প্রণয় পর্ব-০৩

0
1011

#প্রণয়
#৩য় পর্ব
#Abir Hasan Niloy

অর্ন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এতক্ষন সে বন্ধুদের সামনে অবনিকে নিয়ে অনেক কিছুই বলছিল। আর সেই অবনিকেই এখন ওর বিয়ে করতে হবে? অর্ন ওর বন্ধুদের দিকে তাকায়। বন্ধুরা ওর দিকে ইশারায় বিয়ে না করার সম্মতি জানালো। কিন্তু অর্নের যেন মুখ দিয়ে কথায় বের হচ্ছে না। শিহাব ইশারায় অর্নকে দৌড়াতে বলে। কিন্তু অর্ন যেন নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানেই। শিহাব এগিয়ে আসে অর্নের মায়ের দিকে। অর্নের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলে..

– আনটি.. অর্নের তো বিয়ের জন্য কোনো প্রস্তুতি নেই। হঠাৎ এভাবে বিয়েটা কি ঠিক হবে?
– ছেলেদের কিসেন প্রস্তুতি? অর্ন আমার আদরের ছেলে। ওকে আমি যা বলবো সে ওটাই শুনবে। ওর খারাপ চাইনা আমি। বড়ছেলের থেকে পাওয়া অপমান, সে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে দেবে। (অর্নের মা)
– কিন্তু আনটি… অর্নের সময় দেওয়া উচিৎ। (মিহি)
– চুপ করো তোমরা। আমি জানি যে তোমরা এখনো বিয়ে করোনি। সে আগে করছে তাই এমন করছো? সমস্যা নেই। অর্নের ভালো আমি বুঝবো। বাবা… বাহিরে আসেন। আমাদের অর্নের সাথে অবনির বিয়ে দেবো। (আরিনা বেগম মানে অর্নের মা)

অর্নের চারপাশে বন্ধুরা ঘিরে দাঁড়ায়। অর্নকে বারবার বিয়ে না করার ইঙ্গিত দিতে থাকে ওরা। কিন্তু অর্ন স্থির হয়েই আছে। তার মনে এখন অনেকগুলো প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের দুটো উত্তর, অবনিকে ছেঁড়ে যাওয়া, না হয় বাড়ির মান সম্মান নষ্ট না করে তাকে বিয়ে করা। সে বুঝতে পারছে না কি করবে। ওর দাদু তাজুল সাহেব এগিয়ে আসে। দ্রুত হেঁটে অর্নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন তিনি। অর্নকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে…

– কখনো ভাবিনি আনাফ এমন করবে। তোর বাবা চাচাদের ছোট থেকে কড়া শাষনে রেখেছি। কিন্তু কখনো স্বাধীনতা নষ্ট করিনি। সবাই আমাকে সম্মান করেছে। আনাফ এমন করে, আমার যে সম্মান ছিল এভাবে নষ্ট করবে, তা কল্পনাতেও ভাবিনি অর্ন। প্লিজ, আমাদের সম্মানটুকু রাখ। তোর জন্য আমি হাসতে পারবো। বল পারবিনা? (দাদু)
– পারবে, বাবা। আমাদের অর্ন সবার মত না। ঐ বিয়ের ব্যবস্থা করো। অর্ন স্টেজে ওঠ। (বাবা)

অর্নের বাবা এসে অর্নের হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায় অবনির পাশে। অর্ন এমনিতে সুন্দর। কালো পান্জাবি পরেছিল। বিয়ের টুপি এনে পরিয়ে দেওয়া হয় তার। অর্ন কোনো শব্দটুকুও করছে না। সে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে। চোখের সামনে শুধু ইরার মুখটাই ভেসে উঠছে অর্নের। ইরার হাতে হাত রেখে সে এরাকম দিনের স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু আজ পাশে ইরা নেই। ইরার স্থানে আছে অন্য কেউ। যাকে অর্ন কোনোদিন সহ্য করেনি, কখনো তার মুখের দিকে তাকায়নি সে, বিশ্রি কালো দেখতে নিজের খালাতো বোনকেই অর্ন বিয়ে করতে যাচ্ছে। চোখের সামনে ইরার মুখ ভাঁসলেও, মাথার মধ্যে বাড়ির সম্মান, মা আর দাদুর বিশ্বাসটাই যেন ঘুরছে। শত অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্ন বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। বন্ধুদের দিকেও তাকায়নি একবারো।

বিয়ের সব প্রসেস কম্পিলিট করা হয়। কাজী যখন অর্নকে কবুল বলতে বলে। তখন সে বন্ধুদের দিকে একবার তাকায়। তুর্জ তার ফোনে ইরার ছবি মেলে দুর থেকে অর্নকে দেখায়। অর্ন সাথে সাথেই মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে। চোখের পানি নিচের দিকে গড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রথমবার কোনো ছেলে, বিয়ের সময় কবুল বলতে অনেকটা সময় নেয়। কবুল বলা মাধ্যমে বিয়ে কম্পিলিট। অর্ন তিনবার কবুল বলেই আসন ছেঁড়ে উঠে চলে আসে বাগানে। মানে এখন যেখানে অর্ন দাঁড়িয়ে আছে, এখানেই রাতে এসে দাঁড়ায়। রাতের শেষ সময়ে সে বাড়িতে প্রবেশ করে। কারো সাথে কথা বলেনি। ফোন অফ রেখে ওভাবেই গাছের নিচে বসে ছিল।

অর্ন ইরাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। ইরাও অর্নকে ভালোবাসে। দুজনে নতুন স্বপ্ন দেখেছিল, এক হবে। কিন্তু কোথা থেকে যে এমন কিছু ঘটে গেলো, কেউ বুঝে উঠতে পারেনি। অর্ন এখন ইরার নয়, অবনির হয়ে গেছে। কি একটা অদ্ভুত নিয়ম হয়েছে পৃথিবীর। যা, বা যাকে চাওয়া হয়, তাকে পাওয়াই হয়না। যাকে কখনো আপনি চাইবেন না, সেটাই পাওয়ার জন্য সুযোগ হবে অনেকবার। এ জন্য আমাদের উচিৎ, যাকে চাওয়া হবে বা যা চাওয়ার আগ্রহটা থাকবে সেটা কম করে চাইতে হবে। তাহলেই হয়ত পাওয়ার পথটা সহজ হয়ে উঠবে।

– অর্ন, বাহিরে কেনো? খেতে আয়। তোর জন্য খাবার রেডি করা আছে। (আরিনা বেগম)
– আচ্ছা।

অর্ন বাড়ির ভিতর চলে আসে। খাবার টেবিলে কেউ নেই। তবে খাবার সাজানো আছে। অর্ন টেবিলে বসে, মাংসের বাটির ঢাকনা তুলতেই নড়ার ফলে মাংসের ঝোল যেয়ে ওর সাদা টিশার্টে লাগে। অর্ন কিছুই বলেনা। সে খাবারের প্লেট সোজা করে। অবনি দৌড়ে চলে আসে সেখানে। কিছু না বলেই খাবার বেঁড়ে দিতে যায় অবনি। অর্ন রাগি গলায় বলে..

– আম্মাকে ডাক।
– মা, বাহিরেই আছে। তুমি তো বেঁড়ে খেতে পারো না। তাই বেঁড়ে দিতে এলাম। (অবনি)
– কি ব্যাপার, তুই আমাকে তুমি করে কেনো বলছিস? (অর্ন)
– বরকে, তুমি বা আপনি বলতে হয়। জানোনা এটা? আর এ কি? সাদা টিশার্টে মাংসের ঝোল, একটা কাজও ঠিকভাবে করতে পারোনা। আমাকে ডাকতে।

অবনি শাঁড়ির আঁচল দিয়ে টিশার্ট থেকে ঝোল মোছার জন্য হাত বাড়ায়। অর্ন সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো। রাগি চোখে অবনির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থাকে। এমনিতে কালকে রাতে কাছে আসার জন্য বারণ করেছে। কিন্তু অবনি সেটা মানছেই না। বারবার অর্নের কাছে চলে আসছে। যা অর্ন মোটেও গ্রহন করতে পারছে না। অবনি বলে..

– বসো, ঝোলটা পরিষ্কার করে দিই। নষ্ট হয়ে যাবে কাঁপড়।
– প্লিজ.. তুই আমার সামনে থেকে যা। (অর্ন)
– হুম যাবো, আগে বসো। ঠিকভাবে খাবার খাও। বেঁড়ে দিচ্ছি তো। যদি বলো, মাখিয়ে খাইয়ে দিই? (অবনি)

অর্ন তরকারীর বাটি হাতে তুলে নেয়। অবনির গায়ে তরকারী ঢেলে দিয়ে সেখান থেকে ভিতরে চলে আসে। ওয়াশ রুমে যেয়ে দরজা আটকে দেয়। পানির ঝরনা ছেঁড়ে দিয়ে কাঁদতে শুরু করে। ইরার স্মৃতি তাকে আরো কষ্ট দিচ্ছে। সে আনাফের বিয়েতে আসতে চাইছিল, কিন্তু আসতে পারেনি। সে আসলে হয়ত এমনটা হতো না। আবার বাড়ির সম্মান রাখতে অর্নও ইরাকে গ্রহন করতে পারতো না। কি করবে অর্ন? অবনিকে কিছুতেই মানতে পারছে না। যতবার অবনিকে দেখছে, ততবারই তার রাগ বেঁড়ে যাচ্ছে। বাড়ির কাজের ছেলেকে দিয়ে কাল রাতে ড্রিংকস আনিয়েছে। সেটা খেয়েই কষ্ট ভুলতে চেয়েছিল। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি কি কষ্ট ভোলা যায়?

অবনির চোখে পানির রেখা। স্বামীর থেকে এত অবহেলা নির্যাতন পেয়ে জীবনে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই কার মরে যাচ্ছে। তবুও অবনি চুপচাপ। সে তরকারী বাটিটা গুছিয়ে টেবিলে রাখলো। তারপর সেখান থেকে চলে যায়। রুমে এসে কোমরে কাঁপড় পেঁচিয়ে, অর্নের জন্য শার্ট, কোর্ট ইস্ত্রী করে বিছানায় রাখলো। আঁতুরটাও সাজিয়ে রাখে ও। এরপর রুম থেকে বের হয়ে রান্না ঘরের দিকে যায় অবনি। অর্ন ওয়াশ রুম থেকে বের হয়। বিছানার উপর সুন্দরভাবে ওর ড্রেসগুলো সাজিয়ে রাখা। আগে ওর মা করতো। এখন কে করেছে সেটা অর্ন বুঝে যায়। এ জন্য কাঁপড়গুলো হাতে নিয়ে দরজার বাহিরে ছুঁড়ে মারতে যাচ্ছিল, তখনি অবনি এসে সেগুলো ক্যাচ ধরে।

– আমাকে তোমার পছন্দ না জানি। তবে এগুলো কি দোষ করেছে? (অবনি)
– জানিনা। (অর্ন)
– আমি দেখতে কালো বলে, এমন করছো? (অবনি)
– চুপ কর, তোর সাথে আমি কথা বলতে চাইনা। (অর্ন)
– অবহেলা করতে খুব মজা লাগছে? করো করো.. দেখি কত অবহেলা করো আমাকে। আমি সব সহ্য করবো। (অবনি)
– কেনো এমন করছিস? প্লিজ.. আমাকে আমার মত থাকতে দে। (অর্ন)
– আমি তো তোমার কিছু কেঁড়ে নিচ্ছিনা। (অবনি)
– আমার থেকে দুরে থাকবি। আমি এতকিছু জানিনা। (অর্ন)
– দুরেই তো ছিলাম। সৃষ্টিকর্তা কাছে এনে দিয়েছে। কখনো কাছে চাইনি। তিনি দিয়েছে। আমার কি দোষ? (অবনি)
– তোকে এক চড়ে…
– থামলে কেনো? চড় দাও। তোমার ভালোবাসা স্পর্শ না হয় না পেলাম। অবহেলা আর রাগের স্পর্শ তো পাচ্ছি।

অবনির দিকে কড়া দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে অর্ন। এক ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দেয় তাকে। এরপর নিজের মত একটা শার্ট পরে অর্ন বাড়ি থেকে বের হয়। গাড়িতে যখন উঠতে যাবে, তখন অর্নের মা এসে বলে..

– অর্ন, তুই খুশি তো?
– হুম আম্মু। অনেক খুশি। কেনো কি হয়েছে? অবনি কিছু বলেছে তোমায়? (অর্ন)
– না না.. সে কি বলবে? সে তো তোকে পেয়ে আরো খুশি। মেয়েটাকে তো চিনিসই। ছোট থেকে কারো ভালোবাসা পায়নি। তুই একটু ভালোবাসা দিস, এতেই চলবে। আর বিয়ের পরের দিন গাড়ি নিয়ে কোথায় যাচ্ছিস? অবনিকে সাথে নে। দাঁড়া ডেকে দিচ্ছি। (আরিনা বেগম)
– না আম্মু থাক, আমি এখনি চলে আসবো। ওকে বলেই বের হয়েছি। চিন্তা করোনা।

অর্ন তাড়াতাড়ি বাড়ি থেকে বের হয়। ফোনটা অন করে ও। কয়েক মিনিট পরেই ফোন আসা শুরু করে। সবার নাম্বার থেকে কল আসলেও ইরার থেকে কোনো কল আসেনি। যে মেয়েটা প্রতি এক ঘন্টা পর পর অর্নকে ফোন দিয়ে জ্বালাতো, সে মেয়েটা এখন অর্নকে কল দিতেই যেন ভুলে গিয়েছে। অর্ন অনলাইন গ্রুপে মেসেজ করে, আড্ডার জায়গাতে সবাইকে আসতে বললো।
.
অবনি নিজের রুমে বসে আছে। নিজের বলতে অর্নের রুম এটা। বিছানা গোছাতে থাকে। ইস্ত্রি করা কাঁপড়গুলো সুন্দর করে ভাঁজ করলো ও। তারপর আলমারির ড্রয়ার খুলে রাখতে যাবে, তখনি কয়েকটা ছবি পায় অবনি। অর্নকে জড়িয়ে ধরে আছে একটি মেয়ে। যাকে কোনোদিন অবনি দেখেনি। অর্নের বন্ধুদের সাথে মেলানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ছবিগুলোতে অর্নের সাথে থাকা মেয়েটা অপরিচিত। মনে করার চেষ্টা করে অর্নের বলা রাতের কথাটা। মনে মনে বলে ‘এটাই কি তবে অর্নের ভালোবাসা? ইস কতই না সুন্দর মেয়েটা। আমি এত কালো কেনো? মেয়েটা দেখতেও তো অনেক সুইট। অর্নের সাথে কি সুন্দর মানিয়েছে। আমার সাথে মানাবে অর্নের? ধুর ওর পাশে দাঁড়ালেই তো বিশ্রি লাগবে। অর্ন ঠিক বলেছে, ওর থেকে দুরে থাকা উচিৎ। মানাবেই না আমাদের। কিন্তু আমার কষ্ট লাগছে কেনো? মেয়েটা অর্নের সাথে এভাবে কেনো আছে?’

“কি করছিস অবনি?” (আরিনা বেগম)

অবনি চমকে ওঠে। দরজার কাছে আরিনা বেগম এসে দাঁড়িয়েছে। তাড়াতাড়ি ছবিগুলো ড্রয়ারে রেখে দেয় ও। তারপর মাথায় কাঁপড় দিয়ে নিজের শ্বাশুড়ির সামনে যেয়ে দাঁড়ালো। অবনিকে দেখে তিনি হাসলেন।

– ভিতরে আসবো?
– এটা কি বলো মা? ভিতরে আসবা অনুমুতি নিচ্ছো কেনো? (অবনি)
– হুম, কি করছিলি? (মা)
– রুম গুছিয়ে রাখছিলাম। তোমার ছেলে এত অগোছালো। উফ তুমি বকা দাওনি কেন এতদিন? (অবনি)
– এই যে তোর মত একটা ভালো মেয়ে এসে আমার অগোছালো ছেলেটাকে শাষণ করবে। গুছিয়ে দেবে তো তাই করিনি। (অর্নের মা)
– হুম, চিন্তা করোনা। (অবনি)
– বলছি, তুই হ্যাপি তো? অর্ন একটু রাগি, আর জেদি। অনেক কিছু সামনে বলে ফেলে রাগ উঠলে। কিছু মনে করিস না। (অর্নের মা)
– কি যে বলো তুমি। আমি তো ছোট থেকেই চিনি। চিন্তা করো না। সব ঠিক আছে।

অর্নের মা হাসি মুখে রুম থেকে বের হতে যাচ্ছিল। এমন সময় অবনির বুক থেকে শাঁড়িটা একটু সরে যায়। তখনি একটা ক্ষতের চিহ্ন টের পান তিনি। সাথে সাথেই প্রশ্ন করে..

– তোর বুকের উপর ওটা কিসের দাগ?
– ক..কই কিসের দাগ? (অবনি)
– দেখলাম আমি। (অর্নের মা)
– আরে না। সকালে চুলা থেকে ভাত নামানোর সময় একটু কাঁপড়ে আগুন লেগে যায়। তোমার ছেলে মলম দিয়ে গেছে। জানো তোমার ছেলে আমাকে কত কেয়ার করে। (অবনি)
– আচ্ছা বুঝলাম, সাবধানে থাকিস।

উনি চলে যায়। অবনি তাড়াতাড়ি দরজা আটকে দিয়ে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। কাঁপড় সরিয়ে বুকের ক্ষত দেখতে থাকে। সিগারেটের আগুন চেপে ধরেছিল অর্ন এখানে। সেটার একটা বিশাল দাগ পড়ে গেছে। অর্নের মাকে মিথ্যে বলেছে। সে মোটেও ভালো নেই। কেঁদে ওঠে অবনি। এ কান্নায় কোনো শব্দ নেই। আছে কেবল তিক্ত নাক টানার হিস হিস শব্দ।
.
অর্ন বসে আছে। প্রতিদিন এই ক্লাবে বসে ওরা আড্ডা দেয়। অর্ন আজকে অসময়ে এসেছে। কিছু সময় পর তার বন্ধুগুলো একসাথে চলে আসে ক্লাবে। অর্নকে টেবিলে বসে থাকতে দেখলো। টেবিলের উপর কতগুলো ড্রিংকসের বোতল। অর্ন মাথা নিচু করে আছে। শিহাব বললো..

– কি মামা… বাসর রাত কেমন কাঁটালে?
– দোস্ত, বিড়াল কয়বার মারছিলি? (তুর্জ)
– তবে কি, তোর সাথে অবনি কখনো যায়না। দেখতে তো ভালোই না, কথা বলা, চলাফেরা সবকিছুর দিক দিয়ে সে ক্ষ্যাত। (সিমি)
– ক্ষ্যাতের ডিব্বা। অর্ন যে তুই সত্যিই বিয়ে করবি তাও আবার অবনিকে, আহা এটা কোনোদিনও আমরা ভাবিনি। (খেয়া)
– আমিও তো কখনো এমন কিছু ভাবিনি। কিন্তু অবনিকে বিয়ে করতে হলো। সমস্যা নেই। ইরাকে ভালোবাসি আমি। ইরা কো****

অর্ন থেমে যায়। ক্লাবের দরজার দিকে তাকালো ও। সাফিন নামের একটি ছেলের সাথে ইরা হাসতে হাসতে ক্লাবে ঢুকছে। অর্ন বসা থেকে উঠতে যায়। শিহার হাত চেপে ধরে বলে..

– কোথায় যাচ্ছিস? ইরার কাছে? কেনো যাচ্ছিস? বিয়ে হয়েছে না তোর? তাহলে?
– ইরাকে সাফিনের সাথে আমি মিশতে বারণ করেছিলাম। তবুও কেনো সে সাফিনের সাথে এখানে এসেছে। ছাঁড় আমার।

অর্ন ঝাড়ি দিয়ে ইরাদের টেবিলের সামনে যায়। ইরা সাফিনের হাত ধরে বসে আছে। অর্ন যেয়ে সোজা ইরার হাত ধরে। ইরা ঝটকা দিয়ে হাত ছাঁড়িয়ে নিতে নিতে বলে..

– আরে, কে আপনি? অভদ্রের মত অপরিচিত কারোর হাত ধরছেন? কি সমস্যা হা? (ইরা)
– ইরা, শোনো, আমি তোমাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি। আমি… (অর্ন)
– কে আপনি? আমার নাম জানেন কি করে? (ইরা)
– ইরা প্লিজ.. আমার সাথে চলো। আমি তোমাকে সব বুঝিয়ে বলবো। (অর্ন)
– এ হ্যালো.. ইরার হাত ছাঁড়। কে তুই? ইরা না তোকে চিনেনা বললো? তাহলে ওর হাত ধরে আছিস কেনো? (সাফিন)
– ইরা, চলো আমার সাথে। আমি কিছুই করিনি। আমি তোমারই আছি। বিশ্বাস করো আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি। (অর্ন)
– শাট আপ.. আমার হাত ছাঁড়েন। আমি আপনাকে চিনিনা। (ইরা)
– হাত ছাঁড়বো না। আগে আমার সব কথা তোমার শুনতে হবে। (অর্ন)
– হাত ছাঁড় শালা..

সাফিন কথাটা বলে অর্নকে জোরে একটা ধাক্কা দেয়। অর্ন কিছুটা সরে গেলো পিছনের দিকে। অর্ন এগিয়ে আসে আবার। ইরার দিকে তাকিয়ে বলে..

– তোমাকে বারণ করেছিলাম, এই বেয়াদব ছেলে থেকে দুরে থাকতে। তুমি তো জানোই সে কতটা খারাপ। তারপরও কেনো তুমি ওর সাথে মিশছো? আমাকে তো কিছু বলার সুযোগ দাও। এক রাতেই এত পরিবর্তন? ভালোবাসতে না আমাকে তুমি? (অর্ন)
– ভালো তো আপনিও বাসতেন, কি হল? সেই তো অন্যকে বিয়ে করেছেন। আপনি রাত কাঁটাতে পারেন, আমি হাত ধরে ঘুরলেই দোষ? আপনি সারারাত মজা নিয়েছেন, আর আমি একটু মিশলেই দোষ?

ইরার কথা শেষ হতেই অর্ন কষে একটা চড় বসিয়ে দেয় ইরার গালে। ইরার গালে চড় দিতেই সাফিন এগিয়ে আসে সামনে। অর্নের গালে একটা ঘুসি দেয়। অর্ন টেবিল থেকে ড্রিংকসের বোতল তুলে সেটা ভেঙে ধারালো অস্ত্র বানিয়ে সাফিনের দিতে এগিয়ে আসতেই, বন্ধুরা ওকে জাপটে ধরে। অর্ন চিৎকার করে বলতে থাকে…

– আমার আর ইরার মাঝে যেই আসুক, আমি তাকে মেরে ফেলবো না হয় কখনো গ্রহন করবো না। ইরা বিশ্বাস করো, আমি অবনিকে স্পর্শও করিনি। ভালোবাসি আমি তোমাকে। তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমি কল্পনা করতে পারবো না। ইরা বোঝার চেষ্টা করো, আমি শুধু তোমার। আর তুমিও আমার। মাঝে খানে যে তোমাকে নিতে আসবে, আমি তাকে মেরে ফেলবো। ইরা….

অর্নকে টানতে টানতে বন্ধুরা ক্লাব থেকে বের করে নিয়ে যায়। সাফিন ইরার সামনে আসে। ইরার চোখে পানি টলমল করছে। সাফিন ইরার হাত ধরতে যাচ্ছিল। ইরা তার ভ্যানিটি ব্যাগ হাতে নিয়ে হনহন করে সেখান থেকে বের হয়ে যায়। অর্নকে বন্ধুরা গাড়িতে করে ক্লাব থেকে ততক্ষণে নিয়ে চলে আসে। তারপর…

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে