নিভৃত পূর্ণিমা পর্ব-০৬

0
270

নিভৃত পূর্ণিমা – ৬
সোফিয়ার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ভার নাদিমের নিউ ইয়র্কের খালাম্মা নিয়েছেন। দুইটা ছেলে-মেয়েকে প্রথমবার দেখা করানো একটা স্পর্শকাতর বিষয়। কখন, কোথায় দেখা হবে, সেটা সঞ্চালনার ভার খালাম্মা নিজের হাতে রাখলেন। সোফিয়া এবং নাদিম, দুজনের সাথেই যোগাযোগ রাখলেন। সকাল সকাল নাদিমকে জানালেন দুপুর একটার সময় কুইন্স শপিং মলে অ্যাপলবি রেস্টুরেন্টে দেখা হবে। সোফিয়াকে দেখলে নাদিম চিনতে পারবে।
এপার্টমেন্টের দরজা লক করে সায়রা বানুর সাথে গাড়ির কাছে এলো নাদিম। ওর দিকের দরজা খুলে ধরল। সায়রা বানু গাড়িতে উঠতেই দরজা বন্ধ করে ড্রাইভার সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। ঘড়ি দেখে কুইন্স পৌঁছানোর সময় আন্দাজ করার চেষ্টা করল। একটানা চালালে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লাগবে। মোটামুটি ভাবে সাড়ে বারোটা থেকে একটার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে।
গাড়ি চলতে শুরু করতে নাদিম বলল, আমরা নিউ জার্সি টার্ন পাইক দিয়ে স্ট্যাটেন আইল্যান্ড হয়ে কুইন্স যাবো। দুপুর একটার কিছুক্ষণ আগে পৌঁছব। তোমার জার্সি সিটির পাশ দিয়েই যাব।
— ইনশাআল্লাহ্‌। বলল সায়রা বানু। তারপর চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি এলিকট সিটি ছেড়ে ফ্রিওয়েতে উঠল। ডেলোয়ার রিভার ব্রিজ পার হয়ে নিউ জার্সি টার্ন পাইক টোল রোড ধরে চলতে থাকল নাদিম। বৃহস্পতিবার অফিসের দিন হওয়াতে তত বেশি ভিড় নেই। সাধারণত শনিবার বা রবিবার লোকজন নিউ ইয়র্কের দিকে ঘুরতে যায়। সেদিনগুলোতে এই রাস্তায় ভিড় বেশি থাকে।
সময় মতো নিউ ইয়র্ক পৌছাতে হবে, ড্রাইভিং এ মন দিল নাদিম। আজ দুজনের মধ্যে খুব বেশি কথা হচ্ছে না। সায়রা বানু নিজেও একটু চুপ হয়ে আছে। মাঝে মাঝে কাকে যেন টেক্সট করছে, টেক্সটের উত্তর দিচ্ছে। নিউ জার্সি টার্ন পাইকের বেশ কয়েক জায়গায় টোল দিতে হয়। অফিসের কাজে জন্য ইজি পাস কিনতে হয়েছিল, সেটা এখনো আছে। ইলেকট্রনিক ভাবে টোল দিয়ে, একটুও না থেমে চলে যাওয়া যায়।
পথে একবার গ্যাস নেয়ার জন্য থামল নাদিম। কুইন্স শপিং মলে যখন পৌঁছল তখন প্রায় বারোটা পঁয়তাল্লিশ বাজে। খালাম্মা জানালেন, সোফিয়া ঠিক একটায় অ্যাপলবি পৌঁছবে।
সায়রা বানু বলল, আমি শপিং মলে থাকব। ফেয়ার সময় হলে বলবে।
শপিং মলের দোকানের দিকে চলে গেল সায়রা বানু।
অ্যাপলবি পৌঁছে দুজনের জন্য একটা টেবিল চাইল নাদিম। খুব বেশি ভিড় ছিল না, মাঝামাঝি জায়গায়, আলো আঁধারে একটা টেবিলে বসাল মেয়েটা রিসেপশনের মেয়েটা। চারজনের টেবিল, কিন্তু এখন দুজনকে দিতে অসুবিধা নেই।
টেবিলে বসে অপেক্ষা করতে থাকল নাদিম। চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সোফিয়া আসবে।
কয়েক মিনিট পর একটা বাঙালি মেয়ে অ্যাপলবি’র দরজায় এলো। রিসেপশনের মেয়েটাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করল। দুজনেই নাদিমের টেবিলের দিকে তাকাল। এদিকে আসতে শুরু করল মেয়েটা।
উঠে দাঁড়াল নাদিম।
কাছে আসতেই এক পা এগিয়ে নাদিম জিজ্ঞেস করল, সোফিয়া? হাই।
মেয়েটা মৃদু হাসল। বলল, নাদিম? রাইট?
হাসি মুখে নাদিম বলল, ইয়েস।
ফেসবুকে সোফিয়ার ছবি দেখেছিল নাদিম। ভেবেছিল ফিল্টার করা ছবি, এই জন্য কিউট দেখাচ্ছে। কিন্তু এখন সোফিয়াকে দেখতে আরো সুন্দরী, আরো অনেক মিষ্টি লাগছে। গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামলা, স্লিম ফিগার। অফ হোয়াইট কালারের ফ্রন্ট বাটন লং স্লিভ ব্লাউজ পরেছে। সাথে কালো ড্রেস প্যান্ট এবং কালো হাই হিল স্যান্ডেল। ব্লাউজ ইন করে পরাতে বেল্ট ছাড়া প্যান্ট কোমর চেপে ধরে আছে। স্ট্রেচ প্যান্ট হতে পারে। এত আরো স্লিম লাগছে। কাঁধে মাইকেল কোর এর হ্যান্ড ব্যাগ। চোখে সানগ্লাস ছিল, রেস্টুরেন্টে ঢুকে হ্যান্ড ব্যাগে রেখেছে।
সোফিয়ার গড়ন এমন যে বয়েসের তুলনায় দুই-তিন বছর কম মনে হয়। হেঁটে হেটে যেন একটা পুতুল এলো টেবিলের কাছে এলো।
কাছে এসে কথা শুরু করার পর এখন কী করবে ঠিক বুঝতে পাড়ল না নাদিম। বাংলাদেশের একটি মেয়ের সাথে প্রথম দেখা হয়েছে, হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত এগিয়ে দেবে? না যেমন ছিল তেমন দাঁড়িয়ে থেকে কথা বলে যাবে? এরকম ভাবার কারণ আছে। অভিজ্ঞতার কারণে হাত এগিয়ে দিতে দ্বিধা হয়।
আমেরিকাতে বাঙালি মেয়েরা যখন অফিস আদালতে কাজ করে, তখন অনেকেই আমেরিকান ছেলেদের সাথে হ্যান্ডশেক করে। কিন্তু ছেলেটা যদি বাঙালি হয় তাহলে হ্যান্ডশেক করে না। হাত বাড়িয়ে দেয়ার পর কেউ যদি হ্যান্ডশেক না করে স্থাণুর মতো দাঁড়িয়ে থাকে তখন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। কোন মেয়ে হ্যান্ডশেক করবে, কোন মেয়ে হ্যান্ডশেক করবে না, আগে থেকে বোঝা যায় না। সোফিয়া হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়ার মতো ভাব দেখাল না।
কোনো রিস্ক না নিয়ে নাদিম চেয়ার টেনে দিল। একই সাথে বলল, নাইস টু মিট ইউ।
— সেম হিয়ার। বলল সোফিয়া। চেয়ার টেনে দেয়াতে বসল। বলল, থ্যাংক ইউ।
নিজের চেয়ারে ফিরে এলো নাদিম। কথাবার্তা ইংরেজিতে হতে থাকল।
— এতদূর থেকে আসার জন্য ধন্যবাদ। বলল সোফিয়া।
— ইট’স অলরাইট। অফিস থেকে ব্রেক নিয়ে দেখা করতে আসার জন্য ধন্যবাদ। বলল নাদিম।
— ইউ আর ওয়েলকাম। হাসি মুখে বলল সোফিয়া। সোফিয়ার ইংরেজি উচ্চারণ আমেরিকানদের মতো, কিন্তু লং আইল্যান্ডের এক্সেন্ট আছে। বোঝা যায় নিউ ইয়র্কে বড় হয়েছে।
ওয়েটার মেয়েটা এসে দুজনের গ্লাসে পানি দিয়ে বলল, সোডা বা ড্রিঙ্ক দেব?
নাদিম কোকাকোলা, সোফিয়া জিঞ্জার অ্যাল দিতে বলল। মেয়েটা “অবশ্যই” বলে চলে গেল। টেবিলের এক পাশে মেনু রাখা ছিল, দুজনে হাতে নিয়ে কী অর্ডার দেয়া যায় দেখতে থাকল।
— পথে কোনো জ্যাম ছিল? আসতে কোনো অসুবিধা হয়েছে? জিজ্ঞেস করল সোফিয়া।
— না। কোথাও থামতে হয়নি। আমি ম্যানহ্যাটনের টানেলগুলো এভয়েড করে, স্ট্যাটেন আইল্যান্ড দিয়ে এসেছি।
— ওহ, দ্যাট’স স্মার্ট। উইক ডেজে লাঞ্চের সময় ম্যানহাটনে ট্রাফিক জ্যাম হয়।
কিছুক্ষণ পর মেয়েটা সোডা নিয়ে এলো। জিজ্ঞেস করল, অর্ডার দেয়ার জন্য রেডি? না আরো সময় চাও?
আমরা রেডি, বলল সোফিয়া।
সোফিয়া ওরিয়েন্টাল চিকেন সালাদ এবং নাদিম টার্কি স্যান্ডউইচ দিতে বলল।
মেয়েটা চলে যেতেই নাদিম জিজ্ঞেস করল, বাসা থেকে তোমার অফিস কত দূরে? কীভাবে যাওয়া আসা করো?
— আমি বাবা-মায়ের সাথে লং আইল্যান্ড থাকি। অফিস সাবওয়ে ষ্টেশনের কাছে। সাধারণত কমিউট করি। তোমার অফিস কোথায়? কীভাবে যাও?
— বাল্টিমোরে একটা কোম্পানিতে সাইবার সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতাম, দু সপ্তাহ হয় চাকরি চলে গেছে। এখন চারিদিকে আপ্লাই করে যাচ্ছি। যখন চাকরি ছিল ড্রাইভ করে যেতে হতো।
— ওহ, নো। সো সরি। শুনে খুব খারাপ লাগছে। কোন কলেজ থেকে ডিগ্রি নিয়েছ?
আমেরিকাতে এরকম পরিস্থিতিতে কেউ কলেজ বা স্কুল বললে তার মানে ইউনিভারসিটি।
নাদিম বলল, টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি, ইনফরমেশন টেকনোলজিতে ব্যাচেলর্স করেছিলাম।
— এই স্কুলের ক্যাম্পাসটা কোন শহরে যেন?
— লাবুক, টেক্সাস।
— ওহ, তাই? একটু অবাক হলো সোফিয়া। হাসতে হাসতে ঠাট্টার সুরে বলল, লাবুক নামে যে শহর আছে, তাই তো জানতাম না।
সোফিয়ার মন্তব্য শুনে নাদিম নিজেও হাসল। বলল, না শুনলে আশ্চর্যের কিছু নেই। বাংলাদেশে থেকে অ্যাপ্লাই করার সময় আমিও প্রথম শুনেছিলাম। আমেরিকানরা পৃথিবীর অন্য দেশের খবর রাখার সময় পায় না। আর যারা নিউ ইয়র্ক থাকে, তারা তো অন্য শহর সম্পর্কে জানার দরকারও মনে করে না। নিউ ইয়র্ক নিজেই একটা ইউনিভার্স কিনা! হাসতে হাসতে পাল্টা ঠাট্টা করল নাদিম।
— ফেয়ার এনাফ। হেসে ফেলল সোফিয়া। এর মানে নাদিম ঠাট্টার সুন্দর জবাব দিয়েছে।
ওয়েটার মেয়েটা খাবার দিয়ে গেল। এবার খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে কথাবার্তা আগাতে থাকল।
সোফিয়া জিজ্ঞেস করল, আমেরিকায় কেমন লাগছে, থেকে যাবে? না দেশে ফিরবে?
— সম্ভব হলে থেকে যাব। সে চেষ্টাই করছি। তুমি কী নিউ ইয়র্ক থাকবে? না অন্য কোথাও মুভ করার ইচ্ছে আছে।
— আমার জন্ম বাংলাদেশে, কিন্তু খুব ছোট বয়েসে এসেছি। নিউ ইয়র্কে বড় হয়েছি। অন্য কোন রাজ্যে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
— কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়েছ?
— লং আইল্যান্ডের স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি।
— তাহলে তো সব সময় বাসার কাছেই ছিলে।
— হ্যাঁ। তাই। এখনও আব্বা-আম্মা আমাকে একা এপার্টমেন্ট নিয়ে থাকতে দেয় না।
— অনেক বাঙালি পরিবারেই এমন হয়। মেয়েরা সাধারণত বাড়িতে থাকে।
— আইটি লাইনে চাকরি কেমন? জিজ্ঞেস করল সোফিয়া।
– চাকরি অনেক, কিন্তু এখন কম্পিটিশন বেশি। রিসেন্টলি অনেকগুলো বড় বড় আইটি কোম্পানি ডাউন সাইজ করেছে, এই জন্য অনেক এক্সপেরিয়েন্সড লোকজনের সাথে কম্পিট করতে হচ্ছে।
সোফিয়ার সাথে গল্প করলেও নিজের রেজুমে কীভাবে আরো ভালো করে লেখা যায়, ইন্টার্ভিউ দিতে হলে কী সব পড়তে হবে, সে সব নিয়ে নানা রকমের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। সেভাবেই জবাব দিলো নাদিম।
— আমার সম্পর্কে জানলে কী করে? এই প্রথম কিছুটা ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা তুলল সোফিয়া।
— আমার এক দূর সম্পর্কের খালাম্মা তোমার কথা বলেছে।
— কী বলেছে? আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল সোফিয়া।
— বেশি কিছু না। তোমাদের ফ্যামিলিকে ভালো করে চেনে। বলেছে, ব্যাচেলর্স শেষ করে এখন চাকরি করছ। আমেরিকান সিটিজেন।
— ওহ, আচ্ছা। এখন লাইফে তোমার প্রায়োরিটি কী? জিজ্ঞেস করল সোফিয়া।
— যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটা চাকরি পাওয়া। অন্য সবকিছু ডিসট্যান্ট সেকেন্ড।
— তাই তো হওয়া উচিত। সহানুভূতির স্বরে মন্তব্য করল।
কয়েক মিনিট নীরবতা। দুজনেই সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কিসের যেন একটা দূরত্ব।
নাদিম জিজ্ঞেস করল, তুমি কোন সাবজেক্টে পড়েছ। অফিসে কী ধরণের কাজ করতে হয়?
— আমি লিবার‍্যাল আর্টসের ছাত্রী। ফ্রন্ট অফিসে কাজ করি।
ফ্রন্ট অফিস মানে খুব সম্ভব ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হয়, হিউম্যান রিসোর্সের কাজ দেখতে হয়।
— কোনো হবি আছে? অবসর সময়ে কী কর?
— গান শুনি, বই পড়ি। বান্ধবীদের সাথে সময় কাটাই।
— আমাদের মতো বাংলাদেশের ছেলেদের সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা?
— “তোমাদের” মানে? একটু থতমত খেয়ে গেল সোফিয়া।
— এই যারা আমেরিকায় বড় হয়েছে।
— ওহ, আচ্ছা। আবার সহজ হয়ে গেল সোফিয়া। বলল, কলেজে বাংলাদেশ থেকে আসা ছেলেমেয়েদের দেখেছি। কালচারাল বেশ কিছু পার্থক্য আছে। কিন্তু একেকজন একেক রকম। একজনকে দেখে আরেকজনকে বোঝার উপায় নেই। এবার বলো, আমাদের মতো আমেরিকান ছেলেমেয়েদের সম্পর্কে তোমার কী ধারণা?
একই ভাবে প্রশ্ন করল সোফিয়া।
— ধারণা তোমার মতই। টেক্সাসে যা দেখেছি তাতে মনে হয়েছে বেশ পার্থক্য আছে। মেলামেশায় অনেক ফ্রি। নিজেদের একটা সার্কেলে চলাফেরা করে। কিন্তু কনজারভেটিভ ছেলেমেয়েও দেখেছি।
গল্প করে খেতে খেতে কিভাবে ঘণ্টা হয়ে গেল টের পায়নি সোফিয়া। খাওয়া শেষ হতেই ওয়েটার মেয়েটা চেক নিয়ে এলো। নাদিম বলল, আমি কাভার করছি।
— না, না, তুমি কেন পে করবে? প্রবলভাবে আপত্তি করল সোফিয়া। নাদিমকে না সূচক মাথা নাড়তে দেখে বলল, তাহলে স্প্লিট করি? আই ইনসিস্ট।
— আচ্ছা। বলল সোফিয়া। এভাবে অনুরোধ করলে রাজি না হয়ে উপায় নেই।
দুজনে মিলে অর্ধেক করে বিল দিল। আরো কিছুক্ষণ গল্প করল সোফিয়া। তারপর খুব মিষ্টি করে হেসে বলল, আবার অফিসে যেতে হবে। এখন উঠি? স্টে ইন টাচ।
— সিওর।
উঠে দাঁড়াল সোফিয়া। হাত তুলে বাই দেয়ার মতো করে বলল, টেক কেয়ার। হ্যাভ এ সেফ ট্রিপ ব্যাক।
— থ্যাংক ইউ। হ্যাভ এ নাইস ডে।
দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিল নাদিম। সোফিয়া চলে যেতেই ফিরে এসে আবার টেবিলে বসল। প্রথম দেখায় সোফিয়ার সাথে কথাবার্তা ভালোই হয়েছে। কিন্তু নিজেদের ফোন নাম্বার দেয়া নেয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। দুজনের এক জনও কথাটা তুলেনি।
এবার ফিরতে হবে। সায়রা বানুকে খুঁজে নিয়ে যতদ্রুত সম্ভব গাড়িতে যেতে হবে। আরও পাঁচ ঘণ্টা ড্রাইভ।
সায়রা বানুকে ফোন করতেই সহজ গলায় বলল, তুমি গাড়িতে যাও। আমি এখুনি আসছি।
গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকল নাদিম। একটু দূরে একটা ভ্যান এসে দাঁড়াল। প্যাসেঞ্জার সাইডের দরজা খুলে নেমে এলো সায়রা বানু। কয়েক মুহূর্ত দাঁড়াল ভ্যানটা। তারপর দরজা বন্ধ করে চলে গেল। হাসি মুখে এগিয়ে এলো সায়রা বানু। নাদিম দরজা খুলে ধরল। সায়রা বানু বসতেই গাড়ি ছেড়ে দিল।
হাসি মুখে গাড়িতে উঠেছিল সায়রা বানু। গাড়ি চলতে শুরু করতেই কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল।
***
সোফিয়ার আম্মা নাজমা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল কখন মেয়ে ফিরবে, নাদিমের সাথে দেখা হওয়ার গল্প শুনবে। সোফিয়ার ফিরে আসার আওয়াজ পেয়ে দরজার দিকে ছুটে গেল।
— কি রে! দেখা হয়েছে?
— হ্যাঁ।
— কথা হয়েছে?
— আম্মু! আমি টায়ার্ড!
কথা না বাড়িয়ে কাপড় ছাড়তে চলে গেল সোফিয়া। নাজমা মেয়ের জন্য চা করতে গেল। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এলে গল্প করা যাবে।
কিছুক্ষণ পর চা খেতে এলো সোফিয়া।
চা বিস্কিট এগিয়ে দিয়ে মেয়েকে আদর দিল নাজমা।
— ছেলেটা কেমন? কথা হয়েছে?
— আচ্ছা, দেখা করতে বলছ, দেখা করেছি। এখন এত জ্বালাতন করছ কেন বলতো?
— জ্বালাতন দেখলি কোথায়? দেখতে কেমন ছেলেটা? চেপে ধরল নাজমা। মেয়ের সাথে কমিউনিকেট করা মুশকিল। সহজে কিছু বলে না।
— দেখতে বাংলাদেশি ছেলেদের মতো। বিদেশি এক্সেন্টে ইংরেজি বলে। র‍্যালফ লোরেনের পোলো টি শার্ট আর জিনস পরে এসেছিল। হলো? আর কিছু? কথায় ইতি টানার চেষ্টা করল সোফিয়া।
মেয়ের উষ্মা পাত্তা দিল না নাজমা। জিজ্ঞেস করল ছেলেটা দেখতে কেমন? লম্বা?
— শর্ট না।
— গাড়ি চালিয়ে এসেছে জিনস ই তো পরবে। কী কথা হয়েছে?
সোফিয়া বুঝতে পাড়ল কথা শেষ না করলে নিস্তার পাওয়া যাবে না। বলল, কী করে, কি পড়েছে, জীবনের লক্ষ্য কী, এসব নিয়ে কথা হয়েছে। লাঞ্চের ব্রেক এ দেখা হয়েছে, এর বেশি কিছু হয়নি।
— তোর ফোন নাম্বার চেয়েছে? মানে ফোন নাম্বার অদল-বদল করেছিস?
— না। সে রকম কোনো পরিস্থিতি হয়নি।
ফোন নাম্বার অদলবদল হয়নি শুনে হতাশ হলো নাজমা। বলল, একটা ছেলে মেরিল্যান্ড থেকে দেখা করতে এলো, আগ্রহ দেখাবি না? খবর নিয়ে তো ছেলেটাকে ভাল মনে হয়েছে। না করে দেয়া যায় যে কোন সময়, ছেলেটাকে হাতে রাখতে অসুবিধা কী ছিল?
ধৈর্য হারিয়ে ফেলল সোফিয়া। বলল, এক কাজ করো। ফেডারেল এক্সপ্রেস করে আমাকে মেরিল্যান্ড শিপ করে দাও। তোমার মাথা ব্যথা শেষ হোক।
— কী কথায় কী কথা বলে! চোখ কপালে তুলল নাজমা।
এবার নিজের সাথে কথা বলতে থাকল নাজমা। আমাদের সময় মুরুব্বীরা বলত, “শিং মাছ ধরতে হয় হাতে ছাই মেখে।“ মেরিল্যান্ড থেকে ছেলেটা এলো, ফোন নাম্বারটা পর্যন্ত নেয়ার আগ্রহ হলো না তোর। এই দেশের বাঙালি মেয়েগুলো যে কী করে? আমার মাথায় ঢোকে না।
আর সহ্য করতে পাড়ল না সোফিয়া। চা খাওয়া ফেলে রেখে নিজের ঘরে গিয়ে সশব্দে দরজা বন্ধ করল।
মেয়ের সাথে নাজমার খুব ভালো সম্পর্ক। কিন্তু এই একটা বিষয়ে দুজনের আগ্রহ সমান না। নাজমা’র মনে হয় সে চাইনিজ ভাষায় কথা বলছে, তার মেয়ে জার্মান ভাষায় জবাব দিচ্ছে। দুজন দুজনের কথা শুনছে, কিন্তু কেউ কারো কথা বুঝতে পারছে না। যে যার মতো কথা বলে যাচ্ছে।
অনেক বলে কয়ে একটা ছেলেকে মেরিল্যান্ড থেকে নিউ ইয়র্ক আনা হলো। এর পরিণামে ঘরে কী হলো? মেয়ে সারাদিন অফিস করে এসে শান্তি মত চা খেতে পাড়ল না। মায়ের সাথে রাগ করে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়ল। এরকম পরিস্থিতি সোফিয়ার মনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। পারত পক্ষে সোফিয়া কষ্ট পাক এমন কোনো কাজ করে না নাজমা। কিন্তু নাদিমের খবর নিয়ে এত পছন্দ হয়েছিল, ভেবেছিল সোফিয়া মানিয়ে নিতে পারলে খুব ভাল হতো।
মাঝে মাঝে ধৈর্য হারিয়ে ফেলে নাজমা। যেদিন থেকে সোফিয়া ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছে, সেদিন থেকে নামাজ পরে দোয়া করে নাজমা, মেয়েটার যেন একটা ভালো বিয়ে হয়। বাবা-মায়ের আন্তরিক দোয়া নাকি সাথে সাথে কবুল হয়। আজ পাঁচ বছরেরে বেশি হতে চলল। আর কত ধৈর্য ধরতে হবে? আর কত নামাজ পড়ে দোয়া করতে হবে?
রাতে মেয়ের দরজা নক করে জিজ্ঞেস করল নাজমা, সোফিয়া, ঘুমিয়েছিস?
— না। আম্মু।
— আসব?
— আসো।
বিছানায় যেয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে গভীর ভালোবাসায় আদর দিল নাজমা। বলল, আমার লক্ষ্মী মেয়ে! কিছু মনে করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে।
জবাবে কিছু না বলে চুপ করে থাকল সোফিয়া। তারও ইচ্ছে হয় আম্মু খুশি হোক, কিন্তু আর কী করবে বুঝে উঠতে পারে না। ডেটিং এত সহজ না। পছন্দ মতো একটা ছেলে পাওয়া যদি এত সহজ হতো তাহলে ইউনিভার্সিটি পাশ করার সাথে সাথে সবগুলো মেয়ে বিয়ে করে ফেলত।
***
সায়রা বানুর গম্ভীর ভাবটা খেয়াল করল নাদিম। নিউ ইয়র্ক আসার সময় সোফিয়ার কথা ভাবছিল, সায়রা বানুর দিকে খেয়াল রাখতে পারেনি। এবার জিজ্ঞেস করল, সব ঠিক আছে?
— আলহামদুলিল্লাহ্‌। সব ভালো। বাইরের দিকে তাকিয়ে জবাব দিল সায়রা বানু।
— দেখে মনে হয় তোমার মন খারাপ।
— আমার মন খারাপ না। এবারও বাইরের দিকে তাকিয়ে কথা বলল।
— আমার উপর রাগ করেছ? মোলায়েম স্বরে জিজ্ঞেস করল নাদিম।
— রাগ করার মতো কিছু করেছ যে রাগ করব?
— না। আমার জানা মতে তেমন কিছু করিনি।
— তাহলে আমিও রাগ করিনি। খুব শান্ত গলায় বলল সায়রা বানু। এবার নিশ্চিত হলো নাদিম, ওর উপর রাগ হয়েছে সায়ার বানু।
— কেন রাগ করেছ যদি বলো, তাহলে হয়ত একটা কোনো উত্তর দিতে পারতাম।
এতক্ষণে মুখ খুলল সায়রা বানু। বলল, তোমার কাজ হয়েছে?
— হ্যাঁ হয়েছে।
— আমি কোনো অসুবিধা করেছিলাম?
— না। কেন এই কথা বলছ?
— তুমি আমাকে সাথে আনতে চাওনি।
— সাথে না আনলে এখন গাড়িতে আছো কী করে?
— আমি জোর করে এসেছি।
— ওহ-হো, তাই তো। হেসে ফেলল নাদিম।
একটু গম্ভীর হয়ে সায়রা বানু জিজ্ঞেস করল, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?
— করো।
— পারিবারিক কোনো অসুবিধা হলে, আমি যে কোনো সময় পুলিশ ডাকলে পুলিশ আমাকে সাহায্য করবে?
কেন প্রশ্ন করেছে না বুঝেই জবাব দিল নাদিম, হ্যাঁ। তুমি যদি অন্যায় না করো, তাহলে পুলিশ তোমাকে সাহায্য করবে। শুধু তাই না, পথে কেউ যদি তোমাকে বিরক্ত করে তুমি পুলিশে ফোন করতে পারবে। বাড়িতে কেউ যদি তোমার সাথে জোর-জবরদস্তি করে তাহলে কোর্ট থেকে রেস্ট্রেইনিং অর্ডার আনতে পারো। তাহলে সে তোমার সাথে কথাও বলতে পারবে না।
— রেস্ট্রেইনিং অর্ডার কী?
— আমি একটা পাকিস্তানি মেয়েকে জানি যার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়েছিল। মেয়েটা মায়ের সাথে থাকত। বাবা মেয়েটাকে দলে নেয়ার জন্য অনেক রকম জ্বালাতন করত। মেয়েটা কোর্টে যেয়ে বাবা’র বিরুদ্ধে রেস্ট্রেইনিং অর্ডার এনেছে। এখন ওর বাবা মেয়েটার ধারে কাছে আসতে পারে না। ফোন করে কথা বলতে পারে না।
— ওহ, আচ্ছা। বুঝতে পেরেছি। একটা অনুরোধ করতে পারি?
— এভাবে কথা বলছ কেন? বলো কী করতে হবে?
— আমাকে একটু ড্রাইভিং শিখিয়ে দাও। শুধু আমার জন্য এইটুকু করো। খুদা কী কসম, আমি তোমার কোনো ঝামেলা হব না।
— কী হয়েছে বলো না?
এবার ছলছল চোখে নাদিমের দিকে তাকাল সায়রা বানু। বলল, গতকাল রাতে আম্মিজান আমাকে ফোন করেছিল। বলেছে, বাড়িতে ফিরে এলে আর কোনো অসুবিধা হবে না। কেউ কোনো কিছুর জন্য কোনো রকম চাপ দেবে না।
— কেন এই কথা বলেছেন?
— খালাম্মা-খালু ফিয়ে যেয়ে আম্মাকে বলেছে, “সায়রা বানু একটা ছেলের সাথে এপার্টমেন্টে থাকে। খান্দান কি লিয়ে বহত যেয়াদা শরম কি বাত হ্যাঁয়।“
কথাটা বলে কেঁদে ফেলল সায়রা বানু। রাগে দুই হাতের মুঠো শক্ত করে বন্ধ করল। চুপ হয়ে গেল নাদিম। একটু পর সায়রা বানু বলতে থাকল, আমি আম্মিজান কে সব কিছু বুঝিয়ে বললাম। রাতে অনেক কাঁদলাম। তুমি যখন সকালে যাচ্ছিলে, তখন ভাবলাম বাসায় বসে থেকে একা একা কাঁদব? তারচেয়ে তোমার সাথে যাই। সময়টা ভালো কাটবে। কাউকে বললে আম্মুকে দেখা করতে নিয়ে আসবে। ভ্যান গাড়িতে আম্মু ছিল। আমার এক বান্ধবী আম্মিজানকে কুইন্স শপিং মলে নিয়ে এসেছিল। আম্মিজানের সাথে দেখা হয়ে খুব ভালো লাগছে। আম্মিজান গাড়ি থেকে তোমাকে দেখে খুব ভালো বলেছে।
ওর পিছনে এত কিছু হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি নাদিম।
— খুব মোলায়েম গলায় বলল কাল তোমার লার্নারস পারমিটের পরীক্ষা আছে। দরকার হলে আমাকে বলো। নিউ ইয়র্ক আসার সময় প্রথমবার তোমাকে না করার পিছনে একটা কারণ ছিল।
— কি কারণ?
— আমি একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। আমার মনে যেন ফাঁকা থাকে সে জন্য একা যেতে চেয়েছিলাম।
— তাহলে পরে আমাকে সাথে আনলে কেন?
— আমার মনের কাছে আমি পরিষ্কার ছিলাম। আমার কাজে আমি নিউ ইয়র্ক যাচ্ছি। তোমার প্রয়োজনে তুমি নিউ ইয়র্ক যাচ্ছ।
এই প্রথম আবার হাসল সায়রা বানু। বলল, তোমার উপর রাগ ধরে রাখা যায় না।
— তুমি নিউ জার্সি ফিরে যেতে চাও?
— হ্যাঁ। কিন্তু তার আগে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।
এরপর সহজ হয়ে এলো সায়রা বানু। নাদিম বলল, এমন কিছু করতে পারি যেন তোমার মন ভালো হয়?
— পারো। আমি তোমার গাড়িতে গান শুনতে পারি। অনেক লম্বা পথ। আমার কয়েকটা মিক্সড সিডি আছে। আব্বুর সাথে শুনতাম।
— শুনো। জিজ্ঞেস করার দরকার নেই।
এবার খুব খুশি হলো সায়রা বানু। সিডি চালিয়ে গান শুনতে থাকল। দেখে মনে হয় মনের মেঘ কেটে গেছে। গান বলতে বেশিরভাগ জগজিৎ সিং এর গজল।
ফিরতে ফিরতে রাত হলো। পরদিন সকালে মোটর ভেহিকল অফিসে লার্নারস পারমিটের পরীক্ষা দিতে নিয়ে গেল নাদিম। মোটামুটি নিশ্চিত ছিল সায়রা বানু প্রথমবার পাশ করবে না। কিন্তু খুশিতে লাফাতে বাইরে এলো সায়রা বানু। একটা কাগজ দেখিয়ে বলল, এটা আমার লাইসেন্স। এখন থেকে তোমার সাথে গাড়ি নিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারব।
অবাক হলো নাদিম। বলল, সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে?
— ম্যাক্সিমাম তিনটা ভুল করা যায়। আমার তিনটার বেশি ভুল হয়নি।
খুশি হলো নাদিম। বলল, ড্রাইভিং স্কুলে ভর্তি হয়ে যাও। ওটা একটা রিকয়ারমেন্ট।
— আচ্ছা। বলল সায়রা বানু। তারপর বলল, আজ জুম্মা। দুরের কোন মসজিদে যেতে পারি, যেখানে কেউ আমাকে চেনে না?
নাদিম বলল, ঠিক আছে, যাবো। জুম্মার নামাজের পর তোমাকে ড্রাইভিং স্কুলে নিয়ে যাব।
প্রথমবার চেষ্টা করে সায়রা বানু লাইসেন্স পেয়ে গেল। এতে খুব ভালো লাগছে নাদিমের কিন্তু একই সাথে মনে হচ্ছে সবাই তাদের ভবিষ্যৎ গুছিয়ে নিচ্ছে। অথচ সে নিজে বেকার, ইন্টার্ভিউ পাচ্ছে না। চাকরি পাচ্ছে না।
ফিরে এসে অকসয় কুমারকে ভালো করে ধরল। ওর বড় বোন আকাংসা অনেক বলে কয়ে একটা ইন্টার্ভিউ যোগার করে দিল। ভদ্রলোক প্রোজেক্ট ম্যানেজার। আকাংসা ক্লাস মেট ছিল বলে ইন্টার্ভিউ নিতে রাজি হলো লোকটা। এক ঘণ্টা কথা বলল ভদ্রলোক, তারপর সুন্দর করে বুঝিয়ে বলল, ইচ্ছে থাকলেও সে নাদিমকে হায়ার করতে পারবে না। কারণ একই পজিশনে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অনেক লোক ইন্টার্ভিউ দিচ্ছে।
আবার মন খারাপ হলো নাদিমের। বন্ধুর বড় বোনের অতি পরিচিত প্রোজেক্ট ম্যানেজার যদি চাকরি দিতে না পারে তাহলে ভবিষ্যৎ কী? ভালো ভালো অন লাইন কোর্স নিতে থাকল নাদিম। যদি এতে লাভ হয়।
প্যানিক থেকে কানাডার ইমিগ্রেশনের নিয়ন কানুন পড়ল। মনে হয় কয়েক পয়েন্ট শর্ট হয়। হয়ত লয়ার ধরলে হয়ে যাবে।
কয়েকদিন পর রাতে নিউ ইয়র্কের খালাম্মা ফোন করল। জিজ্ঞেস করল, সোফিয়ার সাথে দেখা করে কেমন মনে হলো?
— জি, ভালো। মেয়েটা সুইট। সিম্পল।
— ফোন নাম্বার নাওনি কেন?
— ইচ্ছে হয়নি খালাম্মা। আমরা দুজন ভিন্ন দুই কালচারে বড় হয়েছি। অনেকদিন কথা বললে হয়ত কিছু একটা বোঝা যেত। এখন চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করাই আমার প্রধান কাজ। তা না হলে মনে হবে একটা দুর্বল মুহূর্তে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
— যা ভালো মনে করো। সোফিয়ার বাবা-মা তোমাকে ভালো জানে। কথা বলে বলে মেয়েটাকে যদি রাজি করাতে পারতে তাহলে তোমার অনেক সমস্যার সমাধান হতো।
— চিন্তা করে দেখি খালাম্মা। এখন কিছু ভাবতে ইচ্ছে করছে না।
— ঠিক আছে সময় নাও। এসব কাজে তাড়াহুড়া করা ভালো না।
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে