নীলাম্বরে জোছনা পর্ব-১০

0
444

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১০

মিফতাজের জ্ঞান ফিরে এসেছে ঘন্টা খানেক আগেই কিন্তু সে কোথাও যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। আরহাম মিফতাজের পাশে এসে বসে বলে,তাজ তুই বাচ্চা না!এই শরীরে এমন বিহেভিয়ার করা মানায় না।

‘আর শরীর দিয়ে কি হবে মনটাই যেখানে ম’রে গেছে। আমি সব হারিয়ে ফেললাম ভাইয়া সব। আমি আর বাঁচতে চাই না। আমি জানি মানহা আমাকে ক্ষমা করবে না। এই পাপের ক্ষমা হয় ও না। আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।যেতে দাও প্লিজ আমার জন্য এতোটুকু ব্যাবস্থা করে দাও।

‘রিলাক্স তাজ। যেখান থেকে শেষ সেখান থেকেই নতুন কিছু শুরু হয়। শুধু খারাপ সময় টাকে ধৈর্য ধরে পার করতে হয়। ধৈর্য হারা হলে হবে না।

‘আমি নতুন কিছু চাইনা আমি আমার মানহাকে চাই। ওকে ছাড়া আমি কি করে বাঁচবো। তুমি প্লিজ ওকে একটু বোঝাবে, আমি এমন ছেলে না। সেদিন যা হয়েছিল সব ভুলে হয়েছে। ওকে বোঝাবে প্লিজ আমার মানহাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।
আমাকে যেতে দাও মানহার কাছে।

‘মানহাকে তুই আটকে রেখেছিস!
‘ হ্যা।এবার যেতে দাও আমাকে যেতেই হবে।

‘তুই আমার কাছে ঠিকানা দে আমি ওকে নিয়ে আসছি।

‘আনতে হবে না আমি কাউকে বিশ্বাস করি না আমি ছাড়া মানহার কাছে কেউ যাবে না।
‘তাহলে তুই সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা কর।
আরহাম কেবিন থেকে বের হয়ে ডাক্টারের সাথে কথা বললো, ডাক্টার আরহামের কথা মত মিফতাজকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করতে বললো নার্সকে।

আরহাম বাসায় আসলো দ্রুত। চিঠিটা বেডের উপরেই পরে আছে। এসি ছেড়ে দিয়ে চিঠি নিয়ে বসে পরলো।
চিঠি খুলে পড়া শুরু করলো…..

শ্রদ্ধেয় আরহাম
পত্রের শুরুতেই জানাই অনেক অনেক সম্মান। আপনাকে কি বলবো আর কোথা থেকে শুরু করবো বুঝতে পারছি না। আচ্ছা সত্যিটা জানার পরেও আমাকে ভালোবাসবেন নাকি ঘৃণা করবেন?
পুরোটাই আপনার ব্যাপার কিন্তু সত্যি তো বলতেই হবে!
আমার নাম মাহিবা না।সেটা হয়তো আপনি আন্দাজ করতে পেরেছেন। আপনার সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে আপনার সাথে কাটানো প্রতিটি মূহুর্ত আমার মনে থাকবে। তবে আজ কথাগুলো বলতেই হবে! কারন আপনি হয়তো আমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছেন।আমি অনার্সে পড়ি না৷ ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট। আচ্ছা আপনার মনে আছে যেদিন আপনাকে প্রথম প্রপোজ করি ওদিনের কথা?
সেটা আসলে ডেয়ার ছিলো। আমার ফ্রেন্ড সার্কেল মিলে ডেয়ার দিয়েছিলো একজন অপরিচিত ছেলেকে প্রপোজ করতে। আরহাম নামটা আমার পছন্দের তাই এই নাম লিখে সার্চ করতেই আপনার নামটা সামনে চলে আসে। আর আপনার প্রোফাইল যেহেতু আনলক করা। প্রোফাইল ঘুরে আপনাকে ভদ্র মনে হয়েছে। তাই প্রপোজটা আপনাকেই করি।
আপনার রিয়াকশন দেখে আমরা হাসতে হাসতে শেষ। সেদিন থেকে শুরু আস্তে আস্তে আমাদের বন্ধুত্ব হলো। ম্যাসেজ থেকে কলে কথা হলো। আপনার সাথে দুষ্ট মিষ্টি দারুণ সময় কাটলো। আচ্ছা তবে এখন কেন কথা বন্ধ করতে চাইছি এই প্রশ্ন জাগছে তো!
আসুন উত্তর দিয়ে দেই, আমার মনেও কেমন অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে আজকাল। তাই এই দূরত্ব আর ভিনদেশী সম্পর্ক এখানেই শেষ করতে চাই।

যখনি আমার কথা মনে পরবে, আনমনে আকাশের উড়ে চলা মেঘের দিকে তাকাবেন। মনে করবেন আমি ওই উড়ো মেঘ। যে আসে কিন্তু স্থায়ী হয় না। যে ভাবে আসে সেভাবই চলে যায়।
অথবা হুট করে আয়োজন ছাড়া চলে আসা বৃষ্টির মত। যে এসে ক্ষনিকের আনন্দ দিয়ে চলে যায়।
এবার বলো তো আমাকে ক্ষমা করা যায়?
উত্তরের অপেক্ষায় তোমার ভিনদেশী তারা।

এবার বলো তো শেষে তুমি করে কেন বলছি?
কারন তুমি আমার দূরে থাকা ভিষন ভালো বন্ধু।
চিঠিটা বন্ধ করে আরহাম দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। ঠোঁটের কোনে এক টুকরো হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো। শেষ কনভার্সনের কথা মনে করে।
মাহিবার স্টোরিতে নিজের পিক দিয়েছিলো যদিও পুরোপুরি বোঝা যাচ্ছিল না তবুও কেন যানি আরহামের মনে হলে মাহিবাকে শুধু সে দেখবে তাইতো বলেছিল,

‘আপনার পিক দেখলাম স্টোরি তো?

‘তো কি সমস্যা?

নিঃসন্দেহে আপনি রূপবতী আপনার স্টোরি পিক দেখে অনেকেই আপনার প্রেমে পড়বে।

‘প্রেমে পড়লে পরবে তাতে আপনার সমস্যা কি?

‘আমি আপনার প্রেমে পরে গেছি। তাই এটা মানবো না। অন্য কেউ আপনার প্রেমে পরুক।

‘বাজে কথা না বলে কাজের কথা বলুন।

‘একটুও বাজে কথা বলিনি,এখন থেকে আপনার পিক স্টোরিতে নয় আমার ইনবক্সে দিবেন।

এরপর মাহিবার থেকে আর কোন রিপ্লাই আসেনি। আজও আসেনি প্রতি রাতে ওই আইডিতে চেক করা হয়। যদি কখনো আবার জ্বলে উঠে মাহিবার নামের পাশে সবুজ বাতি সেই আসায়। এক তরফা ভালোবাসা বড্ড প্রিরাদায়ক। না সামনের মানুষকে বোঝানো যায় না নিজেকে বোঝানো যায়।


আয়াতের অবস্থা কিছুটা উন্নত হয়েছে৷ ডাক্তার মেহেক নাজ বললেন, আমার মনে হচ্ছে আয়াত সুস্থ হয়ে উঠবে খুব তাড়াতাড়ি। তবে যত্ন আর আশেপাশের পরিবেশ একদম ঝামেলাহীন রাখতে হবে। কোনভাবেই কোন বড় ধাক্কা যেনো না খায় এরমধ্যে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর হ্যা কোন ধরনের ধারালো জিনিস রুগির সামনে রাখা যাবে না। আজকে যেই দূর্ঘটনা ঘটলো আর একটু দেরি হলে পেশেন্টকে বাঁচানো যেতো না।

রুনা বেগম চেয়ার বসলেন রতন সাহেবের দিকে তাকিয়ে নরম স্বরে বললেন এবার অন্তত তোমার বোনের মেয়েটাকে ফিরিয়ে আনো৷ আমার মেয়েটার সুস্থ করার একটা চান্স পেয়েছি সেটা যেতে দিওনা।
আদুরী বললো, মা তুমি চিন্তা করো না যেভাবেই হোক মানহাকে খুঁজে আনবো। আয়াতকে সুস্থ করতে মানহাকেও প্রয়োজন।
মিফতাজ লুকিয়ে বের হওয়ার সময় কথাগুলো কানে গেলে। থমকে দাঁড়িয়ে পুরো কথা মনযোগ দিয়ে শুনলো।

হাতে পায়ে,মাথায় বেন্ডেজ করা কোনমতে বের হয়ে আসলো। ড্রাইভারকে আগেই বলে রেখেছিল। মিফতাজের কথা মতো নার্স মিফতাজকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করেনি। ডাক্তার বলার পরেও।এরজন্য নার্সকে মোটা অংকের টাকা দেবে। আরহাম আর ডাক্তারের কথপোকথন নার্স নিজেই বলেছে মিফতাজের কাছে।

বংশাল আর ঢাকা মেডিকেল কাছাকাছি হওয়ায় মিফতাজের বেশি কষ্ট হয়নি। মানহার কাছে আসতে।

পুরো রুম অন্ধকার করে বসে আছে মানহা। কালকে থেকে মুখে কোন খাবার পরেনি।
মিফতাজ দরজা খুলে রুমে ঢুকে লাইট অন করলো। হঠাৎ করে লাইটের আলো চোখে পরতেই মানহা চোখ বন্ধ করে নিলে। এরপর একটু একটু করে চোখ খুললো। পূর্ণ দৃষ্টি দিতেই মিফতাজের দিকে দৃষ্টি গেলো। মানহার হৃদয় কেঁপে উঠলো অস্থির হয়ে কিছু বলবে তার আগেই অতীতের কথা ভেবে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, এসব নাটক করেও আমার মন গলাতে পারবেন না মিস্টার মিফতাজ আয়মান।

‘তোমার দেয়া সব শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো।তবে সব শাস্তির শেষে আমি তোমাকেই চাইবো।
‘মানহা জানালার বাহিরে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে, ওই যে দূর আকাশে চাঁদ দেখতে পাচ্ছেন। আমরা সবাই চাঁদ ধরতে চাই! কিন্তু চাঁদ আমাদের নাগালের বাহিরে।
‘এতো বড় শাস্তি আমাকে দিওনা। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।
‘কেউ কাউকে ছাড়া ম’রে যায় না।
‘আমি জানি আমার ভুলের ক্ষমা নেই। কিন্তু তাই বলে তোমার কাছ থেকে আমাকে দূরে সরিয়ে দিওনা।
‘আমাকে বাসায় যেতেদিন। আমার মান সম্মান সব শেষ করেছেন যতটুকু আছে ততটুকু রখতে দিন।
‘খাঁচার ভেতর বনের পাখি যতই যত্নে বেঁধে রাখি, সুযোগ পেলে পাখি তো পালাবেই।
‘এতোই যখন বুঝেন তবে আমাকে যেতেদিন।
‘হুম দেবো আগামীকাল থেকে আমি তোমাকে মুক্ত করে দেবো। যদি ভালোবাসো তবে ক্ষমা করে ফিরে এসো। আর না পারলে আমাকে নিজ হাতে বি’ষ পান করিয়ে দিও।
‘আপনার পাপের ক্ষমা নেই।
মিফতাজ দু’কদম সামনে এসে বলে,জান আমার চোখের দিকে তাকাও একবার এই চোখে চোখ রাখো জান।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে