প্রণয় পর্ব-০২

0
1138

#প্রণয়
#২য় পর্ব
#Abir Hasan Niloy

অবনি গোসল শেষ করে নিজের রুমের দিকে ফিরছিল। হঠাৎ ভেঁজা কাপড়টা ওর বুক থেকে সরে যায়। সে কাপড়টা গায়ে জড়িয়ে নেওয়ার জন্য নিচু হয়েছিল। আর তখনি আনাফ অবনির এমন দেহের সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে দেখে নেয়। অবনি কাঁপড় টা তুলে ঠিক করতে করতে সামনে তাকিয়ে দেখে আনাফ হা করে অবনির ভেঁজা দেহের দিকে তাকিয়ে আছে। অবনি আনাফকে বলে…

– আনাফ ভাই, এভাবে কি দেখছো?
– দেখছি তোর জিনিসগুলো। (আনাফ)
– মানে?(অবনি)
– না মানে কিছু না। কোথায় যাচ্ছিস? (আনাফ)
– রুমে। চেন্জ করবো। (অবনি)
– ওহ আচ্ছা।

আনাফ আর কথা বাড়ায় না। অবনিও চুপচাপ নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। আনাফ আজ প্রথমবার অবনির দিকে এভাবে লোভাতুরের ন্যায় তাকিয়েছে। যেটা এর আগে কখনো হয়নি। আনাফ ফিরে আসছিল। কিন্তু মাথার মধ্যে অবনির ভাবনা। সাথে চোখের সামনে এখনো যেন অবনির শরীরের খাঁজ ভাসতে থাকে। সে নিজেকে আর কন্ট্রোল করতে পারেনা। অবনির রুমের দিকে এগিয়ে যায়। অবনির রুমে কেউ কোনোদিন আসেনি। কারন অবনি এমনিতে কালো রঙ এর মেয়ে। তাই সবাই নিজ দায়িত্বে ওর থেকে দুরে থাকে। সে জন্য ড্রেস চেন্জ করার সময় দরজা হালকা খুলে রেখে রুমে এসে দাঁড়ায়। গা থেকে জামাটা সরাতেই অবনি দরজা খোলার শব্দ শুনতে পেলো। অবনি ঘুরে তাকাতেই দেখে আনাফ দাঁড়িয়ে আছে। তাড়াতাড়ি তোয়ালের সাথে নিজেকে পেঁচিয়ে ভয় আর লজ্জাবোধ নিয়ে বললো..

– আ..আনাফ ভাই তু…তুমি এখানে?
– হুমম। (আনাফ)
– কেনো এসেছো? (অবনি)
– তোকে দেখতে। (আনাফ)
– মানে? (অবনি)
– শোন.. তুই তো এমনিতে কালো দেখতে। কোনো ছেলে তোর কাছে আসবে না। তাই ফ্রিতে যদি আমি তোকে সার্ভিস দিই, তাহলে মজা পাবি বুঝেছিস? (আনাফ)
– কি বলেন আপনি? (অবনি)
– আহ, ন্যাকামি করিস কেনো? সরা কাঁপড়..

আনাফ এগিয়ে এসে অবনির হাত থেকে তোয়ালে টেনে খোলার চেষ্টা করে। অবনি আর নিজেকে সামলাতে পারেনা। ঠাস করে খুব জোরে অবনি, আনাফের গালে কষে চড় লাগিয়ে দেয়। আনাফ চড় খেয়ে অবনির দিকে ক্রোধের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড। আনাফ হিংস্র হয়ে যায় যেন। অবনির হাত শক্ত করে ধরে। অবনির দিকে তাকিয়ে বলে….

– শালী মা*** তোকে আমি আজকে…
– আমাকে ছেঁড়ে দাও। কে কোথায় আছো? আমাকে বাঁচাও… কেউ আসো…

অবনির এমন সরল আর জোর চিৎকার পুরো বাড়ির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে যায়। বাড়িতে উপস্থিত মানুষের কান অবদি পৌছে। কেউ এক মুহুর্ত দেরি করে না, অবনির ঘরে আসতে। আর এসেই দেখে অবনির গায়ে আধাখোলা কাপড়, বাকি অংশ আনাফের হাতে। আনাফের মা এসে ঠাস ঠাস করে আনাফের গালে চড় বসিয়ে দেয়। অবনি তার বড় খালাকে জড়িয়ে ধরে। সবাই আনাফের দিকেই তাকিয়ে আছে। দাদু এগিয়ে এসে বলে..

– ছিহ, আনাফ.. শেষে কিনা তুই এমন করলি? এটা অন্যায়।
– দাদু, আমি আসলে… (আনাফ)
– চুপ কর তুই। তোকে ছেলে বলে ডাকতেই আমার লজ্জা করছে। কত ভালো একটা মেয়ে। আর তুই কিনা শেষ মেশ.. ছিহ আনাফ। লজ্জায় আমার… (আনাফের মা)
– কেউ কিছু বলবে না আনাফকে। ও যা করেছে, তার শাস্তি ওর পেতেই হবে। (দাদু)
– কি শাস্তি? ওর মুখটাও দেখতে চাইনা আমি। (মা)
– অবনির সাথেই ওর আগামী তিনদিনের মধ্যে বিয়ে দেবো। তাহলে সব ঠিক হবে। (দাদু)
– কিন্তু আমি অবনিকে বিয়ে…. (আনাফ)
– কি বললি তুই? তোকে আমি… (আনাফের মা)
– বউমা.. আমার সিদ্ধান্ত নড়চড় হবেনা। আনাফকে বিয়ে করতেই হবে অবনিকে। এটাই শেষ কথা। সবাই চলো এখন, আর ঘটনা যেন না ছড়ায়। বাড়ির খবর, যেন বাড়িতেই থাকে।

আনাফের দাদু মি. তাজুল সাহেব কথাটা বলে রুম থেকে বের হলেন। সবাই এক এক করে রুম থেকে বের হয়। আনাফ বের হওয়ার আগে অবনির দিকে তাকিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে ‘তুই কাজটা ঠিক করলিনা। তোর কপালে খারাপ কিছু আছেই। এ বিয়ে আমি করছিনা।’ অবনিকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নেয় তার বড় খালামনি মানে আনাফের মা। অবনির কালো মুখে চোখের বারিধারা যেন সাদা পাথরের মত নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছে। দুই হাত দিয়ে পানি মুছে দিয়ে ড্রেস এনে দেয় তাকে।

– কাঁদিস না। আমার ছেলে এমন কিছু করবে আমি ভাবতেই পারিনি। ও যে আমাকে কষ্ট দিয়েছে, আমি কখনো ভুলবো না। আমার ছেলেটাকে মাফ করে দে মা। তোর মাকে কি জবাব দেবো আমি বুঝতে পারছিনা। (আনাফের মা, আরিনা বেগম)
– না খালাআম্মু, তুমি কেনো মাফ চাচ্ছো? ঠিক আছি আমি। আর চিন্তা নেই, কেউ কিছু জানবে না। তোমার সম্মান নষ্ট হয় এরপর আর কোনো কাজ আমি করবো না। (অবনি)
– চিন্তা করিস না, তোর বিয়ে আনাফের সাথেই দেবো। তুই কষ্ট পাবি সারাজীবন এটা হতে দেবো না। ও একটু বদ, তবে আমি জানি তুই তাকে ঠিক করে নিতে পারবি। (আরিনা বেগম)
– আচ্ছা খালামনি।

অবনি যেন নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এই বাড়ির মানুষ কে কেমন বিহেভ করে সেটা অবনি জানে। তবে সবার থেকে বেশি ভালোবাসে আরিনা বেগম। আর তিনি কষ্ট পাবে এমন কিছু কখনো অবনি করেনি। অবনি ভাবনা থেকে বের হয়। অর্নের দিকে তাকায়। অর্ন কপালের উপর হাত রেখে ঘুমাচ্ছে। অর্ন একটু নড়ে উঠল। নিজেকে আটোসাটো করে গুটিয়ে নিল। বোঝা যাচ্ছে, অর্নের শীত লাগছে অনেক। অবনি বিছানা ছেঁড়ে উঠল। রাত প্রায় শেষের দিকে। ফজরের আযানের জন্য আগে থেকে মসজিদের মাইকে সূরা, গজল পাঠ করছে মসজিদের মোয়াজ্জিনেরা। আযান দেবে একটু পরেই। অবনি বিছানা থেকে একটি কাঁধা নিয়ে অর্নের কাছে এসে দাঁড়ায়। অর্নের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে বেশ কিছু সময়। অর্নকে এমনিতে মনে মনে সে পছন্দ করতো। কিন্তু কখনো অর্নকে নিজের জন্য চায়নি অবনি। তবুও তাকে না চাওয়া শর্তেও বর হিসেবে পেয়েছে। কথায় আছে না, যা চাওয়া হয় তা পায়না মানুষ। আবার যা চায়না, সেটাই কাকতালীয়ভাবে নিজের কাছে চলে আসে।

অর্নের গায়ে কাঁথা জড়িয়ে দেয় অবনি। অর্ন কাঁথা পেয়ে গায়ে জড়িয়ে নিতে থাকে ঘুমের ঘোরে। আর ঘুমের ঘোরেই অর্ন অবনির হাত জড়িয়ে নেয়। অবনি চমকে ওঠে। হাত ছাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই অর্ন যেন আরো শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরে। অবনি হাঁটু ভাঁজ করে সোফার উপর বসে। অর্নের মাথায় চুলে হাত ডুবিয়ে দেয়। একজন নারীর কাছে সবচাইতে মূল্যবান জিনিস হলো তার প্রিয় স্বামী। প্রিয় নবী (স) নিজেই বলেছেন আল্লাহ ব্যতীত যদি কাউকে সিজদাহ করা যেতো তাহলে স্বামীকেই করা যেতো। অবনির মধ্যে অর্নের জন্য যে সম্মান, তা কেবল তাকে কাছে পাওয়ার নয়, এটা ভালোবাসার। অর্নের চুলে হাত বোলাতে বোলাতে কখন যে অবনি ঘুমিয়ে পড়ে খেয়ালই করেনি সে।
.
অর্নের ঘুম ভাঙে। জানালা থেকে রোদ ওর মুখে এসে পড়ছে। জানালা খোলায় ছিল। অর্নের কখনো এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙেনা। সে বিরক্ত হয়ে উঠতেই যাবে, অনুভব করে ওর গায়ে কাঁথা, সাথে আরো ভারী কিছু ওর বুকের উপর অনুভৃত হয়। অর্ন চোখ মেলে তাকালো। অবনি ওকে জড়িয়ে ধরে, বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে। অর্নের মেজাজ কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই রাগের চরম পর্যায় পৌছে যায়। কারন রাতেই অর্ন অবনিকে বেশ কড়া গলাতে জানিয়েছিল ‘তুই আমার থেকে সবসময় দুরে থাকবি। তোর মুখ আমাকে দেখাবিনা।’ এমন কড়া নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও অবনি অর্নকে জড়িয়ে ধরে থাকার যে দুঃসাহস দেখিয়েছে, এটা কল্পনা করেই অর্ন নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারছে না। সে অবনিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়। অবনি ফ্লোরে পড়তেই ওর কনুইতে প্রচন্ড ব্যাথা লাগে। অবনি ঘুমের ঘোরে ছিল। এমনকে ধাক্কা লেগে নিচে পড়তেই সে প্রথমে বুঝতে পারেনি, এতক্ষণ কোথায় ছিল। সে হাতে ব্যাথা নিয়ে সামনে তাকায়। অর্ন বসে আছে।

– তোকে রাতেই বলেছিলাম আমার কাছে আসবি না। আমার থেকে দুরে থাকবি, এটাও বলেছিলাম। অথচ তুই তোর সাহস ছাঁড়িয়ে আমার কাছে নয়, আমার বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়েছিস।

অর্ন কথাটা বলে অবনির দিকে এগিয়ে আসে। অবনির চোট পাওয়া হাত ধরে হেঁচকা টান দেয়। অবনি ও মা গো কেঁদে ওঠে। অর্ন এমন বিহেভ কেনো করছে সেটা অবনি এখনো ঠিকমত বুঝতে পারছেনা। অবনিকে সামনে এনে, ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয় অর্ন। অবনি ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। অর্ন বলে..

– তোকে আমার সহ্য হয়না এটা কেনো বুঝিস না? তোকে দেখলেই আমি বিরক্ত হই। কেনো কাছে আসিস আমার? আমি কি তোকে চেয়েছিলাম? কেনো এমন হল আমার সাথে? আমি তো তোকে চাইনি। তাহলে কেনো আমার কাছে তুই এসেছিস? তুই জানিস, আমার এক হাত দুরুত্বে কোনো মেয়ে আসার সাহস করেনা। আর তুই আমার বুকে মাথা রেখে সারারাত ঘুমিয়েছিলি।
– আমি তোর বউ এখন। আমার তো অধিকার আছে তোর কাছে যাওয়ার। (অবনি)
– কিসের অধিকার? মন থেকে না মানা অবদি কখনো অধিকার খাটানো যায়না। সবকিছু তোর জন্য শেষ হয়ে গেছে। আমার ইচ্ছে, আমার ভালোবাসা সব, সব শেষ। আমি নিজেই শেষ হয়ে গিয়েছি।

অর্ন কাঁদতে কাঁদতে রুম থেকে বের হলো। অবনিও কাঁদতে থাকে। চেয়েছিল অর্নকে নিজের কাছে, তবে সেটা কল্পনায়। কিন্তু উপরওয়ালা অর্নকে ঠিকিই এনে দিয়েছে বাস্তবে। তবুও যেন শত অপূর্ণতা। এই অপূর্ণতার বেড়াজালে দুটো মানুষ কষ্টে বিভোর হয়ে যাচ্ছে। অবনি ড্রেস পাল্টে নেয়। শাঁড়ি ছেঁড়ে সালোয়ার কামিজ পরেছে। আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো ও। নিজের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো অবনি। ওর ডান গালে টোল পড়ে কথা বললে। ঠোঁটের নিচেও একটা তিল আছে। এসব দেখেই ও হাসছে। বিড় বিড় করে অবনি বলে ‘কালো মেয়ের আবার কিসের টোল পড়া গাল, কিসের কালো তীল? সবই বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়।’

অর্ন বাড়ির উঠানে এসে দাঁড়ালো। খুব করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ওর। অবনি আর অর্ন প্রায় সেম বয়েসের। অর্নের থেকে এক বছরের ছোট অবনি। অর্ন যদি ক্লাস টু তে পড়তো, অবনি পড়তো ওয়ানে। তবে ছোট থেকেই একসাথে ওদের বেড়ে ওঠা। অর্ন জানতো না, আনাফের সাথে অবনির কেনো বিয়ে হচ্ছে। কে ও সময়ে বাড়িতে ছিল না। আর দাদুর কড়া বারনে বাড়ির লোক ছাড়া কেউ কিছুই তেমন জানেনা। কিন্তু বিয়ে হবে ভেবে অনেক আত্বীয় ঠিকই দাওয়াত করানো হয়। অর্নও তার একগাদা বন্ধুদের দাওয়াত করে আনে তার বড় ভাইয়ের বিয়েতে।

অবনি বউ সেজে বসেছিল। অর্নের বন্ধুরা ভেবেছিল, আনাফের বউ হবে অনেক সুন্দরী। কারন আনাফ ভাই দেখতে বেশ স্মার্ট ছিল। আর আনাফ ভাই কখনো এমন কালো মেয়েকে বিয়ে করবে না। কিন্তু বিয়ে বাড়িতে এসে দেখে অবনির সাথে আনাফ ভাইয়ের বিয়ে হচ্ছে, অর্ন ছাড়া বাকি সবাই অবাক হয়ে যায়। অর্নের কানে কানে সিমি এসে বলে..

– দোস্ত, তোর ভাইয়ের কি চয়েজ রে। দেশে আর মেয়ে পেলো না। আমাকে অফার করতি, তোর ভাবি হতাম। আমি কি দেখতে খুব খারাপ নাকি? (সিমি)
– ভাইয়া নিজে থেকে বিয়ে করছে না। তাকে দাদুর কথা মত বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। (অর্ন)
– এটা বিয়ে না, কুরবানী বলে। আমি হলে বিষ খেয়ে মরে যেতাম। (তুর্জ)
– কেনো, অবনি কি খারাপ মেয়ে নাকি? একটু কালো। তবে ভালো মেয়ে। (অর্ন)
– আহারে বাবুটা.. এত অবনিে প্রশংসা করছো, তুমি যাও বিয়ে করো তাকে। (মিহি)
– এহ, আমি কেনো ওকে বিয়ে করবো। মেয়ে হিসেবে ভালো, তবে আমার বউ হিসেবে সে যোগ্যতা রাখে না। ওকে নিয়ে কল্পনাতেও কোনোদিন হাত ধরে হাঁটিনি। ছোট থেকে ওর সাথে রয়েছি। কখনো নিজ থেকে ওর হাত অবদি ধরিনি আমি। সাথে থাকা একটা ছেলে একটা মেয়ের প্রতি ভূল করেও একবার না একবার রোমান্টিক কল্পনা করে, কিন্তু আমিই প্রথম কোনো মানুষ, যে কিনা অবনিকে নিয়ে কোনোদিন কল্পনা করিনি। আর কি ভেবে কল্পনা করবো। চেহারাটা মনে পড়লেই তো সব বোরিং লাগতো। (অর্ন)
– হাহাহাহা… এটা ঠিক বলেছিস। অবনি মেয়ে ভালো তবে কারো বউ বা গার্লফ্রেন্ড হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। মিহি তুই যে কি বলিস, কোথায় আমাদের অর্ন, আর কোথায় কালো মেয়ে অবনি। আকাশ পাতাল তফাত বুঝিস? আপাতত বিয়ে খেতে আসছিস খা। (শিহাব)
– ঐ তোরা এখানে কি করিস? ওদিকে কি হয়েছে শুনেছিস? (খেয়া)

খেয়ার কথা শুনে সবাই তার দিকে কিছুটা কৌতুহলি দৃষ্টিতে তাকালো। বাড়ির ভিতর থেকে একটু চিৎকার চেঁচামেঁচি শোনা যাচ্ছে। তবে সবচাইতে বেশি যার চিৎকার শোনা যাচ্ছে সে হল তাজুল সাহেব। মানে অর্নদের দাদু। খেয়াকে প্রশ্ন করে শিহাব ‘কি হয়েছে? তুই না ভিতরে ছিলি? দাদু এভাবে বকছে কেনো?’ খেয়া জানায় “তোরা চল ভিতরে, বিয়েতে এসে তোরা অনুষ্ঠানে না থেকে বাড়ির বাহিরে এসে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিস। চল চল.. তোরা শুনবি কি হয়েছে।”

খেয়ার কথা শুনে, ওরা সবাই দৌড়ে ভিতরে আসে। অবনি বিয়ের পিঁড়িতে বসে আছে। সবাই নিরব, আর গম্ভীর হয়ে আছে। বরের আসনে তাজুল সাহেব বসা। অর্ন তার ভাই আনাফকে খুজছে। কিন্তু আনাফকে দেখা যাচ্ছে না। অর্ন গুটি গুটি পায়ে হেঁটে ওর মায়ের কাছে আসলো। আস্তে গলায় বললো..

– দাদু চিৎকার করছিল কেনো? কি হয়েছে? আর ভাইয়া কোথায়? (অর্ন)
– তোর কোনো ভাই নেই। ওর কথা কখনো আমার সামনে বলবি না। (অর্নের মা)
– কিন্তু কি হয়েছে? দাদু এমন ভাবে বসে আছে কেনো? (অর্ন)
– আনাফ যেন কখনো এ বাড়িতে আর না আসে। তাকে এ বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলাম। কেউ যদি কখনো যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, সে এই বাড়ি ছেড়ে যেনো চলে যায়।

তাজুল সাহেব কথাটা বলে বসা থেকে উঠে সেখান থেকে চলে যায়। অর্ন তার ছোট খালার সামনে এসে দাঁড়ালো। অর্ন যেন এখনো কিছুই বুঝতে পারছে না। তার খালার দিকে তাকিয়ে অর্ন জিজ্ঞাসা করলো..

– কি হয়েছে ছোট খালা? দাদু এভাবে কি বলে গেলো? (অর্ন)
– কি আর হবে, তোর ভাই আমার মেয়েকে বিয়ে করবে না, তাই পালিয়ে গেছে। কাগজে লিখে গেছে, ‘অবনির মত একটা মেয়েকে আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না, তাই পালিয়ে যাচ্ছি।’ ঠিক করেছে। এমন বাজে দেখতে মেয়েকে কে বিয়ে করবে? ওর বাপ তো কালো না, আমিও তো কালো না। তাহলে ও কেনো কালো হলো? হওয়ার পর যদি ওরে গলা টিপে মেরে ফেলতে পারতাম, তাহলে আজ এই দিনটা দেখতে হতো না। এমনিতে সে কালো একটা মেয়ে, তার উপর বিয়ের আসর থেকে ছেলে নিজেই পালিয়ে গেছে। এখন তো কেউ ওকে ভৃলেও বিয়ে করবে না। বেঁচে আছে কেনো সে, মরে যেতে পারে না?

ছোট খালামনির কথা শুনে অর্ন নিজেই চুপ হয়ে গেছে। ও কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। এলাকার লোকজনও অবনিকে নিয়ে তার মায়ের মত করেই কথা শোনাচ্ছে। অর্ন ছোট আনটির থেকে চলে আসবে, তখন ওর মা এসে পাশে দাঁড়ায়। নিজের ছোট বোনের হাত ধরে বলে..

– তোকে না বলেছি অবনিকে কখনো কিছু বলবিনা? তোকে এখানে কে আসতে বলেছে? আর ওর বিয়ে হবেনা মানে? ওর জন্য রাজপুত্র আনবো আমি। রাজপুত্র বিয়ে করবে আমাদের অবনিকে। (অর্নের মা)
– কি বলিস আপা, হাসি পাচ্ছে। ওর মত বাজে দেখতে মেয়েকে কোনো রাজপুত্র না, মুচির ছেলেও বিয়ে করবে না। অসহ্য নিজের কাছেই লাগে, অন্য কোনো ছেলে কিভাবে তাকে সহ্য করবে? কি দেখে ওকে বিয়ে করবে? দাঁত, হাতের তলা ছাঁড়া অবনির কোনো সুন্দর জায়গা নেই। বলতেও কষ্ট লাগে, এটাই সত্য। আবার নাকি তাকে বিয়ে করবে কোনো রাজপুত্র। তা সেই রাজপুত্রটা কে? (অবনির মা)
– কে আবার, আমার এক ছেলে আমাদের অপমান করেছে, আরেক ছেলে করবে না। সেই রাজপুত্র আমার অর্ন। আমি অর্নের সাথেই অবনিকে বিয়ে দেবো। এবার খুশি তো তুই? অর্ন আমার কাছে রাজপুত্র বুঝেছিস? আনাফের মত না সে। সে জানে মাকে, পরিবারকে কিভাবে সম্মান করতে হয়। আমার অর্নের সাথে অবনির বিয়ে ঠিক এই মূহুর্তে এই আসরেই বিয়ে দেবো। অর্ন, তুই তো অবনিকে বিয়ে করবি তাই না?

অর্ন যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। ওর চারপাশ যেন থমকে গেছে। অবনিও হা করে তাকিয়ে থাকে এদিকে। অর্ন যেন নিজের কানকে বিশ্বাসই করতে পারছে না, অবনিকে বিয়ের কথাটা শুনে। তারপর..

চলবে,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে