরা আসার সময় নিয়ে আসবে,আমি আর কিছু শুনতে চাই না ব্যস
.
আহানা এগিয়ে এসো বললো”কি হয়েছে রিয়াজ ভাইয়া?”
.
আহানা তোমার কি শান্তর সাথে এক রুমে থাকতে কোনো প্রবলেম হবে?তোমরা তো হাসবেন্ড ওয়াইফ,প্রবলেম হওয়ার তো কথা না
.
কি বললেন?আমি তাও উনার সাথে এক রুমে?ইম্পসিবল এটা,হতেই পারে না
.
দেখলি,আমি বলেছিলাম না?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আরেকদিকে চলে গেলো
.
শান্ত তোকে আমি আমার রুমে শুতে বলতে পারতাম বাট কথা হলো আহানা কার সাথে ঘুমাবে?আমার কোনো বড় বোন নেই
যে পিচ্চি একটা আছে সে মা বাবার সাথে ঘুমায়,অন্য কারোর সাথে মরে গেলেও ঘুমাবে না সে,তো আহানা একা রুমে ঘুমাক??এতে তোর কোনো সমস্যা না হলে বল
.
একা?না ওকে একা রুমে দেওয়া যাবে না,ওর সেফটির জন্য আমি ওকে বিয়ে করেছি সেই আমি কিনা ওকে একা অজানা জায়গায় আলাদা রুমে ঘুমাতে দিব?
.
তাহলে একসাথেই এক রুমে থাক,একজন সোফায় আরেকজন বিছানায়,থিংক সামথিং ফিল্মি
.
এহহহহ!আহানা আমাকে সোফায় শুতে বলবে,যে মেয়ে তুই চিনস না ওরে
.
তো তুই তো সোফাতেউ ঘুমাবি,ফিল্মে তো ছেলেরাই সোফায় ঘুমায়
.
আহানা আবার এসে বললো”সোফায় শোয়ার কথা আসে কোথা থেকে?আমি তো উনার সাথে এক রুমেই ঘুমাবো না
.
রিয়াজ প্লিস মেনে যা,আমি সত্যি ভোরে রওনা দিব কাল
.
না আমি মানবো না এমনিতেও আজ তুই দেরি করে এসেছিস,আমি কিছুতেই মানবো না,নওশাদ,সূ্র্য থেকে যাচ্ছে তাহলে তোর কি সমস্যা?
.
শান্ত আহানার দিকে তাকালো,আহানা অনেক ভেবেচিন্তে তারপর রাজি হয়ে গেলো শেষমেষ
করিডোরের শেষপ্রান্তে যে রুমটা আছে সেটাতে আহানা আর শান্তকে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে রিয়াজ
তারপর শান্তর কাঁধে দুম করে হাত রেখে ওর পিঠ ঘষতে ঘষতে বললো”জাস্ট চিল!!ফ্রেশ হয়ে নে আমি নাস্তা পাঠাচ্ছি”
রিয়াজ হেসে চলে গেলো
আহানা শান্তর দিকে রাগী রাগী মুখ করে রুমটার ভিতরে ঢুকে ওর মাথায় মনে হয় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে
গোলাপের পাপড়ি দিয়ে বিছানাটায় লাভ শেফ করে আঁকা ভিতরে লিখা(S+A)
আহানা চোখ রাঙিয়ে শান্তকে ডাক দিলো,শান্ত এখনও করিডোরে,ফোন দেখতে দেখতে ভিতরে ঢুকে বললো “আবার কি সমস্যা”
.
কি সমস্যা? দেখুন কি সমস্যা!!
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বিছানার দিকে চেয়ে এমন অবস্থা দেখে হাসলো তারপর সোফায় বসতে বসতে বললো”আমার ফ্রেন্ড তো একটু মজা করেছে,ফুলগুলো সরিয়ে বসো,এত অবাক হওয়ার কি আছে?
.
আহানা অবাক হলো এই ভেবে যে শান্ত একদম নরমালি কথা বলতেছে,সে ভাবলো শান্ত হয়ত অন্য কিছু বলতো এরকম সাজানো দেখে
.
আহানা তাই চুপচাপ পাপড়িগুলো সরিয়ে পা তুলে বিছানায় বসে পড়লো,শাড়ীটা ভারী হওয়ায় আহানার অস্বস্তিকর লাগতেছে অনেক
চুপচাপ খোলাচুল গুলো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে খোঁপা করে সে বাইরের দিকে তাকালো,একটা জানালা,এই রুমে কোনো বারান্দা নেই,তবে জানালাটা ফ্লোর থেকে ছাদ পর্যন্ত,এরকম অদ্ভুত জানালা আহানা আগে দেখেনি তবে এমন ডিজাইন অনেক ইউনিক আর সামনে দাঁড়ালে বেশ লাগবে,যে ডিজাইনটা করেছে তার নিশ্চয় মন অনেক সুন্দর,কারন মন সুন্দর থাকা মানুষগুলোরই চিন্তাভাবনা এত সুন্দর হয়
এরকম জানালা থাকলে আর বারান্দার প্রয়োজন নেই
আহানা মুচকি হেসে এবার বিছানার উপরে থাকা গোলাপের পাপড়িগুলোর দিকে তাকালো তারপর সোজা শান্তর দিকে
শান্ত আজকে যে নেচেছিলো সে ভিডিওগুলো দেখতেছে আর মিটমিট করে হাসতেছে তার এদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই
.
আহানা ফুলগুলো হাতে নিয়ে আবার নিচে ফেলছে আবার সেগুলো তুলে আবারও ছিঁটাচ্ছে
ঐ যে কথায় আছে না”নেই কাজ তো খই ভাজ”
অনেকটা সেরকমই
.
একজন মহিলা এসে হাজির হলেন কিছুক্ষণের মধ্যেই,গায়ের পোশাক আশাকে বোঝা যায় উনি এই বাসার হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে কাজ করেন
উনি হাতে একটা ট্রে নিয়ে এসেছেন,সম্ভবত চা আর বিসকিট
সাথে একটা প্যাকেট তার হাতে
ট্রেটা বিছানার উপর রেখে তিনি বললেন “রিয়াজের আম্মু এই পাঞ্জাবি আর এই শাড়ী এমনিতেও উপহার হিসেবে দিতেন ওদের,আর আজ ওরা এখানে যেহেতু থেকে যাচ্ছে বারতি পরার কিছু নেই তাই উপহারটা এখনই পাঠালেন,তারা যেন চেঞ্জ করে নেয়”
আহানা তো মহাখুশি,সে তার গায়ের এই ভারী শাড়ী খুলবে,তাই জলদি করে প্যাকেটটা থেকে শাড়ীটা বের করে নিয়ে সে বাথরুমে দৌড় দিলো
শান্ত কানে ফোন ধরে সূর্যর সাথে কথা বলতে বলতে চা খাচ্ছে
আহানা শাড়ীটা পরতে ওরতে ওর মনে পড়লো চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে
তাই আঁচলটা গায়ে পেঁচিয়ে দৌড় দিয়ে বেরিয়ে সে ট্রেটা থেকে চায়ের কাপ হাতে নিতেই ওর মনে হলো কেউ ওর দিকে ভূত দেখার মতো তাকিয়ে আছে
আহানা আঁচলটা পেঁচিয়ে বিছানায় বসতে বসতে বললো”এমন করে কি দেখেন আপনি?বিয়ে করেই খালাশ??আমার প্রতি আপনার আর কোনো দায়িত্ব নেই তাই না?নিজে বসে চা খাচ্ছেন,আমি খেলাম কিনা সেদিকে কোনো খবর নেই আপনার
.
তুমি তো শাড়ী পেয়ে দুনিয়া ভুলে বাথরুমের দিকে দৌড় দিসো,আমি আর কি বলতাম?
.
নাচেন,কিছু বলতে হবে না
.
এটা কি শাড়ী পড়ছো?এটা কে শাড়ী পরা বলে?মনে হচ্ছে বাঁশের উপর কেউ নেকড়া টাঙিয়ে দিয়েছে
.
আহানা চোখ বড় করে বললো”আমাকে দেখে আপনার বাঁশ মনে হয়?
.
নেকড়াও হতে পারে
.
আহানা রেগে শান্তর দিকে পা বাড়াতেই উল্টা পাল্টা করে শাড়ী পরায় শাড়ী ফ্লোরে নেমে এসেছিলো অনেকটা তো সেটায় পা দিয়ে পিছলিয়ে শান্তর গায়ের উপর গিয়ে পড়লো সে একেবারে
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বললো”রোমান্স করতে মন চায় বুঝি?তাহলে বিছানার পাপড়ি গুলা এলোমেলো করলে কেন?
.
আহানা দূরে সরে গিয়ে এক চুমুকেই কাপের সব চা শেষ করে শাড়ী ধরে বাথরুমের দিকে চলে গেলো
.
শান্ত হাসতে হাসতে বিছানায় বসে একটা বিসকিট মুখে দিয়ে আবারও ভিডিও দেখায় মনোযোগ দিলো
.
আহানা ঠিকমত শাড়ীটা পরে বেরিয়ে জানালার ধারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে
জানালাটার সামনে সব সুপারি গাছ,মনে হয় সুপারি বাগান হতে পারে,পরিষ্কার বাগান,এখানে হেঁটে আসতে মন্দ লাগবে না
আহানা খুশি হয়ে পিছনে তাকালো,ওমা শান্ত নেই
আহানা দরজা খোলা দেখে সেও বের হলো,করিডোর ফাঁকা,দূরে মানুষের কোলাহল শোনা যাচ্ছে
আহানা সেদিকেই গেলো,সোফায় রিয়াজের বাবা আর নানা দাদা সবাই একসাথে বসে চা খাচ্ছেন আর কাল বিয়ের বাবুর্চির রান্না নিয়ে কথা বলতেছেন
আহানা মাথায় গোমটা দিয়ে সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলো,শান্তকে দেখতে পেয়ে মনটা জুড়ালো তার
শান্ত দূরে একটা সুপারি কাছের সাথে আটকানো সিটে বসে রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে,পাশেই নওশাদ সুপারি গাছটাতে উঠার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে
সূ্র্য লুকিয়ে নওশাদের ভিডিও করতেছে তার ফোনে
আহানা তাই আর সেদিকে গেলো না
নওমিরা সবাই চলে গেছে,কাল একেবারে ওর বাড়ি থেকে বিয়ে করে ওকে নিয়ে আসবে রিয়াজ ভাইয়া
আহানা সুপারি বাগানটার দিকে গেলো,জায়গাটা এত সুন্দর তার উপর বিকালবেলা, হাঁটতে জোস একটা ফিলিং আসতেছে আহানার
আহানা হেলেদুলে পুরো সুপারি বাগানটা ঘুরে দেখতে লাগলো
সুপারি বাগানটা যেখানে শেষ সেখানে বিরাট ঘাট দেওয়া একটা পুকুর
ঘাটটা দেখে আহানা রীতিমত অবাক
দৌড়ে ঘাটটার কাছে এসে দাঁড়ালো সে
দুপ করে বসে পুকুরটার দিকে চেয়ে রইলো আহানা,পুকুরটার চারপাশে বন আর বন, ওপারে কি আছে তা বোঝা দায়
আহানা এই ভেবে নিজের মাথা নিজে চাপড়ালো যে
কয়েক মাস আগে হলো সে এই পুকুরে ডুব দিয়ে মরে যাওয়ার চিন্তা করতো
আর এখন জীবনটা তার পুরো বদলে গেছে,মরার প্রশ্নই আসে না এখন
আহানা দেখলো পুকুরটার পশ্চিম পাশের কোণায় একটা গোলাপি রঙের পদ্ম ফুটে আছে একলা একলা
আহানা নিজের গায়ের দিকে একবার তাকালো,তার গায়ের শাড়ীটাও সুতির গোলাপি রঙের,এখন যদি সে ফুলটা পায় তাহলে সেই মানাবে
ভাবতে ভাবতে সে ঘাট থেকে নেমে সেদিকে ছুটলো, কথা হলো গিয়ে বন পেরিয়ে যেতে হবে
আসার সময় শান্তকে নিয়ে আসলে ফুলটা এতক্ষণে আমার মাথায় থাকতো,কি আর করার,এখন আবার বাগান পেরিয়ে তাকে ডাকতে যেতে পারবো না,সাথে করে ফোনটাও আনিনি
সাপ টাপ না থাকলেই হয়,আহানা শাড়ীটা একটু উঠিয়ে পা টিপে টিপে বন মাড়িয়ে পুকুরটার কোনায় এসে দাঁড়ালো,তারপর একটা শুকনো লাঠি খুঁজে সেটা নিয়ে ফুলটাকে কাছে এনে পানি থেকে তুলে নিয়ে ডাঁটাটা ফেলে দিলো
তারপর ফুলটা খোঁপায় বেঁধে নিলো,ইস কি যে ভাল্লাগতেছে,এবার নিজেকে আয়নায় দেখে মনটা জুড়াবো
এটা বলেই আহানা পিছন ফিরে নিচের দিকে তাকাতেই
তার সামনে দিয়ে কি একটা যেন গেলো,সে পুরোটা না দেখলেও লেজ দেখেছে
আর লেক দেখেই বোঝা গেছে এটা মাটিয়া সাপ
আহানা মনে হয় জীবনে এত জোরে চিৎকার দেয় নাই এখন মাত্র যে চিৎকারটা দিলো
পুরো পুকুর কেঁপে উঠেছে,এমনকি আহানার চিৎকার শান্তর কানেও গেছে
শান্ত সিট থেকে নেমে সুপারি বাগানটার দিকে চেয়ে রইলো তারপর বললো”এটা আহানার আওয়াজ না?
.
আহানা তো রুমে,ওদিকে আসবে কেন?
.
শান্তর কেন যেন ভয় লাগলো,দেরি না করে সে সেদিকে ছুটলো
সুপারি বাগানটার চারিদিকে একবার চোখ বুলাতে বুলাতে থেমে গেলো সে,দূরের পুকুরটার কোণায় গোলাপি রঙের শাড়ী পরা কাউকে দেখলো সে,রঙটা ঘাড়ো হওয়ায় সহজেই চোখে পড়েছে
শান্ত আরেকটু এগিয়ে এসে বুঝলো এটা আহানা
.
আহানা?তুমি এখানে কি করতেসো?এত জঙ্গলের ভিতরে গেসো কেন?
.
আমাকে বকা বাদ দিয়ে আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান,এখানে একটা মাটিয়া সাপ দেখসি,আমি মরে যাব,আমাকে বাঁচান
.
ভালো হয়েছে,তেমাকে কে বলেছিলো এত বনের ভেতর যেতে,ওয়েট আমি আসতেছি
শান্ত বন পেরিয়ে আহানার কাছে এসে ওর হাত ধরে নিয়ে আসলো
.
কেমন হাসবেন্ড আপনি?
.
যাক বাবা,আবার কি করলাম?
.
আহানা কপাল কুঁচকে কিছু না বলেই বাসার দিকে চললো
.
এই মেয়ের মাথায় মাঝে মাঝে কি চলে আমি বুঝি না,হাত ধরে নিয়ে আসলাম আর সে বলে কেমন হাসবেন্ড আমি??
ওহহহহ,আচ্ছা তুমি চাইসো তোমাকে কোলে করে আনা দরকার ছিলো??
.
আহানা জিভে কামড় দিয়ে হাঁটার গতি বাড়িয়ে ছুটেছে
.
শান্ত মুচকি হেসে দিয়ে সেও আসতেছে
আহানা এবার দৌড়ই দিয়ে দিলো,খোঁপাটা খুলে মাথার ফুলটা পড়ে যেতে নিতেই শান্ত ফুলটা ধরে সাথে আহানার হাত ও ধরে ফেললো
.
না সত্যি আমি কোলে নেওয়ার কথা মিন করে বলিনি
.
আমি কি বললাম তুমি কোলে নিতে বলেছিলা,আমি তো তোমার মাথার ফুলটা ধরলাম পড়ে যাচ্ছিলো,নাও ধরো এটা পরে নাও
বাচ্চাদের মত কান্ডকলাপ করে,ফুল নিতে উনি আফ্রিকার জঙ্গলে গিয়ে জামাই জামাই করে আসতে না পেরে
জঙ্গলে যাওয়া তাদেরকেই মানায় যারা এদের খাওয়ার সাহসিকতা রাখে,ঐ যে ম্যান বাসসেস ওয়াইল্ড শো টা দেখিও
ঐ লোকটা খায় না জঙ্গলের এমন কিছু বাদ নাই
.
এটা আফ্রিকান জঙ্গল ছিলো না,পুকুরের পাশে এরকম বন টন থাকেই
.
তো তাহলে চিল্লাচ্ছিলে কেন?
.
সাপ দেখছিলাম তাই,হইসে হইসে,এত সাপাই কেন দিচ্ছি আপনাকে?কে আপনি??আমার থেকে এত কৈফিয়ত কেনোই বা নিচ্ছেন?
.
শান্ত রেগে আহানার চুলের মুঠি টেনে ধরতেই রিয়াজের আম্মু সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লেন
.
শান্ত জিভে কামড় দিয়ে বললো”আহানা,চুলের একটুও যত্ন নাও না,কেমন উষ্কখুষ্ক হয়ে আছে,মাঝে মাঝে তেল ও তো লাগাতে পারো
.
রিয়াজের আম্মু মুচকি হেসে বললেন”শান্ত আহানা আসো তোমরা সোফার রুমে এসে বসো,আমি পাঁচ পিঠা বানিয়েছি,খেতে আসো
.
আহানা নিজের চুল ছাড়িয়ে ব্রু কুঁচকে চলে গেলো সেদিকে
.
শান্ত এগিয়ে যাওয়া ধরতেই নওশাদ সূর্য কোমড়ে হাত দিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়ালো
.
কি ব্যাপার কি চাই?
.
সত্যি করে বল তুই আহানার চুল টেনে ধরছিলি কেয়ার দেখাতে নাকি রেগে?
.
শান্ত দাঁত কেলিয়ে যেতে যেতে বললো”দুটোই”
.
সূর্য নওশাদের কাঁধে হাত দিয়ে চশমা ঠিক করে বললো”আহানা যেমন গরম তেলের মতন,তেমনই শান্ত শুকনো মরিচের মতন,দুটোই একসাথ হলে ফোড়নের সৃষ্টি হয়
কোনোটাই কোনোটা থেকে কম যায় না বুঝলি
.
হুম ঠিক বলেছিস
.
আহানা সোফায় এসে বসতেই ২মিনিট বাদে একজন বয়স্ক মহিলা এসে বসলেন ওর পাশে
আহানা উনাকে সালাম দিলো,সম্ভবত রিয়াজের দাদি হোন উনি
উনি আহানাকে ভালো করে দেখে বললেন”তোমার আর আমার নাতি শান্তর নাকি নতুন বিয়া হইছে?”
.
আহানা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বললো
.
উনি চমকে বললেন”তাহলে তোমার গলায় কানে স্বর্ণ কই?নতুন বউরা এমন বেশে থাকে না তো
.
আহানা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না,শান্ত কোথা থেকে এসে ওর পাশে বসে নিজের গলার স্বর্নের চেইনটা খুলে ওকে পরিয়ে দিতে দিতে বললো”আরে দাদি!!ওকে একটু বুঝান,ওর নাকি এসব পরলে ঘুম হয় না,তাই সব খুলে রাখছে,নেন আমি আমার গলারটাই পরিয়ে দিলাম”
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
দাদি শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন”এভাবেই সবসময় বউয়ের পাশে ছায়া হয়ে থাকবা কেমন?”
.
শান্ত মাথা নাড়তে নাড়তে একটা পিঠা নিয়ে মুখে দিলো

সন্ধ্যার পর আহানা সেই আবার বিছানায় এসে বসেছে,শান্ত সোফায় গোল হয়ে বসে তার ফোনে কি যেন কাজ করছে,মনে হয় অফিসের কোনো কাজ
আহানা গম্ভীর লুক নিয়ে ওকে দেখে যাচ্ছে,আর শান্ত ভুলেও তাকাচ্ছে না আহানার দিকে
এবার আহানার ফোন বেজে উঠেছে,মায়ের কল
আহানা হ্যালো বলতেই মা এক গাদা বকা শুরু করে দিয়েছেন
বকার মূল টপিক হলো একা কোথায় ঘুমাবে,কার সাথে ঘুমাবে আজ রাতে
মা তো আর জানে না উনার গুনধর মেয়ে বিয়ে করে বসে আছে,আর সে এখন তার বিয়ে করা বরের সাথে এক রুমে আছে
আহানা ফোনটা এক সাইডে রেখে বালিশ চাপা দিয়ে ফিসফিস করে শান্তকে ডাকলো
শান্ত ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে বললো”কি?”
.
আমাদের যে বিয়ে হয়েছে সেটা আমার মাকে বলবো?
.
খবরদার না!!মা জানলে আমাকে ফ্রেন্স ফ্রাই করবে
.
আহানা ঢোক গিলে বালিশের তলা থেকে ফোন নিয়ে বললো”মা শুনো,আমি রিয়াজ ভাইয়ার ছোট বোনের সাথে ঘুমাবো আজ”
.
মা এবার একটু থামলেন তারপর বললেন “শান্ত কোথায়? ওকে দে”
.
আহানা বিছানা থেকে নেমে শান্তর দিকে তার ফোনটা বাড়িয়ে ধরলো
শান্ত হাতে নিয়ে হ্যালো বলে সব কিছুর উত্তরে জি জি বলে যাচ্ছে শুধু
.
কথা শেষ হতেই আহানা ওকে জিজ্ঞেস করলো” কি বললো মা?”
.
বললো আহানাকে দেখে রেখো,বেশি বাঁদরামো করে,শয়তানি করে এসব,তোমাকে প্রয়োজনে মেরে ঠিক করারও অধিকার দিয়ে দিসে আমাকে
মাই গড!! আমার হাতটা কেমন পিনপিন করছে,কাউকে পেটালে খুব ভালো লাগতো
.
আহানা ভ্রু কুঁচকে আবার বিছানায় এসে বসলো,কি বোরিং লাগতেছে,এভাবে কতক্ষণ ধরে এই ছেলের মুখই দেখে যাবো আমি?
দেখতে দেখতে সব মুখস্থ হয়ে গেছে আমার
তার বামপাশের ব্রুর সাথে এটাচড একটা মাঝারি সাইজের তিল আছে
নাক এত চিকন বাপরে বাপ,ছোটবেলায় আমি নাকি বিছানা থেকে উলটে এর নাকের উপর গিয়ে পড়েছিলাম তাহলে নাক এত চিকন কেমনে,ভোঁতা হয়ে যাওয়ার কথা তো!
মা তাহলে ভুল বলেছে,বরং সেই আমার নাকের উপর এসে পড়েছে
এদিকে বাইরে বের হয়ে যে ঘুরঘুর করবো তার ও উপায় নেই,এখানের কারোর সাথেই কম্পোর্ট ফিল করি না,সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যস্ত
আর আমার বরকে দেখো সেও তার অফিসকে ফোনের মাধ্যমে এই রুমে ঢুকিয়ে ফেলেছে
আমি কি করতাম??আমি বরং ঘুমাই,কিন্ত এই সন্ধ্যাবেলায় ঘুমানো কি ঠিক হবে?
মা তো বলে সন্ধ্যায় ঘুমালে নাকি ফকির হয়ে যায়
উফ!!
.
শান্ত ফোন থেকে চোখ সরিয়ে ওর দিকে চেয়ে বললো”মনে মনে আমাকে গিলে খাচ্ছো কেন?”
.
শান্তর এমন সত্যি কথা শুনে আহানার কাশিই উঠে গেলো,কাশতে কাশতে বললো”কিসের গিলে খাওয়া,আমি কাঁচা জিনিস খাইনা
.
তাহলে আরেকদিকেে ফিরে বসে থাকো,আমি খেয়াল করছি সেই কখন থেকে তুমি ড্যাবড্যাব করে আমাকেই দেখতেছো
.
তো কি করবো,রুমে আর কোনো জন্তু থুক্কু মানুষ নাই,কার দিকে তাকাবো?
আমার বেরিং লাগতেছে
.
বোরিং লাগতেছে?
.
হ্যাঁ
.
কাজ পাচ্ছো না?
.
হ্যাঁ
.
২মিনিট,তোমাকে একটা কাজ দিব ওয়েট
.
শান্ত সোফার থেকে উঠে রুম থেকে চলে গেলো
তারপর ফেরত আসলো দুটো বাটি নিয়ে
একটা খালি আরেকটাতে পোলাও চাল আর মসুর ডাল মিক্স করা
শান্ত আহানার হাতে বাটি দুটো ধরিয়ে দিয়ে বললো”নাও বেছে বেছে এই খালি বাটিতে মসুর ডাল রাখো,তোমার তো কাজ নাই,আঞ্চলিক ভাষায় একটা প্রবাদ আছে”কাম না থাকলে ডালে চালে মিলাইয়া বাছো”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে বাটি গুলো নিয়ে ভিক্ষুকের মত বসে রইলো
শান্ত আবার সোফায় গিয়ে নিজের কাজে মন দিয়েছে
আহানা ডাল চাল আলাদা করতে করতে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে ততক্ষণে,বাটি এক জায়গায়,ডাল আরেক জায়গায়,চাল আরেক জায়গায়
আহানা হাত পা ছড়িয়ে মরার মতো ঘুমাচ্ছে তো ঘুমাচ্ছে
.
শান্তর কাজ শেষ,হাতের ঘড়িতে চেয়ে দেখলো রাত সাড়ে ৮টা বাজে,তারপর সামনে তাকাতে তার চোখ কপালে
আহানা হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুম দিছে একদম
বাটি একটা পায়ের কাছে আরেকটা মাথায় টুপির মতন হয়ে আছে,সারা বিছানায় গোলাপের পাপড়ির জায়গায় এখন চাল আর চাল,ডাল আর ডাল
শান্ত নিজের মাথায় এক বাড়ি দিয়ে কাছে এসে দাঁড়ালো
.
এই মেয়েটা একটা ২বছরের বাচ্চাকেও হার মানাবে,এত বড় একটা মেয়ে হয়েছে আর তার কাজ দেখো!
.
শান্ত আর আহানাকে জাগালো না,রুম থেকে বেরিয়ে গেলো রিয়াজের রুমের দিকে
সেখানে নওশাদ, সূর্য ও আছে
রুমে ঢুকে দেখলো রিয়াজ সোফায় লম্বা হয়ে শুয়ে শুয়ে ভিডিও কলে নওমির সাথে কথা বলতেছে
নওশাদ টিভি দেখতে দেখতে পপকর্ণ চিবোচ্ছে
আর সূর্য পাবজি খেলায় ব্যস্ত
শান্ত চুপচাপ বিছানায় এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো
নওশাদ টিভি দেখতে দেখতে বললো”কিরে?আহানা তোরে বিছানায় জায়গা দেয়নি?”
.
রিয়াজ ভিডিও কলটা রেখে বললো”আমি তো তোকে সোফায় শুতে বলেছিলাম,সেটাও দখল করলো নাকি?”
.
সোফায় শোয়ার অভ্যাস নাই আমার,আর রইলো কথা বিছানার
আহানার টাইম যাচ্ছে না বলে ওরে ডাল চাল মিক্স করে আলাদা করতে দিয়েছিলাম,সে এখন খিচুড়ি বানিয়ে ফেলেচে বিছানায়
.
সূর্য নওশাদ আর রিয়াজ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছে
.
শান্ত মুখ বাঁকা করে পপকর্ণ মুখে দিয়ে টিভি দেখায় মন দিলো
আহানা ৯টা বাজার কয়েক মিনিট আগেই জেগে গেছে,বিছানার এমন অবস্থা দেখে নিজেই লজ্জা পেলো তারপর জলদি করে চাল ডাল সব বাটিতে নিয়ে বিছানা ঠিক করে মুখটা ধুয়ে এসে রুম থেকে বের হলো সে
রিয়াজ ভাইয়ার রুম থেকে চিল্লাপাল্লা শোনা যাচ্ছে,আহানা সেদিকে না গিয়ে রিয়াজের আম্মু যেখানে সেদিকেই গেলো
উনি রিয়াজের দাদি আর নানিকে নিয়ে নওমিকে কি কি গহনা দিবেন সেসব হিসাব করতেছেন
আহানা সেখানে এসে বসলো,রিয়াজের নানি বললেন”তা আহানা তোমাকে শান্তর মা কেমন গহনা দিয়েছিলো?”
.
আহানা ভাবলো এত মিথ্যা না বলে সত্যিটাই বলে দিই
.
আসলে উনারা জানেন না আমরা যে বিয়ে করেছি
.
ওমা কি কও!জানে না কেন?
.
একটা কারণে,পরে জানবে,আপনারা প্লিস আমার মা আর শান্তি আন্টিকে কিছু জানাবেন না
.
উনাাদের ঘাড়ে এত কাজ যে তারা আহানার কথায় মাথা নাড়িয়ে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে
আহানা এবার উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি নিলো ডাইনিং টেবিল থেকে তারপর অন্ধকার করিডোর দিয়ে রোবটের মতো হেঁটে হেঁটে রুমটার দিকে যাচ্ছে সে
শান্ত রিয়াজ, সূর্যর সাথে চুটিয়ে মদ খেয়েছে এতক্ষণ
এবার ওদের বাই বলে রুম থেকে বের হতেই আহানার সাথে এক ধাক্কা খেলো সে
আহানা প্রথমে ভয় পেলেও পরে গায়ের ঘ্রানে বুঝলো এটা শান্ত
.
কোথায় ছিলেন আপনি?
.
তোমার কি?
.
শান্ত তাদের রুমের দিকে চললো
আহানা নাকে হাত দিয়ে আসতেছে পিছু পিছু,মদের তীব্র গন্ধ ভাসতেছে চারিদিকে
শান্ত হেলেদুলে দুম করে বিছানায় এসে শুয়ে পড়েছে
আহানা কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে এসে বললো”আপনি মদ খেয়েছেন?”
.
হু
.
কেন?কে ছ্যাকা দিছে আপনাকে?
.
মদ খাইতে ছ্যাকা লাগে না,এমনিও খাওয়া যায়,মাথা খারাপ করিও না যাও
.
কোথায় যাব,আমার এই বাসায় ভাল্লাগতেছে না,মনে হয় আমার পৃথিবীতে আমি ছাড়া কেউ নাই,কোথায় ভাবলাম আপনার সাথে ঝগড়া করবো সেটাও হলো না,আপনি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গেছেন
.
শান্ত শোয়া থেকে উঠে বসে পাঞ্জাবির ২টা বোতাম খুলে বড় করে শ্বাস নিলো তারপর বললো”আমি মদ খেলে আমাকে নেশায় ধরে না,হেভিট আছে”
.
ওহ
.
জি,তো ঝগড়া করতে মন চায় বুঝি আপনার?
.
না থাক
.
আহানা সোফায় গিয়ে বসে পানিটুকু খেয়ে চুপ করে রইলো
শান্ত আবারও শুয়ে পড়েছে
আহানার নজর গেছে এবার শান্তর ফোনের দিকে
পা টিপে টিপে সে শান্তর কাছে এসে ফোনটা নিয়ে আবারও এক দৌড়ে সোফায় চলে আসলো
ওমা ফোন দেখি ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক
কি করা যায়,ভাবতে ভাবতে আহানা শান্তর কাছে এসে ওর ডান হাত নিলো
এক এক করে ডান হাতের পাঁচটা আঙ্গুল মেলালো কিন্তু লক খুললো না
এবার বাম হাতের আঙ্গুল গুলো দিতে যেতেই শান্ত চোখ খুলে অগ্নি দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে থাকলো
আহানা মনে হয় হার্ট এটাক হয়ে মরেই যাবে
হাত থেকে ফোনটা ছেড়ে পালাতে নিতেই শান্ত টান দিয়ে ওকে কাছে নিয়ে আসলো
.
ঠিক ধরেছিলাম আপনাকে নেশায় ধরেছে
.
জি না,কাছে এনেছি কি কিস করতে নাকি?কাছে এনেছি দেখাতে যে আমার ফোনের লক কি করে খুলে,তুমি হুদাই চোরের মতো বিহেভ করো
.
শান্ত নিজের বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলটা দিয়ে খুললো লক
.
আহানা ভালো করে দেখে নিয়ে বললো”ভালো তো!! আমাকে দেখান কেন,আমার কি এতে?”
.
তুমি না মূহুর্তের মধ্যে রুপ,মতলব দুটোই পাল্টাতে পারো
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে আবারও সোফায় এসে দপ করে বসে পড়লো
শান্ত শুয়ে শুয়ে ফোন টিপে টিপপে বললো”মাকে বিয়ের ব্যাপারটা মায়ের মুড দেখে বলবো একদিন,এভাবে লুকিয়ে বিয়ে করে নিয়েছি হুটাহাট করে তা তো আর বলা যায় না
আমার মা আবার রাগ করার কত কারণ বাঁধায় করে রাখেন সবসময়
যত রাগ সব আমার উপর দিয়েই ঝাড়ে,কারণ আমি তাকে ভয় পাই তাই
আমি বলা ছাড়া তুমি বলবা না,তুমি তোমার মতো থাকো,বিয়েটা করেছি জাস্ট একটা রিজনে
আমাদের মধ্যে না কখনও স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে হবে
না কোনোদিন আমরা একজন আরেকজনকে মেনে নিব
.
আপনার রিপিট করতে হবে না,আপনি আমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলেও আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানতে নারাজ,আপনাকে আমার জাস্ট ভাল্লাগে না
.
কি কারণে?
.
প্রথমত ছেলে হয়ে আমার সাথে পাল্লা দিয়ে ঝগড়া করেন সবসময়
দ্বিতীয়ত আমার মধ্যে কোনো গুন দেখেন না দেখতেও চান না, সারাদিন দোষটাই দেখেন
তৃতীয়ত মারামারি বেশি করেন আমার সাথে
.
এবার শুনো আমার কাছে তোমাকে কেন ভাল্লাগে না
.
আগে শুনুন,আমাকে যদি বিচ্ছিরি আর কোনোদিন বলেছেন তো নেক্সট টাইম আমি শাড়ী পরে চুল ছেড়ে দিলে যদি হা করে চেয়ে থাকতে দেখি আপনাকে তো থাপ্পড় আরও একটা দিব
.
বলতে তো দিবা
প্রথমত তুমি তোমার চেয়ে বয়সে বড় একটা ছেলের সাথে সারাদিন ২৪ঘন্টা ঝগড়া করো
দ্বিতীয়ত আমার কাজে উল্টা পাল্টা কান্ড ঘটাতে তুমি ওস্তাদ
তৃতীয়ত আমাকে প্রচুর জ্বালাও
.
তো?এরপরেও তো জোর করে ধরে বিয়ে করে নিয়েছেন,সেটার কি হবে? আমি কি বলছি শান্ত ভাইয়া! শান্ত ভাইয়া! প্লিস ম্যারি মি
.
শান্ত ব্রু কুঁচকে চেয়ে থেকে বললো”পাগলেও নিজের ভালো বোঝে বাট আফসোস তুমি পাগল না,পাগলের চেয়েও পাগল
তোমাকে সাইমন উঠায় নিয়ে গেলে তখন তোমার ভাল্লাগতো তাই না?
ভালোই ভালোই উনার লাইফ সেভ করছি আমি
কোথায় থ্যাংকস দিয়ে সকাল বিকাল চায়ের কাপ হাতে আমার সমানে দাঁড়িয়ে থাকবে সেটা না করে উঠে পড়ে লেগে আছে আমি কেন তাকে বিয়ে করেছি তা জানার জন্য
.
আহানা সোফার থেকে একটা কুশন নিয়ে শান্তর গায়ে ছুঁড়ে মেরে বললো”সকাল বিকাল চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো না??আমাকে কি কণা পাইছেন??আমি আপনাকে দিয়ে রুটি বানিয়ে সেটা খাওয়ার ক্ষমতা রাখি,আমি হলাম মিসেস শাহরিয়ার আহানা 😎
.
এহহহ!এক দিক দিয়ে আমার পরিচয় লাগায় নিজের নামের সাথে আবার বলে চায়ের কাপ নিয়ে দাঁড়াবে না উনি
কি বললা আমাকে রুটি বানিয়ে খাওয়ার ক্ষমতা রাখো?
তাহলে আমি যখন বিয়ের জন্য চেপে ধরছিলাম তখন কোথায় ছিল তোমার সো কলড ক্ষমতা?
.
আহানা হালকা কেশে এদিক ওদিক তাকালো তারপর নরমালি বললো”আমি আমার ক্ষমতা ছোটখাটো বিষয়ে ইউজ করি না”
.
বের হও রুম থেকে,কথার কি ছিরি রে বাবা!!
আমার মা নাকি এই মেয়ের গুনে মুগ্ধ!
.
আহানা মুখটা বাঁকাতে বাঁকাতে চলে গেলো রুম থেকে
.
সবাই এক এক করে ডাইনিংয়ে খেতে বসতেছে
আহানা রিয়াজের মাকে হেল্প করলো কিছু তারপর বললো “সে বেশি খাবে না,তার খিধা নাই”
আন্টি তো ওকে শাসন করে বললো “এ বয়সের মেয়ে বেশি বেশি খাবা তাহলেই তো বউ বউ লাগবে,মোটাতাজা”
.
শান্ত ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে আছে, মাথা ফেটে যাচ্ছে তার,একটু কফি হলে ভালো হতো এটা বলেই সামনে তাকিয়ে দেখলো টেবিলের উপর ধোয়া ওঠা কফির মগ
খুশি হয়ে মগটা হাতে নিতেই দরজার দিকে তাকালো সে
আহানা চলে গেছে মগটা রেখে, শান্ত যখন দরজার দিকে তাকালো তখন আহানার শাড়ীর গোলাপি আঁচলটাই শুধু দেখেছে সে
তারপর হেসে কফিটা খেতে খেতে সোফায় হেলান দিলো শান্ত
.
আহানা উঁকি দিয়ে দেখলো আবার,শান্ত কফিটা খাচ্ছে কিনা
হুহ!আমি নাকি বউয়ের দায়িত্ব পালন করি না,এখন কার হাতের বানানো কফি খেয়ে মন জুড়াচ্ছে?
এই লোকটা আমার কোনো গুনই দেখে না
নওমি আপু আবার বললো উনি নাকি বলেছেন আমি শুধু তার
কেউ গলা কেটে বললেও আমি এই কথাটা বিশ্বাস করবো না
চলবে♥

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৫
#Writer_Afnan_Lara
🌸
রিয়াজের মায়ের কড়া শাসনে আহানা অবশেষে ডিনার করতে রাজি হলো,শান্ত কফি খেয়ে একটু চাঙ্গা ফিল নিয়ে রুম থেকে বের হয়েছে সবেমাত্র
আহানা ভেবেছে শান্ত বুঝি আজ খাবার খেতে চাইবে না তাই সে নিজেই এক প্লেট খাবার হাতে করে শান্তর জন্য নিয়ে আসতেছে এদিকে
শান্ত সোজা রিয়াজের রুমে চলে গেছে,সেখানে রিয়াজ,সূর্য আর নওশাদ একজন এক জায়গায় মরার মত পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে আর আবোলতাবোল বলে যাচ্ছে,মদ বেশি খেয়েছে তারা,,তাই এই হাল
শান্ত ওদের সবার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে আবার বেরিয়ে এলো,বের হতেই দেখলো আহানা খাবার হাতে রুমে ঢুকতেছে
শান্ত ও সেদিকে গেলো কৌতুহলবশত
আহানা এদিক ওদিকে তাকিয়ে শান্তকে দেখতে না পেয়ে আবারও পিছন ফিরলো,শান্ত কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে
.
কি ব্যাপার?
.
খাবেন না?আপনার জন্য খাবার নিয়ে এলাম
.
হুম খাবো,একটু দেরিতে,রাত ১০টা বাজে,ঘুমিয়ে পড়ো তুমি
.
কোথায়?বিছানায় নাকি সোফায়?
.
ওকে টস করি,,
.
শান্ত পকেট থেকে একটা ৫টাকার পয়সা নিয়ে বললো সেতু পড়লে আমি,শাপলা পড়লে তুমি সোফায় শোবে
.
ওকে
.
শান্ত পয়সাটা উপরের দিকে মারলো ঘুরিয়ে
শাপলা পড়েছে
শান্ত দাঁত কেলিয়ে বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বিছানায় শুতে গেলো
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বালিশ একটা নিয়ে সোফায় এসে বসেছে
শান্ত কিছুক্ষণ আপন মনে তার ফোনে গান শুনেছে তারপর টেবিলের উপর থেকে খাবারের প্লেটটা নিয়ে খাবার খেয়েও নিয়েছে
আহানা একটা ম্যাগাজিন পড়েছে এতক্ষণ ধরে,সম্ভবত হাস্যরসিক একটা ম্যাগাজিন,সব কৌতুক নিয়ে
আহানা হেসে হেসে অনেকটা সময় পার করলো তারপর চোখে ঘুম নেমে আসতেই সোফায় শুয়ে পড়লো সে
শান্ত গান শুনতে শুনতে এবার তার বিরক্তি এসে গেছে তাই ফোনটা এক পাশে রেখে বিছানা থেকে নামলো রুমের লাইট অফ করতে,চোখ গেলো আহানার দিকে
আহানা হাত পা গুটিয়ে সোফায় কোনোরকম করে ঘুমাচ্ছে
শান্ত লাইটটা অফ করে দিয়ে বিছানায় ফেরত চলে আসলো
পরেরদিন সকালে আহানা চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করেছে,পাশে শান্ত নেই,সোফাতেও নেই
কিন্তু আমি তো সোফায় ঘুমিয়েছিলাম,এখানে এলাম কি করে,আর উনি কোথায়??
আহানা তড়িগড়ি করে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর রুম থেকে বের হতে হতে একবার ঘড়ির দিকে তাকালো সে
৮টা বাজে তখন
বিয়ে বাড়ি বলে কথা,হইচই লেগে আছে চারিদিকে
আহানা করিডোর পেরিয়ে রিয়াজের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় থেমে সেদিকে তাকালো একবার
শান্ত আর নওশাদ মিলে রিয়াজের বিয়ের শেরওয়ানি দেখতেছে আর দাম নিয়ে কথা বলতেছে
আহানা একটু এগিয়ে এসে বললো”এই যে শুনুন”
.
শান্ত পিছনে তাকিয়ে ব্রু কুঁচকালো
এই মেয়েটাকে হাজারবার মানা করার পরেও এই যে শুনুন বলবে আমাকে,আরে আমি কি ওর জামাই লাগি!??
ও হ্যাঁ সত্যি তো এখন জামাই লাগি
ভাবতে ভাবতে শান্ত দরজার কাছে এসে বললো”কি চাই?”
.
আপনি আমাকে সোফার থেকে তুলে বিছানায় এনেছেন তাই না?
.
আমার ঠেকা পড়েছে তাই না?তুমি নিজেই আসছো বিছানায়
.
মিথ্যা বলবেন না একদম,আমি নিজে কেন আসবো?
.
ঘুমের ঘোরে,আর কেন?
.
আপনাকে বলেছিলাম না আমাকে ছুঁবেন না
.
আরেহ তুমি নিজে এসে শুইছো আমার কি দোষ এতে?
.
ঘুমের ঘোরে মানুষ বিছানা থেকে পড়ে যায় শুনেছিলাম আর সোফা থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে বিছানায় এসে শোয় এ প্রথম শুনলাম
.
তাই?
.
তাই?
আপনি!!আপনি খুব খারাপ!
.
আহানা বকতে বকতে চলো গেলো
শান্ত দাঁত কেলিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখছে
কাল রাতে সে আহানাকে তুলে বিছানায় নিয়ে এসেছিলো আর নিজে গিয়ে সোফায় শুয়েছিলো
কারণ আহানা ঘুমের মধ্যে কোমড় ধরে বিরক্তি নিয়ে একবার একদিকে ফিরছিলো বারবার
বোঝাই যাচ্ছিলো যে তার সোফায় শুতে কষ্ট হচ্ছে
এদিকে শান্তর ও অভ্যাস নেই সোফায় শোয়ার কিন্তু কি করবে,আহানার কষ্ট ও সহ্য করা যাচ্ছিলো না সেই মূহুর্তে
.
রিয়াজের আম্মু এসে বললেন শান্তর আম্মু আর আহানার আম্মু এসে গেছে
শান্ত সেদিকে গেলো জলদি করে,আহানার মা আহানাকে দেখে তো অবাক
গোলাপি শাড়ী,গলায় সোনার চেইন,মাথায় গোমটা দিয়ে এদিক ওদিক হাঁটতেছে, যেন বিবাহিত সে
মা এগিয়ে এসে আহানার হাতের কুনুই ধরে টেনে এক কোণায় নিয়ে গেলো
.
আরে মা তুমি,কখন এলে?
.
আগে বল এমন বউ বউ সেজে হাঁটতেছিস কেন?মানুষ তো বলবে তুই বিবাহিত
আর তোর গলার চেইন এটা পেলি কই,দেখে তো সোনার মনে হচ্ছে,আরেহহ এটা তো শান্তর
.
আহানা ঢোক গিলে বললো”ঐ আসলে আমি এটা কুড়িয়ে পেয়েছিলাম,হ্যাঁ এটা শান্ত ভাইয়ারই
উনাকে সকাল থেকে দেখিনি তো তাই গলায় পড়ে নিয়েছি,সুন্দর লাগছে না আমাকে?”
.
হুম
কিন্তু!তোর আর শান্তর হাবভাব আমার কেন জানি সন্দেহজনক মনে হচ্ছে,কি লুকাচ্ছিস তোরা বল তো?
আর সত্যি করে বল কার সাথে কাল রাতে ঘুমিয়েছিলি?
.
আহানা মুখটা শক্ত করে বুকের ভেতর এক বালতি ভয় নিয়ে বললো”রিয়াজ ভাইয়ার বোন মুনমুনের সাথে”
.
কই সে?
.
আহানা কাল থেকে দু তিনবার একটা বাবু টাইপের মেয়েকে দেখেছিলো মনে হয় সে মুনমুন
তাই বললো”দাঁড়াও,ঐ তো সোফায় বসে চিপস খাচ্ছে সে”
.
আচ্ছা
.
শান্ত রুটি মুখে দিয়ে সোফার রুমে আসতেই ওর মায়ের মুখোমুখি পড়লো
আর নিতু ও সোফায় বসে আছে একপাশে,রিয়াজের আম্মু তাদের চা নাশতা দিয়ে চলে গেছেন,আর আহানার মা ওকে চেপে ধরে ফিসফিস করে কি যেন বলতেছে
.
শান্ত পালাতে গিয়েও পারলো না,নিতু ডাক দিয়ে বসলো
শেষে মায়ের পাশে এসে সোফায় বসলো সে
.
এই তো শান্ত এসে গেছে,নে তোর গলার চেইনটা খুলে ওকে দিয়ে দে
.
আহানা কপাল কুঁচকে চেইনটা খুলে শান্তকে দিতে দিতে বললো”ধরেন ভাইয়া,আপনার চেইন,পড়ে গেছিলো এটা আর আমি কুড়িয়ে পেয়েছি,আপনার জিনিস আপনি ফেরত নেন”
.
শান্ত আগামাথা কিছুই বুঝতেছে না,তাও আহানার চোখ রাঙানো দেখে চেইনটা সে ফেরত নিলো
.
আরে আরে আমার মেইন মেহমানরা যে এসে গেছে!!
কথাটা বলে রিয়াজের দাদি এসে আহানার মায়ের পাশে বসলেন
শান্ত আহানাকে চোখ টিপে এদিকে আসতে বললো
আহানা তাই সুযোগ বুঝে উঠে শান্তর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো
.
এই শুনো,দাদি সত্যিটা যদি বলে দেয়?
.
আমি কি জানি?এমনিতেও মা আসার পর থেকে ১০০টা প্রশ্ন করতেছে আমাকে
আপনি সত্যিটা বলে দেন না প্লিস
.
পাগল নাকি!আমার মায়ের মুখ দেখছো আজ??কেমন করে রাখছে
.
উনি মুখ ভার করে রেখেছেন শুধুমাত্র এক কারণে আর সেটা হলো আপনি বিয়েতে রাজি নন
.
এই তোমরা দুজন কি ফিসফিস করতেছো?আমরাও একটু শুনি
.
শান্ত বললো”ঐ আসলে আন্টি! রিয়াজের বিয়ে নিয়ে একটু প্ল্যান করছিলাম আর কিছু না”
.
শান্ত আহানার হাত ধরে সোফার রুমে থেকে বেরিয়ে আসলো,যতক্ষন ওখানে থাকবে ততক্ষনই সবার নানা রকম প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে
শান্ত রিয়াজকে রেডি করতে ওর রুমে গেছে
আর আহানা সেই আগের রুমে বসে আছে চুপচাপ,মায়ের কাছে গিয়ে বসা যাবে না,শান্তর কড়া নিষেধ
মা আহানাকে খুঁজতে খুঁজতে সেই রুমটায় চলে আসলো,রুমে এসে তো মায়ের চোখ কপালে,সারা রুমের ফ্লোরে গোলাপের পাপড়ির ছড়াছড়ি
.
কিরে তুই এই রুমে কি করিস.আর এটা তো দেখি বাসর ঘরের মতন
.
আহানা লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে তোতলাতে তোতলাতে বললো”ইয়ে না মানে কোথাও বসার খালি জায়গা পাচ্ছিলাম না তো তাই এখানে আসলাম”
.
আমার কাছে থাকতি,চল এখান থেকে
.
মা আহানার হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলেন আবার সেই সোফার রুমে
রিয়াজকে রেডি করিয়ে নওশাদ,সূ্র্য আর শান্ত ও রেডি হয়ে নিয়েছে,এবার কারে উঠে বসবে
শান্ত আহানাকে সবখানে খুঁজে না পেয়ে শেষে সোফার রুমে পেলো
আহানার মা ওকে চেপে ধরে বসে আছে
.
শান্ত চোখ রাঙিয়ে বুঝালো যে ওকে মানা করেছে এদের সাথে যেন না বসে সে আহানাই কিনা আবারও এখানে এসে বসলো
আহানা ইশারা ইঙ্গিতে বুঝালো তার দোষ নাই,মা জোর করে এনেছে
.
শান্ত মায়ের দিকে চেয়ে বললো”মা আমি রিয়াজের সাথে বিয়ের গাড়ী করে ওর শশুর বাড়ি রওনা হচ্ছি, তোমরা রিয়াজের আম্মু,দাদির সাথে এসো,আমি আহানাকে নিয়ে যাই কেমন?
.
শান্তর মা আর আহানার মা ভূত দেখার মতন শান্তর মুখের দিকে চেয়ে আছেন
শান্ত হালকা কেশে বললো”কেন? কোনো সমস্যা আছে কি?”
.
আহানার মা বললেন”না সমস্যা নেই,যাও তোমরা”
.
আহানা শান্তর সাথে যেতে যেতে বললো”কি ব্যাপার এত ভালোবাসা প্রদান করছেন?শরীর ঠিক আছে তো আপনার?”
.
আরেহহ আমি তোমাকে আন্টির থেকে সরিয়ে আনার জন্য বললাম,দেখো না কেমন প্রশ্ন শুরু করছে তোমাকে
.
ওহ আচ্ছা,ভালো করেছেন
.
এক মিনিট,তৈরি হওনি কেন?১০মিনিট আছ হাতে,জলদি করে রেডি হয়ে আসো
.
আচ্ছা আচ্ছা
.
আহানা গিয়ে মাকে বললো শাড়ীর প্যাকেটটা দিতে
মা একটা প্যাকেট হাতে ধরিয়ে বললেন এটা নাকি শান্তর মা কাল উনাকে নিয়ে শপিংয়ে গিয়ে এটা আহানার জন্য কিনেছিলো
আহানা প্যাকেটটা নিয়ে সেই রুমে এসে শাড়ীটা পরেই দৌড় দিলো আবার
বিয়ের গাড়ীর সামনে এসে দেখলো শান্ত হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ওর অপেক্ষা করছে
আর রিয়াজ সূর্য আর নওশাদ একটু দূরে ফটোশুট করতেছে
.
এই যে শুনুন!! ধুরুন তো এটা
.
আহানা নিজের কানের দুল শান্তর হাতে দিয়ে চুলগুলো বাঁধতে লাগলো
বাঁধতে বাঁধতে বললো”ভেবেছি লেট হয়ে গেছে তাই জাস্ট শাড়ীটা পরেই বেরিয়ে পড়েছি”
.
আহানার মা আর শান্তি রহমান জানালা দিয়ে ওদের দিকেই চেয়ে আছেন
আহানার মা শান্তর মায়ের হাতে হাত রেখে বললেন”দেখলা বুবু,কি সুন্দর লাগছে ওদের,মনে হয় যেন সবেমাত্র বিয়ে হয়েছে এমন লাগতেছে”
.
শান্তি রহমান মুখটা ফ্যাকাসে করে ফেললেন কথাটা শুনে
.
বুবু তুমি চিন্তা করিও না,আমি বলেছি না ওরা একদিন না একদিন একজন আরেকজনকে ঠিকই বুঝবে,দেখোই না কদিন আগে দুটোই একটা আরেকটার মুখ দেখতে চাইতো আর এখন একসাথে থাকে সবসময়,এবার শুধু ওরা মুখ ফুটে বলার পালা
.
রিয়াজ গিয়ে প্রথমে বসলো তারপর শান্ত আর আহানা ওর সাথে বসেছে,সামনের সিটে নওশাদ আর সূর্য কিলাকিলি করে কোনোরকম বসে পড়লো
উদ্দেশ্য ঢাকা ধানমন্ডি,নওমিদের বাসা ওখানেই
আহানা জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে আছে,শান্ত রিয়াজের সাথে কথা বলতেছে আজ কি কি করবে ওরা সেটা নিয়ে
নওশাদ বলে উঠলো”শান্ত তুই কিন্তু একবার ধুমধাম করে বিয়ে করবি,ওদিনের বিয়েতে না ছিলো কোনো মজা,না ছিলো কোনো গানবাজনা ”
.
শান্ত হেসে বললো”ওটা বিয়েই ছিলো না,জাস্ট একটা চুক্তি ছিলো যেটা দায়িত্বের খাতিরে করেছিলাম,তোরা তো জানিসই আমি আর আহানা একে অপরকে পছন্দ করি না”
.
কথাটা আহানার বুকে গিয়ে বাঁধলো তারপরে মনে হলো ঠিকই তো বলেছেন উনি
.
বাই দ্যা ওয়ে তোরা কাল বিছানায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজিয়েছিলি কেন?
.
শয়তানি করছিলাম,আমরা তো ভেবেছিলাম তোরা দুজন দুজনকে মেনে নিয়েছিস
.
এটা ভুল,আমরা জীবনেও এক হবো না
.
আহানার মনটা খারাপ হয়ে গেলো,কেন হলো সে জানে না
তবে এতদিন ভাবতো শান্ত ওকে কিছুটা হলেও লাইক করে বাট এখন এ সবকিছু শুনে মনে হচ্ছে সব তার ভুল ধারনা ছিলো
শান্ত ওকে ভালোইবাসে না,লাইক ও করে না
বিয়েটা সে আমার সেফটির জন্যই করেছে
আর আমি কিনা কত কি ভেবে বসেছিলাম
.
ধানমন্ডিতে নওমিদের বাসার গেটের সামনে আসতেই ওরা দেখলো মেয়েদের ভিড় বরাবর গেটের কাছে
রিয়াজ পকেট থেকে ৫হাজার টাকা গুনে গুনে নিয়ে নওশাদের হাতে দিলো লুকিয়ে রাখার জন্য
বাসা থেকে আসার সময় মা ১০হাজার টাকা দিয়ে বলেছেন গেটে টাকাগুলো দিতে,এত টাকা কেন দিব?৫হাজার দিব বাকিগুলো নওশাদ তোর কাছে রাখ আপাতত
এগুলো দিয়ে আমি হানিমুনে যাবো
.
রিয়াজ তোর মতো কিপটা আর দেখিনি আমি,যাই হোক তোর বিয়ের গিফট হিসেবে তোর আর নওমির জন্য আমি বালির টিকেট কেটেছি,হানিমুন প্যাকেজে,সো টাকা নিয়ে ভাববি না
.
রিয়েলি?
.
ইয়াহ!
.
তুই আমার কলিজা রে দোস্ত!
.
নওশাদ ব্রু কুঁচকে বললো”শান্ত এটা ঠিক না,আমিও ওর জন্য হানিমুনের প্যাকেজ হিসেবে সাজেকের মাচাং হোটেলটায় বুকিং দিয়েছি”
.
আরে সাজেক?আমি একসাথে দুটায় যাব কি করে?
.
সমস্যা নেই,বালি ট্যুরে তোর যেদিন ইচ্ছা সেদিন যেতে পারবি, আমি ডেট আনফিক্সড করে রেখেছি
.
নাইস
.
সূর্য দাঁত কেলিয়ে বললো”আমি কিন্তু হানিমুন প্যাকেজ কাটিনি,আমি তোর সংসারের কিছু এ্যাসেসরিস কিনেছি,ওসব গিফট দিব”
.
গাড়ী থেকে নামার পর থেকে শান্ত খেয়াল করলো আহানা কেমন মনমরা হয়ে গেছে,মুখে হাসি উধাও হয়ে গেছে তার
কণা আর নওমির বোনেরা মিলে গেট আটকিয়ে রেখেছে
শান্ত এসে সবার মাঝখানে দাঁড়িয়ে পাঞ্জাবির হাতাটা একটু উঠিয়ে বললো”কে আমার বেস্টফ্রেন্ড থেকে টাকা নিতে চায়,দেখি একটু তাকে”
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে