তোর_শহরে_ভালোবাসা??
…….{সিজন-২ }
#ফাবিহা_নওশীন
পর্ব~১১
সামান্তা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে আদি বিস্ফোরিত চোখে দুহাত ভাজ করে ওর দিয়ে চেয়ে আছে।
সামান্তা সেসব পাত্তা না দিয়ে বেডের দিকে পা বাড়ালো।
আদি তখনই বলে উঠে,
—-স্টপ!! আর এক পা আগাবে না।
সামু ভ্রু কুচকে বললো,
—–মানে?
আদি দু’হাতের ভাজ ভেঙে ওর দিকে এগিয়ে এসে দুহাত পকেটে গুজে স্বাভাবিক ভাবেই বললো,
—–ভুলে গেছো গতকাল কি বলেছি?তোমার নিজের ব্যবস্থা নিজে করে নেও।বেড আমার।গতকাল ফার্স্ট টাইম আমার রুমে ছিলো তাই সেক্রিফাইজ করেছি।মেহমান এলে সবাই প্রথম প্রথম বেশ আপ্যায়ন করে কিন্তু বেশিদিন থাকলে তাকে আর দাম দেয়না।তুমিও তেমন।পার্মানেন্ট থাকতে এসেছো কতদিন সেক্রিফাইজ করবো?
—–আশ্চর্য!! আমি কোথায় ঘুমাবো?
আদি এডিটিউট নিয়ে বললো,
—–আই ডোন্ট নো।(তোমাকে বেডই দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আমাকে যে অপমান করলে তার শাস্তি এটা)
সামান্তা আদির দিকে চেয়ে বেডে উঠে শুয়ে পরলো।
আচমকা উঠে পড়ায় আদি আটকানোর সময় পায়নি।
আদি পকেট থেকে হাত বের করে ওর দিকে ঘুরে বললো,
—–এটা কি হলো?তোমাকে আমি কি বললাম?
সামু চাদর জড়িয়ে বললো,
—–কি বলেছেন কিছুই শুনিনি।আজ ঘুম পাচ্ছে আগামীকাল শুনবো।গুড নাইট।
আদিও কম যায়না।ও পাশে ধপাস করে শুয়ে পরলো।সামান্তা চোখ খোলে আদির দিকে বড়সড় চোখ করে আছে।
আদি চোখ মেরে বললো,
—–আমি এখানেই ঘুমাবো।তোমার যখন এতো ইচ্ছে আমার সাথে থাকার তাহলে ঘুমাও।আমার কিছু হাত-পা ছুড়ার অভ্যাস আছে।
আদি সামুর দিকে আরেকটু ঘেষে যেতেই সামু লাফ দিয়ে উঠে গেলো।
তারপর রাগে ফুসতে ফুসতে বালিশ আর চাদর নিয়ে সোফায় চলে গেলো।
সামু সোফায় আয়েশ করে শুতে পারছেনা।
“বিছানায় গিয়ে ঘুমাবো?নাহ আমি ওখানে ঘুমাতে চাইলে উনি পিন্স মেরে দশ কথা বলবে তারচেয়ে এখানেই ভালো।”
সামু আদির দিকে তাকাতেই দেখে কানে হেডফোন গুঁজে আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপে কিছু করছে।দেয়াল ঘড়িতে ১টা বাজে।সামুর প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে কিন্তু আলোর জন্য ঘুমাতে পারছেনা।
সামু তাই চেচিয়ে বললো,
—–দয়া করে আলোটা নেভাবেন?আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।
আদি আলো নিভিয়ে দিলো।সামু অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পরলো।
.
সামান্তা ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে রেডি হচ্ছে।বিয়ে নামের মেলোড্রামার জন্য ভার্সিটি মিস করার মানেই হয়না।আজ ৫দিন যাবত বাড়িতে আছে।সামান্তা পারফিউম নিয়ে নিজের গায়ে লাগালো।তারপর আদির দিকে চোখ পড়লো।বেড আর ড্রেসিং টেবিল পাশাপাশি হওয়ার কারণে আদির মুখটা বারবার ওর চোখে পড়ছে।
সামু পারফিউম শুন্যে স্প্রে করছে।যেনো রুম ফ্রেশানার দিচ্ছে।আদির নাকের সামনে গিয়ে স্পে করছে।তারপর আবার শুন্যে স্প্রে করছে।Fresher
আদির নাক দিয়ে গন্ধ যাওয়ার কারণে নাক কেমন উশখুশ করছে।তারপর হাচি দিলো।ওর ঘুম ভেঙে গেছে।নাক-মুখ খিচে রেখেছে।চোখ খোলে এহেন গন্ধের উৎস খোজতে গিয়ে সামান্তার হাতে পারফিউম দেখে।ও গায়ে পারফিউম না দিয়ে রুমের মধ্যে স্পে করছে তাও এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ডানে বামে স্পে করছে।আদি সামুর হাতের দিকে ভালো করে দেখে।
“নাহ এটা পারফিউম।রুম ফ্রেশোনার নয়।”
আদি সামুর কান্ড দেখে বললো,
—–তুমি বডি স্পে দ্বারা রুম স্পে কেন করছো?আর ইউ ম্যাড?
সামুর উত্তর দিলো,
—–নো।আমি বডি স্পে দিয়ে রুম স্প্রে করছি কারণ এই রুমে একটা গরু আছে।যে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে তার শরীর থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে তাই রুমে বডি স্প্রে দ্বারা স্প্রে করছি।
—–কি বললে তুমি? গরু??
—–হ্যা গরু।আর এটা গরুর ঘর।যাকে গ্রাম্য ভাষায় বলে গোয়াল ঘর।
আদি দাতে দাত চেপে বললো,
—–গোয়াল ঘরে তোমাকে কে থাকতে বলেছে?
—–আন্টি!! নয়তো আমার বয়েই গেছে।উনি গেস্ট রুম লক করে রেখেছে।
—–আর তাই তুমি সে রাগ আমার উপর ঝাড়ছো?বডি স্প্রে এভাবে ইউস করলে পার ডে একটা করে লাগবে।
সামু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
—–সো হোয়াট?? আপনার টাকায় কিনেছি?
আদি উঠে বসে বললো,
—–তাহলে কার টাকা?আমার টাকাই তো।
—–ইশশ এক টাকা ইনকাম করার যোগ্যতা নেই।আসছে।আমি আমার শ্বশুরের টাকা খরচ করছি।
——ভুলে যেওনা তোমার শ্বশুর আমার বাবা।
সামু উল্টো উত্তর দিলো,
—–আপনিও ভুলে যাবেন না আপনার বাবা আমার শ্বশুর হয়।হুহ!!
আদি সামুর কথা শুনে তাজ্জব হয়ে গেলো।
—–এই তুমি এতো ঝগড়াটে কেন?ভালো করে কথা বলতে পারোনা?
—–পারি খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারি।তবে আপনার সাথে বলতে ইচ্ছে করে না।
সামু কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলো।সামু টেবিলে বসে নাস্তা করছে।কিন্তু শান্তিমতো নাস্তা করতে পারছেনা।ওর ঘাড় পিঠ ব্যথা করছে।বালিশ সোফার সাথে হেলান দিয়ে রেখেছিলো আধশোয়া হয়ে ঘুমিয়েছিলো তাই ঘাড় পিঠ ব্যথা করছে।
সামু নাস্তা শেষে বললো,
—–আন্টি মানে মামনি আমি..
আদির মা সামুর দিকে চেয়ে গম্ভীরমুখে বললো,
—–বলে ফেলো।
সামু চট করে বললো,
—–ভার্সিটি যাচ্ছি।
—–ভার্সিটি!! না কিছুদিন তোমার কোথাও যাওয়া হবেনা।বাড়িতেই থাকবে।সবকিছু নরমাল হওয়ার পরই তুমি ভার্সিটি যাবে।
সামু আর কিছুই বলতে পারলো না।
সামু রুমে গিয়ে ব্যাগ রেখে সোফায় বসে ঘাড়ে হাত দিয়ে ঘাড় কাত করছে আর সোজা করছে।তখনই ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কেপে উঠলো।সামান্তা কিছু বলতে যাবে তখনই আদি বললো,
—–ডোন্ট মুভ।চুপ করে বসে থাকো।আমি ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি।
সামু কেন জানি না করতে পারলো না।আদি সামুর পিঠের চুলগুলো একসাথে করে হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনে দিয়ে বললো,
—–চুল ধরো।
তারপর আদি সামুর ঘাড়ে ওষুধ দিয়ে মালিশ করে দিচ্ছে।
সামু মুখ বাকিয়ে বললো,
—–আমার আরামের ঘুম নষ্ট করে এখন দরদ দেখানো হচ্ছে।হুহ!!
——তোমাকে বলেছিলাম ঘুমাতে।তুমি ঘুমাওনি আমার কি দোষ?
—–হ্যা আপনি বলেছেন তবে দায়সারা ভাবে।উফফ আমার ঘাড়,,,
আদি সামুর কান্ড দেখে হাসছে।
—–এটুকুতেই এই অবস্থা।আমি যখন ঘুমিয়েছিলাম আমার সারা শরীর ব্যথা ছিলো।আমার হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানোর অভ্যাস।
সামু মনে মনে বলছে দাড়ান আজ আপনাকে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানোর ব্যবস্থা করছি।
নিশির ফোন বেজে চলেছে।জয় ফোন করছে।কিন্তু নিশি ফোন তুলছেনা।সাইলেন্ট মুডে রেখে গাড়ি থেকে নামলো।ভার্সিটির গেইটের সামনে দাড়াতেই কপালে বিরক্তিকর ভাজ ফুটে উঠলো।
জয় দাড়িয়ে আছে।জয় নিশিকে দেখে নিশির দিকে এগিয়ে এলো।
—–“নিশি এমন করছো কেন?কেন ফোন তুলছো না?আমার সাথে কথা কেন বলছোনা?
—–ওহ! তুমি এখনো বুঝতে পারোনি কেন এমন করছি? স্ট্রেঞ্জ!!
—–হ্যাঁ বুঝতে পারছি কিন্তু এতে আমার দোষটা কোথায়?
—–আমি জানিনা তোমার দোষটা কোথায়?আমাকে প্লিজ কিছুদিনের জন্য একা ছেড়ে দেও।
জয় অসহায় ফেস করে বললো,
“নিশি!”
নিশি জয়ের দিকে চেয়ে গভীর ভাবে বললো,প্লিজ!!
আদি,সামু আর আদির মা একসাথে বসে লাঞ্চ করছে।সামু মুখ ভার করে রেখেছে।আদির মা বুঝতে পারছে সামু তার উপর অভিমান করে আছে।
তিনি সামুকে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
—–সামু!!
সামু মাথা তুলে আনমনে দ্রুত বললো,
—–হ্যা আন্টি
তারপর হুশ হলো।সামু আমতা আমতা করে বললো,
—–না মানে মামনি।
—–তুই রাগ করেছিস ভার্সিটি যেতে দেইনি বলে?
সামু মাথা নাড়িয়ে না বললো।
আদির মা মুচকি হেসে বললো,
—–আগামীকাল থেকে যাবি।বাট আদির সাথে।আদি নিয়ে যাবে নিয়ে আসবে।কিছুদিন তোর একা বের না হওয়াই ভালো।
সামুর এখানে কিছু বলার নেই তাই চুপ করে রইলো।
আদি তো বেশ খুশি কিন্তু একটু ভাব তো মারতে হবে।তাই মুখটা ছোট করে বললো,
—–আমি! কিন্তু মা….
আদির মা আদিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
—–এ নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো।আজ অনেক দিন পর ফ্যামিলির সাথে লাঞ্চ করছো তাই লাঞ্চে মন দেও।ডিনারটা যদি একসাথে করতে তবে তোমার বাবা খুশি হতো।
আদি মিনমিন করে বললো,
—–খুশি হতো হুহ!! আমাকে দেখলেই লেকচার দিতে শুরু করে।মনে হয় আমার বাবার বিজনেজমেন্ট নয় লেকচারার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো।দাদার জন্য হতে পারেনি তাই তার সেই স্বপ্ন আমাকে দিয়ে পূরণ করছে।যখন তখন লেকচার দেয়।
“আদি কিছুদিন তুমি সামুকে নেওয়া আনা করবে।রাজ যে ছেলে জানিনা কি করে বসে।ও এখন তোমার ওয়াইফ ওকে সেভ করার দায়িত্ব তোমার।ওর সম্মান এখন তোমার সম্মান।আগামীকাল তুমি ওর সাথে যাবে।ভার্সিটিতে যেতে দেইনি বলে অভিমান করেছে কিন্তু অভিযোগ করছে না।”
আদিকে আলাদা করে আদির মা আদিকে এসব কথা বলছে।
আদি মাথা,নাড়িয়ে বললো,
—–ঠিক আছে।
নিশি কেমন চুপচাপ থাকে।মন খারাপ করে থাকে।
সামান্তা সেটা খেয়াল করছে।কিন্তু কিছু বলতে পারছেনা।ও বুঝতে পারছে এ নিয়ে নিশি আপুর সঙ্গে কথা বলার সময় হয়নি।এখন তাকে একা ছেড়ে দেওয়া উচিত।
সামু মনের সুখে ফোন টিপছে সোফায় শুয়ে শুয়ে।আদি আজও বাড়িতে তাড়াতাড়ি এসেছে।সামুকে এতোটা নির্লিপ্ত দেখে অবাক হচ্ছে নিজে থেকেই
বিছানা ছেড়ে দিয়েছে আদির জন্য আর ও সোফায় শুয়ে আছে।
আদির ঘাপলা লাগছে।ও সামুর দিকে দৃষ্টি দিয়ে এসব ভাবছে।তারপর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই লাফিয়ে উঠলো।
তারপর হাত দিয়ে বিছানা ছুয়ে ছুয়ে দেখছে।
তারপর সামুর দিকে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো।
সামুর কাছে গিয়ে দাড়ালো তারপর দাতে দাত চেপে বললো,
—–বিছানা ভেজা কেনো?
সামু ফোন রেখে আদির না কিছু না জানার ভান করে বললো,
—–বিছানা ভেজা?? কে ভিজালো?
আদি ভ্রু কুচকে বললো,
—-ড্রামা কুইন।
আমি তোমাকেই আজ বেড দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু নিজের কপাল নিজে ফাটালে।
সামু আদির কথা শুনে উঠে বসে চোখ বড়বড় করে চাইলো।
আদি বললো,
—–এভাবে চেয়ে লাভ নেই।
সামুর হাত ধরে উঠিয়ে বললো,
—–যাও তোমার বিছানায় যাও।
সামু অসহায় ফেস করে বিছানার দিকে চেয়ে আছে।
তারপর বিরবির করে বললো,
—–বেশি বুঝলে এমনই হয়।একটু বেশীই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।
আদি সেটা শুনে বললো,
—–জ্বি হা।
সামু আদির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো।সামু বেডশিট চেঞ্জ করছে।আদি সোফায় বসে বসে দেখছে।সামু একা একা পারছেনা।সামু আদির দিকে চেয়ে বললো,
—–এই যে অকর্মার ঠেকি বসে বসে না দেখে একটু হাত লাগান।
আদি উঠে গিয়ে বললো,হেল্প চাইবে তাও বাকা ভাবে।
আমি কেন হেল্প করবো?
সামু কয়েক সেকেন্ড ভেবে বললো,
—–হেল্প করলে হাফ আমার হাফ আপনার।
আদি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে মুচকি হাসি দিলো।তারপর সামুর দিকে চেয়ে কিছুক্ষণ ভাবার ভান করে বললো,
—–ওকে ডান।
বিছানা গুছিয়ে দুজনেই শুয়ে পরলো।যদিও আদির ঘুমের সময় হয়নি তবুও শুয়ে পড়েছে।
সামু আদিকে শুতে দেখে বললো,
—–এটা কি হলো?
আদি অবাক হয়ে বললো,কি হলো?এটাই কন্ডিশন ছিলো।
—–হ্যা,কিন্তু আপনি এত তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ছেন?এ অভ্যাস কবে থেকে হলো?
——আজ থেকে।মানে আজ আমার তাড়াতাড়ি ঘুম পাচ্ছে।,(,দাত কেলিয়ে)
সামু মুখ ভেংচি কেটে লাইট অফ করে অপর পাশে মুখ দিয়ে শুয়ে আছে আর নিঃশব্দে হাসছে।কেন হাসছে জানেনা তবে হাসি পাচ্ছে আদির কান্ড দেখে।
“এই ছেলে আবার আমার প্রেমে পড়ে গেলো না তো!!”
সামু নিজের মনে আবারো হেসে ফেললো।
চলবে….